তোমাতেই আসক্ত পর্ব ২০
তানিশা সুলতানা
আদ্রিতা শুকনো ঢোক গিলে। এদিক ওদিক তাকিয়ে বোঝার চেষ্টা করে আসলে তারা কোথায় রয়েছে? রাত বাড়ছে। চারিপাশ অন্ধকারে ছেয়ে গিয়েছে। বাংলাদেশের মতো এখানে গভীর রাত ওবদি আলো জ্বলে না। কোলাহলে ভরপুর থাকে না। হৈ-হুল্লোড়ের মেতে ওঠে না।
এই তো এখন রাস্তায় একটাও জনমানবের দেখা মিলছে না। বেশ অনেকটা দূরে দূরে ল্যামপোস্ট জ্বলছে। সেটার আলোতে গোটা রাস্তা আলোকিত হতে ব্যর্থ। দূরে দূরে দুই একটা বাড়ি চোখে পড়ছে। সেখানেও আলো জ্বলছে। তবে কোনো সাড়াশব্দ নেই।
গাড়িতে আলো জ্বলছে। সেই আলোতে আবরার তাসনিন এর গম্ভীর মুখশ্রী স্পষ্ট দেখা যাচ্ছে। চোয়াল শক্ত। ছোট ছোট দাঁড়ির আড়ালে লুকানো শক্ত চোয়াল আদ্রিতার নজর এড়ায় না। উঁচু নাক খানা ক্ষণে ক্ষণে ফুলে উঠছে। আরও একটা বিষয় নজরে পড়ে আদ্রিতার। বা চোখের নিচে আঁচড়ের দাগ। যেনো কেউ খামচে দিয়েছে। এই বাঘকেও কেউ খামচি দেওয়ার সাহস পেয়েছে?
এটা অসম্ভব।
আবার গোলাপি অধরের কোণায় কিঞ্চিৎ শুকনো র*ক্তের দেখা মিলছে। দূর থেকে মনে হচ্ছে বাদামের ছোগা। তবে ভালো ভাবে পর্যবেক্ষণ করলেই বোঝা যাচ্ছে সেটা র*ক্তের দাগ।
মাগে হচ্ছে কেউ লোকটাকে আঘাত করেছে। বা কোথাও থেকে আঘাত পেয়েছে।
আদ্রিতার বাম হাত খানা গালে চলে যায়। একটুখানি এগিয়ে বসে আবরারের দিকে। ছোট ছোট নয়নে ভালো করে দেখতে থাকে।
আরও গল্প পড়তে এখানে ক্লিক করুন
সাদা রংয়ের শার্ট গায়ে জড়ানো। দুই হাতে পেশি ফুলে উঠেছে। যেনো শার্ট ছিঁড়ে পেশি বেরিয়ে আসবে।
বুকের কাছটায় লাল রং মেখে আছে। সেখানেও আঘাত পেয়েছে কি?
আদ্রিতা ভেংচি কাটে। আবরারের থেকে দৃষ্টি ফেরায়।
লোকটা কি আর ভালো মানুষ?
এখন যদি আদ্রিতা নরম স্বরে বলে
“ভাইয়া আঘাত পেলেন কি করে?
আবরার তাসনিন টুকুস করে এক খানা চটকানা বসিয়ে দিবে আদ্রিতার নরম তুলতুলে গালে। গম্ভীর স্বরে বলবে
” দ্যাটস নান অফ ইউওর বিজনেস”
তাতে বেশ অপমানিত হবে আদ্রিতা।
“গাড়ি কেনো থামালেন? বাড়ি যাবো না?
আড়চোখে আবরারের পানে তাকিয়ে বলে আদ্রিতা।
আবরার গাড়ির স্টারিং থেকে হাত সরিয়ে সিটে গা এলিয়ে দেয়। এবং গম্ভীর স্বরে বলে
“না।
স্পষ্ট জবাব। তবে আদ্রিতার পছন্দ হয় না। বাড়ি যাবে না? তাহলে কি মাঝ রাস্তায় গাড়ি থামিয়ে এভাবে বসে থাকবে? কি করে?
” মা চিন্তা করবে। আমাকে বাড়ি যেতে হবে৷ প্লিজ নিয়ে চলুন।
অসহায়ত্ব ফুটে ওঠে আদ্রিতার চোখে মুখে। আবরার তাসনিন চোখ খুলে। ঘাড় বাঁকিয়ে তাকায় আদ্রিতার মুখ পানে। এবং চিবিয়ে চিবিয়ে জবাব দেয়
“ফা***কিং ইমোশন
বয়ফ্রেন্ডের সাথে মিট করতে আসার সময় মনে ছিলো না?
আদ্রিতা চুপসে যায়। চোরের ন্যায় কুটুর কুটুর নয়নে তাকায় আবরারের পানে এবং সাথে সাথেই দৃষ্টি সরিয়ে নেয়। পুনরায় ঢোক চেপে গলা ভিজায়। আশেপাশে তাকিয়ে পানির খোঁজ করে। এই মুহুর্তে বড্ড পানির অভাব ফিল করছে। তবে পেলো না। হাতির গাড়িতে পানি থাকবে না ইটস নরমাল। এ্যনি পেছনের সিটে দিব্যি ঘুমচ্ছে। যেনো এই দুনিয়ার সব থেকে সুখী ব্যক্তি সে। ঘুম ব্যতিত আর কোনোই কাজ নেই তার।
আদ্রিতা মনে অনেকটা সাহস সঞ্চয় করে নেয়। খোলাখুলি কথা বলা প্রয়োজন। এখানে তো আর সারা রাত বসে থাকতে পারবে না। তাই জিভ দ্বারা ঠোঁট ভিজিয়ে বলে
“আ…আমি আসিফ আদনানকে ভা
বাকিটা শেষ করার আগেই আবরার বলে ওঠে
” আই নো দ্যাট।
নতুন কিছু বলো।
আদ্রিতা যেনো সুযোগ পেলো
“তাকে বিয়ে করতে চাই।
আবরার পূণরায় গাড়ির সিটে গা এলিয়ে দেয়। আঁখি পল্লব বন্ধ করে ফেলে। সেভাবেই জবাব দেয়
” ওকে।
তোমার আসিফ আদনান বেঁচে থাকলে করিও বিয়ে।
আদ্রিতা কথার ভাজে লুকানো রহস্য খুঁজতে ব্যর্থ হয়।তবে এই টুকু বুঝতে পারে আবরার তাসনিন রাজি হয়ে গিয়েছে। এবার আসিফ এবং তার বিয়েতে আর কোনো বাঁধা নেই। খুশিতে আত্মহারা হয়ে ওঠে আদ্রি। উত্তেজনায় চেপে ধরে আবরারের হাতে। শক্তপোক্ত পুরুষালি হাতের ভাজে নিজের নরম কোমল হাত খানা ঢুকিয়ে দেয়। গম্ভীর মানবের মুখ পানে তাকিয়ে
হাসি মুখে বলে
“ধন্যবাদ ভাইয়া। আপনি জানেন না আমি
বাকিটা শেষ করতে পারে না আদ্রিতা। তার আগেই আবরার গাড়ির স্টারিং ঘুরিয়ে বন্ধ গাড়িটিতে চলমান করে। পাশ দিয়ে যাওয়া হলুদ রংয়ের ট্যাক্সির দিকে তেড়ে নিয়ে যায় নিজের গাড়ি খানা৷
আতঙ্কিত আদ্রিতা কেঁপে ওঠে। এখন কি হবে বেশ বুঝতে পারছে। ভয়ে সিঁটিয়ে যায়। কাঁপা কাঁপা গলায় কিছু বলতে চায় তবে পারে না।
হাত বাড়িয়ে পেছনের সিটে থাকা এ্যানিকে কোলে তুলে নেয়। বুকের মধ্যে জাপ্টে জড়িয়ে আঁখি পল্লব বন্ধ করে ফেলে।
আর তখনই বিকট একটা শব্দ হয়। মৃদু স্বরে চিৎকার করে ওঠে আদ্রিতা। অস্বাভাবিক ভাবে কাঁপছে হাত পা।
কেটে যায় কিছু মুহুর্ত। পিটপিট করে চোখ খুলে আদ্রিতা। প্রথমে পাশের সিটে তাকিয়ে আবরারকে দেখে নেয়। আরামসে বেয়ার খাচ্ছে।
অতঃপর তাকায় রাস্তার পানে। ট্যাক্সি খানা গাছের সাথে ধাক্কা খেয়ে ভেঙে চুরে গিয়েছে। একটা র*ক্তা*ক্ত হাত দেখা যাচ্ছে। এবং গুঙানোর শব্দ পাওয়া যাচ্ছে। যেনো কেউ মৃত্যুর দুয়ারে দাঁড়িয়ে আছে। বাঁচার তাগিদে শব্দ বের করছে মুখ দিয়ে।
আদ্রিতা গাড়ির জানালা দিয়ে মাথা বের করে এদিক ওদিক পর্যবেক্ষণ করে। নাহহ কোথাও কেউ নেই।
” আ…..আপনি এটা কি করলেন?
ও..দের হাসপাতালে নেওয়া দরকার।
আদ্রিতার আঁখি পল্লব টলমল করছে। যেনো এখুনি দুই গাল বেয়ে বর্ষণের আগমণ ঘটবে। গোলাপি অধর জোড়া কাঁপছে। বেয়ারের বোতলে শেষবার চুমুক দেয় আবরার। ঢকঢক করে গিয়ে শেষ করে ফেলে গোটা বোতলের পানিও। অতঃপর জানালা দিয়ে ঢিল ছুঁড়ে ফেলে দেয় বাইরে। একদম সেই ট্যাক্সির র*ক্তা*ক্ত হাতের ওপর গিয়ে পড়ে বোতল। ব্যাথা পেলো বোধহয়। গলা কাটা মুরগীর ন্যায় ছটফট করে উঠলো। গাড়ি সহ কাঁপতে থাকলো কিছুক্ষণ।
হতদম্ভ আদ্রিতা গোটা ব্যাপারটা দেখতে থাকে মনোযোগ দিয়ে।
আবরার ডান হাত বাড়িয়ে দেয় আদ্রিতার পানে।
আদ্রি একটু পিছানোর চেষ্টা করে তবে গাড়িতে জায়গা না থাকায় পারে না। আবরার ভ্রু কুচকে ফেলে। ব্যাসস আদ্রিতা একটু এগিয়ে বসে। আবরার আদ্রিতার গালে হাত দেয়। ঠান্ডা হাতের স্পর্শে পূণরায় কেঁপে ওঠে আদ্রিতা। মায়া ভরা নয়ন জোড়া আবরারের নয়নে রাখে। এবং বলে
“ওরা ব্যাথা পেয়
আবরার নিজের হাত খানা আদ্রিতার অধরে নিয়ে আসে। বুড়ো আঙুল দ্বারা নরম ওষ্ঠে হাত বুলিয়ে হাঙ্কি স্বরে বলে
” ঠোঁট কাঁপাচ্ছো কেনো?
আদ্রিতা আবরারের হাত খানা সরিয়ে দেয়। মাথা নিচু করে বলে
” ভুল ভাবছেন।
আমি রেগে গেলে বা ভয় পেলে আপনাআপনিই ক
বাকিটা শেষ করার আগেই আবরার নিজের সিটবেল্ট খুলতে খুলতে বলে
তোমাতেই আসক্ত পর্ব ১৯
“নিজের সর্বনাশ ডেকে আনলে।
আবরার তাসনিন বড্ড বেপরোয়া।
” আশ্চর্য সিটবেল্ট খুলছেন কেনো?
“তোমার ঠোঁট কাঁপা থামাবো তাই।