তোমাতেই আসক্ত পর্ব ২২
তানিশা সুলতানা
“হ্যাঁ বাবা বলো।
কেমন আছো? কি করছো? এসব না বলে ডিরেক্টলি হ্যাঁ বলো। মনে মনে একটু আশাহত হয় আরিফ হাসান। মেয়ের সাথে কথা বলার জন্য মনটা আনচান করে তবে যখন তখন কথা বলতে পারে না। নিয়ম করে প্রতি দিনই কল করে তবে আদ্রিতা কথা বলে না।
” ভালো আছে আমার আম্মা?
“হ্যাঁ ভালো আছি।
” তোমার জন্য একটা ফোন কিনেছি।
“লাগবে না আমার৷
” কেনো?
“এমনি। যখন লাগবে তখন মা কিনে দিবে। রাখছি বাবা। পরে কথা বলবো।
আরিফ হাসান এর কোনো কথা না শুনেই ফোন খানা এগিয়ে দেয় আতিয়া বেগম এর দিকে৷ এবং ক্লান্ত ভঙ্গিমায় গাড়ির সিটে গা এলিয়ে দেয়। যেনো যুদ্ধ করে আসলো।
আতিয়া বেগম কানে ফোন ধরতেই আরিফ হাসান বলে ওঠে
” আমি দেশে ফিরছি আগামী মাসে। এবং আমি আদ্রিতাকে ফিরে চাই। আমার সাথে থাকবে ও।
আতিয়া মলিন হাসে।
“আমিও সেটাই বলছিলাম৷ বয়স বেড়েছে আমার৷ স্বামী সন্তান কেউই সাথে থাকে। আদ্রিতার দায়িত্ব নেওয়ার মতো একজন মানুষ পেলে নিশ্চিত হতে পারি। আর সেই মানুষটা আপনি হলে তো কোনো কথাই নেই।
আদ্রিতা ধপ করে চোখ খুলে। তাকায় আতিয়া বেগম এর পানে। তাকে দিয়ে দেওয়া হবে? মা রাখবে না? বুক কেঁপে ওঠে আদ্রিতার। আতিয়ার পানে চেপে বসে জাপ্টে জড়িয়ে ধরে। যেনো বোঝাচ্ছে
” আমি কোথাও যাবো না মা। তোমার সাথেই থাকবো। তুমি ছাড়া কেউ নেই আমার।”
“আপনার ছেলে
আতিয়া আরিফকে থামিয়ে বলে
আরও গল্প পড়তে এখানে ক্লিক করুন
” আমার ছেলেকে নিয়ে ভাবতে হবে না। সে কখনো মানেই নি বিয়েটা। এমনকি প্রমাণও নেই।
কল কেটে দেয় আরিফ। দীর্ঘ শ্বাস ফেলে আতিয়া। আদ্রিতার মাথায় হাত বুলিয়ে দেয়।
“মা আমাকে দিয়ে দেবে?
বড়ই অসহায় শোনালো আদ্রিতার কন্ঠস্বর।
” কি করবো বল? সারাজীবন কাছে রাখার সামর্থ্য নেই যে আমার।
পরবর্তীতে বলার মতো কিছু খুঁজে পায় না আদ্রিতা। কিভাবে বলবে “মা দিও না আমায়। আমি কোথাও যাবো না”
দীর্ঘক্ষণ নিরবতা বিরাজ করে। গাড়ি খানা তাসিন গ্রুপ অফ কোম্পানি ক্রস করে ঢুকে পড়ে সরু রোডে। এই তো খানিকটা দূরেই আহনার শশুর বাড়ি।
“মা একটা কথা বলবো?
” বল
“তোমার ছেলের সাথে আমার কি সম্পর্ক? সে কোনো বারবার বলে ” এ’ম ইউওর হাজব্যান্ড।
আতিয়া ঠিক বিশ্বাস করলো না। তার ছেলে এমনটা বলবে? কখনোই না। যে ছেলে বিয়ে মানে না বলে রেজিস্ট্রি পেপার ছিঁড়ে ফেললো। দাদার মৃত্যুতে উপস্থিত থাকলো না। মায়ের সাথে পর্যন্ত কথা বলে না।
একটা বিয়েই তাদের গোটা পরিবারকে ধ্বংস করে দিলো। খুশি নষ্ট করেছে। আতিয়া মনে করতে চায় না সেই দুঃস্বপ্নের কথা।
“কোনো সম্পর্ক নেই আদ্রিতা। কে কি বললো না বললো সেসব কানে তুলবে না তুমি।
ছোট বেলায় তোমার আর আবরারের বিয়ে হওয়ার কথা ছিলো। রেজিস্ট্রি পেপারেও সাইন করানো হয়েছিলো। কিন্তু আবরার মানতে পারে নি তোমায়। তাই পেপার ছিঁড়ে ফেলেছে এবং বিদেশে চলে এসেছে।
বড্ড ঝাঁঝালো স্বরে বলে আতিয়া। দুবার গলাও কেঁপে ওঠে। যেনো চরম কষ্টের মুহুর্তের চিত্র ফুটে উঠেছে চোখের পাতায়। আদ্রিতা অবাক নয়নে তাকায় মায়ের মুখ পানে। নয়ন জোড়া চিকচিক করছে। যখন তখন গাল বেয়ে অশ্রুর বর্ষণ নামবে। চতুর আদ্রিতা সব বুঝতে পেরেছে। সেই তাহলে আসল দোষী?
হৃদয় আকাশে মেঘ জমেছে। যখন তখন বৃষ্টি ঝড়বে। তবে আদ্রিতা কাঁদতে চাইছে না।
পৃথিবীতে এতিম মানুষ গুলো বড্ড আত্নমর্যাদাহীণ। তাদের যে পাত্রে রাখা হয় সেই পাত্রেই নিজেদের বাসস্থান তৈরি করে নিতে হয়। দ্বিতীয় অপশন থাকে না।
ভাবনার মাঝেই গাড়ি থামে। সাদা এবং নীল রংয়ের সংমিশ্রণে তৈরি করা সুন্দর বাড়িটার পানে নজর পড়ে।
আতিয়া বেগম নেমে পড়ে। পার্স হতে টাকা বের করে ভাড়া মিটায়। এবং পেছন ফিরে বলে
” আদ্রিতা নেমে আসো। এটাই বাড়ি।
আদ্রিতা নেমে পড়ে। আতিয়া বেগম এর হাত ধরে বাড়ির ভেতরে এগিয়ে যায়।
খুবই সিম্পল পরিবার আহনার শশুর বাড়ির। শশুর শাশুড়ী ছোট দেবর এবং বর। এইতো। আর কেউ নেই।
দুইবার কলিং বেল চাপাতেই অহনা দরজা খুলে। কোলে ছোট্ট আহির। আতিয়া বেগম হেসে নাতিকে কোলে তুলে নেয়। ভালো মন্দ জিজ্ঞেস করে।
অহনা আদ্রিতার পানে তাকায়।
জড়িয়ে ধরে বলে
“আদ্রিতা বোনু ভালো আছিস?
আদ্রিতা মৃদু হেসে মাথা নারিয়ে বোঝায় “ভালো আছি”
“মা গেছে বাপের বাড়ি
দিয়ে গেছে ঝাঁড়ি
ফিরবে না আর কোনোদিন
খুঁজবে নতুন শশুর বাড়ি
সিয়াম ক্ষণে ক্ষণে খিল খিল করে হেসে উঠছে এবং কবিতা আওড়াচ্ছে। আবরার বিরক্ত ভঙ্গিমায় ফাইল ঘাটছে। ইতোমধ্যে কয়েকবার সেল ফোন খানা তরিং তিরিং করে বেজে চলেছে। সেদিকে খেয়াল নেই।
আহাদ সিগারেট খাচ্ছে আর সিয়ামের কবিতায় তাল মেলাচ্ছে।।
” মা গো মা
ও গো মা
চলে গেলে কেনো?
আমি তোমার ভালো ছেলে
ডুবিয়ে দিয়ে গেলে
বাকিটা শেষ হওয়ার আগেই আবরার গম্ভীর স্বরে বলে ওঠে
“স্টপ ইউওর মাউথ।
সিয়াম নিজের ঠোঁটে আঙুল দেয়। যেনো দুনিয়া ধ্বংস হয়ে গেলেও সিয়াম মাহমুদ আর মুখ খুলবে না। আহদের বিষয়টা ভালো লাগলো না। তাই বলে ওঠে
” এই সিয়াম অহনার না কি একটা দেবর আছে?
মেয়ে দেখলেই না কি সে চুমু খেয়ে নেয়? বাই এনি চান্স যদি
আবরার তাসনিন দাঁড়িয়ে পড়ে। হাতে থাকা গোছানো ফাইল খানা শূন্যে ছুঁড়ে ফেলে। এবং আদেশের স্বরে বলে
“ওকে নিয়ে আয়।
আবরারের বলতে দেরি কিন্তু সিয়াম এবং আহাদের দৌড় দিতে দেরি নেই। আবরার ফোঁস করে শ্বাস টানে। বা হাতে কপাল চুলকাতে চুলকাতে বসে পড়ে।
অহনাদের বাড়িটা বিরক্তিকর মনে হচ্ছে আদ্রিতার কাছে। এখানে একটা বেয়াদব ছেলে রয়েছে। যে আদ্রিতাকে দেখলেই চিপকে দাঁড়াতে আসতে। ভেবলা কান্তের মতো দাঁত কেলিয়ে আলাপ করতে আসছে। বিরক্ত হয়ে বাড়ি থেকে বেরিয়ে এসেছে আদ্রিতা। ফাঁকা রাস্তায় হাঁটছে। এ্যানিকে রেখে এসেছে বাড়িতে। কি যে ভুল করেছে। নিয়ে আসলে অন্তত ভালো সময় কাটতো।
তখুনি একটা জিপ এসে থামে আদ্রিতার সামনে। চমকায় আদ্রি এবং পরমুহূর্তেই খুশিতে লাফিয়ে ওঠে।
” সিয়াম ভাই আপনি এসেছেন? কি যে বোরিং ফিল হচ্ছিলো।
সিয়াম চোখে সানগ্লাস পড়তে পড়তে নেমে আসে গাড়ি থেকে। ভাব নিয়ে বলে
“করলে স্মরণ হলাম হাজির
আমার নাম সিয়াম পাজি
খিল খিল করে হেসে ওঠে আদ্রিতা। আহাদ বলে ওঠে
” আমাকে দেখলে না?
“ওহহ হো আপনাকে তো খেয়ালই করি নি।
ভাইয়া চলুন আমরা কোথাও থেকে ঘুরে আসি। এখানে একদমই ভালো লাগছে না।
সিয়াম বলে ওঠে
” চলো তোমাকে আসমান থেকে ঘুরিয়ে আনি।
আবরার তাসনিন এর অফিসটা এতো সুন্দর হবে কখনো ভাবতেই পারে নি আদ্রিতা। যেদিকেই চোখ যাচ্ছে আসমানে অবস্থিত আপের মতো সাদা।
যেনো আসমানে উড়ে বেড়াচ্ছে সে।
আদ্রিতার পাশাপাশি হাঁটছে আমান। হাতের ব্যান্ডেজ এখনো খোলা হয় নি। সিয়াম আগে আগে হাঁটছে এবং কবিতার স্বরে আদ্রিতাকে অফিসের সৌন্দর্যের বিবরণ দিচ্ছে
“আসমান সাদা জমিন কালা
সিয়াম হচ্ছে মুক্তোর মালা
আব্বা আমার খুব ভালা
আমান হচ্ছে জাত শা*লা
কুত্তা ভুগে দেখায় খেলা
এই অফিসটা হচ্ছে পাগলের মেলা
তোমাতেই আসক্ত পর্ব ২১
খিল খিল করে হেসে ওঠে আদ্রিতা। আমান জুতো খুলে ছুঁড়ে মারে সিয়ামের উদ্দেশ্যে। সিয়াম সেই জুতো ক্যাচ ধরে জানালা দিয়ে ফেলে দেয়। এটা নিয়েও আমানের আহাজারির শেষ নেই।
সেই মুহুর্তেই দেখা মেলে আবরার তাসনিন এর।
ফোনে কথা বলতে বলতে ব্যস্ত ভঙ্গিমায় এদিকে আসছে। তার পেছনে দুটো মেয়ে রীতিমতো দৌড়াচ্ছে। তাদের পরণের ড্রেস দেখে নাক কুঁচকায় আদ্রিতা।
বিরবির করে বলে
” রতনে রতন চিনে হাতি চেনে মেয়ে।
চরিত্রহীন।