তোমাতেই আসক্ত পর্ব ৩২

তোমাতেই আসক্ত পর্ব ৩২
তানিশা সুলতানা

“কেনো আসলে তুমি?
ভালোই তো ছিলাম আমি?
বড্ড অসহায় শোনালো আবরারের কন্ঠস্বর। মনে হলো পৃথিবীর সব থেকে দুঃখী ব্যক্তি সে। বেশ অনেক দিন হলো আবরারকে দেখছে। বরাবরই গম্ভীর রগচটা মুডি মানুষটার এমন করুন স্বর বেশ অবাক করে আদ্রিতাকে। মনে মনে ভাবে ” কিসে রয়েছে ওনার দুর্বলতা? কেনো এতো আকুল সে? কিসের টান?
পর মুহুর্তেই হৃদয় জবাব দেয় “কোনো টান নেই। হয়ত ড্রিংক করেছে। তাই ভুলভাল বকছে”
তবে মনে একটু সাহস জাগে। যেহেতু কন্ঠস্বর নরম তার মানে মনটাও আপাতত ঠিকঠাক। এই মুহুর্তে ধমক খাওয়ার চান্স কম। তাই দু পা এগিয়ে আসে। ফাস্ট এইড বক্স খাটের ওপর রাখে। ওড়নার কোণা শক্ত করে চেপে ধরে
জিভ দ্বারা ঠোঁট ভিজিয়ে নেয়। অতঃপর রিনরিনিয়ে বলে

” আর মাত্র কয়েকদিন তারপরই চলে যাবো।
আপনাকে আর বেশিদিন সহ্য করতে হবে না আমায়।
কথাটা বোধহয় ভালো লাগলো না আবরারের। মুহুর্তেই করুণ মুখশ্রী লালচে রং ধারণ করে। বিলাই আঁখি পল্লবের সাদা অংশের রং বদনায়। শীতের সিজন তারওপর কক্ষে লো পাওয়ারের এসি চলছে। তবুও কপালে বিন্দু বিন্দু ঘামের কণার দেখা মিলছে। ঘন কালো দাঁড়ি যুক্ত চোয়াল শক্ত হয়ে যায়। কটমট শব্দ হয়। হয়ত দাঁতের ওপর দাঁত রেখে চাপ প্রয়োগ করছে। হাত দুটো মুষ্টিবদ্ধ করে বড় বড় পা ফেলে এগোয় আদ্রিতার পানে।
আবরারকে এগোতে দেখে আদ্রিতা চমকায় এবং খাটে বসে পড়ে জড়োসড়ো হয়ে। ভয়ার্তক দৃষ্টিতে তাকায় ওই রাগান্বিত মুখ পানে। অসহায় মুখশ্রীতে স্পষ্ট ফুটিয়ে তোলার চেষ্টা করে “কি যা বলেছি ভুল বলেছি। প্লিজ ক্ষমা করে দিন”

আরও গল্প পড়তে এখানে ক্লিক করুন 

কিন্তু মুখ ফুটে বলতে পারে না।
আবরার আদ্রিতার সামনে দাঁড়িয়ে একটুখানি ঝুঁকে পড়ে। মুখের কাছে মুখ নিয়ে গাল চেপে ধরে শক্ত করে।
ঠোঁট চাপ খেয়ে ফাঁকা হয়ে যায়। যেনো এখনই চোয়াল ভেদ করে আঙুল গুলো মুখে ঢুকে পড়ে। ব্যাথায় জর্জরিত আদ্রিতার আঁখি পল্লবে অশ্রুকণা জমে ওঠে।
“আমাকে পাগল বানিয়ে এখন পালানো হবে?
আমি পালাতে দিবো?
যতদিন না আমার তৃষ্ণা মিটবে ততদিন কোথাও যাচ্ছো না তুমি।

নিজের কথা শেষ করেই চোয়াল ছেড়ে দেয়। আদ্রিতা নিজের গালে হাত বুলিয়ে নিঃশব্দে কেঁদে ওঠে। আবরার কপালে দুই আঙুলের বিচরণ করিয়ে জোরে জোরে শ্বাস টানতে থাকে। কপালে বোধহয় চোট পেলো। গড় গড় রক্ত বেরুতে শুরু করে ক্ষত স্থান হতে। আদ্রিতার কান্নার শব্দেও বিরক্ত হয়। মৃদু স্বরে ধমক দিয়ে বলে ওঠে
” স্টপ ইউয়োর ফাকিং ক্রাইং। আই হেইট দিস।
আদ্রিতা চমকায়। মুহুর্তেই কান্না থেমে যায় । দুই হাতে চোখের পানি মুছে ফেলে। মনে মনে বিরবির করে বলে
“শালা খাচ্চর
আমাকে মেরেছিস আমি কাঁদছি। তাতে তোর বাপের কি? তুই ঘৃণা করলে আমার কি? নাচমু আমি? শালা হনুমান
আবরার এদিক ওদিক পায়চারি করে খানিকক্ষণ তারপর আদ্রিতার পাশে এসে বসে। আরেক দরফা চমকায় আদ্রিতা। একটু সরে বসতে চায়। আবরার কোমর পেঁচিয়ে ধরে। অপর হাতে ওড়না টেনে ফেলে দেয় ফ্লোরে।
কপালে কুঁচকে বলে

” আমার সামনে আসলে এসব বা***ল যেনো না দেখি।
আদ্রিতা মাথা নিচু করে ফেলে। কিছু বলবে বলে সিদ্ধান্ত নেয় তখনই গলার একটু নিচে ভেজা ওষ্ঠের বিচরণ টের পায়। খোঁচা খোঁচা দাঁড়ির ঘর্ষণ অনুভব করে। ভুমিকম্পের ন্যায় কেঁপে ওঠে আদ্রিতার সর্বাঙ্গ। মৃদু স্বরে গুঙিয়ে ওঠে।
আবরার বেশি সময় নেয় না। নরম স্থানে দাঁত বসিয়ে মাথা তুলে। মৌমাছির চাক থেকে যেনো মধু খেলো তেমনভাবেই জিভ দ্বারা ঠোঁট চেটে নেয়। ব্যাপার খানা দেখে নেয় আদ্রিতা৷ লজ্জায় কান দুটো গরম হয়ে ওঠে। চোখ মুখ খিঁচে বন্ধ করে ফেলে৷

“ঔষধ লাগাতে এসেছো?
শান্ত স্বরে প্রশ্ন করে আবরার। জবাব দিতে পারে না লজ্জিত রমনী। এখনো ঠিকঠাক করে শ্বাস টানতে পারে নি। স্বাভাবিকের তুলনায় নিঃশ্বাস একটু জোরেই বইছে।
আবরার পুনরায় বলে ওঠে
” এভাবে অটিস্টিক এর মতো বিহেভিয়ার করলে খেয়ে ইন্টিমেন্ট হতে ইচ্ছে করবে।
দ্বিতীয় বার ফিলিংস জাগলে ট্রাস্ট মি খেয়ে ফেলবো।
চটজলদি চোখ খুলে আদ্রিতা।
বড্ড তারাহুরোয় আশেপাশে ফাস্ট এইড বক্সটার খোঁজ করে। এবং পেয়েও যায় আবরারের পাশে।
সেদিকে ইশারা করে বলে

“ও…ওটা লাগবে।
আবরার রক্তমাখা হাতে বক্সটি এগিয়ে দেয়।
শক্তপোক্ত হাত খানা নিজের নরম হাত দ্বারা ছুঁয়ে দেয়। মূলত দেখার প্রয়াস চালায় ঠিক কতোটা কেটেছে। বিচলিত হয়ে বলে
” ইসস অনেকটা কেটেছে। এখনো রক্ত পড়ছে। আল্লাহ আমি কি করবো এখন? ডাক্তারের কাছে যাওয়া প্রয়োজন।
আবরার শুধু ছোট ছোট নয়নে তাকিয়ে থাকে আদ্রিতার মুখ পানে। বিচলিত হতে দেখেও শান্ত স্বরে বলে না “আদ্রিতা এরকম গভীর ক্ষত বহুবার হয়েছে আমার। এবং সেরেও গিয়েছে। আমার জন্য এটা নরমাল। প্লিজজ ভয় পেয়ো না”
আদ্রিতা সময় নষ্ট করে না চটজলদি ফাস্ট এইড বক্স খুলে প্রয়োজনীয় সামগ্রী বের করে নেয়।
এবং দক্ষ হাতে ঔষধ লাগাতে থাকে। আশ্চর্য জনক ব্যাপার হলো আবরার একটুও শব্দ করে না। চুপচাপ বসে থাকে। আদ্রিতা বিরবির করে আওড়ায়

“এটা মানুষ না কি পাথর?
আল্লাহ যে কার পাল্লায় ফেললো।
তখনই এ্যানি উপস্থিত হয় সেখানে। মুখে সাদা রংয়ের ব্যান্ডেল এর ডিব্বা। আদ্রিতার পায়ের নিকট ডিব্বা নামিয়ে মিউ মিউ আওয়াজ তুলে।
আদ্রিতার ঠোঁটের কোণে হাসি ফুটে ওঠে। নিচু হয়ে কোলে তুলে নেয় এ্যানিকে। ঠোঁট দাবিয়ে চুমু খায় কয়েকবার। আদূরে স্বরে বলে
” আমার সোনামনা।
ভালোবাসি তোকে”
পরপরই নামিয়ে দেয় খাটের ওপর। এ্যানি ভদ্র বাচ্চার মতো চুপচাপ বসে পড়ে। গভীর মনোযোগে আবরারকে দেখতে থাকে।
যেনো মনে মনে বলছে “তুমিও একটু কোলে নাও আমায়। চুমু খাও আমার গায়ে। ভালোবাসি বলো”

আতিয়া বেগম নিজের পুরোনো ডাইরি খানা খুলে বসে। সেখানে লেখা রয়েছে জানা অজানা অনেক তথ্য। ছোট বেলা থেকেই ডায়রি লিখতে ভীষণ ভালোবাসতেন তিনি। স্কুল কলেজ থেকে শুরু করে পরিবারের কেউ কিছু বললেও যত্ন করে লিখে রাখতেন ২৫৬ পৃষ্ঠার এই ডাইরি খানায়।
কলেজ লাইফের প্রথম দিন। নতুন কলেজে পা রাখার পরেই মনে ধরেছিলো একটা মানুষকে। সে ওই কলেজে পড়তো না তবে তাকে মাঝেমধ্যেই দেখা যেতো কলেজের আশেপাশে। কিছু দিন যাওয়ার পরে পছন্দের পুরুষটি প্রপোজ করেছিলো আতিয়াকে। সেই দিনটা ছিল আতিয়ার জীবনের শ্রেষ্ঠ দিন। পছন্দের মানুষের থেকে প্রেমের প্রস্তাব পাওয়া চারটিখানি কথা নয়।
তারপর তাদের প্রণয় হলো। কলেজ ফাঁকি দিয়ে ঘুরতে যাওয়া, রাত জেগে ফিসফিস করে ফোনে কথা বলা আরও কতো মধুর স্মৃতি।

হঠাৎ একদিন সকালে আতিয়া জানতে পারলো তার বিয়ে ঠিক হয়েছে এবং আজকেই বিয়ে।
বাধ্য হয়েই মনের মধ্যে একজনকে রেখে আরেকজনকে বিয়ে করতে হলো।
বছর ঘুরতে না ঘুরতেই জন্ম নিলো আবরার।
জন্মের দুই দিন পর্যন্ত কান্না করে নি সে। ডাক্তার নার্স সহ চৌধুরী বাড়ির সকল সদস্য পাগল হয়ে যাচ্ছিলো। সব থেকে বেশি পাগল হয়েছিলো আবরারের বাবা।ছেলের চিন্তায় দুই দিন পর্যন্ত মুখে কিচ্ছুটি তোলে নি।
সেই আবরার ধীরে ধীরে বড় হতে লাগলো বাবার ছায়াতলে। কোনো একটা কারণে অবুঝ শিশু বাবা ছাড়া আর কারোর কোলেই ঠিকঠাক থাকতো না। মায়ের বুকের দুধ খেতো না।

এতে আতিয়ার কোনো ভাবান্তর ছিলো না। কখনোই জোর করে নি দুধ খাওয়ানোর জন্য।
সাত মাস বয়সে আবরার প্রথম কথা বলতে শেখে। তার প্রথম ডাকটাই ছিলো “বাবা”
ধীরে ধীরে আতিয়ার অনুসূচনা হতে লাগলো। ছেলের মুখে মা ডাক শোনার জন্য হৃদয় বিচলিত হয়ে উঠলো।
হামাগুড়ি দিয়ে যখন বাবাকে জড়িয়ে ধরতো তখন আতিয়ারও ইচ্ছে করতো তার কোলেও যদি আসতো।
তখন থেকেই ছেলের প্রতি যত্নশীল হয় সে।

তোমাতেই আসক্ত পর্ব ৩১

ছেলেকে খাওয়ানো, ঘুম পাড়ানো, ছেলের সঙ্গে কথা বলতো। আদূরে বাক্য আওড়াতো।
মা বলে ডাকা শেখাতো।
এবং ১৪ মাস বয়সে এসে মা বলেও ডাকতে শুরু করে।
আর তখনই

তোমাতেই আসক্ত পর্ব ৩৩