তোমাতেই আসক্ত পর্ব ৩৪

তোমাতেই আসক্ত পর্ব ৩৪
তানিশা সুলতানা

আবরার আঁখি পল্লব বন্ধ করে নিজের রাগ নিয়ন্ত্রণ করার চেষ্টা করে। তারপর আদ্রিতাকে ছেড়ে দাঁড়িয়ে পড়ে। ফ্লোরে পড়ে থাকা টিশার্ট খানা তুলে গায়ে জড়াতে জড়াতে দরজার পানে এগোয়। এখনে সিয়াম লাগাতার ডেকে যাচ্ছে। যেনো সুইজারল্যান্ড এ ঘূর্ণিঝড় বয়ে আসছে।
যে কোনো মুহুর্তে সব ভেঙে গুড়িয়ে দিবে।
আবরার দরজা খোলে। সিয়াম হাঁপাতে বলে
“আবরার টনি

বাকিটা শেষ করার আগেই আবরার সিয়ামের হাতে থাকা ফোন খানা কেড়ে নিয়ে। ফোনের স্কিনে কিছু মুহুর্ত তাকিয়ে থাকে গভীর মনোযোগে। অতঃপর ঠোঁট বাঁকিয়ে একটু হাসার চেষ্টা করে বোধহয়। কিন্তু ওই গোমড়া মুখে সেই হাসি খানা ফুটে ওঠে না।
সিয়াম আঙুল মুখে পুরে গোল গোল নয়নে আবরারকে দেখছে। ভাবসাব ভালো ঠেকছে না। নিশ্চয় এমন সকিং নিউজ দেখেও শক খেলো না। বরং ধুরন্ধর মনে নতুন কোনো ফন্দি এঁটে ফেলেছে। এই ছেলেটার মাথা আল্লাহ কোন মাটি দিয়ে তৈরি করেছে সিয়াম ভেবে পায় না।
এই মুহুর্তে তার আবরার তাসনিনকে নিয়ে এক খানা কবিতা আবৃতি করতে ইচ্ছে করছে
” আব্বা আমার বড় সেয়ানা
করে না কারো পরোয়া
দেখতে হিরোর মতো
খালি রাগটা একটু কম হতো
আব্বার সঙ্গে আম্মারে আমি দিয়ে দিতাম বিয়া
নিজের কবিতার লাইন শুনে নিজেই বিরক্ত হয় সিয়াম। বিরবির করে বলে

আরও গল্প পড়তে এখানে ক্লিক করুন 

“শালা গবেট
কবিতার ক ও বুঝিস তুই?
আবোলতাবোল লাইন মিলিয়ে জগাখিচুরি বানিয়ে সেটাই পাবলিককে শোনাস?
কবে জানি জুতোর বাড়ি খাবি তুই।
সিয়াম এর বিরবির করার মাঝেই আবরার বলে ওঠে
” সিয়াম ইমিডিয়েটলি টিকিট বুক কর। কাম ফাস্ট
“কিন্তু কেনো?
মা আর দাদি তো টিকিট আগেই বুক করে রেখেছে।
দুই ভ্রু আড়াআড়ি ভাবে কুঁচকে সিয়াম এর পানে তাকায় আবরার।
এই দৃষ্টির ভাষা সিয়াম এর মুখস্থ। মানে জিজ্ঞেস করছে “কি বললি তুই?”
সিয়াম মুখ বাঁকিয়ে বলে

মা বলে ডাকতে বলেছিলি আদ্রিতাকে৷ তাহলে তো আন্টি তো দাদিই হলো।
আবরার বা হাতে কপাল চুলকায় পরপর সেই হাত খানা রাখে সিয়াম এর কাঁধে। দুবার ছোট ছোট থাপ্পড় দিয়ে বলে
“গুড জব
এভাবে চলতে থাকলে বেস্ট বলদ এর এওয়ার্ড পেয়ে যাবি কনফার্ম।
আর হ্যাঁ
তোর মা আর দাদির টিকিট ক্যান্সেল করে দে।
বলেই পূণরায় কক্ষে ঢুকে পড়ে আবরার।

আদ্রিতা বিছানায় গোল হয়ে বসে আছে। কোলের মাঝখানে এ্যানি। সে পরম শান্তিতে ঘুমচ্ছে। তার মাথায় আদ্রিতার ডান হাত। একটু পর পর হাত ওপর নিচ করে আদর দিয়ে দিচ্ছে। সিয়াম এবং আবরারের কথপোকথন কিছুটা শুনেছে সে। এবার মাথার মধ্যে একটাই চিন্তা ঘুরপাক খাচ্ছে “লোকটা কোথায় যাবে? কেনো যাবে? কি সমস্যা তার? সত্যিই কি মাফিয়া সে?”
বুকের ভেতরটা কেঁপে ওঠে আদ্রিতার। ক্ষণিকের মায়া বলতেও একটা শব্দ রয়েছে৷ অল্প পরিচয়ে কিছু মানুষের শূন্যতা ভীষণ বাজে ভাজে পোরাতে পারে। অল্প পরিচয়ে কিছু মানুষের প্রতি মায়ার সৃষ্টি হয়।
এই যে আদ্রিতা প্রতি মুহুর্তে অনুভব করছে “আবরার নামের ভয়ংকর পুরুষটির জন্য আদ্রিতার হৃদয়ে গভীর জায়গার সৃষ্টি হয়ে গিয়েছে”

জানে আবরার ভয়ংকর তবুও তার সঙ্গ পেতে ভালো লাগে। লোকটা আশেপাশে থাকলে ভালো লাগে। দূরে গেলে পাজি মন খানা লোকটা চিন্তায় বিভোর থাকে।
আবরার কাবাড খুলে কতো গুলো শার্ট টিশার্ট আর জিন্স বের করে খাটের ওপর রাখে। তারপর একটা লাগেজ এনে সেটাও খাটের ওপর রাখে। এবং ব্যস্ত হাতে জামাকাপড় গুলো লাগেজে পুরতে থাকে।
আদ্রিতার মনের কথা গুলো ঘুরপাক খাচ্ছে। মনের কথা চেপে রাখতে না পেরে বলে ওঠে
“ক…..কোথায় যাচ্ছেন আপনি?
হাত থামে আবরারের। তাকায় আদ্রিতার পানে। আদ্রিতা তাকিয়েই ছিলো বিধায় চোখাচোখি হয়ে যায় দুজনের। মুহুর্তেই দৃষ্টি নামায় আদ্রিতা। এই লোকটার লাল লাল চোখের পানে তাকালে কলিজা শুকিয়ে যয আদ্রিতার। কিছু একটা রয়েছে লোকটার দৃষ্টিতে।
আবরার জবাব না দিয়ে পুনরায় জামাকাপড় গোছাতে শুরু করে। বিরক্ত হয় আদ্রিতা। বিরবির করে আওড়ায়

” শয়তান হাতি
মুখে যেনো কুলুপ এঁটে রেখেছে৷ বলি গন্ডার দুই একটা কথা বললে কি তোর জাত যাবে?
আশ্চর্য
ইচ্ছে করে গলা চেপে আধমরা করে ফেলতে।
আদ্রিতার বিরবির করে আওড়ানো বাক্য গুলো বোধহয় শুনে ফেলে আবরার। গম্ভীর স্বরে বলে
“চলে যাচ্ছি
ফিরবো তাড়াতাড়ি
ফট করে আদ্রিতা বলে ওঠে
” কতো তাড়াতাড়ি?
আবরার ঠোঁট বাঁকায়।
সোজা হয়ে দাঁড়িয়ে ডান হাতে কপাল চুলকায়

“ওয়েট এ্যা মিনিট
বলেই কক্ষ ছেড়ে বের হয়। আদ্রিতা ভেংচি কাটে
” এই হাঁদারাম আবার কই গেলো?
আবরার আতিয়ার কক্ষের সামনে গিয়ে থামে। দ্বিধাবোধ কাটিয়ে দরজায় টোকা দেয় দুবার। তৃতীয় বার টোকা দিতেই দরজা খুলে যায়। আতিয়া বেগম সবেই শুয়েছিলো ঘুমানোর উদ্দেশ্যে।
দরজা খুলে ছেলেকে দেখতে পেয়ে বেশ অবাক হয়।
“কিছু বলবি আবরার?
আবরার আতিয়াকে পাশ কাটিয়ে কক্ষে ঢুকে পড়ে। খাটের এক কোণায় বসে মাথা নিচু করে। এবং গম্ভীর স্বরে বলে
” আমি সিঙ্গাপুর যাচ্ছি। কিছু দিন পরে ফিরবো।
আপনি আদ্রিতাকে নিয়ে অহনার বাড়িতে থেকে আসুন এই কটা দিন।
আতিয়া কপাল কুঁচকায়।
মা কি করলো না করলো এসবে কখনোই মাথা ব্যাথা ছিলো না তার। কখনোই মাকে জানায় নি কোথায় যাচ্ছে না যাচ্ছে।
তবে আজকে কি হলো?

আতিয়াকে চুপ থাকতে দেখে আবরার পুনরায় বলে
“আই এ’ম ইন লাভ উইথ আদ্রিতা।
আমি তার সঙ্গে থাকতে চাই
সো তাকে নিয়ে বাংলাদেশে যাওয়ার চিন্তা করবেন না।
টিকিট ক্যান্সেল করে দিয়েছি আমি।
বলেই চলে যায়৷ যেভাবে হুট করে আসলো ঠিক সেভাবেই চলে যায়। আতিয়ার আঁখি পল্লবে অশ্রু জমে। তার ছেলে কথা বললো তার সাথে?
ভালো করে কথা বললো।
কোনো রাগারাগি করলো না।
এবং অকপটে স্বীকার করে নিলো আদ্রিতাকে ভালোবাসে। এই দিনটাও বুঝি দেখার ছিলো?

ভোরের আলো ফুটেছে বোধহয়। সুইজারল্যান্ড এর জুরিখ শহরে অবস্থিত এই ছোট্ট বাড়ি খানা খলমল করছে। দিনের আলোর মতোই উজ্জ্বল। আদ্রিতা ড্রয়িং রুমের সোফায় বসে আছে। কাঙ্ক্ষিত ব্যক্তির জন্য অপেক্ষা করছে সে। আবরার তাসনিন রেডি হচ্ছে। এখুনি বের হবে কক্ষ থেকে। হিরো হিরো লুক নিয়ে চলে যাবে।
তখন আবরারের পেছন পেছন এসেছিলো আদ্রিতা। আতিয়াকে বলা কথাগুলো সে শুনে ফেলেছে। আবরার তাকে ভালোবাসে এই একটা কথা সারা শরীরে কাঁপন সৃষ্টি করছে। লোকটা কি সত্যিই বললো?
তখন থেকে এটাই ভেবে চলেছে আদ্রিতা।
আবরার কক্ষ থেকে বের হয়। পরনে কালো রংয়ের জিন্স কালো শার্ট কালো শু
হাতে ইয়া বড় লাগেজ।
কানে এ্যাপেল এর লোগো ওয়ালা ফোন।
ব্যস্ত ভঙ্গিমায় কারো সাথে ইংরেজিতে কথা বলছে। বড়ই রেগে আছে মনে হচ্ছে।
আদ্রিতাকে পাশ কাটিয়ে চলে যাওয়ার সময় আদ্রিতা দাঁড়িয়ে পড়ে। করুণ স্বরে বলে
” চলে যাচ্ছেন আবরার তাসনিন?
থেমে যায় আবরার। কান থেকে ফোন নামিয়ে পকেটে রাখে। লাগেজের হাতল ছেড়ে দু পা এগিয়ে আসে। ঠোঁট বাঁকিয়ে একটু হাসার চেষ্টা করে ডান হাত বাড়িয়ে চেপে ধরে আদ্রিতার ওষ্ঠ।
হাঙ্কি স্বরে বলে

“যাচ্ছি চলে তবে ফিরবো দ্রুতই।
তোমার ছোট্ট দেহ খানা ব্যাথায় জর্জরিত করতে আমাকে যে ফিরতেই হবে।
আঁখি পল্লব বন্ধ করে নেয় আদ্রিতা। আবরারের হাতের ওপর হাত রেখে বিরবির করে বলে
” আর কতোবার বলবো? মুখ খুলবেন না। আপনার মুখের এক একটা কথা আমার হৃদয় কাঁপিয়ে তোলে।
আবরার হাসলো বোধহয় একটু। ফিসফিস করে বলে
“শুধু হৃদয় নয় আরও অনেক কিছু কাঁপিয়ে তোলার ক্ষমতা রাখে আবরার তাসনিন।
তখনই পেছন থেকে সিয়াম বলে

তোমাতেই আসক্ত পর্ব ৩৩

” কাঁপা-কাঁপি পরে হবে। আগে দৌড়া প্লেন ধরতে হবে। উড়ে চলে গেলো।
আবরার দাঁতে দাঁত চেপে তাকায় সিয়ামের পানে। কঠিন কিছু গালি আওড়িয়ে বলে
“তোকে সিঙ্গাপুরের মাটিয়ে পুঁতে রেখে আসবো। আই সয়্যার।

তোমাতেই আসক্ত পর্ব ৩৫