তোমাতেই আসক্ত পর্ব ৩৭

তোমাতেই আসক্ত পর্ব ৩৭
তানিশা সুলতানা

আট ঘন্টা জার্নি শেষে অবশেষে সিঙ্গাপুরের এয়ারপোর্টে প্লেন ল্যান্ড করে। পূর্বের মতো এখনো আদ্রিতার হাত খানা শক্ত করে চেপে ধরে প্লেন থেকে নামে আবরার।
এয়ারপোর্টের মধ্য দিয়ে বড় বড় পা ফেলে বেরিয়ে আসে। চেকিং টেকিং এর ঝামেলা নেই। সিয়াম এদিক ওদিক নজর ঘুরাতে ঘুরাতে হাঁটছে। যদি কোনো পরির দেখা মিলে যায়। কিন্তু হায়য়য় কোনো পরি তো দূর একটা মেয়েকেও চোখে পড়ে না। চারিপাশে খালি ড্রেস পরিহিত পুলিশ। এখানে কয়েকটা মেয়ে পুলিশ দাঁড়িয়ে থাকলে কি এমন হতো?
পরির মতো মেয়েরা পুলিশের ড্রেসআপে থাকলে এয়ারপোর্টের সৌন্দর্য দ্বীগুণ বেড়ে যেতো। কিন্তু সিঙ্গাপুরের সরকার সেটা বোঝে না। হয়ত নিরামিষ হবেন তিনি।
আমান সিয়াম এর কাঁধে হাত দিয়ে বলে

“কি রে ভাই মেয়ে দেখছিস?
সিয়াম মুখ বাঁকিয়ে বলে
” নো
সিয়াম কোনো মেয়ে ডিজার্ভ করে না।।
আহাদ পাশ থেকে বলে ওঠে
“রাইট
মেয়েদের ম্যানেজ করার এবিলিটি সিয়াম এর নেই। তৃতীয় লিঙ্গ ডিজার্ভ করে সিয়াম।
আমান আর ইভান হেসে ওঠে। সিয়াম কটমট নয়নে তাকায় আহাদের পানে। দাঁতে দাঁত চেপে বলে
” শালা
আমি মেয়ে ডিজার্ভ করি না। পরি ডিজার্ভ করি।
ইভান বলে

আরও গল্প পড়তে এখানে ক্লিক করুন 

“ভাই তোরে কোনো মেয়েই পাত্তা দেয় না। পরি তাকাবে তোর পানে?
রাগ করতে গিয়েও করতে পারে না সিয়াম। আসলেই তো। তার পানে কোনো মেয়েই তাকায় না। পরি তাকাবে কেনো? পরিকে তো আর ভুতে ধরে নাই।
দীর্ঘ শ্বাস ফেলে সিয়াম। অসহায় স্বরে বলে
” ভাই ভাবতেছি ক্রিম আপার থেকে একটা ক্রিম নিবো। সেটা মেখে একটু সুন্দর হবো।
আমান বলে ওঠে
“ভাই আমি ভাবতেছি তোকে ক্রিম আপার সাথেই বিয়ে দিয়ে দিবো। চলবে না?
সিয়ামের চোখ দুটো চকচক করে ওঠে। আমানের হাত ধরে বলে
” ক্রিম আপা করবে আমায় বিয়ে?
“করলেও করতে পারে।

আদ্রিতা আবরারের হাত ধরে হাঁটছে ঠিকই তবে তার মনোযোগ ছিলো সিয়ামদের কথাতে। মিটমিট করে হাসছে সে।
হঠাৎ করে একটা ট্রলির সাথে পা বেঁধে যায় আদ্রিতার। অসাবধানে হাঁটার ফলেই এমনটা হয়। একটুখানি ব্যাথা পায় পায়ে। মৃদু স্বরে “আহহহহ” বলে ওঠে।
আবরার দাঁড়ায়। পাশ ফিরে ট্রলির পানে তাকায়। ট্রলি খানা মাঝারি বয়সে একটা মেয়ে ঠেলে নিয়ে যাচ্ছিলো। সে অনবরত “স্যরি” শব্দটা আওড়াচ্ছে।
সেই স্যরিতে আদ্রিতার মন গললেও আবরারের গলে না।
সে ক্রোধের সাথে লাথি মারে ট্রলিতে। দুটো লাগেজ এবং একটা হ্যান্ডব্যাগ সহ ট্রলি খানা উল্টে যায়। চমকে ওঠে সকলেই। এখানেই শেষ নয়। উল্টে পড়া ট্রলি টিকে আরও কয়েকবার পায়ের আঘাতে ভেঙে ফেলে।
মেয়েটি ভয়ে কয়েক পা পিছিয়ে যায়।

আদ্রিতা সিয়াম এর পেছনে গিয়ে লুকায়।
কিছু পুলিশ দৌড়ে আসে।
আবরার তাসনিন এর বাহু ধরে জিজ্ঞেস করে
“হোয়াট হ্যাপেন্ড?”
আবরার জবাব দেয় না। ঝাঁড়ি মেরে পুলিশের হাত সরিয়ে দেয় নিজের কাঁধ হতে। তারপর ভয়ে সিঁটিয়ে যাওয়া মেয়েটির পানে তাকায় এবং বাংলা ভাষায় বলে
“তোর জন্য আমার বউ ব্যাথা পেলো। খু*ন করে দিতে ইচ্ছে করছে তোকে।
মেয়েটি হাউমাউ করে কেঁদে ওঠে। দুই হাত জোর করে ক্ষমা চাইতে থাকে।
সিয়াম গালে হাত দিয়ে দৃশ্য খানা দেখে। এবং বিরবির করে বলে

” ওরেহহহ শালা
ঘরে তুই নিজে আয়রন মেশিন দিয়ে হাত পুরিয়ে দিস। আর বাইরে সামান্য গাছের সাথে গুতা লাগলে গোটা দুনিয়ার সকল গাছকেই উপড়ে ফেলিস।
ভাই তুই সাইকো না
তুই হলি গিরগিটি
তোর এই বিহেভিয়ার দেখে এক খানা কবিতা মাথায় আসলো
“দেখতে বড়ই ভোলাভালা
মনটা বেশ নরম
নিজে মারলে আদর
আর অন্য কেউ তাকালেই মেজাজ গরম?
গুরু তোমার তুলনা নেই
তুমিই বিশ্ব সেরা
আমার আব্বা বিখ্যাত প্রেমিক
সিয়াম তোর নেই কোনো প্যারা

পুলিশ আবরারকে বুঝিয়ে শুনিয়ে চলে যেতে বলে। চোখ দুটো বন্ধ করে জোরে জোরে শ্বাস টানতে আবরার। অতঃপর মেজাজ একটু ঠান্ডা হলে চোখ খুলে। পাশ ফিরে আদ্রিতার পানে তাকায়। সিয়ামের পেছনে লুকিয়ে আছে। আবরার বড় বড় পা ফেলে আদ্রিতার দিকে এগিয়ে যায়। গম্ভীর স্বরে জিজ্ঞেস করে
” আর ইউ ওকে?
আদ্রিতা চটজলদি বলে ওঠে
“হ্যাঁ হ্যাঁ একদম ওকে
কিছুই হয় নি আমার।
পূণরায় আদ্রিতার হাত খানা মুঠো করে ধরে আবরার।
” লেটস গো
আবারও সকলেই হাঁটতে থাকে। ওই তো এয়ারপোর্টের বাইরে কালো রংয়ের দুই খানা লেম্বারগিনি রাখা। গাড়ির পাশে দুজন গার্ড দাঁড়িয়ে আছে চাবি হাতে। আবরার প্রথম গাড়িটার সামনে গিয়ে দাঁড়ায়। গার্ডের থেকে চাবি নিয়ে তাকে “ইউ ক্যান গো”

বলেই গাড়িতে বসে পড়ে। আদ্রিতা হা করে দাঁড়িয়ে আছে। এতো সুন্দর গাড়ি সে কখনোই দেখে নি।
সিয়াম আমান আহাদ এবং ইভান অপর গাড়িতে বসে পড়েছে। বরাবরই আমান ড্রাইভিং এ সেরা। তাই সেই গাড়ি চালানো প্রস্তুতি নিয়েছে।
আদ্রিতাকে এভাবে দাঁড়িয়ে থাকতে দেখে আবরার বলে
“হেই
দাঁড়িয়ে আছো কেনো?
এসো?
আদ্রিতা শুকনো ঢোক গিলে গুটিগুটি পায়ে এগিয়ে আসে। এবং গাড়ির দরজা খুলে ভেতরে ঢুকে পড়ে।
সাথে সাথে আবরার স্টারিং ঘুরিয়ে গাড়ি চালানো শুরু করে।
আট ঘন্টা প্লেন জার্নি করেছে ঘুমিয়ে ঘুমিয়ে এখন আর ঘুম আসছে না। আবার পাশে বসে থাকা বোরিং মানুষটার সাথে কথা বলতেও ইচ্ছে করছে না।
যেচে কথা বলতে গেলে ঠোঁট কাটার মতো কিছু একটা বলে দিবে আর আদ্রিতা লজ্জায় আধমরা হয়ে যাবে। তার থেকে বরং সিঙ্গাপুর দেশটাকে উপভোগ করা যাক।
সিঙ্গাপুরের সবচেয়ে বিলাসবহুল হোটেলগুলির মধ্যে “Marina Bay Sands” অন্যতম। এটি সিঙ্গাপুরের সবচেয়ে পরিচিত এবং বিলাসী হোটেল হিসেবে পরিচিত।
Marina Bay Sands হোটেলটি ৫৪ তলা বিশিষ্ট এবং এটি তিনটি পৃথক ভবনের সমন্বয়ে তৈরি, যার উপর একটি বিশাল সাঁতার পুল (Infinity Pool) রয়েছে। এটি সিঙ্গাপুরের আকাশপথে একদম শীর্ষে থাকা বিলাসী হোটেলগুলির মধ্যে অন্যতম।

(এসব চ্যাটজিপি থেকে জেনেছি আমি)
দীর্ঘ এক ঘন্টা জার্নির পরে হোটেলের সামনে গাড়ি থামে। আদ্রিতা নামার প্রস্তুতি নেয়। সিটবেল্ট খুলে ফেলে তখুনি আবরার বলে ওঠে
“আদ্রিতা উইল ইউ ম্যারি মি?
চমকায় আদ্রিতা। পাশ ফিরে আবরারের মুখ পানে তাকায়। বড়ই ক্লান্ত লাগছে লোকটাকে। বিলাই আঁখি পল্লব টকটকে লাল হয়ে আছে।
শুকনো ঢোক গিলে আদ্রিতা। মাথা নিচু করে কিছু বলতে যায়
তার আগেই আবরার কোমর জড়িয়ে ধরে তার।
কাঁধে মুখ গুঁজে ফিসফিস করে বলে
” আই ক্যেন নট কন্ট্রোল মাইসেল্ফ।
জানো প্লেনে কতো কষ্টে কন্ট্রোল করেছি?
আমি চাচ্ছি আজকে এখুনি তোমাকে দ্বিতীয় বার বিয়ে করতে।
আদ্রিতা আবরারকে নিজের থেকে সরানোর চেষ্টা করে না। বরং চুলের ভাজে হাত ঢুকিয়ে বলে
“আমি আসিফ
বাকিটা শেষ করার আগেই আবরার ছেড়ে দেয় আদ্রিতাকে। দাঁতে দাঁত চেপে বলে
” আই ফা*****
ইডিয়েট

তারপর পকেট হাতড়ে ফোন বের করে। গাড়ির ব্যাক সিট হতে একটা ছোট্ট ব্যাগ নিয়ে নেয় এবং তা থেকে সিমকার্ড বের করে ফোনে সেট করে নেয়।
পরপরই কল করে কোনো এক নাম্বারে
“বিয়ে ক্যান্সেল
সবাইকে বিদেয় করো।
বাসর হবে কনফার্ম
সব কিছু সেটআপ করো। কুইক
বলেই কল কাটে।
আদ্রিতা হাবলার মতো তাকিয়ে থাকে। কি হয়ে গেলো?

তোমাতেই আসক্ত পর্ব ৩৬

সে তো আবেগি হয়ে বলতে যাচ্ছিলো ” আমি আসিফকে বিয়ে করতে চাইতাম। ভালোও বাসতাম।
কিন্তু আপনি আসার পরে আমার স্বপ্ন বদলে গেছে। আসিফ নামটা আর মনেই পড়ে না”
হতাশ আদ্রিতা মনে মনে নিজেকে এক দরফা বকা ঝকা করে পাশে তাকাতেই দেখতে পায়

তোমাতেই আসক্ত পর্ব ৩৮