তোমাতেই আসক্ত পর্ব ৪৫
তানিশা সুলতানা
হাসপাতালে ভর্তি করানো হয়েছে আদ্রিতাকে। তেমন কোনো ক্ষতি হয় নি জাস্ট ভয় পেয়ে সেন্সলেস হয়ে গিয়েছে।
সিয়াম আমান ইভান এবং আহাদ হাসপাতালের করিডোরে বসে আছে। আবরার এখনো আসে নি। না আসার কারণটাও ওদের জানা।
এ্যানি গুটিসুটি মেরে বসে আছে আমানের কোলে। বড়ই চিন্তিত সে। কুটুর কুটুর নয়ন মেলে আদ্রিতার কেবিনের পানে তাকিয়ে আছে।
এমন মুহুর্তে সিয়ামের পেটের ভেতর গুড়ুম গুড়ুম শব্দ করে ওঠে। ওয়াশরুম ঘুরে আসা প্রয়োজন। গতকাল থেকে পেটটা বেশ জ্বালাতন করছে। কিছু মুহুর্ত পরপরই ওয়াশরুমের পানে ছুটতে হচ্ছে।
দাঁড়িয়ে পড়ে সিয়াম৷ নাক মুখ কুঁচকে বলে
“তোরা থাক। আমি ওয়াশরুম ঘুরে আসি।
আহাদের নজর পড়ে পেছনে। এই মেয়েটাকে কাল দেখলো না সিয়ামের ফোনে? এই তো কল করেছিলো। ভালো করে খুঁটিয়ে খুঁটিয়ে দেখে নেয় আহাদ। পরপর শিওর উচ্চস্বরে বলে ওঠে
” আরেহহ সিয়াম
ওয়াশরুমে কেনো যাবি?
হাগু পেয়েছে?
সিয়াম নাম শুনে ইশারা থমকায়। ঘাড় বাঁকিয়ে তাকায় চার বালক এর পানে। কালো রংয়ের শার্ট পরিহিত সিয়ামকে চিনতে অসুবিধা হয় না। কেনোনা গতকাল বেশ অনেকক্ষণ সময় নিয়ে আইডি ঘেটে দেখেছে। মুখস্থ হয়ে গিয়েছে সিয়ামের মুখশ্রীর বিবরণ।
ইশারা দু পা এগোয় কথা বলার জন্য। সেই মুহুর্তেই শুনতে পায় সিয়াম বলা বাক্য গুলো
“হাগু আবার কি?
ওয়াশরুমে মেয়ে নিয়ে ঢুকবো সে*** করতে।
হাগু ফাগু না।
কান গরম হয়ে ওঠে ইশারার।
সেখানেই পা থেমে যায়৷ শুকনো ঢোক গিলে মাথা নিচু করে ফেলে।
আমান আহাদ হেসে ওঠে। ইভান মুখ বাঁকিয়ে বলে
” তোর মেশিন ঠিক নাই শালা। দীর্ঘ দিন অচল পড়ে থাকায় জং ধরে গেছে।
সে*** করতে পারবি না।
সো হাগু করতেই যাচ্ছিস। আই এম শিওর৷
সিয়াম থেমে যাওয়ার পাত্র নয়। সে ইভান এর দিকে এগিয়ে বলে
“চল শালা তোকে দেখাবো মেশিন এর পাওয়ার।
এখুনি যাবি আমার সাথে। ওঠ
আর কিছু শোনার সাহস হয় না ইশারার। সে দু পা পিছিয়ে যায়। উল্টো ঘুরে দৌড় দিবে সেই মুহুর্তেই আহাদ বলে ওঠে
আরও গল্প পড়তে এখানে ক্লিক করুন
” আরেহহহ ইশারা যে।
আসুন ভাবি আসুন
আপনার কথা অনেক বলেছে সিয়াম।
দৌড় দেওয়া আর হয় না ইশারার। ইতোমধ্যেই সিয়াম আমান ইভান তাকিয়ে ফেলেছে ইশারার পানে।
সিয়ামের আঁখি পল্লব বড় বড় হয়ে যায়। এতোক্ষণ যা বললো সব কিছু কি শুনে ফেললো ইশারা? ওহহ নো
বার বার মানসম্মান ডুবে যাচ্ছে কেনো?
কেনো?
কেনো?
ইশারা একটু হাসার চেষ্টা করে এগিয়ে আসে। জিভ দ্বারা ঠোঁট ভিজিয়ে সালাম দেয়। সবাই এক সাথে সালাম ফেরায়। আমান বলে
“আপনি ভীষণ সুন্দর। আমি তো ক্রাশ খেয়ে গিয়েছি। ইসস কেনো যে আপনার ওড়না আমার ঘড়ির সঙ্গে আটকালো না।
সিয়াম কটমট নয়নে তাকায় আমানের পানে। যেনো কাঁচা চিবিয়ে খাবে।
ইশারা অপ্রস্তুত হেসে বলে
” আ…আমি আসছি হ্যাঁ
ভালো থাকবেন।
বলেই দৌড়ে চলে যায়।
সিয়াম দীর্ঘ শ্বাস ফেলে বসে পড়ে। দুই হাতে কপাল চেপে ধরে বলে
“তোরা আছিস যতদিন
আমার প্রেম হবে না ততদিন
ইভান সিয়াম এর চুলে হাত বুলিয়ে বলে
” কাঁদিস না ভাই। একদ
বাকিটা শেষ করার আগেই সেখানে উপস্থিত হয় আবরার তাসনিন। বরাবরের মতোই মুখশ্রী গম্ভীর। সাদা রংয়ের শার্ট পড়েছে। ওপরের তিনটে বোতাম খোলা। কানে ব্লুটুথ হাতে ফোন। কারো সঙ্গে কথা বলতে বলতে এসেছে বোধহয়।
সিয়াম বিরবির করে বলে
“এসে গেছে সাইকো
এবার এক দাগা ইংরেজি ঝাড়বে। যেনো সে ইংরেজদের বংশধর।
হলোও তাই।
আবরার ওদের পানে তাকিয়ে বলে ওঠে
“Whare is Adrita?
আবরারকে দেখে এ্যানি মিউ মিউ আওয়াজ তুলে। আমানের কোল থেকেই লাফালাফি শুরু করে দেয়। মানে এখুনি আমাকে কোলে নাও।
আবরার পকেটে ফোন পুরে হাত বাড়ায়। এ্যানিকে কোলে নিয়ে মাথায় হাত বুলাতে থাকে।
এদের আদিক্ষেতা দেখে সিয়াম আফসোসের সুরে বলে
“ওরেহহ মফিজের বাপ
দুনিয়ায় যত ঢং আছে সবই দেখিয়ে দিলি আমাদের।
তোর ঢং দেখতে দেখতেই চুল পেকে গেলো।
আবরার বিরক্ত স্বরে বলে
” জাস্ট সাট আপ সিয়াম।
বকবক বন্ধ করে বল পাখি কোথায়?
আমান হাতের ইশারায় কেবিন দেখিয়ে দেয়। আবরার এক মুহুর্ত দেরি না করে কেবিনে ঢুকে পড়ে।
সাদা রংয়ের বেডে ঘুমিয়ে আছে আদ্রিতা। বুক ওবদি চাদর টানা। আবরার ধীর গতিতে পা বাড়িয়ে আদ্রিতার পাশে গিয়ে দাঁড়ায়। এ্যানিকে বেডের ওপর রেখে নিজেও বসে পড়ে টুল টেনে। সিয়াম আমানও ঢুকে পড়ে আবরারের পেছন পেছন। আহাদ আর ইভান চলে গেছে বিল মেটাতে। ওদের ভালো করেই জানা আছে এখুনি আদ্রিতাকে রিলিজ করানো হবে। আবরার তার আদরের বউকে আর রাখবে না হাসপাতালে।
আমান বলে ওঠে
“শালা তুই একটা সাইকো
কবে যেনো তোর হাতেই মরবে আদ্রিতা।
আবরার মৃদু হাসে। আদ্রিতার গালে হাত রাখে। শুকনো ওষ্ঠের পানে তাকিয়ে বলে
” ততটুকুই আঘাত করেছি যতটা ও সহ্য করবে পারবে। ওকে না দেখে দুই সেকেন্ডও থাকতে পারি না। মেরে ফেললে বাঁচবো কি করে?
সিয়ামের বড্ড বলতে ইচ্ছে করছিলো
“শালার পুত সুমুন্ধি ওকে না দেখে না চেপে ধরে চুমু না খেয়ে দুই সেকেন্ডও থাকতে পারিস না।
এখুনি বলবি ” তোরা বাইরে যাহহ আমার প্রাইভেসি প্রয়োজন” আমরা বাইরে চলে গেলেই চেপে ধরে চুমু খাবি।
সিয়ামের ভাবনার মাঝেই আবরার বলে ওঠে
“আমার প্রাইভেসি লাগবে৷
তোরা বাইরে ওয়েট কর।
নিজের ভাবনা সত্যি হওয়াতে হাসে সিয়াম।
“সন্ধ্যা বেলা বেগুন ক্ষেতে করতে গেলাম চুরি
বেগুন ওয়ালা ওমনি আমার হাতটা নিলো ধরি
ধইরা নিয়া ভইরা দিলো বেগুন আমার থলিতে
আর যাবো না বেগুন তুলিতে
গানের লাইন গুলো আওড়াতে আওড়াতে কেবিন থেকে বেরিয়ে যায় সিয়াম। আবরার ভ্রু কুচকে বলে
” এটা আবার কেমন গান?
আমান দাঁত কেলিয়ে জবাব দেয়
“আমার ক্রাশ নার্গিস বেবির বিখ্যাত গান। কোনো একদিন তোরে শোনাবোনি।
” এসব ফালতু গান শোনার সময় নেই আমার।
“শুধু রোমাঞ্চ করার সময় আছে।
আবরাট ভ্রু কুচকে তাকায় আমানের পানে। মুহুর্তেই সে দৌড়ে বেরিয়ে যায়। যাওয়ার সময় দরজা আটকে দিতে ভুলে না। এরা কি ভাবে আশ্চর্য।
আবরার কি শুধু রোমাঞ্চই করে?
ফোঁস করে শ্বাস টানে আবরার। তাকায় এ্যানির পানে। মাথায় হাত বুলিয়ে নরম স্বরে বলে
” পাপা মাম্মামকে কিস করবে। গুড গার্লের মতো চোখ বন্ধ করে রাখো।
ওকেহহহ বাবু?
এ্যানি কি বুঝলো কে জানে। গোল গোল নয়নে আবরারকে দেখতে থাকলো। আবরার আদ্রিতার গায়ের চাদর দ্বারা এ্যানির মুখ খানা ঢেকে দেয়।
“দশ মিনিট এভাবেই থাকো।
বলেই আদ্রিতার দিকে ঝুঁকে। ঘুমন্ত মুখ পানে ভালো করে নজর বুলিয়ে মুখ এগিয়ে নেয়। শুকনো ঠোঁটে হালকা করে ঠোঁট ছোঁয়ায়। পরপর জুতো খুলে আদ্রিতার ওপরে আধশোয়া হয়ে দুই গালে হাত রাখে।
গভীর ভাবে ওষ্ঠ মিলিয়ে দেয় আদ্রিতার ওষ্ঠের ভাজে।
তোমাতেই আসক্ত পর্ব ৪৪
ক্রমাগত বাড়াতে থাকে ওষ্ঠের সংঘর্ষণ। ঘুমন্ত আদ্রিতার ঘুম ছুটে যায়। পিটপিট করে চোখ খুলতেই আবরারের মুখশ্রী দেখতে পায়। এবং অনুভব করতে পারে তার সাথে ঠিক কি হচ্ছে?
ছটফটিয়ে ওঠে আদ্রিতা। নিজেকে ছাড়াতে চায় আবরারের থেকে।
আবরার ভদ্র বাচ্চার ন্যায় ছেড়ে দেয়। নেমে পড়ে আদ্রিতার ওপর থেকে। ডান হাতের বৃদ্ধা আঙুল দ্বারা ঠোঁট মুছতে মুছতে এ্যানিকে উদ্দেশ্য করে বলে
“এ্যানি তোমার মাম্মাকে দেখলেই গায়ের লোম দাঁড়িয়ে যায় চুমু খাওয়ার জন্য। সে এতোটা হট না হলেও পারতো।