তোমাতেই আসক্ত পর্ব ৪৮
তানিশা সুলতানা
এ্যানির পেছনের অংশ পুরোপুরি গাড়ি চাপা পড়েছে। একদম ছিন্ন ভিন্ন হয়ে গিয়েছে৷
গলা কাটা মুরগীর মতো ছটফট করছে প্রাণীটি। মিউ মিউ আওয়াজ তুলে বলছে অনেক কথা। তার দৃষ্টি এখনো আদ্রিতাকে নিয়ে চলে যাওয়া গাড়িটি খুঁজছে৷ অনবরত দৃষ্টি ঘুরিয়ে পাগলের মতো খুঁজছে। কিন্তু হায়য় কালো রংয়ের সেই গাড়িটি আর দেখতে পায়। এ্যানির ব্যথিত হৃদয় হয়ত আর্তনাদ করে বলছে “আমি পারলাম না বাঁচাতে। আমার সঙ্গীকে বাঁচাতে ব্যর্থ হলাম আমি।
সিয়াম এর কলিজা কাঁপছে। ডান পায়ের হাঁটুতে ভীষণ বাজে ভাবে চোট পেয়েছে। নারাতেও পারছে না। দুই হাতের কনুই ছিঁলে গিয়েছে৷ কপালের বাম পাশটায় গভীর ক্ষত। আঁখি পল্লব বন্ধ হয়ে আসছে। হাত বাড়িয়ে এ্যানিকে ছোঁয়ার চেষ্টা করে সিয়াম। তবে ছুঁতে পারে না। এ্যানিকে ছুঁতে হলে কয়েক হাত এগোতে হবে। সিয়াম দাঁড়ানোর চেষ্টা করে তবে পারে না। শেষ মেষ বুক দিয়ে হামাগুড়ি দিয়ে পথ টুকু এগোয়। পিচ ঢালা রাস্তার ঘর্ষণে বুকে আঘাত পায়। এ্যানির কাছে আসতেই আহত প্রাণীটিকে কোলে তুলে নেয়। বুকের সাথে চেপে ধরে বিলাপ বকতে থাকে
“এ্যানি
আমার এ্যানি
আল্লাহ কি হয়ে গেলো। কতো রক্ত। এ্যানিরে তোমার কিছু হবে না। আ…আমি আছি তো।
তার এর কথা গুলো শুনতে পেলো না বোধহয় এ্যানি৷ সে কান্না ভেজা নয়নে সিয়াম এর মুখ পানে তাকায়। মিউ মিউ আওয়াজ তুলে বলে ভেতরে জমানো কথা গুলো।
সেই কথা গুলো নিশ্চয় আদ্রিতাকে নিয়ে।
“সিয়াম ভাইয়া তুমি বাঁচাও আমার সঙ্গীকে। আবরারকে খবর পাঠাও। আদ্রিতাকে বাঁচাও।
আঁখি পল্লব বন্ধ হয় এ্যানির। শরীরের যে টুকু অংশ অক্ষত ছিলো সেই টুকু স্থির হয়ে লুটিয়ে পড়ে সিয়াম এর বুকে। শেষ নিঃশ্বাস ত্যাগ করে দুনিয়া থেকে বিদায় নেয়।
আরও গল্প পড়তে এখানে ক্লিক করুন
সিয়াম স্তব্ধ হয়ে যায়। হাত কাঁপছে তার। নিজের ব্যালেন্স ধরে রাখতে পারছে না। তাই এ্যানির নিথর দেহখানা শুয়িয়ে দেয় রাস্তায়। হাত এবং শার্টে রক্ত লেগে আছে। এগুলো এ্যানির রক্ত। একটা পোষা বিড়াল। যার সাথে পরিচয় হয়েছে দু মাস আগে। প্রথমদিন যখন আদ্রিতার কোলে বিড়ালটিকে দেখেছিলো ভীষণ হাসি পাচ্ছিলো। মনে মনে বলেছিলো “বিড়ালকেও মানুষ ভালোবাসে? আদর করে?”
কিন্তু সময়ের সাথে সাথে নিজেও ভালোবেসে ফেলেছিলো আদূরে ছানাটিকে। মায়ায় জড়িয়ে পড়লো।
আমান আহাদ ইভান গাড়ি নিয়ে খুঁজতে বেরিয়েছিলো সিয়ামকে।
আমান ড্রাইভ করছে ইভান এবং আহাদ রাস্তার এপাশে ওপাশে নজর ঘুরিয়ে খুঁজে চলেছে। হঠাৎ করে আহাদ এর নজর পড়ে রাস্তার পাশে বসে থাকা সিয়ামের পানে।
সঙ্গে সঙ্গে বলে ওঠে
“আমান স্টপ দ্যা কার।
সিয়াম ওখানে।
গাড়ি থেমে যায়। ওরা পৌঁছানোর আগেই সিয়াম সেন্সলেস হয়ে পড়ে যায়। এ্যানির শরীরে হাত রেখে অবচেতন হয়ে পড়েছে সে।
অহনার ছোট্ট বাচ্চাটির জ্বর হয়েছিলো। নরমাল জ্বর। সব বাচ্চাদেরই হয়। ডাক্তার দেখিয়ে ঔষধও এনেছিলো। কিন্তু সেটাই যেনো কাল হয়ে দাঁড়ালো বাচ্চাটির জন্য। ঔষধ খাওয়ার পর থেকেই জ্বর বাড়তে থাকে। এক পর্যায়ে হাসপাতালে ভর্তি করানো হয়। ডাক্তার জানায় টাকার প্রয়োজন। কিন্তু এই মুহুর্তে হেলেন এর কাছে পর্যাপ্ত পরিমাণে টাকা নেই। সেই জন্যই আবরারকে কল করা হয়। আবরার টাকা পাঠানোর জন্য হাসপাতাল থেকে বের হতেই তার ওপর আক্রমণ করা হয়। পনেরো জন্য গুন্ডার সাথে লড়াই করে জিতেছে তবে আঘাতও পেয়েছে। সেই আঘাতকে পাত্তা না দিয়ে ছুটে আসে হাসপাতালে।
রিসিপশন থেকেই জানতে পারে আদ্রিতা মিসিং। সেই সাথে তার চার বন্ধুও নেই। আশ্চর্য হয় না আবরার। যখনই গুন্ডা দেখেছে তখনই ধারণা করে ফেলেছিলো এমন কিছুই হবে। আঁখি পল্লব বন্ধ করে জোরে জোরে শ্বাস টেনে নিজেকে শান্ত করার চেষ্টা চালায় আবরার। পকেট থেকে ফোন বের করে আমানের নাম্বারে ডায়াল করে। রিং হওয়ার আগেই দেখতে পায় সিয়ামকে ধরে তিনজন হাসপাতালে ঢুকছে। আবরার এগিয়ে যায় না। ঠায়য় দাঁড়িয়ে দেখতে থাকে সিয়াম এর রক্তাক্ত মুখশ্রী।
আবরার তাসনিন। শেষবার কেঁদেছিলো বাবার মৃত্যুতে। উহু
বাবা পৃথিবী থেকে চলে গেলো। মাথার ওপরের বটগাছটা আর কখনোই ছায়া দেবে না। এসব ভেবে নয়।
বাবা মাকে এতো ভালোবাসলো তার বিনিময়ে একটু ভালোবাসা পেলো না। মায়ের খুশির জন্য আসমান থেকে চাঁদ আনতেও প্রস্তুত ছিলো অথচ মা তার সাথে ভালো করে দুটো কথা বলতো না। আবরার ভাবতো মা বোধহয় এমনই। ভালোবাসা প্রকাশ করতে জানে না। কিন্তু তার প্রাক্তনে এবং প্রেমের কাহিনি জানতে পেরে ভীষণ দুঃখ হয়েছিলো। একটা ভুল মানুষের জন্য বাবাকে আঘাত দিয়ে মেরে ফেললো এটাই আবরার চোখ দুটো ভরিয়ে দিচ্ছিলো।
একরাশ কষ্ট এবং ধোঁকা পেয়ে পৃথিবী ছাড়লো বাবা। এ একটা ভাবনাই ভেতরটাকে ক্ষত বিক্ষত করে তুলছিলো।
সেসব পুরোনো কথা।
আজকে নতুন করে আবরারের বিলাই আঁখি পল্লবে অশ্রুকণা জমেছে। গম্ভীর রগচটা আবরার একটা বিড়াল এর জন্য কাঁদছে।
ইতিহাস কি এটা মেনে নিবে?
সিয়াম এর জ্ঞান ফিরেছে। পায়ে ব্যান্ডেজ করা হয়েছে। কপালেও সাদা রংয়ের ব্যান্ডেজ। কিভাবে এ্যানি মারা গেলো সেই ঘটনাই শোনাচ্ছে আপাতত সে। আর বাকিরা মনোযোগ দিয়ে শুনছে।
এক পর্যায়ে আহাদ বলে ওঠে
“আদ্রিতাকে বাঁচাতে গিয়ে এ্যানি প্রাণ হারালো। ওই ছোট্ট প্রাণীটা এতো ভালোবাসতো আমাদের মাকে?
আমান চোখের পানি মুছে। আবরারের দিকে এগিয়ে গিয়ে বলে
“তুই বসে আছি এভাবে?
আদ্রিতা নিখোঁজ হওয়ার আট ঘন্টা হয়ে গেলো। খুঁজবি না ওকে?
আহাদ বলে
” কোনো দরকার নেই খোঁজার।
কতো ভালো ছিলাম আমরা। নিজেদের কাজ এবং আড্ডা নিয়ে ব্যস্ত থাকতাম। মাঝেমধ্যে আবরার দুই একটা খু/ন করলে আমরা সেটা মিটমাট করে ফেলতাম মুহুর্তেই।
কিন্তু আদ্রিতা আসার পর থেকে সব কিছু বদলে গিয়েছে। শত্রু তৈরি হচ্ছে আমাদের। আড
বাকিটা শেষ করার আগেই সিয়াম বলে
“সাট আপ আহাদ। আদ্রিতা নয়। সে আমাদের বোন।
সিয়ামের গম্ভীর স্বর শুনে আর কিছু বলার সাহস হয় না আহাদের। চুপসে যায় মুখ খানা।
তখনই আবরারের ফোন বেজে ওঠে। ঠোঁট বাঁকায় আবরার। সে জানে কে কল করেছে।
তাই চটজলদি রিসিভ করে। ওপাশ থেকে ভেসে আসে কান্না জড়ানো কন্ঠস্বর
” আবরার আপনি কোথায়?
আমাক
বাকিটা শেষ করার আগেই আবরার বলে ওঠে
“মাত্র আট ঘন্টা হলো দূরে গিয়েছো। এতো হাইপার হওয়ার কি ছিলো? থাকো কয়েক বছর।
এমন কথায় আদ্রিতা কেঁদে ওঠে হু হু করে। তার সামনে টনি নামক লোকটা এবং তার দলের কিছু সদস্য রয়েছে।
আরিফ চলে গিয়েছে হোটেল এ। যেখানে আদ্রিতা আবরার ছিলো। আদ্রিতার পাসপোর্ট যে সেখানেই রয়েছে।
টনি শুকনো ঢোক গিলে। লাইড স্পিকারে দিয়েছিলো। আবরারের ব্যাকুল কন্ঠস্বর শুনতে চেয়েছিলো সে। কান্না জড়িত স্বরে বলবে “আদ্রিতা টনির কাছে ফোন দাও। আমি তাকে মিনতি করবো তোমাকে ছেড়ে দেওয়ার জন্য”
টনি নিজের ভাবনার মাঝে পূণরায় শুনতে পায় আবরারের কন্ঠস্বর
“পাখি টনিকে বলে দিও।
এক ঘন্টার মধ্যে তোমাকে আমার কাছে এনে না দিলে ওর বউকে রাস্তায় নামাবো উইথ আউট ড্রেসআপে।
বলেই কল কাটে।
আমান আহাদ সিয়াম ইভান হা করে তাকিয়ে আছে আবরারের মুখ পানে।
” ভাই তুই জানতে চাইলি না ও কোথায় আছে?
আবরার সোফায় গা এলিয়ে দিয়ে বলে
“এয়ারপোর্ট এর ঠিক অপজিটে গোলাপি রংয়ের বাংলোতে আছে।
আমান বলে
তোমাতেই আসক্ত পর্ব ৪৭
” যাবি না আনতে?
“আনতে গেলেই দিয়ে দিবে? দেখতে দিবে আমার পাখিকে? একটুখানি ছুঁতে দিবে?
দিবে না রে।
বরং অনেক দূরে নিয়ে যাবে।