তোমাতেই আসক্ত পর্ব ৫২
তানিশা সুলতানা
হাসপাতালে ভর্তি থাকা টনির ভাই মা*রা গিয়েছে। সকালেও তার সঙ্গে কথা হয়েছে টনির। ক্ষত গুলো শুকিয়ে গিয়েছিলো প্রায়। একটু আতটু হাঁটাচলা করতে পারতো। ডাক্তার জানিয়েছে আজকালের মধ্যে ডিসচার্জ করে নিতে পারবে।
কিন্তু এখন কল করে জানালো “হি ইজ নো মোর”
কেউ হাসপাতালের বেডে ঢুকে সুট করে দিয়েছে।
টনি ঠিক জানে এটা আবরার তাসনিন এর কাজ। ভাইকে নিজের প্রাণের থেকেও বেশি ভালোবাসতো টনি। ছোট থেকে আজ ওবদি ভাইয়ের কোনো ইচ্ছে অপূর্ণ রাখে নি৷ সেই ভাইকে চিরতরে হারিয়ে ফেললো।
হাত ফঁসকে ফোন খানা পড়ে গিয়েছে বেশ কিছুক্ষণ আগেই। ফ্লোরে হাঁটু মুরে বসে পড়ে। ক্রোধ এবং দুঃখ দুটোই আঁখি পল্লব ভিজিয়ে দিচ্ছে।
বিরবির করে বলে
“একটা মেয়ের জন্য তুই যে ধ্বংস লীলা শুরু করেছিস আবরার তাসনিন।
সেই ধ্বংস লীলায় তোকেই জ্বালিয়ে মারবো আমি।
যে মেয়ের জন্য এতো পাগলামি সেই মেয়েকেই তোর জীবন থেকে চিরতরে সরিয়ে ফেলবো”
এখানে আবরার থাকলে হয়ত জবাব দিতো “আমার পাখির দিকে জাস্ট তাকিয়ে দেখ। তোর চোখ তুলে লুডু খেলবো”
ইমা বেগম দূর থেকেই টনিকে লক্ষ করছে। কিছু একটা হয়েছে বুঝতে সময় লাগে না। তাই এগিয়ে আসে। কাঁধে হাত রেখে বলে
“কি হয়েছে? এনি প্রবলেম?
টনি তাকায় ইমা বেগম এর মুখ পানে
” ওই জা*নো*য়া*রের বাচ্চা আমার ভাইকে খু*ন করেছে।
কেঁপে ওঠে ইমা বেগম। কাঁধ থেকে হাত সরিয়ে নেয়। শুকনো ঢোক গিলে শুধায়
“আপনার ভাই মানে যে আদ্রিতার হাত ধরেছিলো?
তাকে মেরে দিয়েছে?
আরও গল্প পড়তে এখানে ক্লিক করুন
টনি জবাব দেয় না। তবে চতুর ইমা ঠিকই বুঝতে পারে। ভয়ে কলিজা কেঁপে ওঠে ওনার
” শুধু একবার হাত ধরে তাতেই দুনিয়া থেকে বিদায় করে দিলো। আর ইমা বেগম তো কিডন্যাপ করে নিয়েছে। তার কি হাল করবে?
হাত পা মৃদু কাঁপতে থাকে। তার সাজানো গোছানো সংসার। তিলতিল করে গড়েছে সবটা। দুটো বাচ্চা রয়েছে। যদি তাদের কোনো ক্ষতি করে দেয়?
আর ভাবতে পারছে না ইমা বেগম। সে দৌড়ে চলে যায় তার কক্ষে। যাওয়ার সময় দেখতে পায় আদ্রিতাকে। বাচ্চাদের সঙ্গে গল্প করছে। আজকেই তাদের সঙ্গে প্রথম আলাপ। অথচ দেখে মনে হচ্ছে কতো বছরের আলাপ।
ইমার ইচ্ছে হয় ওরা কি নিয়ে গল্প করছে সেটা শোনার।তাই দরজায় আড়ি পাতে।
শুনতে পায় তার ১১ বছরের মেয়ে আয়ানার কথা
“আমার পাপা ওয়ার্ল্ড এর বেস্ট পাপা। আমি যখন যেটা বললো সেটাই এনে দিবে। আমাকে এতোগুলো ভালোবাসে।
আর তোমার পাপা?
আদ্রিতা জবাব দিতে পারে না। গলা ধরে আসছে তার। ইচ্ছে করছে চিৎকার করে কাঁদতে এবং বলতে “আমার পাপা আমায় ভালোবাসে নি। আমার পাপা আমার মাকে বাঁচতে দেয় নি। আমার পাপা আমার সুন্দর জীবন নষ্ট করে তোদের বেস্ট পাপা হয়েছে। আমাকে ঠকিয়ে তোদের কাছে হিরো হয়েছে”
কিন্তু বলতে পারে না।
“আপি বলো
তোমার পাপা তোমায় ভালোবাসে?
আমার পাপা আমাকে ঘুম পারিয়ে দেয়। খাইয়ে দেয়। স্কুলে নিয়ে যায়। আমার মন খারাপ হলে বুকে নিয়ে গল্প শোনায়। আর আমাকে কেউ বকলে তাকে বকে দেয়।
পাঁচ বছরের বাচ্চা আরাফ বলে ওঠে।
আদ্রিতা দীর্ঘ শ্বাস ফেলে। আরাফের মাথায় হাত বুলিয়ে বলে
“আমাকে কেউ কখনো ভালোবাসে নি। আমার কোনো ইচ্ছে কখনোই কেউ পূরণ করে নি৷ আমাকে কেউ কখনো বুকে টেনে নেয় নি।
এই পৃথিবীর সব থেকে হতভাগা মানুষ আমি। আমার পাপা মাম্মাম কেউ নেই।
আয়ানা বলে
” কেনো নেই?
কোথায় গিয়েছে তারা?
“আমাকে ভালোবাসলে পাপ হবে। তাই তারা তাদের নতুন ভালোবাসা খুঁজে নিয়েছে।
ইমা বেগম চলে যায়।
রকিং চেয়ারে বসে একেরপর এক সিগারেটে টান দিচ্ছে আবরার। দৃষ্টি দূর আসমানে থালার মতো ভেসে থাকে চান্দের পানে। চাঁদের গায়ে কিছু একটা রয়েছে। ঠিক কি করেছে সেটাই বোঝার চেষ্টা করছে হয়ত।
সিয়াম আবরারের পাশেই বসে আছে। মনটা তার বড্ড খারাপ।
নিজের জন্মভূমি বাংলাদেশ। এখানেই কেটে দীর্ঘ ২৪ টি বছর। মা বাবা পরিবার সবই রয়েছে তবে কেউই তার আপন নেই।
তার জন্য কেউ অপেক্ষা করছে না।
এই তো এয়ারপোর্ট থেকে কল করেছিলো মায়ের নাম্বারে। তাকে জানালো বাংলাদেশে আসার খবর।
তিনি মোটেও খুশি হলো না৷ বরং ব্যথিত স্বরে বললো
” বাচ্চাদের নিয়ে চিটাগং এসেছি। ওদের পরিক্ষা চলছে। তুই থেকে যা কিছু দিন।
ব্যাসস কল কেটে দেয়৷
আবরার গম্ভীর স্বরে বলে
“ফাকিং ফ্যামেলি ড্রামা নিয়ে ১০০ হাত দূরে থাকবি। ডিজগাস্টিং লাগে। যাদের তোকে প্রয়োজন নেই তাদেরকে তোর প্রয়োজন কেনো?
সিয়াম একটু হাসে। তারপর দীর্ঘ শ্বাস ফেলে বলে
“আম্মু তার নতুন সংসার নিয়ে বিজি। ভেবেছিলাম একটু দেখা করবো। এই টুকুই
আচ্ছা তুই বল প্ল্যানিং কি?
মাকে আনবি কবে?
” আজকে রাতেই
“কি বলিস? কেমনে কি? প্ল্যানিং তো বললি না?
” আদ্রিতার প্রোপার্টির ১০% শশুরের নামে রয়েছে। আজকে তাকে দিয়ে পেপার্স এ সাইন করিয়ে নিবো। দ্যান কালকে সব প্রোপার্টি এতিম বাচ্চাদের নামে দান করে সুইজারল্যান্ড ব্যাক করবো।
তুই টিকিট কেটে রাখিস।
সিয়াম গালে হাত দিয়ে কিছু একটা চিন্তা করে।
“জাস্ট এই টুকুর জন্য বাংলাদেশে আসলি?
সিগারেটে শেষ টান দিয়ে সেটা শূন্যে ছুঁড়ে মারে আবরার। তারপর ধোঁয়া উড়াতে উড়াতে বলে
“হুমমম।
” আবরার আমি একটা কথা বলতে চাই।
“বল
” দেখ ভাই
টনি ইমা টিমা আর আরিফ কতো কান্ড ঘটালো। আমার মা আর তোর বউকে কিডন্যাপ করলো। ওদের এমনি এমনি ছেড়ে দিবি? ব্যাপারটা ভালো দেখাবে না।
তার থেকে ভালো হয় না?
টনির সাথে ইমার বিয়ে দিয়ে দিলাম। আরিফ ছ্যাঁকা খেলো। আর আমরা মজা পেলাম।
আবরার ঠোঁট বাঁকিয়ে হাসে। হাত এগিয়ে এলোমেলো করে দেয় সিয়ামের চুল গুলো।
“গুড আইডিয়া। ওয়ান এ্যা মিনিট
পকেট থেকে ফোন বের করে আবরার। ডায়াল করে কারো নাম্বারে। রিং হতেই কল খানা রিসিভ হয়
” হ্যালো শশুর এর বেয়াদব বউ।
আবরার তাসনিন এর পাখি কি করছে?
ইমা বেগম জিভ দ্বারা ঠোঁট ভিজিয়ে বলে
“বাচ্চাদের সাথে গল্প করছে।
” দ্যাটসস গুড
রাত জাস্ট বারোটা পাঁচ মিনিটে পাখিকে সুইমিং পুলে পাঠিয়ে দিবেন। এগেইন রোমাঞ্চ এর ক্রেভিং উঠছে।
ইমা বেগম এর ইচ্ছে করে বলতে “বেয়াদব ছেলে। এতো বাজে কেনো তুমি”
কিন্তু বলতে পারে না। কারণ এটা বললে আবার কি না কি বলে বসবে।
“আমি?
“ইয়েসস।
” আবরার শোনো আমার কথা
“সময় নেই। আমার বউ চাই।
“তো নিয়ে যাও। আমি আটকাচ্ছি না।
” একচুয়েলি বউটা ছোট তো। ডার্ক রোমাঞ্চ সহ্য করতে পারে না। কাছাকাছি থাকলে সারাক্ষণ ক্রেভিং উঠতে থাকবে। আই থিংক বুঝেছেন কি বলতে চাচ্ছি।
বলেই কল কাটে। সিয়াম ভ্রু কুচকে তাকিয়ে আছে
” এটা কি হলো? সুইমিং পুলে কি করবি?
আবরার আরেকটা সিগারেট ঠোঁটে গুঁজে। তাতে আঙুল জ্বালাতে জ্বালাতে জবাব দেয়
“চুমু খাবো।
তোমাতেই আসক্ত পর্ব ৫১
হট হট ফিল করছি।
মনে মনে কঠিন কিছু গালি আওয়াড় সিয়াম। আর মুখে বলে
” ভাই তোর এই অতিরিক্ত নিকনিকের ঠেলায় কবে জানি আদ্রিতা পটল তুলবে। তখন কি করবি?
আবরার জবাব দেয় না। কি আর করবে?
সেও পটল তুলবে। তারপর দুজন মিলে আসমানে গিয়ে রোমাঞ্চ করবে।
