তোমাতেই আসক্ত পর্ব ৫৩

তোমাতেই আসক্ত পর্ব ৫৩
তানিশা সুলতানা

আমান আহাদ ইভান চলে এসেছে বাংলাদেশ। হজরত শাহজালাল আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরে উপস্থিত হয়ে তবেই কল করেছে আবরারকে। আগে থেকে বললে সোজাসাপ্টা না বলে দিতো। কিন্তু ওরা বাংলাদেশ দেখতে চায়। অতি চেনা জন্মভূমির দমকা হাওয়ায় নিজেদের গা ভাসাতে চায়।
পুরোনো পিছু টান, ফেলে আসা অতীত সব কিছুকেই আবার ফিল করতে চায়।
আবরার বাংলাদেশে এসেই একটা বাইক এবং একটা বিএমডব্লিউ কার কিনেছে। বাইকটা বেসিক্যালি তার জন্য আর কার বন্ধুদের যাতায়াতের সুবিধার্থে। ছোট থেকেই বাইকের প্রতি আলাদা উইকনেস রয়েছে আবরারের। সুইজারল্যান্ড এ ও কিনেছিলো দুই খানা বাইক। বাট কোম্পানি বড় হওয়ার সঙ্গে সঙ্গে আবরার তাসনিন থেকে তাসিন হওয়ার সঙ্গে সঙ্গে বাইকের নেশা কেটে গিয়েছে। কিনেছে বিভিন্ন নামি-দামি কার।

চৌধুরী বাড়িতে ওঠে নি আবরার। কিনেছে এক খানা বাংলো। সেখানেই বন্ধুদের নিয়ে থাকছে।
বাংলাদেশের ওয়েদার আজকে ভীষণ কুল। সারাদিন বৃষ্টি পড়েছে। এখনও গুড়ি গুড়ি পড়ছে। দেখতে দারুণ লাগছে। আবরার রকিং চেয়ার দখল করে বসে আছে বেলকনিতে। হাতে রয়েছে সিগারেট। গভীর মনোযোগে বৃষ্টি বিলাস করছে এবং সিগারেট ঠোঁটে চেপে ধোঁয়া উড়াচ্ছে। পরনে সাদা রংয়ের শার্ট এবং কালো জিন্স।
সিয়াম আবরারের পাশে বসে ফোনে মুভি দেখছে। এই মুহুর্তে কোনোদিনকেই তার মনোযোগ নেই। সেই বছর খানিক আগে দেখেছিলো মাই ফল্ট মুভি। মুভির কাহিনি রোমাঞ্চ এবং হিরোইন সব কিছুই রাতে ঘুম হারাম করে দিয়েছিলো সিয়ামের।

আরও গল্প পড়তে এখানে ক্লিক করুন 

অবশ্য মুভি খানা আবরারই সাজেস্ট করেছিলো তাকে।
সেই মাই ফল্ট এর সেকেন্ড সিজন ইউওর ফল্ট নামে এসেছে। সেটা এতোদিন ইউটিউব এ এবলএবল ছিলো না। বাট কাল রাতেই আপলোড হয়েছে একটা চ্যানেল থেকে। সেই দেখছে আপাতত। আমান আহাদ এবং ইভান ঘুমচ্ছে। অনেকটা পথ জার্নি করে আসার ফলে বড়ই ক্লান্ত ওরা।
সিগারেটে শেষ টান দেওয়ার পরে সিয়ামকে খেয়াল করে আবরার। সিগারেট এর ছোট অংশ শূন্যে ফেলে ধোঁয়া উড়িয়ে বলে
“কি দেখছিস?
” উফফফ আব্বা কি কমু।
মুভি দেখছি না কি মাখন দেখছি বুঝতে পারছি না।
আবরার সিয়ামের হাত থেকে ফোন খানা টেনে নেয়। মুভির একটা গভীর অংশ দেখতে পায়। আবরার শুকনো ঢোক গিলে ফোঁস করে শ্বাস টানে। ফোন খানা ছুঁয়ে মারে সিয়ামের মুখ বরাবর। তারপর দাঁড়িয়ে পড়ে।
সিয়াম ভ্রু কুচকে বলে

“কোথায় যাচ্ছিস?
আবরার শার্টের হাতা গোটাতে গোটাতে বলে
” রোমান্টিক ওয়েদার
এডাল্ট গেমস না খেললে জমে?
চতুর সিয়াম চট করে ধরে ফেলে আবরারের কথার মানে। চোখ দুটো চকচক করে ওঠে তার। ফোন বন্ধ করে পকেটে পুরে নেয়। তারপর নিজেও দাঁড়িয়ে পড়ে।
“ভাই আমিও খেলতে চাই সেই গেমস।
“তো খেল।
না করছি?
বলেই আবরার বড় বড় পা ফেলে চলে যায়। সিয়ামের হাসি মুখ খানা চুপসে যায়। ঠোঁট ফেটে বেরিয়ে আসে কঠিন গালি
” শালা তুই এডাল্ট গেমস খেলিস আর লুডু গেমস খেলিস। আমি তোর সাথে সাথে যাবোই।
মুক্তি মিলবে না তোর।

বৃষ্টিতে ভিজতে দারুণ লাগে আদ্রিতার। যখনই বৃষ্টি পড়বে তখনই তাকে ভিজতে হবে। মা কতো বকে তবুও সে বারণ শুনে না।
আজকে মনের আকাশে মেঘ জমেছে। কান্না গুলো বৃষ্টিতে রূপান্তরিত হয়ে ঝড়ে পড়তে চাইছে। মন বলছে “আদ্রিতা নেমে পড় বৃষ্টির মধ্যে। ভিজতে ভিজতে কেঁদে নে খানিকক্ষণ”
আরেক মন বলছে “মনে রং লেগেছে তোর যে ভিজতে চাচ্ছিস?
একটা মনের দুরকম কথাবার্তায় বিরক্ত হয় আদ্রিতা। শুনে না কারোর কথা। চুপচাপ দরজা খুলে বেরিয়ে আসে বাগানে। ছাওনি পার হতেই ঝমঝম বৃষ্টি ভিজিয়ে দেয় আদ্রিতার গোটা শরীর। সাদা রংয়ের টিশার্ট ভিজে একাকার হয়ে যায়।
ধীর গতিতে পা বাড়ায় আদ্রিতা। সুইমিং পুলের পাশে এসে পা থামায়। দুই হাত দুই দিকে মেলে দিয়ে আসমান পানে তাকায় চোখ বন্ধ করে।
চিৎকার করে বলে ওঠে

“আবরার তাসনিন আমি বাঁচতে পারছি না আপনাকে ছাড়া। আমার দম বন্ধ হয়ে আসছে শ্বাস নিতে কষ্ট হচ্ছে। সর্বক্ষণ মনে হয় সকল অভিমান ভেঙে ছুঁটে চলে যাই আপনার কাছে। আপনার প্রশস্ত বুকে মাথা রেখে কলিজা খানা শান্ত করি। কিন্তু পারছি না। কতোদিন হয়ে গেলো আপনাকে দেখি না।
একটু থামে আদ্রিতা। হাঁটু মুরে বসে পড়ে। সুইমিং পুলের পানিতে পা ভিজিয়ে বিরবির করে বলে
” হয় আজকে আবরার তাসনিন আসুক
নাহলে আমার মরণ হোক। এই যন্ত্রণা থেকে মুক্তি চাই আমি। একটু শান্তি পেতে চাই।
কালো রংয়ের বাইক খানা নিয়ে একদম সুইমিংপুলের পাশে চলে আসে আবরার। আসক্তিময় প্রেয়সীকে দেখে বাইক থামায়। মাথা থেকে হেলমেট খুলে বাইকের হ্যান্ডেল এ রাখে। তারপর নেমে পড়ে।
বৃষ্টির শব্দ এবং নিজের ভাবনায় এতোটাই ব্যস্ত ছিলো আদ্রিতা যে বাইকের শব্দ শুনতে পায় নি৷
এই সুযোগটাই কাজে লাগায় আবরার। চুপিচুপি গিয়ে বসে পড়ে আদ্রিতার পাশে। অভিমানে টইটুম্বুর মুখ খানার পানে এক পলক তাকিয়ে নজর দেয় ভেজা টিশার্ট এ।
ঠোঁটের কোণে বাঁকা হাসি ফুটে ওঠে আবরারের। টিশার্ট ভেদ করে উন্মুক্ত কোমরে হাত ঢুকিয়ে দেয়। চমকায় আদ্রিতা।

অতিদ্রুত পাশ ফিরে তাকায়। মুহুর্তেই ভয় গুলো আশ্চর্যে পরিণীত হয়। আবরার এসেছে?
নিশ্চয় এটা আদ্রিতার মনের ভুল। তাই কয়েকবার পলক ঝাপটায়।
কিন্তু নাহহহ আবরার সরছে না। তাহলে কি মনের ভুল নয়?
আবরার কি বুঝলো?
সে মুখ এগিয়ে নিয়ে চুমু খায় আদ্রিতার শুকনো ওষ্ঠে।
একটুখানি পিছিয়ে যেতে নেয় আদ্রিতা তবে সেই সুযোগটা দেয় না আবরার।
কৌশলে কোমর পেঁচিয়ে ধরে সাপের মতো। নিজের দিকে টেনে নিয়ে হাঙ্কি স্বরে বলে
“মিসস করছিলে পাখি?
আদ্রিতা জবাব দেয় না। বা আবরার জবাব দেওয়ার সুযোগ দেয় না। আদ্রিতাকে শূন্যে তুলে সুইমিং পুলে নেমে পড়ে।
আরিফ এবং ইমা বেগম বেলকনিতে দাঁড়িয়ে গল্প করছিলো। তখনই তাদের নজর পড়ে সুইমিং পুলের পানে। আরিফ চোখ ঘুরিয়ে নিজ কক্ষে চলে যায়। ইমা বেগম দীর্ঘ শ্বাস ফেলে বিরবির করে বলে

” অসভ্য ছেলে
প্লেনের ওয়াশরুম
এখন আবার আমার বাড়ির সুইমিং পুল।
নেক্সট টাইম চাঁদে যাবে আমি শিওর। আমার তো ইচ্ছে করছে এই ছেলেকে চাপকে মেনার্স শেখাতে।
একটুও লজ্জার ছিটেফোঁটাও নেই। ছিহহহহ
আরিফ ভেতর থেকে ডাকে
“ইমা এখনো ওখানে দাঁড়িয়ে আছো কেনো আসো।
ইমা বেগম রাগে ফুঁসতে ফুঁসতে ভেতরে যায়।
” তুমি কিছু বলছো না কেনো?
তোমার মেয়ে দিনকে দিন বেয়াদব হয়ে যাচ্ছে।
আরিফ খাটে বসে। ইমার মুখ পানে তাকিয়ে বলে

“ও কি করেছে?
” কি করেছে মানে?
এই ছেলেকে পশ্রয় দিচ্ছে। এই ছেলের জন্য কেঁদেকুটে অস্থির হচ্ছে।
আরিফ হাসে একটু। তারপর হতাশ স্বরে বলে
“মেয়েটা বরাবরই ভালোবাসার পাগল। বাপ হয়ে আমি কোনোদিনও একটু ভালোবাসা দিতে পারি নি। ওর মা টাও চলে গেলো। অন্যের বাড়িতে আশ্রিতার মতো বড় হয়েছে।
এই যে আমি। বহুবছর পরে ওকে নিজের কাছে এনে রাখছি শুধু সম্পত্তির জন্য। কালকে সাইন করে দিলেই টনির হাতে তুলে দিবো।
কি স্বার্থপর বাবা আমি।
ইমা বিরক্ত হয়ে বলে

তোমাতেই আসক্ত পর্ব ৫২

“এসব আমায় বলার কারণ?
“এমনি বলছি।
ওদের প্রাইভেসি দাও।
ওই বেয়াদব ছেলেটা ছাড়া আমার মেয়েকে গোটা দুনিয়ায় আর কেউ নিঃস্বার্থ ভাবে ভালোবাসে নি।

তোমাতেই আসক্ত পর্ব ৫৪