তোমাতেই আসক্ত পর্ব ৫৬
তানিশা সুলতানা
বৃষ্টি কমেছে শেষ রাতের দিকে। কমেছে বলতে একদমই নাই হয়ে গিয়েছে। এতোক্ষণ আসমান কালো মেঘে ঢেকে ছিলো কিন্তু এখন দুই একটা তারা ফুটেছে। থালার মতো বিশাল চাঁদ পূর্ব দিকে ঢলে পড়েছে।
চারিদিকে স্রুতি মধুর সুরে ভেসে আসছে আজানের শব্দ। আদ্রিতা হাঁটছে। মাথা নিচু করে বিরতিহীন হেঁটেই চলেছে। কোথায় যাচ্ছে কেনো যাচ্ছে জানা নেই তার। শুধু এই টুকু জানে
“চলে যেতে হবে। বহুদূরে
অতিপ্রিয় মানুষের নিকটে আর ফেরা যাবে না। নিজেকে বাঁচিয়ে রাখতে হবে নিজের দায়িত্বে। কারো ঘাড়ে বোঝা হওয়া চলবে না”
জামাকাপড় ভিজে জবুথবু হয়ে আছে। চুল হতে টপটপ পরে পানি পড়ছে৷
ভোরের শীতল বাতাসে শরীর কাঁপিয়ে তুলছে।
“ভাইয়া গাড়ি থামাও। জলদি
ইশারা এবং আসিফ হাসপাতাল থেকে বাসায় ফিরছিলো। বৃষ্টির কারণে আটকে পড়েছিলো হাসপাতালে। বৃষ্টি কমতেই বাড়ির উদ্দেশ্যে রওনা হয়েছে। হঠাৎ করে ইশারা একটা মেয়ে দেখতে পায়। এলোপাতাড়ি হাঁটছে।
আসিফ গাড়ি থামায়৷
বিরক্তিতে চোখ মুখ কুঁচকে তাকায় ইশারার পানে। শুধায়
” কি হয় তোর?
সব সময় বিরক্ত কেনো করিস?
ইশারা হাতের আঙুলের সাহায্যে রাস্তার পানে দেখায়। ল্যামপোস্টের আলোতে একটা মেয়েকে স্পষ্ট দেখা যাচ্ছে।
আসিফের মুখ ফসকে বেরিয়ে আসে
আরও গল্প পড়তে এখানে ক্লিক করুন
“আদ্রিতা এখানে
ইশারা ভ্রু কুচকায়
” তুই চিনিস ওকে?
জবাব দেয় না আসিফ। অতিদ্রুত সিটবেল্ট খুলে নেমে পড়ে গাড়ি থেমে৷
বড় বড় পা ফেলে এগিয়ে যায় আদ্রিতার নিকট। ইশারাও আসিফকে ফলো করে।
“আদ্রিতা তুমি এখানে কেনো?
পরিচিত কন্ঠস্বর শুনে থামে আদ্রিতা। ঘাড় ঘুরিয়ে পেছনে তাকায়। আসিফকে দেখে একটু হাসার চেষ্টা করে বলে
” এমনি
“এমনি এমনি কেউ এতো রাতে রাস্তায় হাঁটে? পাগল ভেবেছো আমাদের? সত্যি কথা বলো। না কি বাড়ির পথ ভুলে গেছো?
ইশারার কথায় আদ্রিতা ঘাবড়ায়। নিজের দুর্বলতা বুঝতে দেওয়া যাবে না। বলতে পারবে না “আবরার তাসনিন আমায় ফেলে চলে গেছে। এখন আমার কেনো জায়গা নেই যাওয়ার”
“আদ্রিতা?
আসিফের ডাকে ভাবনার জগত থেকে বের হয় আদ্রিতা। থেমে থেমে বলে
” বাড়ির পথ ভুলে গিয়েছি।
আসিফের বিশ্বাস হলো না। তবুও যেতে পূণরায় ঘাটায় না। বরং বলে
“গাড়িতে ওঠো। পৌঁছে দিচ্ছি।
নাকোচ করতে পারে না আদ্রিতা। বীণা বাক্যে মাথা নেরে সম্মতি প্রদান করে। এবং ইশারার সঙ্গে গিয়ে গাড়িতে বসে। আসিফ ওদের পেছন পেছন যায়।
ইশারা প্রচুর কথা বলে। সে তার মতো করে আদ্রিতাকে এটা ওটা বলেই যাচ্ছে। আদ্রিতা হ্যাঁ হু তে জবাব দিচ্ছে।
এক পর্যায়ে ইশারা বলে
” তোমার বাড়িতে কে কে আছে?
আদ্রিতা খানিকক্ষণ তাকিয়ে থাকে ইশারার মুখ পানে। মনে মনে ভাবে “তার কি আসলেই বাড়ি আছে? কেউ কি আছে তার? ভালো সময় কিংবা খারাপ সময়ের সঙ্গী? কেউ কি আছে যে তাকে ভালোবাসে? বুকে আগলে রাখে? মন খারাপে সঙ্গ দেয়?
নাহহ অনেক ভেবেও কাউকে খুঁজে পায় না আদ্রিতা।
আঁখি পল্লবে অশ্রু জমে।
আনমনে বলে ওঠে
“আমার কেউ নেই। কখনোই কেউ ছিলো না। কেউ ভালোবাসেনি আমায়। কেউ কখনো বুকে জড়িয়ে বলে নি “আমি তো আছি”
প্রচন্ড মন খারাপে কেউ পাশে বসে বলে নি “সব ঠিক হয়ে যাবে”
একাকিত্বে কেউ কখনোই সঙ্গ দেয় নি৷
পৃথিবীর কোনো মানুষই সুখী নয়। সবারই কম বেশি দুঃখ রয়েছে। কিন্তু আমার কম বেশি নয় পুরোটাই দুঃখ।
আমি এক হতভাগা নারী। যে সারাজীবন ভালোবাসা খুঁজে বেড়ালো কিন্তু পৃথিবীর বুকে একটু ভালোবাসা পেলো না
ইশারা অবাক নয়নে তাকিয়ে থাকে আদ্রিতার মুখ পানে। চমকেছে বেশ।
আসিফের বুকের ভেতরটা কেঁপে ওঠে।
সিয়াম আমান আহাদ এবং ইভান পাগলের মতো খুঁজে চলেছে আদ্রিতাকে।
তাদের কানে খবর পৌঁছে গিয়েছে যে আদ্রিতা আরিফ এর বাড়ি থেকে বেরিয়েছে। সেই থেকে ওরা খুঁজছে। চার জন চার দিকে ছড়িয়ে পড়ছে। চোখে মুখে আতঙ্কের ছাপ।
আদ্রিতা হারিয়ে গেলে কি হবে?
আবরার মুখে যাই বলুক কিন্তু ওরা জানে “এই মেয়েটি হারিয়ে গেলে আবরার তাসনিন বাঁচবে না। কিছুতেই বাঁচবে না”
ভোরের আলো প্রায় ফুটে উঠেছে এখনো আদ্রিতাকে খুঁজে পায় নি ওরা। হতাশ সিয়ামের কান্না পাচ্ছে। হাঁটু মুরে বসে পড়ে রাস্তার পাশে। তখনই দেখতে পায় টনি এবং ইমা রাস্তার পাশে থাকা আইসক্রিম এর দোকানের পাশে দাঁড়িয়ে কিছু একটা নিয়ে আলোচনা করছে।
তখুনি সিয়াম এর মাথায় এক খানা আইডিয়া চলে আসে।
“যাদের জন্য আজকে আদ্রিতা আবরারের সঙ্গে নেই তাদের একটু সাজা দেওয়াই যায়।
ভাবতে ভাবতেই কল করে বাকি বন্ধুদের। আবরারকেও টেক্সট দিতে ভুলে না।
তারপর চার বন্ধু জড়ো হয়ে পা টিপে টিপে এগিয়ে যায়। আইসক্রিম দোকানের সামনে গিয়ে চার জন গলা ফাটিয়ে চিৎকার করে ওঠে।
” হাই আল্লাহ এইখানে দুইজন বুইড়া মানুষ পিরিতি করতেছে। কে কোথায় আছেন তাড়াতাড়ি এগিয়ে আসেন। দেখে যান আমাদের মতো যুবকদের ছক্কা মেরে কিভাবে রাস্তার মধ্যেই ডার্ক রোমাঞ্চ করার শুরু করছে।
বলতে বলতে আহাদ গিয়ে টনিকে ধরে। আমান ইমাকে।
সিয়াম ওদের থামিয়ে নিজে কবিতার সুরে বলে
“ছিহহহ ছিহহহ ছিহহ
এক পা গেছে কবরে
তবুও আপনাদের ভাটা পড়ে নি যৌবনে?
এই জন্যই কবি গুরু বলেছিলেন
ওহে বত্স সিয়াম
এক যুগ আসিবে দেখিস ৬০ বছরের বুড়িও সাজিবে যোয়ান
করবে তারা রংঢং রাস্তা ঘাটের মধ্যে
তুই বাছা একশন নিস তাদের বিরুদ্ধে
কবিতা শুনে বাকিরা বলে
” বাহহ বাহহ কি সুন্দর কবিতা।
ইমা বলে
“তোমরা কি করছো এসব? রেপুটেশন নষ্ট হবে আমার।
সিয়াম জবাব দেওয়ার সুযোগ পায় না। তারই মধ্যে আশেপাশের যত বাড়ি ছিলো সব বাড়ির লোকজন জড়ো হয়।
এবং তাদেরকে আমান সুন্দর করে বোঝায়
” আমরা মর্নিং ওয়াক করতে বেরিয়েছিলাম তখন দেখি ওনারা দুজন এই দোকানের পাশে ছিহহ বলতেও পারছি না আমি।
ওই আর কি কালা রোমাঞ্চ করছিলো উইথআউট ড্রেসআপে।
সকলেই ছিহ ছিহ করতে থাকে। ইমা এবং টনির কোনো কথাই শোনে না। একজন মুরব্বি সিয়ামের থেকে ইমার স্বামীর নাম্বার নেয় এবং তাকে কল দেয়।
বলে “সকাল দশটায় এই এলাকার কাউন্সিলে শালিসি বসানো হবে। সেখানে যেনো তিনি উপস্থিত থাকে।”
আরিফ বুঝতে পারে না ঠিক কিসের শালিসি বসবে আর তাকেই বা কেনো ডাকা হলো?
ইমা সিয়াম এর মুখ পানে তাকিয়ে আছে। যেনো চোখ দিয়ে জ্বালিয়ে দিবে। এটা দেখে সিয়াম মুচকি হাসে।
আমানের কাঁধে হাত রেখে বলে
“বুঝলি বন্ধু তোর ক্রাশ নার্গিস আপার এক খানা গান আমার ঠোঁট ফেটে বেরিয়ে আসছে
চল শালা এক সাথে গাই
” ধইরা নিয়া ভইরা দিলো বেগুন আমার থলিতে
আর যাবো না বেগুন তুলিতে ও সিয়ামরে
এইবারের মতো মাপ কইরা দে
তোমাতেই আসক্ত পর্ব ৫৫
আসিফ ইশারা এবং আদ্রিতা দাঁড়িয়ে আছে চৌধুরী বাড়ির মূল ফটকে। আদ্রিতার বুক কাঁপছে। কলিং বেল বাজাতে ইচ্ছে করছে না।
ইশারা বড়ই অধৈর্য ব্যক্তি। তাই সেই কলিং বেল বাজায়।।
এবং সাথে সাথে দরজা খুলে যায়।
দরজার সামনে থাকা ব্যক্তিটিকে দেখে আদ্রিতা চমকায়। এটা কি হলো?
এই মানুষটির মুখোমুখি তো হতে চায় নি আদ্রিতা।
তার থেকে দূরে সরতে চেয়েছিলো।