তোমাতেই আসক্ত পর্ব ৬৭
তানিশা সুলতানা
বিয়ের কার্যক্রম শুরু হয়ে গিয়েছে। ইতিমধ্যেই প্যান্ডেল এর লোকজন সাজানে শুরু করে দিয়েছে। গোটা এলাকা জুড়ে লাইটিং করা হবে। আজকে বিকেলে সকলেই শপিং করতে বের হবে। আবরারের ইচ্ছে আদ্রিতার তার পছন্দের শাড়ি পড়বে বিয়েতে। কিন্তু আদ্রিতার ইচ্ছে সে লেহেঙ্গা পড়বে।
এই তো সকালের ঘটনা।
আদ্রিতা গোসল সেরে সবেই কক্ষে প্রবেশ করেছে। তখুনি হোয়াটসঅ্যাপ এ টুংটাং আওয়াজ করে মেসেহ আসে।
ভেজা তোয়ালে চুল থেকে খুলে ফোন খানা হাতে নেয় আদ্রিতা। হোয়াটসঅ্যাপ এ ঢুকতেই নজরে পড়ে সাদা রংয়ের জামদানী শাড়ির পিকের দিকে। সঙ্গে সঙ্গে কল করে আদ্রিতা।
রিসিভ হতেই বলে
“আমি তো বিয়ে করবো না। শাড়ির পিক দেখিয়ে কি হবে?
আবরার ঘুমচ্ছিলো। কলের শব্দে ঘুম হালকা হয়। ঘুম ঘুম চোখে কল খানা রিসিভ করে কানে তুলেছে। আদ্রিতার এমন কথা শব্দে বলে
” ইউওর ফল্ট, আফটার আর 365 days মুভির লিংক পাঠাচ্ছি।
“এগুলো কি?
” মুভি। তোমার কাজে আসবে।
শিখতে পারবে কিভাবে কোয়াপারেট করতে হয়।
“কিসের কোয়াপারেট?
আরও গল্প পড়তে এখানে ক্লিক করুন
” রোমাঞ্চের সময়। অটিস্টিক এর মতো বিহেভিয়ার না করে এই সব মুভির হিরোইনদের মতো করবে।
আপাতত ঘুমচ্ছি। ডোন্ট ডিস্টার্ব।
বলেই কল কাটে আবরার। সাথে সাথে আবার নোটিফিকেশন আসে। সত্যিই মুভির লিংক দিয়েছে। আদ্রিতা খাটে বসে। কৌতুহল বসত লিংক এ ঢুকে পড়ে। ইউওর ফল্ট মুভি খানা অপেন হয়। আদ্রিতা একটু টেনে দেয়। দেখতে পায়
নায়ক নায়িকার বাড়ির সামনে এসেছে। নায়িকা সেটা দেখে নিজের কক্ষ থেকে দৌড়ে চলে আসলো আর এক্কেবারে নায়ক এর কোলে উঠে পড়লো।
তারপর সেখানেই
আদ্রিতার হাত থেকে ফোন খানা পড়ে যায়। চোখ বন্ধ করে কয়েকবার “আসতাগফিরুল্লাহ” বলে ওঠে।
তাই বলে বাড়ির সামনে গেইটের কাছে?
এসব মুভিই আবরার তাসনিন নামক পুরুষটিকে অসভ্য অশ্লীল এবং বেপরোয়া বানিয়ে দিচ্ছে। অতি দ্রুত এসব মুভির লেখকদের থামাতে হবে। নাহলে যুবসমাজ নষ্ট হয়ে যাবে।
রান্নাবান্নার আয়োজন চলছে। আজকে আরিফ এবং তার সন্তানদের দাওয়াত করা হয়েছে এ বাড়িতে। আদ্রিতা সবজি কাটছে। আতিয়া বেগম পোলাও রান্না করছে। আছিয়া রাজিয়া বেগম দেশি মুরগির চামড়া ছিঁলছে।
এক পর্যায়ে আসিয়া বলে
“মানতেই হবে আদ্রিতা তোর কপাল ভালো। না হলে ফেলে যাওয়া জামাই আবার ফিরে আসতো?
রাজিয়া বলেন
“বুঝেন না ভাবি? আদ্রিতাকে আবরারের গলায় ঝুলিয়ে দিবে বলেই তো ছোট ভাবি তাকে নিয়ে গিয়েছিলো সুইজারল্যান্ড। কি চালাক মহিলা। এর থেকেও ভালো মেয়ে পাইতো আবরার। আমার ভাইয়ের মেয়ে তানহা কতো ভালো সুন্দরী। তারে বিয়ে করলে আবরারের ভালোই হইতো।
আতিয়া বেগম শুনে যায় তবে জবাব দেয় না। আদ্রিতার বিরক্ত লাগে। অন্যায়ের প্রতিবাদ না করলে মানুষ দুর্বল ভাবে। আর প্রতিবাদ করলে বেয়াদব উপাধি দিয়ে দেয়। এতোকাল চুপ করে সহ্য করতে শিখিয়েছে। বলছে তাদের বাড়িতে থাকছো কিছুই বলা যাবে না। কিন্তু এখন আর মায়ের কথা শুনতে ইচ্ছে করে। দুই একটা কথা শুনিয়ে দিতে ইচ্ছে করে। যেমন এই মুহূর্তে জোর করেও নিজেকে আটকাতে পারছে না।
অতঃপর মৃদু হেসে বলেই ওঠে
“বড়মা আমি আবরার তাসনিনের লিগেল ওয়াইফ। সে হয়তো কোন কারনে মানতে চাচ্ছিলো না। কিন্তু এটা তো মানতেই হবে আমার সাথেই সে ভালো থাকবে। আর মা তো তার ছেলের ভালো টাই দেখবে তাই না? সে যদি নিজের ছেলের ভালোর জন্য আমাকে সুইজারল্যান্ড নিয়ে থাকে, তার ছেলের গলায় ঝুলিয়ে দিয়ে থাকে, এটা তো কোন অন্যায় নেই। পাপ তো আর করে নি।
আসিয়া রেগে বলে ওঠে
“দেখেছিস
দেখেছিস বিয়ে ঠিক হতে না হতেই কেমন উড়া শুরু করেছে। ভেবেই নিয়েছে ছোটলোক থেকে বড়লোক হয়ে যাচ্ছে। এখন আর মাটিতে পা পড়বে না।
আদ্রিতা আঙুল তুলে বলে ওঠে
“আমি কোনদিনও ছোটলোক ছিলাম না বড় মা। বাংলাদেশের দশজন বড় বিজনেস ম্যান এর মধ্যে একজন আমার বাবা ছিলেন। তাছাড়া আমার হাজব্যান্ড এর সফলতা এবং সম্পদের কথা আপনাদেরকে বলে দিতে হবে না। জানেনই তো আপনারা।
রাজিয়া বলে ওঠে
“চাপকে তোর মুখ ভেঙ্গে দিবো আমি। কি বলতে চাস? তোর বাবা বড়লোক ছিলেন। আর আমাদের বাবা ছোটলোক? আমরা ছোট ঘর থেকে এসেছি।
“হ্যাঁ
আপনারা ওই বাড়ির বউ। আমিও এই বাড়ির বউ। আমাকে সম্মান না দিলে আমি আপনাদেরও সম্মান দেবো না। তাছাড়া ভুলে যাবেন না এটা আমার স্বামীর বাড়ি।
বলে আদ্রিতা চলে যায়। কথায় কথা বাড়বে। আর এই মুহূর্তে কথা বাড়াতে চাচ্ছে না সে। আতিয়া বেগম চুপচাপ নিজের কাজ করছে। যেনো এতক্ষণ যা যা কথা বলা হলো কিছুই শুনতে পাইনি। আছিয়া এবং রাজিয়া নিজেদের ইচ্ছেমতো বকা দিতে থাকে আদ্রিতাকে। কতদিন লাগবে তাদের এই ভাঙ্গা রেডিও বন্ধ হতে তার কোন হিসাব নেই।
আবরারের নতুন কোম্পানি উদ্বোধন হয়েছে সুইজারল্যান্ড। আগের কোম্পানি থেকে তিন গুণ বেশি জায়গা নিয়ে এই কোম্পানিটা বানানো হয়েছে। পাঁচটা শোরুম এবং ড্রেস জুয়েলারি তৈরির জন্য বড় বড় দুটো কর্মস্থল এবং পাঁচটা অফিস রুম নিয়েই বিল্ডিংটা সাজানো হয়েছে।
গেইটের সামনে বড় বড় করে লেখা “তাসিন ফ্যাশন হাউস”
আবরার তার কেবিনে বসে আছে। মনোযোগ সামনে থাকা মনিটরের পানে।
সেই মুহূর্তে সেখানে উপস্থিত হয় সিয়াম। দরজা খুলে ভেতরে ঢুকতে ঢুকতে একখানা কবিতা আবৃতি করে ফেলে।
“জীবন আমার দুঃখে ভরা
নাই কোনো মেয়ের ছায়া
ভালোবেসে কেউ ডাকে না বাবু
কারো পিরিতে হলাম না কাবু
ওরেহহ সিয়াম তুই মারাক্তক কালা
তোরে মন দিবো না কোনো শালা
আবরার বিরক্ত হয়। চোখ মুখ কুঁচকে বলে
“স্টপ ইওর ফাকিং ড্রামা। বিরক্ত লাগছে।
সিয়াম হামি তুলে বলে
” এগুলো হলো কবিতা। তোর মতো রসকষহীন মানুষ বুঝবে না। কাজের কথা শোন টনির মাইয়া বাইচা আছে। সে আসছে এখানে। জব করতে চায়। কি করবে বল?
আবরার চমকায় না। যেনো সে জানতো এমনটা ঘটবে। মনিটরের চলমান ভিডিও পজ করে শান্ত স্বরে বলে
“তাকে এখানে ডাক।
সিয়াম মাথা নাড়িয়ে কল করে আমানকে। কিছু মুহূর্তের মধ্যেই টিশা সেখানে উপস্থিত হয়। তার সাথে আমানও আসে। টিশা বাইরেথেকে দরজায় নক করে মিষ্টি স্বরে বলে
“মে আই কাম ইন?
সিয়াম অনুমতি দেয়। টিশা এবং আমান ভেতরে ঢোকে। সিয়াম ভ্রু কুঁচকায়। আমানের মুখটা কেমন চকচক করছে। এই মাইয়াকে দেখে আবার প্রেমে ট্রেমে পড়ল গেলো না কি?
” আগুনে দিলে হাত পুরে হবি ছাই
টুনটুনি পাখি নাই যার তার কন্যা হয়ে কেমনে তোর ভাই?
আগে আগে নজর সরা আমি সিয়াম আছি তো
সুন্দর মাইয়া দিবো খুঁজে চিন্তা করিস না তো।
টিশা ভ্রু কুচকে তাকায় সিয়ামের মুখ পানে। কবিতার আগামাথা কিছুই বোঝে নি সে।
আমান চোখের ইশারায় সিয়ামকে থামতে বলে। কিন্তু সিয়াম কি থামবে? কখনোই না।
সে দ্বীগুণ উৎসাহে নাক কুঁচকে বলে ওঠে
“আমান পাদ দিলি কেনো তুই? ইসস কি গন্ধ।
শালা তুই কি ছাগল পঁচা খেয়েছিস? কুত্তা মরা গন্ধ কেনো ভাই?
আমান শুধু চমকায়ই না। তার বুকের ভেতরটা কেঁপে ওঠে। কান দিয়ে গরম ধোঁয়া বেরুতে থাকে। কোন দিকে ছুটবে বুঝতে পারছে না।
টিশা নাক টেনে বোধহয় গন্ধ শুকার চেষ্টা করলো? কি জানি
তবে সিয়াম আবার বলে ওঠে
” সুন্দরী মেয়ে দেখলে পাদ কন্ট্রোলে আসেই না। আমানকে আর কি বলবো। আমিও একবার আলিয়া ভাটের সামনে পেদে দিয়েছিলাম।
থাক ব্যাপার না একটা গন্ধ পাদই তো দিছে আমার বন্ধু। হাগু তো আর করে দেয় নাই।
টিশা কিছু মনে করো না ঠিক আছে?
আবরার নিজের পায়ের জুতো জোড়া খুলে এবং মুহুর্তেই সেটা ছুঁড়ে মারে সিয়ামের দিকে। সিয়াম সেটা ক্যাচ ধরে এক দৌড়ে চলে যায়। আমানও পেছন পেছন যায়।
শালা মানসম্মান আজকে ধুলোয় মিশিয়ে দিয়েছে।
দুই শয়তান বের হতেই আবরার তাকায় টিশার মুখ পানে। একটু হাসার চেষ্টা করে বলে
“টিশা রাইট?
টিশা মাথা নারিয়ে বোঝায় “হ্যাঁ”
“মানুষ খু/ন করে পাপের বোঝা বাড়াতে চাই না। দ্যাটস হোয়াই তোমাদের বাঁচিয়ে দিয়েছি। বাট এটাই লাস্ট ওয়ার্নিং। তুমি এখান জব করতেই পারো। বাট আমানের থেকে দূরে থাকবে।
ওকেহ?
টিশা আবার মাথা নারায়।
” ওকেহহ তুমি যেতে পারো। আহাদ কাজ বুঝিয়ে দিবে।
টিশা সালাম দিয়ে চলে যায়। ও যেতেই আবরার আবার মনিটরে পজ করা ভিডিও চালায়। সেখানে দেখা যাচ্ছে লাইটিং করা হচ্ছে চৌধুরী বাড়ির সামনে। বেলকনিতে আদ্রিতা মন খারাপ করে বসে আছে। যেনো পৃথিবীর সকল দুঃখ তার জীবনে এসে জড়ো হয়েছে।
আবরার আনমনে বলে ওঠে
তোমাতেই আসক্ত পর্ব ৬৬
“আমি আসছি পাখি
সাত সাগর তেরো নদী পাড়ি দিয়ে। তিন হাজার কিলোমিটার পথ অতিক্রম করে মেঘের ওপর পঙ্খিরাজ ঘোড়ায় চেপে তোমার কাছে আমি ফিরে আসবো।
অসম্মান আর অবহেলা দিয়ে তোমায় ফেলে এসেছিলাম। এবার স-সম্মানে গোটা শহর জানিয়ে নিয়ে আসবো তোমায়।
কথা দিলাম।