তোমাতেই আসক্ত পর্ব ৬৯
তানিশা সুলতানা
আদ্রিতার মনে কৌতুহল জাগে। একবার মুভি খানা দেখে নেওয়া যাক। আবরার তাসনিনকে নষ্ট বানানো মুভি কি তাকেও নষ্ট বানাতে পারবে?
আচ্ছা আদ্রিতাও যদি নষ্ট হয়ে যায় তাহলে পরিস্থিতি কেমন হবে?
ভীষণ জঘন্য।
নিজের ভাবনাকে দুটো থাপ্পড় মেরে দরজা লক করে দেয়। তারপর লাইট অফ করে কানে হেডফোন গুঁজে মুভি ওপেন করে।
প্রথম টুকু ভালোই। ভাষা বুঝতে পারছে না আদ্রিতা। হিন্দি বলছে না ইংলিশ বলছে ধরতে পারছে না।
শুধু নায়ক এর কান্ডকারখানা দেখে চলেছে। ভালো কিউট। কিন্তু আবরার তাসনিন এর থেকে বেশি নয়।
হঠাৎ রোমান্টিক মুহুর্ত চলে আসে। আদ্রিতার ঠোঁটের কোণে হাসি ফুটে ওঠে। ড্রিম ওয়াল্ড এ চলে যায়। সেখানে
আদ্রিতা এবং আবরার মালদ্বীপের নীল রংয়ের পানিতে পা ভিজিয়ে হাঁটছে। আদ্রিতার পরনে লাল রংয়ের গাউন। আবরার সাদা প্যান্ট এবং খালি গায়ে।
চারিপাশে কেউ নেই শুধু তারা দুজন।
আদ্রিতা আবরারের মুখ পানে তাকায় পরপরই তার হাত ধরল পানির গভীরে যেতে থাকে।
বুক ওবদি পানিতে নেমে আবরার তাসনিন এর গলা জড়িয়ে ধরে। এবং তখুনি ঠোঁটে ঠোঁট মিলিয়ে দেয়। পাল্লা ধরক চলতে থাকে দুজনের চুম্বন লীলা।
আরও গল্প পড়তে এখানে ক্লিক করুন
মুভিতে মেয়েটা ঠিক যেভাবে কোয়াপারেট করছে আদ্রিতাও ঠিক তেমন ভাবেই তাল মেলাচ্ছে।
অতঃপর দীর্ঘ চুম্বন শেষ হতেই আবরার হাতের উল্টো পিঠে নিজের ওষ্ঠ মুছতে মুছতে বলে
“জান এ’ম ইমপ্রেস।
আই লাভ ইউ সো মাচ।
ধপ করল চোখ খুলে আদ্রিতা। প্রথমে ফোনের স্কিনে চলতে থাকা মুভি খানা ডিলিট করে। না না এই মুভি দেখা যাবে না। ভীষণ জঘন্য।
তারপর টি টেবিলের ওপরে থাকা পানির জগ হতে গ্লাসে পানি ঢেলে ঢকঢক করে খেয়ে নেয়।
এখনো তৃষ্ণা মিটছে না।
চোখের সামনে সেই দৃশ্য খানা ভাসছে৷
“আবরার তাসনিন আপনি ভীষণ খারাপ।
গভীর মনোযোগ দিয়ে মনিটরের স্কিনে ড্রেস দেখছে আবরার। বিয়েতে আদ্রিতা কোন শাড়ি খানা পড়বে সেটাঃ ডিসাইড করতে পারছে না। বিখ্যাত কয়েকজন ডিজাইনার দিয়ল শাড়ি এবং লেহেঙ্গা ডিজাইন করেছে। তবুও তার মন মতো হয় নি একটাও।
সিয়াম আছে বিন্দাস৷ এইবার বাংলাদেশে গিয়ে খালি হাতে ফিরবে না সে। কিছুতেই না। ইশারাকে তুলে নিয়ে বিয়ে করে ফেলবে।
মামলা টামলা হয়ে গেলে হবে।
একটাই জীবন। তাও আবার ৩০ বছর পার হয়ে গেছে। আর বাঁচবেই বা কয়দিন?
বড়জোর চল্লিশ বছর।
বিয়েটাই বা করবে কবে?
জীবনে বিয়ে করা অতিবজরুরি। বিয়ে ছাড়া আছে ডা কি?
আমান টিশার সাথে চ্যাটিং করছে। এদের প্রেমটা দুই চারদিনের মধ্যেই হয়ে যাবে সেটা সিয়াম লিখে দিতে পারে।
যেভাবে বাবু সোনা ডাকা শুরু হয়ে গেছে। যখন তখন জান ডেকে উঠবে।
” করলাম কি জীবনে
বাসর করতে পারলাম না গোপনে
মেয়ে নাই কপালে
কানতে হবে রোজ সকালে
আমান বিরক্ত হয়ে বলে
“জাস্ট সাট আপ সিয়াম। ভুলভাল কবিতা বাদ দে।
বিরক্ত লাগে।
” স্বাভাবিক
টিশা মুতু করে দিলেও ভালো লাগে আর সিয়াম কবিতা বললেও বিরক্ত লাগে।
বিয়ে তো আবরারও করেছে। বউ তো ওরও আছে। তো কোনদিনও এভাবে আমার কবিতার অপমান করলো না?
আর দুই দিন ধরে টুনটুনি ছাড়া টনির মেয়ের প্রেমে পড়ে আমার কবিতাতে বিরক্ত হচ্ছিস?
আজ বুঝবি না বুঝবি কাল
কবিতা বলা যখন বাদ দিবো না তখন কেন্দে কুল পাবি না।
আমান ভ্রু কুচকে কিছু মুহুর্ত সিয়ামের মুখ পানে তাকিয়ে থাকে।
“একটাই কথা বলেছিলাম আমি। তুই কতোগুলো বললি?
” বলবোই।
তোর কি?
আমান আর কিছু বলে না। নিজ কাজে মনোযোগ দেয়। আর সিয়াম নিজের ফোন খানা বের করে ইশারার নাম্বারে ডায়াল করে। সবাই যেহেতু ব্যস্ত সেহেতু ইশারার সাথে একটু আলাপ করাই যায়।
রিং হতেই ইশারা কল রিসিভ করে। মৃদু হেসে বলে ওঠে
“আসসালামু আলাইকুম ভাইয়া। ভালো আছেন?
” করলাম কল দিলো ধোঁকা
হতে চাই জামাই বানাই দিলো ভাইয়া
এ জীবন রেখে কি হবে?
বিরবির করে বলে ওঠে সিয়াম।
“কিছু বললেন?
” বললাম ভাইশা না জামাই হতে চাই তোমার।
সিয়াম সরাসরি বলে ওঠে।
পাশ থেকে আহাদ বলে
“ইশারা রাজি হইও না। ওর মেশিনে তেল নাই।
ইশারা ভ্রু কুচকে বলে
” কিসের মেশিন?
আমান বলে ওঠে
“দরকার
বাকিটা শেষ করার আগেই সিয়াম কল কাটে। বন্ধুদের পানে তাকিয়ে বলে
” তোরা কি আমায় মিঙ্গেল হতে দিবি না?
ইভান হামি তুলে জবাব দেয়
“দিবো।
যেদিন তোর মেশিনে তেল হবে
কালকে আদ্রিতার বিয়ে। দুই হাত ভর্তি মেহেদী লাগিয়ে দেওয়া হয়েছে তাকে। গায়ে হলুদ শাড়ি। এই তো কিছু মুহুর্ত আগেই মা এবং কাকিমারা মিলে হলুদ শাড়ি পড়ালো। কাঁচা হলুদ বেটে মুখ এবং গায়ে লাগিয়ে দিলো। এমনই থাকতে হবে সারারাত। কাল সকালে গোসল করিয়ে দিবে তখন সব উঠে যাবে। মেহেদী লাগিয়ে দিয়েছে দুপুরে। চার ঘন্টা সময় লেগেছে মেহেদী দিতে।
এখন একরু রিলাক্স পেয়েছে সে। নিজ কক্ষে ঢুকতেই কেমন কান্না পাচ্ছে আদ্রিতার।
জীবনটা কেমন হয়ে গেলো?
যদি মা থাকতো তাহলে আজকে নিজের বাড়ি থেকে বিয়ে হতো তার। দাদা দাদি চাচা চাচি মামা মামি বাবা মা সবাই মিলে আনন্দ করতো।
সবাই আছে নেই শুধু মা। তাতেই সবটা বদলে গেছে। আদ্রিতার নানু বাড়িতে দাওয়াত করা হয়েছে। তারা কাল আসবে। ফুপুফুপাকে দাওয়াত করা হয়েছে।
মজার ব্যাপার হলো আদ্রিতার তাদের চেহারা ঠিকঠাক মনে নেই।
সময়ের সঙ্গে সঙ্গে ভুলে গিয়েছে।
দুচোখ বেয়ে গড়িয়ে পড়া অশ্রুকণা হাতের উল্টো পিঠে মুছে ফেলে আদ্রিতা। কেঁদে আর কি হবে?
ভাগ্যের লিখনটাই এমন। বাবা কি পারতো না আজকে আসতে?
আদ্রিতা তো তারই মেয়ে। একটা দিন পাশে থাকতো। একটু আদর করবো। আদ্রিতাকে জড়িয়ে ধরে কাঁদতো।
ব্যসস আদ্রিতার মনে হতো আমি একা না। মা নেই তো কি হয়েছে? আমার বাবা আমার পাশে আছে৷ কিন্তু আফসোস বাবার সময় হলো না৷
দীর্ঘ শ্বাস ফেলতেই আদ্রিতার কল বেজে ওঠে। জানা কথা আবরার তাসনিন কল করেছে। হলোও তাই।
বিষন্ন মনে একটুখানি আলোর রশ্মির দেখা মেলে৷ চটজলদি কল রিসিভ করে কানে তুলে এবং বলে
” শেষ পর্যন্ত আপনি আসবেন তো আবরার তাসনিন?
দ্বিতীয় ঠকালে আমি মরে যাবো।
আবরার বোধহয় একটু হাসলো।
“আসতে তো হবেই।
আই মিস ইউ সো মাচ৷ ইউ নো হোয়াট তোমাকে চুমু খাওয়ার জন্য
বাকিটা আদ্রিতা বলে
” জানি আপনার গায়ের লোম দাঁড়িয়ে যাচ্ছে?
“হুমম
আই রিয়েলি মিস ইউ পাখি।
কিছু মুহুর্ত দুজনই চুপ থাকে। তারপর আবরার বলে ওঠে
” ঘুমাও
আজকের রাতটা তোমার।
কালকের রাতটা আমার।
ঘুমানোর সুযোগ পাবে না
ব্যাসস কল কেটে যায়।
তোমাতেই আসক্ত পর্ব ৬৮
আজকে আদ্রিতার বিয়ে। গোটা এলাকা সাজানো হয়েছে। আট খানা সাউন্ড বক্স আনা হয়েছে। তিন জায়গায় গেইট সাজানো হয়েছে। দাওয়াত করা হয়ে প্রায় আট হাজার মানুষ। চৌধুরী বাড়ির সামনে ক্রিকেট খেলার বিশাল মাঠ। সেই মাঠেই অতিথিদের খাওয়ানোর ব্যবস্থা করা হয়েছে।
আদ্রিতাকে সাজানোর জন্য বাংলাদেশের বেস্ট মেকাপ আর্টিস্টকে আনা হয়েছে। আর আবরার তাসনিন গতকালই গর্জিয়াস লেহেঙ্গা এবং স্বর্ণের গহনা পাঠিয়ে দিয়েছে।
আপাতত আদ্রিতাকে সাজানো হচ্ছে।