তোমাতেই আসক্ত পর্ব ৭১
তানিশা সুলতানা
বাংলাদেশ আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরে সর্বক্ষণ যাত্রীদের ভিড় লেগেই থাকে। একদল বিদেশে যাচ্ছে তো আরেকদল আসছে। একদল হাসছে আরেকদল কাঁদছে।
তবে আজকের চিত্র ভিন্ন। আবরার তাসনিন তার পার্সোনাল প্লেন নিয়ে বিমানবন্দরে নামার মুহুর্তে আরো একটা প্লেন ল্যান্ড করে।
সকলেই দাঁড়িয়ে দাঁড়িয়ে আবরার তাসনিনকে দেখছে।
যারা বাংলাদেশ ছেড়ে নিজের প্রিয় মানুষদের ছেড়ে বিদেশে পাড়ি জমাবে বলে প্লেনে উঠছিলো তারাও দাঁড়িয়ে পড়ে।
শেরওয়ানি পরিহিত আবরারকে দেখে দাঁড়াতে বাধ্য হয়।
বিমানবন্দরের এক কোণায় কালো রংয়ের হেলিকপ্টার দাঁড়িয়ে আছে। এই হেলিকপ্টারে করেই চৌধুরী মহলে যাবে।
আবরার প্লেন থেকে হেলিকপ্টার ওবদি হেঁটে যেতে থাকে। মানুষ জন তাদের ফোন বের করে ভিডিও করে নেয়।
আবরারের জন্য এক খানা রুমাল এনেছে সিয়াম। সে দেখেছে বররা রুমাল মুখে দিয়ে থাকে।
কেনো দেয় সে বিষয়ে ধারণা নেই তার।
আরও গল্প পড়তে এখানে ক্লিক করুন
“এই আব্বা রুমাল দিয়ে নাক মুখ চেপে ধর।
আবরার ভ্রু কুঁচকে বলে
” কেনো?
“এটাই নিয়ম।
আইছে জামাই রুমাল নিয়া
করবো আজকে সে বিয়া
রাতে হবে বাসর রে
ওরে রাইতে হবে বাসর রে।
জামাই বাবা বড্ড পঁচা
করবে বাসর সে একা
আমাদের দেখতে দিবে না
ওরে আমাদের দেখতে দিবে না।
সিয়াম গানের সুরে বলে ওঠে। তাকে তাল দেয় আহাদ।
” আব্বা এবার আমাদের একরু টিপস দিস তো।
ইন ফিউচার বিয়ে টিয়ে করবো।
ইভান বলে
” হ হ
কেমনে কি শুরু করবো। আগেই জেনে রাখা ভালো।
ততক্ষণে হেলিকপ্টারের কাছে চলে এসেছে ওরা। আবরার নিজের হেলিকপ্টারে উঠতে উঠতে বলে
“গুগলে সার্চ কর
কিভাবে বাসর করতে হয়?
এ টু জেড সব জানতে পারবি।
আহাদ সঙ্গে সঙ্গে ফোন বের করে। ওয়াইফাই অন করতে যেতেই মনে পড়ে নেট নেই।
সিয়াম কবিতার সুরে বলে ওঠে
” বারে বারে ঘু ঘু খেয়ে যাও ধান।
সমুদ্রে পারে বাসর করে বিজেকে মনে করো মহান।
এই বার সিয়াম তোমায় দেখাবে খেলা
বাসর ঘরে ঢুকে পড়বে মানবে না কোনো শালা।
বর চলে এসেছে। চৌধুরী বাড়ির সামনে এক খানা মাঠ রয়েছে। সেই মাঠেই হেলিকপ্টার থামে। আবরার তাসনিন রাজকীয় ভঙ্গিমায় হেলিকপ্টার থেকে নেমে আসে। আতিয়া বেগম সেখানেই দাঁড়িয়ে ছিলো ছেলেকে স্বাগতম জানাতে। আবরার মাকে এক হাতে জড়িয়ে ধরে এগোতে থাকে গেইটের দিকে। তিথিসহ আরও কিছু মেয়ে গেইট ধরেছে। মোটা অঙ্কের টাকা না দিলে ভেতরে ঢুকতে দেওয়া যাবে না।
ইশারাও সেখানে উপস্থিত। সিয়ামের মন খানা আনন্দে নেচে ওঠে। সে আবরারের রুমাল খানা নিজের নাকে চেপে ধরে লাজুক ভঙ্গিমায় এগোয়।
আমান বলে
“এখানে এতো ভিড় কেনো?
তিথি ঠোঁট বাঁকিয়ে জবাব দেয়
” টাকা না দিলে ভেতরে প্রবেশ করতে দেওয়া হবে না।
আহাদ বলে ওঠে
“টাকা কি?
এটা দিয়ে কি হয়? টাকা দেখতেই বা কেমন?
তাল মেলায় সিয়াম। রুমাল সরিয়ে বলে
” আসলে সদ্য জন্ম নেওয়া লেংটা শিশুদের থেকেও সরল আমরা। টাকা টুকা চিনি না।
ইশারা বলে ওঠে
“টাকা হচ্ছে টক ধরণের কাগজ। যা দিয়ে সব কিছু কেনা যায়।
ইভান বলে
” ওহহ কাগজ।
আমান ভাই এক দিস্তা খাতা দিয়ে দে ওদের।
রেগে যায় তিথি।
“ভাই কথা বাড়াচ্ছেন কেনো? দিয়ে দিন টাকা।
” ওহহ টাকা?
সুইজারল্যান্ড এ টাকাকে চুমু বলে।
ছিহহহ আমি চুমু দিতে পারবো না। এসব দিলে দাঁতে পোকা হয় মা বলেছিলো লেংটা কালে।
ইশারা নিজের কপালে দুটো থাপ্পড় মারে।
তিথির কানে কানে বলে
“ওদের কিভাবে বোঝাবো টাকা কি?
আহাদ বলে
” বোঝানোর কিছু নেই। আমরা চুমু দিবো না কিছুতেই। অসহায় সরল সোজা ভোলাভালা সুন্দর ছেলে দেখেছেন আর চুমু খাওয়ার জন্য উঠেপড়ে লেগেছেন?
এই আবরার বাংলাদেশ ভালো না। এখানকার মেয়েরা ধর্ষণ করার জন্য হা করে আছে। চল ভাই ফিরে যাই।
আবরার চোখ পাকিয়ে তাকায় আহাদের দিকে। মানে সে বউ ছাড়া যাবে না।
অসহায় সিয়াম কবিতা আবৃত্তি করে
“সবাই ভাই খ্রাপ মানুষ বউ ছাড়া কিছু বোঝে না
আমি সিয়াম অসহা কেবলা সিঙ্গেল
বউ কাকে কয় চিনিই না।
এভাবেই কি জীবন কেটে যাবে পাবো না বউয়ের দেখা
ওহে সুন্দর তুমি কি আমার বউ হবে? খেলবে আমার সাথে এক্কাদুকা?
ইশারার দিকে হাত বাড়িয়ে দেয় সিয়াম। ইশারা মুখ বাঁকিয়ে বলে
” আয়নায় নিজেকে দেখেছেন?
“হ্যাঁ দেখেছি। সুইজারল্যান্ড এর প্রধানমন্ত্রী বেস্ট হ্যান্ডসাম পুরুষের এওয়ার্ডও দিয়েছে। কখনো এসো নিরিবিলিতে দেখাবোনি।
শেষ পর্যন্ত ওরা টাকা কাকে বলে বোঝাতে পারে না আর বরপক্ষের থেকে এক টাকাও নিতে পারে না। সিয়াম আমান আহাদ ইভান আবরারকে নিয়ে নাচতে নাচতে ভেতরে ঢুকে পড়ে।
যেহেতু ইতিমধ্যেই দুই বার বিয়ে হয়ে গিয়েছে তাই এইবার আর রেজিস্ট্রি করানো হবে না। শুধু কবুল বলানো হবে।
ওদের বিয়ের স্টেজ বেশ সুন্দর করে সাজানো হয়েছে। আবরার তাসনিন দাঁড়িয়ে আছে। দুই পাশে ফুল দিয়ে ডেকোরেশন করা। আদ্রিতাকেও নিয়ে আসে হয়েছে। স্টেজে উঠতে সাহায্য করে তিথি এবং ইশারা। লাল রংয়ের লেহেঙ্গা সাথে ভাড়ি গহনা। পায়ের নুপুর থেকে শুরু করে মাথার তাজ পর্যন্ত ডায়মন্ডের। ভাড়ি মেকাপে আদ্রিতাকে অন্য রকম লাগছে। লেহেঙ্গারের ওড়না ছাড়াও এক্সর্টা ওড়না দিয়ে নাক ওবদি ঘোমটা টানা।
তিথির হাত খানা শক্ত করে ধরে আছে আদ্রিতা। ফিসফিস করে বলে
” আমার সাথে চলো আপু।
তিথি আদ্রিতার মাথাশ চাটি মেরে বলে
“বুদ্ধু এবার তোকে একাই যেতে হবে।
তিথি জোর করে নিজের হাত ছাড়িয়ে নেয়। সঙ্গে সঙ্গে মিউজিক বেজে ওঠে
” কাহানি শুনো
জুবানি শুনো
মুঝে পেয়ার হুয়া তাহা
ইক রা হুয়া তা
আদ্রিতা একপা এক পা করে এগোতে থাকে।
আবরারের কাছাকাছি যেতেই আবরাট হাঁটু মুরে বসে পড়ে আদ্রিতার সামনে।
মিউজিক বন্ধ হয়ে যায়
“তোমায় কবে ভালোবেসেছি জানি না। কিভাবেই বা ভালোবেসে ফেললাম সেটাও জানি না। বাট ভালোবাসি।
ইউ নো হোয়াট আদ্রিতা লাভ ইমোশন এসব আমার কাছে ফাকিং ড্রামা মনে হতো। ডিজগাস্টিং লাগতো। কিন্তু তোমারে ভালোবাসার পর থেকে ভালোবাসাকে ভালো লাগে। ইমোশনকে রেসপেক্ট করতে শিখেছি। ইভেন আবরার তাসনিন নিজেই ইমোশনাল হয়ে গেছে।
জানো পাখি যেদিন তোমায় ছেড়ে গেলাম। আম্মুকে রেখে চলে গেলাম। আমার কষ্ট হচ্ছিলো। ফাস্ট টাইম রিয়েলাইজ করেছি আবরার তাসনিন ইমোশনাল। ভীষণ ইমোশনাল।
একটু থামে আবরার। আদ্রিতার হাত খানা নিজের হাতের মুঠোয় নিয়ে নেয় এবং বলে
” পাখি তোমাকে চাঁদ এনে দেওয়ার ক্ষমতা আমার নেই। বাট চাঁদের মতো আরেকটা চাঁদ বানিয়ে দেওয়ার ক্ষমতা আছে। আমি গোটা জীবন তোমার ইচ্ছে স্বপ্ন এবং সকল আবদার পূরণ করার দায়িত্ব নিতে চাই। এতোদিন যতটা কষ্ট পেয়েছো সব কষ্ট গুলোকে সুখ করে দিতে চাই।
তোমার জীবনটাকে পুষ্পের ন্যায় সাজিয়ে দিবো কথা দিলাম।
তুমি থাকবে আমার সঙ্গে?
সঙ্গ দিবে আমার পাগলামি গুলোকে?
সহ্য করবে আমার ভালোবাসা?
তোমাতেই আসক্ত পর্ব ৭০
আদ্রিতা মাথা নেরে সম্মতি প্রকাশ করে। আবরার মুচকি হেসে দাঁড়িয়ে পড়ে। আদ্রিতা বলে
“আমার কিচ্ছু চাই না। শুধু আপনি সারাজীবন সঙ্গে থাকলেই চলবে।
আবরার জড়িয়ে ধরে আদ্রিতাকে। কপালে চুমু খেয়ে বলে
” কথা দিলাম
মৃত্যু ছাড়া আর কোনো কিছুই আমাদের আলাদা করতে পারবে না। সব সময় তোমায় সঙ্গে আছি।
Next part, plz