তোমাতেই আসক্ত পর্ব ৮
তানিশা সুলতানা
চিন্তিত সিয়াম এক পলক আবরারের দিকে তাকাচ্ছে তো আরেক পলকে গোটা ক্লাবটাকে পর্যবেক্ষণ করছে। ওই তো স্টেজে দশ বারেটা মেয়ে নাচছে। কিছু ছেলেও তাদের সাথে যোগ দিয়েছে। কিছু মেয়েরা ড্রিংক করছে।
বাই এনি চান্স আবরার কি এটা দেখে গ্লাস ভাঙলো?
না কি তার শক্তি দেখালো?
না কি আদ্রিতার বয়ফ্রেন্ডের কথা শুনে এমনটা করলো?
কোনটা হতে পারে?
ইভান অতি দ্রুত নিজ পকেট হতে রুমাল বের করে আবরারের হাতে চেপে ধরে। আমান ভ্রু কুচকে তাকিয়ে আছে। এই মুহুর্তে আবরারকে হাজার খানা প্রশ্ন করলেও কোনো জবাব মিলবে না ঢেড় জানা আছে ওদের। তাই অহেতুক প্রশ্ন করে এনার্জি লস করছে না। আহাদ আবার হাই তুলে। তার ঘুমের রেশ আবার চলে এসেছে। এই মুহুর্তে এক খানা বালিশ আর খাট পেলেই নিমিষেই ঘুমের দেশে পাড়ি জমাতে পারতো।
সিয়াম গালে হাত রেখে আবরারের পানে ঝুঁকে এবং সরল স্বরে শুধায়
আরও গল্প পড়তে এখানে ক্লিক করুন
“আর ইউ জেলাস আবরার?
আদ্রিতার বয়ফ্রেন্ড আছে শুনে হ ট হয়ে গেলি।
আহাদ পূণরায় হাই তুলে বলে
” আরেহহ ধুর
আশেপাশে এতো মেয়ে অথচ ওকে পাত্তা দিচ্ছে না। তাই ওদের এটেনশন পেতে এমনটা করলো।
ইভান এক খানা গ্লাস তুলে নেয়। নিজেও ভাঙার ট্রাই করতে করতে বলে
“ভাই পারছি না কোনো? ভাঙে না তো৷
সিয়াম গাট্টা মারে ইভান এর কপালে এবং বলে
” বেড পারফরম্যান্স না করা ওবদি ভাংবে না রে পাগলা।
আমান বলে
“আমাদের আবরার তাসনিন শত শত বার বেড পারফরম্যান্স ভালো করেছে না কি? আমার তো মনে পড়ে না।
সিয়াম মুখ বাঁকিয়ে বলে
” ওইসব গোপন কার্যকলাপ তোকে দেখি করবে? ইডিয়েট
আমান কিছু বলতে যাবে তার আগেই আবরার দাঁড়িয়ে পড়ে। এবং কাউকে কিছু বলার সুযোগ না দিয়ে গটগট পায়ে বেরিয়ে যায় ক্লাব হতে। সিয়াম দৌড় দেয় আবরারের পেছনে। হতাশ নয়নে ইভান আমান এবং আহাদ তাকিয়ে থাকে।
রাত আনুমানিক দুই বাজে। আদ্রিতার প্রচন্ড খিধে পেয়েছে। রাতে দুই তিন বার খাওয়ার স্বভাব তার। এই যেমন সন্ধ্যার একটু পরেই একবার খাবে তারপর দশটা নাগাদ একবার এবং দুইটা তিনটার দিকে একবার।
আদ্রিতার মতে “জীবন মানেই খেতে হবে।
খেতে হবেই মানে জীবন।
সর্বক্ষণ খেতে থাকো আর গলুমলু হও। খাওয়া ছাড়া এ জীবনে আর কিছুই নেই”
আদ্রিতার সাথে এ্যনিও খেতে উঠে পড়েছে। বোধহয় তারও খিধে পেয়েছে। গোটা বাড়িটা অন্ধকারে ঢেকে আছে। যেনো বিদ্যুৎ বিচ্ছিন্ন হয়ে গিয়েছে। সুইজারল্যান্ড এ ও বিদ্যুৎ চলে যায়? নাহহ দেশটাকে যতটা উন্নত ভেবেছিলো ততটাও নয়৷ বাংলাদেশের কিছু কিছু স্বভাব এই দেশও পেয়েছে। হতাশ আদ্রিতা অতি সাবধানে বিছানা থেকে নামে। পা নারিয়ে নারিয়ে জুতো খুঁজে। এবং পেয়েও যায়।
বালিশের পাশে ফোন রয়েছে বেমালুম সে কথা ভুলেই গিয়েছে আদ্রিতা। ওই তো ডিনার করে আতিয়া বেগমের থেকে ফোন নিয়েছে বাবার সাথে কথা বলবে বলে।
কিন্তু কল করেছিলো আসিফ আদনানকে।
বিদেশি নাম্বার থেকে কল করার আসিফ বোধহয় জানতেই পারে নি কে কল করেছে।
তাই রিসিভই করলো না। একটুখানি মন খারাপ হয়েছিলো আদ্রিতার। পরমুহূর্তেই তার মোটা মাথায় এক খানা বুদ্ধি আসে। টেক্সট করে “আমি আদ্রিতা। বিদেশে চলে এসেছি। ফ্রী হয়ে কল করিয়েন”
এ্যনিকে কোলে নিয়ে কানার মতো হাতরিয়ে হাতরিয়ে রুম হতে বের হয়। ঘুটঘুটে অন্ধকারে নিজের অস্তিত্বটাও টের পাওয়া দায়। এবার আদ্রিতা কিচেন ওবদি যাবে কিভাবে?
এ্যানিও বোধহয় ভয় পেলো। তাই উচ্চস্বরে “ম্যাও ম্যাও আওয়াজ তুলতে থাকে”
আদ্রিতা চট জলদি চেপে ধরে এ্যানির মুখ। হুশিয়ার দিয়ে বলে
“চুপ কর বেয়াদব। এই বাড়িতে একটা গন্ডার আছে। তোর শব্দ পেলে বাঘের মতো গর্জন তুলে এগিয়ে আসবে। ক্ষেপা ষাঁড়ের মতো হুঙ্কার তুলে ধমক দিবে। একবারও ভাববে না আমার মতো হাতির ভয়ে বাচ্চা আদ্রিতা মূর্ছা যেতে পার
বাকিটা শেষ করার আগে শক্তপোক্ত কিছুর সাথে ধাক্কা খায় আদ্রিতা। ছিঁটকে পড়ার আগেই এক জোড়া শীতল হাত জাপ্টে জড়িয়ে ধরে আদ্রিতার কোমর। এক জোড়া অধর এসে ঠেকে আদ্রিতার কপালে।
ভূমিকম্পের ন্যায় কেঁপে ওঠে মেয়েলি কায়া৷ বিড়াল ছানাটি পড়ে গিয়েছে ফ্লোরে। এবং গলা ছেড়ে চিৎকার করে যাচ্ছে মিউ মিউ শব্দে।
আবরার আদ্রিতাকে সোজা করে দাঁড় করিয়ে কোমর থেকে হাত সরায়। চাপা গম্ভীর স্বরে শুধায়
” এখানে কি চাই?
আদ্রিতা স্বস্তির নিঃশ্বাস ফেলে। যাকক বাবা বাঘের কাছাকাছি চলে এসেছে। এখন অন্ধকার ভুত পিত কোনো কিছুই ভয় নেই। বাঘ ঠিক ঢিসুম ঢিসুম করে সব গুলোও বৃন্দাবন পাঠিতে দিতে সক্ষম হবে।
আদ্রিতা চঞ্চল ভঙ্গিমায় এ্যানিকে খুঁজতে খুঁজতে জবাব দেয়
“আর বলিয়েন না। সুইজারল্যান্ড আমার বা*****র দেশ। এখানে কারেন্ট থাকে না বাংলাদেশের মতো। অউন্নত দেশ একটা।
আর আপনাকেও বলি হারি। এতো বড় বাড়ি কিনেছেন একটা জেনারেটর কিনতে পারেন নি?
সেসব বাদ দিলাম একটা চার্জার লাইট তো কিনতে পারেন।
বেচারা আমি
বাকিটা শেষ করার আগেই বাড়িটা কানায় কানায় আলোকে হয়ে যায়৷ আশ্চর্য আদ্রিতা খানিকটা ঘুরে ঘুরে দেখে পরপরই খুশি হয়ে বলে
” এই তো কারেন্ট চলে এসেছে৷ আমার না ভীষণ খিধে পেয়েছে। খেয়ে আসি ঠিক আছে বড় ভাই।
বলেই এ্যানিকে কোলে তুলে নেয় এবং গটগট পায়ে নেমে পড়ে নিচে৷ বলা তো যায় না আবার কখন কারেন্ট চলে যাবে। কারেন্ট থাকতে থাকতে খাওয়া শেষ করে হবে।
আবরার বিরক্তির নিঃশ্বাস ফেলে বিরবির করে বলে
“ডিজগাস্টিং
ভীষণ সুস্বাদু খিচুড়ি। পেট পুরে খেয়ে ঢেকুর তুলে আদ্রিতা। এ্যানিকেও দিয়েছিলো সেও লক্ষী বাচ্চার মতো চেটে পুটে খেয়েছে। এবার দুজনেরই পেট ঠান্ডা হয়েছে।
বেসিনে থালা রেখে আসার পথে খেয়াল করে তার টিশার্টে র ক্ত লেগে আছে। এ বাবা রক্ত আসলো কোথা থেকে। চিন্তিত আদ্রিতা দাঁত দিয়ে নখ কাটতে কাটতে পায়চারি করে। কোথা থেকে আসলো? কোথা থেকে আসলো?
অতঃপর মনে পড়ে আবরার তার কোমর জড়িয়ে ধরেছিলো। বাই এনি চান্স আবরারের হাত থেকে র ক্ত লেগেছে? তার কি হাত কেটেছে?
উদার মনের আদ্রিতার মায়া হয়৷ সে চট করেই ভেবে ফেলে একবার দেখে আসবে। যেই ভাবা সেই কাজ। এ্যানিকে কোলে তুলে এক দৌড়ে এগিয়ে যেতে নেয় আবরারের রুমের দিকে। মাঝ পথেই দেখা হয় সিয়ামের সাথে। সে সবেই বাড়িতে ঢুকলো।
আদ্রিতা বলে ওঠে
” সিয়াম ভাই ক্ষেপা ষাঁড়ের কি হাত কেটেছে?
মিনিট দুয়েক সময় লাগে সিয়ামের বুঝতে। ক্ষেপা ষাঁড়টা আসলে কে?
যখন বুঝতে পারে ঠোঁটের কোণে হাসি ফুটে ওঠে। বাহহ মারাক্তক নাম দিয়েছে তো।
“বাহহ আদ্রিতা সুন্দর নাম দিয়েছো তো।
” রাখুন সুন্দর নাম। কে টে ছে কি না বলুন।
“কা টে নি তো। আবরার তাসনিন কাঁচের ড্রিংক এর গ্লাস মুঠো করে ধরেছিলো। ব্যাস গ্লাস ভেঙে গুড়িয়ে গেলো আর কিছু সংখ্যক কাঁচ তার হাতেও ঢুকে গেলো।
আঁখি পল্লব বড় বড় হয়ে যায় আদ্রিতার। ক্ষেপা ষাঁড় তাহলে হিরো হওয়ার পায়তারা শুরু করেছে?
দেখতে শুনতে খারাপ না। হিরো হলেও হতে পারে। তবে এখনই তার মাটিতে পা পরে না। হনুমানের মতো ব্যবহার করে। একবার হিরো হয়ে গেলো তো সে আসমানে উড়বে।
” ভাই আমি যাচ্ছি হ্যাঁ
তার হাতটা দেখে আসি।
সিয়াম কিছু বলবে তার সুযোগ না দিয়ে এক দৌড়ে চলে যায় আদ্রিতা। একদম আবরারের কক্ষের সামনে গিয়ে থামে। এ্যানিকে কোল থেকে নামিয়ে আলতো করে ধাক্কা দেয় দরজায়। ব্যাসস খুলে যায়। আদ্রিতা দাঁত দিয়ে ঠোঁট কামড়ে মাথা খানা ঢুকিয়ে দেয়।
সাথে সাথেই স্তব্ধ হয়ে যায়৷ এসব কি দেখছে সে?
তোমাতেই আসক্ত পর্ব ৭
ছিহহহ ছিহহহ ছিহহহ
লোকটা এতো অশ্লীল?
আদ্রিতা একবার ভেবে নেয় মাথা সরিয়ে নেবে। শত হোক ভাই তো। পরমুহূর্তেই ভাবে “আদ্রিতা দেখে নে। এরকম হট হট দৃশ্য আর কখনোই দেখতে পাবি না।