তোমার ছোঁয়ায় আসক্ত আমি পর্ব ১০
নীল মণি
সাগর আর আহান এর সামনে কেউ যেন কথার বিস্ফোরণ ঘটালো। তারা নিজেরাই হতবাক কি বলে এই ছেলে। সাগর সারা ছাদ ঘুরে না পেরে বলেই উঠল —
” এই বেডা কয় কি? এই আহান আমারে একটু চিমটি কাট তো। পাবনা দিয়া কোন পাগল ছাগল ছাড়া পায়নায় তো? ভুল করে আমার বাসার ছাদে আইয়া পড়ছে ।”
জায়ন হাতের কব্জি নিজের সঙ্গে আলিঙ্গন করে ভ্রু কুচকে সাগর এর দিকে তাকিয়ে আছে । এই তাকানো দেখে আহান আর চুপ করে থাকতে পারল না –
” দেখ দোস্ত এই সব তকানি তুকানি দিয়ে লাভ নাই, সাগর ঠিক ই বলছে । তোর কি মাথা নষ্ট হয়েগেছে ?
আর ইউ সিক?”
জায়ন দাঁতে দাঁত পিষে উত্তর দিল –
” আই এম নট আ সিক ব্রো , আমি এক ঘোরের মধ্যে আছি আহান , আমি ভেবেছি হয় তো এই ঘোর কাটিয়ে উঠতে পারব বাট বিশ্বাস কর ডে বাই ডে আমি এই ঘোরের গভীরে প্রবেশ করছি ”
আহান বলে উঠল —
” তাহলে তুই বিয়ে টা কেন করছিস ? হুয়াই জায়ন হুয়াই?”
জায়ন দুই হাত দিয়ে নিজের মাথার চুল টেনে দাঁত খিঁচিয়ে উত্তর দিল –
” মেজমা যদি হার্টের পেশেন্ট না হতো তাহলে ঐ মুহূর্তেই বিয়ে ক্যান্সেল করে দিতাম যে মুহূর্তে ওই পিচ্ছি আমার
মাথা নষ্ট করা শুরু করেছে । বয়স দেখতাম না সমাজ দেখতাম না পরিবার দেখতাম না তখন ই তুলে নিয়ে বিয়ে করতাম।”
আরও গল্প পড়তে এখানে ক্লিক করুন
এবার সাগর আর আহান ও কিছু বললো না । এই ভাবে রাতের আধারে সোডিয়ামের আলোতে কেটে গেলো ৩ বন্ধুর কথোপকথন ।
তিয়াশা ব্যালকনিতে দাঁড়িয়ে বার বার দপুরের কথা ভেবে শিউরে উঠছে আর মনের গভীরে বয়ে চলেছে এক নিঃশব্দ উদাসীনতায়। যেন নিঃশব্দে আকাশের তারাদের কাছে নিজের না বলা কথাগুলো রেখে যাচ্ছে।
চোখ দুটো স্থির হয়ে তাকিয়ে আছে দূরের দিগন্তে। ঠিক যেন কিছু একটা খুঁজছে কিন্তু সেটা তার হাতের নাগালের বাইরে। হঠাৎ করে দেখতে দেখতে বাড়ির সেই চঞ্চল মেয়েটাও নিজের কিশোরী অনুভূতির মায়ার এক কাঠগড়ায় দাঁড়িয়ে আছে।
আকাশের পানে তাকিয়ে নিজেকে যেন তারাদের সঙ্গে এক নীরব বন্ধুত্ব গড়ে তুলেছে–যেখানে তিয়াশা নিজের সব অভিমান গুলো তার কাছেই জমা করছে —
” এইযে শুনছো হ্যাঁ তোমাদেরই বলছি তোমাদের নতুন সঙ্গী আমি। একটু কথা বলতে এসেছি তোমাদের সঙ্গে আমার মন খারাপ নিয়ে আর কিছু না বলা কথা নিয়ে।”
এ তার কেমন ছোয়া যা ভুলতে পারছি না, যা লিখে গেছে আমার এই নতুন ব্যাকুল মনের এক ছেড়া পাতায়।
এ কেমন বুকের ব্যাথা, কেন হয় এই ব্যথা?
সেই তারার আলোয় চোখের গভীরে লুকিয়ে থাকা
প্রশ্নগুলো যেন প্রতিফলিত হচ্ছে—জীবনের, সময়ের আরেকটি নামহীন অপেক্ষায়।
এ তোমার কি মায়ায় জড়ালে বলতে পারছি না তো, কি করে আড়াল হবো এই মায়ার জালের থেকে বলতে পারো?
তিয়াশা এখনো দাড়িয়ে আছে তার ঘরের সেই ব্যালকনিতে। রাতের সময় তখন ১০:৩২ , বাসার সবাই রাতের খাবার খেয়ে যে যার মত নিজের রুমে প্রবেশ করে গেছে। জায়ন এখনো বাড়িতে ফেরেনি।
মেহজাবীন বেগম জায়ন কে ফোন করে জেনে নিয়েছিল সে রাতে সাগর দের বাসা থেকে খেয়ে আসবে।
হঠাৎ বাইক এর শব্দে তিয়াশা তার ভাবনার জগৎ থেকে ফিরে এল বাস্তবে।
সেই শব্দের দিকে দৃষ্টি প্রেক্ষন করতেই , দেখতে পেল সে তার মনের গভীরে থাকা প্রশ্নের মালিক টাকে ।
জায়ন এর ও নজর পরেছিল ব্যালকনিতে, দেখতে পেল তার ছোট্ট মায়াবী রমনী কে । ব্যালকনির হালকা আলোয় তিয়াশার মুখখানা যেন জায়ন এর হৃদয়ের গভীরে তোলপাড় চালালো ।
তাকে দেখেই সে বাইকের হর্ন টা ২ বার বাজাল , তৎক্ষনাৎ তিয়াশার নজর ও এদিকে পরল।
দুজনের দৃষ্টি একে অপরের দিকে স্হির হয়ে রইল।
কিছুক্ষণ এইভাবে দুজন দুজনের দিকে তাকিয়ে , তিয়াসা নজর এড়িয়ে নিজের রুমে ফিরে গেল।
এদিকে জায়ন ও বাইকের থেকে নেমে সদর দরজা দিয়ে
উপরে চলে গেল ।
চৌধুরী বাড়িতে নিভে গেল রাতের শেষ আলো টুকুও , পাড়ি দিল সব ঘুমের দেশে , কেউ জেগে আছে তার নিজ ভাবনায় , কেউ ডুবে গেছে তার স্বপ্নের দুনিয়ায়।
রাত ঘনিয়ে সকাল নেমে এল ।মিঠি আলোর আভা ছড়িয়ে পড়ল থাই গ্লাস ভেদ করে জয়নের রুমে , চোঁখ মেলে নিজের ফোন টা চেক করে দেখল , ইউভির মিসড কল হয়ে আছে
জায়ন কল ব্যাক করল –
রিং হচ্ছে , কল টা রিসিভ হতেই ইউভি ওপাশ থেকে বলল –
“ভাইয়া এতবার কল দিলাম কোথায় ছিলে?”
জায়ন এর ঘুমের রেশ এখনো কাটেনি , জায়ন ধীম গলায় উত্তর দিল–
” ঘুমোচ্ছিলাম ,ফোনটা সাইলেন্ট ছিল তাই টের পাইনি।”
ইউভি চমকে উত্তর দিল —
“কি বলো ভাইয়া, তুমি এত বেলা পর্যন্ত ঘুমাচ্ছ ?”
ইউভির কথায় জায়ন একটু নড়ে চোরে বসল , তারপর নিজের দৃষ্টি দেয়াল ঘড়ির দিকে দিতেই দেখল সময়টা দশটা পনেরো ….
আসলে তার ভাবনার জগৎ থেকে বেরিয়ে সে অনেক দেরি করে ঘুমিয়েছে ভোরের কাছাকাছি, সেটা তার খেয়ালই নেই ।
জায়ন ইউভির কথায় উত্তর দিতে বলল-
“শরীরটা ভালো না ,তাই বেলা হয়ে গেছে।”
ইউভি তারপরে বলল-
“ওই জন্যই তো তোমাকে কল দিয়েছিলাম, আম্মু বলল তুমি নাকি হাতে খুব চোট পেয়েছো। কি করে চোট পেলে আমাকে সত্যি করে বলবে কিন্তু ভাইয়া। আম্মু আমাকে বলেছে তোমার নাকি উইন্ডো গ্লাসে হাত লেগে হাতটা ব্যথা পেয়েছো। কিন্তু আমার এই কথা বিশ্বাসযোগ্য মনে হচ্ছে না।”
জায়ন বিছানায় বসে পা দুলিয়ে মাথা নিচু করে একটু ভেবে বলল —
” সব জানতে পারবি ,বাড়িতে আয়”
এদিকে ইউভি ও বললো —
” হ্যাঁ ভাইয়া বেরিয়ে গেছি আর ৩-৪ ঘন্টা লাগবে ।
হাতের ব্যথা কেমন আছে সেটা বলো? ”
জায়ন বলল —
“তেমন কিছু না ,মাইনর একটা চোট অত টেনশন করিস না। সাবধানে বাসায় ফিরিস।”
ইউভি বললো –
“জ্বী ভাইয়া, ভাইয়া একটা কথা ছিল?”
জায়ন বলল –
“বল”
ইউভি বললো-
“আমার হৃদয় পাখিটাকে দুদিন দেখিনা, না কাউকে জিজ্ঞাসা করতে পারছি না। কেমন আছে গো?”
জায়ন মুচকি একটু হেসে বলল –
“বাড়িতে তো আসছিস নিজেই দেখে নিস।”
ইউভি বলল-
“ও হ্যাঁ আমি তো ভুলেই গেছিলাম আমি বাড়ি যাচ্ছি, আমি একটা ইডিয়েট।”
জায়ন আরেকটু হেসে বলল-
“সেটা সবাই জানে, আচ্ছা ইউভি শোন?”
“হ্যাঁ ভাইয়া বলো”
“পিচ্চিদের মায়া বড়ই কঠিন তাই নারে”
“হ্যাঁ ভাইয়া আমি তো সে জ্বালায় জ্বলে মরছি।”
জায়ন একটু দীর্ঘশ্বাস ফেলে হাতে একটা সিগারেট নিয়ে ব্যালকনিতে গিয়ে সিগারেটের টান দিয়ে ইউভি কে উত্তর দিল–
তোমার ছোঁয়ায় আসক্ত আমি পর্ব ৯
“শুধু তুই না, এই জ্বালায় এখন আমিও জ্বলছি।”
ইউভি কিছু না বুঝে জবাব দিল
” অ্যাঁ….”