তোমার ছোঁয়ায় আসক্ত আমি পর্ব ৫৩
নীল মণি
**কিছু সময় আগে —
__ ” ওদের কোল্ড ড্রিঙ্কস দিস , তোর কে হয় ওরা?
তোর এত বড় বুকের কলিজা । দাঁত বের করস ওদের সামনে ? তোর সব চুল ছিঁড়ে ফেলে দিব।”
তিয়াশার মুখে কথাটা যতটা ভয়ঙ্কর ছিল , চোখে ছিল ঠিক ততটাই আগুন। চোয়াল শক্ত, কপালের রগ ফুলে উঠেছে চোখে জ্বলজ্বলে ঈর্ষার আগুন। বউ হয়ে অন্য মেয়ের প্রতি স্বামীর সামান্য একটু হাসি বা দয়া সহ্য করার মতো মেয়ে সে নয় আর তাছাড়া আজ তার মনে হচ্ছিল, জায়ন যেন একটু বেশিই আগ্রহী ছিল ওদের প্রতি।দাঁতে দাঁত চিপে তিয়াশা চিৎকার করে জায়ন এর চুল কান মুখ ধরে টানছে। এরমধ্যেই জায়ন ব্যথায়
আওয়াজ করে বসল ,
___” আহ, বেইব লাগছে তো ।”
জায়নের কণ্ঠে কষ্টের সঙ্গে ছিল একরকম অবুঝ সোহাগের আকুতি। তিয়াশার রাগের তীব্রতায় ব্যথা পেলেও, সে জানে এই রাগের পেছনে আছে প্রচণ্ড ভালোবাসা, একচেটিয়া অধিকারবোধ আর তার প্রতি ভয়ানক দুর্বলতা।
এটা শুধুই রাগ না এটা এমন এক মালিকানাবোধ যেখানে প্রেম, অধিকার আর ঈর্ষা গলে মিশে আছে। সে জানে, জায়ন শুধু তারই, কিন্তু তাই বলে অন্য মেয়েদের সামনে দাঁত বের করে হাসা? না, সেটা সে সহ্য করবে না, চুল ধরে টানাটানির শাস্তি তো তখন একেবারে ন্যায্য মনে হয় তার কাছে।
আরও গল্প পড়তে এখানে ক্লিক করুন
__” লাগার জন্য দিয়েছি , আমার লাগত না যখন তুই আমায় মারিস বেয়াদব পুরুষ ? ওদের কি ভাবে চিনোস বল?অন্য মেয়ে রে বিউটিফুল বলা , তাহলে আমি কি ?”
নিশ্বাস ফেলল জায়ন। আজ সত্যিই সে বুঝে গেছে
বউ রেগে গেলে পৃথিবীর কোনো শক্তিই তাকে থামাতে পারবে না। আর সে নিজেই তো আগুনে ঘি ঢেলেছে।একটু মজা করেছিল, একটু উপেক্ষা দেখিয়েছিল, যাতে করে বউ নিজেই ফিরে যায় ।
কিন্তু এখন বউয়ের রাগ তার কল্পনার অনেক বাইরে গিয়ে দাঁড়িয়েছে। চোখে জল, ঠোঁট কামড়ে থাকা অভিমান, কথা শুনতে চাইছে না।
জায়নের নিজেরই ইচ্ছা করছিল নিজের গালে একটা চড় কষাতে। কী দরকার ছিল এমন মজা করার? আগে যদি জানত, তবে নিজের স্টাইলে বউ নিয়ে
যেত।
এই আফসোসের পাহাড় বুকের ভিতর চাপা দিয়ে, নিজের গলা নরম করে, সেই সুর যা এই কঠিন মানুষ টার মুখে সোনাই যায় না , আর এখন তার বাচ্চা বউ
তাকে কি তৈরি করেছে,
__” তুমি তো মায়াবি সোনা , তোমার মত সুন্দরী আমার চোখে কেউ নেই জান ।আমি ওই মেয়ে দুটো কে চিনি না , আর তুমি এই রকম তুই তুই করে বলো না জান বুকে ব্যথা লাগে,আমি ওই দুটো মেয়ে কি ,আমি কোন মেয়ে কে ই চিনি না সোনা ।”
তিয়াশার রাগ গোলবে কি ভয়ঙ্কর হয়ে উঠবে কি আরো ভয়ঙ্কর হয়ে উঠলো। আবারো গর্জে উঠল জায়ন উপর,
__” বুকে ব্যথা নিয়ে বসে থাক , তুই না চিনে এত সুন্দর করে বার্তা চালাচ্ছি লি,আর চিনলে কি করতি? আমাকে ছুবি না তুই ”
এই বলে জায়ন এর গলায় এমন কামড় বসিয়ে দিল ।
যে জায়ন আর ব্যথায় তিয়াশাকে ধরে রাখতে পারল না। অমনি তিয়াশা ছুটে পালিয়ে গেল। ওই কামড়টা যেন ছিল তার রাগের শেষ ফিনিশিং টাচ। ভালোবাসার রাগ আর ঈর্ষার মিশ্রণে তার শরীর কেঁপে উঠছিল, আর জায়নের গলায় দাঁতের চিহ্ন যেন বলে যাচ্ছিল
“তুই আমার, একেবারে আমার।”
জায়ন ও গলায় হাত দিয়ে ডলতে ডলতে পিছনে ছুটলো,
__”বউ শোন তুই আমায় না বলে চলে এসেছিস তাই আমি রাগ করে তোকে রাগাচ্ছিলাম আমার কোন দোষ নেই ।”
__”আমি কাউকে চিনি না বউ আমি আর কারো সঙ্গে কখনো কথা বলবো না।”
__” তুই বাদে সব মেয়ে আমার কাছে আপামনি। বউ শোন..”
__”তুমি আমার বিশ্ব সুন্দরী।”
__” বউ দারা”
__” বউ এত রাগ করতে নাই জান”
__” বাইকে না বসে কোথায় যাচ্ছিস ।”
তিরিং বিড়িং করে তিয়াশা জায়ন এর বাঁধন থেকে ছাড়া পেয়ে রাগে গজ গজ করতে করতে হাটতে
শুরু করেছে । রাগের চোটে বোরখার পর্দাই টান মেরে খুলে দিল।
__” আরে জান রাস্তায় এসব কি করছিস ?”
জায়ন বোরখার পর্দা তাড়াতাড়ি করে তুলে নিয়ে এসে তিয়াশার পিছনে ছুটলো । করুন সুরে তাকিয়ে থেকে
বলল,
__”জান এইটা পড়ে নে সোনা । আমার বউ এর গলায় আমার দেওয়া ভালোবাসা দেখা যাচ্ছে তো।”
অমনি আগুন ঝলকানি দৃষ্টি দিয়ে তাকাল তিয়াশা ,
__” যাক দেখা , লোকে দেখুক বাসায় বউ এর এই
অবস্থা করে বাইরে এসে জামাই মেয়ে দের সঙ্গে
কি ভাবে ক্যালেন্ডার তৈরি করে । তোমায় না কুচি কুচি করে কেটে হাঙর দিয়ে খাওয়াবো।”
জায়ন বউ এর এইরূপ এই প্রথম দেখছে , তার বাচ্চা বউ যে এরূপ ধারণ করতে পারে জানা ছিল না ।
এটা শুধু চমক নয় জায়নের ভেতর তখন একরকম আশ্চর্য আবেগ জন্ম নিচ্ছিল। তার বাচ্চা, দুষ্টু, মিষ্টি বউ যে তার জন্য এমন পজেসিভ, এমন আগুন ঝরা হয়ে উঠতে পারে, সেটা সে কখনো কল্পনাও করেনি।
__” বউ সরি কান ধরছি জান , প্লীজ । আর মজা করব না ।”
কিন্তু তিয়াশার চোখে তখনও আগুনের লেলিহান শিখা। চোখে-মুখে আগুনে ধোঁয়া, ঠোঁট কাঁপছে রাগে, আর জায়নের দিকে তাকালেই যেন আগ্নেয়গিরির লাভা ছুটে আসছে রাগের সাগরে তখন মাফের স্রোতও আটকে গেছে।
__” ফোন বের করো ।”
তিয়াশার কণ্ঠে ছিল এমন এক নির্দেশ, যেন সেটা কোনো প্রেমিকার আবেগ নয়, বরং হাইকোর্টের রায়।
জায়ন থতমত খেয়ে গেল, ফোন দিয়ে কি করবে
আবার , কোন কথা না বাড়িয়ে জায়ন ফোন বের করল । অমনি আরেক গর্জন,
__” ফোন লাগাও ওই নম্বরে ।”
__” কোন নাম্বারে জান ?”
দাঁতে দাঁত পিষে বলে উঠলো তিয়াশা,
__” তোমার বিউটিফুল জুলির নাম্বার , একটু আগেই না
ফোন করল ।”
আকাশেও মেঘ করে বিদ্যুত চমকাচ্ছে , এদিকে
তিয়াশার চোখে তখন শুধুই সন্দেহ, অভিমান, আর প্রমাণ পাওয়ার ক্ষুধা। আর সেই ক্ষুধা মেটাতে নিজের হাতেই ফোনটা নিয়ে কল লাগিয়ে দিল। তবে রাগের চোটে চোখ ধাঁধিয়ে গেছে কে কল দিয়েছে, সেটাই যেন খেয়াল করল না।
তিয়াশা চিৎকার করে উঠল ,
__” ওই হা**রামির বাচ্চা, আমার বর রে কল দ্যাস।
তোর কলিজায় কত বড় জোর । তোরে হাতে সামনে
পেলে কলিজা ভুনা করব ……
এর মধ্যেই ওপাশ থেকে বলে উঠল ,
__” ভা ভাবি আপনি এত এ এঙ্গ্রি কেন আমার উপর..?”
এদিকে জায়ন মুচকি মুচকি হেসেই যাচ্ছে, তখন
ই তিয়াশা থমকে গেল, মুখটা ধীরে ধীরে লাল থেকে লালচে-বেগুনি হতে লাগল, চোখ কুঁচকে বলল ,
__” এই জুলির ভয়েস, জলি জলি কেন লাগছে ।”
জায়ন একটু হেসে বলে উঠলো ,
__” আমার বিশ্ব সুন্দরী বউ , নাম টা তো দেখ তখন
কার ফোন এসেছিল?”
তিয়াশা ফোনের দিকে তাকাতেই দেখল ,
স্ক্রীন এর উপর লেখা ‘জেমস’।তিয়াশা যখন ফোনের স্ক্রিনে “জেমস” নামটা দেখে, তখন তার মুখে হালকা এক বিস্ফোরণ ঘটে গেল রাগ, লজ্জা আর নিজের ভুল ধরার পর যে মুখচোখ হয়ে যায় গরম ধোঁয়ায় ভরা প্রেসার কুকারের মত, ঠিক সেই রকম।
__”বউ দেখলি তো আমায় কোন মেয়ে ফোন করেনি,
এবার তো রাগ কম কর জান , চল না দেখ হাটতে হাটতে কত দূর চলে এসেছি , মেঘ করেছে বৃষ্টি হবে চল না বউ।”
কিন্তু তিয়াশার মনে এখনো ওই মেয়ে গুলোর হাসি আর জায়ন এর হাসি ভাসছে , যতোই জুলি জেমস হোক না কেন । তাই কিছু না বলে আবারো হাটা দিল।
তখনই হঠাৎ করেই আকাশ থেকে নেমে এলো এক ঝরঝরে বৃষ্টি,আর সেই বৃষ্টির নিচে দাঁড়িয়ে দুইটা ভিজে হৃদয় একটার ভেতরে অভিমান, আর একটার ভেতরে অনুশোচনা। কোমরে দুই হাত দিয়ে এক দীর্ঘ নিঃশ্বাস ছাড়ল তারপর বৃষ্টির ভেজা ঠান্ডা শরীরে জায়নের মাথায় খেলে গেল এক দুষ্টু মিষ্টি বুদ্ধি।
পকেট থেকে মোবাইলটা বের করল, স্ক্রিনে একটানা কয়েকটা ট্যাপ…
আর মুহূর্তেই ভেসে এলো গান ,
__ 🎶
“কেন জানি না, মিষ্টি এ ব্যথা…
থাকছি খেয়ালে, ভাবছি তোর কথা…”
🎶
বৃষ্টির সুরের সাথে মিশে গেল প্রেমের সুর…
জায়ন এগিয়ে গেল, তিয়াশার পেছনে এসে হাত দিয়ে হালকা করে কাঁধে ছুঁয়ে দিল।তিয়াশা থেমে গেল, এক তীক্ষ্ণ চোখে পিছনে তাকাল সেই চেনা রাগী চোখ, যেন গলা পর্যন্ত উঠে আসা কথা বলে দেবে “ছুঁবি না ”
কিন্তু জায়ন হাল ছাড়ল না।গান এখনো চলছে ,
🎶
“তোর প্রেমের বৃষ্টিতে হায় ভিজছি সারাদিন…
তোর প্রেমের বৃষ্টিতে হায় ভিজছি সারা রাত…”
জায়ন আবারও একবার কাঁধে ছুঁয়ে হালকা ইশারা করল,
এইবার তিয়াশা তাকাতে যাচ্ছিল রাগী চোখে… কিন্তু!
সে কি?
জায়ন দাঁড়িয়ে আছে কানে হাত দিয়ে, মুখে একেবারে “আমি দোষী, কিন্তু আমি তো তোরটাই” টাইপ দুঃখী হাসি, চোখে এমন এক করুন দৃষ্টি ,যেন পুরো পৃথিবীটা এখন শুধু তার তিয়াশার একটা মুচকি হাসির অপেক্ষায়।তিয়াশা চেয়ে থাকল কয়েক সেকেন্ড, ঠোঁট কাঁপল, মুখটা শক্ত করার চেষ্টা করল…কিন্তু সেই কানের উপর হাত রাখা অবুঝ ছেলের মতো দুষ্টু মুখটা দেখে…একবারে হেরে গেল।রাগের পাহাড় গলে গেল এক মিষ্টি বৃষ্টির ছোঁয়ায়।তিয়াশা মুখটা ঘুরিয়ে নিল, যেন কিছুই হয়নি… কিন্তু তার ঠোঁটের কোণে যে সেই পরিচিত “মুচকি হাসি” , সেটা ঠিকই বলে দিচ্ছে,
“এই ব্যাটা আমার… আর আমিই ওর সবচেয়ে বড় দুর্বলতা…”
__ ” 🎶 তোর প্রেমের বৃষ্টিতে হায় ভিজছি সারাদিন…
তোর প্রেমের বৃষ্টিতে হায় ভিজছি সারা রাত…”
জায়ন এক ঝটকায় তিয়াশাকে নিজের বুকের মধ্যে টেনে নিলো,বৃষ্টির ঝাপসায় দাঁড়িয়ে থাকা সেই মেয়েটা, যার চোখে জল আর জলের তফাৎ করা কঠিন,তার ভেজা চুল, কাঁপতে থাকা ঠোঁট, আর অবুঝ অভিমানে ভরা মুখখানা আজ যেন জায়নের কাছে পৃথিবীর সবচেয়ে সুন্দর দৃশ্য।জায়ন অপলকে তাকিয়ে থাকলো কিছুক্ষণ, তারপর গলার সবটা কাঁপা ঠেলে একটা নিঃশ্বাসের মতো করে বলে ফেললো,
“সরি বউ… তোর উপর রাগ করে একটু মজা করতে গেছিলাম, কিন্তু ভুলে গেছিলাম, তুই ছাড়া আমি বাঁচিই না।”
তিয়াশার চোখজোড়া তখন বৃষ্টির চেয়ে ভেজা, কিন্তু সেই একটামাত্র বাক্যে যেন সব অভিমান গলে জল হয়ে গেল।জায়নের ঠোঁট তখনো তিয়াশার কপালের খুব কাছে, আর বুকের ভেতরে এক অজানা কাঁপুনি তোলপাড় করছে দুজনারই। হঠাৎ জায়ন আবারো
বলে উঠলো ,
__” বৃষ্টি আমার প্রিয় ছিল না কখনও রোদ, হয় তো আল্লাহ তা আলা নিজে জানত রোদ একদিন আমার হবে , আর বৃষ্টি হলে রোদ কোথায় পাব ।কিন্তু যেদিন তোর হাত ধরে প্রথমবার ভিজেছিলাম,সেদিন বুঝেছিলাম ভিজে যাওয়া মানে কেবল ঠান্ডা নয়, বৃষ্টি মানে শুধু মেঘ নয় … বৃষ্টির মাঝে রোদ ওঠা রামধনু তুই , ভিজে যাওয়া বৃষ্টিতে আমার হৃদয় কাঁপিয়ে আমার হয়ে যাওয়া তুই …”
তিয়াশা একপাশে মুখ ফিরিয়ে একটু গলে গিয়ে বলল,
স্বরে সেই পুরনো দুষ্টু-মিষ্টি অভিমান ঝরে পড়ছে,
__”আমার পায়ে ব্যথা করছে আমায় কোলে নিয়ে বাসায় চলো , তাহলেই মাফ করবো। ”
জায়ন একটু মুচকি হেসে বলল ,
__” বাইক টা এখনো ক্যাফেটেরিয়ার সামনে জান।”
তিয়াশা মুখ ফুলিয়ে বলল ,
__” ঠিক আছে তাহলে আমি মাফ ও করবো না।”
জায়ন বউ এর একটু অভিমান কমেছে বুঝে ,
নিশব্দ বৃষ্টির পর্দা ভেদ করে জায়নের আঙুল তিয়াশার চিবুক ছুঁয়ে মুখটা নিজের দিকে ঘুরিয়ে আনল। তিয়াশার চোখে তখনও একটা অভিমানী কুয়াশা, ভেজা পলকে জায়নকে না বলা কত প্রশ্ন, কত অভিযোগ…কিন্তু জায়ন আর অপেক্ষা করল না। ধীরে, কিন্তু দৃঢ়ভাবে সে তিয়াশার কোমল গোলাপী ওষ্ঠ যুগল নিজের আয়ত্তে টেনে নিল। ঠোঁট ছোঁয়ায় প্রথমে কাঁপল তিয়াশা, যেন বৃষ্টির ঠান্ডায় নয় জায়নের উষ্ণ চুম্বনের তাপেই গলে যাচ্ছে সমস্ত অবসন্নতা।
জায়নের ঠোঁট তিয়াশার ঠোঁটকে ছুঁলো সেই নিরবধি দাবি নিয়ে,একটা চুম্বন, যেটা শুধু অভিমান ভাঙানো নয়, বরং গভীর মালিকানা, গভীর টান, আর একটুকরো ক্ষমা চাওয়া।বৃষ্টির ফোঁটাগুলো যেন চারপাশে সঙ্গত দিচ্ছিল সেই দীর্ঘ চুম্বনে,যেখানে জায়নের শ্বাস জড়িয়ে ছিল তিয়াশার নরম ঠোঁটে,
আর তিয়াশার হৃদয় সে তো কবেই আত্মসমর্পণ করে ফেলেছে… ওই এক চুমুতেই।
চুমুটা কেবল ঠোঁট ছোঁয়ার মধ্যে সীমাবদ্ধ থাকল না
জায়নের আঙুল তখন তিয়াশার চুলের ভেতর ঢুকে পড়েছে,আর তিয়াশার হাত… ধীরে জায়নের বুকের ওপর রেখেছে একটুকরো নিঃশব্দ ক্ষমা।
এই চুম্বনটা ছিল আগুনের মত বৃষ্টি তাকে নেভাতে পারেনি, বরং আরও জ্বালিয়ে তুলেছে।
জায়ন নিজেকে অনেক কষ্টে থামিয়ে , বলে উঠলো,
__ ” তুই যদি চাস তোর সারা জীবন আমার কোলে থাকতে পারিস।”
তার কণ্ঠে একধরনের স্থিরতা ছিল, কিন্তু চোখে ছিল পাহাড়-ভাঙা ভালোবাসার প্রতিশ্রুতি।এই কথাটা শোনার পরেই, হঠাৎ করেই তিয়াশার চোখে যেন জল টলমল করে উঠল, ঠোঁটে ফুটে উঠল শান্তির এক চিলতে হাসি।আর ঠিক তখনই, জায়ন এক ঝটকায় তিয়াশাকে কোলে তুলে নিল,একটা ছোট্ট শিশুকে যেমন মায়া করে কোলে নেওয়া হয়, ঠিক সেভাবে।
তিয়াশা অবাক হলেও কিছু বলল না, বরং চুপচাপ দুই পা দিয়ে জায়নের কোমর জড়িয়ে নিল,
আর দুই হাত দিয়ে ওর গলা আঁকড়ে ধরল এমনভাবে যেন পুরো পৃথিবীটা তার এই একটা মানুষটায় আটকে আছে।সে মুখ গুঁজে দিল জায়নের গলার কাছে
সেখানে তার চেনা ঘ্রাণ, তার নিরাপদ আশ্রয়, তার ভালোবাসা।
চারদিকে তখনো হালকা বৃষ্টি ঝরছে,
রাস্তায় অল্প আলো, পিচঢালা পথের ওপর বৃষ্টির ফোঁটার নাচ,আর তার মাঝে জায়ন হাঁটছে ধীরে ধীরে, বুকের মধ্যে তার জীবন, তার তিয়াশা।কোন তাড়াহুড়ো নেই, শুধু এক অদ্ভুত শান্তি,যেন সে এই ছোট্ট চুপচাপ মানুষটাকে চিরকাল এমন কোলে নিয়ে হেঁটে যেতে পারলে জীবনটাই যথেষ্ট।
এই মুহূর্তে কারো কিছু বলার নেই, কেউ কিছু জানার নেই,শুধু ওদের দু’জনের নিঃশ্বাসে জমে থাকা ভালোবাসার গল্প চলতে থাকুক, নিরব, গভীর, চিরকাল।
__”তোমার এই ফালতু কারনে এই বৃষ্টির মধ্যে আটকে
পরলাম।”
আরোহী গর্জে উঠলো আকাশের উপড়ে,কটমট করে তাকিয়ে আছে, এদিকে আরোহী অনেকক্ষন যাবত কিচ কিচ করেই যাচ্ছে । এদিকে আকাশ কোথায় ভেবেছিল নিজের জলপরীর সঙ্গে একটু একা সময় কাটাবে । কিন্তু এই বৃষ্টি এমন ভাবে ফাসালো যে জলপরীর মুড এত খারাপ হয়ে গেল।
__”আরে জলপরী আমি আকাশ দপ্তরে থোরি কাজ করি যে জানবো এখন বৃষ্টি হবে ।”
__” এখন বাসায় ফিরব কি করে ? আব্বু কে কি বলব
সময় দেখেছো ?
__ ” সমস্যা নাই সোনা ,শ্বশুর আব্বা রে তো আমি
এক মিনিটেই পটায় নিব।”
আরোহী এই শুনে হেসে উঠলো কারন সে জানে তার আব্বুর সামনে পরতেই আকাশ এর হওয়া উড়ে যাবে ।
সবাই বাসায় ফিরে যাওয়ার পর দুজনে বাইক কে একটু বেরিয়ে ছিল কিন্তু হঠাৎ বৃষ্টি তে সব খারাপ করে দিল। এক চায়ের টং এর সামনে দাড়ানো।
আর এই হাসির মাঝেই হঠাৎ কী যেন মনে পড়ে আরোহীর, সে আকাশের হাত টেনে চায়ের টং থেকে সোজা রাস্তায়, বৃষ্টির নিচে টেনে নিয়ে যায়।
আকাশ তো হকচকিয়ে যায়।
__” আরে আরে জলপরী কি করছো? জ্বর চলে আসবে তো সোনা ।”
আরোহী একটু হেসে, মাথা দুলিয়ে বলে,
__” আরে কিচ্ছু হবে না , আমার পার্সোনাল ডাক্তার আছে।”
এই কথায় আকাশের চোখ দুটো চিকচিক করে ওঠে
বৃষ্টির ভেতর দাঁড়িয়ে সেই মুহূর্তে তার জলপরীকে আর যেন নরম ও সুন্দর কিছু লাগছে না।
বৃষ্টির ফোঁটা গড়িয়ে পড়ছে আরোহীর কপাল বেয়ে, আকাশ হঠাৎ থেমে যায় তার সামনে দাঁড়িয়ে আছে ভিজে চুলে, রাগে, আদরে, ভালোবাসায় ভেজা একটা মেয়ে, যে তার প্রাণ, তার শান্তি, তার দুর্বলতা।
সোডিয়ামের সোনালি আলো, রাতের ভেজা রাস্তা আর তার মাঝে আরোহীকে দেখে আকাশ ঠিক যেন নিজেকে হারিয়ে ফেলল।আকাশের চোখে তখন কেবল একটাই দৃশ্য,তার জলপরী, বৃষ্টির নাচে ভিজে যাচ্ছে,পিংক চিকনকারি চুড়িদারটাতে ভেজা কাপড় দুলছে শরীরের সাথে, প্রতিটা স্রোত যেন নতুন করে আঁকছে তার রূপ।
তার সিল্কের মতো লম্বা চুলগুলো পিঠ বেয়ে নেমে এসেছে, ভিজে একদম গা-লেগে থাকা কাপড়গুলো আকাশের বুক কাঁপিয়ে তুলছে, আর সেই সৌন্দর্যে চোখ রাখাই যেন মুশকিল হয়ে গেছে।
আরোহী হঠাৎ ঘুরে দাঁড়াতেই আকাশ একটু চমকে উঠল,আবেগ আর সম্মানবোধে ভরা এক চিলতে লজ্জা তার চোখে,সে দেরি না করে ছুটে যায়, এক হাতে আরোহীর চুল গুলো সামনে এনে বুকের ওপরে টেনে দেয়,যেন সেই চুলই হয় আরোহীর একমাত্র ঢাল, আর সে নিজের হাতে তা জড়িয়ে রাখে।
আরোহীও বোঝে, আকাশ কী করছে।সে দু’হাত দিয়ে নিজের শরীর জড়িয়ে নিতে চায়, কিন্তু তার চোখ দুটো তখন স্থিরভাবে আকাশের মুখের দিকে চেয়ে আছে,
একসাথে লজ্জা, ভালোবাসা, অভিমান আর একধরনের নির্ভরতার কাঁপন কাজ করছে তার ভিতর।
আকাশ কিছু না বলে সঙ্গে সঙ্গে চায়ের দোকান থেকে একটা বড় প্লাস্টিক নিয়ে আসে,আরোহীকে জড়িয়ে দেয় সেটা দিয়ে, যেন তার সমস্ত জগতটাকে আগলে নেয় এই বৃষ্টির মাঝেও।এই সময়টাতে আরোহীর চোখের কোনায় জমে থাকা এক ফোঁটা অশ্রু
বৃষ্টির ফোঁটার সাথে মিশে পড়ে গালে,কে জানে সেটা বৃষ্টির জল, নাকি ভালোবাসার ভিজে অনুভূতি।
আরোহী ধীরে ধীরে এগিয়ে এলো, চোখে এক অপূর্ব মায়াবী আত্মবিশ্বাস। আকাশের বুকে তার হাতটা রেখে দিল ।যখন আরোহী ওর নরম, কাঁপা কাঁপা হাতটা এনে আকাশের বুকের উপর রাখল, তখন আকাশ যেন নিশ্বাস নিতে ভুলে গেল।
তার বুকের নিচে ওর স্পর্শ এত কোমল, এত সত্যি যে মুহূর্তটাকে স্বপ্ন মনে হচ্ছিল।আরোহীর স্পর্শে আকাশের শরীর কেঁপে উঠল না, কাঁপল ওর ভিতরের ঝড়টা।যে হাত এতদিন ধরে ও শুধু দূর থেকে দেখেছে, আজ সেটা ওর হৃদয়ের স্পন্দনের ওপর রাখাএক মুহূর্ত আকাশ কিছু বলার আগেই, আরোহী এক ঝটকায় তার মুখটা নিজের দিকে টেনে নিল।
তার নরম ঠোঁটদুটো ধরা পড়লো আকাশের চমকে ওঠা ঠোঁটে। প্রথমে ধীরে, পরক্ষণেই জ্যোতির মতো এক চঞ্চল উত্তাপ ছড়িয়ে পড়লো দুজনের মাঝে।
একটা দীর্ঘ, ভেজা, দাবীময় চুম্বনে ডুবে গেল তারা। আরোহীর ঠোঁটে ছিল আকুলতা, সাহস, আর দুঃসাহসের ঝড়। আকাশের ঠোঁটের ওপর চাপ দিয়ে, তার নীচের ঠোঁট টেনে নিয়ে একটা মৃদু কামড়ে দিয়ে যেন বলে উঠল,”তুমি শুধু আমার…”
আকাশের চোখ বিস্ফারিত। যেন বিশ্বাসই করতে পারছে না এই আরোহী, তার চিরচেনা লাজুক আরোহী, এমনভাবে তার সামনে নিজেকে উজাড় করে দিচ্ছে।তার বুকের ভেতরটা যেন ধক করে উঠল। এক আশ্চর্য উত্তাপ ছড়িয়ে পড়ল সমস্ত শরীরজুড়ে। চোখের পলকে সে বুঝতেই পারল না আরোহীর ঠোঁট কখন ছুঁয়ে গেল তারটা। এক মুহূর্তের স্পর্শ, কিন্তু সেই ছোঁয়া যেন অনন্তে গেঁথে রইল।
তার হৃদয় হঠাৎ করেই খুব জোরে ধুকপুক করতে লাগল। সে কোনো কথা বলতে পারছিল না, চোখের পাতা কাঁপছিল, আর মাথার ভেতরে যেন গুঞ্জন উঠেছিল ,
__”এইটা কি সত্যি ঘটলো?”
তার হাঁটু কেঁপে উঠল, আর এক টানেই সে ধপ করে নিচে গড়িয়ে পড়ল হাসি আর হতবাকের মাঝে।
আরোহী অবাক হয়ে হকচকিয়ে উঠল,
__” আরে কি হয়েছে ? এরকম ভাবে কে পরে ।”
আকাশ যেন তার বত্রিশ পাটি দাঁত বের করে কোন এক অন্য জগৎ এ হারিয়ে গেছে ।….
__” আমরা এই বাসায় কেন আসলাম ?”
তিয়াশার কথায় জায়ন একটু মুচকি হাসি দিয়ে
বলল ,
__” সেটা বলে দিতে হবে আপনায় ম্যাডাম ? আপনার
অভিমান , রাগ সব মেনে নিলাম । কিন্তু আপনার শাস্তি
টা তো পাওনা আছে ।”
তিয়াশা চমকে উঠলো,
__” কি কি কিসের শাস্তি? ”
জায়ন কোনো জবাব না দিয়ে সিঁড়ি বেয়ে উপরের ঘরে চলে গেল। নিজের রুমে ঢুকে ওয়াশরুমের দরজা খুলে তিয়াশাকে নামিয়ে দিয়ে দাঁড় করিয়ে দিল ভিতরে। কিছু না বলেই আবার বেরিয়ে এসে কাবার্ড খুলে একটা প্যাকেট বের করল। তারপর দরজায় নক করে প্যাকেটটা ওর হাতে ধরিয়ে দিল।
__”দশ মিনিটে ফ্রেশ হয়ে বাইরে আসবি,”
ঠান্ডা স্বরে বলল জায়ন।
তিয়াশা অবাক হয়ে প্যাকেটটা হাতে নিয়ে জিজ্ঞেস করল,
__”এটায় কি?”
জায়নের চোখে তখন দুষ্টু ঝিলিক। মুচকি হেসে বলল,
__”মারণাস্ত্র ড্রেস।”
তিয়াশার চোখ বড় বড় হয়ে উঠল কথাটা শুনে। রেগে থাকলেই বোধহয় ভালো হত, এখন কি করবে?
এই লোকটার মাথায় আসলে বোধহয় কোনো দিন ঠিক বুদ্ধি ছিল না।
তিয়াশা আয়নার সামনে দাঁড়িয়ে আছে। লাল রঙের সিল্কের নাইট ড্রেসটা শরীরের প্রতিটি রেখা এমনভাবে আঁকড়ে আছে, যেন কাপড় নয়, আগুন। পিঠের মাঝামাঝি পর্যন্ত খোলা, ঘাড় থেকে হালকা কাঁধের ত্বক নামতে নামতে যেন হারিয়ে গেছে লাজুক রঙে। বুকের অংশে পাতলা লেইস, যেখানে এক টুকরো চাঁদ যেন লুকিয়ে আছে মেঘের আড়ালে। নীচের দিকে এসে ড্রেসটা এতটাই শরীর ঘেঁষা যে, তাতে আর ঢাকতে চাওয়ার উপায় নেই, বরং জায়ন ইচ্ছা করেই যেন এমন একটা পোশাক বেছে এনেছে যা পড়া মানেই হেরে যাওয়া।
চোখে-মুখে তার দ্বিধা লজ্জা, একটু মুচকি হাসি আর কোথাও একটা চাপা কৌতূহল। নিজেকে আয়নায় দেখেই চমকে উঠে ভেতরে ভেতরে ফিসফিস করে উঠল,
“এই ড্রেস পরে না যাওয়া ভালো, অসভ্য লোক,বুঝে ইচ্ছা করে এমন এনেছে।”
হঠাৎই বাইরে থেকে জায়নের কণ্ঠস্বর ভেসে এলো, গলার স্বরটা যেন ঘড়ি ধরে ছাড়া ,
“বউ, দশ মিনিট হয়ে গেছে, বেরোবি না আমি আসবো, আসলে কিন্তু বুঝিস।”
তিয়াশা ধীরে ধীরে ওয়াশরুম থেকে বেরিয়ে এল। ভেজা চুল ঘাড় বেয়ে নেমে এসেছে পিঠে, একেকটা চুল যেন দাগ কেটে রেখেছে তার গায়ে। লাল রঙের সিল্কি নাইট ড্রেসটা ঠিক শরীরের সঙ্গে মিশে আছে , যেন সুতোর চেয়েও হালকা, অথচ চোখ ফিরিয়ে নেওয়ার মতো না। কাপড়টা এতটাই স্লিক, এতটাই শরীর ছোঁয়া, যেন তার প্রতিটি বাঁক, প্রতিটি রেখা নির্লজ্জভাবে প্রকাশ পাচ্ছে।
জায়ন শুধু ট্রাউজার পরে খালি গায়ে ঠিক বেডের পাশে দাঁড়িয়ে ছিল, কিন্তু তিয়াশা বের হওয়ার সঙ্গে সঙ্গে যেন বাতাস থমকে গেল। এক ঝলকে তাকিয়ে থাকল না, এটা তাকানো ছিল না, এটা ছিল একপ্রকার চুম্বকীয় আটকে যাওয়া। তিয়াশা যেভাবে নিজের দুই হাত দিয়ে নিজেকে আড়াল করার চেষ্টা করছিল, সেটাতেও যেন ছিল এক অদ্ভুত লজ্জাভেজা সৌন্দর্য। চোখ বড় হয়ে গেছে তার, ঠোঁট কাঁপছে হালকা করে, আর গাল যেন জ্বলছে।
জায়নের বুকের ভেতরে যেন বাজ পড়ল। ভেতরের তৃষ্ণা, হাহাকার আর পাগল করা নেশা একসঙ্গে ছুটে এলো রক্তে। গলা ভার হয়ে এলো, তবুও গম্ভীর স্বরে বলল,
__”বউ, হাত সরা তোর শরীরের প্রতি পাতা আমার নিখুঁত ভাবে পড়া।”
এই বাক্যটাতে যেন ছিল শত রাত্রির ক্ষুধা, দীর্ঘ অপেক্ষার ঝড়, আর নিঃশব্দ প্রেমের ঘোষণা।
তিয়াশা স্তব্ধ হয়ে গেল। ধরা পড়ে যাওয়া এক অপরাধিনীর মতো ধীরে ধীরে হাত সরিয়ে নিল, আর সেই মুহূর্তেই জায়ন এক ঝটকায় এগিয়ে এসে নিজের মুখ গুঁজে দিল তার গলায়। ঠোঁট ছুঁয়ে গেল তিয়াশার ভেজা গলার ত্বক, যেখানে স্নায়ু সবচেয়ে বেশি সংবেদনশীল।
তিয়াশার চোখ বন্ধ হয়ে গেল, শরীর হালকা কেঁপে উঠল। গলার উপর জায়নের নিঃশ্বাস এ শিউরে উঠছে । জায়ন তার মুখ নিয়ে গেল তিয়াশার বুকের মাঝে তার মনে হল, সে এখন এক ঝড়ের মধ্যে পড়ে গেছে একটা লাল ঝড়, যা ভালোবাসা আর আগুনের মধ্যে কোন সীমারেখা রাখে না। কিন্তু এর মধ্যেই তিয়াশা হঠাৎ কোমল অথচ অপ্রস্তুত স্বরে বলে উঠলো,
__”শো শোনো না, তোমার এই খোচা খোচা দারিতে লাগছে আমার।”
জায়ন থেমে গেল। মুহূর্তের জন্য স্তব্ধ হয়ে তাকিয়ে রইল ওর মুখের দিকে। তারপর ঠোঁটের কোণে একপাশে একটু বাঁকা হাসি ফুটে উঠল যে হাসিতে ছিল দুষ্টুমি, অভিমান ভাঙানোর আনন্দ আর চূড়ান্ত অধিকারবোধ।
কিছু না বলে তিয়াশার কব্জি চেপে ধরল, তারপর ধীরে ধীরে ওকে টেনে নিয়ে গেল ওয়াশরুমে। গম্ভীরতা নেই, কিন্তু চোখে আগুন।ওয়াশরুমের মিররের সামনে থাকা স্ল্যাবে বসিয়ে দিল তিয়াশাকে স্ল্যাবটা ঠান্ডা, কিন্তু তিয়াশার গায়ে তখন আগুন জ্বলছে।
জায়ন কেবিনেট খুলে একটা রেজার বের করল। তারপর সেটা তিয়াশার হাতে ধরিয়ে দিয়ে নরম গলায় কিছু না বলে তাকিয়ে রইল ওর চোখে।
তিয়াশা অবাক, রেজারটা হাতে নিয়ে ঘুরিয়ে ফিরিয়ে দেখতে লাগ,
__”আমি এটা দিয়ে কি করব?” কণ্ঠে ,
কিছুটা কৌতূহল, কিছুটা ধরা পড়ে যাওয়ার গলার কাঁপুনি।
তখন জায়ন ধীরে ধীরে এগিয়ে এসে, তিয়াশার দুই পায়ের মাঝে দাঁড়িয়ে পড়ে , তার দুই হাত তিয়াশার উরু ছুঁয়ে ওপরে উঠে এল। জায়ন এর উলংগ সুঠাম দেহর সামনে তিয়াশার শরীরটা নরম হয়ে আসল, কাঁধ শিথিল, চোখে ধোঁয়াটে একটা দৃষ্টি। বুকের মাঝে হঠাৎ করেই একটা কাঁপুনি শুরু হয়, উত্তাপ যেন ছড়িয়ে পড়ে গলার নিচ থেকে পেটের গভীরতায়।শরীরের মধ্যে শিহরণ দৌড়ে গেল, জায়ন এর ঠোঁট নেমে এল তিয়াশার কানের কাছাকাছি নিঃশ্বাস যেন আটকে গেল এক মুহূর্তে।
ফিসফিস করে, নিঃশ্বাস ছুঁয়ে বলল,
__” হেল্প মি বেইব ”
এই তিনটা শব্দ যেন ঝড় তুলে দিল তিয়াশার বুকের মধ্যে। জায়নের নিঃশ্বাসে মিশে থাকা গরমতা, তার হাতের স্পর্শ, তার চোখের দৃষ্টি সব মিলে যেন রক্তে বিদ্যুৎ খেলে যায়। তিয়াশা রেজারটা শক্ত করে ধরে, কিন্তু হাত কাঁপছে। জায়নের চিবুক ছুঁয়ে দিল সে, আর ওর হালকা ওঠা দাঁড়িতে আঙুল চালিয়ে বলল,
“আমি যদি কেটে ফেলি?”
জায়নের গলায় নেমে এলো আরও ভারী, মোহাচ্ছন্ন স্বর,
“তবেই তো জানবো, কতোটা যত্নে রাখবি আমাকে।”
এই ছোট্ট ওয়াশরুমের ভেতরে বাতাস ভারী হয়ে উঠল, নিঃশ্বাসগুলো হালকা হালকা ধাক্কা মারতে লাগল একে অপরের বুকে।
কিন্তু হঠাৎ করেই তারা শুনতে পেল , বেডে রাখা ফোন টা বেজে উঠেছে ।
**আধা ঘন্টা আগে**
বৃষ্টি একটু থেমেছে ঠিকই, কিন্তু বাতাসে এখনও কাঁচা মাটির ঘ্রাণ ছড়িয়ে আছে। রাস্তার ধারে জ্বলে থাকা স্ট্রিট লাইটগুলো বৃষ্টির জলের ছায়ায় আবছা ঝাপসা দেখাচ্ছে। বাইকের পিছনে বসে আরোহীর মন এক ধরনের শিহরণে ভরে আছে ভয়? হ্যাঁ, একটু। কিন্তু তার চেয়ে অনেক অনেক বেশি, সেই চুপচাপ প্রশান্তি, যখন প্রিয় মানুষটার পিঠে নিজের হাত রাখলে মনে হয়, পুরো দুনিয়া যেন এই মুহূর্তে থেমে গেছে।
ঘড়ির কাঁটা তখন রাত নয়টা দশ। বাইক এসে থামল তাদের বাসার একটু সামনে। চারপাশ নির্জন, কেবল রাস্তায় ভেজা পাতার মৃদু খসখস শব্দ।
আরোহী নামতেই আকাশ এক হাতে তার হাত চেপে ধরল, অন্য হাতে সামনে ঝুলে থাকা চুলগুলো সরিয়ে দিল। চোখে চোখ রাখল, একরাশ আবেগ আর খুনসুটিভরা হাসি নিয়ে ফিসফিস করে বলল,
তোমার ছোঁয়ায় আসক্ত আমি পর্ব ৫২
__”এরকম সারপ্রাইজ দিলে তো হার্ট সার্জেন হওয়ার আগেই নিজেই হৃদরোগের পেশেন্ট হয়ে যাব সোনা।”
আরোহীর গাল কেমন যেন লাল হয়ে উঠল, বৃষ্টির ছোঁয়ায় ভেজা ঠোঁটে নেমে এলো হালকা এক হাসি। চারপাশের নীরবতা, আবছা আলো, বৃষ্টির ঘ্রাণ সবকিছুই যেন প্রেমের এক নিঃশব্দ সঙ্গীত বাজাচ্ছিল।
কিন্তু… ঠিক তখনই, পেছন থেকে এক গম্ভীর, ভারী কণ্ঠ যেন মুহূর্তে বজ্রপাত চালিয়ে দিল এই কোমল অনুভবের ওপর।
__”রুহি, কী হচ্ছে এখানে?”
