তোমার ছোঁয়ায় আসক্ত আমি পর্ব ৬
নীল মণি
দুপুরের খাবার পর সবাই ড্রইং রুমেই উপস্থিত হয়েছে, এর মধ্যে আয়েশা বেগম এর ফ্যমিলি ও চলে এসেছে।
সবাই কথা বলে আগামী ১১ দিন পরে বিয়ের দিন ঠিক
করেছে। সবাই খুব খুশী মিষ্টি খাওয়ানো থেকে শুরু করে হাসি ঠাট্টার মধ্যে সবাই কথা বলে যাচ্ছে ।
কিন্তু বৃষ্টির মুখে হাসি থাকলেও, কি যেন একটা অদ্ভুৎ সংশয় এর ছাপ পাওয়া যাচ্ছে , কারোর সেটা নজরে পড়ল না…..
এদিকে জায়ন এর হাত দুটো মুঠো বন্ধ করে কপালে ঠেকিয়ে মাথা নিচু করে কি যেন ভেবে চলেছে , তার এসব দিকে কোন ধ্যান নেই না বা শোনার কোন ইচ্ছে নেই। হট করে উঠে চলে গেল সিঁড়ি বেয়ে উপরে……..
এদিকে রোদ সকাল থেকে রূম থেকেও বের হয়নি, না ত
আরোহী দের বাড়ি গেছে, দুপুরে সুরাইয়া বেগম রুম এ এসেই খাবার টা খাইয়ে গেছে ।
রোদ রুম এই শুয়ে ছিল হঠাৎ দরজায় কেউ নক্ করল ৩,৪ বার তারপর আস্তে করে বেড থেকে উঠে ধীর কদমে হেঁটে দরজা টা খুলতে গেল , কিন্তু দরজা টা খুলতে গিয়ে সামনে দাড়িয়ে থাকা ব্যক্তির চেহারা দেখা মাত্র দরজা টা পুনরায় বন্ধ করতে গেল কিন্তু তা আর হয়ে উঠল না ….
আরও গল্প পড়তে এখানে ক্লিক করুন
তার আগেই জায়ন রুম এ প্রবেশ করে রোদ এর হাত টা ধরে দরজা টা এক পা দিয়ে বন্ধ করে দিল,আর রোদ কে ঘুরিয়ে রোদের ওই ছোট হাত টা নিজের হাতের মধ্যে নিয়ে দরজায় চেপে ধরেছে , আর জায়ন এর বা হাত টা দিয়ে রোদ এর সাইডে এ লক করে রেখেছে।
জায়ন এর পরনে লাইট ব্রাউন রঙের বেগী কার্গ ট্রাউজার আর ওভার সাইজ ব্ল্যাক টিশার্ট , সামনের লম্বা কাল চুল গুল কপালে ছড়িয়ে আছে , গায়ের থেকে বেরচ্ছে বিদেশী পারফিউম এর ঘ্রাণ , রোদের দিকে এক দৃষ্টিতে তে তাকিয়ে আছে ।
এদিকে এইসব কিছু রোদ কে কেমন যেন নেশার ঘোর এ নিয়ে যাচ্ছে নিজেকে কেমন কেমন তার পাগল পাগল লাগছে , কিন্তু এই সব কিছু সামলে,
রোদ নিজেকে ছড়ানোর জন্য ছটফট করছে , ওর ঐ টুকু শরীর এর ক্ষমতা জায়ন এর পাহাড় সমান শরীর এর কাছে মনে হচ্ছে সব চেষ্টাই বৃথা , এদিকে ভয়ে রোদ এর চোঁখ বড় বড় হয়ে লম্বা চোঁখের পলক গুল জায়ন এর দিকে তাকিয়ে আছে , জায়ন এর এত কাছে আসায় রোদ এর কান মুখ লাল হয়ে যাচ্ছে নিঃশ্বাস আটকে আসছে , শরীর এ এক কম্পনের সৃষ্টি হয়েছে…
খানিকক্ষণ একে অপরের দিকে এইভাবে তাকিয়ে , রোদ একটু নিজের মন বল বাড়িয়ে অধর জোড়া কাপতে কাপতে , ভয়ার্ত কন্ঠে বলে উঠল —
” ক ক কি করছেন জায়ন ভাই? আ আ আপনার কি আমাকে ব্যাথা দিতে ভাল লাগে ? আপনার মধ্যে কি আমার জন্য কোন দয়া মায়া নেই?”
জায়ন রাগের স্বরে দাঁত পিষে চোয়াল শক্ত করে রোদের দিকে আর খানিক টা ঝুঁকে বলে উঠল–
” চুপচাপ দারা এত ছটফট করছিস কেন, আর দরজা কখুলছিলি না কেন ? তোর কি আমাকে পাগল মনে হয়? রোদ তুই কি চাচ্ছিস আমি পাগল হয়ে যাই?
জায়ন রোদ এর আরো কাছে আসায় রোদ আর ও ছটফট করে ঠোঁট টা উল্টে বলতে লাগল–
” জায়ন ভাই প্লিস হাত টা ছাড়ুন না আমার খুব ব্যথা করছে, আর সকালে আমাকে কেন মারলেন , তাও আবার এত জোরে ?দেখুন দেখুন মুখ এ দাগ বসে গেছে”……
বলে মুখ টা এগিয়ে দিল জায়ন এর দিকে ।
মুখ টা আগানোর জন্য জয়ানের নাকের সঙ্গে রোদ এর মুখে স্পর্শ হয়ে যায় , আর রোদের ওই কাপতে থাকা অধর জোড়া জায়ন কে আরো ভেতর থেকে দুর্বল করে দিচ্ছে , জয়ণের নিঃশ্বাস বেড়ে যেতে লাগল তখন ই পরিস্থিতি বুঝে রোদ এর হাত টা ছেড়ে দিয়ে একটু দূরে সরে যায় , জোরে জোরে নিঃশ্বাস নিয়ে নিজেকে কন্ট্রোল করতে ব্যস্ত হয়ে যায় ….
এদিকে রোদ নিজেকে সামলাতে না পেরে কান্না
করতে করতে জায়ন কে জিজ্ঞেস করল —
” আপনি এরকম কেন জায়ন ভাই? আপনি আমার সঙ্গেই কেন এরকম করেন?…” বলেই আবার ও কান্না শুরু করে দেয়।
জায়ন নিজেকে সামলে পেছন ঘুরে একটু মুচকি হাসি দিয়ে রোদের দিকে ফিরে বলল ,–
” সেটা আমি নিজেও জানিনা রোদ, তুই খুব ছোট রোদ
তুই নিজে জানিস না তোর নিজে থেকে বাড়ান প্রতিটা পদক্ষেপ আমাকে কতটা অস্থির করে তোলে , তোর যখন তখন বেপরোয়া কথাবার্তা আমাকে জ্বালান শুরু করে।”
রোদ হা করে তাকিয়ে আছে জায়ন এর দিকে,
পুনরায় জায়ন বলতে শুরু করে —
” আমার একটা কথা শুনবি রোদ?”
রোদ মাথা উপর নিচে নাড়িয়ে হ্যাঁ সূচক জবাব দেয়।
“আমি জানি আমি তোকে বার বার আঘাত করি , তুই বিশ্বাস কর আমি আঘাত করতে চাই না তোকে কিন্তু তোর নিজের চঞ্চলতা আমাকে কেমন যেন ব্যাকুল করে তোলে , তোর করা প্রতিটা কাজ আমাকে ইস্থীর থাকতে দেয় না”
জায়ন নিজের বা হাত টা কোমরে রেখে ডান হাতের দু আঙ্গুল দিয়ে কপাল ঘষতে ঘষতে আবার বলে উঠল.
” তাই তুই প্লীজ আমার কথা গুল সুনিশ , পরিবারের সবার কথা মেনে চলিস । আর যত টা পারিস নিজেকে আমার থেকে দূরে রাখিস , আমি চাই না রোদ তুই
আমার সামনে আসিস ।
এই বলে জায়ন রুম থেকে বেরিয়ে গেল।
বাইরে বেরিয়ে একটা জোরে স্বাস নিয়ে মনে মনে বলল
” তুই অনেক ছোট রোদ অনেক ছোট , পারলে নিজেকে সামলে নিস আমার থেকে, নইলে দিন দিন আমি বেসামাল হয়ে যাচ্ছি।”
কিন্তু ভিতরে থাকা মানুষ টা ভাবতে লাগল,
জায়ন ভাই কি বলে গেল ? রোদ কেমন যেন নিজেকে অন্য জগতে অনুভব করল পাথরের ন্যায় এক ভাবে দাড়িয়ে আছে , কেউ যেন ওর মনের জ্বলন্ত আগুনে এক গোলা বরফ ঢেলে দিয়ে গেল , যে কান্নার আওয়াজ রুমের ভিতর প্রতিধ্বনিত হচ্ছিল সেটা কেমন যেন স্থির হয়ে গেল , চোখের কার্নিশ বেয়ে জল পড়া বন্ধ হয়নি , হয়েছে শুধু তার পরিবর্তন। মুখে কোন আওয়াজ নেই নিজেকে কেমন যেন অসুস্থ মনে করছে , বিছানায় নেতিয়ে পড়ল তার ছোট্ট শরীর টা …..
মনে মনে বির বির করল — ” যাবনা সামনে, যাবনা আমি…..” সময়ের সঙ্গে সঙ্গে সে কখন ঘুমের দেশে পাড়ি দিল নিজেও জানে না।
বিকেল পেরিয়ে সন্ধ্যার আগমন দেখা দিল, বাইরের আবহারার খানিকটা রূপ পরিবর্তন হল , গরমের আভাস ছাড়িয়ে ঠান্ডা বাতাস বইতে লাগল …
মনে হয় ঝড় আসবে , রোজ কার মত ব্যস্ত রান্নাঘরে
ব্যস্ত গৃহিনারা সঙ্গে রয়েছেন আজ আয়েশা বেগম ।
এদিকে ড্রইং রুম এর সোফায় বসে গল্পে মত্ত বাড়ির কর্তারা । রায়ান, মারিয়া , অনু নিজেদের মধ্যে ঝগড়া করতে মত্ত সঙ্গে বসে হেসে যাচ্ছে বৃষ্টি ও ।
হঠাৎ করে অনন্যা বলে বৃষ্টির উদ্দেশ্যে —
” আচ্ছা আপু তোমার কি মজা না বিয়ের পরেও তুমি এই বাড়িতেই থাকবে , কি ভাল তাই না আমরা একই রকম মজা করব”
রায়ান বলে ওঠে সঙ্গে সঙ্গে —
” বৃষ্টি আপু তো এইখানেই থাকবে তোরে বিয়ে দেব উগান্ডাতে , তুই উগান্ডায় থাকবি ”
এই বলে জোরে জোরে হেসে ওঠে , বৃষ্টি ও হেসে ওঠে কিন্তু কিছু ভেবে আবার চুপ করে যায় কিছু বলে না…
অনু তো রাগে মনে হচ্ছে এক্ষুনি রায়ান এর মাথা টা ফাটিয়ে দেবে।
এদিকে মারিয়া বলে —
” আরে অনু আপু রাগ কর না , আমরা সবাই মিলে রায়ান ভাই কে বুড়িগঙ্গা তে ফেলে দিয়ে আসব ”
এবার অনু ও খিল খিল করে হেসে ওঠে
রায়ান মারিয়ার কান টেনে বলতে লাগল —
” খুব পাকছিস তাইনা , দারা ফুপিরে বিচার দেব”
অনু বলে ওঠে ..
” হ্যাঁ আমিও বড় আব্বু রে বিচার দেব তুই দারা “…
এই বলে চেচিয়ে উঠলো বড় আআআআ…
বলতে পারল না তার আগেই রায়ান মুখ চেপে ধরলো।
রায়ান এর চোখ ছানা বড়া হয়ে বলল
” কি ডেঞ্জারাস বইন আমার রে তুই”… এই শুনে এবার ও সবাই হাশহাসিতে মেতে উঠল ।
এদিকে ইউভি আর আকাশ বিকালেই বেরিয়ে গেছে রাঙ্গামাটির উদ্দেশ্যে, আর তো হাতে গোনা মাত্র কিছু দিন দেখতে দেখতেই চলে যাবে , তাই আজই দুই ভাই বেরিয়ে পড়েছে।
এদিকে জায়ন বেরিয়েছিল তার বন্ধু দের উদ্দেশ্যে… আহান আর সাগর হল জায়ন এর খুব খুব খুব কাছের বন্ধু তাদের সব কথা একে ওপর কে না জানাতে পারলে কেমন নিজেদের অস্থির অস্থির লাগে ।
রাকিব আর পলাশ ও খুব কাছের কিন্তু তাদের কিছু জানান মানে নিউজ এর মিডিয়াকে বলা ,
সবাই সেই একই চায়ের দোকান এর সামনে, আজ সবাই বাইক নিয়ে এসেছিল , তাই বাইক নিয়ে একটু ঘুরে ফিরে চায়ের টং এর সামনে অ্যাড্ডা দিচ্ছে।
পলাশ আর রাকিব বিদায় জানিয়ে বাড়ির উদ্দ্যেশ্যে রওনা দিল।
সাগর গলা টা খাকরে জায়ন কে বলল —
” এবার বল তো মামা তোর কেস টা কি,
আমার আজ তোকে দেখে মোটেই সুবিধার লাগতাসে না”
আহান ও বলে উঠল —
” কি রে জায়ন কোন চিন্তায় আছিস , সব তো ঠিক ই চলছে , বিয়ের জন্য প্রেসার? হয়েছে কি তোর”
সাগর বলে ওঠে –
” আরে আহান এর বাচ্চা বিয়া নিয়ে প্রেশার এ থাকবে ক্যান , বিয়ের প্রেশার তো এহন বাড়ির লোক গো, ও তো বিয়ার পর বউ এর প্রেশার লইবে” এই বলে হেসে ওঠে একা একাই…
আহান দাঁতে দাঁত পিষে ওকে চুপ করতে বলে ইশারায়।
এবার জায়ন সোজা হয়ে বসে মাথায় চুল গুল তে হাত বুলিয়ে এক দীর্ঘশ্বাস ফেলে বলতে লাগল —
” জীবন টা এরকম বল তো সব তো ঠিক ই ছিল, তাহলে আমাকে এরকম অস্থিরতার স্বীকার কেন হতে হচ্ছে বলবি তোরা?”
এবার সাগর ও সিরিয়াস হয়ে বলল —
” কি হয়েছে দোস্ত খুলে বল না”
জায়ন বলতে লাগল —
” এক পিচ্চি মাথায় ঘোরাঘুরি করছে বন্ধু , ওর সামনে গেলে নিজেরে কেমন অস্থির লাগে । ইগনোর করি এইসব বালের ফিলিংস রে কিন্তু তারপর নিজেরেই কেমন অসুস্থ লাগে ।”
আবার ও একটু ঠোঁট উল্টে হেসে বলে–
” ছোট বেলা দিয়ে পরিবারের ঠিক করা বাগদত্তা কে নিজের অনুভব ভেবে জড়িয়ে রেখে ছিলাম, যেই বিয়ে করতে ১০ বছর পর বাড়ি ফিরলাম , এই ২৮ বছরে কেউ পারল না কিছু বদলাতে , কিন্তু এক ১৬ বছরের পিচ্ছি আমার এই ২৮ বছরে তৈরি হওয়া সব আনভূতিকে ভেঙে চুরমার করে দিয়ে এক নতুন অনুভতির পাহাড় তৈরি করে চলেছে , আমার নিজের করা সব সিদ্ধান্ত কে ভুল প্রমাণ করার চেষ্টা করছে । এখন মনে হচ্ছে কেন দেশে ফিরলাম কেন কেন? Why damn it”
এই সব শুনে আহান আর সাগর কেমন যেন হতবাক হয়ে পড়ল , এ কি অবস্থা তার প্রাণ প্রিয় বন্ধুর
আহান বলে উঠল –
তোমার ছোঁয়ায় আসক্ত আমি পর্ব ৫
” তোর এই পিচ্ছি টা কে জায়ন”
জায়ন গলা খাঁকারি দিয়ে বলল —
” ইউভি আর বৃষ্টির বোন তিয়াশা রোদ চৌধূরী”