তোমার ছোঁয়ায় আসক্ত আমি পর্ব ৬১
নীল মণি
ঘরের কোণে আলো ঢুকছে জানালা ভেদ করে, নরম কিরণগুলো ধীরে ধীরে ছড়িয়ে দিচ্ছে নিস্তব্ধ পরিবেশে এক উজ্জ্বল আভা। চারপাশে এক শান্ত অথচ ভারী নীরবতা যেন সবকিছু অদৃশ্য কোনো ক্লান্তির বোঝা বইছে।
এই নীরবতার মাঝেই ওয়াশরুমের ঝর্নার পানির নিচে হাঁটু গুঁজে বসে আছে তিয়াশা। পরনে তার স্বামীর একটা টিশার্ট, যা ভিজে একেবারে চুপচুপে হয়ে শরীরের সাথে লেগে আছে। শরীর নিথর, প্রতিটি নড়াচড়ায় যেন ব্যথার তরঙ্গ বয়ে যাচ্ছে। অনেক কষ্টে দেয়াল ধরে ধরে এসেছে এখানে, শুধু ঠান্ডা পানির স্পর্শে শরীরটাকে একটু প্রশমিত করার জন্য।
কিন্তু পানি যত গড়িয়ে পড়ছে, তার গায়ে তত স্পষ্ট হয়ে উঠছে গত রাতের উন্মত্ততার চিহ্ন। লালচে ছাপ গভীর দাগ আর তীব্র ভালোবাসার অসহ্য ছাপগুলো যেন এখনো ত্বকের ভেতর গেঁথে আছে।
তিয়াশার চোখ দুটো অর্ধনিমীলিত, ঠোঁটে চাপা শ্বাস, যেন সে ভেতরে ভেতরে লড়ছে ব্যথা আর অদ্ভুত এক অনাবিল সুখের সাথে স্বামীর ভালোবাসার উন্মাদ স্পর্শের অবশিষ্ট ছায়া আজও তাকে গ্রাস করে রেখেছে।
জায়ন এখনো উল্টে শুয়ে আছে এক অত্যাচারিত বিছানায় , যেই অত্যাচারের একমাত্র মালিক ছিল তিনি নিজেই ,শরীরে আধখোলা কমফোর্ট জড়ানো। উন্মুক্ত পিঠজুড়ে স্পষ্ট নখের আঁচড়ের দাগ যেন অদ্ভুত এক যুদ্ধের স্মৃতি। তার মুখশ্রী শান্ত, নিস্তব্ধ নিঃশ্বাসে ডুবে আছে গভীর ঘুমে। অথচ যে মানুষ ভোরবেলায় নিয়মিত উঠে ফজরের নামাজ পড়ে নেয়,কিন্তু বউ পাশে থাকলে সেই অভ্যাসের আল্লাহ হাফেজ হয়ে যায় ,আজও তাই হয়েছে, যে মানুষ ভোরে ঘুম থেকে উঠে আর বউ থাকলে ভোর রাতে ঘুমাতে যায়।
আরও গল্প পড়তে এখানে ক্লিক করুন
এদিকে তিয়াশা ধীরে ধীরে ওয়াশরুম থেকে বেরোল। ভিজে চুল থেকে টুপটাপ পানি গড়িয়ে পড়ছে কাঁধ বেয়ে, গায়ে জড়ানো শুধু একটা তোয়ালে। শরীরের প্রতিটি বাঁকে ক্লান্তি আর ব্যথার ছাপ সোজা দাঁড়াতেই যেন অসম্ভব কষ্ট হচ্ছে। চোখে তীব্র ঝলক নিয়ে স্বামীর দিকে তাকাল সে,জায়নের দিকে সেই দৃষ্টি যেন কোনো শিকারি বাঘিনীর এখনই ঝাঁপিয়ে পড়বে তাকে গিলে খাওয়ার মতো। মনের ভেতর অস্থিরতা, রাগ আর ক্ষোভে ফুঁসছে। এই মানুষটা, নাম তার স্বামী, অথচ ভালোবাসার উন্মাদনায় প্রতি রাতেই যেন সীমা ভাঙতে চায়। তিয়াশার ব্যথাতুর দেহটাই তার সাক্ষী।
তার চোখের দৃষ্টিতে যেন স্পষ্ট কথা,
“এই লোকটার বুকে অফুরন্ত ভালোবাসা আছে বটে, কিন্তু তার উন্মাদনা, তার অস্থির রাগ, তার বেপরোয়া আবেগ সব মিলে এক অসহ্য ঝড়। এই বর নামে মানুষটা একেবারেই স্বাভাবিক নয়। নোবেল ছুঁড়ে মারা উচিত এরকম উন্মাদ প্রেমিকের জন্য।”
ঘুমের ঘোরেই জায়নের হাত খুঁজতে থাকে তার বউকে , ঘুমের ঘোরেই বুঝতে পারল বউ পাশে নেই , বউ পাশে না পেয়ে বিরক্তি জমে চোখ মুখ কুঁচকে আধো নিদ্রার মধ্যেই যেন একটা শিশু , সেই সুরেই ডাক দিলো,
__” বউ… বউ…”
তিয়াশার কানে এলো সেই ডাক, বুকের ভেতর কেমন যেন টান খেলেও মুখ ঘুরিয়ে নিলো অন্যদিকে। যেন ইচ্ছে করেই নিজেকে কঠিন করে রাখলো।
কিছুক্ষণ পর জায়ন আবারো অস্থির গলায় আধো ঘুমে ডেকে উঠলো,
__” বউ কই তুই…?”
এইসব ঢং ঢাং দেখে তিয়াশার বিরক্তি চরমে উঠলো,গত রাতের যন্ত্রণা, শরীরের ব্যথা আর এই পুরুষের বেহায়াপনা মিলিয়ে যেন অগ্নিগিরি হয়ে আছে তার ভেতর। রাগে গজগজ করতে করতে এত জোরে কাভার্ড এর দরজা খুলল যে জায়নের চোখ এক ঝটকায় খুলে গেল।
চোখ মেলতেই সে যা দেখল তোয়ালে জড়ানো ভেজা চুলে দাঁড়িয়ে আছে তার মায়াবী রমনী তার শুধু পেছনের দৃশ্য দৃশ্যমান,অথচ সেই দৃশ্যই জায়নের দমবন্ধ করে দিচ্ছে। তার মনে হচ্ছিল এই মেয়েটাই তার নেশা, তার উন্মাদনা, তার পাগলামির একমাত্র উৎস।
সেও জানে তার বউ কতটা রেগে থাকতে পারে । কিন্তু তার যে আবারো মস্তিষ্ক খারাপ হয়ে যাচ্ছে , কিন্তু বউ ও তো তার মানুষ এখন বউ এর কাছে গিয়ে কিছু বললে তাণ্ডব শুরু করে দিবে।
তাই কমফোর্ট টা শরীর থেকেসরিয়ে বিছানা ছেড়ে উঠে দাঁড়াল জায়ন। পরণে শুধু কালো রঙের কেলভিন ক্লেইনের ট্রাঙ্কস, বাকি শরীরটা পাহাড়ের মত উন্মুক্ত, শক্ত, রুক্ষ অথচ নারীকে বশীভূত করার মত প্রবল আকর্ষণী। এদিকে তিয়াশাও বুঝল যে তার অসভ্য পুরুষ উঠে গেছে ,কিন্তু সে এই অসভ পুরুষের সঙ্গে কোন কথাই বলতে চায় না তাই কিছু না বলে শাড়ি হাতে নিয়ে আবার ও ওয়াশরুমের দিকে এগোতে যাচ্ছিল।
ঠিক তখনই পেছন থেকে জায়ন তাকে কোমর জড়িয়ে ধরলো, একটু ঝুঁকে মুখ গুঁজে দিলো তার কাঁধে ভেজা শরীর থেকে ভেসে আসা ঘ্রাণ যেন একেবারে রগে রগে ঢুকে গেল জায়ন , সেই ঘ্রাণের কারনে তার কণ্ঠ কাঁপতে লাগলো হাস্কি সুরে,
__” ওহ বেইব, ইউর স্মেল মেকিং মি ক্রেজি ।”
কিন্তু এই শুনে তিয়াশার চোখ দিয়ে যেন আগুন বেরোচ্ছে , গলায় ছিল কাঁপুনি কিন্তু কন্ঠে ছিল ত্বেজ ,
__” মানুষ কতটা নির্দয় পাষাণ নির্লজ্জ হলে এখন
এইসব কথা বলতে পারে, সত্যি নিজে চোখে না দেখলে বিশ্বাস করতাম না ।”
জায়ন তার বউ এর এরকম ব্লেডের মত ধার আলা কথায় বুঝতে পারল এগুলো তার উদ্দেশ্যেই বলা হচ্ছে । জায়ন জানে সে গত রাতে কি করেছে কিন্তু সে তো পাগল হয়ে যায় এই মেয়ের কাছে আসলেই ।
তিয়াশার হাত চলছে না তবুও দাঁত কিটিমিটি দিয়ে
হাত সরাতে লাগল , কিন্তু জায়ন আরো চেপে ধরল,
তারপর কোমল কন্ঠে বলে উঠলো,
__” এরকম রাগ করিস না জান , আমি পাগল হয়ে যাই
কি করবো, মাথা ঠিক থাকে না । দেখ না আবার মাথা
খারাপ হয়ে যাচ্ছে এতে আমার কি দোষ , শোন না
জান আর এক…….”
পুরো বাক্য সম্পূর্ণ করতে পারল না তার আগেই তিয়াশা এবার এত রেগে গেলো যে জায়ন এর হাতে তার নখ দিয়ে খামচে ধরলো , জায়ন আউ
করে ব্যথায় তিয়াশা কে ছেড়ে দিলো ।দাঁত চেপে হাত ঘষতে ঘষতে করুন সুরে বললো,
__” বউ তুই এরকম হিংস্র অ্যাটাক করবি? একটুও মায়া দয়া নেই ? একটু রোমান্স ই তো……..”
তিয়াশা এবার আর থামল না। আগুনের মতো কণ্ঠে ঝাঁঝালো শব্দ বের হলো,
__” তোমার এই রোমান্সে আমি কেরোসিন দিয়ে আগুন ধরিয়ে দেব , শয়তান বেহায়া অসভ্য লোক
আবার নিজের পশু গিরি দেখাতে চাচ্ছে । এটুক তে
উ হা করে যাচ্ছে , আমার শরীরকে খেলনার মতো ব্যবহার করেছো রাতে, তখন কি আমার কষ্টের কথা মনে পড়েছিল?”
তিয়াশা যেন হিংস্র বাঘিনীর মত গর্জে উঠলো, জায়ন এর কান যেন ফেটে যাবে, চোখ মুখ থমকে গেল ভয়ে মুখ টা শুকিয়ে যাচ্ছে । বুঝতে পারছে বউ আজকে ভীষন ক্ষেপে আছে , আজকে আর তার চলবে না , সাইক্লজিতে বলে বউ খেপলে চুপ থাকাই শ্রেয় , কিন্তু এবার সে কি করবে ? এই বউ কে কি করে মানাবে ?
অবশেষে ভাঙা কণ্ঠে আমতা আমতা করে বললো,
__” সরি বউ আর সুস্থ মস্তিষ্ক নিয়ে করবো না ওইসব।”
তিয়াশা যেন এবার আর জায়ন এর এই নাটক মার্কা কথা নিতে পারছে না , দাঁত মুখ কুচকে উঠলো,
__'” সুস্থ থাকো কখন তুমি ? অসভ্যতামিতে তো পিএইচডি করেছো। আমার তো ইচ্ছে করছে …..”
কথাটা শেষ না করেই ধীরে ধীরে ব্যথাতুর শরীর নিয়ে ওয়াশরুমের দিকে এগোতে লাগল , জায়ন তাই দেখে তিয়াশার হাত ধরে একটু করুন কন্ঠে ঢং করে বলল ,
__” বউ দেখ আমি কিন্তু ইনোসেন্ট , আমি কিছু জানিনা শুধু রাতে শরীরে জীন চলে এসেছিল।আর এই শাড়ি নিয়ে কোথায় যাচ্ছিস ? এখানেই চেঞ্জ কর না ।”
এই বলেই একটু মুচকি হাসি দিল , তিয়াশার মনে হচ্ছে এই লোক টার মাথা ফাটিয়ে দিতে পারত যদি, নয় নিজের,কান বন্ধ রাখতে পারত যদি । তিয়াশা এবার জায়ন এর পুরো শরীরের দিকে একবার তাকিয়ে বলল,
__” তোমার মত অসভ্য লোকের সামনে এখন ড্রেস চেঞ্জ করা মানে , জ্বলন্ত আগুনে ঘী ঢালা । ”
__” সে তুই এই টাওয়াল পড়া অবস্থাতেও ঘী ঢালছিস।
আয় না একটু খানি ।”
জায়ন এর এই কথা শুনে আর এক সেকেন্ড ও দাঁড়ালো না গজরাতে গজরাতে ওয়াশরুমে গিয়ে
ঠাস করে দরজা লাগিয়ে দিল, বাইরে দাঁড়িয়ে থাকা জায়ন তখনও বাঁকা হাসি ছুঁড়ে দিয়ে সোফায় গিয়ে নেতিয়ে পড়লো,চোখ বন্ধ করে উল্টোপাল্টা ভাবনার মাঝেই হেসে উঠলো উচ্চস্বরে ,
__” ও আমার কারেন্ট বউ একটু ইলেকট্রিক শক দিতে পারতে কিন্তু ,আমার সার্কিট তো তোমার তারের সঙ্গে কানেক্ট হতে চাইছে।”
“আরে এই আকাশ ওঠ!”
হঠাৎ পানির ছিটে আসতেই আকাশ ধড়মড় করে চোখ মেলে দিল, তার ক্লাসমেট ছেলে ফ্রেন্ডটা হাতেই বোতল নিয়ে দাঁড়িয়ে, পাশে দাঁড়ানো আরোহী বাকি দুই মেয়ে
ক্লাসমেট।
চোখ মেলতেই আকাশের দৃষ্টি একেবারে স্থির হয়ে গেল তার জলপরী, তার ভালোবাসা, রুদ্র মুখে দাঁড়িয়ে তাকিয়ে আছে তার দিকে। সেই কঠিন দৃষ্টি যেন আগুন ছড়াচ্ছে, অথচ আকাশের বুকের ভেতর ভয় আর ভালোবাসার ঢেউ একসঙ্গে ধাক্কা মারছে।
হঠাৎ করে কিছুক্ষণ আগের ঘটনাটা মনে পড়তেই কাঁপা গলায় সে সোয়া থেকে উঠে দাঁড়াল, আরোহীর চোখে তাকিয়েই বলল,
__” সোনা বিশ্বাস করো, তুমি বিশ্বাস করো সোনিয়া পরে যাচ্ছিল তাই ধরেছি।”
তারপর দ্রুত দৃষ্টি ফেরাল সোনিয়ার দিকে, যেন ভয় আর অসহায়তার মাঝেও শেষ চেষ্টা,
__”ওই সোনিয়া বলনা আমার বউকে আমি তোকে জাস্ট হেল্প করেছি।”
আকাশের চোখে সেই সময় এক অদ্ভুত ভয় আর মায়ার মিশ্রণ চোখের কোণে ভিজে ওঠা কষ্ট, গলায় আটকে আসা অনুরোধ। অথচ আশেপাশে দাঁড়ানো তিনজন ক্লাসমেট সেই দৃশ্য দেখে ফিসফিস করে হেসে চলেছে।
এদিকে সোনিয়া নামের মেয়েটা তখন হাসতে হাসতেই
আকাশ কে জবাব দিল,
__”আমি অলরেডি বলে দিয়েছি ওকে সবকিছু।”
আকাশের বুকের ভেতর আরও বেশি কাঁপুনি ধরল। তার জলপরী এখনও কেন এভাবে তাকিয়ে আছে? কেন মুখে এই শীতল ঝড়? সাহস সঞ্চয় করে সে কাঁপা কাঁপা গলায় বলে উঠল
__” তাহলে কেন ও এরকম করে দেখছে কেন ?”
এর মধ্যেই আরোহী ঝাঝী মেরে বলে উঠলো,
__” এত কষ্ট করে সকাল সকাল নাস্তা বানিয়ে আসলাম তোমার জন্য সব খারাপ হয়ে গেল।”
আরোহীর গলায় অভিমান মেশানো কষ্ট, কথা শেষ হতেই তার মুখ ফ্যাকাশে হয়ে গেল কিন্তু, আরোহীর কথা শুনে যেন আকাশ নিজেই আকাশ থেকে পড়ল, চোখ মুখ হা হয়ে গেল সে কি ঠিক শুনল ?যেন আকাশ একেবারে বজ্রাহত,
__” ওড়ে তোরা শুনলি আমার বউ নিজে হাতে নাস্তা বানায় আনলো, আর আমি খেতে পারলাম না আমার তো হসপিটালের বেডে দুদিন শুয়ে থাকা উচিত এই দুঃখে।”
আকাশের এই কথায় আরোহী কিছু বলতে যাবে তার আগেই আরোহীর হাত ধরে বাইরে চলে গিয়ে যেখানে
টিফিন বক্স ফেলেছিল সেখানে যেতেই দেখল , আরোহীর আনা নাস্তা কুকুরে চেটে পুটে খাচ্ছে।
আকাশের সেটা দেখে একটু খারাপ লাগলো , কিন্তু আরোহী মিট মিট করে হেসে কুকর টার কাছে গিয়ে একটু হাঁটু গেড়ে হেসে বলল ,
__” ভালো করে খাও সোনা , তোমার ভাইয়া খেতে পারে নাই তুমি খাও।”
এই কথা সুনে আকাশ ও না বুঝে হেসেই বলে উঠলো,
__” হ্যা সোনা ঠিক বলেছো , ভালো করে খা আমার বউ এর হাতের নাস্তা , রিভিউ দিস কিন্তু , তোর ভাইয়া…..”
এবার কথা টা বুঝে উঠতেই আকাশ গট গট করে তাকিয়ে পরল আরোহীর দিকে , তারপর গম্ভির কন্ঠে
বলল,
__” সোনা তুমি কি আমায় ইন্দিরেক্টলি কুকুর বললা।”
আলো-ল ছায়া মেশানো মুখে আরোহী হালকা বাঁকা হাসি দিল। তারপর বসা থেকে উঠে ধীরে ধীরে এগিয়ে এসে আকাশের দুই গাল দুই হাতের মুঠোয় ভরে কাঁপা হাসিতে বলল,
__” আমার রাঙ্গা মুলো ইনডাইরেক্টলি কেন বলব ?ডাইরেক্টলি বলছি তুমি আমার কিউট সুইট পাপ্পি।”
তার চোখে স্নেহের ঝিলিক, ঠোঁটে দুষ্টুমির খেলা। আকাশের বুকের ভেতর মুহূর্তেই ভালোবাসার অদ্ভুত আলোড়ন, কিন্তু মুখে গজগজ করতে করেই মনে মনে বলল
__” হ্যা লাস্ট পর্যন্ত কু**ত্তার বাচ্চা বানায় দিল , কি বা*
মার্কা কপাল আমার ।”
তিয়াশা সাজতে বসেছে ড্রেসিং টেবিলের সামনে।
কমলা রঙের হালকা কাচ করা সিল্কের শাড়ি, সাথে গাঢ় রানী রঙের গলা ঢাকা ব্লাউজ। খোলা চুলগুলো কাঁধ ছুঁয়ে নরম ঢেউ খেলছে। দুই হাতে রানী রঙের কাঁচের চুড়ি যেন প্রতিটি টুংটাং শব্দে ওর নারীত্ব আরও স্পষ্ট হয়ে উঠছে। চোখে গাঢ় কাজল, ঠোঁটে হালকা লিপস্টিক যেন কমনীয়তা আর কোমলতা মিশে এক অনবদ্য রূপ।
কিন্তু সাজের এই আড়ালে লুকিয়ে আছে তিয়াশার এক গোপন বেদনা গলায় যে দাগ, তার জন্য না চাইতেও গলা ঢাকা ব্লাউজ পড়তে হচ্ছে। তবুও সাজে এমন এক রূপ এসেছে, যে একজনের অবস্তা খারাপ হয়ে যাচ্ছে ।
আর পেছনে সোফায় বসে আছে জায়ন অর্ধেক নেতিয়ে, এখনো সেই কালো ট্রাঙ্ক পরেই। অথচ চোখ দুটো আটকে আছে শধু বউয়ের দিকে,বুকের ভেতর অনিয়মিত স্পন্দন, গলা শুকিয়ে গেছে, বারবার লুকিয়ে ঢোক গিলছে। মনে মনে গালাগালি দিচ্ছে নিজেকেই,
-__”এই রূপের সামনে আমি কেন এত অসহায়
হয়ে যাই? কেন নিজের উপর কোনো কন্ট্রোল থাকে না?”
তিয়াশা ও আর চোঁখে দেখছে তার বরের কাণ্ড মনে মনে ভাবছে এই অসভ্য লোক জীবনেও সুধরাবে না ।
তিয়াশা শাড়ি ঠিক করতে করতেই আয়নার দিকে তাকিয়েই গর্জে উঠে বলল,
__”” দয়া করে বেহায়ার মত শুয়ে না থেকে ফ্রেশ হলে
খুশি হব । আমি ওই বাসায় যাব, আর আমার সাজা নিয়ে যদি একটা কথা বের হয় মুখ থেকে আজ , মুখ
সেলাই করে দেব ।”
জায়ন জানে আজ বউ এর এরকম ডোজ বার বার খেতে হবে , তাই সোফা থেকে হাই ছাড়তে ছাড়তে উঠে , তিয়াশার কাছে গিয়ে কানের কাছে মুখ নিয়ে গম্ভির কন্ঠে বলল,
__” বাসায় যাওয়ার আগে আরেক জায়গায় যাব আমরা , একটু সময় লাগবে।”
তিয়াশা চোঁখ মুখ কুঁচকে বলে উঠলো,
__” কোথায়?”
জায়ন এবার মুখটা সরাসরি তিয়াশার গালে ঘষে দিল,দুই হাত দিয়ে কোমর জড়িয়ে ফিসফিস করে বলল,
__” গেলে দেখতে পাবি , তার আগে আমার আর্থিং এ একটু শকড চাই ।”
তিয়াশা ভেতরে ভেতরে ফেটে পড়ল, তার বাঘের বাচ্চার কথা আর সহ্য করতে পারছে না , মাথায় এসব ছাড়া কি আর কিছু আসে না? তাই বিরক্ত মুখ নিয়েই বলল,
__” আচ্ছা আমি তো তোমার কাছেই আছি , তবুও
সারাক্ষণ কেন এত উন্মাদ হয়ে যাও তুমি ?”
কোনো জবাব না দিয়েই হঠাৎ জায়ন তিয়াশাকে কোলে তুলে নিল। হকচকিয়ে গেল তিয়াশা, নিজের অজান্তেই জায়নের গলা জড়িয়ে ধরল। করিডোর পার হয়ে সিঁড়ি বেয়ে নিচে নামছে সে। নামার সঙ্গে সঙ্গেই তিয়াশা জায়ন এর কোল থেকে প্রাণপণে চেষ্টা করল নামতে, তারপর ঝাঁঝিয়েই বলল,
__””নামাও! কী করছো?”
কিন্তু জায়ন কিছু না বলে পাত্তা না দিয়ে পিয়ানো সিটে গিয়ে বসল , কোলে বসালো তিয়াশা কে , তারপর একটু রূঢ় কন্ঠেই জায়ন বলল ,
__” নরাচরা করবি তো আজ বাসা থেকেই বেরোতে পারবি না ।”
, তিয়াশা গটগট করে তাকিয়ে রইল তার বাঘের বাচ্চার দিকে, কিন্তু পরের মুহূর্তেই অবাক হয়ে গেল যখন জায়ন তার ছোট্ট শরীরটাকে কোলের মধ্যে আঁকড়ে ধরে পিয়ানোতে সুর তুলছে, টুং টাং শব্দে যেন এক অচেনা আবেগ ছড়িয়ে পড়ছে চারদিকে।
তিয়াশা বিস্মিত হয়ে অবাক দৃষ্টিতে তাকিয়ে বলল ,
__”তুমি এটা বাজাতে পারো? আমি জানতাম না তো।”
জায়ন একটু মুচকি হাসি দিয়ে বলল,
__” তাহলে বাসায় কি এমনি এমনি এটাকে রেখেছি ,
আমেরিকার বাসাতেও আছে । যখন যাব আমরা তখন
দেখে নিস । এখন তোর ওই প্রশ্নের জবাব শোন …..”
তিয়াশা কিছু বলতে যাবে তার আগেই জায়নের আঙুলগুলো পিয়ানোর তারে ভেসে গেল। সুরে মিশল আবেগ,
🎶
__” মন অল্পতে প্রিয় গল্পতে ….
কল্পনায় স্বপ্ন আকে….
ভুল ত্রুটি আবেগি খুনসুটি
সারাক্ষন তোমায় ছুঁয়ে রাখে…..
মন অল্পতে প্রিয় গল্পতে ….
কল্পনায় স্বপ্ন আকে….
ভুল ত্রুটি আবেগি খুনসুটি
সারাক্ষন তোমায় ছুঁয়ে রাখে…
তিয়াশা নিঃশব্দ হয়ে তাকিয়ে রইল। তার বাঘের বাচ্চা শুধু বেহায়া নয়, এত গভীর সুরও তুলতে পারে? এত বড় একটা কথা যা সে কোনোদিন জানতই না। চোখ ভিজে এলো,বুকের ভেতর ঢেউ খেল এক নতুনআবেগ। ধীরে ধীরে জায়নের গলা জড়িয়ে ধরল সে।
🎶 ও চায় পেতে আরো মন
পেয়েও এত কাছে…
বলতে চেয়ে মনে হয়,
বলতে তবু দেয় না হৃদয়,
কতটা তোমায় ভালোবাসি… 🎶
সুর থেমে গেলে জায়ন সরাসরি তার চোখে চোখ রেখে বলল,
__”জবাব পেয়ে গেছিস তো? খুব ভালোবাসি তোকে জান …. তাই নিজে ঠিক থাকতে পারি না।”
জায়ন এর দিকে তাকিয়ে তিয়াশা কাঁপা কণ্ঠে বলল,
__”তাহলে এই গোপন রহস্যের কথা আমি এতদিন অজানা কেন?”
তিয়াশার গালে হাত দিটা দিতে মুচকি হেসে জায়ন উত্তর দিল,
__”সব তুমিই জানবে, জান।”
তিয়াশার ঠোঁটে এক কোমল হাসি খেলে গেল। মনে হলো রাতের সমস্ত অভিমান গলে নরম হতে শুরু করেছে ,জায়ন সেই সুযোগ বুঝে নিয়ে দুষ্টু ভঙ্গিতে বলল,
__”বউ, তোমার মন গলেছে?”
তিয়াশা কিছু বলতে যাবে তার আগেই জায়ন বলে উঠলো,
__” আই নিড ইউ বেইব, প্লীজ ব্যথা দেব না ।”
তিয়াশা চোখ বড় বড় করে তাকাল, হতবাক হয়ে গেল। হঠাৎই জায়ন ঠোঁট বসিয়ে দিল তার ঠোঁটে… যেন চারপাশে সময় থমকে গেল।
কিন্তু ব্যাঘাত ঘটালো পাশের টেবিলে থাকা ফোনটা, ফোন টা বেজে ওঠে , সকাল থেকে অনেক বারই বেজেছে কিন্তু ফোন তো ছিল নিচে , কিন্তু এই
ফোন জায়ন এর মস্তিষ্ক গরম করে দেয় , তিয়াশাকে
বসিয়ে ফোন টা নিতে গিয়ে , বিরক্তের চোখে ফোনে নজর না দিয়েই চিৎকার করে বলে উঠলো,
তোমার ছোঁয়ায় আসক্ত আমি পর্ব ৬০ (২)
__” আমার রোমান্সের টাইমে কোন শা*লার এত জ্বালা উঠেছে রে ? ”
ওদিক দিয়ে একটু থেমে এক গম্ভির স্বর ভেসে আসলো,
__” তোর শশুর শা* বলছি , তোর বউ এর বাপ , ”
ব্যাস জায়ন এর যেন হাওয়া উড়ে গেল , আর সেই হাওয়ায় মুহূর্তেই জায়নের মাথা থেকে সব রোমান্স ভেসে গেল। মুখ শুকিয়ে একেবারে ভ্যাবাচেকা খেয়ে দাঁড়িয়ে রইল সে…
