তোমার ছোঁয়ায় আসক্ত আমি পর্ব ৮

তোমার ছোঁয়ায় আসক্ত আমি পর্ব ৮
নীল মণি

সকালের মিঠে রোদ ছড়িয়ে পড়েছে ধুলোমাখা এই শহরের ছাদের কার্নিশে, বাইরে পাখির ডাক হারিয়ে গেছে ব্যস্ত এই কোলাহলে, তবু সকাল জানে — একদিন সবাই শুনবে , যদি একটু থেমে।
জানালার ফাঁক গলে ঢুকে পড়া আলোর রেখাগুলো ধীরে ধীরে ছুঁয়ে যাচ্ছে ঘরের দেয়াল, বিছানার চাদর আর জমে থাকা নিঃশব্দে।

হঠাৎ করে আজ সকাল সকাল তিয়াশার চোঁখ দুটো খুলে যায় পাশে থাকা এলার্ম ঘড়ির শব্দে ।আজ তার শেষ পরীক্ষা হাপ ছেড়ে বাঁচবে মেয়ে টা বাবা একটু শান্তি কিন্তু তাও কোথায় যেন এক প্রশান্তির উপসাগর বয়ে চলেছে। হাই তুলতে তুলতে হাত দুটো উচু করে কি মনে করে সে আজ ব্যালকনিতে গিয়ে দাড়াল ।
চুল গুল উস্কো খুস্কো হয়ে আছে পরনে রাতের সেই ব্লাক প্লাজো আর লাল রঙ্গা টপ । তিয়াশ সামনের দিক তাকাতেই চোঁখ দুটো ছানাবড়া হয়ে গেল , হালকা চোঁখ দুটো দলে আবার তাকাল যে সে ঠিক দেখছে তো , দেখে তার মুখ হা হয়ে গেল ।

আরও গল্প পড়তে এখানে ক্লিক করুন 

সে ব্যালকনি দিয়ে দৃষ্টিপাত করল আবরার জায়ন তার ব্ল্যাক মার্সিডিজ টা দিয়ে নামল । পরনে হোয়াইট জিম ট্রাউজার , ব্ল্যাক স্যান্ডো গেঞ্জি, পায়ে ব্র্যান্ডেড শুজ, গলায় সাদা একটা শর্ট টাওয়াল, কাধে একটা ছোট জিম এর সাইড ব্যাগ, এক হাতে জলের বোতল । ব্ল্যাক স্যান্ডো গেঞ্জি ভেদ করে যে পুরুষালি কৃত্রিম গঠন দেখা যাচ্ছে তা যে কোন মেয়ে দেখলে তাদের ও আমাদের রোদের মত অবস্থা হবে ।
চৌধুরী বাড়ির ব্যাকইয়ার্ড স্পেস এ আবরার আসার পর এ অবশ্য একটা জিম তৈরি করছে সে তার নিজের জন্য। কিন্তু কাজ এখন সম্পূর্ণ হয়নি , সে নিজের শরীর চর্চা নিয়ে খুব বেশি সচেতন থাকে। এদিকে আবরার ও অবশ্য দেখতে পারল রোদ এর এই রিয়েকশন যা দেখে নিজেই ঠোঁট উল্টে হাসল।

এই দৃশ্য দেখে তিয়াশার মন চাইছে না রুম এ ফেরত যেতে , কিন্তু কিছু করার নেই লজ্জায় না পেরে রুম এ গিয়ে দুহাত ছেড়ে বিছানায় সুয়ে পরল , চোঁখ দুটো সিলিং এর দিকে নজর দিয়ে একভাবে ভাবছে,
” এভাবে কেউ বাইরে যায়? নিজেকে তো এত সুন্দর দেখাতে নেই , তবুও কেন সে দেখাচ্ছে এগুল তো বেআইনি তাই না । ”
এগুল ভাবছে আর নিজের মনে নিজেই প্রশ্ন করছে, মাঝে মাঝে ঢোক ও গিলছে ভাবতে ভাবতে কাবার্ড থেকে স্কুল ইউনিফর্ম বার করে ওয়াশরুম এ প্রবেশ করল।
এদিকে জায়ন ও হাসতে হাসতে বাড়িতে ঢুকল। বৃষ্টি নিচে সোফায় বসে ছিল, সে এরকম জায়ন কে হাসতে দেখে জিজ্ঞেস করেই বসল —

” জায়ন ভাই কিছু হয়েছে? এত খুশি দেখাচ্ছে আপনাকে।”
“না” এই বলে কোন দিক না তাকিয়েই সিঁড়ি বেয়ে গট গট লম্বা লম্বা পা ফেলে উপরে চলেগেল।
মেহজাবীন বেগম পিছন দিয়ে বলে উঠলেন —
” এ ছেলের হাব ভাব দেখে লোকে বলবে পাগল হয়ে গেছে । ”
সোফাতে ৩ ভাই বসে চা পান করছিল , এর মধ্যে মেহজাবীন বেগম এর কথা শুনে তাহসান চৌধুরী বলে উঠলেন

” ভাবী এরকম বিয়ের আগে আমাদের বড় ভাইয়াও পাগল হয়ে গেছিল , হা হা হা ”
সবাই এই শুনে হেসে যাচ্ছে আর এদিকে মেহজাবীন বেগম লজ্জায় রাঙা হয়ে রান্নাঘর এ চলে গেল ।
চৌধুরী বাড়ির সকালের নাস্তার পর্ব মিটিয়ে আজ যে যার মত করে বেরিয়ে গেছে। আজ আবরার জায়ন ও অফিসে এর উদ্যেশ্যে পারি দিল তার ছোট চাচুর সঙ্গে । তিয়াশাও ও গেছে তার শেষ এক্সাম দিতে । রায়ান আর অনু ও গেছে স্কুল এ ।
বাড়ি তে রয়ে গেল শুধু গিন্নীরা আর বৃষ্টি। বৃষ্টি এই কদিন আর ভার্সিটি তে যাবে না বিয়ের জন্য তাকে একদিন বাড়িতেই থাকতে হবে কিন্তু বৃষ্টির মনে বয়ে যাচ্ছে এক অশান্তি সেটা বোঝার ক্ষমতা কার নেই।
রূহেনা বেগম বৃষ্টির দিক তাকিয়ে বললেন —

” আম্মু তোর হয়েছে টা কি বলত ?”
মেহজাবীন বেগম বললেন —
” আজকাল ছেলে মেয়ে গুলার যে কি হয় , কিছু বোঝা দায়। ও মেজ একটু ওর কপাল টা ছুঁয়ে দেখ তো জ্বর ঠর আসেনি তো। ”
রূহেনা বেগম তারাতারি বৃষ্টির কাছে গিয়ে কপাল ছুঁয়ে বললেন —
” হ্যাঁ আপা ঠিক বলচ্ছেন আপনি। আম্মু দেখি তো জ্বর নাকি তোর ।”
বৃষ্টি একটু চুপ করে বলল —
” ও হো আম্মু কিছু হয় নি , এত চিন্তা কর না তো।
অমনি বৃষ্টির ফোন বেজে উঠল । বৃষ্টি বলল আম্মু আমার একটা কল আসতেসে , বলেই উপরে চলে গেল।
রূহেনা বেগম বললেন —
” এই মেয়ে টার যে এত ফোন এর মধ্যে কি আল্লাহ
জানে ”
এদিকে তিয়াশা তাদের বাড়ির গাড়ি থেকে নামল এক্সাম সেন্টার এর সামনে , আরোহী আগে এসেই দাড়িয়ে ছিল , তিয়াশা কে দেখেই দৌড়ে এল , এসে কাধ জড়িয়ে বলল —

” তো বেবি এক্সাম এর প্রিপারেশন কেমন? না কি ভাইয়া তেই ডুবে রয়েছ?”
একটু রেগে তিয়াশা জবাব দিল —
” ভালো, আমি কোথায় ডুইবা নাই বাজে মাইয়া । সে তো আমায় বলছে আমি যেন তার সামনে না যাই, ডুব টা কোথায় দেব তালে, সে দেবে ডুব আমার আপু তে। ”
আরোহী হেসে বলল –
” এতই যখন জানিস তাই লে নিজে কেন পাগলায় যাচ্ছিস অসভ্য মাইয়া । আর হারামজাদি কাল কেন আইলি না?”
তিয়াশা মুখে হাত দিয়ে বলল —
” কাল এক যা বাঘের থাবা মুখে পড়ছিল , তা আসব কি।”
আরোহী ভ্রূ কুঁচকে বলল –

” কিসের থাবা বেবি?
তিয়াশা বলল —
” কিছু না বেবি , চল এবার ।”
আরোহি বলল –
” তো বৃষ্টি আপুর বিয়ে তো ১০ দিন পর আমার না হওয়া ছোট দুলাভাই এর সঙ্গে । আঙ্কেল ফোন ডিসিল আব্বু রে সকালে দাওয়াত দেওয়ার জন্য।”
( তিয়াশার আব্বু আর আরোহীর আব্বু দুইজন ই খুব ভালো বন্ধু )
তিয়া শা আরোহীর কান টা টেনে বলল –
” চল তোর না হওয়া দুলাভাই দেখাচ্ছি , অসভ্য মাইয়া। ”

সকালের আলোটা আজ যেন জায়ন এর জন্য একটু অন্য রকম ছিল । শার্টের হাতাটা গুটিয়ে ঘড়ির দিকে এক ঝলক তাকাল জায়ন। সময় হয়েছে ৯:৪৭ । গাড়ির জানলার কাঁচে নিজের প্রতিচ্ছবি দেখে নিল আরেকবার — ছিপছিপে ফিট সাদা শার্ট, ব্ল্যাক ট্রাউজার , আর বা হাতের কব্জিতে ব্লেজার ,চোখে সানগ্লাস, আর হাতে রিস্ট ওয়াচ ।
ব্লেজার টা পড়ে চৌধুরী গ্রুপ অফ ইন্ডাস্ট্রিজ এর গেটের সামনে দাড়াতেই , দুজন সিকিউরিটি গার্ড দরজা খুলে দিল। সামনে দারিয়ে আছে আহমেদ প্রান্তিক চৌধুরী, প্রণয় আলী চৌধুরী ও অফিস এর কিছু গণ্য মান্য ব্যাক্তি ও কিছু স্টাফ রা , তারা সকলেই সম্মানসূচক ভঙ্গিতে বললেন —

” Welcome to our Chowdhury group, sir .”
আবরার জায়ন একটু হেসে বলল –
” Thank you ”
লিফটের দরজা খুলতেই সামনে দাঁড়িয়ে দাঁড়িয়ে ছিলেন শীর্ষ কর্মকর্তারা। সবাই এক সঙ্গে হালকা নত হয়ে বললেন,
— ” good morning sir , this is your office “.
আবরার জায়ন ও একটু গম্ভীর ভাব নিয়ে বললেন —

” Ok ”
তাহসান চৌধুরী জয়ান এর অফিস রুম এ এসে বললেন —
” কি রে অফিস পছন্দ হল? ”
” জী চাচু ”
” চল ঠিক আছে আলহামদুলিল্লাহ ”
” চাচু একটা কথা ছিল! ”
” হ্যাঁ বল”
” আজ প্রথম দিন অফিসে, বলতেও একটু অনুশোচনা হচ্ছে । ”
” আরে বল না। ”
“চাচু একচুয়ালী আমর একটু ওই ১ টা নাগাদ বেরোতে হবে , বাবা কে একটু ম্যানেজ করবে। ”
” সে নয় ঠিক আছে বলে দেব , খুব কি জরুরি যে তোর যেতে ই হবে ? ”
জায়ন থাই গ্লাস দিয়ে বাইরের দৃশ্য দেখত দেখতে চোখ টা বন্ধ করে একটু নিঃশ্বাস ছেড়ে বলল —
” হ্যাঁ চাচু খুব জরুরি।”
তাহসান চৌধুরী আর জায়ন একটু কথা বার্তা বলে , তাহসান চৌধুরী রুম থেকে বিদায় নিলেন।
এর মধ্যেই জায়ন এর ফোন টা বেজে উঠল , স্ক্রীন এ নাম উঠল ” ইউভি ( ভাই)”
ফোন রিসিভ করতেই ওদিক দিয়ে ইউভি বলে উঠল —
” আসসালামু ওয়ালাইকুম ভাই”
আবরার ও বলল —

” ওয়ালাইকুম সালাম, বল কি খবর?”
” জী ভাই আলহামদুলিল্লাহ । আজ তো অফিস এ প্রথম দিন কেমন লাগছে? ”
” ভাল , কবে ফিরছিস?”
” জী ভাই কাল”
” আকাশ কোথায়? ”
” জী ভাই পাসেই আছে। ”
” শোন , তোকে কিছু বলতে চাই তুই বাড়ি ফিরলে বলব।”
” এক্ষুনি বলো ভাই । আমি শুনছি ”
” না । ফোন বলা যাবে না ”
” ঠিক আছে ভাই যেটা তোমার সুবিধা মনে হয় ”
” ওকে , রাখ এখন ”

” জী ভাই , বায় “…ওদিক দিয়ে কল টা কেটে গেল।
এদিকে জায়ন এর ৪ বন্ধু ও শুভঃ কামনা জানিয়ে দিল মেসেজ বার্তায় ।
এক্সাম শেষ এর পরে ৪ বান্ধবী এক সঙ্গে বেরোলো ,
তাদের মুখের হাসি দেখে মনে হচ্ছে এক যুদ্ধ জয় করে এলো , আরোহী বলল–
” বাবা শান্তি , কাল নানু বাড়ি দৌরাম, তারপর আবার বৃষ্টি আপুর বিয়া বাবা মজায় মজা , বল বেবি। ”
তিয়াশা চোঁখ ঘুরিয়ে বলল —
” হ্যাঁ ভীষন মজা।”
মনে মনে বলল —

” ক্রাশ এর বিয়ে দেখার দিয়ে মজার জিনিশ কিছু আছে। ”
রুবিনা বলল —
” এক্সাম কেমন দিসিস তাই বল?”
আরোহী বলল —
” একটা পেজ ও বাদ দেই নাই দোস্ত , কিন্তু নম্বর কত পাম জনিনা ৩০ পাইলেও হবে।
পরি বলল –
“খাতায় কি লিখছিস তাহলে তুই”
আরোহী মাথা চুলকে বলল —
” সে তো নিজেও জানিনা” ….

এই শুনে ৪ বান্ধবী হেসে লুটে পড়ল ।
সেন্টার থেকে বেরিয়ে তিয়াশার গাড়ি দেখতে পেল না
আরোহী জিজ্ঞেস করল —
” বেবি তোর ড্রাইভার আংকেল কোথায়?”
তিয়াশা বলল –
” আমিও তো দেখতে পাচ্ছি না”
এর মধ্যেই একটা ২০,২১ বছরের এক ছেলে তিয়াশার দিকে এগিয়ে বলল —
” এই যে ললনা একটু শুনবেন ?”
আরোহী ভ্রূ কুঁচকে বলল –
” জী ভাইয়া আপনাকে তো ঠিক চিনলাম না”
ছেলে টা বলল —

” জী আপনারা আমাকে চিনবেন না , আমি একটু ওই ললনার সঙ্গে কথা বলতে চাই।”
ছেলেটা তিয়াশার দিকে তাকিয়ে বলল —
” আসলে আমি আমার বোন কে দিতে আসি সেন্টার এ , আমার বোন ও এবার এস এস সি দিচ্ছে । আপনাকে রোজ দেখি , কিন্তু কথা বলার সুযোগ পায়নি সব সময় আপনার সঙ্গে কেউ থাকে। আপনার নাম টা জানতে পারি? ”
তিয়াশা বলল —
” ভাইয়া আমি তো আপনাকে চিনি না , তাই নাম টা বলতে পাড়ব না। ”
ছেলে টা বলল –
” তো চিনে নিন ”
আরোহী বলল –
” এই যান তো আপনি , ছ্যাচরা কোথাকার ।”
আরোহী আর তিয়াশা ঘুরতেই, ছেলেটা তিয়াশার হাত
টা টেনে একটা চিঠি দিতে যাচ্ছিল , ঠিক তখন ই ছেলেটার নাক মুখ জড়িয়ে পড়ল এক ঘুসি ….
অরোহী আর তিয়াশার পরিস্থিতি মাথায় আসার আগেই সামনে দেখল , জায়ন ওর দিকে একবার রক্ত রাঙ্গা চোখ দেখিয়ে ছেলেটা কে আবার ও মারতে লাগল , নাক দিয়ে গল গল করে রক্ত বেরিয়ে যাচ্ছে , আসে পাশে এত্ত লোক ,
জায়ন এর তাতে কিছুই যায় আসে না , জায়ন ছেলেটার কলার টা ধরে একটু দূরে নিয়ে গিয়ে দাঁতে দাঁত পিষে বলতে লাগল –

” শু** *রের ব**চা জানিস তুই কার হাত ধরেছিস, কু**র ব**চ্চা আমি ওর আসে পাশে কোন ছেলের ছায়া পছন্দ করব না , সেইখানে তুই হাত ধরেছিস দেখি তোর কলিজায় কত সাহস ” এই বলে আবার ও মারতে লাগল।
ছেলেটা বলল —
” সরি ভাইয়া আর হবে না, প্লিজ ছেড়ে দিন।”
এদিকে লোকজন ও জড়ো হয়ে গেছে । তখন
জায়ন ছেলে টাকে ছেড়ে দিয়ে , কানে কানে
বলল জায়ন এর কোমর এর দিকে ইশারা করিয়ে

” পুলিশ কমপ্লেইন করলে পুরো ফ্যমিলি জানে উড়িয়ে দেব।”
ছেলেটা ভয়ে জড়ো সারো হয়ে উঠল।
এদিকে আরোহী আর তিয়াশা দুজনে দুজনের হাত ধরে ভয়ে গুটি শুটি হয়ে রয়েছে , আরোহী বলে উঠল —
” দোস্ত এইডা কি ছিল ? ”
ভয়ে কাপতে কাপতে তিয়াশা বলল
” আমি কি জানি”
জায়ন এর চোখ রক্ত রাঙ্গা হয়ে উঠেছে, ভেতরের আগুন টা যেন শিরা বেয়ে উঠে এসে জমে গেছে চোখে।
ঠোঁট থমথমে , শার্ট এর টাই টা একটু লুজ করে , হাতা টা গুটিয়ে হিংস্র দৃষ্টিতে এমন ভাবে তাকিয়ে তিয়াশার দিকে তেড়ে আসছে যেন এক্ষুনি গিলে ফেলবে । এই দেখে আরোহী বলে উঠল —

” দোস্ত আজকে তুই স্যাস”
বলতে বলতেই জায়ন তিয়াশার হাত টা ধরে হ্যাঁচকা টান দিয়ে , আরোহীর দিকে রেগে তাকিয়ে বলল —
” এখানে দাড়িয়ে প্রেম নিবেদন না দেখে নিজের বাড়ি যাও”
আরোহী এই শুনে নিজের গাড়ির দিকে দৌড় দিল
রুবিন আর পরি অনেক আগেই চলে গেছিল ।
আরোহী তিয়াশার গাড়ি আসেনি দেখে ওর জন্যে দাড়িয়ে ছিল ।
জায়ন তিয়াশার হাত টানতে টানতে গাড়ির দিকে নিয়ে যাচ্ছে । এদিকে তিয়াশার হাত মনে হচ্ছে এক্ষুনি ছিঁড়ে যাবে , ব্যথায় আর না পেরে বলল —

” জায়ন ভাই প্লিস ছাড়ুন না , খুব ব্যথা পাচ্ছি তো”
জায়ন তিয়াশ কে গাড়ির মধ্যে ছুঁড়ে ফেলল কিছু না বলে , নিজে ড্রাইভিং সিটে বসে সিট বেল্ট বেঁধে , তিয়াশার সিট বেল্ট বেঁধে দিল। গাড়ি স্টার্ট করে বেসামাল ভাবে হাই স্পিড এ গাড়ি চালাতে লাগল ।
তিয়াশা ভয়ে কেঁদেই যাচ্ছে , বা হাতের মুঠোয় এখনো
চিঠিটা রয়েছে তিয়াশার সে দিকে খেয়াল নেই । ভয়ে জায়ন এর দিক তাকাতেও পারছে না , জায়ন এর চোখ দিয়ে যেন আগুন বেরোচ্ছে।
তিয়াশ তাও সাহস যুগিয়ে বলল —
” প্লিজ গাড়ি আস্তে চালান, আমি ভয় পাচ্ছি।”
হট করে জায়ন এর চোখ তিয়াশার হাতের দিকে পড়েছে
চোঁখ পরতেই , বাহুর মাংসপেশীর সব শিরা উপশিরা জেগে উঠেছে । গাড়িটা ফাঁকা রাস্তার এক সাইডে এ দার করিয়ে দাঁতে দাঁত পিষে চোয়াল শক্ত করে
তিয়াশার ছোট্ট মুখ টা এক হাত দিয়ে চেপে বলল —

” শা***লা এক্সাম দিতে এসে প্রেম মা***রাচ্ছ, কবে দিয়ে চিনিস বল ছেলে টাকে ? ”
তিয়াশা ভয়ে জমে গেছে কিছু বলতে পারছে না , তিয়াশার হাত দিয়ে চিঠি টা নিয়ে আরো শক্ত করে তিয়াশার মুখ টা ধরে —
” কু**র ব*চ্চা আবার চিঠি লেখে, এই বল কবে দিয়ে চিনিস। তোদের দুটো রেই কবর দিব । শালা তুই
এই বয়সে প্রেম মা*রাস। ”
তিয়াশা ভয়ে কিছু বলতেও পারছে না রীতিমত কাপছে
মনে মনে বলল – ” হে আল্লাহ এই বাঘের বাচ্চার মাথা নষ্ট হয়ে গেছে , কি বলে এই লোক ”
এর মধ্যেই উইন্ডো গ্লাস টা নামিয়ে রোদ এর হাত টা বাইরে বার করে গাড়িতে থাকা জলের বোতল এর ক্যাপ টা খুলে যে হাত টা ছেলে টা ধরে ছিল সেই হাত টা জোরে জোরে ঘষে ধুতে লাগল । এদিকে ব্যথায় ছটফট করছে রোদ চোখ দিয়ে জল পড়ছে , হাত টা ধোয়ার পর উইন্ডো গ্লাস টা আবার ও দিয়ে দিল ।
এরপর ও তিয়াশা কিছু বলছে না দেখে জায়ন এর রাগ আরো বেড়ে গেল , রাগে ঘুসি লাগাল উইন্ডো গ্লাস এ , গ্লাস টা সাথে সাথে ভেঙে হাত টা কেটে রক্ত বেরোতে লাগলো।
তিয়াশা এই দেখে জোরে চেচিয়ে কেঁদে কেঁদে বলল –

“আপনার কি মাথা খারাপ হয়ে গেছে জায়ন ভাই ,
হাত থেকে রক্ত বেরোচ্ছে তো। ”
বলেই তিয়াশ জায়ন এর হাত টা ধরতে গেলে , জায়ন হাত টা ছাড়িয়ে নিয়ে বলল–
” একদম ছুবিনা আমায় , সর এখান থেকে ।
তুই কি বলবি ছেলেটার সঙ্গে কবে দিয়ে প্রেম করছিস ?”
এবার তিয়াশা কেঁদে কেঁদে বলল –
” আমি চিনি না ও কে , আজ প্রথম দেখলাম বিশ্বাস করুন।”
জায়ন আরো রেগে মুখ টেনে ধরে বলল –
” এই তোর কি আমাকে দেখে পাগলা*দা মনে হচ্ছে ?”
রোদ আর রাগস না কিন্তু তোকে এখানেই পুতে ফেলব।”
রোদ এবার বলল –

” জায়ন ভাই আল্লাহর কসম , আমি ওই ছেলে রে আজ প্রথম দেখলাম ।”
জায়ন এর ভয়ার্ত দৃষ্টি টা একটু নরম হয়ে রোদের দিক ঝুঁকে বলল –
” তাহলে চিঠি টা হাতে নিয়ে কেন ছিলিস ?”
রোদ কাপতে কাপতে বলল –
” আমার খেয়াল ছিল না যে চিঠি টা আমার হাতে ছিল।”
জায়ন রোদ এর থেকে সরে সোজা হয়ে চিঠি টা খুলে পড়তে লাগল –
” প্রিয় আমার ললনা জানিনা তোমার নাম আমি ,

কিন্তু তোমার ঐ মুখ খানি দেখে শুধু একটাই নাম মনে এলো আমার ললনা , তোমার ঐ মুখের হাসি দেখেছি যেদিন আমি প্রথম , হারিয়ে গেছি এক সমুদ্রে তেমন, তোমার ঐ চোখের পানে তাকালে মনে হয় হাজার বার খুন হৈ তোমার ঐ দৃষ্টিতে । জানিনা আমি দিতে পারব কি এ চিঠির পাতা ,যাতে লিখছি আমার মনের কথা ,
ললনা তোমার পড়েছি প্রেমে , ঘুম উড়েছে শুধু দেখছি তোমায় স্বপনে । জানি না কখন বলতে পাড়ব কিনা
এই এখানে ইতি টেনে বললাম আমার সুদীর্ঘকেশী
ললনা তোমায় ভালবাসি ।
জায়ন এই চিঠি পেরে বুঝতে পারল তিয়াশা সত্যি বলছে
আর দাঁতে দাঁত পিষে বলল –
” শু***র বাচ্চা ভালবাসা কাকে বলে দেখব তোকে ।”

মনে মনে আওড়াল – ” কত সাহস আমার kitty cat এর হাত ধরা , ওকে তো আমি মেরেই ফেলব”
জায়ন আবার ও তিয়াশার দিকে ঝুঁকে বলল —
“জ্যাম এর জন্য আস্তে লেট করেছি , নইলে ওর চিঠি দেওয়া বের করতাম।”
জায়ন এর কাছে আসায় তিয়াশার এবার ভয় এর সাথে সাথে এক আসক্তি অনুভব করছে , জায়ন এর ওই ব্বাদামি রঙ্গা চোখের মণি , ঘামে ভেজা সামনের চুল গুল কপালে ছড়িয়ে আছে, হালকা গোলাপি রঙ্গা তামাটে অধর জোড়া তিয়াশের এত কাছে সঙ্গে জায়ন এর ওই গায়ের ঘ্রাণ তিয়াশ কে খুব টানছে ,সে জানে না কিসের এই আবেগ শুধু জানে এই সব কিছু তাকে টানছে।
তিয়াশা কে পুরো সিট এর সঙ্গে চেপে ধরেছে । তিয়াশা অন্য দিকে মুখ ফিরিয়ে গোলাপী ওষ্ঠ যুগল কাপতে কাপতে বলল –

” ড্রাইভার আংকেল কোথায় ? আপনি কেন এসেছেন?”
গাড়িতে এ.সি. ফুল পাওয়ার এ দাওয়া তবুও দুজনের মধ্যে জলে উঠেছে ফুটন্ত আগ্নেয়গিরি।
জায়ন রোদ এর এত কাছে আসায় নিজে কে আর সংযত রাখতে পারল না , নিজের বা হাত টা তিয়াশার পেছন দিয়ে কোমরে পেঁচিয়ে ডান হাত দিয়ে তিয়াশ এর বা পা টা টেনে নিজের দুই পায়ের উপর বসিয়ে দিয়ে আরো কাছে টেনে নিল । এখন জায়ন এর সামনে রোদ।
এই অবস্থায় রোদ এর নিঃশ্বাস বন্ধ হয়ে যাচ্ছে , দুই হাত জায়ন এর কাধের উপরে , জায়ন তিয়াশার মুখ টা আরো কাছে এনে গলায় মুখ গুঁজে দিয়ে ওর চুলের ঘ্রাণ শুকতে শুকতে বলল –
” কেন তুই ই তো বলেছিলি আজকে আমায় নিতে আস্তে। ভুলে গেলি? ”
রোদ এর শরীর কাঠ হয়ে যাচ্ছে , শরীর অবস হয়ে আসছে .. কিছু বলতে পারছে না ।
জায়ন তিয়াশার গলায় মুখ ঘষতে ঘষতে বলল-

” আমি পাগল হয়ে যাব রোদ , প্লিজ এমন কিছু করিস না যে আমার নিজের মস্তিষ্ক হারিয়ে ফেলি । ”
রোদ কে আরো নিজের কাছে চেপে বলল –
” তুই অনেক ছোট রোদ , একটু বড় কেন হলি না? ”
মনে মনে বলল –

তোমার ছোঁয়ায় আসক্ত আমি পর্ব ৭

” তুই আমার কেন হলি না?”
এবার রোদ আর না পেরে বলল –
” জায়ন ভাই ছাড়ুন , কি করছেন?”
জায়ন এর যেন এই কথায় হুস ফিরে আসল ওমনি এক ঝটকা দিয়ে রোদ কে সিটে ফেলে দিল ।
একবার রোদ এর দিক তাকাল না পর্যন্ত । মেয়ে টা কোমরে ব্যথা পেয়ে কুঁকড়ে গেছে , এদিকে জায়ন
গাড়ি স্টার্ট করতে করতে
হালকা চোঁখ বুঝে স্থির কন্ঠে বলল –
” Oh F**k F**k holly shit, এটা কি করতে যাচ্ছিলাম damn it.”

তোমার ছোঁয়ায় আসক্ত আমি পর্ব ৯

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here