তোমার ছোঁয়ায় আসক্ত আমি পর্ব ৭৬

তোমার ছোঁয়ায় আসক্ত আমি পর্ব ৭৬
নীল মণ

জায়ন আর তিয়াশার আড়াই বছরের রাজকন্যা এখন পুরো চৌধুরী পরিবারের প্রাণকন্যা। সোনালি আভা মাখা ফর্সা গাল, ডাগর ডাগর চোখে দুষ্টু ঝিলিক যেন ছোট্ট পরী নেমে এসেছে। হাঁটতে হাঁটতে টুকটুক শব্দ, আবার কখনো খিলখিল হেসে উঠা সবকিছুতেই বাড়িটা যেন নতুন করে বেঁচে ওঠে।
জায়ন যখন বাইরে থাকে, তখন দাদা-দাদি, নানা-নানি, চাচা-চাচী, ফুফু-মাম মামী সবার কোলে কোল ঘুরে বেড়ায় ছোট্ট রোজা।যার চোখেই পড়ে, সে-ই ছুটে আসে কোলে টেনে নিতে, গালে চুমু খেতে। সবার কাছে সে আল্লাহর রহমতের সবচেয়ে মূল্যবান আমানত।

রিহানা রোজা চৌধুরী আজ আড়াই বছরের পূর্ণ রোদ্দুর, যার আলোয় ভরে থাকে পুরো বাড়ির প্রতিটি কোণ। সকালের প্রথম আলোয় যখন জানলার ফাঁক দিয়ে সূর্যের রশ্মি ভেতরে ঢোকে, তার আগেই ছোট্ট পায়ের টুপটাপ শব্দে ঘুম ভাঙে সবার। কারো হাত থেকে খেলনা টেনে নেয়, কারো ঘুম ভাঙায় কচি আঙুল দিয়ে গালে চাপড় মেরে। তার এই ছুটোছুটি, এই মিষ্টি বকবকানি যেন বাড়ির প্রতিটি মানুষের প্রাণের স্পন্দন হয়ে উঠেছে।
রোজা যেন জায়নের নিঃশ্বাস। এই ছোট্ট পরীটাকে ছাড়া জায়নের এক মুহূর্তও কাটে না। সকালে অফিসে বেরোবার সময়ও সে মেয়েকে বুকের সাথে শক্ত করে জড়িয়ে ধরে, গালে একের পর এক চুমু খেয়ে তারপর গাড়িতে ওঠে। অথচ গাড়ি চলতে শুরু করলেই তার বুকটা কেমন ফাঁকা ফাঁকা লাগে যেন নিজের শরীরের একটা অংশ পিছনে ফেলে এসেছে।

আরও গল্প পড়তে এখানে ক্লিক করুন 

অফিসে থেকেও বারবার ফোন করে খোঁজ নেয়, “আমার জানমাম্মা কী করছে?” কখনো ভিডিও কলে রোজাকে দেখে অফিসের ব্যস্ততা ভুলে যায়, কাজ ফেলে সারাক্ষণ পর্দার দিকে তাকিয়ে থাকে। সহকর্মীরা অবাক হয়ে হাসলেও জায়নের তোয়াক্কা নেই। তার কাছে অফিস, ব্যবসা, সবকিছুর চেয়ে বড় হয়ে উঠেছে সেই ছোট্ট ডাগর ডাগর চোখওয়ালা মেয়েটা।
বাড়িতে ফিরেই সে আর কারো সঙ্গে কথা বলে না, সোজা ছুটে যায় মেয়ে আর বউ এর কাছে । রোজা তার ড্যাডি কে দেখলেই খিলখিল করে হেসে ছুঁটে যায়, আর সেই হাসি শুনে জায়নের বুক ভরে যায় অদ্ভুত এক আনন্দে। মুহূর্তেই তাকে বুকের সাথে টেনে নেয়, চুলে নাকে মুখে একটার পর একটা চুমু খায়, যেন পৃথিবীর সবচেয়ে বড় ধন সে পেয়ে গেছে।

তিয়াশা একপাশে দাঁড়িয়ে মেয়েকে আর স্বামীকে দেখে মুগ্ধ হয়ে যায়। তার মনে হয়, মাতৃত্বের আসল সৌন্দর্য এটাই যখন নিজের রক্তমাংসের টুকরোকে বাবার বুকে এতখানি ভালোবাসায় ভিজতে দেখে। সেই দৃশ্য তার চোখে জল আনে, আবার অদ্ভুত শান্তিও জাগায়।
রাতে ঘুমানোর সময়ও জায়ন মেয়েকে কোনোভাবেই বিছানায় শুইয়ে রাখতে পারে না। সে জেদ করেই মেয়েকে নিজের বুকের ওপর শুইয়ে রাখে। তিয়াশা হাজার বুঝালেও সে শোনে না তার যুক্তি, “আমার কলিজার টুকরো আমার বুক ছাড়া ঘুমাবে কীভাবে?” মেয়ে যদি একটু কেঁদে ওঠে, জায়ন পাগলের মতো হয়ে যায়, তাড়াতাড়ি কোলে তুলে নিয়ে হাঁটতে থাকে, গান গাইতে থাকে, যতক্ষণ না আবার মিষ্টি করে ঘুমিয়ে পড়ে।

কখনো রাতে তিয়াশা ঘুমিয়ে পড়লে জায়ন একা বসে থাকে মেয়ের দিকে তাকিয়ে। ছোট্ট আঙুল, গোলাপি ঠোঁট, শান্ত ঘুমন্ত চেহারা সব দেখে তার চোখ ভিজে যায়। মনে মনে ভাবে, আল্লাহ তাকে কী অপূর্ব দান করেছেন! সেই মুহূর্তে মনে হয়, এই পৃথিবীতে যদি সত্যি জান্নাত থেকে কিছু নেমে এসে থাকে তবে সেটা হলো তার মেয়ে রোজা।
সকালবেলাটা যেন চৌধুরী ভিলায় এক আলাদা আনন্দময় পরিবেশে ভরে আছে। তবে এই আনন্দের মাঝেও মাঝে মাঝে ছোটখাটো ঝড় বয়ে যায়, আর সেই ঝড়ের কেন্দ্রবিন্দু সবসময় ছোট্ট রাজকন্যা রিহানা রোজা।
সেদিনের দৃশ্যটা ছিল অন্যরকম। ঘরের মার্বেল মেঝেতে চারদিকে ছড়ানো পাউডার, ভাঙা লিপস্টিক, আর ছোট্ট রোজার গোলাপি গাল বেয়ে নেমে আসা টপটপে পানি। পুরো মুখজুড়ে লিপস্টিকের দাগ, লম্বা চুলের ভেতর সাদা পাউডারের ছোপ। মুখ ফোলানো, ঠোঁট উল্টে কান্নায় ভেজা চোখ তাকে দেখে মনে হচ্ছিল যেন একখানা দুষ্টু কিন্তু মায়ামাখা পরীর প্রতিচ্ছবি।

তিয়াশা কোমরে দুই হাত দিয়ে দাঁড়িয়ে ছিলেন রুদ্র মূর্তিতে। তাঁর চোখে-মুখে রাগের ছাপ, তবু ভেতরে ভেতরে মায়ের বুকটা যে নরম হয়ে আসছে, তা লুকোনো যাচ্ছিল না। কড়া গলায় তিনি বললেন,
__” তুমি আবার দুষ্টুমি করেছো ? মানা করেছিলাম না এগুলো করবে না । বলো মানা করেছিলাম তো আমি।”
রিহানার কান্না যেন তিয়াশার বকাঝকার সঙ্গে সঙ্গে আরও বেড়ে গেল। কিন্তু তবুও আদো আদো গলায় ফোঁপাতে ফোঁপাতে বলল,

__” তলি মাম্মা।”
তিয়াশা চোখ ঘুরিয়ে বিরক্তিতে বলে উঠল,
__” ড্যাডির আস্কারা পেয়ে দিন দিন বাসা মাথায় তুলছ, আবার বলছো সরী মাম্মা।”
ঠিক তখনই পেছন থেকে ভেসে এল এক গম্ভীর সুর, যার শব্দ শুনেই তিয়াশার বুক কেঁপে উঠল।
__” তোর সাহস তো কম না , তুই আমার মেয়ে কে বকা বকি করছিস?”
তিয়াশা দীর্ঘনিঃশ্বাস ছেড়ে পেছন দিকে না ঘুরেই মনে মনে বলে উঠলেন, “হয়ে গেলো , গেলো আমার মেয়েটা আবারো গোল্লায়।”
তিয়াশার কানে হঠাৎই ভেসে এলো তার মেয়ের কান্নাভেজা আদো আদো সুর,

__”ড্যাডি, ড্যাডি মাম্মা আমায় বোতেছে।”
এই কথাটা বলেই ছোট্ট রাজকন্যা ছুটে গেল তার আশ্রয়—ড্যাডির কোলে। জায়ন একগাল প্রশস্ত হাসি ছড়িয়ে মেয়েকে কোলে তুলে নিল, আর মুহূর্তেই চোখে মুখে বৃষ্টি ঝরিয়ে দিতে লাগল চুমুর। যেন প্রতিটা চুমুর ভেতরেই তার জীবনের সব ভালোবাসা মিশে আছে। তিনি মৃদু গলায় মেয়েকে আঁকড়ে ধরে বলল,
__”মুখে এগুলো কি মাম্মা? আমার জানমান্মা কে বকেছে মাম্মা? দেখি আমার বাচ্চা কে কেন বকেছে, এত সাহস হলো কি করে মাম্মার?”

জায়নের কণ্ঠে গর্ব আর রাগের মিশেল। চোখে ভেসে উঠছে বাবার অটল ভালোবাসা। এই কথার ফাঁকে এক চোঁখ মেরে এগিয়ে গেল তিয়াশার দিকে।
__”তুই আবার আমার মেয়ে কে বকেছিস? তোকে বলেছি না বকবি না আমায় মেয়ে কে?”
ড্যাডিকে দেখে রিহানার কান্না আরও দ্বিগুণ হয়ে গেল। সেই কান্নায় যেন জায়নের বুক ভেঙে টুকরো টুকরো হয়ে যাচ্ছে। মেয়ের প্রতিটা অশ্রুতে তার ভেতরটা কেঁপে উঠছে। আবারও সে তিয়াশার দিকে ঘুরে কঠিন স্বরে বলে উঠলো,

__”জান তোকে বলেছি কিন্তু, আমার মেয়েকে কখনো বকবি না। কিন্তু তোর কানে তো কথা যায় না।”
রিহানা তখন আরও জোরে গলা ছেড়ে কাঁদতে কাঁদতে বলল,
__”মাম্মা থুব ব্যাদ ড্যাডি।”
জায়ন মেয়ের চোখের পানি মুছিয়ে দিতে দিতে আদরে ভরা কণ্ঠে শান্ত করলো,

__”আর কাঁদে না জানমান্মা। পাপা কষ্ট পাবে তো। আমার সোনা বাচ্চা না তুমি?”
তিয়াশা তখন কোমরে রাখা হাত নামিয়ে, ঠোঁট কুঁচকে দাঁড়িয়ে মেয়েকে দেখে রাগ ঝাড়ল,
__”ওরে বদমাইস মেয়ে, পাপাকে দেখে অমনি কান্নার আওয়াজ বেড়ে গেলো।”
তারপর মুখ ঘুরিয়ে জায়নের দিকে তাকিয়ে দাঁতে দাঁত চেপে বললো,
__”তোমার মেয়ে আমার সব লিপস্টিক খারাপ করে দিয়েছে, দেখতে পাচ্ছ না?”
জায়ন এবার আর কোন তর্কে জড়াল না। সে শান্তভাবে রিহানাকে নিয়ে গেল ড্রেসিং টেবিলের সামনে। তারপর ড্রয়ার খুলে আরও লিপস্টিক বের করল, ছোট্ট হাতের মুঠোয় গুঁজে দিল, আর একগাল হাসি দিয়ে বলল,
__”এই নাও জানমাম্মা, এগুলোও ভেঙে দাও।”

বাবার মুখ থেকে এমন অনুমতি পেতেই রিহানা তার ছোট্ট দাঁতগুলো ঝলক দেখিয়ে এক গাল খিলখিলিয়ে হাসল। সেই হাসিতে যেন পুরো ঘর ভরে গেল আলোতে। চার দেয়াল কাঁপিয়ে তুলল ছোট্ট কণ্ঠের সেই মধুর সুর। জায়ন সেই হাসি দেখেই মুগ্ধ হয়ে মেয়েকে আদরে ভরিয়ে দিল, কপালে ঠোঁট ছুঁইয়ে ফিসফিস করে বলল,
__”আমার মাম্মা তো। আমার জানের টুকরো, আমার কলিজা।”
কিন্তু এদিকে তিয়াশা রাগে গজগজ করতে লাগল। মুখ ঝামটি দিয়ে বিড়বিড় করে বলল,
__”ধ্যাত, ভালো লাগে না। যেমন বাবা, তেমন তার মেয়ে। অসহ্য।”
এই বলে বিরক্তিতে পা ঠুকতে ঠুকতে রুম থেকে বেরিয়ে গেল তিয়াশা।
জায়ন এক মুহূর্ত থামল। তারপর পকেট থেকে ফোন বের করে জেমসকে কল দিল। ফোন উঠতেই শান্ত অথচ দৃঢ় গলায় বলল,

__”জেমস, আমার দশটা বক্স লিপস্টিক লাগবে।”
ওপাশ থেকে বিস্মিত গলায় প্রশ্ন এলো,
__”এত লিপস্টিক দিয়ে কি করবেন স্যার?”
জায়ন তখন এক দীর্ঘ নিঃশ্বাস ছেড়ে খিলখিল করে হেসে, কোলে থাকা খিলখিল করা মেয়ের মাথায় হাত বুলিয়ে, ঠোঁটে ঠোঁট ছুঁইয়ে বলল,
__”কিছু বক্সের লিপস্টিক আমার মেয়ে ভাঙবে… আর বাকিগুলো তোর ভাবির রাগ ভাঙানোর জন্য।”
ফোন কেটে রাখতেই তার চোখ ভিজে উঠল ভালোবাসায়। টেবিলে ফোন রেখে মেয়ের দিকে তাকিয়ে বলল,
__”মাম্মা, এখন তো শাওয়ার নিতে হবে, কাম জান চলো।”
রিহানা হাসতে হাসতে বাবার গলা জড়িয়ে আদুরে কণ্ঠে বলল,
__”ইয়েত ড্যাডি।”

তার সেই ছোট্ট হাসি যেন সারা পৃথিবীর সবচেয়ে পবিত্র সুর। জায়ন তাকে বুকে আঁকড়ে নিয়ে হাঁটতে শুরু করল। যেন মেয়ের প্রতিটা চাওয়া পূরণ করাই তার জীবনের সবচেয়ে বড় তৃপ্তি।
জায়ন বাসায় থাকলে যেন পুরো পৃথিবী থমকে যায়। তার কাছে তখন অফিসের কাজ, ব্যবসার দায়িত্ব সবকিছু গৌণ। তার পুরোটা মন, ভালোবাসা, ব্যস্ততা জুড়ে থাকে একমাত্র তার ছোট্ট রাজকন্যা। খাওয়ানো, শাওয়ার দেওয়া, চুল আঁচড়ে দেওয়া, ঘুম পাড়ানো প্রতিটা কাজে যেন সে স্বর্গ খুঁজে পায়। তার কাছে মেয়ের সাথে কাটানো এই মুহূর্তগুলোই আসল জীবন, আসল আনন্দ।

এই আড়াই বছরে খান পরিবারের ভেতরে ঘটেছে অনেক ঘটনা, অনেক পালাবদল। হয়তো এটাই জীবনের নিয়ম, প্রতিটি সময়ের সাথে নতুন গল্প যোগ হয়, পুরোনো গল্পের ভাঁজে ভাঁজে জমে ওঠে স্মৃতি।
আকাশ আর আরোহীর কোল ভরে উঠেছে তাদের ছোট্ট পুত্রসন্তান আরিয়াসকে নিয়ে। সেই ছেলের মিষ্টি হাসি আর দুষ্টুমিতে যেন ঝলমল করে ওঠে পুরো খান পরিবার। সকাল হোক কিংবা সন্ধ্যা, বাড়ির প্রতিটি কোণে আরিয়াসের টুকটুক পায়ের শব্দ, কচি কণ্ঠের হাসি আর কান্না ভেসে আসে। দাদু আশরাফ খান আর দাদি আয়েশা বেগম যেন নাতির চারপাশেই দিন-রাত ডুবে থাকেন। তাদের জীবনের সবচেয়ে বড় আনন্দ এখন এই ছোট্ট প্রাণটিকে ঘিরেই।
আকাশও নিজেকে নতুন রূপে সাজিয়েছে। এখন সে ঢাকা হাসপাতালের খ্যাতনামা হার্ট সার্জন। প্রতিদিন শত শত রোগীর বুকের ব্যথা সারিয়ে তোলে সে, আর ফিরে এসে নিজের বুক ভরে নেয় ছেলের হাসিতে। ব্যস্ত হাসপাতালের ক্লান্তি আর দায়িত্ব ভুলিয়ে দেয় ছোট্ট আরিয়াসের দুটি হাতের টান। আরোহীও নতুন মাতৃত্বে নিজেকে মেলে ধরেছে। আরিয়াস পৃথিবীতে আসার পরপরই তাকে বাসায় তুলে নিয়েছিল আকাশ যেন প্রতিটি মুহূর্তে তার স্ত্রীকে পাশে রাখে, প্রতিটি প্রয়োজনে তাকে আগলে রাখে।

কিন্তু এই পরিবারের আরেক সদস্য যে একসময় ছিল সবার প্রাণকেন্দ্র, হাসি-ঠাট্টা, আড্ডা আর উচ্ছ্বাসের কেন্দ্রবিন্দু সে এখন একেবারেই বদলে গেছে। মারিয়া।
যে মেয়ের চঞ্চলতায় মেতে উঠত পুরো পরিবার, যে বন্ধুদের সঙ্গে আড্ডা দিতো, রাস্তায় দাঁড়িয়ে চটপটি খেতো, সবার সাথে খুনসুটি আর হাসিতে ভরিয়ে তুলত চারপাশ সে আজ যেন সম্পূর্ণ অন্য মানুষ। কলেজ আর বাসার বাইরের জীবনে আর তার কোনো আগ্রহ নেই। নেই বন্ধুদের সঙ্গে দেখা করা, নেই আড্ডার গল্প, নেই বাইরে ঘোরাফেরার মজা। কেমন করে যেন এক গভীর নিঃসঙ্গতায় নিজেকে গুটিয়ে নিয়েছে সে।
কিন্তু শুধু তার অভ্যাস আর জীবন নয়, বদলেছে তার রূপও। সতেরোর কিশোরী আজ যৌবনের দীপ্তিতে উজ্জ্বল এক তরুণী। তার চোখে মুখে এসেছে এক অদ্ভুত পরিপক্বতা, শরীর জুড়ে নারীত্বের মায়া। কোমর ছোঁয়া লম্বা চুল, ডাগর ডাগর চোখ যে চোখগুলো দীর্ঘ প্রতীক্ষায় অপেক্ষা করছে কারো জন্য। হয়তো তিয়াশার পরেই পরিবারের সবচেয়ে চোখে লাগার মতো সুন্দরী মেয়ে সে।

মারিয়া একা বসে থাকে নিজের ঘরে। হাঁটু গেড়ে বসে থাকে বিছানায়। ফোনের স্ক্রিনে ভেসে ওঠে এক পরিচিত মুখ রায়ানের WhatsApp এর ডিপি। চোখে জল ভেসে ওঠে, বুকের ভেতর জমে থাকা সব অভিমান, সব অপেক্ষা কান্নায় ভিজিয়ে ফেলে। তার ঠোঁট কাঁপে, বুক ফেটে শব্দ বেরিয়ে আসে,

__” রায়ান ভাই তুমি বলেছিলে যেদিন ‘ মাণে’ শব্দটা আর প্রয়োজন পড়বে না সেদিন আমি সব মানের উওর পাবো। এখন আমার আর মানে শব্দটার প্রয়জন পড়বে না কারণ আমি সব উওর পেয়ে গেছি। কিন্তু সেই উওর তোমাকে বলার সুযোগ তুমি কেন দিচ্ছ না রায়ান ভাই? কেন? বিদেশে যাওয়ার পর কেন তোমার এই শাকচুন্নির একটাও খবর নিলে না? কেন এত অবহেলা? আমি যতবার তোমার সঙ্গে যোগাযোগ করার চেষ্টা করেছি তুমি ততবার আমায় উপেক্ষা করেছো, অবহেলা করেছো কেন? আমি এই আমার এক পায়ের নূপুরের ভার আর বইতে পারছি না। হয় নিজে এসে এই ভার কমিয়ে দাও নইলে আমি খুলে ফেলব এই পায়ের নূপুর।”

শব্দের সঙ্গে সঙ্গে ভেসে আসে তার বুক ফাটা কান্না। হাতের মোবাইলের স্ক্রিন ঝাপসা হয়ে আসে চোখের জলে। প্রতিটি অশ্রুবিন্দু যেন বুকের গভীর থেকে বেরিয়ে আসা আকুতির বহিঃপ্রকাশ।
কিন্তু মারিয়া জানে না তার মতোই বা হয়তো তার থেকেও শতগুণ বেশি অস্থির, ছটফট করছে সমুদ্র পেরিয়ে বহু দূরের শহরে যুক্তরাষ্ট্রের ক্যালিফোর্নিয়ার লস এঞ্জেলেসে রায়ান।
তার রূপ এমন যে বর্ণনা শেষ করলেও যেন বাকি থেকে যায়। উজ্জ্বল ফর্সা রঙ, সুঠাম দেহ, ঘাড় ছোঁয়া চুল সবচেয়ে বড় কথা সামনের চুলগুলো সবসময় কপালের কাছে নেমে আসে, যা তাকে করে তোলে আরও আকর্ষণীয়। চারপাশের বহু মেয়ের চোখে ঝলসে ওঠে তার রূপ, তার আভা। তবু রায়ানের দৃষ্টি, তার হৃদয়, তার সমস্ত অনুভূতি শুধু এক নামেই বাস করে,
__শাকচুন্নী’। তার ‘মারিয়া’।

অনন্যার এখন আট মাসের ভরা প্রেগন্যান্সি চলছে। শরীরের ভারে হাঁটাচলা কষ্টকর হলেও, চোখে মুখে মাতৃত্বের এক অদ্ভুত জ্যোতি ছড়িয়ে আছে। সে সোফায় বসে আছে, আর তার পাশে বসা ছোট্ট রিহানা। রিহানা অনুর গোল পেটের উপর ছোট্ট হাত বুলিয়ে দিচ্ছে, আর মিষ্টি সুরে আদো আদো করে বলছে,
__” মিমি মাম্মা বলেতে এতানে বেবি আতে আমার মত, আমি বেবি দেতবো মিমি।”
এই নিষ্পাপ কথায় চারদিক ভরে ওঠে এক অদ্ভুত আনন্দে। অনন্যা মুচকি হেসে রিহানার গালে চুমু খেলো, যেন নিজের সমস্ত ভালোবাসা ওই একটুখানি স্পর্শেই ঢেলে দিলো। তারপর নরম গলায় বলল,
__” বেবি কে আর কয়দিন পরে দেখতে পারবে মাম। বেবি এখনো ঘুমোচ্ছে।”
এমন সময় পেছন থেকে ভেসে এলো ইউভির গলা,

__” আমার কলিজা কোই রে, আমার কলিজার বারবি টা কে নেবে?”
ইউভি যেন তার ভাগ্নীর সবচেয়ে বড় ভক্ত। প্রতিদিন বাসায় ফিরলেই তার হাতে থাকে নতুন কিছু, বড় শখ করে রিহানার জন্য কিনে আনে খেলনা। আজও হাতে ঝকঝকে বারবি ডল। আর খেলনাটা দেখেই রিহানা যেন পাখির মত উড়ে ছুটে গেলো তার মামুর দিকে, এক লাফে কোলে উঠে আদো কণ্ঠে বলে উঠলো,
__” মামু এতা তো আমার।”
ইউভি স্নেহভরা চোখে তাকিয়ে ভাগ্নীর গালে চুমু খেলো। বলল,

__” হ্যা মা এটা তোমার।”
এই দৃশ্য দেখে ড্রয়িং রুমে বসা মেহজাবীন বেগমের বুকটা হাহাকার করে উঠলো। স্নেহভরা অভিযোগের সুরে বললেন,
__” তোদের এই ছেলে গুলো জ্বালায় আর তোর বড় আব্বুর জ্বালায় আমার কলিজা কে একটু কোলে নিতে পারি না।”
তার কথার সঙ্গে সঙ্গেই রুহেনা বেগম হেসে সায় দিলেন,

__” ঠিক বলেছো অপা, আমার রাজমনি কে একটু নিতে পারী না। আমাদেরও তো ইচ্ছা হয়।”
ইউভি মিষ্টি হেসে রিহানার দিকে তাকিয়ে বললো,
__” মা তোমার নানু আর দাদুর কাছে যাও, আমি তোমার মিমি কে উপরে দিয়ে আসি।”
রিহানা এক গাল হেসে মামুর কোল থেকে নেমে নানু আর দাদুর কাছে গিয়ে বলল,
__” আমাতে আদল কলো নানু দাদু।”
এই কথা শোনা মাত্রই মেহজাবীন বেগম তাকে জাপটে কোলে তুলে নিলেন, যেন বুকের ভেতর মিশিয়ে নিলেন তার কলিজার টুকরোকে।

এদিকে ইউভি সযত্নে অনন্যাকে কোলে তুলে নিলো। অনন্যার শরীরের ভারে তার মুখ লজ্জায় লাল হয়ে উঠল, লাজুক হাতে ইউভির গলা জড়িয়ে ধরলো। ধীর পায়ে সিঁড়ি বেয়ে উপরে উঠতে লাগলো তারা।
ঠিক সেই সময় সিঁড়ি বেয়ে নিচে নামলো তিয়াশা। মেয়েকে দেখে এগিয়ে গিয়ে কোমল গলায় বলল,
__” জানমাম্মা চলো ঘুমানোর সময় হয়ে গেছে। এখন খেয়ে ঘুম পড়বে।”
কিন্তু রিহানা দাদুর বুকে মুখ গুঁজে ফিসফিস করে বলল,
__” আমি ড্যাডির কাতে দুমাবো, মাম্মা।”

মেয়ের এই একগুঁয়েমি দেখে তিয়াশা বিরক্তি মেশানো চোখে তাকিয়ে বলল,
__” ড্যাডির আসতে দেরি হবে, আসো আমি ঘুম পরিয়ে দেব, তার আগে খেতে হবে।”
এমন সময় রুহেনা বেগম মৃদু হেসে স্নেহমাখা গলায় বললেন,
__” যাও রাজমনি খেয়ে নাও তারাতারি, নইলে তোমার বাবা এসে আবার বকবে সবাইকে।”
শেষ পর্যন্ত অনেক আদর-আবদার করে রিহানাকে নিয়ে যাওয়া হলো খাওয়াতে।
অনেকটা জোর করেই অবশেষে রিহানাকে ঘুম পাড়ানো হলো। বাড়ির প্রতিটি কোণে তখনো যেন তার পায়ের টুপটাপ শব্দ আর মিষ্টি হাসির ছাপ লেগে আছে, কিন্তু ছোট্ট রাজকন্যা অবশেষে বিছানায় নিশ্চুপ হয়ে শুয়ে পড়েছে।
রাত তখন দশটা বেজে পাঁচ। দিনের ক্লান্তি নিয়ে জায়ন অফিস থেকে ফিরে সোজা নিচের বেসিনে হাত মুখ ধুয়ে যখন উপরে উঠে নিজের রুমে ঢুকল, প্রথমেই চোখে পড়ল তার প্রাণের টুকরো ঘুমিয়ে আছে বিছানায়। বুক ভরে উঠল এক অদ্ভুত শান্তি আর তৃপ্তিতে। ধীরে ধীরে এগিয়ে গিয়ে তার কপালে, গালে, মুখের উপর পড়ে থাকা চুল সরিয়ে অজস্র চুমু এঁকে দিল সে। যেন সারাদিনের সব ক্লান্তি মিলিয়ে গেল এই একটুখানি স্পর্শেই।
পেছন থেকে তিয়াশার স্নিগ্ধ কণ্ঠস্বর ভেসে এল,

__” তোমার আদরে মেয়ে উঠে যাবে তো।”
জায়নের কানে কথাটা যেতেই সে আরেকটা নরম চুমু কপালে এঁকে নিয়ে এবার তিয়াশার দিকে এগিয়ে এল। সাদা শার্ট আর দিনের ক্লান্তি ভরা মুখে তখনো চোখেমুখে ছড়ানো এক প্রশান্তির আলো। তিয়াশার ঢেউ খেলানো কোমর জড়িয়ে ধরে ভালোবাসার এক অদম্য তাড়নায় ঠোঁটে বসিয়ে দিল গভীর চুমু। তিয়াশাও তার গলা জড়িয়ে নিল, যেন দিনের সব অপেক্ষা এক মুহূর্তে মিলিয়ে গেল। তারপর জায়ন তার ঠোঁট ছেড়ে নরম হাতে স্ত্রীর মুখ থেকে চুল সরিয়ে দিতে দিতে ভরাট কণ্ঠে জিজ্ঞেস করল,

__” মেয়ের কোন অসুবিধা হয়নি তো?”
__” না।”
__” মেয়ে ঠিক ঠাক খেয়েছে?”
__” হ্যাঁ।”
__” কখন ঘুমিয়েছে?”
__” একটু আগেই।”
জায়ন মুচকি হেসে তাকাল স্ত্রীর দিকে, সেই হাসিতে ছিল খুনসুটি মিশে থাকা এক গভীর প্রেম,
__” আর আমার জান সে কি খেয়েছে না কি না খেয়ে আছে?”
তিয়াশা ঠোঁট ফুলিয়ে একটু অভিমান মেশানো ভঙ্গিতে জায়নের শার্টের বোতাম খুলতে খুলতে বলল,
__” জান কে তো ভুলেই যাও, মেয়ে কে পেয়ে জানের কথা তো মনেই পড়ে না। হুঁ।”
জায়ন হেসে ফেলল, তিয়াশাকে একেবারে কোলে তুলে সোফার দিকে নিয়ে যেতে যেতে গলায় নিখাদ মমতায় ভরা স্বর ফুটিয়ে বলল,

__” মেয়ে আর মেয়ের মা দুজনেই আমার কাছে ছোট বাচ্চা জান। তোরা দুজনেই আমার দুর্বলতা, তাই এসব বলবি না। তোদের নিয়েই আমার পৃথিবী। আর তোর জন্যই আমি আমার রাজকন্যাকে পেয়েছি, তাই তোর জন্য আমার ভালোবাসা আরো গভীর থেকে গভীর হয়েছে, সেটা তুই বুঝিস না?”
তিয়াশা তার কোলে বসে বুকের ভেতর মুখ লুকিয়ে দিল। কণ্ঠস্বর ভারী করে ভালোবাসায় ভরা ফিসফিসে গলায় বলল,

__” আই লাভ ইউ আমার রাজকন্যার ড্যাডি।”
জায়ন নরম হাতে তিয়াশার চিবুক ছুঁয়ে নিজের দিকে ফিরিয়ে নিল। চোখে ভরা তীব্রতা আর আকাঙ্ক্ষা নিয়ে হাসল,
__” এরকম করে তো মানব না বেইব। আমার এখন আমার জান কে চাই।”
তিয়াশা লজ্জা পেয়ে লাল হয়ে গিয়ে ধীরে বলল,
__” তোমার তো রোজই আমাকে চাই, কিন্তু একটু আগেই মেয়ে ঘুমিয়েছে, আমাদের আওয়াজে উঠে যাবে।”
কিন্তু জায়নের কাছে সেই আপত্তি যেন আদুরে অজুহাত ছাড়া আর কিছু নয়। এক ঝটকায় নিজের শার্টের বাকি বোতামগুলো খুলে শার্টটা ছুঁড়ে ফেলে দিয়ে গভীর চুম্বনে তিয়াশার ঠোঁট ডুবিয়ে দিল। চুমুর ফাঁকে নিঃশ্বাস কাঁপিয়ে হেসে উঠল,

__” মেয়ে জানে মাম্মা আর ড্যাডি এখন রোমান্স করবে, তাই উঠবে না।”
তিয়াশাও নিজেকে আর আটকে রাখতে পারল না। জায়নের উষ্ণতা, তার দমবন্ধ করা চাহনি, আর কণ্ঠের উত্তেজনা তাকে যেন পুরোপুরি আচ্ছন্ন করে ফেলল। কাঁপতে কাঁপতে তিয়াশা জায়নের চুল দু’হাতে শক্ত করে আঁকড়ে ধরল। নিজের ঠোঁট ধীরে ধীরে সরিয়ে এনে জায়নের কানে, গলায়, ঘাড়ের চারপাশে একের পর এক ভেজা চুমু এঁকে দিতে লাগল। সেই মুহূর্তে ঘরের প্রতিটি দেয়াল যেন তাদের হৃদস্পন্দনের সঙ্গে তাল মিলিয়ে কেঁপে উঠছিল।
জায়ন তখন আর নিজের ভেতরের আগুন থামিয়ে রাখতে পারল না। পাগলের মতো তিয়াশাকে বুকে শক্ত করে চেপে ধরল। তীব্র আকাঙ্ক্ষায় তার হাত কাঁপতে লাগল, যেন প্রতিটা স্পর্শে প্রকাশ পাচ্ছিল তার সমস্ত দমিয়ে রাখা উন্মাদনা। এক টানে সরিয়ে দিল তিয়াশার শাড়ির আঁচল, ঝড়ের মতো ছুঁড়ে ফেলল তার ব্লাউজ। চোখে তখন শুধু একটাই পিপাসা তিয়াশাকে নিজের ভেতর পুরোটাই মিশিয়ে নেওয়া।

কামনার ঝড়ে ভেসে গিয়ে কাপা কণ্ঠে জায়ন হঠাৎ ফিসফিস করে উঠল,
__” বেইব প্লীজ আই এম টু মাচ আউট অফ কন্ট্রোল নাউ। ওহ গড ইউ আর সো ফা*কিং হট বেইব।”
তিয়াশা তখন জায়নের বুকে ঠোঁট রাখল, উন্মাদনার সুরে এক নিঃশ্বাসে বলে উঠল,
__” এণ্ড ইউ আর দা রিজন ড্যাডি আই এম হট।”
জায়নের চোখ রক্তিম উন্মাদনায় জ্বলতে লাগল। গলার স্বর ভারী হয়ে উঠল তীব্র তৃষ্ণায়,
__” ওহ বেইব নাউ আই এম ফা*কিং ক্রেজি।”
তিয়াশার কণ্ঠস্বরও কেঁপে উঠল কামনার ঝড়ে,
__” ইয়েস ড্যাডি ইয়েস।”
শরীর মন আবেগ সব একাকার হয়ে গেল। জায়ন আবারও হাঁপাতে হাঁপাতে বলে উঠল,
__” ওহ বেইব।”

তারপরেই পুরো ঘর ভরে উঠল তাদের একসাথে থাকার ঝড়ো উন্মাদনায়। বাতাসে মিশে গেল জায়নের অস্থির গোঙানি আর তিয়াশার চিৎকারমাখা উন্মাদনার সুর। প্রতিটি মুহূর্তে তারা আরও গভীরভাবে মিশে যাচ্ছিল একে অপরের ভেতরে, প্রতিটি স্পর্শে ভাঙছিল সমস্ত বাঁধন।
এদিকে, বিছানার অপর প্রান্তে তাদের রাজকন্যা এখনো নিষ্পাপ ঘুমে ডুবে আছে। ছোট্ট নিঃশ্বাসে তার শরীর ওঠা নামা করছে, অথচ মা বাবার এই উন্মাদনায় ভরা মিলনের মুহূর্তে তার দিকে কারো আর কোনো খেয়াল নেই। যেন গোটা পৃথিবী থেমে আছে শুধু জায়ন আর তিয়াশার জন্য, আর তাদের ভালোবাসার আগুনে জ্বলে উঠছে প্রতিটি দেয়াল, প্রতিটি শ্বাস, প্রতিটি সেকেন্ড।

আরেকবার যেন পুরো ঘর ভরে গেল তাদের হাসি, মিষ্টি অভিমান, আর অটুট ভালোবাসার গভীর আবেগে। বাইরে রাত যত গভীর হলো, ভেতরে তাদের হৃদয়ের স্পন্দন একাকার হয়ে উঠল, আর ছোট্ট রাজকন্যার ঘুমন্ত শ্বাস যেন সাক্ষী হয়ে রইল মা বাবার এই অব্যক্ত ভালোবাসার নীরব উৎসবে।
চৌধুরী বাড়ির ভেতর সকালটা তখন ধীরে ধীরে প্রাণবন্ত হয়ে উঠছে। আঙিনা জুড়ে রোদ এসে পড়েছে, সাদা মার্বেলের মেঝেতে ছড়িয়ে দিয়েছে এক অপূর্ব ঝকঝকে উজ্জ্বলতা। চারদিকের বাতাস ভরে আছে রান্নাঘরের শব্দ আর গন্ধে কোথাও হাঁড়িতে দুধ ফুটছে, কোথাও মশলার ঝাঁঝালো ঘ্রাণ ভেসে আসছে কড়াই থেকে। কারও হাতে রুটি ফুলছে, কারও হাতে ভাজা পেঁয়াজ সোনালি হচ্ছে। সকালের চা আর পরোটা সবজির গন্ধ পুরো বাড়িটাকে ভরিয়ে তুলেছে।

এ সময় বাড়ির পুরুষেরা সকালের নাস্তা সেরে যে যার কাজে বেরিয়ে গেছে। কেবল প্রান্তিক সাহেব এখন আর বাইরে যান না—বয়সের ভারে অফিস থেকে অবসর নিয়েছেন। সকালের এ জমজমাট দৃশ্যের মাঝেই হঠাৎ কেঁদে উঠল বাড়ির ছোট্ট রাজকন্যা রিহানা। একটানা কান্নায় তার চোখ ভিজে যাচ্ছে, ঠোঁট ফুলে উঠছে, গলায় কেবল একটা ডাক,
__” ড্যাডি, ড্যাডি।”
তখন অবশ্য জায়ন অফিসে গেছে। বাড়ির সব বউ মিলেও তার কান্না থামাতে পারছে না। মেহজাবীন বেগম, রুহেনা বেগম, সুরাইয়া বেগম তিনজনেই মায়ায় ভরা কণ্ঠে ডাকছেন, হাত বুলিয়ে দিচ্ছেন, তবুও মেয়েটা থামছে না।
তিয়াশা তখন মহা বিপদে পড়ে গিয়ে কোলের মেয়েকে বারবার আদর করে বলছে,
__” জানমাম্মা কি হয়েছে মাম্মা কে বলো? তুমি কান্না করছো কেন?”
মেহজাবীন বেগমের চোখও ভিজে আসছে, ভরা গলায় বলে উঠলেন,
__” আমার কলিজা পেট ব্যাথা করছে নাকি? কি হয়েছে, আমাদের তো কষ্ট হচ্ছে, তোমার চোখে পানি দেখে।”
কিন্তু কোনো জবাব নেই। রিহানার ছোট্ট মুখ থেকে বেরোচ্ছে কেবল একটাই শব্দ,
__” ড্যাডি, ড্যাডি।”

সুরাইয়া বেগম চিন্তিত স্বরে বললেন,
__” ও তিউ, জায়ন কে ফোন দে। নইলে দিদিভাই তো কান্না বন্ধ করবে না।”
তিয়াশা আর দেরি না করে ফোন হাতে তুলে নিল। কল ধরতেই তিয়াশা উত্তেজিত কণ্ঠে বলল,
__” তোমার মেয়ে সেই সকাল থেকে কেঁদে যাচ্ছে, আর ড্যাডি ড্যাডি করে যাচ্ছে। কান্না থামতেই চাইছে না।”
ওপাশ থেকে জায়নের কণ্ঠ যেন বজ্রপাতের মতো গর্জে উঠল,
__” সকাল থেকে কাঁদছে মেয়ে আর তুমি এখন বলছো? একটু আগেও ফোন দিলাম, কই ছিলে? ফোন ব্যবহার করো কেন যদি কল দিয়ে না পাই?”
রাগে তিয়াশারও গলা কেঁপে উঠল,

__” সারাক্ষণ তো মেয়ের পেছনে চৌকিদারি করতে হয়, তাহলে ফোন ব্যবহার কি করে করবো? আমার কি দশটা হাত আছে?”
কিন্তু এক মুহূর্তে জায়নের সুর নরম হয়ে এল। গলা নিচু করে ভেজা সুরে বলল,
__” জান, আমি ওভাবে বলিনি তো। আচ্ছা, তুমি রাগ কোরো না। আমি এক্ষুনি আসছি।”
তিয়াশা আর কিছু না বলে রাগে ফোন কেটে দিল।
কিছুক্ষণ পর জায়ন বাড়ি ফিরে এল। দরজা পেরিয়ে ঢুকেই চোখে পড়ল তার রাজকন্যার মুখ কান্নায় ফুলে গেছে, চোখ লাল, ঠোঁট কাঁপছে। বুকটা যেন হুহু করে উঠল। তাড়াতাড়ি এগিয়ে গিয়ে হাঁটু গেড়ে মেয়ের চোখে চোখ রেখে কণ্ঠ ভরা মায়ায় জিজ্ঞেস করল,

__” হোয়াট হ্যাপেন জানমাম্মা? আমার জান মুখ ফুলিয়ে কেন বসে আছে?”
রিহানা ছোট্ট ঠোঁট ফুলিয়ে কান্না করতে করতে গুমরে বলল,
__” ড্যাডি আই দোন টক তু ইউ।”
এই কথায় জায়ন যেন এক মুহূর্তের জন্য স্তব্ধ হয়ে গেল। তার কলিজার টুকরো কেন এমন রাগ করেছে সে বুঝতেই পারছে না। দু’হাত বাড়িয়ে মেয়ের গাল ধরে কাঁপা কণ্ঠে বলল,
__” ড্যাডি তো তোমার সঙ্গে কথা না বলে থাকতে পারবে না, জানমাম্মা।”
রিহানা তবুও মুখ ফিরিয়ে রাগে বলল,
__” ড্যাডি তো আমায় আল আদল করে না।”
কথাটা শুনেই জায়নের চোখ বিস্ফোরিত। পাশে দাঁড়ানো তিয়াশা বিরক্তির ভঙ্গিতে মুখ ঘুরিয়ে নিচু স্বরে বিড়বিড় করল,

__” সকাল থেকে মেয়ের মুখ থেকে একটা কথা বের করতে পারলাম না, কিন্তু বাপ আসতেই বুলি ফুটছে।”
মেয়ে আর বাবার এই খুনসুটি দেখে তিয়াশা চোখ উল্টে নিল, তবে বুক ভরে উঠল এক অদ্ভুত ভালোবাসায়।
জায়ন অসহায় গলায় আবার বলল,
__” তুমি তো ড্যাডির জান, তোমায় ছাড়া ড্যাডি আর কাউকে আদর করে না মাম্মা।”
অমনি মেয়ের কান্না আবার বেড়ে গেল। ফুঁপিয়ে ফুঁপিয়ে রিহানা কাঁপা গলায় বলে উঠল,
__” তুমি তো মাম্মাকে আদল কলো, তুমি তো আমার ড্যাডি, তাহলে তালকে লাতে মাম্মা তোমায় তেন ড্যাডি বোলতিল?”

মেয়ের মুখ থেকে এমন কথা বেরোতেই জায়ন আর তিয়াশা দু’জনের মুখ হাঁ হয়ে গেল। চোখ বড় বড় হয়ে একে অপরের দিকে তাকিয়ে রইল। যেন হঠাৎ আকাশ থেকে পড়ল দু’জনেই। ছোট্ট মেয়েটার কানে যে তাদের রাতের ভালোবাসার খুনসুটি পৌঁছে গেছে, সেটা ভেবেই তিয়াশার গাল গরম হয়ে উঠল, মাথা নিচু হয়ে গেল।
অবশেষে আমতা আমতা করে জায়ন জবাব দিল,
__” তু তুমি ভুল শুনেছ মাম্মা, তোমার মাম্মা তো তোমার নানার জামাইকে ডাকছিল জান।”
মনের ভেতরে তখন দু’জনেরই অদ্ভুত অনুভূতি হাসতেও ইচ্ছে করছে, আবার লজ্জায় চোখ নামিয়েও রাখতে হচ্ছে। তিয়াশা মনে মনে দীর্ঘশ্বাস ফেলে ভাবল,
___” ওরে আমার মেয়ে, বাবা কে নিয়ে আমার সঙ্গে হিংসে করছে! আমার বর আর শুধু আমার নেই, যেটুকু আছে, সেটুকু নিয়েও মেয়ের হিংসে। একদম বাপের মতো হয়েছে।”
কিন্তু রিহানার কান্না তবুও থামছে না। আবারও ছোট্ট মুখে অভিযোগ ছুঁড়ে দিল,
__” তোমাল বেবি তো আমি ড্যাডি, তাহলে মাম্মা কে তেন বেবি বলো। তুমি পঁচা ড্যাডি।”
শব্দগুলো শুনে জায়ন আবার থ হয়ে গেল। কী বলবে, কীভাবে বোঝাবে বুঝে উঠতে পারল না। তবুও এক মায়াভরা হাসি দিয়ে বলল

__” তুমি আমার লিটল বেবি, আর তোমার মামা হলো আমার বিগ বেবি জান। নাউ ড্যাডির কোলে আসো।”
হাত বাড়িয়ে দিল মেয়ের দিকে। কিন্তু রিহানা এখনো রাগ ধরে রেখে ছোট্ট মুখে বলল
__” লো আমি লাব না।”
মেয়ের এই অভিমান জায়নের বুক কেটে গেল। একমাত্র এই রাজকন্যার কাছেই সে সবচেয়ে দুর্বল। তার রাগ ভাঙানোই এখন জীবনের বড় কাজ মনে হচ্ছে। তাই মৃদু হাসি দিয়ে আবারও আদরে ভরা স্বরে বলল,
__” কাম মাম্মা, আর রাগ করে না। তুমি আমার লাইফের সব থেকে বেস্ট গিফট। আর তোমার মাম্মা আমায় গিফটটা দিয়েছে। তোমাদের ছাড়া আমি নিঃস্ব সোনা। তোমার মাম্মা আমার জান বাচ্চা, আর তুমি হলে আমার জান মাম্মা। নাউ কাম জানমাম্মা, ড্যাডি ওয়ান্টস টু কাডল ইউ।”
অবশেষে রাগ গলে গেল। ছোট্ট পায়ে বিছানা থেকে নেমে এল রাজকন্যা। চোখের পানি মুছতে মুছতে হেঁটে এসে বাবাকে জড়িয়ে ধরে বলল,

__” আলাবু ড্যাডি।”
জায়ন মেয়েকে শক্ত করে কোলে তুলে নিয়ে চুমুতে ভরিয়ে দিল। আবেগে গলা কেঁপে উঠল,
__” আই লাভ ইউ টু জানমাম্মা। তুমি কান্না করলে ড্যাডি সব থেকে বেশি কষ্ট পায় সোনা।”
তারপর একটু মাথা ঘুরিয়ে তিয়াশার দিকে হাত বাড়িয়ে ডাকল,
__” কাম জান।”
তিয়াশা এক গাল হেসে এগিয়ে এল। জায়ন এক হাতে মেয়েকে জড়িয়ে আছে, আরেক হাতে তিয়াশাকে টেনে এনে দু’জনকেই শক্ত করে আঁকড়ে ধরল। তাদের কপালে আদরের চুমু এঁকে ভেজা গলায় ফিসফিস করে বলল,
__” তোমরা আমার দুনিয়া।”
এক মুহূর্তে তিনজনের হৃদয় একসাথে ধ্বনিত হল, হাসি আর চোখের জলে ভরে উঠল চৌধুরী বাড়ির সকালের সেই অপূর্ব আবহ।

দেখতে দেখতে আরো দেড় বছর কেটে গেলো চৌধুরী ভিলার ঝলমলে প্রাসাদোপম আঙিনায়। এর মধ্যেই অনন্যার কোল ভরে উঠেছে দুই ফুটফুটে সন্তান দিয়ে এক রাজকন্যা আর এক রাজপুত্র। যেন ইতিহাসের পুনরাবৃত্তি, কারণ একসময় যেভাবে তার মা যমজ সন্তানের জন্ম দিয়েছিলেন, ঠিক সেভাবেই অনন্যার কোলেও এসেছে টুইন বেবি। মিষ্টি নাম রাখা হয়েছে মেয়ের নাম ইনিয়া, আর ছেলের নাম অনয়। এখন ওদের বয়স মাত্র এক বছর চার মাস। আর এই বাড়ির প্রথম রাজকন্যা—তিয়াশা আর জায়নের কন্যা—আজ চার বছর চার মাস বয়সী। তার হাসি আর টুকটুকে মুখশ্রীতে যেন গোটা বাড়িটাই আলোয় ঝলমল করে থাকে।

এই আনন্দের মাঝেই আজকে আরও এক নতুন উত্তেজনার দিন। কারণ চৌধুরী ভিলার ছোট ছেলে, রায়ান, ফিরছে দীর্ঘ পাঁচ বছর পর। পুরো পরিবারে আজ যেন উৎসবের আবহ। আর আগামীকালই জায়ন আর তিয়াশার বিয়ের পাঁচ বছরের অ্যানিভার্সারি যে অদ্ভুত কাকতালীয় মুহূর্ত সবাইকে আরও বেশি আবেগী করে তুলেছে। সত্যি, দেখতে দেখতে কেটে গেলো পাঁচটা বছর। অথচ জায়ন আর তিয়াশার ভালোবাসা এক চিলতে ফিকে হয়নি—বরং যতদিন যাচ্ছে, ততই গভীর হচ্ছে, ততই অদম্য হয়ে উঠছে।

আজ রায়ান ফেরার খুশিতে রান্নাঘরে মায়েরা,সুরাইয়া বেগম, মেহজাবীন বেগম, রুহেনা বেগম হুলুস্থুল ব্যস্ত। ঘর থেকে ঘরে শুধু হাঁকডাক, হাসি-আনন্দ, আর আবেগের ঢেউ। এক অদ্ভুত অপেক্ষা সবার চোখে-মুখে।
ঠিক তখনই চৌধুরী ভিলার প্রধান ফটকের সামনে এসে থামলো এক চকচকে BMW। গাড়ির দরজা খুলে প্রথমে নামলো জায়ন সেই চিরচেনা রূপে। তারপর নামলো রায়ান। আর তাকে দেখা মাত্রই সবার চোখ যেন থমকে দাঁড়াল। এতদিন শুধু ভিডিও কলে তাকে দেখেছে সবাই। কিন্তু সামনে দেখা দেওয়ার পর মনে হলোনাসে যেন বাস্তবের মানুষ নয়, কোনো সিনেমার নায়ক। যেন হুবহু আট বছর আগেকার সেই দৃশ্য যেদিন জায়ন বিদেশ থেকে ফিরেছিল।
রায়ানের মধ্যে আর কিশোরসুলভ ছাপ নেই। আজ সে দাঁড়িয়ে আছে এক অদম্য আত্মবিশ্বাসে ভরা, রূপসী, সুদর্শন পুরুষ হয়ে। কালো টিশার্ট, অফ-হোয়াইট জিন্স, হাতে দামী wrist watch, পায়ে জিমি চুর সু, আর চোখে সানগ্লাস মুহূর্তেই সে হয়ে উঠলো সবার দৃষ্টি-কেন্দ্র। যেন জায়ন আর রায়ান, দুজনেই একে অপরের কম্পিটেটর কোনওটাকেই পিছনে ফেলে রাখা যায় না।

রায়ানকে দেখেই সুরাইয়া বেগম, মেহজাবীন বেগম আর রুহেনা বেগম একসাথে হাউমাউ করে কেঁদে উঠলেন। পাঁচ বছরের জমে থাকা অপেক্ষা আর বেদনা একসাথে গলে গিয়ে চোখ বেয়ে ঝরে পড়লো। সুরাইয়া বেগম ছেলের গলায় জড়িয়ে ধরতেই তার বুক ভিজে গেল কান্নায়। রায়ানও আর নিজেকে সামলাতে পারলো না। চোখে জল জমে ঝাপসা হয়ে এলো পৃথিবী।
এক এক করে সবাই এসে রায়ানকে জড়িয়ে ধরল মেহজাবীন বেগম, রুহেনা বেগম, বৃষ্টি, অনন্যা, তিয়াশা, আকাশ। প্রত্যেকের বুকে জমে থাকা স্নেহ, ভালোবাসা, অভিমান, আবেগ একসাথে ফেটে পড়লো সেই আলিঙ্গনে।
বৃষ্টি চোখ মুছতে মুছতে হাসির আড়ালে কান্না চাপিয়ে বলল,

__” অনেক মিস করেছি ভাই তোকে। আমার ভাই তো এখন আর ছোট নেই, বড় হয়ে গেছে অনেক।”
রায়ানও বৃষ্টিকে বুকে জড়িয়ে ধরে মৃদু কণ্ঠে জবাব দিলো,
__” তোমাদের জন্য আমি সবসময় ছোট ভাই আপু। এন্ড আই মিস ইউ অল মোর দ্যান ইউ থট।”
সবাইয়ের মুখে হাসি ফুটলো। কিন্তু অনন্যা আর তিয়াশার মুখে সেই খুশির আড়ালে জমে রইলো এক অদ্ভুত ছায়া অস্পষ্ট একটা চিন্তা। রায়ানের নজর সেখানেই আটকে গেল। ভ্রু কুঁচকে প্রশ্ন করলো,
__” কি হয়েছে তিউ আপু? কি হয়েছে অনু? আমি এসেছি, তোরা কি খুশি না?”
তিয়াশা চোখ নামিয়ে ফেলল। গোপন চিন্তা মুখে প্রকাশ করতে পারবে না। তাই কষ্ট ঢাকতে একটু হাসির বাহানা করে বলল,

__” ভা ভাই তোকে অনেক মিস করেছি। এরকম কেন বলছিস সোনা? তুই আমাদের ছোট ভাই, এরকম কক্ষনো বলবি না।”
রায়ান এক গাল হাসি দিয়ে তিয়াশার চুল এলোমেলো করে দিয়ে বলল,
__” ওকে বনু, তোরা সব আমার বনু হাইট দেখ তোদের।”
মুহূর্তেই পরিবেশ আবার ফেটে পড়লো হাসিতে। হাসির গুঞ্জনে ভরে উঠলো পুরো ভিলা। তবুও তিয়াশা, অনন্যা আর বৃষ্টি যেন পুরোপুরি হেসে উঠতে পারলো না। জায়ন কিন্তু সেই সামান্য ফাঁক চোখ এড়ায়নি। কপাল কুঁচকে তাকিয়ে রইলো তিয়াশার দিকে।

এরপর রায়ান এগিয়ে গিয়ে প্রান্তিক সাহেব, প্রণয় সাহেব, তাহসান সাহেবকে সালাম করে শক্ত করে জড়িয়ে ধরলো। সবাই যেন বুক ভরে সন্তানের ফেরার আনন্দ উপভোগ করছে। আকাশ, ইউভি, নাজিম সবাইকে বুকে টেনে নিলো রায়ান। আবেগ আর আনন্দে চোখ ছলছল করছে সবার।
ঠিক তখনই রায়ানের নজর পড়লো ছোট্ট রিহানার দিকে। এক গাল হাসি ছড়িয়ে বলল,
__” কাম লিটল ওয়ার্ল্ড।”
কণ্ঠস্বরটা বদলে গেছে আগের থেকে আরও পরিণত, আরও গভীর। রিহানা তো প্রতিদিনই ভিডিও কলে চাচুকে দেখে, তাই লাফিয়ে তার কোলে উঠে গিয়ে খিলখিলিয়ে বলল,
__” বিগ ওয়ার্ল্ড, আমার জন্য চকলেট এনেছো?”
রায়ান মিষ্টি হেসে মাথা নেড়ে বলল,
__” হ্যা লিটল ওয়ার্ল্ড, তোমার রেজোয়ান আরিয়াস এর জন্য অনেক চকলেট এনেছি মা।”
পাশেই দাঁড়িয়ে থাকা নাজিমের আট বছরের ছেলে রেজোয়ান তৎক্ষণাৎ জিজ্ঞেস করলো,
__” মামু, ইনিয়া আর অনয়ের জন্য আননি চকলেট?”
রায়ান কিছু বলার আগেই ইউভি হেসে উঠল,

__” ওরা অনেক ছোট মামু। ওদের এখনো চকলেট দেওয়া যাবে না। আর তোমরাও বেশি খাবে না, দাঁতে পোকা লেগে যাবে।”
কথা বলতে বলতে ইউভি নিজের কোলে ইনিয়াকে নিয়ে আদর করছে। আর তিয়াশার কোলে বসে আছে অনয়। এই দৃশ্য দেখে সবার মুখে আনন্দের হাসি।
ঠিক তখনই বৃষ্টির কোলে ছিল আকাশের ছেলে আরিয়াস। শুধু আরোহী আসেনি কারণ খান ভিলায় হঠাৎ অতিথি এসেছে।
এই আনন্দের ভেতরেই হঠাৎ রেজোয়ান বলল,
__” মামু, আমার পরি কে নামাও।”
মুহূর্তেই চারদিক স্তব্ধ। কারণ গর্জন তুলে উঠলো জায়ন,

__” লিটল চ্যাম্প, আর কতবার বলবো আমার মেয়েকে আমার পরি বলবে না!”
জায়নের এই গর্জনে রিহানা ছাড়া বাকিরা সবাই কেঁপে উঠলো। পরিবেশে এক অদ্ভুত ভারী নীরবতা নেমে এলো।
রেজোয়ান তবুও সরল গলায় বলল,
__” বিগ মামু, পাপাই তো বলেছে ওকে আমাদের বাসার পরি বানাবে।”

এই কথা শুনেই জায়নের চোয়াল শক্ত হয়ে উঠল। নাজিম ভয়ে একেবারে কাঠ হয়ে দাঁড়িয়ে গেল। তবুও সবাই সেই দৃশ্য দেখে হাসতে লাগলো। কারণ জানে এটা জায়নের অদম্য পাগলামি, মেয়ের প্রতি ভয়ঙ্কর আসক্তি।
ধীর পায়ে এগিয়ে গিয়ে জায়ন দাঁড়াল নাজিমের পাশে। গজগজ করতে করতে নিচু গলায় বিড়বিড় করল,
__” তোর কি শরীরে ভয় নেই, নাজিম? কাল থেকে যেন বাপ বেটা কে আমার বাসায় না দেখি বলে দিলাম।”
নাজিম তো ঘেমে-নেয়ে একাকার। ভয়ে কাঁপতে কাঁপতে আমতা আমতা করে বলল,
__” এ-এইটা আমার শ্বশুর বাড়ি ভাই। ঠিক আছে, আর বলবো না ভাই কিছু।”
জায়ন হুমকির মতো জবাব দিলো,

__” লিটল চ্যাম্পকে দূরে রাখবি আমার মেয়ের থেকে। নইলে তোর কপালে শনি আছে।”
মুহূর্তেই পরিবেশে এক অদৃশ্য যুদ্ধক্ষেত্র তৈরি হলো একদিকে জায়নের তীব্র আসক্তি, অন্যদিকে নাজিমের অসহায় ভয়।
তবুও চারপাশের হাসি, খুনসুটি, আবেগ আর কান্নার ভেতর দিয়ে চৌধুরী ভিলার প্রতিটি কোণ আজ আলোকিত হয়ে উঠলো।
এদিকে সবার সঙ্গে মিষ্টি আদর আর কান্না-হাসির মুহূর্ত কাটিয়ে রায়ান রিহানাকে কোলে থেকে নামিয়ে দিল। চারপাশে সবার হাসির কল্লোল ভেসে উঠছিল। রায়ান তখন হঠাৎই এগিয়ে গিয়ে বৃষ্টির কোলে থাকা সাড়ে তিন বছরের ছোট্ট অরিয়াশকে টেনে নিল নিজের বুকে। কোলে তুলে নিয়ে চোখে-মুখে প্রাণভরা হাসি নিয়ে বলে উঠল,
__” এই যে ছোট আঙ্কল, কি ভুলে গেলে বিগ আঙ্কেলকে?”

রায়ানের কণ্ঠে দুষ্টু মজা আর ভালোবাসা মাখানো টান ছিল। চারপাশে যারা দাঁড়িয়ে ছিল সবাই হেসে ফেলল তার কথায়। আর অরিয়াশও দুষ্টু-মিষ্টি ভঙ্গিতে রায়ানের চোখ থেকে সানগ্লাস টেনে নিয়ে নিজের ছোট্ট মুখে জোর করে চাপিয়ে দিল। চশমাটা তার গোলগাল মুখে মানালেও অদ্ভুত হাস্যকর লাগছিল। মুখভরা সরলতা আর খুনসুটি নিয়ে অরিয়াশ গম্ভীর ভঙ্গিতে বলল,
__” আঙ্কেল, এতা আমাল।”
মুহূর্তেই সবার বুক ভরে উঠল হাসিতে। ঘরের ভেতর থেকে আঙিনা পর্যন্ত এক ঝলক খিলখিল ধ্বনি ছড়িয়ে পড়লো। রায়ানও একগাল প্রশস্ত হাসি দিয়ে, যেন পৃথিবীর সবটুকু মায়া সেই শিশুটার জন্য ঢেলে দিয়ে মাথা নেড়ে বলল,
__” ওকে বাবা।”

তারপর সে অরিয়াশকে বুকে নিয়ে দু’পা ঘুরে খেলাচ্ছলে নাচিয়ে দিল, আর বৃষ্টির চোখ ভিজে উঠল আনন্দে নিজের ভাইয়ের আদর আর ছেলের হাসি মিলেমিশে যেন এক অদ্ভুত দৃশ্য হয়ে উঠল।
এরপর রায়ান আস্তে আস্তে অরিয়াশকে নামিয়ে দিয়ে হাত বাড়ালো সেই টুইন বেবিদের দিকে ইউভির কোলের রাজপুত্র অনয় আর রাজকন্যা ইনিয়ার দিকে। প্রথমে ইনিয়াকে তুলে নিল সে। এক বছরের কচি কচি হাত বাড়িয়ে ছোট্ট মেয়েটি যেন তৎক্ষণাৎ আপন করে নিল চাচুকে। রায়ান ইনিয়াকে বুকে টেনে নিয়ে চুমু খেয়ে বলল,
__”আমার ছোট্ট রাজকন্যা”

চারপাশের চোখগুলো সেই দৃশ্যে আরও ভিজে উঠল ভালোবাসায়। তিয়াশার মুখে মাতৃত্বের দীপ্তি ঝলমল করে উঠল, অনন্যার চোখে গর্বের আলো ছড়িয়ে পড়ল, আর বাকিরা দেখল কীভাবে পাঁচ বছর পর ফেরা রায়ান এক মুহূর্তেই সবার হৃদয়ে আবার জায়গা করে নিল।
ইনিয়াকে নামিয়ে এবার সে অনয়কে কোলে তুলে নিল। ছোট্ট রাজপুত্র দু’চোখ বিস্ফোরিত করে একাগ্র হয়ে তাকিয়ে রইল রায়ানের দিকে। তার গোলগাল হাতদুটো দিয়ে রায়ানের মুখ ছুঁতে চাইলো বারবার। রায়ানও সেই কোমল হাত নিজের মুখে চেপে ধরে চোখ বন্ধ করে কিছুক্ষণ চুপ করে রইল যেন হারানো পাঁচ বছরের শূন্যতা এই এক কোলে ভর করেই পূর্ণ হলো।

সবার মুখে তখন আনন্দের হাসি, চোখে অশ্রুর ঝিলিক। বৃষ্টি, অনন্যা, তিয়াশা, এমনকি মায়েরা সবাই প্রাণভরে তাকিয়ে রইলো এই দৃশ্যের দিকে। কারো চোখে ছিল স্বস্তির জল, কারো মুখে ছিল আনন্দের হাসি, আর কারো বুক ভরে উঠছিল এক অদ্ভুত প্রশান্তিতে।
তবুও রায়ানের চোখ বারবার চারপাশে খুঁজছে কাউকে তার মন ভীষণ অস্থির।
তবে কোথাও তার খোঁজা মানুষটির কোনো ছায়া নেই। রায়ানের বুকের মধ্যে হঠাৎ এক অচেনা উদ্বেগ জেগে উঠল। সে ভেবেছিল আজ সে এখানে তাকে দেখতে পাবে, কিন্তু এখন তার দেখা নেই কোনও চিহ্ন নেই। সেই শূন্যতা তার মনে এক অদ্ভুত অসন্তুষ্টি ছড়িয়ে দিল।

সব সহ্য করতে না পেরে রায়ান সরাসরি সুরাইয়া বেগমের দিকে চোখ বুলিয়ে জিজ্ঞেস করল,
__”আম্মু, ফুফি আর মারিয়া কে দেখছি না? ফুফি আসেনি?”
রায়ানের এই প্রশ্নের কণ্ঠে ছিল উদ্বেগ, তৃষ্ণা, আর একটু তীক্ষ্ণ চাপ। সুরাইয়া বেগম জবাব দিতে যাওয়ার আগেই আকাশ এগিয়ে এসে বলল,
__”আরে রায়ান, আজ সকালে হঠাৎ করে আমাদের এক রিলেটিভ ফোন করে বলল তারা নাকি আজ মারিয়া কে দেখতে আসবে। তাই আম্মু বিকেলে আসবে।”

এই কথাটি কানে পৌঁছতেই রায়ানের মাথার উপর যেন আকাশ ভেঙে পড়ল। চোখ বড় বড় হয়ে উঠল, চোয়াল শক্ত হয়ে এলো, হাতের পেশীর নিল শীরায় ফুলে উঠলো। চারপাশের বাতাস যেন হঠাৎ থমকে গেল। রায়ানের চোখ থেকে যেন আগুন বেরোচ্ছে। এই হঠাৎ পরিবর্তনে সবাই হকচকিয়ে কেঁপে উঠল।
ছয় বছরের ছোট ভাই আকাশও রায়ানের এই রূপ দেখে হঠাৎ ভয়ে ঢোক গিলল। তার ছোট বয়স এবং রায়ানের চোখে থাকা তীব্র উত্তেজনা একসাথে মিলিত হয়ে আঙিনার বাতাসে একটি অদ্ভুত চাপ তৈরি করল।
হঠাৎ এই উত্তেজনাময় পরিবেশে জায়ন, তার গম্ভীর কন্ঠে, তার মাতার দিকে চেয়ে গর্জে বলল,
__”মা, এগুলো কি শুনছি? মারিয়া কে দেখতে আসবে মানে?”

মেহজাবীন বেগম হঠাৎ স্তম্ভিত কেন এই ছোট্ট ঘটনায় তার দুই ছেলের চেহারা এত মারাত্মক পরিবর্তিত হলো, তা বোঝার চেষ্টা করছে। তার হৃদয় কিছুটা নড়েচড়ে উঠল, কারণ ছেলে দু’জনের মধ্যে এমন তীব্র উত্তেজনা আগে কখনও দেখেনি।
কিছুটা আমতা আমতা করে মেহজাবীন বেগম বলল,

__”কেন সমস্যা কোথায়? ভালো তো মারিয়ার জন্যই।”
কিন্তু জায়ন আর কোনো কথা বলল না। চোখে ছিল কঠোরতা, মুখে গম্ভীরতা। সে সোজা চলে গেল তিয়াশার সামনে। তিয়াশা ছোট্ট ভয়ে কাঁপছে, তার হাত কিছুটা নাড়া উঠছে। জায়ন তার দিকে ভীষণ দৃষ্টিতে তাকিয়ে কণ্ঠস্বর গম্ভীর করে বলল,

__”জান, তুই কেন আমায় জানালি না?”
তিয়াশার চোখে এখন ভয়, লজ্জা আর হাহাকার একসাথে। কাঁপতে কাঁপতে সে জবাব দিল,
__”আমরা জানতাম না তো আকাশ ভাই এসে বলল একটু আগে।”
আকাশ, ইউভি, নাজিম সবার চোখ এখন অবিশ্বাস আর অপ্রত্যাশিত উত্তেজনায় বিস্তৃত। কেউ কিছু বুঝতে পারছে না, সবাই একে অপরের দিকে তাকিয়ে আছে। আঙিনায় এমন এক নীরব চাপ চলে এসেছে, যা হাসি-মজা এবং আনন্দের মুহূর্তটাকেও হঠাৎ স্তব্ধ করে দিয়েছে।
সবার মনে এক অদ্ভুত অনুভূতি ভয়ের সঙ্গে মিশে আছে উত্তেজনা, আগ্রহ এবং অজানা ভবিষ্যতের অপ্রত্যাশিত ছায়া। হাসি-খুনসুটির মাঝেই এখন সমস্ত দৃষ্টি ঝড়ের মতো একমাত্র রায়ানের দিকে। যেন চারপাশের আলোও থেমে গেছে, সবাই রায়ানের চোখে চোখ রেখে বোঝার চেষ্টা করছে তার আবেগের গভীরতা।
এই মুহূর্তে রায়ানের মন, রায়ানের চোখ, চারপাশের প্রতিটি দৃষ্টি সবকিছু মিলেমিশে তৈরি করেছে এক উত্তেজনাপূর্ণ, আবেগে ভরা, ভয়-উদ্বেগ মিশ্রিত মুহূর্ত।
এর মধ্যেই প্রান্তিক সাহেব গম্ভীর কণ্ঠে বললেন,

__”বাইরে বসে এসব কি হচ্ছে? বাসার ভেতরে চলো।”
কিন্তু জায়ন তার বাবার চোখের দিকে এখন আর নজর নেই। সে আবার গর্জে উঠল,
__”আমরা দুজনে না আমার ভাই কে কথা দিয়েছিলাম, তার আমানত তারই থাকবে।”
তার শক্ত কণ্ঠ, দৃঢ় চোখের দিকে তাকিয়ে মুহূর্তে চারপাশের সবাই যেন কাঁপতে লাগল।
এরমধ্যেই রায়ান, উত্তেজনায় গলা ফুলিয়ে চিৎকার করে বলল,
__”বড় ভাই, চিন্তা কর না, আমার আমানত আমারই থাকবে। গাড়ির চাবি টা দেও।”
রায়ানের কণ্ঠে রাগ আর অদম্য জিদ একসাথে মিশে আছে। দাঁতের ফাঁ*ক দিয়ে যেন রাগ বেরোচ্ছে, হাতের পেশী ফুলে উঠছে, চুল টানে নিজেকে সামলাচ্ছে। রুহেনা বেগম ছুটে এসে বলল,

__”কি হয়েছে বাবা, এরকম করছিস কেন?”
কিন্তু রায়ান কোনো জবাব দিল না। সে নিজের মনে এক অদ্ভুত দৃঢ়তা আর উত্তেজনা অনুভব করছে। ঠিক সেই মুহূর্তে জায়ন ধীরে এগিয়ে এসে বলল,
__”চল, আমিও যাব।”
রায়ান বড় ভাইকে দেখে দৃঢ়ভাবে বলল,
__”না বড় ভাই, আমার আমানত এর জন্য আমি নিজেই যাব। তুমি বাসা সামলাও, বুঝলে ভালো, নইলে আই ডোন্ট ফা*কিং কেয়ার এবাউট দিস।”
জায়ন হালকা চমক নিয়ে রায়ানের পিঠ চাপড়ে একটু মৃদু হাসি দিয়ে বলল,

__”ইয়েস, দ্যাটস মাই ব্রাদার।”
এদিকে আকাশ, নাজিম, ইউভি তারা একে অপরের দিকে তাকিয়ে এক অদ্ভুত বিস্ময় আর উত্তেজনা অনুভব করছে।
ইউভি কণ্ঠে উত্তেজনা ধরে বলল,
__”আকাশ, কেস টা কি রে?”
আকাশ আমতা আমতা করে বলল,
__”আমার মাথায় কোন কেস ঢুকতাছে না, কারণ আমার কেস জন্ডিস। কারন আরেকটু হলেই আমি রায়ান এর ভয়ে প্যান্ট ভড়ে মু.. দিতাম। শালা একটা কি কম ছিল এত জায়ন ভাই এর আরেক পিস।”
নাজিম কিছুটা চিন্তা করে আকাশের কথায় হেসে বলল,
__”আচ্ছা, শালাবাবু, আমার ছোট শালাবাবু রায়ান এর না একজন হাইডেন রমনী মনের মধ্যে ছিল?”
ইউভি আর আকাশ একসাথে একই সময়ে চিৎকার করে বলল,
__”হ্যাঁ!”
নাজিম ইউভির কাঁধে হাত দিয়ে তিয়াশা আর অনুর দিকে দেখিয়ে বলল,
__”তাহলে ওরা যে আমানতের কথা বলছে সেটা আর কেউ না, আমাদের মারিয়া বুঝলে। আমাদের মারিয়াই রায়ান এর হা রমনী। জার জন্যই আমার ছোট শালাবাবু এত চটেছে।”
এই কথা শুনে ইউভি আর আকাশের চোখ বড় হয়ে যায়, দুজনের মুখ থেকে একসাথে বেরিয়ে আসে,
__”কি ই ই….”
নাজিম হেসে যোগ করল,

__”সিওর হওয়ার জন্য, ওই দুইজন এর কাছে জিজ্ঞেস করো।”
এই মুহূর্তে অগোচরে হাসি আর উত্তেজনার মিশ্রণ। চারপাশের শিশুরা বুঝতে পারছে না, বড়দের মধ্যে কী চলছে, তবে তাদের হাসি আর চোখের উজ্জ্বলতা পুরো পরিস্থিতিতে এক অদ্ভুত উষ্ণতা এনে দিচ্ছে।
অন্যদিকে তাহসান সাহেব রায়ানের সামনে এসে গম্ভীর স্বরে বলল,
__”কি নাটক হচ্ছে এসব, মাথার উপর থেকে যাচ্ছে। বাসায় এসেই শুরু করে দিলে?”
কিন্তু রায়ান কোনো জবাব না দিয়ে চোয়াল শক্ত করে গাড়ির দরজা খুলে দিল। এক গভীর নিশ্বাস নিয়ে স্টার্ট দিয়ে গাড়ি সেভাবে বেগে ছুটে চলে গেল।

তোমার ছোঁয়ায় আসক্ত আমি পর্ব ৭৫ (২)

সবার চোখে মিশে আছে বিস্ময়, উত্তেজনা, রাগ, এবং কৌতূহল। হাসি আর চমকের মধ্যে এখন সবাইকে নতুন গল্পের এক অজানা অধ্যায়ের দিকে ঠেলে দিচ্ছে রায়ানের শক্তিশালী উপস্থিতি।
চারপাশের বাতাসে উত্তেজনা, আবেগ, রাগ আর ছোট্ট হাসির একটি অবর্ণনীয় মিশ্রণ, যা মুহূর্তের মধ্যে সবাইকে স্পর্শ করছে, চোখে চোখ রেখে বোঝার চেষ্টা করছে এই অদ্ভুত উত্তেজনার গভীরতা।

তোমার ছোঁয়ায় আসক্ত আমি শেষ পর্ব

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here