তোমার জন্য সব পর্ব ১৭
রেহানা পুতুল
“আমার কাছে আসতে আপনার অনুমতির প্রয়োজন নেই। আসুন।”
সত্যিই কি মাহমুদের ভাবনার মতই কলি কিছু বলবে? নাকি ভিন্ন কিছু বলবে। যা শোনার জন্য মাহমুদ কখনোই প্রস্তুত ছিল না।
মাহমুদ ভাবছে,কলির সঙ্গে ভালো করে সখ্যতা গড়ে উঠেনি। বন্ধুত্বপূর্ণ সম্পর্কও নয়। প্রেম সেতো আমার এক পাক্ষিক। সেই মানবীর বাস আমার কল্পনাতেই। সরাসরি বিয়ে ঠিক হলো। কিন্তু তা নিয়েও তার সঙ্গে সরাসরি কোন আলাপ হয়নি। কাল সবাই যাবে তাদের বাসায়। আমি যাব না। পাত্রের থাকাটা এত গুরুত্বপূর্ণ না। কলি আমাকে স্যার হিসেবে দেখে আসছে। নিজের বাসায় হবু বর হিসেবে দেখতে পেয়ে অপ্রস্তুত হয়ে যাবে সবার সামনে।
কলিও দোটানায় পড়ে গেলো। যেখানে স্যারের সঙ্গে কিছুই না তার। সেখানের বিয়ের প্রসঙ্গ তুলবে কিভাবে। কিন্তু যেতেই হচ্ছে। কি পেয়েছে উনি। সবকিছু উনাদের মর্জিমতেই হবে? তার চাওয়া পাওয়ার কোন মূল্য নেই? কলি আসলো মাহমুদের অফিস রুমে। মাহমুদ চেয়ারে দেখিয়ে বসতে অনুরোধ করল কলিকে। কলি বসল না। মাহমুদের মুখোমুখি চেয়ারের হাতল ধরে
দাঁড়িয়ে আছে ঝিম মেরে।
আরও গল্প পড়তে এখানে ক্লিক করুন
কিছু বলতে পারছে না। সংকোচে, বিরক্তিতে, ভিতরটা ভেঙ্গেচুরে যাচ্ছে। এটা মাহমুদ বেশ অনুধাবন করতে পারলো। মাহমুদ টেবিলে থাকা নিজের গ্লাসটাতে ওয়াটার পট থেকে পানি ঢেলে নিলো। কলির দিকে বাড়িয়ে ধরলো। বলল,
“কিছুটা পানি খেয়ে নিন। গলা শুকিয়ে গিয়েছে।”
কলির নাকের ডগা লাল হয়ে গেলো শুনে। কোমল মুখে কাঠিন্যতা ভর করলো আংশিক। গোপনে আওড়লো,
এতো দেখি মেনকার শয়তান। গুরুগম্ভীর অথচ ঠোঁটকাটা স্বভাবের। কথা কম বললেও যেটা বলে ভিতরটা এফোঁড়ওফোঁড় করে দেয়। একদিন খেয়াকে বুকের ওড়না নিয়ে কিসব বলে ফেলল। সবটা সে শুনে ফেলল। মনে হলে এখনো তার মাটির নিচে গায়েব হয়ে যেতে ইচ্ছে করে। কলি গ্লাস হাতে নিলো। দু’তিন ঢোক পানি খেয়ে রেখে দিলো।
মাহমুদ গ্লাসের বাকি পানিটুকু খেয়ে নিলো। বলল,
“আপনাকে দেখে আমার গলাও শুকিয়ে চৈত্রের কাঠ হয়ে যাচ্ছে।”
মাহমুদের বিশ্বাস ছিলো কলি একটু হলেও হেসে ফেলবে এখন। কিন্তু তার বিশ্বাস অবিশ্বাসে রূপ নিলো। কলি পূর্বের ন্যায় মেঘমুখে দাঁড়িয়ে রইলো। এতো দেখি রোবট। কিভাবে সংসার করবো। কাকে মন দিলাম। মাহমুদ কলির চোখের দিকে তাকালো। কলি চোখ সরিয়ে নিলো।
“কলি,কাউকে দেখতে এসেছেন না কিছু বলতে এসেছেন?”
কলিকে একটু এগিয়ে দিলো কথাটা বলে মাহমুদ। কলি হাতের মুঠি হতে একটা কাগজ মাহমুদের সামনে রাখলো।
কাগজটা হাতে নিলো মাহমুদ। অল্প হেসে বলল,
“শুনেছি নব্বই দশকের প্রেম এভাবে হতো। পত্র বাহক না পেলে প্রেমিক প্রেমিকা একে অপরের হাতে চিঠি দিয়ে পালিয়ে যেতো। ব্যাপারটা ভালো লাগলো। থ্যাংকস।”
কলির চোখের কোণে প্রগাঢ় বিরক্তি খেলা করছে। এই লোকের আজ হয়েছে কি। নাকি কাল বিয়ের দিন ঠিক হবে বলে আজ মৌজে আছে। কলি টু শব্দটিও করল না মাহমুদের সঙ্গে। বোবা মুখে এলো। আবার বোবামুখেই বের হয়ে গেলো ঘুরিয়ে।
মাহমুদ ঝটপট কাগজটা মেলে পড়তে লাগলো।
” স্যার, আমি জানি আন্টি আমাকে খুব পছন্দ করেছে। আপনি মায়ের ইচ্ছা পূরণ করার জন্য সহমত জানিয়েছেন। একইভাবে আমিও আমার বাবা,মায়ের পছন্দকে গুরুত্ব দিয়ে মত দিয়েছি। এর বাইরে কিছুই না। সবই ঠিকাছে। কাল বাগদান অনুষ্ঠানে যেন বিয়ের ডেট ফেলা হয় এক বছর পরে। অর্থাৎ আমার অনার্স কমপ্লিট হলে। কারণ ক্লাসে,ভার্সিটিতে এটা জানাজানি হলে আমি মরে যাবো। নানান সমালোচনার ঝড় উঠবে। আমি নিতে পারব না এসব। প্লিইজ স্যার।”
“তোমার ধারণা ও বিশ্বাস সম্পূর্ণ ভুল কলি। আমি তোমাকে ভালোবাসি।”
বাক্যটি মনে মনে উচ্চারণ করে মাহমুদ তড়িতেই কলিকে ফোন দিলো। কলির ফোন সুইচড অফ। একটু পর পর মাহমুদ ট্রাই করে যাচ্ছে৷ বাট সুইচড় অফ৷ এভাবে মাহমুদ রাতে ঘুমানোর সময় পর্যন্ত ফোন দিলো। কিন্তু কলিকে রিচ করা গেল না৷ মাহমুদ প্রচন্ডভাবে ক্ষেপে গেলো কলির উপর৷ সে বুঝলো কলি ইচ্ছে করেই মোবাইল বন্ধ রেখেছে৷ যেন তাকে ম্যানেজ করার চেষ্টা না করা যায় বিয়ে আরো আগে করার জন্য৷ মাহমুদ দাঁত কিড়মিড়িয়ে বলল,
বিয়ে হবে। খুব সহসাই হবে। এই বর্ষাতেই হবে। অনেক জ্বালিয়েছো। তোমার জন্য অনেক করেছি। সব উসুল করতে হলে তোমাকে কাছে চাই। ফাজিল, অসভ্য মেয়ে কোথাকার। ক্ষিপ্ত মেজাজ নিয়ে মাহমুদ ঘুমিয়ে পড়লো।
আজ শুক্রবার। বিকেলে মাহমুদের পরিবারের সবাই বসলো। কিছু ঘনিষ্ঠজনও রয়েছে। স্বল্প আলোচনা হলো তাদের মাঝে। মাহফুজা ছেলেকে বলল,
“তোর কবে সুবিধা হয়? সেই অনুযায়ী তারিখ ফেলতে হবে।”
“কলির সেমিস্টার ফাইনাল পনেরোদিন পরে। উমম.. এক মাস পর যেকোন শুক্রবার।”
জানালো মাহমুদ।
আনুষকা বলল,
“বুধবার পাত্রীর সন্ধ্যা কোটাই। বৃহস্পতিবার গায়ে হলুদ। শুক্রবার বিয়ে। শনিবার বৌভাত। আর পরিক্ষার পর কয়দিন পড়ার প্রেশার থাকে না। রিলাক্স থাকে সবাই। সো সেমিস্টার ফাইনালের পর পরেই বিয়ের ডেট ফেলতে হবে।”
আবদুর রহমান বলে উঠলো,
“আরেক কাজ করা যায়। কাবিন করে রাখলে অনার্স শেষ হলে একবারে অনুষ্ঠান করে তুলে আনা যায়।”
মাহফুজা বলল,
“এটাও মন্দ বলেন নি। বিয়ে ত হয়েই গেলো। চিন্তা মুক্ত। কিন্তু সেটা হলেত আবার অন্যরকম প্রস্তুতি নিতে হবে দুই পক্ষেরই। মাহমুদের যেতে হবে। দুই রাত মেয়ের বাসায় থাকতে হয় কাবিনের পরে। তাদের সঙ্গে আলাপ করতে হবে। তারা কিভাবে কি চায়। সবারই সুবিধা অসুবিধা আছে।”
মাহমুদ ছোট মামা বলে উঠলো,
“দুলাভাই তারা পিপারেশন নিয়ে ফেলেছে পানচিনির হিসেবে। তারমধ্যে কাবিনের কথা তুললে প্যাঁচগোছ লেগে যাবে। মাহমুদের কথাই আমার কথা। আজ বিয়ের দিন পাকা হবে। এবং মেয়ের পরিক্ষা শেষ হলেই। এটাই ফাইনাল করবো আমরা। এখানে থেকেও মেয়ে পড়াশোনা চালিয়ে নিতে পারবে। মাহমুদের বাইকে করে যাওয়া আসা করবে। সমস্যা ত দেখি না আমি।”
সঙ্গে সঙ্গে আমিন বলে উঠলো আবদুর রহমান ও মাহফুজা।
সন্ধ্যার পর পাত্রপক্ষ এলো। পাত্র এলোনা। হাসি ঠাট্টায় বিয়ের দিন ধার্য হলো। সবাই রাতের খাবার খেলো। শরবত থেকে শুরু করে আয়োজনের কমতি করেনি নুরুল, রেবেকা দম্পতি। শাড়ি পরিহিত কলি মাথা ঢেকে সবাইকে সালাম দিলো। যেহেতু আংটি আগেই দেওয়া হলো তাকে। তাই আজ দুটো নোজ পিন উপহার দিলো পাত্রপক্ষ। একটা সোনার আরেকটা ডায়মন্ডের।
জুলি বলে উঠলো,
“আপাতো নাক ফোটায়নি। কিভাবে নাকফুল পরবে?”
“নো প্রবলেম হবু বেয়াইন। এখন প্রযুক্তির যুগ। বিয়ের আগে পার্লারে গিয়ে টুক করে ফুটো করে আসলেই হবে। দুদিনেই নাক শুকিয়ে যাবে।”
বলল আনুশকা।
“হুম সেটাই। বিয়ের সময় নাক খালি থাকলে অসুন্দর লাগবে। সব সাজ ম্যাড়ম্যাড়ে হয়ে যাবে। মেয়েদের মুখের শ্রী হলো নাকফুল।”
বলল মাহফুজা।
দুই পক্ষের আলোচনার ভিত্তিতে সব পাকা করতে সময় লেগে গেলো। কলি মাকে দিয়ে বাবাকে জানালো বিয়ের তারিখ তার পড়াশোনা শেষ হলে ফেলার জন্য। নুরুল হক মেয়ের কথাকে গ্রাহ্য করলেন। আবদারের সুরে তাদের বললেন কথাটা। তারা মানলই না। উপযুক্ত যুক্তি উপস্থাপন করে দেখালো এক মাস পরে হলে কোন সমস্যা নেই। কলি তার মতো করেই চলতে পারবে। চাইলে নিজের বাসায়ও থাকতে পারবে। তবুও বিয়ে হয়ে যাক। পিছানোর দরকার নেই।
পাত্রপক্ষ বিদায় নিতে নিতে রাত হয়ে গেলো। কলি নিজের রুমে গিয়ে আজ আর কাঁদল না। ক্ষেপে গেলো মাহমুদের উপরে। গজগজ করে বলতে লাগলো,
“আপনি আমাকে পাবেন না মিস্টার মাহমুদ। এত রিকুয়েষ্ট করে লিখলাম। তবুও আমার চাওয়ার গুরুত্ব পেল না আপনার কাছে। দ্রুত বিয়ে করতে চাওয়া আপনার ভালোবাসা হতেই পারে না। এসব আপনার একরোখা মনোভাবের প্রতিফলন। একপ্রকার জেদও বটে। জ্বালিয়ে পুড়িয়ে ছাঁই করে ফেলব আপনার অন্তরকে। অভদ্র পুরুষ। ছাত্রীকে বিয়ে করার সাধ মিটিয়ে দিব। আমিও কম যাই না। আমার ঘাড়ের র*গ ও ত্যাড়া আছে।”
বোমের মতো তেতে আছে কলি। ফোঁস করে একটা আওয়াজ করলো মুখ দিয়ে। শাড়ি চেঞ্জ করে সামান্য খেয়ে নিলো ক্ষুধার যন্ত্রণায়। ঘুমিয়ে গেলো চটে যাওয়া মেজাজ নিয়ে।
মাহমুদের অধীর আগ্রহ নিয়ে অপেক্ষা করছে কলির অভিব্যক্তি দেখার জন্য। নিঃশব্দে হেসে বলল,
ওহে, ফাইনালি আপনার বিয়ে ঠিক হয়ে গেলো আপনার অপছন্দের শিক্ষক মাহমুদের সঙ্গে। যে কিনা আপনাকে কঠিনভাবে ইনসাল্ট করলো। রুক্ষ ভাষায় কথা বলল। আমার অধিকার প্রাপ্তিতে বাধা দিলে সামনে আরো শাসানিতে রাখবো আপনাকে। প্রয়োজনে বন্য হবো। সব ক্ষেত্রে ভদ্র টিচার হয়ে থাকবো নাকি। আমি পুরুষ। আমারও আছে একটা প্রেমিক হৃদয়।
আবার কলি ভার্সিটি আসা বন্ধ করে দিলো। মাহমুদের মেজাজ বিগড়ে গেলো। তবুও নিজের অনুভব, অনভূতিকে সংযত রাখলো। দাঁত কামড়ে ধৈর্যের পরিচয় দিতে লাগলো। কলিকে ফোন করল না। কোন রকমের যোগাযোগ করার চেষ্টা করল না।
অবশ্য তিনদিন পর কলি ক্লাসে এলো। কারণ সামনে পরিক্ষা। গ্যাপ দিলে সমস্যা আছে। এটা স্কুল, কলেজ নয়। কোচিং, প্রাইভেট পড়ে কাবার দিবে। ভার্সিটিতে ডিপেন্ডেড থাকতে হয় অধ্যাপকদের লেকচারের উপরে।
মাহমুদ ক্লাসে গিয়ে তৃষিত নয়নে কলির দিকে তাকালো। যেন মরুর বুকের পিপাসিত পথিক বহু প্রতিক্ষার পরে কিছু জলের ফোঁটার নাগাল পেলো। কলি ভুলেও চোখ তুলে তাকাচ্ছে না। মাহমুদ কলিকে তার চোখাচোখি করার ব্যবস্থা করলো। সে সাহিত্যের নানা প্রসঙ্গ টেনে জিজ্ঞেস করলো সবাইকে,
“বাংলা সাহিত্যের সবচেয়ে শ্রেষ্ঠ রোমান্টিক একটা উক্তি বলেন। যার কাছে যেটা সেরা মনে হয় সেটাই বলেন।”
একজন একেকটা বলতে লাগলো। কেউ হুমায়ুন আহমেদের, কেউ বংকিমচন্দ্র চট্টোপাধ্যায়ের, কেউ মানিক বন্দ্যোপাধ্যায়ের,কেউ শরৎচন্দ্রের উপন্যাসের জনপ্রিয় রোমান্টিক উক্তি বলল।
“কলি আপনি দাঁড়ান। আপনার কাছে কোনটা মনে হয়? বলেন।”
“স্যার আমি জানিনা। খুব গল্প,উপন্যাস পড়িনি আমি।”
দাঁড়িয়ে চোখ নামিয়ে বিরস গলায় বলল কলি। কলির দৃষ্টি আকর্ষণ করতে মাহমুদ ব্যর্থ হলো। তার বিরক্তির সীমা রইল না। কড়া স্বরে বলল,
“বাংলা সাহিত্যের ছাত্রী হয়ে একটা উক্তিও বলতে পারলেন না। আপনার বাংলা সাহিত্য নিয়ে পড়া উচিত হয়নি।”
কলির সারাগাল মরিচ লাল হয়ে গেলো। চনচনে সুরে বলল,
“স্যার আমি বহু উদ্ধৃতি জানি। আপনি রোমান্টিক উক্তি শুনতে চেয়েছেন। সেটা আমি পারিনা।”
“হ্যাঁ চেয়েছি। রোমান্টিক বা ভালোবাসার উদ্ধৃতি কি সাহিত্যের বাইরের পার্ট নাকি?”
এমন সময় আমান স্যার কোন একটা কাজে মাহমুদ স্যারের কাছে এলো। তিনি আলোচনা শুনলেন দরজায় দাঁড়িয়েই। রসিকতা করে বললেন,
“যারা প্রেমের উক্তি জানেন না। তাদের জন্য শিখে নেওয়া অপরিহার্য। নয়তো তাদের দাম্পত্যজীবন অন্ধকার।
-হুমায়ূন আহমেদ বলেছেন।
“প্রেম শুধু দেখা ও চোখের ভাল লাগা থেকেই হয় না, রাগ থেকে প্রেম হয়, ঘৃণা থেকে প্রেম হয়, প্রেম হয় অপমান থেকে, এমনকি প্রেম হয় লজ্জা থেকেও। প্রেম আসলে লুকিয়ে আছে মানবসম্প্রদায়ের প্রতিটি ক্রোমসমে। একটু সুযোগ পেলেই সে জেগে উঠে।”
রসিক আমান স্যার আরো বললেন,
” অস্বীকার করার সুযোগ নেই।
প্রেমের মাঝেই লুকায়িত কামনার বীজ।”
ক্লাসের কয়েকজন চাপাস্বরে হেসে উঠলো। মাহমুদ সজোরে ডাস্টার দিয়ে টেবিলে আঘাত করলো। সবাই চুপ হয়ে গেলো।
ক্লাস শেষে মাহমুদের খুব ইচ্ছে করছে কলিকে ডেকে কাছে আনতে। একটু কথা বলতে। তার কথা শুনতে। কিন্তু ক্লাসে যেভাবে ক্ষেপিয়ে দেওয়া হলো তাকে। এখন ডাকা ঠিক হবে না। দাউদাউ করে জ্বলে উঠতে পারে। মাহমুদ বেরিয়ে গেলো বাইক নিয়ে।
এদিকে মাহমুদের উপরে প্রবল বিতৃষ্ণায় কলির অন্তর ফেটে চৌচির হয়ে যাচ্ছে। এই পুরুষের সঙ্গে চলবে কিভাবে সে। এতো দারুণ ঠোঁটকাটা স্বভাবের। চোখের সামনেই লজ্জা দিয়ে ফেলে। তখন এমন ভাব যেন চেনেই না। কলি বেখেয়ালিভাবে ঢুলে ঢুলে হাঁটছে। আচমকা রাস্তায় পড়ে থাকা ভাঙ্গা ইটের টুকরোয় হোঁচট খেয়ে পড়ে গেলো। ব্যথায় উঁহু করে কুঁকিয়ে উঠলো। পাশ থেকে কলির দুজন ক্লাসমেট দেখে দৌড়ে এলো। কলিকে ধরে উঠালো। মাহমুদ তাদের দেখে বাইক থামালো।
“কি হয়েছে রিমি?”
“স্যার কলি উষ্ঠা খেয়ে পড়ে গেলো। পায়ের পাতা ছিলে গিয়েছে। ব্লাড যাচ্ছে।”
“ওহ শিট!এখানে আমার পরিচিত ফার্মেসী আছে। আপনারা নিয়ে আসুন।আমি যাচ্ছি।”
তাদের আগেই বাইক টেনে মাহমুদ ফার্মেসীতে চলে গেলো। তারা কলিকে ধরে ফার্মেসীর ভিতরে নিয়ে লম্বা বেঞ্চটিতে বসিয়ে দিলো।
” ফার্মেসীতে কেউ নেই। হয়তো কোনদিকে গেলো। আপনারা তাড়া থাকলে যেতে পারেন। কলিকে আমি দেখছি।”
“আচ্ছা স্যার বলে ওরা দুজন চলে গেলো।”
তোমার জন্য সব পর্ব ১৬
খালি ফার্মেসি। মাহমুদ ফার্মেসী থেকে তুলা, স্যাভলন নিয়ে কলির পাশে বসলো। কিছু তুলা ছিঁড়ে নিলো। বলল,
“পা টা বেঞ্চের উপরে তুলুন। ব্লাড মুছে দিই।”
“একদম না। ডোন্ট টাচ মি। আপনার জন্যই এই অবস্থা আমার। উঁহু মা!”
ঝাঁঝালো স্বরে চেঁচিয়ে উঠে বলল কলি।
এই প্রথম কলির রণমুর্তি দেখে মাহমুদ ভড়কে না গেলেও থমকে গেলো। একদৃষ্টিতে সে কলির দিকে চেয়ে রইলো।