তোমার নামে নীলচে তারা পর্ব ৮
নওরিন মুনতাহা হিয়া
মেঘ ভর্য়াত চোখে আদ্রিয়ানের দিকে তাকায়। ভয়ে তার গলা শুকিয়ে আসছে, এখন কি বলবে সে? আদ্রিয়ান তার পরিচিত না, তার নাম সে শুনে নাই এই কথাটা মেঘ বলতে পারবে না। কারণ আদ্রিয়ান তাকে কলেজে, ক্লাস রুমে দেখেছে। আদ্রিয়ান মেঘের চুপ করে থাকা দেখে ধমকের সুরে বলে উঠে __
“- এই মেয়ে কথা বলছ না কেনো? তোমার হাতে আমার নাম কেনো লিখেছ? উত্তর দাও?
আদ্রিয়ানের ধমক শুনে মেঘের ভয়ের পরিমাণ দিগুণ হয়ে যায়। মেঘ শান্ত চোখে আদ্রর দিকে তাকায়, এরপর মনের মধ্যে দ্রুত মিথ্যা অযুহাত সাজায়। মেঘ বলে __
আরও গল্প পড়তে আমাদের গ্রুপে জয়েন করুন
“- সরি আদ্রিয়ান স্যার। কিন্তু বিশ্বাস করেন, এতে আমার কোন দোষ নাই। ওই কাল রিসোর্টের বাহিরে আবিহাকে খুঁজার সময়, আমাদের দেখা হয়েছিল না একে অপরের সাথে। তখন আবিহার সয়তান কাজিনরা ওখানে ছিল। ওরা মনে করেছে, সে আপনার আর আমার মধ্যে কোন প্রেম ঘটিত সম্পর্ক রয়েছে। যার জন্য ওরা আজ সয়তানি করে, আপনার নাম আমার হাতে লিখে দিয়েছে। আমি তখন আবিহার সাথে কথা বলেছিলাম, যার জন্য বিষয়টা খেয়াল করি নি। পরে যখন হাতের দিকে তাকায়, তখন দেখি আপনার নামে আমার হাতে মেহেদী দেওয়া। যার জন্য তাড়াতাড়ি করে সুইমিংপুলে এসেছি, হাত ধুঁয়ার জন্য ___.
মেঘ সুন্দর করে সাজিয়ে গুছিয়ে, মিথ্যা কথা বলে আদ্রিয়ানকে। কারণ এখন বিপদ থেকে রক্ষা পেতে, মিথ্যা অবলম্বন কথা তার কাছে আর কোন উপায় নাই। আদ্রিয়ান হয়ত মেঘের কথা বিশ্বাস করে, কারণ সে যানে কাজনিরা কত দুষ্ট আর সয়তান। আদ্রিয়ান মেঘের হাত ছেড়ে দেয়, মেঘ হাফ ছেড়ে বাঁচে। আদ্রিয়ান তবুও সন্দেহ বোধক দৃষ্টি নিয়ে মেঘকে প্রশ্ন করে __
“- সত্যি কি কাজিনরা মেহেদী দিয়ে আমার নাম তোমার হাতে লিখেছে?
মেঘ তার কথার সত্যতা প্রমাণ করার জন্য দৃঢ় বিশ্বাস নিয়ে বলে __
“- জি স্যার আমি সত্যি বলছি। মেঘ কখন মিথ্যা কথা বলে না __.
আদ্রিয়ান আর কথা বাড়ায় না, সে মেঘের কাছ থেকে দূরে সরে যায়। মেঘ শান্তির নিঃশ্বাস নেয়, আর একটু হলে আদ্রিয়ান তার বিষয়ে সব জেনে যেত। তবে মেঘ যে এতো সুন্দর মিথ্যা কথা বলতে পারে, তা মেঘ যানত না। মেঘ আর সুইমিংপুলের কাছে দাঁড়ায় না, সে দ্রুত পায়ে হেঁটে বাড়ির ভিতরে চলে যায়। আদ্রিয়ান এখন সুইমিংপুলের কাছেই দাঁড়িয়ে আছে, তার মেঘের কথাটা সম্পূর্ণ বিশ্বাস হয় নি। কিন্তু একজন অপরিচিত নারী, তার নাম নিজের হাতে কেনো লিখবে? কাল মেঘের সাথে তার প্রথম দেখা হয়েছে, এতো তাড়াতাড়ি তার প্রেমে পড়ে যাওয়ার কথা না মেঘের। আর যদি মেঘ মনে মনে আদ্রিয়ানকে পছন্দ করে, তবে সে তা বলল না কেনো? মেঘ কি তবে সত্যি বলছে, সব দোষ ওই কাজিনদের।
আদ্রিয়ান সুইমিংপুলে দাঁড়িয়ে বেশ কিছুক্ষণ, কথাটা ভাবে। অন্যদিকে মেঘ বাড়ির ভিতরে চলে যায়, মেহেদী অনুষ্ঠানে সকলে আনন্দ করছে। মেঘ চুপচাপ আবিহার পাশে বসে যায়, সে এখন আর এখান থেকে নড়বে না। আদ্রিয়ানের সামনে ও যাবে না, যদি তার সাথে আদ্রিয়ানের দেখা হয় তবে চোখ সরিয়ে নিবে বা ইগনোর করবে। যায় হয়ে যাক না কেনো, আদ্রিয়ানের থেকে মেঘ দুরত্ব বজায় রাখবে।
মেহেদী অনুষ্ঠানে সকলে নাচ, গান করছে। চারপাশে আত্মীয় স্বজন, বন্ধুরা রয়েছে। আমেরিকার কোনো মানুষের সাথে মেঘের পরিচয় নাই, যার জন্য মেঘ কারো সাথে তেমন কথা বলে নি। আবিহার হাতে মেহেদী পড়ানো শেষ হয়, তবে এতোখন তার পাশেই ছিল। আদ্রিয়ান প্রায় দশ মিনিট পর, মেহেদী অনুষ্ঠানে আবার ফিরে আসে৷ সকলে যখন তাদের নাচ শেষ করে, স্টেজ থেকে নেমে পড়ে৷ তখনই কারান মাইক হাতে তুলে নেয়, কারান মাইকে বলে __
“- গুড ইভিনিং বন্ধুরা। অনুষ্ঠানে উপস্থিত সকল অতিথি আর বন্ধুদের স্বাগতম। আপনারা সকলে এতোখন স্টেজে এসে, ডান্স পরিবেশ করছেন৷ কিন্তু এখন সকলে গান গেয়ে শুনাবে, আবিহার সবচেয়ে প্রিয় বন্ধু মেঘ। আর তার সাথে গাইবে আমার মামাতো ভাই , আদ্রিয়ান রেদোয়ান __.
মেঘ আদ্রিয়ানের সাথে গান করার কথা শুনে থমকে যায়। সে যত এই মানুষটার থেকে দূরে থাকতে চাই, ততই নিয়তি তাদের কাছে নিয়ে আসে। মেঘ এখন কাছে আসা, আর দূরে যাওয়ার খেলা খেলতে খেলতে বিরক্ত হয়ে গেছে। কারানের কথা শুনে আদ্রিয়ান নিজে ও অবাক হয়ে যায়, সাধারণ আদ্রিয়ান খুব একটা ভালো গান গাইতে পারে না। কলেজ লাইফে যখন মেডিক্যালে পড়াশোনা করত, তখন টুকটাক গান করত। তবে ডক্টর হওয়ার পর, গান করা প্রায়ই ছেড়েই দিয়েছে। কাজ বা পড়াশোনার চাপে, আলাদা করে গান করার সময় বের করতে পারে নি।
আদ্রিয়ান কারানের দিকে রাগী দৃষ্টিতে তাকায়। কারান এাটা চোখ টিপ দেয় আদ্রিয়ানকে। কারান ইচ্ছা করেই মেঘ আর আদ্রিয়ানকে, একসাথে গান করতে বলেছেন।কারণ আদ্রিয়ান তখন ছাদের উপর বলেছিল, তার মেঘের মতো এমন শান্ত আর ভদ্র মেয়ে পছন্দ। যার জন্য কারান মনে করেছে, আদ্রিয়ান হয়ত মেঘকে লাইক করে বা ভালোবাসে। আদ্রিয়ানের এখন নিজের উপর ভীষণ রাগ হচ্ছে, সে তখন কেনো কারানের সামনে মেঘকে উদাহরণ হিসাবে দেখাল। সে মেঘকে ভালোবাসে না, শুধু মেঘ না আদ্রিয়ান অন্য কোনো মেয়েকে ভালোবাসে না। নারীর প্রতি আর আর্কষণ বরাবরই কম।
মেঘ আবিহার পাশে স্থির হয়ে বসে আছে দেখে, আবিহা বলে __
“- মেঘ তুই না খুব সুন্দর গান করিস, যা এখন গান কর __.
মেঘ না সূচক মাথা নাড়িয়ে বলে __
“- আবিহা আজ আমার গলার অবস্থা ভালো না। আর এখন গান গাইতে ইচ্ছা করছে না আমার। আজ থাক অন্যদিন করব __.
মেঘের কোন কথা আবিহা শুনে না, তাকে জোর করে স্টেজে গান করতে পাঠায়। মেঘের মন ভীষণ খারাপ হয়ে যায়, তার কণ্ঠ দিয়ে গানের সুর আসছে না। আদ্রিয়ান ও কারানের কথায় স্টেজে উঠতে বাধ্য হয়, তার ও ভীষণ বিরক্ত লাগছে এইসব। আদ্রিয়ান আর মেঘ বর্তমানে একসাথে স্টেজে অবস্থান করছে, মেঘ তার হাতে মাইক তুলে নেয়। মেঘ প্রথমে গানের সুর তুলে, গান ধরে __
“- কি করে বলব তোমায় ”
“- মন কি যে চায় “.
“- কেন সে পালিয়ে বেড়ায় “-.
“- তোমার থেকেই “.
“- কি করে বলব তোমায় “.
“- কেন এই মন হাত বাড়ায়.
“- আবারো হাড়িয়ে সে যায় “.
“- তোমার থেকেই “.
“- তুমি জানতে পারনি.
“- কত গল্প পুড়ে যায় “.
“- তুমি চিনতে পারনি “.
“- আমাকে হায়…
“- কি করে বলব তোমায় “.
“- আসলে মন কি যে চায় “.
“- কেন সে পালিয়ে বেড়ায় “.
“- তোমার থেকেই “.
“- পথ ভুলে গেছি চলে “.
“- দূরের কুয়াশায় “.
“- তবু আমার ফিরে আসার “.
“- সত্যি নেই উপায় “.
“- তুমি আমার জিতের বাজী “.
“- তুমি আমার হার “.
মেঘ গানের সুর আর শব্দ উচ্চারণ করার সময়, আদ্রিয়ানের চোখের দিকে তাকিয়ে থাকে। সে গান করছে না বরং আদ্রিয়ানকে তার মনের কথা বলছে। স্টেজের সকলে শান্ত আর মুগ্ধ হয়ে মেঘের গান শুনছে। আদ্রিয়ান বুঝতে পারে, কাল রাতে তার পাশের রুমে গান করা মেয়েটা মেঘ। মেঘের কণ্ঠ স্বর শুনে সে সত্যি মুগ্ধ, এতো আবেগ, আর ভালোবাসা দিয়ে কি গান করা যায়। আদ্রিয়ান মেঘের গান শুনতে গিয়ে, তার নিজের লাইন ভুলে গেছে। পরে যখন তার মনে পড়ে, তখন সে আর মেঘ একসাথে গান গাই __
“- কি করে বলব তোমায় “.
“- আসলে মন কি যে চায় “.
“- কেনও সে পালিয়ে বেড়ায় “.
“- তোমার থেকেই “.
আদ্রিয়ান আর মেঘের গান করা শেষ হয়। অনুষ্ঠানে উপস্থিত সকলে হাততালি দিয়ে উঠে, মেঘ মুখে জোরপূর্বক হাসি বজায় রেখে স্টেজ থেকে নেমে পড়ে। আদ্রিয়ানের সাথে কোনো কথা বলে না, আর তার কথা বলার ইচ্ছা ও নাই। মেঘ এসে আবার তার আগের জায়গায়, আবিহার পাশে বসে পড়ে। মেঘের মুখ মলিন হয়ে যায়, শুধু মাথা নিচুঁ করো চুপচাপ বসে থাকে। অনুষ্ঠানের সকল কিছু তার বিরক্ত লাগছে, কিন্তু এই সবকিছু তার এখন সয্য করতে হবে। শুধু মাএ আবিহার জন্য, কারণ মেঘ চাই না তার জন্য আবিহা কষ্ট পাক __.
রাত প্রায় বারোটা মেহেদীর অনুষ্ঠান শেষ। বাড়ির সকলে এখন ভীষণ টার্য়াড। আবিহা, কারান সহ সকলে, তাদের রুমে চলে যায় বিশ্রাম নিতে। মেঘ ও ভীষণ ক্লান্ত তবে শরীরের ক্লান্তির চেয়ে, মনের ক্লান্তি দিগুণ। রুমে অন্ধকারে একা একা অনেক সময় বসে ছিল মেঘ, তবে বন্ধ ঘরে থাকতে তার ভালো লাগছিল না। বাহিরের সতেজ নিশ্বাস তার ভীষণ প্রয়োজন, এই উদাসীন মনের প্রশান্তি দরকার। মেঘ রুম থেকে বের হয়ে, ছাদে যায়। একটু একা সময় কাটাতে।
অন্যদিকে আবিহার কাজিনরা সকলে ছাদে বসে পার্টি করছে। মেহেদী অনুষ্ঠান শেষে সকলে, যখন ক্লান্ত হয়ে রুমে ফিরে যাবে তখন তারা ছাদে বসে মদ, সহ অন্যান্য নেশা জাতীয় দ্রব্য খাবে। আমেরিকায় ডিংক্স করা খুবই সাধারণ বিষয়, এখানকার মানুষ পার্টির মধ্যে নেশা জাতীয় দ্রব্য খায়। কাজিনরা সকলে ডিংক্স করছে, আর মিউজিক চালিয়ে নাচ – গান করছে। তবে মিউজিকের ভলিউম কম থাকায়, বাড়ির সদস্যরা শুনতে পায় না। সকলে যখন পার্টি করার ব্যস্ত, তখন ছাদে এসে উপস্থিত হয় মেঘ।
ছাদে এসে সকল কাজিনদের দেখে মেঘ অবাক হয়ে যায়। মেঘ বলে __
“- তোমরা এখানে কি করছ? বাড়ির সকলে টার্য়াড হয়ে ঘুমিয়ে পড়েছে, তোমরা ঘুমাবে না?
মেঘকে দেখে সকল কাজিনরা তাকে ডাক দেয়। মেঘ তাদের কাছে যায়, মেঘ দেখে তাদের সামনে কিছু মদ জাতীয় পানীয় খাবার রাখা আছে। মেঘ অবাক হয়ে বলে ___
“- তোমরা সকলে কি এখানে বসে ডিংক্স করছ?
“- আরে না মেঘ, এইটা মদ না। আমেরিকার মানুষ যখন কাজ করে টার্য়াড হয়ে যায়, তখন এই কোমল পানীয় খায়৷ তাদের শরীর বা মনের ক্লান্তি দূর করতে _.
কাজিনদের বলা কথাটা মেঘের বিশ্বাস হয় না৷ মেঘ এক গ্লাসে রাখা মদ, একটু নাক দিয়ে ঘ্রাণ নেয়। সঙ্গে সঙ্গে সে দ্রুত সরে যায়, কি বিশ্রি গন্ধ। মেঘের সন্দেহ ঠিক, এইটা মদ। মেঘ বলে __
“- তোমরা মিথ্যা কেনো বলছ? এইটার বিশ্রি গন্ধ বলে দিচ্ছে, এইটা কোনো কোমল পানীয় জাতীয় খাবার না। বরং এইটা মদ __.
“- মেঘ বিশ্বাস কর, এইটা মদ না। আচ্ছা তুমি একটু খেয়ে দেখো, এরপর বুঝতে পারে এইটা মদ না সাধারণ পানি __.
“- না আমি এইসব খায় না __.
“- আরে মেঘ একটু খেলে, কিছু হবে না __.
সকল কাজিনরা মেঘকে শক্ত করে ধরে। এরপর জোর করে মদ জাতীয় পানীয় খায়িয়ে দেয়। প্রথম এক প্যাক মেঘের পেটে পড়তেই তার বমি করে দেওয়ার মতো অবস্থা হয়। জীবনের প্রথমবার সে, মদ খাচ্ছে। আর এর বিশ্রি গন্ধে মেঘের সারা শরীর গুলিয়ে আসে, তার মাথা চক্কর দিয়ে উঠে।
মেঘ নিষেধ করে দেয়, সে আর খাবে না৷ কিন্তু আবিহার দুষ্ট কাজিনরা তার কথা শুনে না, জোর করে ধরে তাকে আরো কয়েক প্যাক মদ খায়িয়ে দেয়। মেঘের এখন নেশা ধরে গিয়েছে, সে এখন কি করছে কিছু বুঝতে পারে না। তবে তার এখন কিছু সেন্স রয়েছে, কাজিনরা বলে __
“- মেঘ তুমি কি আর ও কোমল পানীয় খাবে?
মেঘ হাত দিয়ে না করে দেয়, তার মাথা সহ সারা শরীরে চক্করির মতো ঘুরছে। এই অবস্থায় তার এখানে থাকা উচিত হবে না, রুমে ফিরে যেতে হবে। মেঘ তার ঠোঁট দিয়ে থেমে থেমে উচ্চারণ করে __
“- আমি রুমে যাব __.
কাজিনদের মধ্যে একজন মেঘকে ধরে, তার রুমের দরজার সামনে দিয়ে আসে৷ এরপর সে চলে যায়। মেঘ দেয়াল ধরে, দাঁড়িয়ে থাকে৷ এখন সে সম্পূর্ণ রূপে, নেশায় আসক্ত হয়ে গেছে। তার ব্রেন এখন কাজ করছে না, সব পুরাতন কথাই মনে পড়ছে। মেঘ তার রুম ঠিক করে চিনতে পারছে না,পাশাপাশি দুইটা রুম থাকায় কোনটা তার সেটা বুঝতে পারছো না। মেঘ তার রুমের দরজা থেকে দূরে সরে যায়, এরপর পাশের রুমের দরজায় গিয়ে কড়া নাড়ে৷ যেখানে আদ্রিয়ান থাকে।
আদ্রিয়ান তার রুমে বসে ঘুমানোর জন্য রেডি হচ্ছিল। তার শরীর এখন ভীষণ টার্য়াড। আদ্রিয়ান যখন বিছানায় ঘুমাতে যাবে, তখন তার রুমের দরজায় কেউ কড়া নাড়ে। রাত প্রায় সাড়ে বারোটার সময়, তার রুমের দরজায় কে ডাকতে এসেছে? কোন বিপদ হলো না তো আবার। আদ্রিয়ান তার রুমের দরজা খুলার জন্য, দরজার কাছে যায়। আদ্রিয়ান দরজা খুলে, বাহিরে যাওয়ার সাথে সাথে তাকে কেউ শক্ত করে জড়িয়ে ধরে। হঠাৎ করে এমন করায়, আদ্রিয়ান কিছুটা অবাক হয়ে যায়। আদ্রিয়ান কিছুক্ষণ চুপ থাকার পর, সে তার বুকে থাকা মেয়েটার হাত ধরে তার থেকে দূরে সরিয়ে দেয়.
মেঘ আদ্রিয়ানের থেকে দূরে সরে যায়। তার চুল এলেমেলো হয়ে গেছে, যার ফলে তার সমস্ত চুল মুখের সামনে এসে পড়েছে। মেঘের মুখ, আদ্রিয়ান ভালো করে দেখতে পারছে না। যার জন্য সে আলতো হাতে মুখের চুল, কানের পিঠে গুঁজে দেয়। আদ্রিয়ান মুখ দেখে চিনতে পারে, এইটা মেঘ। কিন্তু মেঘ এতো রাতে তার রুমে কি করছে, আর এমন করে তাকে জড়িয়ে ধরল বা কেনো। আদ্রিয়ান বলে __
“- মেঘ তুমি আমার রুমে কি করছ?
আদ্রিয়ান আজ প্রথমবার মেঘের নাম, তার কণ্ঠ দিয়ে উচ্চারণ করল। মেঘ মনের অজান্তেই হেসে উঠে, তার কানে শুধু আদ্রিয়ানের বলা তার নাম শুনা যাচ্ছে। মেঘের সৃতির পাতায় ভেসে উঠে, চৌদ্দ বছর আগের তাদের বিয়ের ঘটনা মেঘ আদ্রিয়ানের দিকে তাকিয়ে, মিটমিট করে হাসে আর বলো উঠে __
“- আমি তোমার রুমে কি করছি মানে, তুমি আমার বর হও না। বউরা বিয়ের পর, তাদের বরের রুমেই তো থাকে __.
বর শব্দটা শুনে আদ্রিয়ান কিছুক্ষণের জন্য থমকে যায়। আদ্রিয়ান বলে __
“- মেঘ আর ইউ মেড। কে তোমার বর? আর তুমি আমার বউ না __.
“- তুমি মিথ্যা কথা বলছ, আদ্রিয়ান রেদোয়ান পঁচা শুধু মিথ্যা কথা বলে। আর হ্যাঁ আমি পাগল, শুধু তোমার জন্য। আই লাভ ইউ জামাই __.
“- হোয়াট __.
আদ্রিয়ান মেঘের কথা শুনে, সত্যি বুঝতে পারে না সে কি বলছে। মেঘ তার বউ হলো কবে থেকে, তাদের বিয়েই তখন হয়েছে। আর মেঘ তাকে ভালোবাসে মানে? আদ্রিয়ান বলে __ __
“- তুমি যদি আমার বউ হও৷ তবে আমাদের বিয়ে কবে হয়েছে, কোথায় হয়েছে?
“- সপ্নে হয়েছে আমাদের বিয়ে __.
“- মেঘ সপ্নে কি কখন বিয়ে হয়?
মেঘ বোকার মত হাসি দিয়ে বলে উঠে __
“- হুম হয়ত৷ আমি কাল সপ্নে দেখেছি, তোমার আর আমার বিয়ে হয়েছে। বাসর হয়েছে, এরপর গুণে গুণে এগারোটা বাচ্চা হয়েছে আমাদের। কিন্তু আমার বাচ্চারা কোথায়? তুমি আমাদের বাচ্চাদের কোথায় লুকিয়ে রেখেছ?
আদ্রিয়ান মেঘের কথা শুনে কি বলবে, তাই ভুলে গিয়োছো। সপ্নে তাদের বিয়ে হয়েছে, ও তা দেখছে। আর বাচ্চা, তা ও আবার এগারোটা। আদ্রিয়ান মেঘকে একবার উপর থেকে নিচ অবধি দেখে নেয়, যা পাটকাঠির মতো শরীর। বড়জোর দুই বাচ্চার মা হতে পারবে, এর চেয়ে বেশি না। আর আদ্রিয়ান রেদোয়ানের বাচ্চার মা হওয়া এত সহজ না। আদ্রিয়ান থমকে যায়, সে এইসব কি ভাবছে। মেঘ কেনো তার বাচ্চার মা হবে?মেঘের শরীর থেকে আসা, বাজে গন্ধ আদ্রিয়ানের নাকে যায়। আদ্রিয়ান বলে __
“- মেঘ তুমি মদ খেয়েছ?
মেঘ বাচ্চাদের মতো কিউট করে বলে __
“- না আমি মদ খায় নাই, আর ওইসব অখাদ্য খায় না আমি। কিন্তু ছাদে কাজিনরা সকলে মিলে, জোর করে কোমল পানি জাতীয় শরবত খায়িয়ে দিয়েছ __.
আদ্রিয়ান আগে থেকেই সন্দেহ হয়েছিল, মেঘ ইচ্ছা করে মদ খাবে না। নিশ্চয়ই তাকে জোর করে খায়িয়ে দিয়েছ। ওই কাজিনদের উপর আদ্রিয়ানের ভীষণ রাগ হচ্ছে৷ কাল সকালে ওই প্রতৈকে কান ধরে উঠবস, না করানো অবধি তার শান্তি লাগবে না৷ দিনদিন ভীষণ ফাযিল হয়ে যাচ্ছে সকলে। আদ্রিয়ানের ভাবনার মাঝে, মেঘ তার হাতের নিচ থেকে তার রুমে ঢুকে যায়। আদ্রিয়ানের বিছানায় বসে যায় মেঘ, তার ভীষণ গরম লাগছে। এই মদ খাওয়ার পর থেকে, এমন হচ্ছে তার সাথে। মেঘ তার পড়নের জামার হুক, কয়েকটা ওপেন করে। আদ্রিয়ান যখন তার ভাবনার জগৎ থেকে বের হয়ে আসে, তখন মেঘকে তার সামনে দেখতে পায় না।
মেঘকে না দেখতে পেয়ে, সে পিছনে ঘুরে তাকায়। মেঘ তার বিছানায় বসে আছে, আর তার জামাকাপড় খুলছে৷ আদ্রিয়ান তাড়াতাড়ি করে, মেঘের কাছে যায়৷ মেঘের জামায় থাকা হাত, শক্ত করে ধরে ফেলে। আদ্রিয়ান ধমকের সুরে বলে __
“- মেঘ কি করছ এইটা তুমি? জামাকাপড় কেনো খুলছ?
“- কারণ আমার গরম করছে __.
“- তাই বলে তুমি একজন অপরিচিত পুরুষেরসামনে জামা খুলবে?
“- তুমি অপরিচিত নও তো, তুমি আমার স্বামী __.
আদ্রিয়ান মেঘের উপর বিরক্ত হয়। মেঘ আদ্রিযানের হাত এক ঝটকায় দূরে সরিয়ে দেয়, সে আবার তার জামার হুক খুলতে থাকে। আদ্রিয়ান বুঝে যায়, যদি সে এখন মেঘকে না আটকায় তবে বড় কোনো দুর্ঘটনা ঘটে যাবে। আদ্রিয়ান মেঘের হাত আবারও শক্ত করে ধরে, এরপর তাকে কোলো তুলে নেয়। হঠাৎ করে মেঘকে কোলে তুলায়, মেঘ আদ্রিয়ানের কর্লার শক্ত করে ধরে। আদ্রিয়ান তাকে নিয়ে ওয়াশরুমে চলে যায়।
ওয়াশরুমের দরজা খুলে ভিতরে প্রবেশ করে আদ্রিয়ান। মেঘকে কোল থেকে নিচে নামিয়ে রাখে। এরপর পানির ঝর্ণা ছেড়ে দেয়, মেঘের শরীরে হঠাৎ করে পানি পড়ায় সে কিছুটা কেঁপে উঠে। আদ্রিয়ান দূরে গিয়ে দাঁড়ায়, মেঘের সমস্ত শরীর পানি দিয়ে ভিজে গেছে। পড়নে থাকা জামা, গায়ের সাথে লেপ্টে আছে। আদ্রিয়ান যা দেখে শুকনো ঢুক গিলে, এরপর তার চোখ সরিয়ে নেয়। কিন্তু মেঘ হঠাৎ করে আদ্রিয়ানের হাত ধরে, তার কাছে নিয়ে আসে। যার ফলে আদ্রিয়ান ও ঝর্ণার পানি দিয়ে ভিজে যায়, মেঘ নিভু নিভু চোখে তাকিয়ে থাকে আদ্রিয়ানের দিকে। আদ্রিয়ান ও তাই করে, আদ্রিয়ানের হয়ত ঘোর লেগে যায়। মেঘের এমন মেহনীয় রূপ দেখে, যেকোনো পুরুষের ঘোর লেগে যাবে। আদ্রিয়ান তার কণ্ঠ ভিজিয়ে নেয়। তার চোখ নিচুঁ করে রাখে।
মেঘ হঠাৎ করে আদ্রিয়ানকে জড়িয়ে ধরে, শক্ত করে। আদ্রিয়ান দুই পা পিছিয়ে যায়, তার শরীরে ঠান্ডা শিহরণ বয়ে যায়। মেঘের ভিজা শরীর তার বুকের স্পর্শে আসে, যা ফলে তার হার্টবিট বেড়ে যায়। মেঘ তার কণ্ঠে দিয়ে উচ্চারণ করে __
“- আই লাভ ইউ আদ্রিয়ান রেদোয়ান __.
আদ্রিয়ান তা স্পষ্ট শুনতে পায় না। প্রায় পাঁচ মিনিট পর মেঘকে কোলো নিয়ে ওয়াশরুম থেকে বের হয়ে আসে আদ্রিয়ান। বিছানায় না শুয়িয়ে, তাকে ছোফায় নিয়ে যায়। এরপর সেখানে ধীরে ধীরে শুয়িয়ে দেয়৷ মেঘের এখন হুঁশ নাই, সে ঘুমিয়ে পড়েছে৷ আদ্রিয়ান দেখে মেঘের সারা শরীর ভিজা। জামা কাপড় পাল্টানো উচিত, কিন্তু সে কি করে মেঘের জামাকাপড় বদলে দিবে?
তোমার নামে নীলচে তারা পর্ব ৭
আদ্রিয়ান তার টেবিলে থাকা হেয়ার ড্রয়ার দিয়ে সযত্নে, মেঘের চুল মুছিয়ে দেয়। মেঘের পড়নে থাকা জামা, উপরিভাগ একটু ড্রায়ার দিয়ে শুকিয়ে দেয়। মেঘ এখন অসচেতন, সে দেখল না আজ তার স্বামী তার কত খেয়াল রেখেছে। কত যত্ন আর ভালোবাসা দিয়ে, সারারাত তাকে আগলে রেখেছে। সারারাত কেটে যায়, আদ্রিয়ান মেঘের পাশেই ছোফার কাছে বসে থাকে। মেঘ তার হাত শক্ত করে ধরে রাখে, যেনো হাত ছেড়ে দিলেই আদ্রিয়ান পালিয়ে যাবে। তাকে ছেড়ে বহুদূরে চলে যাবে, হারিয়ে যাবে অজানা কোনো গন্তব্যে __.
