তোমার নামে লেখা চিঠি পর্ব ১৪

তোমার নামে লেখা চিঠি পর্ব ১৪
নওরিন মুনতাহা হিয়া

রাত প্রায় নয়টা ইনায়া নিজের রুমে বসে আছে তার হাতে এসএস কোম্পানির কাগজ। দুপুরে আসিফ তাকে যে এসএস কোম্পানির ইনফরমেশন দিয়েছে তার কাগজ বেশ মনোযোগ সহকারে দেখে যাচ্ছে ইনায়া। শাফায়াত নামটা যখন থেকে শুনেছে ইনায়া তখন থেকে তার মনে হচ্ছে যে এই নামটা তার বড্ড বেশি পরিচিত। কিন্তু ইনায়া সৃতিচারণ করতে পারছে না এই মানুষটা আসলে কে?
ইনায়ার হঠাৎ করে কি যেনো মনে হয় সে হাতে থাকা কাগজ রেখে পাশে থাকা টেবিল থেকে ফোন হাতে নেয়। ফোনের কল লিষ্টে গিয়ে অরুণা বেগমের নাম্বারে কল দেয় সে। অরুণা বেগম ফোন রিসিভ করে ইনায়া উদ্বেগ প্রকাশ করে বলে –

“- মামণি তোমার কি শাফায়াত নামে কোনো পরিচিত লোক আছে? আচ্ছা আমার আত্মীয় স্বজনের মধ্যে কি শাফায়াত নামের কোনো লোক আছে?
ইনায়ার কণ্ঠে হঠাৎ করে শাফায়াতের নাম শুনে চমকে যায় অরুণা বেগম। আজ প্রায় পনেরো বছর পর শাফায়াতের নাম আবার শুনেছে অরুণা বেগম। অরুণা বেগম বলে

আরও গল্প পড়তে এখানে ক্লিক করুন 


“- ইনায়া তুমি হঠাৎ করে শাফায়াতের বিষয়ে কেনো জিজ্ঞেস করছো? আর শাফায়াত প্রায় অনেক বছর আগে মারা গেছে এখন তো তোমাকে বিরক্ত করার কথা না শাফায়াতের “।
শাফায়াত মারা গেছে কথাটা শুনে ইনায়া সম্পূর্ণ শকড হয়ে যায়। কিন্তু ইনায়া বুঝতে পারে অরুণা বেগমের সাথে শাফায়াতের পরিচয় ছিলো তার মানে ইনায়ার সন্দেহ সঠিক। ইনায়া বলে –

“- মামণি এই শাফায়াত আসলে কে? কি সম্পর্ক ওনার সাথে আমার? আর শাফায়াত কি করে মারা গেছে?
“- ইনায়া তুমি যানো না শাফায়াত তোমার মামা হয়। তোমার মায়ের মৃত্যুর পর তোমার মায়ের সম্পত্তির জন্য ও তোমাকে নিজের কাছে জোর করে রাখতে চেয়ে ছিলো। কিন্তু আমি তাকে বারণ করে দেয়। এরপর কয়েক বছর পর জানতে পারি শাফায়াত একটা এক্সিডেন্টে মারা গেছে “।
অরুণা বেগমের কথা ইনায়ার মাথার উপর দিয়ে চলে যায় শাফায়াত যদি মারা যায়। তাহলে এতোদিন এসএস কোম্পানির এমডি হিসাবে দায়িত্ব কি করে পালন করে গেছে। আর শাফায়াত তার মামা ছিলো মানে ইনায়ার নামে যে এসএসে কোম্পানি তার নানা লিখে দিয়ে গেছে শাফায়াত সেটা যানতো। যার জন্য ইনায়ার মায়ের মৃত্যুর পর তাকে নিজের কাছে রাখতে চেয়ে ছিলো।
ইনায়া তার ভাবনার জগৎ হারিয়ে যায় অন্যদিকে অরুণা বেগম ফোনের অপর পাশ থেকে ইনায়ার কোনো জবাব না পেয়ে। অরুণা বেগম বলে –

“- ইনায়া কি হয়েছে তোমার? কথা বলছো না কোনো ইনায়া?
অরুণা বেগমের কণ্ঠ শুনে ইনায়ার হুঁশ ফিরে আসে সে বলে
“- না কিছু হয় নাই মামণি। শাফায়াত যে আমার মামা হয় সেটা আমার জানা ছিলো না। আচ্ছা এখন ফোন রাখি আমার জরুরি কাজ আছে “।
ইনায়া ফোন রেখে দেয় সে এখন গভীর চিন্তায় মগ্ন। যদি শাফায়াত অনেক বছর আগে মারা যায় তাহলে ম্যানেজারের কথা অনুসারে এতোদিন কোম্পানির সকল মিটিং কে করেছে। আর এসএস কোম্পানির সকল টাকা কার ব্যংক একাউন্টে বা জমা হয়েছে। ইনায়ার মাথার যেনো এখন হাজার রহস্য ঘুরঘুর করছে কিন্তু কোনো সমাধান নাই এই রহস্যর। ইনায়ার ভাবনার মাঝে রুমে প্রবেশ করে অরণ্য।
অরণ্যর উপস্থিত ইনায়া বুঝতে পারে সে না নিজের ভাবনার জগৎ হারিয়ে গেছে। অরণ্য রুমে এসে দেখে ইনায়া খুব মনোযোগ দিয়ে কি যেনো ভেবে যাচ্ছে। অরণ্য বলে –

“- কি হয়েছে আপনার ইনায়া? এমন মনোযোগ সহকারে কোন ভাবনার জগতে হারিয়ে গেলেন আপনি?
ইনায়ার ভাবনার মাঝে অরণ্যর কণ্ঠ শুনে তার হুঁশ ফিরে আসে পিছনে ফিরে অরণ্যকে দেখে ইনায়া এসএস কোম্পানির কাগজ লুকিয়ে ফেলে। ইনায়ার এমন কাণ্ডে অরণ্য ভ্রু কুচঁকে ওর দিকে তাকিয়ে থাকে অরণ্য বলে –
“- কি এমন করে লুকিয়ে রাখলেন আপনি? উঁকিল দিয়ে কি ডিভোর্স পেপার রেডি করেছেন আপনি? দেখেন ইনায়া আমি কিন্তু আপনাকে ডিভোর্স দিবো না। বউ ছাড়া থাকা আমার দ্বারা সম্ভব না “।
অরণ্যর এমন কথা শুনে ইনায়া রহস্যর কথা ভুলে যায় এই লোকটা সবসময় যেকোনো সিরিয়াস পরিস্থিতি ফান করে। ইনায়া রাগী লুকে অরণ্যর দিকে তাকিয়ে বলে –

“- অরণ্য আপনাকে ডিভোর্স দিতে চাই না বরং খুন করতে চাই আমি। এখন আমাকে বিরক্ত না করে চলে যান এখান থেকে।
ইনায়ার কথা শুনে অরণ্য হাসে এরপর নিজের পকেট থেকেএকটা ট্রেনের টিকিট বের করে। অরণ্য টিকেট ইনায়ার হাতে ধরিয়ে দেয় আর বলে –
“- কালকে সকাল সকাল রেডি হয়ে থাকবেন। ট্রেন কিন্তু খুব ভোরে ছেড়ে দেয় আর রূপনগরে যেতে হলে একমাএ ট্রেন দিয়ে যাওয়া লাগবে। সো ব্যাগ পএ গুছিয়ে রাখেন এখন থেকে “।
অরণ্যর কোনো কথা ইনায়া বুঝতে পারে না সে তার হাতে থাকা কাগজ খুলে দেখে সেখানে ট্রেনের টিকিট রয়েছে। আর অরণ্য এই ট্রেন দিয়ে রূপনগর যাওয়ার কথা কেনো বলছে এই রূপনগর কোথায়? ইনায়া বলে –

“- আপনি আমাকে ট্রেনের টিকেট কেনো দিলেন? আর সকাল সকাল রেডি হয়ে কোথায়া যাবো আমরা? আর রূপনগর আর বাড়ি?
ইনায়ার কথা শুনে অরণ্য বলে –
“- ইনায়ার আপনার নানার বাড়ি রুপনগর। কালকে সকালে সেখানে যাবো আমরা ট্রেনে করে। যার জন্য টিকেট কিনে নিয়ে এসেছি “।

“- আমার নানার বাড়ি রূপনগর সেটা আপনি কি করে যানলেন? আর আমার নানার বাড়িতে আপনি কেনো যাবেন?
“- শাফায়াতের বিষয়ে ইনফরমেশন যানতে হলে রূপনগর যাওয়া দরকার আমাদের। আর এসএস কোম্পানির আসল মালিক মানে আপনার নানার মৃত্যু বা অন্য সব ঘটনার বিষয়ে জানতে হলে রূপনগর যেতে হবে। তিনমাস পর আদালতের রাই দিবে তখন যদি নিজেকে নিদোষ প্রমাণ করতে না পারেন তাহলে কিন্তু ফাঁসি হয়ে যাবে আপনার “।
চৌধুরী বাড়িতে সকলে ডিনার করার জন্য টেবিলে উপস্থিত হয় অরুণা বেগম রান্নাঘর থেকে খাবার নিয়ে এসে টেবিলে সাজিয়ে রাখে। মিলন সাহেব খাবার খাওয়া শুরু করে দেয় ইভান সিঁড়ি দিয়ে নিচে নেমে আসে এরপর টেবিলে বসে যায়। ইভান খাবার খাওয়া শুরু করে দেয় মিলন সাহেব বলে –

“- ইভান বিদেশ থেকে ফিরে তোমার পরিকল্পনা কি? ইনায়ার বিয়ে হয়ে গেছে তোমার জীবন থেকে সকল সমস্যা দূর হয়ে গেছে। এখন তোমার এই দেশে বা এই বাড়িতে থাকতে কোনো সমস্যা নাই নিশ্চয়ই “।
মিলন সাহেবের কথা শুনে ইভান খাবার খাওয়া বন্ধ করে দেয়। ইনায়ার বিয়ের কথা মনে পড়ে যায় ইভানের যা সে এতোদিন ভুলার চেষ্টা কর ছিলো। ইনায়াকে সেইদিন অরণ্যর সাথে দেখার পর থেকে তার ভিতরে এক অদ্ভুত অনুভূতি কাজ করছে। ইনায়ার সৃতি তার সপ্ন জুড়ে বিচরণ করছে শতো চেষ্টা করার পর ইনায়াকে ভুলে যাওয়া ইভানের দ্বারা সম্ভব হচ্ছে না। ইভান শান্ত গলায় বলে –

“- হুম আব্বু ইনায়া এই বাড়ি ছেড়ে চলে গেছে এখন এই দেশে বা এই বাড়িতে থাকতে আমার কোনো অসুবিধা নাই। কিন্তু হঠাৎ করে এই কথা জিজ্ঞেস করার কারণ কি জানতে পারি?
মিলন সাহেব একবার অরুণা বেগমের দিকে তাকিয়ে দেখে অরুণা বেগম চোখ দিয়ে তাকে ইশারা করে। মিলন সাহেব গম্ভীর গলায় বলে –
“- চৌধুরী বাড়ির সকল ব্যবসার দায়িত্ব এতোদিন ইনায়ার ছিলো কিন্তু এখন ইনায়ার নিজের বিজনেস আছে। অতঃপর আমার ছেলে হিসাবে এই কোম্পানির সকল দায়িত্ব তোমার হবে। তুমি কি কোম্পানির এমডি হিসাবে কোম্পানি জয়েন করতে চাও?

মিলন সাহেবের মুখে কোম্পানি জয়েন করার কথা শুনে ইভান অবাক হয়। তার বাবা ইনায়াকে কোম্পানির সকল দায়িত্ব না দিয়ে তাকে এমডি হিসাবে জয়েন হতে বলছে। ইভানের কথাটা বিশ্বাস হচ্ছে না ইভান অরুণা বেগমের দিকে তাকিয়ে দেখে। অরুণা বেগম নরমাল হয়ে দাঁড়িয়ে আছে আর নাতাশা যথেষ্ট মনোযোগ দিয়ে তার খাবার খেয়ে যাচ্ছে। ইভান সকলের মনোভাব ভালো করে বুঝে বলে –
“- আব্বু কোম্পানির মালিক যেহেতু তুমি তাই তুমি যা সিদ্ধান্ত নিবে তাই হবে। আর ইনায়া যদি এই কোম্পানির দায়িত্ব পালন করে তাহলে আমার কোনো সমস্যা নাই। ও না হয় আমার কোম্পানির একজন কর্মচারী হিসাবে কাজ করে যাবে যার জন্য মাস শেষে ভালো সাল্যারি দেওয়া হবে ওকে।
ইভানের কথা শুনে অরুণা বেগম কথা না চুপ করে থাকতে পারল না। ইভানের অহংকার কোনো দিন শেষ হবে না যা অরুণা বেগম খুব ভালো করে যানে। অরুণা বেগম বলে –

“- ইভান তুমি কি বললে ইনায়া তোমার কোম্পানিতে একজন কর্মচারী হয়ে কাজ করবে। তুমি হয়তো ভুলে গেছে ইনায়া কে? ও অরণ্য রাজ চৌধুরীর বউ যে এই শহরের সবচেয়ে বড়ো ব্যবসায়ী। আর ইনায়া বর্তমানে এসএস কোম্পানির মালিক তাই তোমার কোম্পানির চাকরির দরকার ইনায়ার নাই “।
অরুণা বেগম বেশ গর্বের সহকারে ইভানের সামনে ইনায়ার প্রশংসা করে। ইভানের রাগ হয় তার মায়ের কথা শুনে সে রাগী চোখে অরুণা বেগমের দিকে তাকিয়ে বলে –

তোমার নামে লেখা চিঠি পর্ব ১৩

“- আম্মু তোমার মুখে কি ইনায়ার সুনাম ছাড়া কোনো কথা আসে না। আর ও অরণ্যর বউ হয়ে গেছে বলে কি ওকে এখন মাথায় নিয়ে নাচতে হবে আমার। অরণ্য আমাদের শএু ওর সাথে তুমি ইনায়ার বিয়ে দিয়ে তুমি ভুল করেছো?
“- অরণ্য আমাদের শএু না ও এই বাড়ির ছেলে। এই চৌধুরী বাড়ির উপর তোমার যতটুকু অধিকার আছে অরণ্যর ও ঠিক সমান অধিকার আছে। আর অরণ্য যথেষ্ট ভালো আর ভদ্র ছেলে ওর সাথে ইনায়া সুখে থাকবে।
“- আম্মু তোমার কাছে নিজের ছেলেকে না অন্য সবাইকে ভালো লাগে। মাঝে মধ্যে মনে হয় তুমি আমার না বরং শএু.
আমি অনো অসুস্থ বিছানা থেকো উঠতে পারছি না। যার জন্য গল্প এলেমেলো হয়ে গেছে। তবে কালকে থেকে সুন্দর হবে।

তোমার নামে লেখা চিঠি পর্ব ১৫