তোমার নামে লেখা চিঠি পর্ব ১৮
নওরিন মুনতাহা হিয়া
অরণ্য ইনায়ার দিকে তাকিয়ে দেখে সে তার দিকে এক দৃষ্টিতে তাকিয়ে আছে। অরণ্যর মুখে হাসি ফুটে উঠে সে হাত বাড়িয়ে ইনায়ার মাথায় টার্চ করে এরপর জোরে একটা টোকা দেয়। ইনায়া ব্যাথায় আত্মনাথ করে উঠে কপালে হাত দিয়ে অরণ্যর দিকে ভ্রু কুঁচকে তাকিয়ে দেখে। অরণ্য বলে –
“- মিসেস ইনায়া এমন করে যদি বরের দিকে তাকিয়ে থাকেন তাহলে বরের উপর আপনার নজর লেগে যাবে। যানি আমি অনেক সুর্দশন তাই বলে কি এভাবে তাকিয়ে থাকবেন আমার বুঝি লজ্জা করে না “.
অরণ্যর কথা শুনে ইনায়া নিজের চোখ সরিয়ে ফেলে ইনায়া এতাখন অরণ্যর বিষয়ে কি চিন্তা ভাবনা কর ছিলো সেটা ভেবে। ইনায়ার নিজের উপর রাগ হয় তারপর আবার অরণ্যর কথা শুনে ইনায়া বলে –
“- অরণ্য আপনি সুদর্শন না আর আমি আপনার দিকে তাকিয়ে ছিলাম না। মিথ্যা কথা বলা বন্ধ করেন “।
“- মিথ্যা কি আমি বলছি না আপনি বলছেন ইনায়া। নিজের দোষ অন্যর উপর দিয়ে কি আপনি শান্তি পান “।
ইনায়া আর অরণ্যর ঝগড়ার মধ্যে রুমের দরজায় কেউ নক করে তারা দুইজনে সেই দিকে তাকিয়ে দেখে সেখানে একজন বৃদ্ধ মহিলা দাঁড়িয়ে আছে। বৃদ্ধ মহিলা তাদের খাবার খাওয়ার জন্য নিচে যেতে বলে এরপর ওনি চলে যান। ইনায়া আর অরণ্য অনেক সময় ধরে জার্নি করেছে যার জন্য তারা অনেক খুদার্ত আর টার্য়াড ছিলো। যার জন্য তারা নিচে যায় খাবার খেতে।
খাবার খাওয়ার জন্য নিচে গিয়ে তারা অবাক হয়ে যায় সেখানে বিশাল আয়োজন করা হয়েছে খাবারের। ইনায়া বলে –
আরও গল্প পড়তে এখানে ক্লিক করুন
“- নানু আপনারা এতো খাবারের আয়োজন কেনো করছেন? আর এতো সময়ের মধ্যে এতো খাবার কি করে রান্না করলেন? আমরা দুইজন মিলে এতো খাবার কি শেষ করতে পারব?
ইনায়ার কণ্ঠ শুনে ইভান চুপ হয়ে যায় তার মুখ ফুটে কেনো কথা আসছে না। ইনায়াকে ফোন করেছে কিন্তু এখন সে কি বলবে ওপর পাশ থেকে ইনায়া কোনো উত্তর না পেয়ে ফোনের দিকে তাকিয়ে দেখে। অপরিচিত বক্তি এখনো ফোন কাটে নাই তা দেখে ইনায়া আবার জিজ্ঞেস করে –
“- কি হয়েছে কথা বলেন না কেনো? ফোন করেছেন কি চুপ থাকার জন্য “।
ইনায়ার কথা শুনে ইভান নিজের মনকে শক্ত করে বলে –
“- ইনায়া কেমন আছেন? সংসার জীবন কেমন কাটছে?
ইভানের কণ্ঠ শুনে ইনায়া অবাক হয়ে যায় ইভানের কণ্ঠ তার পরিচিত। ইনায়ার চোখের সামনে ভেসে উঠে ইভানের সাথে তার সমস্ত সৃতি আর বিয়ের দিনের ঘটনা। ইনায়ার সঙ্গে সঙ্গে রাগ উঠে যায় আজ শুধু ইভানের জন্য তার নিজের মামণি ভালো বাবার থেকে দূরে থাকতে হয়েছে। ইনায়া বলে –
“- আমার ধারণা যদি ভুল না হয় তাহলে আপনি ইভান ভাই রাইট? কিন্তু হঠাৎ করো ইভান চৌধুরীর তার জীবনের সবচেয়ে ঘৃণিত নারীর কথা কি করে মনে পড়লো?
“- ইনায়া আপনি কি আমার উপর রাগ করেছেন? অবশ্য আপনার সাথে যা করেছি তা আমি অন্যায় করছি যার জন্য সরি “।
“- ইভান ভাই রাগ জেদ সব মানুষের কাছে করা হয় কিন্তু অপরিচিত মানুষের প্রতি রাগ জমিয়ে লাভ কি। আর আপনি আমার সাথে যা করছেন তা অন্যায় না কারণ অরণ্যর সাথে বিয়ে দিয়ে অনেক ভালো করেছেন।
“- তাহলে কি ইনায়া আপনি অরণ্যর সাথে সুখী?
“- হুম অনেক সুখী ইভান ভাই। স্বামী সংসার নিয়ে আমার জীবন অনেক সুখে শান্তিতে কেটে যাচ্ছে “।
“- খুব ভালো ইনায়া আপনার ভালো করতে চেয়েছি আমি। ভালো থাকবেন আপনি “।
ইভানের কথা শুনে ইনায়া বুক ভরা কষ্ট নিয়ে বলে –
“- কি অদ্ভুত বিষয় তাই না ইভান আপনি আমার ভালো চাইলেন কিন্তু আমাকে না। সারাজীবন শুধু ঘৃণা করলেন ভালোবাসলেন না। কি এমন অপরাধ হতো যদি ঘৃণা না করে ভালোবাসা দিতেন?
“- আরে কেনো পারবে না ইনায়া। আর এই প্রথম তালুকদার বাড়ির জামাই এই বাড়িতে এসেছে যদি এইটুকু আয়োজন না করা হয় তাহলে কি হয়। এখন খাওয়া দাওয়া শুরু করো এতো বেলা হয়ে গেছে নিশ্চয়ই তোমাদের অনেক খিদা লেগেছে “।
ইনায়া আর অরণ্য চেয়ারে বসে যায় বৃদ্ধ মহিলা তাদের খাবার বেড়ে দেয়। অরণ্য খাওয়া শুরু করে দেয় খাবার অনেক মজা হয়েছে। ইনায়া আর অরণ্য খাওয়া দাওয়া শেষ করে চলে যায় উপরে বিশ্রাম নিতে। রুমে গিয়ে বিছানায় শুয়ে পড়ে ইনায়া তবে অরণ্য আশেপাশে তাকিয়ে কি যেনো খুঁজতে থাকে। অরণ্যর দিকে তাকিয়ে ইনায়া ভ্রু কুঁচকে বলে
“- কি হলো অরণ্য আপনি কি খুঁজে যাচ্ছেন। এতো সময় জার্নি করে কি আপনার শরীর টার্য়াড হয়ে যায় নাই। ঘুমাবেন না আপনি?
“- ঘুমাতে ইচ্ছা করছে না আমার। আপনি ঘুমিয়ে যান আমব বরং অফিসের কাজ শেষ করি এখন “।
“- ওকে “।
ইনায়া ছোট করে জবাব দেয় এরপর সে বিছানায় আরাম করে শুয়ে ঘুমিয়ে পড়ে। অন্যদিকে অরণ্য পাশে থাকা চেয়ারে ল্যাপটপ নিয়ে কাজ করতে থাকে। অরণ্যর চোখ মুখ দেখ বুঝা যাচ্ছে তার শরীর এখন অনেক টার্য়াড ঘুম দরকার। কিন্তু এই রুমে কোনো সোফ নাই আর ইনায়ার সাথে এক বেডে সে ঘুমাতে পারবে না যার জন্য অরণ্য চেয়ারে বসে যায়। ইনায়া যখন ঘুম থেকে উঠবে তখন সে ঘুমাবে।
প্রায় রাত ছয়টা বেজে গেছে ইনায়া ঘুম থেকে উঠে দেখে বাহিরে মাগরিবের আযান দিচ্ছে অন্ধকার নেমে এসেছে। ইনায়া চোখ যায় অরণ্যর দিকে যে এখন চেয়ারে হেলান দিয়ে ঘুমিয়ে আছে। অরণ্যর হাত থাকা ল্যাপটপ পাশে টেবিলে রাখা আর অরণ্য এক হাত মাথার পিছনে দিয়ে ঘুমিয়ে আছে। ইনায়া ভাবে হযতো অরণ্য কাজ করতে করতে ঘুমিয়ে গেছে যার জন্য সে আর কিছু বলে না। ইনায়া ফ্রেশ হতে ওয়াশরুমে চলে যায় সেখান থেকে ফ্রেশ হয়ে এসে মাগরিবের নামাজ পড়ে নেই।
অন্যদিকে ইভান নিজের রুম থেকে বের হয়ে নাতাশার রুমের কাছে যায়। নাতাশার রুমের দরজার সামনে দাঁড়িয়ে সেখানে নক করে আর বলে –
“- নাতাশা তুমি কি রুমে আছো? নাতাশা?
নাতাশা টেবিলে বসে পড়াশোনা কর ছিলো তবে হঠাৎ করে ইভানের ডাক শুনে সে রুম থেকে বের হয়ে আসে। নাতাশা বলে –
“- ইভান ভাইয়া তুমি হঠাৎ আমার রুমে? কোনো দরকার?
“- হুম নাতাশা তোর কাছে কি ইনায়ার ফোন নাম্বার আছে?অফিসের ফাইলের বিষয়ে ইনায়ার সাথে আমার জরুরি কিছু কথা আছে।
ইনায়ার নাম্বার চাওয়ার কারণে নাতাশা প্রথমে একটু অবাক হয় কিন্তু পরে অফিসের কাজের কথা শুনে ইনায়ার নাম্বার দিয়ে দেয়। ইভান ইনায়ার নাম্বার নিজের ফোনর সেভ করে এরপর চলে যায় ঠিক তখন পিছন থেকে নাতাশা ইভানকে উদ্দেশ্য করে বলে –
“- ভাইয়া একটা কথা মনে রেখো ইনায়ার কিন্তু বিয়ে হয়ে গেছে। আর বিয়ে কিন্তু তুমি নিজে দাঁড়িয়ে থেকে দিয়েছো “.
নাতাশার কথা ইভান শুনে নাতাশা কথাটা কেনো বলেছে তা ইভান যানে। ইভান বলে –
“- এই ইভানের সৃতি শক্তি এতো খারাপ না যে সাতদিন আগের ঘটনা ভুলে যাবে। এখন এইসব বিষয় চিন্তা করা বাদ দে ভালো করে পড়াশোনা কর “।
ইভান কথাটা বলে চলে যায় নিজের রুমে অন্যদিকে নাতাশা ইভানের কথা শুনে হাসে। কারণ নাতাশা যা সন্দেহ করেছে তা মিথ্যা না পুরুষ মানুষ তখন নিজের ভালোবাসা বুঝতে পারে যখন তার শখের নারী অন্য কারো হয়ে যায়। নাতাশা নিজের রুমের ভিতরে চলে যায় দরজা বন্ধ করে টেবিলে বসে আবার পড়াশোনার দিকে মনোযোগ দেয়। অন্যদিকে ইভান রুমে ফিরে আসে তার হাতে থাকা ফোন থেকে ইনায়ার সেভ করা নাম্বার খুঁজে বের করে। ইভান প্রথমে অস্বস্তি বোধ কর ছিলো ইনায়াকে ফোন করতে কিন্তু পরে সাহস করে ফোন করে।
ইনায়া নামাজ শেষ করে বাহিরে বেলকনিতে আসে সেখান থেকে রাতের আকাশ দেখতে অনেক সুন্দর লাগছে। গ্রামের রাতের বাতাস সুন্দর প্রকৃতি সবকিছু ইনায়াকে মুগ্ধ করে। ইনায়ার ভাবনার মাঝে হঠাৎ করে ওর ফোন বেজে উঠে ফোনের স্কিনে তাকিয়ে দেখে অপরিচিত লোক কল করেছে।ইনায়ক প্রথমে অবাক হলে ও পরে কেনো গুরুত্বপূর্ণ কল হবে ভেবে রিসিভ করে। ইনায়া বলে –
“- হ্যালো কে বলছেন?
“- কেমন আছেন ইনায়া? স্বামী সংসার নিয়ে নিশ্চয়ই সুখে দিন কাটছে আপনার “।
ইনায়া যখন বুঝতে পারে ওপাশ থেকে আর কেউ না ইভান কথা বলছে তখন হাত থেকে ফোন পড়ে যেতে চাই। কিন্তু ইনায়া ফোন শক্ত করে ধরে আজ প্রায় সাতদিন পর ইভানের কণ্ঠ শুনে। তার মনে পড়ে যায় বিয়ের দিনের ঘটনা ইনায়া বলে –
তোমার নামে লেখা চিঠি পর্ব ১৭
“- ইভান ভাই আপনি? এতো দিন পর হঠাৎ কল করলেন কেনো?
সোমবার থেকে আমার পরীক্ষা যার জন্য আমি অনেক বিজি। তবে আজকে থেকে নিয়মিত গল্প আসবে