তোমার নামে লেখা চিঠি পর্ব ২৫

তোমার নামে লেখা চিঠি পর্ব ২৫
নওরিন মুনতাহা হিয়া

সূর্যের তাপে গ্রামের পরিবেশ যখন গরম হয়ে যাচ্ছে, তখন আকাশ অন্ধকার হয়ে গেছে চারদিকে বাতাস বয়ে যাচ্ছে। অল্প সময়ের মধ্যে বৃষ্টি পড়বে চারপাশের জগৎকে শান্ত করতে, তার অবিরাম বর্ষণ দিয়ে প্রকৃতির রুখ ভাবকে শান্ত করতে। অরণ্য আর ইনায়া একে অপরের দিকে তাকিয়ে দেখে যাচ্ছে তাদের মধ্যে দুইজনে শান্ত, ইনায়া চোখ অবিশ্বাস্য অরণ্যর এমন ব্যবহার তার কাছে অপরিচিত। বাহিরে যে ঝড়ের পূর্বাভাস দেখা যাচ্ছে ইনায়া আর অরণ্যর সেখানে মনোযোগ দেয় নাই, তাদের মধ্যে নীরবতা ভেঙে অরণ্য বলে –

“- ইনায়া বাড়ি ফিরে চলুন। আকাশের অবস্থা ভালো না বৃষ্টি পড়তে পারে।
অরণ্য কথাটা বলে ইনায়ার হাত ধরে ইনায়া তার হাত সরিয়ে নেয়, এরপর সে থানার গেইট থেকে বের হয়ে হেঁটে চলে যায়। ইনায়ার এমন ব্যবহার দেখে অরণ্য হাসে তবে তা সুখের না বরং কষ্টের, অরণ্য পিছনে পিছনে হাঁটতে থাকে। ঝড়ের পূবর্ভাস দেখা যাচ্ছে বাতাস বয়ে যাচ্ছে, রাস্তায় গাড়ি বা অন্য কেনো যানবাহন দেখা যাচ্ছে না। গ্রামের মাটির রাস্তা দিয়ে গাড়ি খুব অল্প চলাচল করে, এর মধ্যে বৃষ্টি আসবে যার জন্য হয়তো একটা গাড়ি ও নাই। ইনায়ার চোখে মুখে চিন্তার ছাপ স্পষ্ট ফুটে উঠছে, এমন বৈরী আবহাওয়ায় রাস্তায় দাঁড়িয়ে থাকা ভীষণ কঠিন।
ইনায়া অরণ্যর কাছে আসে রাস্তায় গাড়ি দেখা যাচ্ছে না, যা হয়তো ইনায়ার চিন্তার কারণ। তবে এই মূহুর্তে রাস্তায় থাকা নিরাপদ না, অরণ্য ইনায়ার কাছে এগিয়ে আসে ওর পাশে দাঁড়িয়ে বলে –

আরও গল্প পড়তে এখানে ক্লিক করুন 

“- ইনায়া অল্প দূরে একটা চায়ের দোকান দেখা যাচ্ছে, বৃষ্টি না থামা অবধি সেখানে বসা যাক। এই বৃষ্টির মধ্যে গাড়ি পাওয়া যাবে না, আর গ্রামের রাস্তার যা অবস্থা হেঁটে বাড়ি ফিরা ও যাবে না।
অরণ্যর কথা শুনে ইনায়া বিরক্ত হয় এই লোক তার সাথে ভালো ব্যবহার করবে তাকে কাছে ডেকে নিবে, আবার সময় সুযোগ হলে প্রয়োজন ফুরিয়ে গেলে তাকে ছুঁড়ে ফেলে দিবে। তবে এই সময় রাস্তায় দাঁড়িয়ে থাকা ও সঠিক কাজ হবে না, ইনায়া বিরক্তি নিয়ে রাস্তা থেকে অল্প দূরে থাকা চায়ের দোকানের উদ্দেশ্য যাএা করে। অরণ্য তার পিছনে হেঁটে সেখানে যায়, দোকান বন্ধ হয়তো বৃষ্টির কারণে দোকান বন্ধ করে বাড়িতে চলে গেছে এর মালিক। তবে বাহিরে যথেষ্ট জায়গা রয়েছে সেখানে বৃষ্টির মধ্যে ঠায় নেয় ইনায়া আর অরণ্য।

চৌধুরী বাড়িতে সকলে খাবার খাওয়ার জন্য নিচে আসে, ইভান ঘুম থেকে উঠে ওয়াশরুম থেকে ফ্রেশ হয়ে নিচে আসে। আয়নার সামনে দাঁড়িয়ে নিজের চুল ঠিক করে এরপর অফিসের জন্য রেডি হয়ে নিজে চলে যায়। অরুণা বেগম, নাতাশা, আর মিলন সাহেব খাবার খেতে বসেছেন। ইভান সিঁড়ি দিয়ে নিচে নামে এরপর টেবিলে বসে যায়। অরুণা বেগম ইভানের দিকে তাকিয়ে দেখে তার চোখে মুখে কালো দাগ পড়ে গেছে, মনে হয় সারারাত ঘুমায় নাই। অরুণা বেগেমের তার প্রতি মায়া হয়, ইভানের অবস্থা এমন কেনো হয়ে গেছে তার কারণ ওনার অজানা নয়।
কিন্তু সময় আর সুযোগ একবার যদি মানুষের হাত থেকে চলে যায় তবে তা ফিরিয়ে নিয়ে আসা অসম্ভব। তবে ইভানের জীবন এমন করে শেষ হয়ে যেতে দিবে না, ওনি মা হয়ে ধ্বংসকারী হতে পারে না। অরুণা বেগম বলে –

“- ইভান তোমার কি রাতে ভালো করে ঘুম হয় নাই?চোখ মুখ এমন দেখাচ্ছে কেনো?
অরুণা বেগমের কথা শুনে ইভান শান্ত গলায় বলে –
“- হঠাৎ করে আমার বিষয়ে এতো চিন্তা করা কবে থেকে শুরু করে দিলে? আর অফিসের জরুরি ফাইল চেক করতে করতে অনেক রাত হয়ে যায়।যার জন্য ঘুম সম্পূর্ণ হয় নাই.
ইভান উত্তর দিয়ে আবার খাওয়া শুরু করে অরুণা বেগম একবার মিলন চৌধুরীর দিকে তাকায়, মিলন সাহেব চোখ দিয়ে ইশারা করে ওনাকে। অরুণা বেগম বলে –

“- অফিসের কাজেের সাথে সাথে নিজের উপর ও খেয়াল রাখতে হয়। আচ্ছা শুনো আমার বন্ধু রাইমার মেয়ে প্রভা ও বিদেশ থেকে পড়াশোনা শেষ করে এই দেশে আসবে আজ। কাল থেকে আমাদের অফিস জয়েন করবে “।
অরুণা বেগমের কথা ইভান এতো সিরিয়াসলি নেয় না সে খাওয়া দাওয়ার উপর মনোযোগ দেয়। ইভান বলে –
“- বিদেশ থেকে পড়াশোনা শেষ করে আমাদের কোম্পানি জয়েন করার কি দরকার? আর অফিসে এখন লোকের প্রয়োজন নাই শুধু শুধু ঝামেলা করার কি খুব প্রয়োজন?
“- প্রভা নিজের যোগ্যতায় কাজ করতে চাই, যার জন্য আমাদের অফিস জয়েন করবে। আর তুমি না বললে তোমার কাজের প্রেশার যাচ্ছে অতিরিক্ত এখন। প্রভা যদি তোমার কাজে সাহায্যে করে তাহলে তোমার আর কোম্পানির উন্নতি হবে।
“- ওকে “।

ইভান অরুণা বেগমের কথার পৃষ্ঠে কথা বলে না কারণ সে যানে, তার মাকে যতই বোঝানো হোক না কেনো ওনি সিদ্ধান্ত বদল করবে না। ইভান আর নাতাশা খাওয়া দাওয়া শেষ করে ইভান চলে যায় অফিসে। আর নাতাশা কলেজে চলে যায় অরুণা বেগম ও মিলন সাহেব বাড়িতে বসে থাকেন। এখন বাড়িতে থাকতে তাদের যথেষ্ট বোরিং ফিল হয়, শুধু তারা দুইজন ছাড়া কেউ নাই এই বাড়িতে। কতো বড়েন পরিবার ছিলো তাদের কিন্তু সময়ের ব্যবধানে আজ সকলে দূরে।
অন্যদিকে বৃষ্টির গতিবেগ সময়ের ব্যবধানে আরো বেড়ে যাচ্ছে, অনেক সময় এক জায়গায় বসে ইনায়া বিরক্ত হয়ে যাচ্ছে। অরণ্য তা বুঝতে পারে অরণ্য বলে –

“- ইনায়া চা খাবেন?
“- না বিষ খাব “।
ইনায়া বিরক্ত হয়ে কথাটা বলে তার ভীষণ রাগ হচ্ছে অরণ্যর উপর, অরণ্য তাকে ইভানের কাছে ফিরে যেতে বললো। প্রতৈকে নিজেদের সিদ্ধান্ত জানিয়ে দেয় ইনায়ার উপর কিন্তু তার মতামত কারো কাছে গুরুত্ব নয়। ইনায়ার কথা শুনে অরণ্য বলে –
“- আমার উপর রাগ করছেন ইনায়া?
“- শুনুন অরণ্য কাটাঁ গায়ে নুনের ছিটাঁ দিতে আসবেন না। আর রাগ আপনজন উপর করা যায় আপনি কি আমার আপনজন। যদি নিজের বউকে অন্যর কাছে পাঠিয়ে দেওয়ার এতো শখ থাক, তাহলে বিয়ে করে ছিলেন কেনো? আপনি আর ইভান ভাই দুইজন একই কাপুরুষ “।
ইনায়ার কথা শুনে অরণ্য রেগে যায় আর বলে –

“- কি বললেন আমি কাপুরুষ? ওই ইভান চৌধুরীর সাথে তুলনা করলেন আপনি?
অরণ্যর চোখে রাগ স্পষ্ট ফুটে উঠে তবে ইনায়া কম জেদি না সে বলে –
“- হুম অবশ্যই যে নিজের বউকে বিয়ের পর অন্য পুরুষের কাছে চলে যেতে বলে তাকে খাঁটি বাংলায় এই কথা বলে, যেকোন ঝগড়া বা ঝামেলায় পুরানো প্রেমিক নিয়ে খোটাঁ না দিলে কি হয় আপনাদের? ইভান ভাইয়ের সাথে অতীতে আমার বিয়ে হয়েছে এই কথা কি আপনার অজানা। সত্যি যেনে যদি বিয়ে করতে পারেন তাহলে আবার কথা কেনো শুনান?

“- আমি আপনাকে শুধু বলেছি যে এই সত্যি থেকে দূরে থাকতে, কারণ এখানে অনেক রহস্য আছে যা থেকে আপনি নিজেকে দূরে সরিয়ে রাখবেন.
“- আর আমি আপনার কথা কেনো শুনব? কে হন আপনি আমার? শুনন এই ইনায়া তালুকদার নিজের লক্ষ্য থেকে কখনো দূরে সরে যায় না। আর বিয়ে হয়ে গেছে বলে যে আপনার সিদ্ধান্ত মেনে নিতে হবে এমন কি কোনো কথা আছে?

“- ইনায়া আপনি কি আমার অবস্থা বুঝার চেষ্টা করেন?
“- বলেন শুনি কি অবস্থায় আছেন আপনি। শুনুন অরণ্য যদি বউয়ের সাথে কথা শেয়ার করতে না পারেন তাহলে বিয়ে করবেন না। আর যদি ডিভোর্স দেওয়ার খুব শখ হয় তাহলে সরাসরি বলে দিবেন, বাজারে পণ্যর মতো এমন বিক্রি করে দেওয়ার চেষ্টা করবেন না।
অরণ্য যানে ও না সে ইনায়ার শরীরে কতটা রাগ তুলে দিয়েছে, অরণ্য শান্ত গলায় শ্বাস নেয় এরপর বলে –
“- আই এম সরি ইনায়া, বিশ্বাস করেন তখন ইভানের কথাটা বলেছি অন্য কিছু মিন করে না। বিয়ের আগে আপনি ইভানকে ভালোবাসতেন.

“- হুম কিন্তু তা বিয়ের আগে ইভান ভাইয়ের প্রতি আমার হৃদয়ের এক কোণে জমানো অনুভূতি রয়েছে, কিন্তু তার মানে এই না যে আপনি আমার স্বামী কথাটা ভুলে যাব। বিয়ে কোনো মজা বা নাটক না যে দুইদিন পর পর বিয়ে করব, আপনি আমার স্বামী তাই সংসার আপনার সাথেই করব সারাজীবন “।
ইনায়া কথাটা শুনে অরণ্যর হাসি আর ভালোলাগা দুইটাই কাজ করে, অরণ্য হাসি মুখে বলে –
“- ওকে থাকেন সারাজীবন। তবে ভবিষ্যতে যেই ঝড় আসুক না কেনো আপনাকে আমার পক্ষে দাঁড়িয়ে থাকতে হবে, বিশ্বাস করে সারাজীবন হাত ধরে রাখতে হবে।

“- হুম অবশ্যই থাকব। তবে শাফায়াত মামার মৃত্যুর রহস্য আমি যানব “।
ইনায়ার রাগের পরিমাণ শান্ত হয়, অরণ্য চায়ের দোকানের ভিতরে চলে যায়। সেখানে দোকানদার উপস্থিত নাই, দোকান খোলা যার জন্য অরণ্য ভিতরে ঢুকে যায়। এরপর ও চুলায় গরম পানি দেয়, ইনায়া হাত দিয়ে বাহিরে বৃষ্টির পানি ছুঁয়ে দেখছে। প্রায় পাঁচ মিনিট পর অরণ্য দুই কাপ চা বানিয়ে ইনায়ার সামনে নিয়ে আসে, ওর মুখের সামনে ধরে বলে –
“- ম্যাডম রাগ করে না থেকে চা খান। এই অরণ্য কিন্তু খুব ভালো চা বানাতে পারে, অবশ্য সব রান্নায় করতে পারে “।
ইনায়া অরণ্যর হাত থেকে চায়ের কাপ হাতে তুলে নেয়, চায়ে এক কাপ চুমুক দেয় সত্যি অরণ্য দারুণ চা বানাতে পারে। ইনায়া বলে –

“- আপনি এতো সুন্দর চা বানানো কোথা থেকে শিখলেন?
“- ছোটবেলা যখন আম্মু স্কুলে চলে যেত, তখন সায়মা আর আমার জন্য রান্না করা লাগত। আর আম্মুর স্কুল শেষ করে বাড়ি ফিরে আসলে অনেক মাথা ব্যাথা করত, যার জন্য আমি চা বানিয়ে প্রতিদিন তাকে দেয়।
ইনায়া অরণ্যর মুখে তার মায়ের কথা শুনে অবাক হয়। অরণ্য আর রেহানা বেগমের একসাথে কাটানো মূহুর্তের বিষয়ে সে কখনো শুনে নাই। ইনায়া আগ্রহ নিয়ে বলে –
“- আপনার আম্মু চাকরি কেনো করত? আর আম্মু আপনার সাথে ছোটবেলা কথা বলত? তাহলে এখন কেনো কথা বলা বন্ধ করে দিয়েছে?

“- আমার আব্বু মারা যায় অনেক আগেই যার জন্য সংসার চালানোর জন্য চাকরি করতে হয় আম্মুর। আর ছোটবেলা আম্মু অনেক আদর করত আমাকে, সায়মা চেয়ে বেশি ভালোবাসত। কিন্তু হঠাৎ করে একজন এসে সব কেঁড়ে নেয় আমাদের জীবন থেকে, আর তার শাস্তি স্বরূপ তাকে মৃত্যু উপহার দিয়েছি তাকে “।
ইনায়া অরণ্যর মুখে মৃত্যু কথাটা শুনে বলে –

তোমার নামে লেখা চিঠি পর্ব ২৪

“- কে সব কেঁড়ে নিয়েছে সবকিছু? তার নাম কি? আর আপনি কি খুনি?
“- আপনার মামা শাফায়াত সব কেঁড়ে নিয়েছে।আর হুম আমি খুনি আপনার মামার খুনি, এক্সিডেন্টে আপনার মামা মারা যায় না বরং আমার লোক তাকে খুন করেছে।

তোমার নামে লেখা চিঠি পর্ব ২৬