তোমার নামে লেখা চিঠি পর্ব ২৭

তোমার নামে লেখা চিঠি পর্ব ২৭
নওরিন মুনতাহা হিয়া

বিকাল চরটা বাজে পাঁচ মিনিট আকাশে বৃষ্টির বেগ কমে গেছে, প্রকৃতি এখন শান্ত হয়ে গেছে। অফিস থেকে বাড়িতে ফিরে আসে ইভান, অজানা কারণে তার মন বসছে না অফিসে। যার জন্য তাড়াতাড়ি বাড়ি ফিরে আসে। চৌধুরী বাড়িতে এসে পৌঁছায় ইভানের গাড়ি, ইভান গাড়ি থেকে বের হয়ে বাড়িতে ভিতরে ঢুকে যায়। বিকালে বাড়ির সকলে ঘুমে থাকে যার জন্য এখন বাসার ড্রয়িং রুমে কোনো মানুষের উপস্থিতি নাই। ইভান সিঁড়ি দিয়ে নিজের রুমের উদ্দেশ্য হাঁটা শুরু করে, তবে তার রুমে যাওয়ার আগে নজর যায় ইনায়ার রুমে।

ইনায়ার রুমের দরজা খোলা, বিয়ের পর ইনায়া এই বাড়ি থেকে চলে যাওয়ার পর এই রুম সবসময় বন্ধ থাকে। তবে আজ খোলা কেনো ইভানের মনে সন্দেহ হয়। ইনায়া আর অরণ্য হানিমুন থেকে কি ফিরে এসেছে? এরপর তারা এই বাড়িতে বেড়াতে আসতে পারে। ইভান রুমের ভিতরে যায়, সেখানে খোলা দরজা হাত দিয়ে ধাক্কা দিয়ে রুমের ভিতরে প্রবেশ করে। রুমের মধ্যে কারো অনুপস্থিতি নেই, তবে ওয়াশরুম থেকে পানির শব্দ আসছে। ইভান কৌতূহল নিয়ে সেইদিকে তাকিয়ে দেখে, ওয়াশরুমের দরজা খুলে এক মেয়ে বের হয়ে আসে।

আরও গল্প পড়তে এখানে ক্লিক করুন 

ওয়াশরুমের দরজার সামনে থাকা মেয়েটা অপরিচিত ইভানের কাছে, এই বাড়িতে তাকে কখনো দেখে নাই সে। ওয়াশরুম থেকে বের হয়ে আসা নারী আর কেউ না প্রভা, অরুণা বেগমের বন্ধুর মেয়ে। প্রভা মাএ গোসল শেষ করে বের হয়ে আসে, বিদেশ থেকে চৌধুরী বাড়িতে ফিরেছে সে দুপুর তিনটার সময়। প্রভা তার ভেজা চুল মুছতে থাকে আর বাহিরে বের হয়ে আসে, হঠাৎ তার রুমের মধ্যে কোনো পুরুষকে দেখে থমকে যায়। প্রভা বলে –
“- কে আপনি? আমার রুমে কি করছেন? অপরিচিত কোনো মেয়ের রুমে ঢুকতে হলে যে অনুমতি নিতে হয় তা আপনার যানা নেই?
ইভান এতোখন প্রভার দিকে তাকিয়ে থাকে, তবে এখন প্রভার কথা শুনে তার ধ্যান কাটে। ইভান নিজের দৃষ্টি অন্যদিকে সরিয়ে বলে –

” – আমার বাসায় দাঁড়িয়ে জিজ্ঞেস করছেন আমি কে? আর এই রুম আপনার না ইনায়ার? আপনি এই রুমে কি করছেন? আর কে আপনি?
প্রভা ইভানের কথার উত্তরে বলে –
“- আমার নাম প্রভা। অরুণা বেগমের বন্ধাবীর মেয়ে “।
প্রভার কথা শুনে ইভানের মনে পড়ে অরুণা বেগম তাকে সকালে বলেছে তার বন্ধুর মেয়ে আসবে, নাম মনে হয় প্রভা। তবে ইভানের যতদূর মনে পড়ছে প্রভার কাল বিদেশ থেকে ফিরার কথা, ইভান বলে –
“- আপনি মায়ের বন্ধুর মেয়ে প্রভা। সকালে খাওয়ার সময় আম্মু বলেছে আপনার কথা, কিন্তু আপনার না কালকে আসার কথা। আর গেস্ট রুম রেখে ইনায়ার রুমে করছেন আপনি?
ইভানের মুখে অরুণা বেগমকে আম্মু নামে ডাকা শুনে প্রভা বুঝতে পারে, অরুণা বেগমের ছেলে ইভান। প্রভা বলে –

“- অরুণা আন্টি বলেছে আমাকে এই রুমে থাকতে দিয়েছে।
প্রভার কথা শুনে অরুণা বেগমের উপর ইভানের রাগ হয়, এই বাড়িতে এতো রুম থাকতে ইনায়ার রুমে কেনো থাকতে দিয়েছে প্রভাকে। ইনায়ার রুমে অন্য কোনো মেয়ে থাকে ইভান তা সয্য করতে পারবে না, এই রুমের প্রতিটা কোণায় শুধু ইনায়ার শরীরের ঘ্রাণ থাকবে। ইভান যথেষ্ট বিরক্ত হয় তবে সে রাগ করে না, বরং বলে –
“- ওকে আপনি থাকেন। আমি আম্মুর সাথে কথা বলব “।

ইভান কথাটা বলে রুম থেকে বের হয়ে যায়, প্রভা একবার ইভানের যাওয়ার দিকে তাকিয়ে দেখে। এরপর দরজা বন্ধ করে দিয়ে আয়নার সামনে গিয়ে রেডি হতে থাকে।
তালুকদার বাড়িতে আজ বৃষ্টি উপলক্ষে রান্না করা হচ্ছে, বৃদ্ধ আশ্রমের সকল মহিলা খিচুড়ি আর বেগুন ভাজা খাবে বলে মত দিয়েছে। তালুকদার বাড়ির সদর দরজা দিয়ে ভিতরে ঢুকে ইনায়া আর অরণ্য, সম্পূর্ণ শরীর ভিজে গেছে। বৃষ্টি থামার পর ওরা চায়ের দোকান থেকে রওনা দিয়েছে, তবুও রাস্তায় গুঁড়ি গুঁড়ি বৃষ্টি পড়ার কারণে শরীর ভিজে গেছে। সদর দরজায় কয়েকজন বৃদ্ধ মহিলা মুড়ি চাবিয়ে যাচ্ছে, তারা ইনায়া আর অরণ্যকে দেখে বলে –

“- ইনায়া তোমরা এমন ভিজা শরীরে কোথা থেকে আসলে?
সম্পূর্ণ শরীর ভিজে গেছে, বৃষ্টির পানি শরীরে পড়লে জ্বর আসতে পারে।
ইনায়া আর অরণ্য যথেষ্ট শান্ত চায়ের দোকানের থেকে অরণ্য আর কোনো কথা বলে নাই, ইনায়া ও যথা সম্ভব শান্ত থাকার চেষ্টা করেছে। ইনায়া বলে –
“- সকাল গ্রাম ঘুরতে বের হয়ে ছিলাম, কিন্তু হঠাৎ করে বৃষ্টি শুরু হয়। যার জন্য শরীর ভিজে গেছে, আচ্ছা আমরা রুমে যায় জামা কাপড় পাল্টে গরম কিছু পড়ি “।
অরণ্য সিঁড়ি দিয়ে উপরে চলে যায় ইনায়া পিছন পিছন চলে যায়, অরণ্য রুমে প্রবেশ করে ওয়াশরুমে চলে যায়। ইনায়া রুমে আসে সে ওয়াশরুমের দরজ বন্ধ দেখ বুঝতে পারে অরণ্য গিয়েছে, যার জন্য ভিজা শরীরে অল্প সময় দাঁড়িয়ে থাকে সেখানে। প্রায় পাঁচ মিনিট পর অরণ্য বের হয়ে আসে, ইনায়া জামা কাপড় নিয়ে ওয়াশরুমে চলে যায়। অরণ্য ফ্রেশ হয়ে বিছানায় শুয়ে পড়ে, তার শরীর ভালো লাগছে না। শরীর গরম হয়ে যাচ্ছে, মনে হয় জ্বর আসবে। ইনায়া ওয়াশরুম থেকে ফিরে এসে দেখে অরণ্য বিছানায় গা ছেড়ে শুয়ে আছে।
বিকাল প্রায় চারটা বেজে গেছে এখনো অরণ্য আর ইনায়া দুপুরে খাবার খায় নাই। ইনায়া ভিজা চুল মুছতে থাকে আর শান্ত গলায় অরণ্যকে ডাক দিয়ে বলে –

“- অরণ্য আপনি ঘুমিয়ে পড়লেন যে? খাবার খাবেন না? দুপুর গড়িয়ে বিকাল হয়ে গেছে চলুন খাবার খেয়ে আসি?
অরণ্য বিছানার অন্য পাশ ফিরে শুয়ে আছে অরণ্য বলে –
“- আমার খিদে নেই, খাব না আমি “।
অরণ্যর কথা শুনে ইনায়া আবার বলে –
“- আমি কি খাবার নিয়ে আসব রুমে? খাবার না খেয়ে ঘুমালে শরীর অসুস্থ হয়ে যাবে। অরণ্য “।
ইনায়ার কথার উত্তর অরণ্য প্রদান করে না, সে অন্য পাশ ফিরে শুয়ে পড়ে। ইনায়া অরণ্যর সাথে আর কথা বলে না, সে রেডি হয়ে নিচে চলে যায়। বৃদ্ধ মহিলা রাতের খাবার রান্না করছে, ইনায়া রান্না ঘরে যায়। ইনায়া বলে –
“- নানু মণি দুপুরের খাবার কি এখনো বাকি আছে কিছু?
বৃদ্ধ মহিলা রান্না রেখে এগিয়ে আসে আর বলে –

“- দুপুরের খাবার তুমি আর অরণ্য খাও নাই বলে আলাদা করে রেখে দিয়েছি। তুমি বসো আমি নিয়ে আসছি “।
বৃদ্ধ মহিলা খাবার নিতে যায় রান্না ঘরে এরপর ইনায়ার হাতে খাবার দেয়। ইনায়া কৃতজ্ঞতা প্রকাশ করে খাবার নিয়ে সিঁড়ি দিয়ে উপরে চলে যায়। রুমে প্রবেশ করে ইনায়া অরণ্য এখনো আগের মতো করে শুয়ে আছে, ইনায়া খাবার হাতে করে সামনে যায় অরণ্য। খাবার টেবিলের উপর রাখে অরণ্যর মাথায় হাত দেয়, গায়ে জ্বর আসবে মনে হচ্ছে। ইনায়া বলে –

“- অরণ্য উঠুন খাবার নিয়ে এসেছি আমি। খাবেন চলুন।
ইনাযার কথার জবারে অরণ্য কোনো উত্তর প্রদান করে না, ইনায়া আবার ডাক দেয় –
“- অরণ্য আপনার শরীর গরম হয়ে যাচ্ছে, মনে হয় জ্বর আসবে উঠুন খাবার খাবেন চলেন “।
ইনায়ার অনেক বার বলার পর অরণ্য উঠে, চোখ মিলে তাকিয়ে দেখে ইনায়াকে। অরণ্য বলে –
‘- নিজ হাতে খেতে ইচ্ছা করছে না। খাবার খায়িয়ে দেন “।

তোমার নামে লেখা চিঠি পর্ব ২৬

ইনায়া অরণ্যর কথা অনুসারে অরণ্যর মুখে খাবার তুলে দেয়, অরণ্য মুখে মুচকি হাসি নিয়ে ইনায়ার দিকে তাকিয়ে থাকে। ইনায়ার মধ্যে কোনো সংকোচ নাই সে সাধারণ ভাবে খাবার খায়িয়ে দিচ্ছে অরণ্যকে। অরণ্য বলে –
“- ইনাযা আপনি শান্তি দেন বা শাস্তি দেন, কিন্তু কোনোদিন ছেড়ে যাবেন না “।

তোমার নামে লেখা চিঠি পর্ব ২৮