তোমার নামে লেখা চিঠি পর্ব ৫০
নওরিন মুনতাহা হিয়া
গুলির শব্দ শুনে অরণ্য চিৎকার দিয়ে উঠে। গাড়িতে থাকা প্রতৈক সদস্য ভয় পেয়ে যায়, ফোনের অপর পাশ থেকে অন্য কোনো শব্দ আসছে না। অরণ্যর শরীর বেয়ে শীতল শিহরণ বয়ে যায়, তার এখন কথা বলার ক্ষমতা হারিয়ে গেছে। যদি ইনায়া বেঁচে না থাকে তবে সে কি করে বাচঁবে। বাবার মৃত্যুর পর সে বড্ড একা হয়ে গিয়েছিলো, প্রিয় মানুষকে হারানো তীব্র ব্যাথা অনুভব করছিলে্। আজ এতোবছর পর আবার সেই একই পরিস্থিতির সম্মুখীন হয়েছে সে,কিন্তু কি করবে তা যানে না। কবে এতোদিন শুধু রক্তের সম্পর্কর কারণে হানিয়া বেগমকে শাস্তি দেয় নাই অরণ্য, কিন্তু এখন তার অপকর্মের শাস্তি অবশ্যই তাকে দিবে।প্রিয় মানুষকে হারানো বেদনা তাকে ও সয্য করতে হবে।
——— অন্যদিকে গোডাউনে রক্তের ছোপ ছোপ দাগ রয়েছে। চেয়ার থেকে অঝরে রক্তের স্রোত বয়ে যাচ্ছে, যা দেখে হানিয়া বেগম পৈশাচিক হাসি দেয়। ইনায়ার চেয়ার এখন মাটিতে ধুলোয় পড়ে রয়েছে, আর ব্যাথায় সামান্য কাতরে উঠে ইনায়া। গুলি ইনায়ার শরীরে লাগে নাই, কারণ হানিয়া বেগম যখন তার আগের করা পাপের কথা শুনা ছিলো, তখন ইনায়া চেয়ারে থাকা পেরেক দিয়ে তার হাতের বাঁধন খেলার চেষ্টা করছিলো। হানিয়া বেগম তার কাহিনী বলায় এতোটা বিজি হয়ে যায় যে, সে ইনায়ার দিকে ভালো করে খেয়াল করে নাই। যখন বন্ধুক থেকে গুলি চলে তখন ইনায়া তার হাতের বাঁধন খুলে ফেলে, আর চেয়ারে ধাক্কা দিয়ে নিচে পড়ে যায়। তবে তার হাতের খুব কাছ দিয়ে গুলি যাওয়ার কারণে, সেখানে অল্প ক্ষত হয়ে যায়।
আরও গল্প পড়তে এখানে ক্লিক করুন
°°★ হানিয়া বেগম যখন বুঝতে পারে যে ইনায়া এখনো বেঁচে আছে। তখন ওনি ইনায়ার দিকে উদ্দেশ্য করে আবার গুলি ছুঁড়েন, ইনায়া গড়িয়ে অন্য পাশে চলে যায়। সেখানে থাকা একজন লোককে মেরে তার হাত থেকে গুলি নেয় ইনায়া, গুলি করা ইনায়ার জন্য কঠিন বিষয় নয়। বরং এর আগে ও সে মানুষ খুন করেছে, ইনায়া প্রথম গুলিটা হানিয়া বেগম হাতে করে। যার ফলে হানিয়া বেগমের হাত থেকে গুলি পড়ে যায়, আর ওনি ব্যাথায় আত্মানাথ করো উঠে। ইনায়া তার বন্ধুক দিয়ে অন্য লোকজনকে গুলি করতে থাকে, যার ফলে সাথে সাথে সেখানে প্রায় পাঁচ দশটা লাশ পড়ে যায়।
°°°★ ——— হানিয়া বেগম ইনায়ার এমন রূপ দেখে অবাক হয়ে তাকিয়ে থাকেন। ইনায়াকে যথেষ্ট ভীতু আর চুপচাপ মেয়ে বলে ওনি জানতেন।কিন্তু ইনায়া যে সাহসী রূপ ওনি দেখছেন তা অবাক করা বিষয়, বন্ধুক দিয়ে যেভাবে গুলি করছে তা দেখে মনে হচ্ছে সে আগে ও মানুষ খুন করেছে। হানিয়া বেগম ইনায়াকে দেখতে এতো বিজি হয়ে যান যে, ওনার হাতের ক্ষতর দিকে খেয়াল করে নাই। হানিয়া বেগমের সাথে থাকা প্রায় সকল লোক ইনায়ার গুলি খেয়ে আহত হয়ে গেছেন, এর মধ্যে কিছু মারা ও গেছে। ইনায়ার শরীরে এখন প্রচুর রাগ, হানিয়া বেগম তার মা বাবাকে খুন করেছে কথাটা যতবার মনে পড়ছে। ততবার তার রাগের পরিমাণ তীব্র হয়ে যাচ্ছে, শুধু মাএ এই মহিলার জন্য ইনায়ার জীবন থেকে সব সুখ শান্তি হারিয়ে গেছে।
°°★ ইনায়ার হাতের কনুই থেকে রক্ত পড়ে যাচ্ছে, এর ফলে সে হয়তো কিছুটা দুর্বল হয়ে যায়। আর কাল রাত থেকে কিছুই খাওয়া হয় না, সকালের নাস্তা করার আগেই তাকে কিডন্যাপ করা হয়েছে। কিন্তু ইনায়া এখন দুর্বল হয়ে পড়লে চলবে না, তার মা বাবার খুনিকে শাস্তি দিতে হবে। ইনায়া এইবার এগিয়ে আসে হানিয়া বেগমের কাছে, এরপর হাত গালে সজোরে থাপ্পড় বসিয়ে দেয়। প্রায় তিনটা, চারটা থাপ্পড় যে পড়ে তা ভুল নয়, হানিয়া বেগম থাপ্পড় খেয়ে রাগী চোখে তাকায় ইনায়ার দিকে। হানিয়া বেগম কিছু বলতে যাবে, তার আগেই ইনায়া তার মাথার চুল শক্ত করে ধরে বলে ————-
———– “- শুধু মাএ আপনার জন্য ফুপু আমার জীবন থেকে সমস্ত সুখ হারিয়ে গেছে। আমার বাবা বিশ্বাস করে তার কোম্পানির দায়িত্ব দিয়েছিলো আপনাকে। কিন্তু আপনি কি করলেন শুধু মাএ নিজের লোভের জন্য তাকে খুন করলেন। আমার বাবার হত্যাকারীকে শাস্তি আমি অবশ্যই দিব, আর সেটা হলো মৃত্যু “—————.
°°★ ইনায়া কথাটা বলে হানিয়া বেগমের দিকে বন্ধুক তাক করে,হানিয়া বেগম ভয়ে দূরে সরে যান। ওনি বলেন ———–
——-“- ইনায়া তুমি আমাকে খুন করতে পারো না। আমি তোমার ফুপি শাশুড়ী হয়। ক্ষমা করে দেও আমাকে ইনায়া ———.
°°★ ইনায়া শত কষ্টের মধ্যে মৃদ্যু হেঁসে বলে —–
——– “- আপনার মতো এমন লোভী মহিলা কারো ফুপি হওয়ার যোগ্য নয়। আর ক্ষমাতো মানুষকে করা যায় আপনার মতো এমন সয়তানকে নয় ———-.
°°★ ইনায়ার বন্ধুকের টিগারে চাপ দেওয়ার আগেই সেখানে উপস্থিত হয় অরণ্য। গাড়ি থেকে নেমে ছুটে আসে এখানে, ইনায়াকে সুস্থ থাকতে দেখে শক্ত করে জড়িয়ে ধরে। অরণ্য বলে ————
——— “- ইনায়া আপনি ঠিক আছেন? কোথায় ব্যাথা লাগে নাই তো? ফুপি কেনো ক্ষতি করে নাই তো আপনার?
°°★ ইনায়ার শরীর শক্ত করে বুকের মাঝে ধরে কথাটা বলে অরণ্য। ইনায়া নিজের মাঝে জমিয়ে রাখা কষ্ট, চোখের পানির বিন্দুর মাধ্যমে প্রকাশ করে। ইনায়া কান্না করতে থাকে আর বলে ———————
————-“- অরণ্য ফুপি আমার আব্বুকে খুন করেছে। এসএস কোম্পানির খাবার বিষ মিশিয়ে হাজারো অসহায় বাচ্চার হত্যা করেছেন। বাবার খুনি ওনি “।
°°★ অরণ্য ইনায়াকে শান্ত করে, হানিয়া বেগমের দিকে একবার রাগী চোখে তাকায়। ইনায়ার কনুই থেকে অতিরিক্ত রক্ত পড়ার কারণে তার শরীর নিস্তেজ হয়ে গিয়েছে। বিন্দু মাএ শক্তি তার শরীরে অবশিষ্ট নেয় এখন, তার সাথে সারা শরীরের সমস্ত ভার অরণ্যর শরীরে ছেড়ে দেয়। অরণ্য অনুভব করে ইনায়ার নিঃশ্বাসের গতির তীব্রতা কমে গিয়েছে। অরণ্য বুকের মধ্যে থাকা ইনায়ার মুখে উচ্চুঁ করে দেখে, সে অজ্ঞান হয়ে গেছে। অরণ্যর চোখ যায় ইনায়ার হাতের কনুইয়ের দিকে, সেখান থেকে রক্ত পড়া দেখে অরণ্যর শরীরের রাগ দিগুণ বেড়ে যায়। ইনায়াকে কোলে তুলে নেয়, এরপর গাড়ির মধ্যে নিয়ে বসায়। গাড়ি থাকা বডিগার্ডকে উদ্দেশ্য করো বলে ——-
————– “- ইনায়া অজ্ঞান হয়ে গেছে, হাসপাতালে নিয়ে এডমিট করিয়ে দাও ওকে। আর শুনো যদি আমার বউয়ের কিছু হয়, তবে শুধু হানিয়া বেগম নয় তোমাদের কেউ খুন করব আমি। আমি আসছি “————.
°°★ অরণ্যর এমন শান্ত গলায় বলা কথাটা শুনে বডিগার্ড ভয় পেয়ে যায়। তারা ইনায়াকে নিয়ে গাড়ি করে হাসপাতালে উদ্দেশ্য রওনা দেয়, অরণ্য এগিয়ে আসে হানিয়া বেগমের কাছে। হানিয়া বেগম ভয় পায়, অরণ্যর এমন শান্ত রূপ কোনো ঘূর্ণিঝড়ের আভাস দিচ্ছে তাকে। হানিয়া বেগম কথা বলার আগেই, অরণ্য তার ফোন থেকে একটা নিউজ বের করে। এরপর শান্ত গলায় বলে —————
————” – ফুপি তোমাকে না বলেছিলাম যদি তুমি আমার ইনায়ার ক্ষতি করো। তবে তোমার পরিবারের লাশের জন্য দাফনের কাপড় কিনে রাখতে৷ এই নাও আমি তোমাকে লাশ দিলাম, এখন কাফনের কাপড় কি তুমি কিনবে না আমি? ———-
°°★ অরণ্য কথাটা বলে ফোন ছুঁড়ে দেয় হানিয়া বেগমের কাছে। সংবাদ মাধ্যমে স্পষ্ট শুনা যাচ্ছে, লন্ডন শহরের সবচেয়ে বড়ো ব্যবসায়ী রাফি রায়হান, আর তার একমাত্র ছেলে গাড়ি এক্সিডেন্ট এইমাত্র মারা গেছে। হানিয়া বেগম খবরটা দেখে কান্না করে দেন, কিন্তু অরণ্য শব্দ করে হাসতে থাকে। হানিয়া বেগম বলে ———–
———– “- অরণ্য তুমি আমার সন্তান আর স্বামীকে খুন করেছ তাই না? ওরা দুর্ঘটনায় মারা যায় নাই। তুমি এতোটা জঘন্য কি করে হতে পারলে?
°°°★ অরণ্য আজ প্রাণখুলে হাসে এরপর বলে ———
——-” সয়তানের মুখে জ্ঞানের বাণী মানায় না। আর ওরা দুর্ঘটনায় মারা গেছে, যেমন আমার বাবা আর শশুড় দুর্ঘটনায় মারন গিয়ে ছিলো ঠিক তেমন। কেমন লাগে নিজের প্রিয় মানুষের মৃত্যুর কথা শুনতে?
°°★ হানিয়া বেগম অঝরে কান্না করতে থাকে, ঠিক যেমন ষোলো বছর আগে তার মা কান্না করছিলো। সন্তানের লাশ নিজের চোখে দেখার যে কষ্ট সেটা হানিয়া বেগম এখন বুঝছে। অরণ্য পৈশাচিক হাসি দেয়, অরণ্য বলে ———-
——“- ফুপি তোমার স্বামী আর সন্তান তো তাদের অপকর্মের শাস্তি পেয়ে গেলো। এখন তোমাকে কি দেওয়া যায় বলতো? যেহেতু তুমি সাথে আমার রক্তের সম্পর্ক রয়েছে নিশ্চয়ই বিশেষ কিছু উপহার দেওয়া উচিত তাই না ———-
°° হাসপাতালে ইমারজেন্সি কেবিনে ডক্টর ইনায়ার হাতে বেন্ডেজ করে দিচ্ছে। তার হাতের কনুইয়ে গুলি লাগে নাই, শুধু ছোঁয়া লেগেছে যার ফলে কেটে গিয়ে রক্ত বের হচ্ছে। অরণ্য হাসপাতালে এসে উপস্থিত হয়, এখন সে হাসপাতালের করিডোরে বসে আছে। ইভান, প্রভা সেখানে রয়েছে ডক্টর বলেছে ইনায়ার জন্য টেনশন করার দরকার নাই। ইনায়া সম্পূর্ণ সুস্থ, হঠাৎ অরণ্যর ফোন বেজে উঠে রেহানা বেগম কল করেছে। অরণ্য রিসিভ করে ———
——–°°★ রেহানা বেগম বলে ———-
——– “- অরণ্য লন্ডনে তোমার ফুপা আর আদনান গাড়ি দুর্ঘটনায় মারা গেছে। আর তোমার ফুপির এখনো কোনো খোঁজ পাওয়া যাবে না। অরুণা ভাবী আর মিলন ভাই লন্ডনে যাবে, তোমরা তাড়াতাড়ি চলে আসো —–.
°°★ অরণ্য মায়ের কথা শুনে নীরবে হাসে, কিন্তু নাটক করে চিন্তিত হয়ে বলে ———
—— কি বলছ আম্মু ফুফা মারা গেছে মানে? আদনান ও মারা গেছে? তুমি চিন্তা করো না আমরা এখুনি রওনা দিচ্ছি। লন্ডনে দেখা হবে আমাদের ——-
—– “- ওকে “—-.
°°★ অরণ্যর কথাটা ইভান শুনে, অরুণা বেগম তাকে আগেই খবরটা বলেছে। এই দুর্ঘটনার পিছনে যে আসলে কে আছে, সেটা হয়তো ইভান যানে। কিন্তু সে চুপ থাকে, হয়তো যা হয়েছে ভালোর জন্য হয়েছে। প্রভা বড্ড চুপচাপ আর শান্ত, ইভান প্রভার সাথে কথা বলার চেষ্টা করেছে কিন্তু প্রভা হুম, আর না ছাড়া কিছুই বলে নাই। প্রভার এমন ব্যবহারের কারণ ইভান বুঝতে পারে না, অন্যদিকে ডক্টর বলে যে ইনায়ার জ্ঞান ফিরে এসেছে। অরণ্য ছুটে যায় কেবিনে, ইনায়া চোখ খুলে অরণ্যকে দেখে ইনায়া বলে ————–
——– “- অরণ্য আপনি ফুপিকে শাস্তি দিয়েছেন?
°°★ ইনায়ার কথা শুনে হাসে আর বলে ———-
——– অবশ্যই বউ। আমার বউ আর্দেশ করেছে একটা কাজ করার, আর অরণ্য রাজ চৌধুরী সেটা করবে না তা কি করে হয়। আর ফুপির সাথে আমার পুরানো শএুতা রয়েছে, যার শাস্তি ওনাকে দেওয়া হয়েছে ———–.
°°★ ইনায়া খুশি হয়, আজ হয়তো তার বাবা মায়ের আত্মা শান্তি পাবে। ইনায়া অরণ্যকে জড়িয়ে ধরে বলে ———–
——– ভালোবাসি আপনাকে অরণ্য। আর ধন্যবাদ আমার জীবনে আসার জন্য। ভালোবাসি অনেক ভালোবাসি “——–।
অরণ্য শক্ত করে জড়িয়ে ধরে বলে ——–
—— ভালোবাসি বউ তোমায় অনেক ভালোবাসি ——.
°°★ প্রভা এখন ইভানের সামনে দাঁড়িয়ে রয়েছে। হৃদয় তার হাজারো কথা, আর কষ্ট রয়েছে কিন্তু সবকিছু লুকিয়ে রেখে প্রভা বলে ————
——-‘- ইভান আপনারা হয়তো মালদ্বীপ থেকে লন্ডনে চলে যাবে।কিন্তু আমি আর সেখানে যেতে চাই না, অনেকদিন হলো দেশে ফিরে যায় না। তাই আমি এখন চৌধুরী বাড়িতে চলে যাব, এরপর ব্যাগ গুছিয়ে নিয়ে চলবে যাব নিজ দেশে। আপনার আর আমার আর হয়তো কখনো দেখা হবে না ——–.
°°★ —– প্রভা কথাটা বলে ইভানকে কিছু বলার সুযোগ দেয় না, সে চলে যেতে চাই হাসপাতাল থেকে। এর আগেই ইভান তার হাত ধরে বলে —–
তোমার নামে লেখা চিঠি পর্ব ৪৯
——- “- আপনি আমায় ভালোবাসেন প্রভা? ——–
°°★ ইভানের কণ্ঠে এমন কথা শুনে প্রভা থমকে যায়। কি বলবে সে। প্রভা শান্তি গলায় বলে ———-
——- “- যদি বলি ভালোবাসি?
—– “- বিয়ে করবেন আমায় প্রভা। সারাজীবন ভালোবেসে যাবেন আমায়