তোমার মুগ্ধতায় পর্ব ২৫
অহনা আক্তার
মুসকানের পরীক্ষার কেন্দ্র পড়েছে তাদের বিদ্যালয়ের পাশ্ববর্তী বিদ্যালয়ে। মুসকান এতোদিন বান্ধবীদের সাথে একাই এক্সাম দিতে যেত। মাঝেমধ্যে রাতুলও নিয়ে যেত। বিদ্যালয় কাছে হওয়ায় যাওয়া আসার তেমন অসুবিধা হয়নি। মুসকান যে স্কুলে এক্সাম দিচ্ছে সেই স্কুলে আরো বিভিন্ন স্কুলের ছাত্রছাত্রীদেরও সিট পড়েছে। সব স্কুল একসাথে মিলিয়ে এক্সাম নেয়া হচ্ছে। আজকের এক্সামও খুব ভালো হয়েছে। প্রশ্ন সহজ করেছে।
ফারিশদের বাড়িতে থাকতে সে মোটামুটি ভালোই পড়াশোনা করেছে। ফাইজা বিভিন্ন কোচিং সেন্টার, স্যার এর বাসায় গিয়ে পড়লেও মুসকানকে সেই সুযোগটা দেয়নি ফারিশ। মুসকানের জন্য বাসায়ই একজন মহিলা হোম টিউটর রেখেছে সে। ওই টিউটর মুসকানকে ম্যাথ আর গ্রুপের সাবজেক্ট গুলো দেখিয়ে দিত। ইংরেজি গ্রামার পাঠগুলো ফারিশ নিজে মুসকান কে বুঝিয়েছে। মাঝেমধ্যে তো ম্যাথও বুঝিয়েছে। তখন অবশ্য ফাইজাও ছিল। দু’জনই স্টুডেন্ট ভালো হওয়ায় ফারিশের তেমন বিরক্ত লাগেনি তাদের পড়াতে। এমনিতে ফারিশ যতই বলুক পড়াশোনা করাবে না, এক্সাম দেয়া লাগবে না। কিন্তু পড়াশোনার ক্ষেত্রে মুসকান কে সবচেয়ে বেশি সাহায্য সে নিজেই করেছে।
আরও গল্প পড়তে এখানে ক্লিক করুন
এক্সাম শেষে গার্ডিয়ানদের ছাউনির নিচে দাঁড়িয়ে ফারিশের জন্য অপেক্ষা করছে মুসকান। ফারিশ আসবে বলে ফ্রেন্ডদের সাথে আর গেলো না সে। মুসকানের পাশে সিট পড়েছে একটা হ্যাংলা পাাতলা গড়নের ছেলের। সেই ছেলে মুসকান কে একা একা দাঁড়িয়ে থাকতে দেখে দ্রুত তার কাছে আসল,
— আরে মুসকান আজকে একা যে?
মুসকান বিরক্ত হলো। ছেলেটা এক্সাম শেষে প্রতিদিন তার পিছু পিছু বাড়ি পর্যন্ত আসে। তখন তার পাশে বান্ধবীরা থাকে বলে হয়তো কথা বলতে সাহস পায়না। আর এক্সামের সময়তো মুসকান নিজেই সুযোগ দেয় না। চুপচাপ নিজের মতো করে খাতায় লিখতে থাকে। ছেলেটার নাম শান্ত। কিন্তু স্বভাব আচরণে মোটেও শান্ত নয়। মুসকানের মনে হলো লিখা পড়ায়ও খুব ভালো ছেলেটা। এক্সাম হলে বারবার জিজ্ঞেস করেছে, ‘তোমার হেল্প লাগলে বলো। কোনো প্রশ্নে সমস্যা হলে বলো। আমি হেল্প করব।’
মুসকানকে জোরপূর্বক ঠোঁটে হাসি জুলিয়ে মাথা নেড়েছে। কেউ নিজের থেকে এভাবে কথা বলতে আসলে তো উত্তর না দিয়ে পারা যায় না।
আজ এক্সাম শেষে মুসকানের বান্ধবীরা সবাই ফুচকা খেতে গিয়েছে। মুসকান কে বলেছিল কিন্তু ফারিশ এসে যদি তাকে খোঁজে না পায় এইজন্য আর যায়নি। মুসকান খানিকটা অস্বস্তি নিয়ে একটু সাইড হয়ে দাঁড়াল। কারণ শান্তর পাশে এখন তার বন্ধুরাও এসে দাঁড়িয়েছে। সকলেই শান্ত কে নিয়ে মজা করছে। কেউ কেউ বলছে, ‘বলে দে। বলে দে… আজকের মতো এমন সুযোগ আর পাবি না!’ শান্ত পেছন থেকে চুল টেনে মুচকি হাসলো। মুসকানের অস্বস্তি বাড়লো। ভেতরটা যেন কেমন কেমন করছে। সে গেটের কাছে উঁকি ঝুঁকি দিয়ে দেখার চেষ্টা করল ফারিশ আসছে কিনা। শান্তর বন্ধুরা শান্ত কে এক ধাক্কায় মুসকানের সামনে এনে ফেলল। জোর গলায় বলল,
— ভাবি শান্ত আপনাকে কিছু বলতে চায়!
মুসকানের চোখ চড়কগাছ! প্রথম দেখায় সরাসরি তাকে ভাবি বলে সম্মোধন করছে। ব*দমাইশ পোলাপাইন। মুসকান ভীতি নিয়ে একটু আশেপাশে তাকালো। ব্যাপারটা খুবই লজ্জার। আশেপাশে দু’একজন স্টুডেন্ট আর তাদের সাথে দু’একটা লোককে দেখে খানিকটা স্বস্তি মিলল। একপাশে তাদের মতো এমন আরো অনেক স্টুডেন্টরাই আঁটি বেঁধে গল্প করছে। কথা না শুনলে কেউ সন্দেহ করবে না। শান্ত ছেলেটা গলা খাঁকারি দিল। মুসকানের দৃষ্টি আকর্ষনের চেষ্টা আরকি। মসকানের হাত পা ঠান্ডা হয়ে আছে। কখনো এমন পরিস্থিতি তে পরে নি সে। পাশে বান্ধুবিরা থাকলে হয়তো একটু সাহস পেত।
এতগুলো ছেলে তার থেকে কয়েকহাত দূরে দাঁড়িয়ে আছে আর একটা ছেলে তার কাছাকাছি এসে দাঁড়িয়েছে। উনি এখনো কেন আসছে না! শান্তর কণ্ঠস্বর রুক্ষ। বুঝাই যাচ্ছে কথা বলতে ছেলেটার গলা শুকিয়ে যাচ্ছে। সে জিহব দিয়ে শুষ্ক ঠোঁট দুটো ভিজিয়ে মুসকানকে বলল,
— তোমাকে একটা কথা বলার ছিল।
মুসকানের উত্তর দেয়ার আগেই একটা গম্ভীর স্বর ভেসে আসলো,
— কি কথা ছোট ভাই?
প্রবল বিস্ময় নিয়ে ফারিশের দিকে তাকালো শান্ত । মুসকান ততক্ষণে ঠাটিয়ে চোখ বুঝে নিয়েছে। রিশাদের কথা শুনে ফারিশ যেভাবে রিয়েক্ট করেছিল ওটা বারবার চোখের সামনে ভেসে উঠছে। চোখের সানগ্লাস খোলে মুসকানের সামনে এসে দাঁড়াল ফারিশ। গাঁ থেকে তীব্র পারফিউমের ঘ্রাণ আসছে। হাতে আইসক্রিমের প্যাকেট। বুঝাই যাচ্ছে মুসকানের জন্য এনেছে। ফারিশ অবিলম্বে মুসকানের দিকে আইসক্রিমের প্যাকেট টা এগিয়ে দিল। মুসকান আরো চোখে একবার তাকিয়ে চট জলদি সেটা হতে নিয়ে নিল। ছেলেটা এখনো হা করে ফারিশের দিকে তাকিয়ে আছে। শান্ত কে নিজের দিকে এভাবে তাকিয়ে থাকতে দেখে ফারিশ প্রশ্ন করলো,
— কি হলো ছোট ভাই? আমাকে কি আজকে বেশি হ্যান্ডসাম লাগছে? এভাবে তাকিয়ে আছো যে? ছেলে দেখোনি?
শান্ত থতমত খেয়ে দৃষ্টি নামিয়ে নিল। লজ্জাও পেয়েছে। শান্তর বন্ধুরা ততক্ষণে পগারপার। কার আগে কে ছুটবে সেটার প্রতিযোগিতা চলছে। বন্ধুদের এভাবে পালিয়ে যেতে দেখে শান্তর মুখটা চুপসে গেলো। সে উসখুস করতে করতে বলল,
— আ’আসলে..
ফারিশ মুচকি হেসে শান্তর মুখোমুখি দাঁড়াল। রসাত্মক সুরে বলল,
— কি ভাই পছন্দ করার জন্য আমার বাচ্চা বউটাকেই পেলে? দুনিয়ায় আর মেয়ে নেই?
শান্তর চোখ গোল হয়ে মার্বেলের আকার ধারণ করল।তোতলিয়ে বলল,
— ব…বউ?
ফারিশ সশব্দে হেসে ওঠলো। শান্তর ইউনিফর্মের কলারটা টেনেটুনে ঠিক করে দিতে দিতে বলল,
— ইসসস, প্রণয়ের আগেই কি একটা ছেঁকা খেয়ে গেলে? মায়া হচ্ছে তোমার জন্য!
শান্ত ভীতু আওয়াজে বলল,
— স..সরি ভাই। আমি বুঝতে পারিনি !
ফারিশ আবারও হাসল। টিটকারি সুরে বলল,
— বুঝতে পারোনি বললেই হলো! তোমাদের জন্য আমার বউ কতটা ভয় পেয়েছে দেখতে পারছো না? ঠিক এই কারণেই ওকে পড়াতে চাই না আমি! যদি ভুলিয়ে বালিয়ে পটিয়ে ফেলো। তখন আমার কি হবে? এতো রিস্ক নিয়ে কি থাকা যায়!
ফারিশের টিটকারি শুনে মুসকানের কপাল কুচকে গেল। নাকের পাটা ফুলিয়ে তার দিকে গরম দৃষ্টি নিক্ষেপ করল। ফারিশ পরোয়া করল না সেই দৃষ্টি।
শান্তর চেহারা থেকে ভয় কেটে গেছে। সে বুঝতে পারছে লোকটা তাকে তেমন কিছু করবে না। হলোও তাই। ফারিশ শান্ত কে খুবই ভদ্র ভাবে জিজ্ঞেস করল,
— এই বয়সে এসব করে বেড়ালে ভবিষ্যতের চিন্তা করবে কখন? সময়টা চলে গেলে কি আর ফেরত পাবে?
শান্ত মাথা নিচু করে ফেলল। ফারিশ এবার একটু সিরিয়াস হয়েই বলল,
— বাবা-মা কষ্ট করে লেখাপড়া করায় এসব করার জন্য? মেয়েদের পিছু পিছু ঘোরবার সময় এখন?এই-যে স্কুল লাইফ, বন্ধুবান্ধব, এক্সাম, লেখাপড়ার এই সময়টা এইটা কি দ্বিতীয় বার ফিরে পাবে? যে সময়টাতে তোমাদের উচিৎ নিজেদের ক্যারিয়ারের পথে পা বাড়ানো। একের পর এক ধাপ অতিক্রম করা। সেই সময়টাকে তোমরা মেয়েদের পিছন ঘুরে নষ্ট করে দিচ্ছ।
শান্ত নিচু স্বরে বলল,
— আর এমন হবে না ভাই। আমি বুঝতে পারছি। আমি কোনো মেয়ের পিছনেই সময় নষ্ট করবো না। পড়ায় মনযোগ দিব।
ফারিশ মুগ্ধ হেসে শান্তর কাঁধ ঝাকালো,
— ভালো ছেলে।
শান্ত হেসে ফারিশের সাথে আরেকটু কথা বলে চলে গেল।
— আইসক্রিম কি শরবত বানিয়ে খাওয়ার জন্য রেখে দিছো? এখনো খাচ্ছ না কেন?
ফারিশের ভারী স্বরে মুসকান ঠোঁট বাঁকাল। আইসক্রিমের প্যাকেট ছিঁ’ড়ে খেতে খেতে বলল,
— এতো দেড়ি করে আসলেন কেন? আমি কখন থেকে অপেক্ষা করছিলাম।
ফারিশ বাইকে বসতে বসতে উত্তর দিল,
— জামিল চাচার সাথে খামারে গিয়ে ছিলাম। সেখানেই একটু লেট হয়েছে।
মুসকান বাইকে বসে একহাতে ফারিশের কোমর পেচিয়ে ধরলো। অপর হাতে আইসক্রিম। যত দ্রুত পারছে ওটা খেয়ে শেষ করছে। পরীক্ষার সরঞ্জাম সব ফারিশের কাছে। বাইকের আয়নায় মুসকানের খাওয়া দেখে ফারিশ শাসাল,
— আস্তে খাও। নাক, মুখের কি অবস্থা বনিয়েছো?
মুসকান শুনল না। বড় বড় বাইট দিয়ে কাঠি টা ছুড়ে ফেলে বলল,
— আপনি কিন্তু বলেছিলেন আজকে ঘুরতে নিয়ে যাবেন। মনে আছে তো?
পেন্টের পকেট থেকে টিশু বের করে মুসকানের দিকে বাড়িয়ে দিল ফারিশ। বাইক স্টার্ট দিতে দিতে মৃদু হেসে বলল,
— আজ সারাদিন তোমার।
মুসকানের চোখে মুখে প্রাণবন্ত হাসি ফুটল। সে হাসি দেখে মন জুড়িয়ে গেল ফারিশের।
একটা রেস্টুরেন্টের ভিতর অধীরতা নিয়ে বসে আছে ফাইজা। বারবার আসে পাশে তাকাচ্ছে। ভয় আর টেনশনে তার অবস্থা নাজেহাল। ভাইয়ের ভয়ে কখনো কোথাও একা একা যাওয়ার সাহস করেনি ফাইজা। কোনো ছেলের সাথে তো কখনোই না। কিন্তু আজ ভাইয়ের অনুপস্থিতিতে সেই দুঃসাহস দেখিয়ে ফেলেছে সে। তাজমহল কে মিথ্যে বলে বাসা থেকে বের হয়ে এই রেস্টুরেন্টে চলে এসেছে। যার সাথে দেখা করতে এসেছে সেই ছেলেটি তার সামনেই বসা। তীক্ষ্ণ দৃষ্টিতে তাকে পর্যবেক্ষণ করছে। ফাইজার দৃষ্টি অস্থির। হাত-পা ঠান্ডা। কপালে বিন্দু বিন্দু ঘাম । এই মুহূর্তে তার চেহারা দেখে যে কেউ বলে দিতে পারবে সে যে সাঙ্ঘাতিক ভয়ে আছে। সামনের ছেলেটা একটা পানির বোতল ফাইজার দিকে বাড়িয়ে দিল। ফাইজা সেটা থেকে ঢকঢক করে কয়েক ঢুক পানি খেয়ে গলাটা ভেজাল।
— তোমার ভাই এখানে নেই রিলাক্স।
ফাইজা ভয়ে ভয়ে বলল,
— য..যদি এসে যায়।
— তাহলে আমাকে আসতে বলেছো কেন?
ফাইজা ঢুক গিলল,
— আপনি এত উত্তেজিত হচ্ছেন কেন?
— হবো না। এক ঘন্টা ধরে তোমার কাঁপা-কাঁপি দেখে যাচ্ছি! শিথিল হতে পারছো না?
— আসলে কখনো কোনো ছেলের সাথে এভাবে দেখা করিনি তো।
— ওহ কামন ফাইজা। আ’ম ইউর কাজিন।
ফাইজা মিইয়ে যাওয়া কণ্ঠে বলল,
— কিন্তু আপনাকে তো ভাইয়া পছন্দ করে না।
রিশাদ রেগে বসা থেকে দাঁড়িয়ে গেল। ইদানীং অল্পতেই উত্তেজিত হয়ে পড়ে সে। রাগান্বিত ভয়েসে বলল,
— লিসেন তোমার ভাইয়ার পছন্দের ধার ধারি না আমি।
ফাইজার অস্থিরতা বাড়ল। ফারিশের কথা শুনলেই রিশাদ এমন ক্ষেপে যায়। সে উৎকণ্ঠিত হয়ে বলল,
— প্লিজ বসুন। আমি আর ভয় পাবো না আপনি বসুন।
রিশাদ বসলো। সোশ্যাল মিডিয়ার মাধ্যমে রিশাদের সাথে একটা ভালো সম্পর্ক গড়ে উঠেছে ফাইজার। সেই সম্পর্ককে প্রেমের সম্পর্ক বলে কিনা জানে না সে। কিন্তু জানে রিশাদের সাথে কথা বলতে তার ভালো লাগে। লোকটা যেন হঠাৎ করেই তার অভ্যাসে পরিনত হয়েছে। রিশাদ যখন কোনো ভাবেই তার মায়ের সাথে যোগাযোগ করতে পারছিল না তখন তার অবস্থা পা’গল প্রায় হয়ে গিয়েছিল। কতোবার যে ফারিশদের বাড়িতে গিয়েছিল জিন্নাতের সাথে দেখা করতে তার কোনো হিসেব নেই। কিন্তু ফারিশ আর জহির তালুকদারের জন্য দেখা করতে পারেনি। বাড়ির দারোয়ান তাকে গেটের ভিতরেই ঢুকতে দেয়নি। শীতের রাতে রিশাদ রাস্তায় দাঁড়িয়ে চাতক পাখির মতো অপেক্ষা করেছিল মায়ের সাথে একটু কথা বলার জন্য। মা মা বলে চিল্লিয়ে ছিল।
জিন্নাতকে বাড়ি যাওয়ার জন্য আবদার করেছিল। কিন্তু জিন্নাত শুনেও না শুনার মতো থেকেছে। ভিতর থেকে ছেলের জন্য বুক ফেটে গেলেও কথা বলেনি। এতো সহজে যদি ছেলেকে ক্ষমা করে দেয় তাহলে সে একি কাজ আবার করবে । রোজ বাড়ির সামনে রিশাদকে অসহায়ের মতো দাঁড়িয়ে থাকতে দেখে মায়া হয় ফাইজার। সে লুকিয়ে রিশাদ কে নিজের নাম্বার দেয়। বলে যে তার ফুপিমণির সব খবর সে রিশাদ কে দিবে। আর যেন এভাবে নাওয়া খাওয়া বাদ দিয়ে এখানে না দাঁড়িয়ে থাকে।
মায়ের পক্ষ থেকে কোনো সারা শব্দ না পেয়ে রিশাদ ফাইজার কথাই মেনে নেয়। মায়ের খোঁজ নেওয়ার জন্য ফাইজাকে ফোন দিলেও ধীরে ধীরে ফাইজার সাথে কথা বলাটা অভ্যাস হয়ে যায়। সারাক্ষণ ফোনে কথা বললে কেউ সন্দেহ করবে বলে দু’জন এফবি তে এড হয়। তখন থেকেই শুরু হয় তাদের রাত দিন কথা বলা। মেসেজে তারা একে অন্যকে তুমি বলেও সম্মোধন করতো। ফাইজার প্রায়ই ইচ্ছে করতো রিশাদের সাথে দেখা করার। কিন্তু ফারিশের ভয়ে পারত না। গতকাল ফারিশ দাদুর বাড়িতে গেছে বলে ফাইজা সেই সাহস টা দেখিয়েছে। প্রথমবারের মতো রিশাদের সাথে একা একা বেড়িয়েছে। ফাইজাকে চুপচাপ বসে থাকতে দেখে রিশাদ প্রশ্ন করল,
— ফোনে তো দিব্য তুমি বলে ডাকতে দেখা হওয়ার সাথে সাথে সব গায়েব।
ফাইজা একটু লজ্জা পেল। কানের পিছে চুল গুজে বলল,
— সরাসরি বলতে লজ্জা করছিল।
— তোমার হি’টলার ভাই কয়দিনের জন্য গেছে?
ফাইজা ক্ষেপে গেল,
— একদম আমার ভাইকে হি’টলার বলবে না।
— এইতো তুমি বেড়িয়েছে।
ফাইজা আবারও লজ্জা পেল। রিশাদ মুগ্ধ হয়ে বলল,
— লজ্জা পেলে তোমায় দারুণ লাগে।
ফাইজা মিষ্টি হাসল। লাজুক কণ্ঠে বলল,
— তোমাকেও পাঞ্জাবিতে দারুন লাগছে।
রিশাদ মুচকি হাসলো। বলল,
— শুধুমাত্র তোমার ইচ্ছেতেই পড়েছি। নাহলে এইসব পাঞ্জাবি-ফাঞ্জাবির ধারে কাছেও নেই আমি।
ফাইজা মনে প্রশান্তির হাওয়া ভয়ে গেল। নরম স্বরে বলল,
— আমাকে সন্ধ্যের আগে বাড়ি ফিরতে হবে। মা টেনশন করবে। তাছাড়া ভাইয়া আজকেই এসে পড়বে।
রিশাদের মনটা ছোট হয়ে গেল। দৃঢ় কণ্ঠে বলল,
— আবার কবে দেখা হবে?
ফাইজার বুকটা মোচড় দিয়ে উঠল। ঠিকইতো। আবার কবে এভাবে দেখা করতে পারবে। ফারিশ ভাইয়া জানতে পারলেতো তাকে বাড়ি থেকেই বের হতে দিবে না। ফাইজা মন খারাপ করে বলল,
— হবে একদিন।
রিশাদ দীর্ঘশ্বাস ফেলে উঠে দাঁড়াল। সাথে ফাইজাও। দু’জনেই হাঁটতে হাঁটতে রেস্টুরেন্টের বাইরে চলে আসল। রিশাদ আবদারের সুরে বলল,
— আমি পৌঁছে দেই। বাড়ির সামনে যাব না প্রমিজ।
ফাইজা না করতে গিয়েও করল না। রিশাদ বাইকে বসে হেলমেট পড়ে নিজের মুখ ডেকে ফেলল। ফাইজাও নিজের স্কার্ফ দিয়ে পুরো মুখ ডেকে রিশাদের বাইকের পিছনে বসল। কাঁধে হাত রাখবে নাকি রাখবে না ভাবতে ভাবতে রেখেই দিল। রিশাদের ঠোঁটে হাসি ফুটল। যত ধীরে বাইক চালানো যায় রিশাদ তত ধীরে বাইক চালাচ্ছে। মনে মনে চাচ্ছে পথ না ফুরাক। ফাইজা হাসল। মজার সুরে বলল,
— তোমার বাইকে কি তেল নেই?
— আছে। থাকবে না কেন?
— তাহলে এতো আস্তে চালাচ্ছ যে? আমাকে তো দ্রুত ফিরতে হবে।
— সময় টা যতটুকু পাড়ছি ধরে রাখার চেষ্টা করছি। ফুরিয়ে গেলেইতো শেষ।
ফাইজা মুগ্ধ হলো,
— ফুপিমণি নাকি আমাদের এক্সাম শেষে আসবে বলেছে।
রিশাদের অভিমানি সুর,
— আসলেই কি। আমাদের বাড়িতে তো যাবে না।
ফাইজার মনটাও খারাপ হয়ে গেল। রিশাদের কষ্ট এখন তাকেও পুড়ায়।
— এবার ফুপিমণি আসলে আমি তাকে বুঝাব। বাবাকেও বলব।
রিশাদের হাসি শুনা গেল,
তোমার মুগ্ধতায় পর্ব ২৪
— তুমি কি বুঝাবে?
ফাইজা রিশাদের পিঠে চিমটি বসাল,
— একদম মজা নিবে না বলে দিচ্ছি। ফুপিমণি আমাকে খুব আদর করে। আমার কথা নিশ্চয়ই শুনবে।
রিশাদ আর কথা বলল না। সে তো চায়ই তার মা ফিরে আসুক। তাকে ক্ষমা করুক….