তোর নেশা পর্ব ১তুষার আহমেদ কাব্য
— তোর কাছে ভালোবাসা মানে কি নিধি?(মাইশা)
— ভালোবাসা মানে যে অনেক চকলেট, আইসক্রিম আর সব সময় মুখে হাসি রাখে।
হেসে জবাব দেয় নিধি। মাইশা নিধির দিকে তাকিয়ে আছে, মেয়েটা বড্ড অবুঝ বা বলা যায় বোকা। দুজন দাঁড়িয়ে আছে ব্রিজের ওপর। ব্রিজের নিচ দিয়ে বয়ে যাচ্ছে পানির স্রোত,তাতে দেখা যাচ্ছে নিধির হাসি মুখ।
—- ভালোবাসা? ভালোবাসা হচ্ছে অপ্রয়োজনীয় একটা বাক্য,এ ছাড়া আর কিছুই না।”
কফিশপে বসে নিরবের দিকে তাকিয়ে বলল কাব্য, তারপর আবার ফোনের দিকে চোখ দেয়।
— তুই কাউকে ভালোবাসিস না? বা আগে বাসতি না?(নিরব)
— তোর কাছে এসবের মানে থাকতে পারে কিন্তু আমার কাছে এসবের কোনো মানে নেই।(কাব্য)
নিরব হেসে বাইরের দিকে তাকায়, ব্যস্ত শহর ছুটছে। কাব্যের কথা কি সত্যি? ভালোবাসা কি এখন শুধুই একটা অপ্রয়োজনীয় বাক্য?নিরব টেবিলে রাখা পানির গ্লাস এর দিকে তাকায়। তাতে কাব্যের রুড চোখ গুলো দেখা যাচ্ছে
কফি শেষ করে কাব্য আর নিরব উঠে বের হয় রাস্তায়। বিকেল ৫টা বাজে, রাস্তায় ভালোই মানুষ। কাব্য আর নিরব বাসার দিকে রওনা দেয়। হঠাৎ একটা বাচ্চা কাব্যের পথ আগলে দাঁড়ায়,হাতে ফুল।
—বাইয়া ফুল নিবেন? নেন না একটা (ছেলেটা)
আরও গল্প পড়তে এখানে ক্লিক করুন
কাব্য পকেট থেকে ১০০টাকা বের করে ছেলেটার হাত থেকে ১০০টাকার ফুল কিনে হাতে নেয়। বাচ্চা টা চলে যায়। নিরব একটু অবাক হয়, কাব্যের গোলাপ অপছন্দ।
কাব্য হাটতে থাকে, নিরব ও পাশে হাটছে। জিজ্ঞেস করবে কেন ফুল নিলো? নিরব জিজ্ঞেস করবে তখনই সামনের একটা খালি বেঞ্চের উপর ফুল গুলো ছুড়ে মেরে কাব্য হেটে চলে যায়।
— আরে ফেলেই যদি দিবি তাহলে ছেলেটাকেই দিতি,ওর থেকে ফুল নিলি কেন?(নিরব)
—ফুল না নিলে টাকাটা ভিক্ষে হয়ে যেতো(কাব্য)
বলেই কাব হেটে চলে যায়। নিরব সেখান থেকে একটা ফুল নিয়ে হাটা ধরে। সামনে একটা ছোট বাচ্চা মেয়ে দাঁড়িয়ে আছে তার মায়ের সাথে।বেশ কিউট। নিরব বাচ্চাটার হাতে ফুল টা ধরিয়ে দিয়ে চলে যায়।
ব্রিজ থেকে নেমে হাটা শুরু করে নিধি আর মাইশা..
— আজ বিরিয়ানি রান্না করবি?(নিধি)
— না বাবা তুই রান্না করলে রান্নাঘর আস্ত থাকবে না(মাইশা)
—হি হি হি আমি না তুই করবি
— রাজি তাও তুই রান্নাঘর থেকে দূরে থাক
— হিহি, এই দেখ
বলেই নিধি সামনে একটা বেঞ্চের কাছে দাঁড়ায়। একগুচ্ছ গোলাপ রাখা
— হায় মেরি জান,দেখ দেখ কেউ ভালোবাসা রেখে গেছে(নিধি)
—উফ তুই থাম তো
— সত্যি রে লোকটার মনে অনেক ভালোবাসা, সবার জন্য গোলাপ রেখে গেছে
—উফফ
নিধি গোলাপ গুলো হাতে নিয়ে হাটা শুরু করে
— আরে নিধি এটা কার না কার গোলাপ,রেখে দে।নিধি!(মাইশা)
নিধি কথায় কান না দিয়ে হেটে চলে যায়, মাইশা নিধি নিধি বলতে বলতে পেছনে যাচ্ছে।
— জানিস কাব্য, একদিন একটা মিস্টি রাজকন্যা আমার জীবনে আসবে। সে হবে মায়াবতী, হরিণী চোখ,কমলার মতো ঠোট আর গাল গুলো….(নিরব শেষ করার আগেই…)
—- ডিম ভাজি(কাব্য)
— না না গাল ডিম ভাজি কেন হবে?
— আরে চুলায় ডিম ভাজতে দিয়ে তুই এখনে রুপকথার গল্প শোনাচ্ছিস,যা😐
নিরব চমকে রান্নাঘরে চলে যায়। ইস ডিম টা পুরো পুড়ে গেছে,কাব্য জানার আগেই আরেকটা ডিম ভাজতে হবে।
হঠাৎ কাব্যের ফোন বেজে ওঠে,মায়ের কল।
— আসসালামু আলাইকুম আম্মু(কাব্য)
—ওয়ালাইকুম আস-সালাম। কি করছিস?( মা)
— এই তো আম্মু একটা বই পড়ছি,আর নিরব ডিম ভাজচ্ছে
— হাহা আচ্ছা ভালো কথা তোর চাকরি হলো?
— হ্যাঁ তব্ব বেতন এতো বেশি না
— আলহামদুলিল্লাহ, তুই কাজে মনোযোগ দে।আর হ্যাঁ এবার জলদি সেটেল হয়ে বিয়ে টা করে নে
— আম্মু আপনি জানেন আমার এসব একদম ভালো লাগে না
— তা বললে হবে না,এটা বাধ্যতামূলক
— যাই হোক আমি এখন রাখছি
— আচ্ছা নিজের খেয়াল রাখিস!
কাব্য সালাম দিয়ে কল রেখে দেয়।
— রাজকুমার আসবে ঘোড়ায় চড়ে, মুখে থাকবে মন ভোলানো হাসি আর হাতে অনেক চকলেট আর আইসক্রিম (নিধি)
— একটু থাম,আমাকে রান্না করতে দে?একটু?(মাইশা)
— আচ্ছা ঠিক আছে
তখনই নিধির কল আসে
—হ্যালো আমার মিস্টি আম্মু🥰🥰🥰(নিধি)
— তা আমার আম্মু টা কি করছে?(নিধির মা)
— এইতো রাজকুমারের কথা বলছি
— ওরে পাগলি মেয়ে, আচ্ছা শোন তুই কিন্তু একদম বেশি দুস্টমি করবি না
— আমি দুস্টমি করি?😳🥺
— হ্যাঁ আম্মু তুমি অনেক পাজি
— হিহি🤪
মায়ের সাথে কথা বলতে বলতে বারান্দায় চলে যায় নিধি,বারান্দায় অনেক ফুল গাছ।
পরেরদিন।
কাজ থেকে দিরে নিরব আর কাব্য সেই কফিশপে বসে।
— আর কতদিন সিংগেল থাকবো রে ভাই,আবার তো সিম কোম্পানি ও আমাকে ১০ টাকায় ৩০মিনিট দিচ্ছে।মজা নিচ্ছে(নিরব)
— তো নিয়ে নে(কাব্য)
— কি করবো সেই মিনিটের?।
— বাবা মাকে কল দিয়ে কথা বল
— জ্বি স্যার আমি যথেষ্ট কথা বলি
— তো আর কি চাই তোর?
— একটা প্রেমিকা
— যত্তসব সময় নস্ট
— ও হ্যালো,তোর সারাজীবন একা থাকার ইচ্ছে থাকতে পারে আমার না।
— তো যা বিয়ে কর?
— বিয়ের আগে প্রেম করবো না?
— নিষেধ
— আচ্ছা বিয়ে ফিক্স করে তারপর প্রেম
— তো বিয়ে ফিক্স কর
— তার জন্য মেয়েও তো লাগবে তাই না? নাকি ল্যাম্পপোস্ট এর সাথে বিয়ে করবো
বলেই নিরব পা বাড়িয়ে দেয় আর তখনই তার পায়ে কেউ হোচট খায় আর এক গ্লাস পানি এসে পড়ে কাব্যের গায়ে…
কাব্য চমকে উঠে তাকিয়ে দেখে একটা মেয়ে টেবিলে হাত দিয়ে আছে,পড়ে যাওয়া থেকে নিজেকে সামলে
কাব্য প্রচন্ড রেগে কিছু বলতে উঠে দাঁড়ায়
— কাব্য কাব্য,ইনি মেয়ে। রাগ না,কন্ট্রোল। আমি বলছি। (নিরব)
তখনই পেছন থেকে নিধি এসে দেখে মাইশা টেবিলের উপর হাত দিয়ে দাঁড়িয়ে আছে আর সামনে একটা ছেলে ভিজে দাঁড়িয়ে আছে।
— হি হি হি হি তুই সব পানি এনার উপর ঢেলে দিলি?(নিধি)
বলেই নিধি হেসে উঠে। কাব্য আরো রেগে যায়।
— আপু I’m extremely sorry!আমি দেখিমি আপনি আসছেন,আপনি চাইলে শোধবোধ করতে আমাকে লেং দিয়ে ফেলে দিতে পারেন(নিরব)
—right শোধবোধ তো হওয়া উচিত(কাব্য)
কাব্যের কথা শুনে নিরব অবাক হয়ে তাকায়। এটা কাব্য বলছে? কাব্য টেবিল থেকে এক গ্লাস পানি নেয়..
তারপর মাইশার মাথায় ঢেলে দেয়। মাইশা আতকে উঠে কাব্যের দিকে তাকায়।
পানি ঢেলে কাব্য বের হয়ে যায়
—সরি সরি(নিরব)
নিরব ও কাব্যের সাথে চলে যায়
মাইশা তেলে বেগুনে জ্বলে উঠে। নিধি মাইশার কাধে মাথা রেখে হাসতে থাকে .. মাইশা পারলে এখনই কাব্যকে ছিড়ে খায়
শপ থেকে বের হবার আগে কাব্য একবার আড়চোখে তাকায়, তারপর বেরিয়ে যায়
—তুই হাসি থামাবি?(মাইশা)
— থামছে না তো(নিধি হেসেই যাচ্ছে)
— এর বদলা আমি নেবোই
— কিভাবে নিবি, এদের কই পাবি?
— এনারা রোজই এখানে আসেন( একজন ওয়েটার এসে বলল)
মাইশার ঠোঁটের কোনে হাসি ফুটে ওঠে।
— ঠিক বাচ্চু, এবার দেখাবো শোধবোধ কাকে বলে। মাইশা কে সেটা কাল বুঝবা হাড়ে হাড়ে…