তোর নেশা পর্ব ৮
তুষার আহমেদ কাব্য
কাব্য দাঁড়িয়ে আছে বারান্দায়, ভেতরে বাসার সবাই মাইশার পাশে বসে আছে। মাইশার জ্বর বেশি না তবে আদরের মেয়ে কি না তাই এতো ব্যস্ত সবাই।
দেখে কাব্য হাসবে না কাদবে বুঝতে পারছে না।
পরেরদিন সকালে…,
কাব্যের ঘুম ভেঙে যায় একটা ফোনে…রিসিভ করতেই…
—- হ্যাঁ আন্টি, শুনেন আমি বলি কি কাব্যকে ওর অসুস্থতার কথা টা বইলেন না আর(নিবিড়)
—কোন অসুস্থতা?(কাব্য)
—-কাব কাব্য তুই? না মানে
— নিবিড় কোন অসুস্থতা?
— আরে আন্টির নাম্বার তোর কাছে কেন?
—- আম্মুর নাম্বার টা আমার কাছে এখন,নিবিড় আমার কোন অসুস্থতা?
—- কাব্য দেখ তুই শান্ত হ
—-নিবিড় কিছু জিগ্যেস করছি
—- তুই আমার সাথে দেখা কর।
কাব্য ভেবেই পাচ্ছে না, তার মা তার থেকে কি এমন লুকাচ্ছে।
কান্য রেডি হয়ে বেরিয়ে যায়। মাইশা ঘুমিয়ে আছে।
নিবিড় পার্কে দাঁড়িয়ে আছে। কাব্য কাছে যেতেই একটা ফাইল কাব্যের হাতে দেয়। নিবিড়ের চোখ ছলছল করছে
—কি হয়েছে (কাব্য)
আরও গল্প পড়তে এখানে ক্লিক করুন
বলতেই নিবিড় কাব্যকে জড়িয়ে ধরে কেদে দেয়।কাব কিছু বুঝতেই পারলো না।কিছু জিজ্ঞেস করার আগেই নিবিড় চলে যায়।
কাব্য ফাইল টা খোলে,ফাইলের লেখা গুলো পড়তেই কাব্যের দুনিয়া বদলে যায়। পায়ের তলার মাটি যেন সরে যায়। ধপ করে বসে পড়ে। চোখ দিয়ে টপটপ করে পানি পড়তে থাকে,মায়ের কি হবে? আর মাইশা? গতরাত ঘুমের ঘোরে ভালোবাসি বলেছে সে… কাব্য ও মাইশাকে ভালোবেসে ফেলেছে
কিন্তু হয়তো তাদের মিল ভাগ্যে নেই।
কাব্য অঝোরে কেদে চলেছে। নাহ! সে আর এখানে থাকবে না! নিজেকে সবার থেকে দূরে নিতে হবে! হাতে আর একদম সময় নেই।
সেদিন বিকেলে।
মাইশা আর নিধি-নিরব বাইরে গেছে। কাব্য বাসায়।
মাইশার বাবা কাব্যের সাথে কিছু কথা বলার জন্য রুমের দিকে যায় কিন্তু দরজার কাছে এসেই শুনতে পায় ভেতরে ফিসফিস করে কাব্য কারো সাথে কথা বলছে
” আরে হ্যাঁ, মাইশার থেকে সাক্ষত নিয়েই ওর সব সম্পত্তি আমার নামে করে নিবো,তারপর ওকে মেরে তোমাকে বিয়ে করে নেবো।কেউ জানতেও পারবে না(কাব্য)
শুনে মাইশার বাবা ক্ষেপে যায়। লাথি মেরে দরজা খোলে। কাব্যের সামনে দাঁড়ায় আর কাব্যকে জোরে একটা চড় দেয়। তারপর কলার ধরে টানতে টানতে বাইরে নিয়ে আসে।
মাইশার ভাই জিজ্ঞেস করলে তিনি তার শোনা সব কথা বলেন এতে সবাই ক্ষেপে যায় আর কাব্যকে মারধর শুরু করে।
এক সময় মাইশার বাবা কাব্যের কলার ধরে টানতে টানতে বাইরে নিয়ে ফেলে দেয়
— আমার মেয়ে আসার আগে এখান থেকে পালা,নাহলে জীবন নিয়ে ফিরতে পারবি না(মাইশার বাবা)
বলেই দরজা বন্ধ করে দেয়।
সব কাজ শেষ করে মাইশা নিধি আর নিরব বাসায় ফেরে।কাব্যকে না দেখতে পেয়ে মাইশা তার মাকে জিজ্ঞেস করে কিন্তু তিনি চুপ করে থাকেন। তারপর ভাইয়ার কাছে জানতে চায় কিন্তু সেও চুপ।
হঠাৎ রেগে ধমক দেন মাইশার বাবা! মাইশা ভয় পেয়ে যায়৷ তারপর মাইশার বাবা সব কিছু বলেন কাব্য কি করেছে! মাইশা স্তব্ধ হয়ে দাঁড়িয়ে থাকে। সে কিছুতেই বিশ্বাস করতে পারছে না।
—কিন্তু কাব্য তো আপনাদের ব্যাপারে কিছু জানেই না! তাহলে?(নিরব)
—- বিয়ের পর হয়তো এসব ভেবেছে(মাইশার বাবা)
—কিন্তু কাব্যের তো আগে কোনো জিএফ ছিলোইনা। এসব কাকে বলবে ও?
কথাটা সবাই ভাবছে। তখনই কাব্যের মা নিরবের কাছে কল দেয়
—জ্বি আন্টি(নিরব)
—কাব্য কোথায়? ওকে সামলাও! বাবা আমরা এখনই আসছি! দেখো ও যাতে ভেঙে না পড়ে (মা কাদতে কাদতে)
—কি হয়েছে আন্টি আপনি কাদছেন কেন?
তারপর মা এমন কিছু বলল যা শুনে নিরবের হাত থেকে ফোন পড়ে যায়। সবাই জিজ্ঞেস করতে থাকে কিন্তু নিরব চুপ থাকতে দাঁড়িয়ে আছে।
নিরব মাইশার রুমে চলে যায় আর অনেক খুজে কাব্যের ব্যাগের কোণায় সে ফাইল টা পায়।
ফাইল টা এনে মাইশার হাতে দিয়ে নিরব বসে কাদতে থাকে।
মাইশা ফাইল টা পড়ে স্তব্ধ হয়ে যায়।
কাব্যের এই ব্যাপার টা কেউ জানতো না।
মাইশার চোখ দিয়ে পানি পড়তে থাকে। ঠিক তখনই… নিরবের ফোন বেজে ওঠে
—- হ্যালো (নিরব)
— নিরব তুমি একটু আমার হাসপাতালে চলে আসো।( সেই পরিচিত ডাক্তার)
—আমি…
— জানি তুমি কাদের সাথে আছো,তাদের নিয়ে আসো।কাব্যের স্ত্রী কেও নিয়ে এসো। কাব্য এখানে এডমিট।আর আমার মনে হচ্ছে না বেশি সময় তাকে রাখা যাবে
বলেই কল রেখে দেয় ডাক্তার। নিরব পাথর হয়ে দাঁড়িয়ে থাকে। মাইশা অবুঝ বাচ্চার মতো বলতে থাকে কি হয়েছে কিন্তু নিরবের কাছে উত্তর নেই।
৫ বছর পর
রুমে শুয়ে মাইশার ডাইরি পড়ছে নিলা! আপুর ডাইরি লুকিয়ে পড়াটা বেশ মজার তার কাছে।কিন্তু আজ ডাইরি টা পড়ে মন খারাপ হয়ে গেলো! ভালোবাসা কি সত্যি হেরে যায়?
তখনই মাইশা রুমে হাজির
—- তুমি আমার ডাইরি দিয়ে কি করছো(মাইশা)
—হিহি কিছু না, বাহ আপু! কালো শাড়ি? কি ব্যাপার?
— নিলা আর কয়বার বলবো? আজ আমার বিবাহ বার্ষিকী!
— ভাইয়া এখনো আসেনি?
— জ্যামে আটকে আছে
— আপু?
—হুম?
—- ডাইরি তে তোমার কিছু খারাপ অতীত ও লেখা আছে
—- হুম জানি
—-মনে পড়ে সেগুলো?
—- নাহ! বর্তমান নিয়ে ব্যস্ত আমি😄
—- ওহ
—- ডাইরি রেখে নিচে আয়
তোর নেশা পর্ব ৭
বলেই বেরিয়ে আসে মাইশা…
বেরিয়ে একটা দীর্ঘশ্বাস ফেলে। ভালোবাসা হেরে যায়? নাহ তা হয় না,কখনোই না।
মাইশা আজ স্বামীর পছন্দ অনুযায়ী সেজে বসে আছে। আজ তার বিবাহ বার্ষিকী বলে কথা….