তোর প্রেমে উন্মাদ আমি গল্পের লিংক || Raiha Zubair Ripti

তোর প্রেমে উন্মাদ আমি পর্ব ১
Raiha Zubair Ripti

বড় চাচার বড় ছেলে বেয়াদব বখাটে আরাধ্য আহমেদের সাথে নিজের বিয়ের কথা শুনে রীতিমতো ভয়ে চমকে উঠলো আরু। এতক্ষণ ধরে খেতে থাকা আপেল টা হাত থেকে হঠাৎ করে ফসকে পড়ে গেলো নিচে। লোকটার সাহস হয় কি করে বিয়ের প্রস্তাব পাঠানোর? ওর মতো বখাটে লুইচ্চা কে এই আরু বিয়ে করবে! মরে গেলেও না। বখাটে নামকরণ টা আরু নিজেই দিয়েছে। তার যথেষ্ট কারণ ও আছে। সবার কাছে এই লোক সাধু শুধু আরুর বেলায় বখাটে। রোজ সপ্তাহে না হলেও মাসে একবার করে আরুর গালে থেরাপি পরে। এই থেরাপি সেই থেরাপি না। এটাকে ইংলিশে বলে স্ল্যাপ থেরাপি। যেটা খেয়ে গাল ব্যথা হয়ে থাকে। কোন ছেলে বাঁকা চোখে তাকালো। কোন ছেলে ফুল দিলো। কোন ছেলে কথা বললো, কোন ছেলে প্রেমপত্র দিলো।

কেনো এক্সামে মার্কস কম আসলো এই সব কিছুর জন্য আরু কে থেরাপি খেতে হয়। লোকসমাগমে নয় বরং চিপায় চাপায় একাকী পেলে ঠাস ঠাস বসায়। লোকসমাগমে দিলে তো সবাই তার আসল চেহারা চিনে ফেলবে। এমন ছেলে কে বিয়ে করে কি পারমানেন্ট স্ল্যাপ থেরাপির রোগী হয়ে থাকবে নাকি? উঁহু জীবনেও না। এই বিয়ের ঘোর বিরোধিতা করবে আরু। মায়ের পা ধরে কান্না কাটি করবে। এতেও না হলে বিয়ে ভাঙার জন্য অনশন করবে। না খেয়ে শুঁটকি হবে। শরীরের চর্বি গলে যাবে। মুখের লাবণ্যময় চেহারার চাপাচুপা ভেঙে যাবে তাতে রাজি আরু। তাই মনে মনে বিয়ে ভাঙার পন নিয়ে আরু ফ্লোর থেকে আপেল টা তুলে টেবিলে রেখে হনহন করে মায়ের সামনে গিয়ে দাঁড়ালো। তার মা কনা রান্নার জন্য সবজি কাটছে। রাগে তার শরীর জ্বলে যাচ্ছে। তার পরিবার যে এই বিয়েতে রাজি তাদের হাবভাব দেখে সেই বুঝ হবার থেকেই বুঝে গেছে। কিন্তু আরু সে যে এই বিয়েতে রাজি নয়। তাই রেগেই বলল-

আরও গল্প পড়তে এখানে ক্লিক করুন 

-“ আমার অমতেই বিয়ে ঠিক করে ফেললে মা! একবারও আমার অনুমতি নিয়েছো তোমরা?
কনা মেয়ের কথা শুনে মুচকি হাসলো৷
-“ বিয়ে এখনও ঠিক হয় নি আরু। সবে কথাবার্তা হচ্ছে। বিয়ে ঠিক হলে তোকে জানাতামই তো।
-“ কিসের বিয়ে ঠিক হু? কোনো বিয়ে টিয়ে ঠিক করবা না বলে রাখলাম। আমি কিন্তু ঐ বখাটে কে বিয়ে করবো না বলে রাখলাম।
কনা বিরক্ত হলো মেয়ের কথা শুনে। কড়া গলাতেই বলল-

-“ সমস্যা কি তোর? আরাধ্য কে বারবার বখাটে কেনো বলিস? ও কি করছে তোর সাথে?
-“ ও কি করছে না করছে সেসব কথা রাখো। আমি বিয়ে করবো না যখন বলেছি তখন করবো না।
-“ সেটা তোর বাপকে গিয়ে বল যা।
-“ বাবা কে আমি কেনো বলবো? তুমি বলবে।
-“ আমি তো রাজি এ বিয়েতে। রাজি নস তুই। তো তুই গিয়ে তোর বাপ কে বল।
-“ তুমি ভালো করেই জানো বাবা রাজি হবে না। উল্টো আমাকে ধমক দিবে। নিজের মেয়ের থেকে ঐ বখাটে কে বেশি ভালোবাসে কি না।
-“ সেটা তোর সমস্যা। আরাধ্য কে ভালোবাসার জন্য হাজার টা কারন আছে। কারন ও স্টুডেন্ট হিসেবে ভালো। কখনও ফাস্ট থেকে সেকেন্ডে আসে নি। আর তুই কোনো রকম টেনেটুনে পাশ করিস। আরাধ্যর সাথে যে তোকে নিতে চাচ্ছে এটাতো তোর সাত কপাল ভাগ্য।
কথাটা শুনেই শরীরের রাগ টগবগিয়ে উঠলো।

-“ দরকার নেই এমন সাত কপাল ভাগ্যের মা। এরচেয়ে রাস্তার ফকির কে বিয়ে করাও ভালো।
-“ তাহলে রাস্তার ফকির কে গিয়েই বিয়ে কর যা। আর এখন দূর হ আমার চোখের সামনে থেকে।
-“ আশ্চর্য আমি তো এমনি বলছি। তাই বলে সত্যি সত্যি ফকির কে বিয়ে করবো নাকি? তুমি প্লিজ বাবা কে একটু বুঝাও। পৃথিবীতে তো আরো অনেক ছেলে আছে। তাদের দেখতে বলো না।
-“ আমার চোখে বিশ্বাস কর আরাধ্য ছাড়া আর কোনো ভালো পাত্র নেই। তোর কাছে থাকলে তোর বাবাকে দেখিয়ে বল তুই তাকে বিয়ে করতে চাস।

-“ আমি মাঝেমধ্যে বুঝি না মা আমি কি আসলে তোমাদের পেটের মেয়ে ? নাকি আরাধ্য ভাই তোমাদের আপন ছেলে। একটুও সম্মান আমি পাই না তোমাদের কাছে। আমার মতামতের কোনো গুরত্বই নেই। বাচ্চা কি এক্সচেঞ্জ করছিলা নাকি তোমরা? মুখের ডগায় থাকে আরাধ্য ভাই।
কনা গরম খুন্তি টা নিয়ে পেছন ফিরলো। ধমকে বলল-
-“ আর একটা আজেবাজে কথা বলবি তো তোর একদিন কি আমার একদিন আরু। যা রুমে যা। দেখ আয়ুশ কি করছে।
আরু সহসা মায়ের পা ধরে বসে পড়লো। ভ্যা ভ্যা করে বলল-
-“ প্লিজ মা আমারে আরাধ্য ভাইয়ের সাথে বিয়ে দিও না। আমারে কথায় কথায় অপমান করে। ঠাসঠাস থেরাপিও দেয়। প্লিজ আমি তোমার পেটের মেয়ে হয়ে থাকলে আমার এই রিকুয়েষ্ট টা রাখো। আমি এর বদলে তোমার সব কাজ করে দিব।
কনা মেয়ের থেকে পা ছাড়িয়ে নিলো।

-“ পা ধরে কান্না কাটি করে লাভ নেই। বাবা কে গিয়ে বলো।
আরু লাফ দিয়ে উঠে দাঁড়ালো।
-“ আমি কিন্তু তাহলে অনশনে যাব বলে রাখলাম। জল অব্দি খাবো না। ম’রে টরে গেলে এরজন্য দায়ী থাকবে কিন্তু তোমরা। ভেবে দেখো মেয়ে বড় নাকি বান্ধবীর ছেলে বড়।
কনা কোনো উত্তর দিলো না। মাঝেমাঝে বুঝে না এত আপত্তি কেনো আরাধ্য কে নিয়ে ওর?
-“ চুপ করে আছো তো বেশ। আমিই যা করার করবো।
আরু মাকে চুপ থাকতে দেখে শরীর ভর্তি রাগ নিয়ে রুমে আসলো। বিছানায় ছোট ভাই আয়ুশ পড়তেছে। এই আয়ুশ টা একদম আরাধ্য ভাইয়ের কার্বনকপি। আরাধ্যর নেওটা। মাঝেমধ্যে ইচ্ছে করে এটাকে তুলে মামনির বাসায় ফেলে আসতে। কিন্তু পারে না৷ কারন তার ইচ্ছের মূল্য এই পরিবারে নেই। এখনই মামনি কে ফোন দিয়ে তার ছেলের নামে হাজার খানেক খাঁটি সত্য কথা বলে বলবে তার ছেলেকে সে বিয়ে করবে না। যেই ভাবা সেই কাজ। বিছানা থেকে ফোন টা নিয়ে মামনির ফোনে কল লাগালো। ওপাশ থেকে ফোন রিসিভ হতেই আরু গড়গড় করে বলতে লাগলো-

-“ আচ্ছা মামনি তুমিই বলো আমার কি বিয়ের বয়স হয়েছে ? তোমার ছেলের সাথে আমার বিয়ে! কিভাবে বলতে পারলে? তোমার ছেলে একটা লু’ইচ্চা, মেয়েবাজ। তাকে বিয়ে করে আমি আমার সাধের জীবন টা নষ্ট করতে চাইবো বলতো? আর তাছাড়া তোমার ছেলের সাথে আমার বনে না। আমরা কেউ কাউকে দেখতে পারি না। সেখানে বিয়ে হলে তার পরের দিন ই আমাদের ডিভোর্স কনফার্ম হয়ে যাবে। আমার জীবন একটাই তাই বিয়েও একটাই। তোমার ছেলেকে বিয়ে করে সেই জীবন নষ্ট করে ডিভোর্স এর খাতায় নাম লেখাতে চাই না। এখন আবার বলো না যে সেজন্যই তো তোকে আরাধ্যর জন্য আনতে চাচ্ছি। একমাত্র তুইই পারবি আমার ছেলেকে সঠিক পথে আনতে।
দেখো মামনি ছেলে তোমার ছেলেকে সঠিক পথে আনার দায়িত্ব ও তোমার। আমার নয়।

-“ ছেলে টা না হয় আমার মায়ের কিন্তু স্বামী তো হবো আমি তোর। তোরও তো কিছু দায়িত্ব থাকে। আফটার অল আমার ইজ্জত হরণকারী তুই। আমার ইজ্জত লুটে নিয়েছিলি ছোট বেলায়। মনে পড়ে? ভিডিও টা এখন ও আছে। সযত্নে রেখে দিয়েছি, বিয়ে ভাঙার জন্য বেশি ভংচং করলে ভাইরাল করতে সময় লাগবে না। জোর করে আমার সাথে ছিঃ বলতেও আমার লজ্জা লাগে এখন। তুই জানিস তোর দেওয়া সেই কলঙ্কের ভার এখনও আমি বয়ে বেড়াচ্ছি। তোর কি মনে হয় এটা জানার পর মেয়েরা আমাকে বিয়ে করবে আরু?
আরু হঠাৎ ফোনের ওপাশ থেকে মামনির বদলে আরাধ্যর গলার স্বর শুনতে পেয়ে ভরকে যায়। ভয়ে হাত ফসকে ফোন পড়ে যেতে নিলে কোনো রকমে ধরে ফেলে। আশ্চর্য এতক্ষন ধরে যার নামে বদনাম করলো সেই শুনে ফেললো। এবার তো আরুকে সামনাসামনি পেলেই কাঁচা চিবিয়ে খাবে এই ছেলে। ভয়ে আমতা-আমতা করে বলে আরু-

-“ আ..আপনি! নাম্বার টা তো মামনির।
-“ তার ছেলে আমি৷ তার ফোন টা আমিও ধরতে পারি। অস্বাভাবিক তো কিছু নেই এতে।
-“ মামনি কে ফোন টা দিন।
-“ কেনো আমার নামে উল্টা পাল্টা কথা বলে বিয়ে ভাঙবি? কখনই না। তোর বিয়ে আমাকেই করতে হবে। আমি আমার ইজ্জত হরণকারী কে এত সহজে ছেড়ে দিব না। ছোট বেলায় মনে ছিলো না লুচি মেয়ে? আমার টসটসে লাল দুটো ঠোঁট কে ছি ছি ছি। আবার আমাকে লুইচ্চা বলিস। তুই নিজেই তো এক লুচি।
-“ কার সাথে কথা বলছিস আরাধ্য?

কথাটা বলতে বলতে রুমের ভেতর ঢুকে আরাধ্যর মা সন্ধ্যা। আরাধ্য ফোনটা মায়ের হাতে ধরিয়ে দিয়ে বলল-
-“ তোমরা কিভাবে এমন অশিক্ষিত মেয়ের সাথে আমার বিয়ের কথাবার্তা বলতেছো মা? ধরো ফোন। এই মেয়ে আমাকে ফোন করে বিরক্ত করে ফেলতেছে। ফোন না ধরায় এখন তোমার ফোনে ফোন করে কিসব বলতেছে। বলতেছে আমি যদি তাকে বিয়ে না করি সে কচু গাছের সাথে ফাঁসি নিবে। আমি খাঁটি মুসলিম হয়ে তো আর একটা মেয়েকে এভাবে মৃ’ত্যুর দিকে ধাবিত করতে পারি না। তাই বলেছি আমি ভেবে দেখবো। এখন সে তাতেও রাজি নয়। তুমিই কথা বলো এই পাগল মেয়ের সাথে।

ফোনের ওপাশ থেকে আরু আরাধ্যর কথা শুনে কথা বলার মতো ভাষা হারিয়ে ফেললো। আরাধ্য ভাই এসব কি বললো! সে কখন তাকে বিয়ে করার কথা বললো? উল্টো সে নিজেই তো ব্লেকমেইল করলো। রাগে লজ্জায় কান্না পেলো আরুর। তাকে বিয়ে করার চেয়ে তো কচু গাছের সাথে ফাঁসি নেওয়াই উত্তম। আরু রেগে ফোন কেটে দিলো। আরাধ্য আরুর ফোন কেটে দেওয়া দেখে বলল-

-“ দেখছো ফোন কেটে দিছে বিচ্ছু মেয়ে। লজ্জা পেয়েছে হয়তো। মা বলছি তুমি কিন্তু দেরি করো না৷ কাজিন হিসেবে আমার তো একটা দায়িত্ব আছে আরুর কথা ভাবার। নিজের ইচ্ছে কে না হয় কুরবানী দিলাম আরুর জন্য। কারো প্রাণের চেয়ে আমার ইচ্ছে বড় হতে পারে না। আমি আমার জীবন আরু কে বিয়ে করে নষ্ট করে দিব তবুও আরুকে তার নিজের জীবন কচু গাছের সাথে ফাঁসি নিয়ে নষ্ট করতে দিব না।

তোর প্রেমে উন্মাদ আমি পর্ব ২