তোর প্রেমে উন্মাদ আমি পর্ব ১১
Raiha Zubair Ripti
রিসিপশনের সব লোকের দৃষ্টি গিয়ে পড়লো এক নারীর উপর পড়নে তার কালো শাড়ি, ভারি মেকাপ,শরীর ভর্তি হীরের গয়না। আরাধ্য ঠোঁট কামড়ে এই রমণী কে দেখে ভাবছে। তাকে কি নাম দেওয়া যায়? ব্লাক পেপার? উঁহু.. ব্লাক হোয়াইট কম্বিনেশনের আলকাতরা?
নারী টি এগিয়ে আসলো আরু আর আরাধ্যর দিকে। হাতে থাকা একটা ডায়মন্ডের বক্স আরুর হাতে ধরিয়ে বলল-
-“ খুলে দেখো পছন্দ হয় কি না।
আরু দেখলো না খুলে। সেজন্য রমণীটা নিজেই খুলে দেখলো।
-“ দেখো এখন। ১০ লাখ টাকা দিয়ে এনেছি কিনে আমার বোনের ছেলের একমাত্র বউয়ের জন্য।
আরাধ্য পাশ থেকে ড্রিংকসের গ্লাস নিয়ে এক ঢোক খেয়ে বলল-
-“ আম্মা তোমাকে ইনভাইট করছিলো?
শ্রেয়া তাকালো আরাধ্যর দিকে।
-” ইনভাইট না করুর..তোর খালা হিসেবে তো আমার একটা কর্তব্য আছে তাই না।
-“ এটা কি সেজে আসছো খালা? ছিঃ তোমার ফ্যাশন রুচি এতো বাজে হলো কি করে?
শ্রেয়া নিজের দিকে তাকালো।
-” কেনো রে সুন্দর লাগছে না?
-“ একটু ও না। একদম বিভৎস লাগতেছে। একটু রুচিশীল হও। আফটার অল তুমি আরাধ্য আহমেদের একমাত্র খালা বলে কথা। এতো টাকা তোমার একজন পোশাক, মেক-আপ আর্টিস্ট তো রাখতে পারো সাথে।
সন্ধ্যার শরীর রাগে জ্বলছে। এতো লোকের ভীরে সিনক্রিয়েট করতে চায় না বলে চুপ করে আছে। কিন্তু আষাঢ় কে ঠেলছে কনুই দিয়ে গুঁতিয়ে। আষাঢ় তাকালো। প্রশ্নবোধক চাহনি তাক করে বলল-
-“ কিছু বলবে?
সন্ধ্যা দাঁত চেপে বলল-
আরও গল্প পড়তে এখানে ক্লিক করুন
-” ও এখানে কি করছে? আমার কিন্তু রাগে শরীর জ্বলছে। প্লিজ ওরে বের করেন এখান থেকে।
নিখিল এগিয়ে আসলো। আষাঢ় কে উদ্দেশ্য করে বলল-
-“ শ্রেয়া আসবে বলিস নি তো। ওকেও ইনভাইট করেছিলি?
আষাঢ় পরলো বিপাকে। সে কেনো শ্রেয়া কে ইনভাইট করে নিজের ঘাড়ে নিজের বিপদ ডেকে আনবে?
-” ওর কি আসার জন্য দাওয়াতের প্রয়োজন হয়? কিছু মানুষ আছে না দাওয়াত না দেওয়া স্বত্তেও চলে আসে।
-“ আপনি ওকে বের করেন ডাক্তার সাহেব। না হলে কিন্তু আমি নিজেই সিনক্রিয়েট করে ফেলবো।
-” আচ্ছা আমি দেখছি।
আষাঢ় এগিয়ে গেলো। শ্রেয়ার পাশে গিয়ে দাঁড়াতেই আয়ুশ এসে দাঁড়ালো। ও কেবলই উপর থেকে নিচে নেমেই শ্রেয়া কে দেখেছে। আর এগিয়ে আসলো। কিছুক্ষণ তাকিয়ে থেকে বলল-
-“ এই তুমি সেই আন্টি না আরশির পাজি খালা টা?
শ্রেয়া পাশ ফিরে তাকালো এমন কথা কানে আসায়। আয়ুশ কে দেখে তার ভ্রু কুঁচকে আসলো। পিচ্চি একটা ছেলে তাকে পাজি বলছে! শ্রেয়া কিছু বলার উদ্যত হলে আষাঢ় শ্রেয়া কে থামিয়ে বলল-
-“ এই তোর স্বামী না হসপিটালে? স্বামীর কাছে না থেকে এখানে কি করছিস?
-” হসপিটালে আছে তো কি হইছে?
-” কি হইছে মানে! স্বামীর পাশে থাকবি না?
-” ওর ছেলেমেয়ে আছে পাশে।
-” তুই চলে যা সিনক্রিয়েট হওয়ার আগে শ্রেয়া। আমার বউ ক্ষেপে গেলে খবর আছে কিন্তু।
-” তোর বউ ক্ষেপে যাবে কোনো? তোর বউয়ের সাথে কথা বলেছি নাকি আমি?
-“ তোরে তো দাওয়াত দেই নাই। তারপর আসলি কোন মুখে?
-“ দায়িত্ববোধ থেকে।
আষাঢ়ের হাসি পেলো।
-“ দায়িত্ববোধ সিরিয়াসলি! এই জিনিস টা তোর ভেতর আছে?
-” কেনো থাকবে না?
-” দায়িত্ববোধ থাকলে অসুস্থ স্বামী রেখে সেজেগুজে এখানে হাজির হতি না। এখন চলে যা খেয়ে দেয়ে।
-” অপমান করছিস?
-” মান অপমান গায়ে লাগে নাকি তোর? লাগলে চলে যা।
শ্রেয়া কিছুক্ষণ দাঁড়িয়ে থেকে নিখিলের দিকে একবার তাকালো। নিখিল ভুলেও তার দিকে তাকাচ্ছে না। পাশেই অতি সুন্দরী বউ তাকিয়ে আছে শ্রেয়ার দিকে। শ্রেয়া চোখ দিয়েই যেন ভস্ম করে দিলো নিখিলের বউ কে। তারপর চলে গেলো।
আরাধ্য ঠান্ডা ড্রিংকসের গ্লাস নিয়ে মায়ের কাছে গিয়ে হাতে ধরিয়ে বলল-
-“ মাথা ঠান্ডা করো এটা খেয়ে।
সন্ধ্যা ঢকঢক করে খেয়ে নিলো। সুস্থ ভাবেই রিসিপশন টা শেষ হলো।
আরাধ্য আর আরু রাতদের বাড়ি যায় নি। বরং রাত কনা,আয়ুশ রা আষাঢ় দের বাসায় থেকে যাচ্ছে। বসার ঘরে আরু, আরশি আর আয়ুশ বাদে সবাই বসে আছে।
আয়ুশ গেছে আরশির রুমে। মেয়েটা টেবিলে বসে পড়ছে। এতো পড়াশোনা করে কি করবে এই মেয়ে? তাকে তো আয়ুশ চাকরি করাবে না। বসিয়ে বসিয়ে মাথায় তুলে খাওয়াবে। তাহলে এতো কষ্ট কেনো করে? আয়ুশ এগিয়ে গেলো। আরশির পাশের চেয়ার টেনে বসে বলল-
-“ কি পড়ছো?
আরশি জবাব দিলো-
-“ ম্যাথ।
-” তুমি বুঝো ম্যাথ? জানো আমার না মাথায় ঢুকে না। অনেক কঠিন।
-” তোমার মাথায় সমস্যা ভাইয়া। চাচ্চু কে বলে ডক্টর দেখাও।
আয়ুশের মুখ চুপসে গেলো। আরশি সবার সামনে একদম বোবা হয়ে থাকে। আর একান্তে যখন থাকে তখন যা একটু কথা বলে তাও যেনে কথায় কথায় খোঁচার ধাঁচ থাকে।
-“ আমি টেন মিনিটস স্কুলে ভর্তি হয়েছি আরু। তোমার থেকেও ভালো স্টুডেন্ট হবো।
-” অল দ্যা বেস্ট। আমিও চাই তুমি ভালো পড়াশোনা করো।
-” আর কিছু চাও না?
আরশি আর কথা বললো না। চুপচাপ ম্যাথ করতে লাগলো।
-” কি হলো বলো। আর কিছু চাও না?
না আরশি আর কিছুই বললো না। আয়ুশ বসা থেকে উঠিয়ে রুম থেকে বের হতে হতে গেয়ে উঠলো –
-” ভালোবাসবো বাসবো রে আরশি কে
অনেক যতনে। আমার হৃদয় জুড়ে
শুধু আরশি ঘুরে… দয়াল তোমার
দিল কি দয়া হয়না?
ওরে পাখি আমার নিঠুর বড়,
আরশি বোঝে না। আমার খালি হৃদয় টা পড়ে আছে আরশি আসে না….
আরশি পিছন ফিরে একবার বিরক্তিকর চাহনি নিক্ষেপ করে কাজে মনোযোগ দিলো।
আরাধ্য সবার মাঝে বসে থাকতে থাকতে বোরিং হয়ে গেলো। রাত বাজে এখন ১১ টা।
-“ ঘুমাবে না তোমরা? রাত তো অনেক হলো। বাবা মা কে নিয়ে যাও। ঘুম দরকার তার।
আষাঢ় ও সম্মতি প্রকাশ করলো। সন্ধ্যা কে নিয়ে চলে গেলো। আরাধ্য নিজের রুমের দিকে আসলো। দরজায় আসতেই দেখলো আরু আয়নার সামনে দাঁড়ানো। আরাধ্য এগিয়ে এসে বলল-
” এ্যাই আরু,তোকে একটা চুমু খাই?
আরু আয়নার সামনে দাঁড়িয়ে মুখে ময়েশ্চারাইজার মাখছিলো। আরাধ্যর কথা শুনে চমকে উঠলো। আরু কে চুপ থাকতে দেখে আরাধ্য ফের বলল-
-” কিরে খাই একটা চুমু? তোর ঐ গোলাপি গোলাপি ঠোঁটে? কি সুন্দর ঠোঁট রে তোর।
আরু আয়নার নিজের ঠোঁটের দিকে তাকিয়ে বলল-
-” লুচ্চামি করতে আসছেন?
-” সেকি লুচ্চামি করবো তাও আবার বউয়ের সাথে ছি! বউকে তো আদর করা হয়। এবং আমি সেটাই করতে চাইছি। কাছে তো আসতে দিবি না। ততদিন না হয় এটা দিয়েই নিজেকে খুশি রাখি।
-” বের হোন রুম থেকে। লজ্জা শরম নেই,বেলেহাজ কোথাকার।
-” লজ্জা শরম তুই তোর ওড়নার তলায় লুকিয়ে রাখ। এখন আয় চুমু খাই।
কথাটা বলেই আরাধ্য আরুর জবাবের অপেক্ষা না করেই দু হাত দিয়ে আরুর গাল ধরে ঠোঁট ঠোঁট মিলিয়ে দিলো। আরু ছটফট করলো ছাড়া পাওয়ার জন্য। মিনিট পাঁচেক পর আরাধ্য আরুকে ছেড়ে বলল-
-” সেই টেস্ট তো তোর ঠোঁটের, স্ট্রবেরি স্ট্রবেরি ঘ্রাণ পেলাম৷ আবার মিষ্টিও লাগলো।
আরু ট্যিসু দিয়ে ঠোঁট মুছতে মুছতে রাগী গলায় বলল-
-” আমি লিপস্টিক লাগিয়েছি ঠোঁটে যেটা স্ট্রবেরি ফ্লেভারের ছিলো।
কথাটা আরাধ্যর কানে যেতেই পেটে একহাত আর মুখে এক হাত দিয়ে ওয়াশরুমের দিকে ছুটে যেতে যেতে বলল-
-“ শালার বোইন..রাতের বেলায় ও তোর ঠোঁটে লিপস্টিক লাগাতে হয়? শালি এখন আমার পেট খারাপ করলে তোর খবর আছে।
আরাধ্য পানি দিয়ে মুখ ধুয়ে আসলো। আরু কে এখনও ট্যিসু দিয়ে ঠোঁট মুছতে দেখে বলল-
-“ ছু’রি আনি। কেটে ফেল ঐ ঠোঁট যেই ঠোঁটে তুই লিপস্টিক মাখিস।
-” আনুন কেটেই ফেলি। ছি কি বাজে লোক আপনি।
-” ইট’স নরমাল বেবি।
আরু রাগান্বিত হয়ে তাকালো।
-” একদম বেবি বলবেন না।
আরাধ্য চোখ টিপে বলল-
-” জান কলিজা সোনা মন,টোনা ফুপড়া বলি?
-” মাই নেম ইজ আরু। ইউ কল মি আরু।
-” নো। আই কল ইউ জান। প্লিজ কাম।
-” হোয়াই?
-” আরে আয় না তার পর বলছি।
আরু এগিয়ে আসলো। আরাধ্য আরুকে নিজের কোলে ঘুরিয়ে বসিয়ে বলল-
-” বাহ তুই তো অনেক পাতলা রে আরু।
-” এটা পরীক্ষা করার জন্য ডেকেছেন?
-” না শোন।
-” বলুন কান খোলা আছে।
-” শ্রেয়া খালার দেওয়া গয়না টা পড়িস না। আমি ওটা তাকে কাল গিয়ে ফেরত দিব। সেম দামের গয়না আমি বানিয়ে দিব নি।
-” আচ্ছা।
-” রাগ করছিস?
-” না।
-” আচ্ছা ভালো করছিস। এখন ঘুমাবি তো।
-” হু।
-” শুয়ে পড় আমি লাইট নিভিয়ে আসতেছি।
আরু সহসা উঠে দাঁড়ালো।
-“ লাইট নিভিয়ে আসতেছি মানে?
-“ আরে ঘুমাতে বে’য়াদব মেয়ে। সব সময় নেগেটিভ জিনিস মাথায় নিয়ে ঘুরিস কেনো আরু ছিঃ। যা ঘুমা।
আরু মাঝে কোলবালিশ দিয়ে শুয়ে পড়লো। আরাধ্য লাইট নিভিয়ে বিছানায় এসে মাঝখান থেকে কোলবালিশ টা সরিয়ে আরুকে জড়িয়ে ধরলো। আরু কেঁপে উঠলো।
-” কি করছেন কি। ছাড়ুন।
আরাধ্য ফিসফিস করে বলল-
-” না ছাড়বো না। একটা পুরুষের বউ থেকেও তাকে না ছোঁয়ার কষ্ট তোরা মেয়েরা আর কি বুঝবি। জড়িয়ে ধরে ঘুমাতে দে।
-” আমার অস্বস্তি হচ্ছে।
-” আমার স্বস্তি লাগছে। চুপচাপ ঘুমা।
আরু আরাধ্য কে শ’খানেক গালি দিতে দিতে ঘুমানোর চেষ্টা করলো।
মধ্যরাত অথচ নীরা বেলকনিতে দাঁড়ানো। কিছুক্ষণ আগে টেবিলে বসেছিলো পড়তে কিন্তু ১০ মিনিটের বেশি আর পড়তে পারলো না। আবেগের বয়স আবেগ টা কেটে যাক। এভাবে চলতে থাকলে পড়াশোনা তো তার হবে না। মন কে বুঝালো.. জীবনে সব পেতে নেই। কিছু জিনিস না পাওয়াই ভালো। আল্লাহ নিশ্চয়ই ভালো ভেবেই আরাধ্য কে তার হতে দেয় নি। তবে তার নিজের মন থেকে যেনো আরাধ্য নাম টা মুছে দেয়। সে কেবলই তার কাজিন৷ এবং বিবাহিত এক পুরুষ৷ তাকে পাওয়ার সব রাস্তা বন্ধ তাই নিজের পথের গতিপথ ও বদলে ফেলা উচিত।
তোর প্রেমে উন্মাদ আমি পর্ব ১০
কথাটা ভেবেই দীর্ঘ একটা শ্বাস ফেলে রুমে আসার জন্য পা বাড়াতেই নীরার ফোনে মেসেজ আসলো- কাল দেখা করো ঠিক ১০ টা বাজে। তোমার অপেক্ষায় থাকবো আমি তোমার মেডিক্যাল কলেজের পাশে। আমি জানি তুমি আরাধ্য কে ভালোবাসো। সেটা নিয়েই কিছু কথা বলবো।
নীরা অবাক হলো এমন এক মেসেজ দেখে। নম্বর টাও অচেনা। কে হতে পারে এই নম্বরের মালিক? আর নীরা কে চিনে কিভাবে? তার পরিচিত কেউ এটা?