তোর প্রেমে উন্মাদ আমি পর্ব ৯
Raiha Zubair Ripti
ছাঁদের দোলনায় আনমনে ভাইয়ের পাশে বসে আছে আরু। আকাশ টা দেখে তার মায়া হচ্ছে তার চেয়ে মায়া হচ্ছে তার নিজেকে নিয়ে। ফেসবুকে ঢুকেই জানতে পেরেছে মেয়েদের জাতীয় ক্রাশ সারজিস আলমের বিয়ে হয়ে গেছে। আহারে লোকটা কে কতই না পছন্দ করতো আরু। কিন্তু এভাবে ধোঁকা দিয়ে না জানিয়ে বিয়ে করে ফেললো! আচ্ছা আরু কে যে সারজিস আলম তাকে জানিয়ে বিয়ে করতে বসবে। হু ইজ আরু? আয়ুশ আড় চোখে তাকালো। এমন চুপসে থাকা মুখের দিকে তাকিয়ে বলল-
-“ এনি প্রবলেম সিস্টার?
আরু বাচ্চার মতো উপর নিচ মাথা ঝাকালো। আয়ুশ চোখের চশমা টা ঠেলে বৃদ্ধ দের মতো খুব পড়ুয়া হয়ে বইয়ের দিকে দৃষ্টি তাক করে বলল-
-“ ইউ বলতে থাকো ইউর সমস্যা। আই শুনছি।
-“ সারজিস বিয়ে করে ফেলছে আয়ুশ।
-“ সো হোয়াট?
-“ আমার ক্রাশ ও।
-“ একটু তো লজ্জা শরম আনো। দিন দুয়েক পর ইউর শাদি। তুমি ব্রো কে নিয়ে ভাবো। প্লে গার্ল হয়ো না। শুদ্ধ হও।
আরু রেগে গেলো। কতবড় সাহস এই ছেলে তাকে জ্ঞান দিচ্ছে! আয়ুশের মাথায় গাট্টা মেরে বলল-
-” আমায় জ্ঞান দিচ্ছিস তুই? তুই নিজে কি?
-” আমি অতি ভদ্র লয়াল ছেলে।
-” কচু। ভাব ধরতেছো চোখে চশমা নিয়ে বই পড়ুয়া হয়ে?
-“ তোমার সমস্যা তাতে?
-“ অসহ্যকর তুই একটা। সর দূর হ চোখের সামনে থেকে।
-“ তোর সমস্যা তুই দূরে যা। আমাকে তপস্যা করতে দে।
-” কিসের তপস্যা?
-” বিলিপয়েন্ট হবার। ডোন্ট ডিসটার্ব মি। ইউ ক্যান গো নাউ ইউর রুম।
-” কচু পয়েন্ট হবি তুই।
আরও গল্প পড়তে এখানে ক্লিক করুন
আরু এক প্রকার রেগে নিজের রুমে আসলো। আরাধ্য সবেই এসেছে আরুদের বাড়িতে বিয়ের শপিং করে। সোফায় বসে শরবত খাচ্ছে। মায়ের থেকে শুনেছে আরু বিয়েতে সাদা বেনারসি নিছে। অথচ সন্ধ্যা বলেছে আরুর বেনারসি অফ হোয়াইট। কিন্তু বেশি বোঝা ছেলে অফ হোয়াইট মানে সাদা থান ধরে বসেছে। শরবত টা কোনো রকম খেয়ে আরাধ্য আরুর রুমের দিকে পা বাড়ালো। দরজার সামনে দাঁড়িয়ে বলল-
-” কিরে তুই বলে বিয়েতে সাদা শাড়ি নিছিস বিধবাদের মতো?
আরু ফোনের দিকে মনমরা হয়ে তাকিয়ে থেকেই বলল-
-“ হ্যাঁ।
আরাধ্য ভ্রু কুঁচকালো।
-“ কেনো সাদা শাড়ি নিছিস? সেদিন কি তোর জামাইয়ের শ্রাদ্ধ?
-“ হ্যাঁ।
বিরক্ত হলো আরাধ্য। কি হ্যাঁ হ্যাঁ করে যাচ্ছে তখন থেকে। আর কি এত দেখছে আরু ফোনে এতো মনোযোগ দিয়ে। আরাধ্য এগিয়ে এসে ফোনটা কেঁড়ে নিলো। চোখের সামনে জ্বলজ্বল করে উঠলো সারজিস আলমের বিয়ের ছবি খানা। আরাধ্য তেজি গলায় বলল-
-” তোর মোবাইলে পর পুরুষের ছবি কি করছে?
আরু ফোন টা কেঁড়ে নিয়ে বলল-
-” ও পর পুরুষ না। ও আমার ক্রাশ৷ ও বিয়ে করে ফেলছে। সেজন্য আমার কান্না পাচ্ছে।
আরাধ্যর রাগ আকাশ ছুঁই ছুঁই হলো। কত বড় সাহস আরেক বেডির জামাইয়ের জন্য কান্না করতেছে। কত বড় ভণ্ডর ভণ্ড হলে মায়ের থেকে মাসির দরদ বেশি হয়। দাঁত চেপে বলল-
-“ শা’লি তুই আরেক বেডির জামাইয়ের জন্য কাঁদছিস? তোর নিজের জামাইয়ের জন্য জীবনে কেঁদে দেখেছিস কখনও? এই সারাজিস শা’লারে সামনে পাইলে জ্যা’ন্ত পু’তে রাখতাম। শা’লা তুই বিয়ে করবি কর৷ আমার হবু বউয়ের চোখের সামনে পড়লি কেনো?
-” বাজে কথা বলবেন না। ও আমার সামনে পড়ে নি। আমিই নিজ থেকে ওরে পছন্দ করছি।
-” চ’ড়াইয়া দাঁত ফেলায় দিব। আবার গলা উঁচু করে বলিস বেলেহাজ মেয়ে। দেখ গিয়ে ত্রাণের টাকা মেরে বিয়ে করছে।
আরু রুখে উঠলো। তর্জনী তুলে বলল-
-” খবরদার সারজিসের সম্বন্ধে উল্টাপাল্টা কথা বলবেন না। ও এমন মানুষই না..
আরাধ্য সহসা আরুর গালে চ’ড় মারলো।
-” মজা লেগেছে এখন? আরো সারজিস সারজিস করবি? এখন গালে দিছি এরপর ঠোঁটে ঠোঁট মিশায় দিমু।
আরুর হা হয়ে গেলো চ’ড় খেয়ে। খুব জোরে যে দিয়েছে চ’ড় তেমনটাও না। তবে বুঝাতে হবে তো আরাধ্য অনেক জোরে দিয়েছে। তাই ব্যথা পাওয়ার ভান করে বলল-
-” আপনি আমাকে এত জোরে মা’রলেন?
-“ কেনো এটা প্রথম ছিলো তোর জীবনে?
-“ আপনার নামে মামলা করবো আমি।
-“ গিয়ে কর। আমিও বলবো তুই প’রকীয়া করিস।
আরু কথা বলার মতো ভাষা হারিয়ে ফেললো। আরাধ্য কে রুম থেকে বের করে দরজা আঁটকে দিলো। আরাধ্য কিছুক্ষণ চুপচাপ দাঁড়িয়ে থেকে নিচে আসতেই দেখলো নীরা এসেছে। ইশ রে আগে তাদের বাড়ি আসতো এখন আবার এ বাসায় এসেছে। নীরা আরাধ্য কে দেখা মাত্রই এগিয়ে আসলো। কিছুক্ষণ পলক বিহীন তাকিয়ে থেকে বলল-
-“ কেমন আছো আরাধ্য ভাই?
-“ একদম ফাস্ট ক্লাস। তুমি?
-“ বিয়ে করে ফেলতেছো। একটু ভাবতে আমার দিক টা।
-“ ভাবাভাবি দিয়ে জীবন চলে না নীরা। তুমি আমার থেকে ভালো ছেলে পাবে।
-“ তোমাকে তো পাবো না।
-“ সব পেতে নেই। আমি নিষিদ্ধ পুরুষ তোমার জন্য ভেবে নাও সেটা।
-“ আরুর ভেতর কি আছে যা আমার মাঝে পেলে না।
-” এই তো এটাই নেই আরুর মাঝে। ও কারো সাথে নিজেকে কম্পেয়ার করে না।
-“ একটু ভালোবাসতে আমায়।
-“ ভালোবাসা না আসলে বাসবো কি করে?
-“ আরুকে ভালোবাসো?
-“ না।
-“ তাহলে বিয়ে করছো কেনো?
-“ সেটা বুঝবে না।
-“ একটু বুঝিয়েই না হয় বলো।
-“ উঁহু এসব আমি কারো সাথে শেয়ার করি না। স্বয়ং আমার নিজের সাথেও না। সেখানো তোমাকে বলার প্রশ্নই আসে না। আসছি।
আরাধ্য চলে গেলো। উপর থেকে আরু কথা গুলো শুনলো। নীরা আরাধ্য কে ভালোবাসে! তাহলে আরাধ্য কেনো তাকে বিয়ে করছে?
রাতের দিকে আরাধ্য আরু কে ফোন দিলো কিন্তু ফোন ব্যস্ত দেখাচ্ছে। ঘড়িতে সময় দেখে নিলো। ৯টা বেজে ৪০ মিনিট। কাল তাদের গায়ে হলুদ আর আজ এই রাতে আরু কার সাথে কথা বলছে?
আরাধ্য আয়ুশ কে ফোন করলো। আয়ুশ পড়ছিলো টেবিলে। তার পড়নে লুঙ্গি, চোখে চশমা। আরাধ্যর ফোন পেয়ে ফোনের দিকে তাকালো। একবার কেটে গেলো। ফের বাজতেই তা রিসিভ করলো।
-“ হোয়াট ইউর সমস্যা ব্রো? আমি পড়ছি আর তুমি ফোন করে ডিস্টার্ব করছো।
-” রাখ তোর ফোন। আগে বল তোর বোন কি করে?
-“ ফোনে হেঁসে হেঁসে কথা বলছে।
-“ কার সাথে?
-“ রনি ভাইয়ার সাথে।
-“ হোয়াট! পর পুরুষের সাথে কথা বলছে!
-“ হ্যাঁ।
-“ কি কথা বলছে রে?
-” ঐ তো ফুল টুল নিয়ে।
-“ ফুল দিয়ে কি করবে।
-“ সামনে ফাগুন, ভ্যালেন্টাইন্স ডে না।
-“ ভালোবাসা দিবস?
-“ হু।
– ” আচ্ছা আয়ুশ তোর কাছে ভালোবাসা মানে কি রে?
আরাধ্যর কথায় আয়ুশ উৎফুল্ল হলো। খুশিতে গদগদ হয়ে বলল-
-” জানতে চাও?
-” হ্যাঁ বল।
-” আমার কাছে লাভ মানে আই যাকে পাত্তা দেই সে মি কে গিভ নট পাত্তা । আর আই যাকে নট পাত্তা সে মাই ফুট ধরে বসে থাকে।
-” কে তোর পা ধরে বসে থাকে?
-” স্কুলের ঐ প্রিন্সিপালের নেকি গার্ল লায়া।
-” ওয়াও তো লায়া কে পাত্তা দিলেই পারিস।
-” নো ব্রো। আই রিয়েলি অনেস্ট লাভায় বয়।
আই ওয়ান গার্লে আসক্ত। আমি তোমার মতো প্লে বয় না।
আরাধ্যর কপালো দু ভাজ পড়লো।
-” আমি প্লে বয় মানে?
-” ইউ ডোন্ট নেভার শরম ব্রো? হাউ ক্যান ইউ টক টু নীরা আপু? ইউর বিয়ে ফিক্সড মাই সিস্টার। রিমেম্বার ইট।
-” কথা বললাম আর প্লে বয় হয়ে গেলাম?
-” অবশ্যই। মাই সিস্টার ডিড নট লাইক ইট।
-” কেনো তোর বোন নিজের মুখে বলছে?
-” ইয়েস। হি সেইড মি ইউ প্লে বয়।
-” আমি প্লে বয় হলে তোর বোন তো প্লে গার্ল। রনি টনির সাথে কথা বলে কেনো?
-” তাই বলে তুমিও কথা বলবে?
-” হ্যাঁ বলবো।
-” আমার বোন পটি খেলে তুমিও কি পটি খাবে?
-” হ্যাঁ খা… আরাধ্য ত্বরিত গতিতে সামনে তাকা খাবারের দিকে ফিরে তাকালো। — তোর বোনের মতো খাচ্চোর নাকি আমি ছি। শেষ পর্যন্ত পটি! ছি। দু ভাই বোন গিয়ে খা শা’লা। আমার খাওয়ার ১২ টা বাজায় দিলি।
-” ব্রো শুনো।
-“ কি বল শুনছি।
-“ ইফ ইউ পটিয়ে দাও ইউর সিস্টার তাহলে আই গোয়িং টু আপু। এ্যান্ড আই টেল হার যেনো আপু লাভস ইউ৷ এ্যান্ড আই বিলিভ দ্যাট মাই সিস্টার শুনবে মাই কথা।
আরাধ্য ভ্রু কুঁচকালো আয়ুশের কথায়।
-“ এতে আমার লাভ কি?
-“ এতে তোমার লাভ হবে না? এই যে আপু ডাসেন্ট লাভস ইউ। দ্যান আমি বলার পর শি লাভস ইউ। এতে তোমার লাভ হবে না?
-“ না এতে আমার লাভ হবে না। তোর বোনের ভালোবাসা দিয়ে কি আমি লুডু খেলবো নাকি?
-“ ছি ছি ছু শ্যেইম অন ইউ ব্রো। তুমি আমার বোন কে ভালোবাসো না! তাহলে বিয়ে করতে চাও কেনো?
-“ আমার ইচ্ছে তাই।
-“ মাই সিস্টার লাইফ ইউ নষ্ট করতে পারো না উইদাউট ভালোবাসা ছাড়া। বিয়ের পর যদি আমরা বোনকে তুমি ভালো না বাসো। তাহলে সে যদি অন্য পুরুষের সাথে ভেগে যায় তখন?
-“ সেটা তোর ভাবার বিষয় না।
-“ হোয়াট ডু ইউ মিন আমার ভাবার বিষয় না? তুমি আমার আরশির ভাই। তোমাকে নিয়ে আমি ভাববো না?
-“ তোরে বলছি আমি ভাবতে? তুই তোরে নিয়ে ভাব না। আমার পেছন ছাড়। তুই জাস্ট ইমাজিন কর। আরশি তোকে রেখে সিদ্দিক কে বিয়ে করে ফেললো। তখন কি হবে?
-“ সিদ্দিক কে মে’রেই ফেলবো আমি ব্রো।
-“ তাহলে কি আমি আঙুল চুষবো তোর বোন আরেক বেডার সাথে ভেগে গেলে? এখন কথা কম বলে তোর বোন কে ফোনটা দে।
-“ আমি পড়তেছি ব্রো। ভীষণ মনোযোগ দিয়ে। প্লিজ মনোযোগ নষ্ট করিও না।
-“ চ’ড়িয়ে সব গুলা দাঁ’ত ফেলায় দিব। যা ফোন দে তোর বোন রে।
আয়ুশ লুঙ্গি টা ঠিক করে বোনের কাছে এসে বিরক্ত হয়ে শুধালো-
-“ সকালেই সারজিস আলমের জন্য কেঁদে কেটে বুক ভাসাচ্ছিলে। আর এখন আরেক পুরুষের সাথে কথা বলে হা হি শুরু করছো। ধরো তোমার পেয়ার লালের ফোন।
আরু ফোন টা কানে নিলো। আরাধ্য অধৈর্য কণ্ঠে বলল-
-“ ভালো কি হবি না তুই লু’চি?
-“ কি করছি আমি?
-“ সকালে চ’ড়ের কথা মনে নেই বেহায়া? তুই আবার রনি টনির সাথে কথা বলিস কেনো?
-“ তার আগে আপনি বলুন নীরা আপনাকে ভালোবাসে?
-“ শুনছিস তখন সব কথা তাহলে?
-“ হু। তাকেই বিয়ে করুন না। শুধু শুধু আমাকে বিয়ে করে কি লাভ। না আমি আপনাকে পছন্দ করি আর না আপনি আমাকে। তো? এতে লাভ কি?
-“ আমার জীবনের লাভ লস কি তোকে ভাবতে বলেছি আমি?
-“ আমার জীবন টাও তো জড়িয়ে আছে।
-“ আমার নীরা অপছন্দ।
-“ আমিও তো আপনার পছন্দ না।
-“ হু তো?
-“ বিয়ে করে কি করবেন তাহলে?
আরাধ্যর শরীরে জ্বা’লা ধরে গেলো৷ দাঁত চেপে বলল-
-“ শরীরের জ্বা’লা মেটাবো। সেজন্য তোকেই লাগবে।
আরাধ্য কেটে দিলো ফোন। পরের দিন আরুর গায়ে হলুদ হলো। সন্ধ্যা, আষাঢ়, নীরা,নিখিল,নিখিলের বউ এসে আরুর গায়ে হলুদ ছুয়ালো। নীরা দু চোখ জলে ডুবে যাচ্ছে। ইশ ভালোবাসার মানুষটার অন্যের হয়ে যাওয়া দেখা বোধহয় পৃথিবীর সবচেয়ে কষ্টের দৃশ্য। কি দম বন্ধকর অবস্থা। আহারে জীবনে যাকে চাওয়া হয় তাকেই যদি এই জনমে নিজের করে পাওয়া হত তাহলে বোধহয় পৃথিবীতে এত হৃদয় ভাঙতো না। ঠিক আজ থেকে অনেক গুলে বছর আগেও এভাবেই আরেক জনের হৃদয় ভেঙেছিল।
তোর প্রেমে উন্মাদ আমি পর্ব ৮
তার হৃদয় ভাঙার কষ্ট এত বেশিই ছিলো যে পরিবার ছেড়ে দূরে একাকী থাকতে হয়েছে। কতগুলো বছর পর আবারও সেই হৃদয় ভাঙার ঘটনা পুনরাবৃত্তি ঘটলো। প্রতিদিনই তো কারো না কারো হৃদয় ভাঙে। সেই ভাঙা গুলোর ভেতরে ঘুরে ফিরে না হয় এই পরিবারই আবার চলে আসলো। বাবার মতো মেয়েও না হয় সেই একই ব্যথায় ব্যাধিত হলো। কিছু জিনিস ঘুরে ফিরে নিজেদের দিকেই ফিরে আসে।