দিগন্তবেলার প্রেমান্দোলন পর্ব ২৪

দিগন্তবেলার প্রেমান্দোলন পর্ব ২৪
আফরোজা আশা

‘ কি বললি? ’
বেলা এখনো সম্মোহিত চোখে চেয়ে আছে দিগন্তের দিকে। প্রশ্ন করায় আবারো বলে,
‘ আপনি দেখতে সুন্দর ’
কিছুটা অবাক হয় দিগন্ত। তবে তা ভাবে প্রকাশ করে না। বেলার চোখের ভাষা অদ্ভুত ঠেকে। তাই ওর হাত ছেড়ে সামনের দিকে যেতে যেতে বলে,
‘ আমি সুন্দর সেটা আমি জানি। তোকে বলতে হবে না। ’
পেছন থেকে পাল্টা প্রশ্ন ছুড়ে বেলা,
‘ কেনো? আমি বললে কি জাত যাবে? ’
হাঁটা থামিয়ে ঘাড় বাঁকিয়ে বেলার দিকে চাইল দিগন্ত। মেয়েটার কথাবার্তায় হুট করেই বাচ্চামো ভাব ছেড়ে থেকে তেজালো ভাব এসেছে।

‘ সমস্যা কি তোর? উল্টা-পাল্টা প্রশ্ন করছিস কেনো? ’
বেলা কয়েক কদম এগিয়ে এসে দিগন্তের মুখোমুখি দাঁড়িয়ে বলে,
‘ আপনাকে সুন্দর বলেছি বলে এতো অহংকার দেখাচ্ছেন আমাকে। ’
দিগন্ত নিরেট গলায় বলে, ‘ বেশি বুঝতে শিখেছিস? ’
বেলা হাত বাড়িয়ে দিগন্তের শার্টের একটা কোণা চেপে ধরে। ভার গলায় ডেকে ওঠে,
‘ দিগন্ত ভাই!’
‘ হু ’
‘ একটা কথা রাখবেন? ’
‘ কি? ’
‘ এখানে থাকতে ভালো লাগছে না। বাড়ি ফিরবেন তাড়াতাড়ি। ’
ভ্রুঁদ্বয়ের মাঝে গাঢ় ভাজ পড়ে দিগন্তের। সোজা ঘুরে বেলার কাছাকাছি এসে প্রশ্ন করে,
‘ কিছু হয়েছে? কাল রাতেও তো খুশিতে লাফালি। সকাল থেকে এরকম করছিস কেনো? ’
বেলা দিগন্তের শার্ট জোরে চেপে ধরে বলে, ‘ থাকব না আর এখানে। আপনিও আর আসবেন না। ভালো না জায়গাটা।

আরও গল্প পড়তে এখানে ক্লিক করুন 

‘ কেউ কিছু বলেছে? ’
‘ বলে নি। আমি শুনে নিয়েছি। ’
‘ কি? ’
‘ জানি না ’
বিরক্তিমাখা গলায় ধমকে উঠে দিগন্ত, ‘ বেয়াদবি করবি না বেলা। কে কি বলেছে খুলে না বললে আমি জানব কিভাবে? ’
দিগন্তের ধমকানোতে বেলার মনের ভেতরে তৈরি হওয়া সুপ্ত রাগের অনলে ঘি পড়ে। দিগন্তের দিকে আর তাকায় না। গটগট পায়ে ওকে পাশ কাটিয়ে চলে যায় সামনের দিকে। পেছন থেকে বেশ কয়েকবার আওয়াজ দেয় দিগন্ত কিন্তু বেলা থামে নি।
বেলার এহেন ত্যাড়ামো সহ্য হয় না দিগন্তের। রাগে চোয়াল শক্ত হয়ে যায়। বিলের দিকে না গিয়ে আবার বাড়ির দিকে ফিরে গেল। মাথা বেজায় খারাপ হয়ে গিয়েছে ওর। এখনি হে হে করতে করতে মুখ থুবড়ে পড়া একটা বাচ্চা মেয়ে দিগন্ত তালুকদারের সাথে এতো বড় বেয়াদবি করে গেল। প্রশ্নের উত্তর তো দিলই না। উল্টো ওর ডাক ইগনোর করল।

গ্রামে এসে ঝড়-বৃষ্টির মাঝে আরো দুটো দিন কেটে গেল। আজ ওদের গ্রাম ছেড়ে ফেরার দিন। যাওয়ার আগে সী বিচে সময় কাটিয়ে তবে ফিরবে ওরা। তাই তাড়াহুড়ো করছে। সবার সবকিছু গোছ-গাছ শেষ। রকেয়া তালুকদার আর দিলদার তালুকদারের মন খারাপ। এ কদিন বাড়িটা হইচই, আনন্দ-উল্লাসে ভরে ছিল। সবাই চলে যেতেই আবারো শুনশান নিরবতায় ঢেকে যাবে। বাড়ির গাড়িতে সবার সব জিনিসপত্র তুলে দিয়েছে। বাইকেই যাবে ওরা কিন্তু বিপত্তি বাঁধল মাইশাকে নিয়ে। বেলা আর মাইশা একসাথে দাঁড়িয়ে আছে।
মাইশাকে রায়হানের সাথে আসতে বললে ও কিছুতেই রাজি না। অপরিচিত ছেলের সাথে যাবে না। দরকার পড়লে বাসে চড়ে একা যাবে তবুও রায়হানের বাইকে যাবে না।
উপায়ন্তর না পেয়ে দিগন্ত বেলার দিকে ফিরে বলে,

‘ তুই রায়হানের সাথে আয়। আমি মাইশাকে নিয়ে যাচ্ছি। ’
এতোক্ষন শান্ত ভঙ্গিতে দাঁড়িয়ে থাকা বেলা বিস্ময় নিয়ে দিগন্তের দিকে চায়। তারপর সেভাবেই বলে,
‘ আমি তো আপনার সাথে এসেছি আপনার সাথেই যাবো। আপুর বেশি অসুবিধে হলে গাড়িতে আসতে বলেন। ’
‘ ও গাড়িতে একা যাবে কেনো? বাইকেই যাওয়া যাবে। তুই রায়হানের বাইকে যা এখন। পরে…’
পুরো কথা শোনার আর প্রয়োজন পড়ল না বেলার। দিগন্তকে পাশ কাটিয়ে রায়হানের কাছে গেল। রায়হান এতোক্ষন বাইকে হেলান দিয়ে আপাদমস্তক কালো বোরখায় আবৃত মেয়েটাকে দেখছিল। এই মেয়েটার সাথে ওর এখনো কথা হয় নি। শুধু শুনেছে রেহানা খালার মেয়ে আর এক-দু বার দেখেছে তবে মুখ দেখে নি।
বেলা আর মাইশা ঠিকঠাকভাবে বসতেই বাইক ছাড়ল সবাই।
বেলার চোখজোড়া ছলছল হয়ে এসেছে। দিগন্তের দিকে তাকাতে না চাইলেও বারবার সেদিকে চোখ যাচ্ছে। আর তাতেই মাইশার প্রতি মনের সুপ্ত বিদ্বেষটা চরমে পৌঁছাচ্ছে।
মাইশা আর দিগন্তকে নিয়ে কিছু কথা বলেছিল রকেয়া। বেলা আড়াল থেকে শুনেছিল সেটা। তারপর থেকেই এখানে থাকতে ভালো লাগছিল না ওর।
এখন তো দিগন্ত নিজেই ওকে ছেড়ে মাইশাকে নিল। মন ভার হয়েছে ওর। দিগন্তের প্রতি একটা চাপা রাগ কাজ করছে।
রায়হানের থেকে একহাত দূরে বসেছে বেলা। মন বিষিয়ে আছে। ভালো লাগছে না কাউকে।

পড়ন্তবেলার একটা চমৎকার দৃশ্য ভেসে আছে প্রকৃতির মাঝে। ডুবন্ত সূর্যের সৌন্দর্য্যে বিমোহিত সকলে। সমুদ্রের মাঝে পড়েছে তার প্রতিফলিত ছায়া। উপরে ডুবন্ত সূর্য আর নিচে পানি মাঝে ঝিলমিল করতে থাকা সূর্যের প্রতিচ্ছবি দুটোই মুগ্ধ নয়নে দেখছে বেলা। সারা পথ মন ভার করে এলেও এই দৃশ্য দেখে সবকিছু ভুলে বসেছে। খুশিতে আত্মহারা মন নিয়ে ঘুরে ঘুরে দেখছে সব। পেছনে পকেটে হাত গুজে বেলার দিকে তাকিয়ে আছে দিগন্ত। বাকিরা ওদের থেকে কিছুটা দূরে রয়েছে।
বেলার পাশাপাশি দাঁড়িয়ে গভীর গলায় বলল,
‘ আমার ডাক কানে যায় না? ’
‘ শুনি নি ’
‘ ইচ্ছে করে? ’
‘ হ্যাঁ ’
‘ কেনো? বেয়াদবি না করলে পেটের ভাত হজম হয় না। ’
‘ না ’
বেলার ত্যাড়া উত্তরে রাগ হলো দিগন্তের। এখানে আসার পর থেকে ওর সাথে কথা বলার চেষ্টা করেছিল। কিন্তু বেলা দিগন্তের ডাক শুনেও জবাব দেয় নি। আর এখন কেমন মুখের উপরে উত্তর দিচ্ছে। দিগন্ত দাঁতে দাঁত পিষে ধমকে বলল,

‘ থাপড়ে গাল নড়িয়ে দেবো বেয়াদব। এভাবে চেটাং চেটাং করে উত্তর দিচ্ছিস; কার সাথে কিভাবে কথা বলতে তা জানিস না? ’
খনিকের হওয়া ফুরফুরে মনটা আবারো নিভে গেল। আঁখিদ্বয়ের ভারি হলো বেলার। দিগন্তের দিকে মুখ ফিরিয়ে কেঁপে ওঠা আওয়াজে বলল,
‘ অ..আপনি সবসময় আমার সাথে এভাবে কথা বলেন। মাইশা আপুর সাথে তো কখনো এভাবে কথা বলতে দেখলাম না। আমাকে ভালো না লাগলে কথা বলবেন না। এতো ধমকা-ধমকিও করতে হবে না। আমি তো আপনাকে জোর করিনি আমার সাথে কথা বলার জন্য। ’
বেলার ছলছলে নেত্র দেখে থমকালো দিগন্ত। কাছাকাছি এসে ওর দুগালে হাত রেখে নরম কণ্ঠে জিজ্ঞেস করল,

‘ চোখে পানি কেনো? আমি তোকে সেভাবে বলিনি.. ’
‘ দিগন্ত ভাই! ’
‘ হুম ’
‘ মাইশা আপু খুব সুন্দর তাই না? ’
এ সময়ে বেলার অযাচিত প্রশ্নে ভ্রুঁ গুটালো দিগন্ত। কিসের মাঝে কি বলছে মেয়েটা! বেশি ভাবল না। সাধারণভাবেই জবাব দিল,
‘ হু। কেনো? ’
‘ তাকে পছন্দ করেন? ’
‘ কি বলতে চাইছিস? ’
ম্লান হাসে বেলা। কিছুটা দূরে রায়হানের পেছনে দাঁড়িয়ে থাকা মাইশার দিকে দৃষ্টি ফেলে বলল,
‘ আসলেই আপনাদের মানাবে সুন্দর। ’
‘ মাথা খারাপ হয়েছে তোর ’
‘ নাহ। সত্যি বলছি। ’

রাগে চোখ-মুখ লাল হয়ে গেল দিগন্তের। বেলা গাল ছেড়ে ওর দুই বাহু শক্ত হাতে আকড়ে ধরে চিবিয়ে বলল,
‘ তোকে প্রশ্ন করি একটা জবাব দিস আরেকটা। সমস্যা কি তোর? ত্যাড়ামি ছেড়ে ভালোভাবে উত্তর দে। ’
জোরে চেপে ধরার দরুণ বেলা হাতে ব্যাথা পাচ্ছে। ধীর গলায় বলল,
‘ আমার হাতে লাগছে। ’
‘ লাগুক। লাগার জন্যই ধরেছি। ’
ফুঁসে উঠে বেলা, ‘ কেনো ধরেছেন? আমি আপনার কে হই? ’
‘ বেলা! বেয়াদবি করবি না। আমার রাগ উঠছে। ’
-‘ তাতে আমার কি! ছাড়ুন আমাকে। আপনি আমাকে রেখে মাইশা আপুকে বাইকে কেনো তুললেন? আপনার ওই বাইকে আর কোনোদিনও বেলা চড়বে না। আপনি সারাদিন মাইশা আপুকে নিয়ে ঘুরেন। ’
-‘ বারবার মাইশাকে টানছিস কেনো? কি ইঙ্গিত করছিস বেয়াদব! মেরে গাল লাল করে দিবো। ’
দিগন্তের কথায় বেলার রাগের পারদ আরো উপরে উঠে গেল। ঝরঝর করে কেঁদে উঠল মূহুর্তেই। দিগন্তের দিকে রাগী চোখে তাকিয়ে কড়া গলায় বলল,

‘ আমি কলেজে উঠেছি। বারবার আমাকে মারতে চান কেনো? আমাকে মারার আপনি কে? ’
বেলার এতো তেজালো কথা আর সহ্য হলো না দিগন্তের। ঠাসস! করে শব্দ তুলে বেলার গালে থাপ্পড় বসিয়ে দিল। যদিও দিগন্ত খুব একটা জোরে মারে নি। কিন্তু দিগন্তের শক্তপোক্ত দাবাং হাতের আস্তে মারটাই বেলার ফোলা নরম গালে ভীষণ লেগেছে। সাথে লেগেছে ওর মনেও। গালে হাত দিয়ে আশ্রুভেজা নয়নে দিগন্তকে বলে উঠল,
‘ আপনি অনেক খারাপ দিগন্ত ভাই। একটুও ভালোবাসেন না আমাকে। আর কখনো কথা বলব না আমি। না আর কোনোদিনও আপনার আশেপাশে আসব। আপনি মাইশা আপুকে ভালোবাসেন আর আমাকে শুধু বকেন আর মারেন। ভালো না আপনি; একদম ভালো না। ’

কথাটুকু শেষ করে সে স্থান ছেড়ে ছুটে চলে যায় বেলা। দিগন্ত নিরেট চোখে ওকে দেখল। হুট করে ওর বাচ্চামি ছেড়ে এরকম অদ্ভুত ব্যবহারের মানে খুঁজে পেল না দিগন্ত। বেলা চোখ রাঙিয়ে কথা বলছে তাও দিগন্ত তালুকদারের সাথে। এটা কিছুতেই সহ্য হচ্ছে না ওর। বেলার কড়া গলার স্বর, তেজালো কথাগুলো মনে পড়লেই মেজাজের খেই হারাচ্ছে দিগন্ত। কপালের কাছে অবহেলায় পড়ে থাকা সিল্কি চুলগুলো পেছনে ঠেলে একটা সিগারেট চাপল। নিকোটিনের ধোঁয়ার সাথে নিজের সমস্ত রাগ মিলিয়ে দিতে শুরু করল।

অন্ধকার রজনী। জানালার সামনে দাঁড়িয়ে বাহিরের পরিবেশের দিকে চেয়ে আছে এক রমণী। পাশে আরেক রমণীর হাতে ধোঁয়া ওঠা দুটো কফির মগ। একটা তার দিকে বারিয়ে দিয়ে বলল,
‘ গ্রাম থেকে ফেরার পর মন মরা হয়ে আছিস কেনো? ’
বেলা হাত বাড়িয়ে কফির মগটা নিল। তাতে একটা চুমুক দিয়ে বলল,
‘ কেনো যেন কিছু ভালো লাগছে না আপা। কোনো কিছুতে মন বসছে না। ’
বৃষ্টিও কফিতে চুমুক দিল। বেলার দিক থেকে চোখ সরিয়ে বাহিরে অঝোর ধারায় বেয়ে পড়া ফোঁটাগুলোতে মনযোগ স্থাপন করল,

‘ তোকে দেখে মনে হচ্ছে প্রেমে পড়ে ছেঁকা খেয়েছিস। সে বিরহে মন ছন্নছাড়া। ’
বেলা ফিক করে হেসে দিল বৃষ্টির কথায়। কফিটা নাড়াতে নাড়াতে বলল,
‘ আমি কিন্তু শুনেছি আপা। প্রেমে ছেঁকা খেয়েছো তুমি। তাই আমাকে বাইরে পাঠিয়ে ঘুমের ওষুধ খেয়েছিলে। ’
বৃষ্টি হাত উঠিয়ে একটা গাট্টা মারল বেলার মাথায়। গম্ভীর গলায় বলল,
‘ ভুল জানিস তুই। আমি ডিপ্রেশনে গিয়েছিলাম তাই ভুল পদক্ষেপ নিয়ে ফেলেছিলাম। আর ছেঁকা খায় নি। তার আগেই আব্বু আমাকে বাঁচিয়ে নিয়েছে। ’
বেলা কৌতুহল নিয়ে বলল, ‘ আপা একটা প্রশ্ন করি? ’

-‘ বল ’
-‘ ওই লোকগুলো অনেক পঁচা ছিল। আমাকে অনেক বাজে কথা বলেছিল। তুমি ওরকম পঁচা লোককে কিভাবে ভালোবেসেছিলে?’
স্মিথ হাসল বৃষ্টি। দূর আকাশ পানে চেয়ে বলল,
‘ ওটা ভালোবাসা ছিল না বেলা। আমার উড়তি বয়সের ভুল ছিল। ফাহিমের ছলচাতুরী কথাবার্তা শুনে মোহে পড়েছিলাম। ভালোবাসা হলে কি এতো সহজে ছেড়ে দিয়ে দিব্যি হেসেখেলে বেড়াতে পারতাম নাকি! ’
-‘ ফাহিম নামের ছেলেটা খুব খারাপ। ’
-‘ হ্যাঁ। গুন্ডা-লাফাঙ্গারা ওরকমই হয়।’
বেলা ঝট করে ঘাড় ঘুরিয়ে বলল,
‘ দিগন্ত ভাই? ’
বৃষ্টি ভ্রুঁ কুঁচকে বলল, ‘ হুম! কি করেছে? ’

বেলা ভাবুক গলায় বলল, ‘ সেও তো গুন্ডা-বখাটে। তাহলে কি সে ফাহিমের মতো পঁচা লোক? ’
বৃষ্টি ঘাড় ঝাঁকিয়ে বলল, ‘ কি জানি! হতে পারে। সে সারাদিন কি করে তা তো আমরা জানি না। ’
বেলার মুখটা ফ্যাকাসে হয়ে গেল নিমিষেই। আজ সাতটা দিন কেটে গেল বেলারা শহরে ফিরেছে। সেদিন দিগন্ত মারার পর থেকে এখন পর্যন্ত আর ওদের দেখা হয় নি। ফেরার সময় তারা আর বাইকে ফেরেনি। ছেলে তিনজন বাইকে একা এসেছে। বাণী, বেলা আর মাইশা বাড়ির গাড়িতে এসেছে।
এরমাঝে বৃষ্টি বলল, ‘ জানিস বেলা। কিছুদিন আগেও আমি দিগন্ত ভাইয়ের নাম শুনলে ঘুরঘুর করতাম। ’
চকিত প্রশ্ন ছুড়ল বেলা, ‘ কেনো? ’
বৃষ্টি মুচকি হেসে বলল, ‘ ওই যে উড়তি বয়সে ভীমরতি ধরছিল। যাকে দেখতাম তাকেই ভালো লাগত। ’

-‘ এখন লাগে না? ’
-‘ না বাবা। তওবা কেটেছি। এসব থেকে শত হাত দূরে থাকব। একবার জীবন নষ্ট হতে হতে বেঁচেছে। আর এসবে নাই আমি। আমার তো এখন এটা ভাবলেই হাত-পা কাঁপে, যদি ওরা আমার সুযোগ নিয়ে মেরে ফেলত বা রাস্তায় ন’গ্ন অবস্থায় ফেলে রেখে যেত তাহলে কি হতো! ’
বেলা নিজের ছোট দুহাত দিয়ে বোনকে জড়িয়ে ধরল। আদুরে গলায় বলল,
‘ ওসব বাদ দেও আপা। আব্বু বলে না পুরনো কথা মনে করে কষ্ট পেতে নেই। ’
বৃষ্টি বেলার মাথায় স্নেহের চুমু এঁকে বলল,
‘ তোকে আমি অনেক মেরেছি বেলা। ’
-‘ তুমি এখন অনেক ভালো হয়ে গিয়েছ আপা। আগে সারাক্ষন আমার সাথে কেমন রেগে কথা বলতে; আমাকে মারতে। এখন আর আগের আপা নেই। এই আপাটাকেই আমি খুব করে চাইতাম। ’
বৃষ্টি বেলার মাথায় বিলি কাটতে কাটতে বলল,

‘ হিংসা জিনিসটা খুব খারাপ জানিস। আমি ছোট থেকে তোকে হিংসা করতাম। কেনো করতাম নিজেই জানি না! বড় আপার সাথেও হিংসা করতাম। আমার মনে হতো তুই হওয়ার পর থেকে আমাকে আর কেউ ভালোবাসে না। আমার সব আদরে ভাগ বসিয়েছিস তুই। তাই তোকে দেখতে পারতাম না।
দেখেছিস! এই সামান্য একটু হিংসা বোন বোনের সম্পর্কের মাঝে কেমন দ্বন্দ লাগিয়ে দিয়েছিল। হিংসা জিনিসটা মারাত্মক খারাপ। কিন্তু এটাই আবার মানুষের মাঝে মহামারির মতো ছড়িয়ে। এই হিংসার কারণেই কতশত সুন্দর সম্পর্ক নষ্ট হয়ে যায়। ’

দিগন্তবেলার প্রেমান্দোলন পর্ব ২৩

বৃষ্টির একেকটা কথা বেশ ভাবালো বেলাকে। আসলেই! ও-তো হিংসা করেছিল মাইশার উপরে যার বদলে দিগন্ত রেগে গিয়ে মেরেছে ওকে। ওর হিংসার কারণেই ওর আর দিগন্তের মাঝে কথা কাটাকাটি হয়েছিল। কিন্তু হিংসা করল কি কারণে? মাইশার সাথে দিগন্তকে সহ্য হলো না কেনো? রকেয়া তালুকদার যদি দিগন্ত মাইশার বিয়ে দিতেও চায় তাহলে বেলার এতো খারাপ লাগল কেনো? কষ্ট পেল কেনো ও? কেনো-ই বা রাগ লাগল?
এতো প্রশ্নের উত্তর এখন কোথায় পাবে বেলা!

দিগন্তবেলার প্রেমান্দোলন পর্ব ২৫