দিগন্তবেলার প্রেমান্দোলন পর্ব ৪৯

দিগন্তবেলার প্রেমান্দোলন পর্ব ৪৯
আফরোজা আশা

অ্যাম্ববুলেন্সের ঝনঝনে তীব্র বিকট শব্দ কানের পর্দা ভেদ করে মস্তিষ্কে বাড়ি খেলো। সে বিতৃষ্ণাময় শব্দ থেকে রেহাই পেতে কান থেকে ফোন কিঞ্চিৎ দূরে সরাতে বাধ্য হলো দিগন্ত। পরক্ষনেই অজানা এক অশনি সংকেত মাথা চাড়া দিয়ে উঠল। জয়নালের নাম্বার থেকে ফোন এসেছে, কথাটা এক মুহূর্ত স্মরণে আসতেই, আবারো কানের সাথে ফোন সজোড়ে চেপে ধরল। উদ্বিগ্নতার সহিত অপরপাশের ব্যক্তির উদ্দেশ্যে একের পর এক প্রশ্ন ছুঁড়ল। ফোনের ওপারের ব্যক্তি কি বলল কে জানে! দিগন্তের শরীর পরপর করে ঘেমে উঠল। কান থেকে ফোনটা আপন গতিতে গড়িয়ে পড়ল মেঝেতে। সে মূহুর্তের জন্য হয়তো শরীরে কোনো শক্তি অনুভব করল না ও। বিছানার এককোণে বলহীন শরীর আর পিনপিনে শব্দ করা ভোঁতা কর্ণদ্বয় নিয়ে একপ্রকার পড়ে গেল।

ফোন পাওয়ার পর দিগন্তের হুট করে পরিবর্তনে ঘাবড়ে গেল বেলা। নিজ অবস্থানের পরিবর্তন ঘটিয়ে দিগন্তের নিকটে এলো। থম মেরে বসে থাকা দিগন্তের ঘাড় ঝাঁকিয়ে জিজ্ঞেস করল,
‘ ফোনে কে ছিল? কি বলল আপনাকে? ’
দিগন্ত নিরুত্তর। চোখদুটো রক্তিম বর্ণ ধারণ করেছে। হাত-পায়ে কম্পন ধরেছে। রোগ টানটান হয়ে থরথরিয়ে কাঁপতে থাকা সে হাতের দিকে চেয়ে বেলার ভীতি বাড়ল। দিগন্তের অস্বাভাবিক আচরণ দেখে বুক খামচে ধরল ওর। অস্থির গলায় আবারো জোড়ে ঝাঁকি মেরে শুধালো,
‘ আপনি এরকম চুপ করে গেলেন কেনো? শরীর খারাপ লাগছে? দিগন্ত ভাই; কথা বলেন। ’
বেলার এবারের ধাক্কায় যেন হুশ ফিরল দিগন্তের। টকটকে লাল চক্ষুদ্বয় বুজে, ফোঁস করে ভারী দম ছাড়ল। একটা শুকনো ঢোক চেপে, ঝকটা মেরে উঠে দাঁড়ালো। বাইকের চাবি নিয়ে এলোমেলো পা ফেলে, সহসা বাইরের পানে ছুটতে শুরু করল।

আরও গল্প পড়তে এখানে ক্লিক করুন 

দিগন্তের আচরণে মাত্রাতিরিক্ত ঘাবড়ালো বেলা। যেভাবে ছিল সেভাবেই দিগন্তের পিছে পিছে দৌড়ে নিচে নামল।
সদর দরজার কাছে এসে দিগন্তের সাথে রায়হানের দেখা হলো। রায়হান বাড়ি যাওয়ার জন্য বের হয়েছে। দিগন্তের অবস্থা দেখে চমকালো ও। একে অপরের সাথে দুক-এক লাইনের কথা হলো ওদের। তারপর দুজনের অবস্থা প্রায় একই। ব্যতিব্যস্ত পদযুগল শুধু ছুটল বাইকের দিকে।
তালুকদার বাড়ির খুশির আমেজ কাটলো বোধহয়। শোকের ভয়ংকর ছায়া আষ্টেপৃষ্টে ধরল সবাইকে। খবর যেন হাওয়ার বেগে সকলের কানে কানে পৌঁছালো। বাড়িতে পুরুষ সদস্য বলতে, রতনসহ দিগন্তের দলের খাস কয়েকটা ছেলে, দিলদার তালুকদার আর দিহানের উপস্থিতি। মিতালী, দিশা হাসপাতালে যাওয়ার জন্য ঝর তুলেছে। এখনো পুরো ঘটনা সম্পর্কে সঠিকভাবে কেউ অবগত নয়। দিহান জয়নালের কাছ থেকে, ফোন কলে যা শুনল তাতে সে নিস্তেজ হয়ে পড়ল। মিতালী, রকেয়া তাকুলদার বারংবার জানতে চাইছে ওর কাছে।
কম্পিত গলায়, শুকিয়ে আসার শুষ্ক অধরযুগল ভিজিয়ে দিহান বলল,

‘ রতনের বাপ আর মনার এক্সিডেন্ট হয়েছে ট্রাকের সাথে। কাকা স্পট ডেথ। মনাকে নিয়ে হাসপাতাল যাচ্ছে। অবস্থা ভালো না। মাথা থে*তলে গিয়েছে। ’
দিহানের একথা বাজ ফেলল সকলের মাঝে। রতন এতোক্ষন চিন্তিত ভঙ্গিতে এক পাশে দাঁড়িয়ে দেখছিল সবকিছু। দিহানের কথা কর্ণকুহুরে ঠেকতে চমকে তাকালো ওর দিকে। অবিশ্বাস্য গলায় বলল,

‘ দিহান ভাইয়ের মাথা খারাপ হইছে। আব্বা এতোক্ষনে বাড়ি গেছে আমি জানি। খাড়াও, কল দিচ্ছি আব্বাকে। ’
দিগন্তের বিয়ে উপলক্ষে আজ রতনের বেশ-ভূষায় বেশ পরিবর্তন পরিলক্ষিত। ঝাকড়া হয়ে থাকা বাবড়ি চুলগুলো পরপাটিভাবে আচড়েছে। নতুন কেনা হাফ হাতা চেক গেঞ্জি আর সাথে জিন্স প্যান্ট পড়েছে। পরিহিত সাদা-কালো জিন্সের পকেট থেকে সদ্য কেনা নতুন এনড্রয়েডটা বের করল রতন। দিন চার আগে ওর আব্বার জমানো টাকা দিয়ে কিনেছে। মা নেই ওর, না আছে কোনো পরিবার। বাবা-ছেলে মিলে থাকে একটা টিনে ঘেরা ছোট বাড়িতে।

রতন অপটু হাতে ফোন নেড়ে ওর আব্বার নাম্বারে কল দিল। কিন্তু হায়! ভাগ্য যে ওর সহায় না। যে ব্যক্তি নিজেই রাস্তায় ট্রাকের নিচে পি’ষে গিয়েছে, তার পকেটে থাকা ছোট বাটন ফোনটার স্থায়ীত্ব হবার কোনো প্রশ্নই ওঠে না।
বার কয়েক চেষ্টা চালালো রতন। ফোন দিতে দিতে ওর হাত কোমজোর হলো। একবার ছেড়ে দুবার, তিনবার, পরপর কতবার উন্মাদের ন্যায় কল দিল, মিলল শুধু ব্যর্থতা। সবার নজর রতনের দিকে। মিতালী মুখে কাপড় চেপে কাঁদছে। কাঁদার কথা; কম বছর তো হলো না রতনের বাপ এ বাড়িতে কাজ-কর্ম করে। বাড়ির এক সদস্যের মতো সে।
বেলা, দিশা, মাইশা, বাণীসহ সকলে শুধু তাকিয়ে তাকিয়ে দেখল রতনের অস্থিরতা। মাত্র কিছু সময়ের মাঝে কি থেকে কি ঘটছে তা এখনো পুরোপুরি বুঝে উঠতে পারছে না কেউ। যেটুকু জানে তাতেই প্রত্যেকের চোখ ছাপিয়ে নোনাজল গড়াচ্ছে শুধু।

সেন্ট্রাল হাসপাতাল। রাত প্রায় দুটোর কাছাকাছি। মর্গের সামনে দণ্ডায়মান র’ক্তভেজা মানুষটার কাছে এসে থামলো একজোড়া পা। নিস্তেজ, টলমলে ভেজা চোখজোড়া নিয়ে দিগন্তের দিকে তাকালো জয়নাল। ডায়াবেটিস রোগী সে; এতোটা ধকল নিয়ে, বিধ্বস্ত মানুষ টানাহেচড়া করা ওর পক্ষে খুব বেশি সহজ ছিল না। এতোক্ষন শরীরে জোশ নিয়ে দৌড়ঝাঁপ করলেও, এই মুহূর্তে নরম কাটল।

দিগন্ত একপলক জয়নালের সমস্ত শরীর দেখল। পাতলা সাদা পাঞ্জাবি আর হাতজুরে জমাট বাঁধা র’ক্ত। সেগুলো ধোঁয়ার সময় পায়নি এখনো। বুকের ভেতর মোচড় কাটল ওর। র’ক্তগুলো অন্য কারো না, ছোট থেকে দেখে আসা আপন মানুষের। বাইক আর জীপ আসার আগ পর্যন্ত দিগন্তের যাওয়া-আসার পথের সঙ্গী ছিল সে।
কদম এগিয়ে ভেঙ্গে পড়া চাচার দু’কাঁধে হাত রাখল দিগন্ত। জয়নালের চোখ গড়িয়ে পানি পড়ল না ঠিক, তবে আঁখিদুটো ছলছলে হলো। কাঁপ ধরা গলায় আওড়ালো,
‘ চোখের সামনে পি’ষে দিয়ে গেল। হাত-পা কিছু নাই। ছুটে গেছে। ’
দিগন্ত শুনল তার কথা। জয়নালের শরীর ভালো যাচ্ছে না আর। ডায়াবেটিস বাড়ছে আস্তে আস্তে। দিগন্ত হয়তো বুঝল।জয়নালকে এনে বসালো স্টিলের লাগোয়া চেয়ারে। দম ছেড়ে জিজ্ঞেস করল,
‘ রায়হান ওদিকে গেছে। ওই মহিলার; খুব গুরুতর কিছু হয়নি তাই না? ঠিক হয়ে যাক তাড়াতাড়ি। ততোদিন প্রত্যাশা তালুকদার বাড়িতে থাকবে। ’

এ পর্যায়ে জয়নালের চোখ থেকে দু’ফোঁটা পানি ঝড়ল। রাগ-ঘৃণা তৈরি হলেও মনার প্রতি দিগন্তের সফট কর্ণার এখনো বহাল, তা ওর কথায় প্রকাশ পাচ্ছে। থাকারো কথা; মনার জন্য দিগন্ত, রায়হান কম করেনি। গরিব মেয়েটাকে দুজনে আগলে রেখে, কত দূর পর্যন্ত উঠতে সাহায্য করেছে।
হা-হুতাশের মতো করে বলে উঠল জয়নাল,

‘ ওই বাড়িতে আমি কোনোদিন যাই না, তা তো জানিস। বাইরে গাড়িতে বসে আছি শুনে মেয়েটা এসেছিল আমাকে ভেতরে নিয়ে যাওয়ার জন্য সাধতে। কথা হচ্ছিলো আমাদের। প্রত্যাশা ওর কোলে ছিল। কথার মাঝপথে বাচ্চাটা হুট করে টেনে-হিচড়ে ওর মায়ের কোল থেকে নেমে দৌড় দিল। একদম রাস্তার মাঝবরাবর চলে গিয়েছিল। ট্রাকটাও সে সময় ওর কাছাকাছি চলে এসেছে। রতনের বাপ রাস্তার অপজিটে, চা আনতে গিয়েছিল। ও আর মনা একসাথে প্রত্যাশাকে বাঁচানোর তাগিদে ছুটল। রতনের বাপ-ই আগে গিয়েছিল। প্রত্যাশাকে ধাক্কা দিয়ে রাস্তার পাশে ফেলে দিয়েছে কিন্তু সেকেন্ডের ব্যবধানে ট্রাকটা মনা আর ওর, দুজনের উপর দিয়ে চলে গেল। ’
কথাগুলো বলতে বলতে নিরবে কয়েক ফোঁটা পানি গড়ালো জয়নালের চোখ বেয়ে। চোখের সামনে সবকিছু ঘটতে দেখেছে বলে কষ্টটা একটু বেশিই পাচ্ছে সে।

স্থির চিত্তে জয়নালের বলা কথাগুলো কর্ণপাত করল দিগন্ত। হুট-হাট হাত ছেড়ে দৌড় মারার একটা বাজে স্বভাব আছে প্রত্যাশার। পূর্বে দিগন্তের সাথে যতবার ওর দেখা হয়েছে, ততবারই ছোট প্রত্যাশা মায়ের হাত ছেড়ে একা একা চলে এসেছিল। ছোট একটা বাচ্চা মেয়ের এই স্বভাব দোষ কতটা ভয়াবহ পরিস্থিতি তৈরি করে ফেলল। ফোঁস করে দম ছাড়লো দিগন্ত। শুকনো ঢোক চেপে পুনরায় বলল,
‘ এক্সিডেন্টের জন্য পুলিশ কেস হয়েছে। কাকার লা’শ নিয়ে যেতে সময় লাগবে। আমি দেখছি। আপনি চাইলে ওদিকে যেতে পারেন। ’
জয়নাল ক্লান্তিভরা চোখে দিগন্তের দিকে তাকালো। আস্ফুট স্বরে বলল,
‘ মনার অবস্থা ভালো না। মৃত পথযাত্রী প্রায়। ’
উচ্চারিত বাক্যদ্বয় দিগন্তের ভেতরে অচেনা আঘাত হানল। কিয়ৎক্ষন মেঝের দিকে থম মেরে চেয়ে রইল। অতঃপর ধীর-স্থির পা বাড়ালো দ্বিতীয় তলার দিকে। জয়নাল দীর্ঘশ্বাস ফেলে দেখলো দিগন্তের যাওয়া।

লাইফ সাপোর্টে আছে মনা। অবস্থা গুরুতর। আইসিইউ এর বাইরে নিস্তেজ, টাল-মাতাল শরীর নিয়ে দাঁড়িয়ে আছে জুনায়েদ। তার থেকে কিছুটা দূরে রায়হান দাঁড়িয়ে। পথচারী যে দুজন জুনায়েদ আর জয়নালের সাথে এসেছিল, তারা চলে গিয়েছে কিছুক্ষন আগে।
আইসিইউর ভেতরে ঢুকার অনুমতি নেই। ভেতরে ডাক্তাররা কি করছে তা জানা নেই জুনায়েদের। দরজার বাইরে অপেক্ষা করছে শুধুমাত্র একটা ভালো খবরের আশায়।
দিগন্তের কদম এসে থামলো আইসিইউর সামনে। কাঠের শক্ত দরজার মাঝে থাকা কাঁচের একটুকরো জায়গা ভেদ করে নজর গেল ভেতরের দিকে। মুখে অক্সিজেন মাস্ক, মাথার চারপাশ সাদা ব্যান্ডেজে আবৃত। সাফেদে ঘেরা সে ব্যান্ডেজ ভিজে উঠেছে টকটকে র’ক্তের লাল রঙে। জ্ঞান নেই মনার।

বিধ্বস্ত মনাকে একনজর দেখে চোখ ফিরিয়ে নিল দিগন্ত। বিছানায় শায়িত মনাকে প্রচণ্ড বিদঘুটে লাগল ওর কাছে। কিছু মুহূর্তের জন্য মনে হলো এভাবে দেখার থেকে, পাঁচ বছর আগের তিক্ত দিনটাতে যখন জুনায়েদ তালুকদারের পাশে দেখেছিল, সেটা এর থেকে কিঞ্চিৎ ভালো ছিল। হয়তো রাগ-ক্ষোভ-ঘৃণা থাকলেও, এখনো ওর খারাপ চাইতে পারেনি তাই এই ধারণার উদয় হলো!
রায়হান কাছে এসে গম্ভীর গলায় শুধালো,
‘ কি বলেছে? ’
রায়হান একপলক দিগন্তের দিকে তাকালো। বাইরে থেকে শান্ত থাকলেও ভেতরে ভেতরে গুমোড়াচ্ছে রায়হান। মনাকে ফ্রেন্ড কম বোনের মতো আগলেছিল। দূরত্ব বাড়লেও, আগের কথা মনসাপেটে ভাসলে আফসোস হয় ওর। মনার সাথে একেবারে কথা বলা ছাড়েনি রায়হান। তবে এক-দুবার যেটুকু কথা বলে তাতে শুধু তাচ্ছিল্যতাই থাকে।
দিগন্ত ফের প্রশ্ন করলে, শুষ্ক অধর নেড়ে ভাঙ্গা গলায় আওড়ালো রায়হান,
‘ মাথার আঘাত মারাত্মক। ইন্টার্নাল, এক্সটার্নাল ব্লিডিং কোনোটাই আয়ত্বে আনতে পারছে না। অতিরিক্ত রক্তক্ষরণের কারবে জ্ঞান ফেরার সম্ভবনা নেই। চব্বিশ ঘণ্টা সময় দিয়েছে। ’

প্রায় সকাল পেরিয়ে দুপুরের আগ প্রহরের দিকে রতনের বাপের লাশ হাসপাতাল থেকে তালুকদার বাড়িতে আনা হয়েছে। ব’ডির অবস্থা ভয়ংকর খারাপ। হাত-পা চিহ্নিত করা যাচ্ছে না। ভাগ্যক্রমে মুখটা বেঁচে গিয়েছে। বুকের নিচ থেকে পা পর্যন্ত বডি স্ট্রেকচারের বিকৃতি ঘটলেও মুখাবয়ব ভালো রয়েছে তার। এর মাঝে পুলিশ কেস হওয়ার দরুন হাসপাতাল থেকে লা’শ আনতে অনেকটা ভোগান্তি পোহাতে হয়েছে দিগন্তদের।

খাটি’য়ায় শুয়ে থাকা সাফেদ কা’ফনে আবৃত মানুষটাকে দেখে কান্নায় ভেঙ্গে পড়েছে রতন। বয়স আর কত ছেলেটার! জন্মের পর থেকে বাবা-মা ছাড়া আর কোনো আপন মানুষের দেখা পায়নি রতন। কোনো কারণবশত ওর বাবা-মা এ শহরে একা এসেছিল। রতনের একটু বুজ হওয়ার পর ওর মা মারা গেল দুরারোগ্যে আক্রান্ত হয়ে। দিশার সমবয়সী ছেলেটা। এটুকু বয়সে বাপ-মা হারিয়ে সর্বশান্ত হয়েছে। শেষ আশ্র‍য়স্থল ছিল আব্বা নামক মানুষটা। দিনশেষে বাপ-ছেলে এক হতো নিজেদের তৈরি করা টিনের চালের ছোট কুঠুরিতে। দুমুঠো খেয়ে একসাথে ঘুমাতো। আজ যে ভাগ্য সেটুকুও কেড়ে নিল! নিষ্ঠুর এ দুনিয়ায় ওর আপন বলতে কেউ রইল না।
দিনটা শুক্রবার পড়েছে। বাদ জোহর রতনের বাপের দাফন কার্য সম্পন্ন হলো। এলাকার কবরস্থানে আজীবনের জন্য শায়িত হলো তার দেহ।

ছোট প্রত্যাশা ওর চারপাশে ঘটা ঘটনার কিছু বুঝতে পারছে না। তবে ওর মা যে ওর কাছে নেই তা স্মরণে এলে ফুঁপিয়ে কাঁদছে মায়ের জন্য। রাস্তার কিনারায় ধাক্কা দিয়ে ফেলে দেওয়া হয়েছিল ওকে। ছোট প্রাণ বেঁচে গেলেও, পিচ ঢালা রাস্তায় উপুর হয়ে পড়ার কারণে হাত-পা ছিঁলে গিয়েছে। কপালের কাছটায় আঘাত পেয়েছে অনেকটা। ফলস্বরূপ এক্সিডেন্টের মূহুর্তে অজ্ঞান হয়ে গিয়েছিল প্রত্যাশা। কোনো কিছুর সাক্ষী হতে হয়নি ওকে।
মাটি দেওয়া শেষে ভেঙ্গে পড়া রতনকে দিগন্ত আর দিহান মিলে বাড়িতে নিয়ে এলো। সোফারুমে জোড়া সোফায় বসে প্রত্যাশাকে খাওয়াচ্ছিল বেলা। রতনকে সেখানে এনে বসানো হলো। মিতালী সেখানেই ছিল। রতনের কাছে গিয়ে ওর মাথায় হাত রেখে কিছু বলল।

দিগন্তবেলার প্রেমান্দোলন পর্ব ৪৮ (২)

সে কথা রতন শুনল কি না বোঝা গেল না! রতনের ভয়ংকর হিংস্র দৃষ্টি প্রত্যাশার পানে। বেলার পাশ ঘেঁষে বসে থাকা ওই একটা বাচ্চার কারণে, সে তার আব্বাকে হারিয়েছে। রক্তাভাব নেত্রে প্রত্যাশার দিকে চেয়ে ক্রোধের অনলে জ্বালিয়ে দিচ্ছে রতন। হাতে উপায় থাকলে যেন মেয়েটার বিরাট কোনো ক্ষতি করে বসত! প্রতিশোধপরায়ণা চিন্তা জেঁকে ধরেছে রতনকে।
ছোট প্রত্যাশার চোখে রতনের সে ভয়াবহ চাহনি আটকেছে। ভীষণ ভয় পেল সে। বেলার পেছনে মুখ গুজে ফুঁপিয়ে কেঁদে উঠল।

দিগন্তবেলার প্রেমান্দোলন পর্ব ৫০