দীঘির জলে কার ছায়া পর্ব ২৬

দীঘির জলে কার ছায়া পর্ব ২৬
অবন্তিকা তৃপ্তি

জালানার ওপাশে নিম গাছের ডালে দুটো চড়ুই পাখি বসেছে! বাইরে বৃষ্টি থেকে রক্ষা পেতে গাছের পাতার নিচে আশ্রয় নেওয়ার চেষ্টায় রত দুটো চড়ুই! পাতার নিচে আশ্রয় নিলো ওরা, দুজন দুজনের গায়ের সঙ্গে মিশে বৃষ্টি দেখছে! নিধি জানালার গ্রিলে মাথা ঠেকিয়ে বিবশ নয়নে এসব দেখছে! ক্ষণে ক্ষণে দীর্ঘশ্বাস ফেলছে! মনে পরে যাচ্ছে, তার বিয়ের শুরুর দিকের কথা!

তাদের সংসার এমন চড়ুই পাখির ন্যায় ছিল! টাকা পয়সার অভাব ছিল না, দুজনের চড়ুইপাখির সংসারটা আরামেই চলত! কিন্তু…কিন্তু একদল অসৎ সঙ্গে সোহাগ কেমন বদলে যেতে লাগল হঠাৎ! যে নিধির গায়ে সে ফুলের টোকা দিতেও হাত কাপাকপি করতো, সেই নিধির গালে একদিন নেশার ঘোরে চড় মেরে বসে সে! শুরুটা এখন থেকেই ছিলো! পরিচিত স্বামীর এমন অপরিচিত রূপে থমকে যায় নিধি! ও সেদিন সারারাত কাঁদতেই ভুলে যায়, পরে সোহাগ মাফ চায়! ভালোবাসা লোভী বেচারা নিধি, মেনে নিলো সোহাগকে! কিন্তু কিছুতেই সেই চড়ের কথা ভুলাতে পারল না নিজেকে!

আরও গল্প পড়তে এখানে ক্লিক করুন 

তারপর..তারপর একের পর এক অত্যাচার! মদ খেয়ে মাতলামো! গায়ে হাত তোলা, ভালোবাসার দোহায় দিয়ে আবার ক্ষমা চাওয়া! এরকমটা বারবার দেখতে দেখতে একপর্যায়ে সংসারে বিতৃষ্ণা লেগে যায় নিধির! ও তবুও ওই সংসারের মাটি খামছে পরে ছিল!শেষ একটা আশা দেখেছিল! সোহাগকে রিহাবে দিতে চেয়েছিল! কিন্তু পুরুষ ইগো অত্যাধিক থাকায় সোহাগ রিহাবে যেতে চায়নি! ওইদিন হয় নিধির শেষ দিন সংসারে! সোহাগ নেশার ঘোরে, মারাত্মক রেগে চাপাতি দিয়ে আ/ঘাত করে বসে নিধিকে! তারপর এক ভয়ঙ্কর আত্মচিৎকার শোনা যায়! নিধি যন্ত্রণায় মাটিতে পড়ে কাতরাতে থাকে, তাতেও ওই মাতাল লোকের দয়া হয়না! ও নিধির পাশে বসে হিসহিসিয়ে ধমকাতে থাকে ওকে, চুপ হতে বলে বারবার। পরবর্তীতে নিধির গগনবিদারী চিৎকারে পাড়া প্রতেবেশি শুনে, ওরা দ্রুত এসে নিধিকে ধরে হাসপাতাল নিয়ে যায়।

ওইদিনের পর; নিধি নিজের সংসারের সকল মায়া ত্যাগ করে! এক সপ্তাহের মাথায় তালাকের দাবি আদালতে তোলে! নরম স্বভাবের নিধি হুট করে কেমন বড় হয়ে উঠে, কঠোর হয়ে যায়! তারপর..তারপর সব শেষ! নিধির নামের আগে বসে যায় ‘ডিভোর্সি’ নামক বড্ড বিশ্রী ট্যাগটা!

পুরনো এসব কথা ভাবতে ভাবতে দু চোখ ছাপিয়ে জল গরিয়ে পড়ল নিধির.! নিধিরও বড্ড লোভ! ভালোবাসা পাওয়ার লোভ! একটা সাজানো সংসারের লোভ! কিন্তু ওই যে! ভয়, আতঙ্ক! তাই এতটা আলাপ আসা সত্ত্বেও নিধি ফিরিয়ে দিয়েছে সবকে! তারপর হঠাৎ একদিন অরূপের সঙ্গে দেখা! ছেলেটাকে প্রথম দেখায় নিধির তেমন কিছু মনে না হলেও, ধীরে ধীরে নিধি বুঝে- ছেলেটা ভদ্র! ভীষণ আগলে রাখতে জানে সবাইকে। নারীকে সম্মান করে ভীষণ! নিধিকে যখন দেখে, মায়া নিয়ে দেখত! নিধি বুঝে, অরূপ দুর্বল নিধির প্রতি! কিন্তু নিধি ওকে প্রশ্রয় দিবে না!
নিধির কালো অতীতের ছায়া ওই ভালো পুরুষের উপর পড়তে দিবে না নিধি! ওই মানুষটা আরো ভালো কাউকে ডিজার্ভ করে, নিধিকে না! নিধি ভালো মেয়ে নয়। স্বামীকে যে মেয়ে তালাক দেয়, সে কোনোদিন ভালো মেয়ে হতে পারে না।
কান্নায় নিধির ভেতরটা ফেটে পরে! ও দুহাতে নিজের মাথার চুল খামচে বিছানায় ধপ করে বসে পড়ে! তারপর আচমকা ডুকরে শব্দ করে কেঁদে উঠে! তার জীবনটা এমন কেন হল, কেন হলো এমন? এতটা বিশ্রী কেন তার জীবনের পথগুলো?

আব্দুর রহমান সাহেব আজ দ্রুত বাড়ি ফিরেছেন! আজ আশার জামাইর বাড়ির লোক আসবে! কত কাজ আছে বাড়িতে! আব্দুর রহমান দ্রুত বাড়ি ঢুকে ডাকেন মেয়েকে-
‘নিধি? মা, এদিকে আয়! মা?’
নিধি বাবার গলা পেয়ে দু চোখ মুছে স্বাভাবিক হয়ে উঠে দাঁড়ায়! উঠোনে এসে দেখে, আব্দুর রহমানের হাতে বাজার! উনি ফটকে বাজারের ব্যাগটা রেখে গামছা দিয়ে ঘাম মুছে বললেন-‘আশা আসতেসে! ওর জামাই বাড়ির লোক নিয়ে! চোটজলদি রান্না বসিয়ে ফেল, ও বাড়ির করিমের বউরে ডেকে নিয়ে আয়, সাহায্য করবে নে তোকে।’
নিধি চমকে উঠে। আশা আসছে। ওই মানুষটাও আসবে? কেন? কেন আসবে? নিধির জীবনে কী শান্তি দিবে না কখনো এই মানুষগুলো? নিধি কম্পিত স্বরে জিজ্ঞেস করল-‘আব্বা, আজকে ওরা আসছে কেন? বিশেষ কিছু আছে আজ?’

আব্দুর রহমান উঠে দাঁড়ালেন! বললেন-‘জানিনা রে মা! আশা বললো ওর শ্বশুরবাড়ির লোক আসতে চাইছে এখানে! কুটুম বাড়ির মানুষ, অযত্ন না হয় যেন।’
নিধি মাথা নাড়ল! আব্দুর রহমান গামছা হাতে পুকুরের দিকে চলে গেলেন। গরম পড়েছে ভীষণ, একটা ডুব দিয়ে আসা যাক।

ফটিকের ঘরে আশার শ্বশুরবাড়ির লোকেরা বসে আছে! আশা অনিরূপের পাশে বসেছিল এতোক্ষণ! নাস্ত পানির কাজ শেষ করে, উমায়েদ কথা তুললেন-
‘ভাইসাব. একটা আবদার নিয়ে এসেছি আজ আমরা! আপনি আমাদের আবদার রাখবেন সেই আশায় নিজের বউ-বাচ্চাদের নিয়ে এসেছি।’
আব্দুর রহমান হাসার চেষ্টা করে বললেন-‘এভাবে বলে লজ্জা দিবেন না বেয়াই! আবদার না, আমার কাছে দাবি করুন।’

উমায়েদ হাসলেন! অরূপের দিকে চেয়ে দেখে তারপর বললেন-‘আমার ছেলে অরূপ! চিনেন তো আপনি ওকে! দু বছর হয়েছে ডাক্তারি পাশ পিজি করেছে। এখন আমাদের হাসপাতালেই বসে! ওর জন্যে আপনার বড় মেয়ে নিধির হাত চাইতে এসেছি আমি।’
আব্দুর রহমান বড়বড় চোখে তাকালেন, বিস্মিত হয়ে পড়লেন ভীষণ। তিনি অবাক চোখে অরূপকে একবার দেখে নিয়ে বললেন-‘এটা কিভাবে সম্ভব বেয়াই! নিধি সম্পর্কে আশার বড়..!’
উমায়েদ কথা কাটলেন, বললেন-‘এটা তেমন সমস্যা না আজকাল! এমন তো কতই হয়! আমার আপন ভাই তো এমন করেই বিয়ে হয়েছে! ছেলের বড্ড পছন্দ আপনার পরিবার, আপনার মেয়ে!এখন ছেলেচাইছে, তাই আমরা পরিবারের মানুষ হয়ে সম্পর্কটা আগানোর দায়িত্ব পালন করছি শুধু।’

আব্দুর রহমান কথা বলতে ভুলে গেলেন যেন! এবার তিনি কী করে মানা করবেন? নিধি এখন বিয়েই করতে রাজি না। এখন ওদের মানা করে ছোট মেয়ের সংসারে অশান্তি আনবেন কী করে? একপ্রকার নাস্তানাবুদ অবস্থায় পড়ে গেলেন তিনি! অরূপ হয়তো সেটা বুঝল! ও আশাকে ইশারা করল! আশা এবার কথা বললো-‘আমি আপাকে তৈরি করে আনছি! আপনার বসুন।’

আশা ভেতরে গেলো! আশাকে ভেতরে আসতে দেখে নিধি পর্দার আড়াল থেকে সরে গেলো! আশা নিধির ঘরে গেল! নিধি ও ঘরে বসে আছে চুপচাপ! আশা যেতেই নিধি বিছানা থেজে উঠে আশার হাত চেপে ধরে ওকে বিছানায় বসিয়ে দরজা আটকে দিল! আশা বিছানায় বসে আছে! নিধি আসার পাশে বসলো। অধৈর্য্য ভঙ্গিতে বললো-‘ওরা কেন এসেছে আজ?সত্যি করে বল আশা।’
আশা শোনে! তারপর নিধির দিকে চেয়ে নির্লিপ্ত গলায় জানালো-‘তোমার বিয়ের প্রস্তাব নিয়ে! অরূপ ভাইয়া তোমাকে বিয়ে করতে চায়।’

নিধি অবাক হয়না! ও সেটা জানতো।! নিধি রেগে গিয়ে উঠে দাঁড়াল, ধমকে উঠল আশাকে, -‘ওই, ছেলেমানুষি পেয়েছিস বিয়েকে? যাকে পেলাম তাকে বিয়ে করে ফেললাম? ওই লোক পাগলামি করছে করুক! তুই কেন নিজে এটাতে সামিল হবি? বুঝিস কিছু তুই?’
আশা বোনের ধমক হজম করে নিলো! ও চুপচাপ উঠে দাঁড়িয়ে নিধির হাতটা ধরলো, নরম গলায় বললো-‘আপা, জীবনটা আরেকবার গুছিয়ে নাও না। এভাবে আর কত? এ কতো, বলো তো? আমি জানি তুমি চাও অরূপ ভাইয়াকে! নাহলে তুমি এভাবে পালিয়ে আসতে না! কেন নিজের সঙ্গে অবিচার করছো আপা?
নিধি থতমত খেয়ে গেল, হাতটা আশার থেকে ছাড়িয়ে নিয়ে বলল-‘পাগল তুই? উনার সঙ্গে আমার কোনদিক থেকে যায়?’

‘সবদিক থেকে যায়, যাওয়ালেই যায়—-‘
অরূপ দরজার সামনে থেকে ভারিক্কি গলায় বলে উঠল! নিধি আঁতকে উঠলো! আশা অরূপকে দেখল, আবার বোনকেও দেখল! নিধি পেছনে ফিরল না, একবারের জন্যেও দেখল না অরূপকে! আশা অরূপকে দেখে আস্তে করে পাশ কাটিয়ে রুম থেকে চলে গেলো। নিধি তখনও ওভাবেই দাঁড়িয়ে! অরূপ দরজা হালকা ভিড়িয়ে এগিয়ে গেল। নিধি অরূপের দিকে পিঠ করে আছে। অরূপ বলা শুরু করল-‘আমি আপনাকে ভিক্ষা চাইছি নিধি! আপনাকে স্বার্থপরের মতো নিজের এলোমেলো লাইফে চাইছি, নিজেকে সুখী করতে চাইছি! আমি আপনার উপর করুণা করতেই পারিনা, সেই দুঃসাহস নেই আমার! আমি আপনাকে ভালোবাসি, আপনি আমার অনুভূতির ভিন্ন কোন মানে বের করতে পারেন না।আমি আপনাকে আমার ভালোবাসার উপর আঙুল তুলতে দিব না।’

অরূপ থামে! নিধির পিঠটা কাঁপছ! কাঁদছে বোধহয়! অরূপ আবারও বলা শুরু করে-‘বিয়েটা করে ফেলি, নিধি!
বাকিটা পথ আপনার সঙ্গে একসঙ্গে কাটানোর লোভ জেগেছে আমার! লোভটাকে সংবরণ করতে পারছি না আমি! চেষ্টাও করিনি কখনো! আপনি একবার হ্যাঁ করুন নিধি, আমি কথা দিচ্ছি পুরনো সব ব্যথা ভুলিয়ে দিব আপনার, নতুন করে রাঙিয়ে দিব আপনাকে! রঙের কৌটা নিয়ে আপনার সকল কালো ব্যথার পেছনে ছুটে বেড়াব! একবার শুধু হ্যাঁ করুন, প্লিজ নিধি!’

নিধি দুহাতে মুখ চেপে ধরে! তার ভেতরটা হাহাকারে ভরে উঠছে! বুকটা জ্বলে যাচ্ছে! অরূপ দেখল সব! নিধিকে সময় দিতে চাইল! একটা দীর্ঘশ্বাস ফেলে আস্তে করে বেরিয়ে গেলো রুম থেকে! অরুপ চলে গেছে, নিধি টের পায়! ও ধপ করে বিছানায় বসে পড়ে! চোখ ছাপিয়ে জল গড়িয়ে পড়তে থাকে! তার জীবনটা এই কোন পর্যায়ে এসে দাঁড়িয়ে গেছো? কাউকে ভালোবাসতে, কাউকে ভরসা করতে নিধির এতো ভয়, এত আতঙ্ক?

অরূপ চলে গেলে, আশা ভেতরে ঢুকলো! নিধি আশাকে দেখতে পেয়েই দৌড়ে গিয়ে শক্ত করে জড়িয়ে ধরল আশাকে! আশার কাঁধে মুখটা গুঁজে ফুঁপিয়ে উঠে। আশা হাঁপ ছাড়ে, আলতো করে বোনের পিঠে হাত বুলায়! ধীর কণ্ঠে বলে-‘তুমি ঠকবে না আপা! বিশ্বাস করো একবার! একবার বিশ্বাস করা শিখো, আপা!’
নিধি থামে, আশাকে ছেড়ে দুহাতে চোখ মুছে ফিচেল গলায় বলে উঠে-‘আমি বিশ্বাস করতে চাইছি! আরো একবার নিজেকে ঠকানোর সুযোগ দিতে চাইছি কাউকে, আশা।আমি কী ভুল করে বসলাম আবার?’
আশা খুশিতে হেসে উঠে শব্দ করে! নিধির দুহাত ধরে উচ্ছসিত কন্ঠ শুধায়-‘না আপা, তুমি ভুল করোনি। তুমি সঠিক, সঠিক তুমি।’

অরূপ জেদ ধরেছে! আজকে আকদ করে ফেলবে ও! নিধি চিকিৎসা কন্টিনিউ করা উচিত! অরুপ চায়, নিধির বেস্ট ট্রিটমেন্ট হোক! যা শহরে ওর স্বামীর বাসায় সম্ভব শুধু! অরূপের কথা কেউই ফেলতে পারে না!
তারপর আচমকা নিধি-অরূপের ওইদিনেই, ওই জায়গায় বিয়ে হয়ে যায়! কাজী ডেকে ঐদিন আকদ হয় দুজনের! নিধি পাথরের মতো অরূপের পাশে বসে ধরা গলায় তিনবার ‘কবুল’ উচ্চারণ করে! অরূপ সারাটাক্ষণ নিজের শখের নারীর দিকে বড্ড আকাঙক্ষা নিয়ে তাকিয়ে ছিল! চোখের পলক ফেলতেও ভয় করছিল- যদি এই নাছোড়বান্দা মেয়ে ওর স্বপ্ন হয়! রিস্ক নিতে চায়না অরূপ!

বিয়ে পড়ানো শেষ হয়েছে! আব্দুর রহমান যতটুকু পারেন, প্রতিবেশি, কাছের কজন আত্মীয়স্বজনকে দাওয়াত করেছেন! এটুকু সময়ে কজন পাড়ার ভাবীরা মিলে মেহমানদারীর আয়োজন করেছেন! নিধি নিজের রুমে বসে আছে সাধারণ একটা লাল শাড়ি পরে! পাশেই আশা,ভাত মাখিয়ে খাইছে দিচ্ছে বোনকে! একটু পরেই বেরুবে ওরা!
আশা নিধিকে খাওয়াতে খাওয়াতে হাসতে হাসতে বললো-‘মনে আছে আপা? আমার বিয়ের দিন তুমি এভাবে আমাকে খাইয়ে দিচ্ছিলে? তারপর কী বলেছিল? তোর বরও তোকে খাইয়ে দিবে! তোমার কথা সত্যি আছে।! আমি মাঝেমধ্যে রাতে না খেয়ে ঘুমালে, সে জোর করে ঘুম থেকে টেনে তুলে বকেঝকে খাইয়ে দেয় রোজ!’
নিধি চুপ করে শুনছে বোনের কথা! আশা বিয়েতে রাজি ছিল না! অথচ এই বিয়ে নিয়ে আশা এখন কতটা সুখী। নিধিও চায়, ওই সঙ্গে এমন কিছুই হোক! নিধি যে সংসারের আঁশ সারাজীবন দেখে এসেছে সেই সংসারের গল্পটা যেন ওরও হোক!

আশার পাশে বসে আছে, ওর পাড়ার এক বয়স্ক দাদী! তিনি চশমার আগা ঠিক করো আশাকে আগাগোড়া দেখে বললেন-‘ওই নাতিন! তোর শরীর তো বিয়াত্তা মইলার লাকান হইয়া গেসে রে।স্বামী কী রোজ আদর-টাদর করে নাকি রে?’
আশা থতমত খেয়ে দাদীর দিকে চাইল! নিধি ছোট বোনের সম্পর্কে এমন কথায় নিজেও অস্বতিতে পড়ে গেলো! আশা ছোট স্বরে বললো-‘মুখটার লাগাম টানো দাদি! লজ্জা-শরম খেয়ে বসে আছো!’
দাদি ফিক করে হাসলেন, ‘মজা করি রে নাতিন! কতদিন পরে তোরে দেখলাম! দুটো কথা বলতে ইচ্ছা করতাসে।’
আশা হাসল! দাদি বললেন-‘তা বিয়ার ছয় মাস পেরিয়ে গেলো! বাচ্চা নিবি কবে? তোর জামাই আশা-টাশা করে না তোর কাছে?’

আশা থমকে গেলো! হু, করে তো।অনিরূপ সেদিন রাতে আশাকে জরিয়ে ধরে বড্ড কাতর স্বরে একটা বাচ্চার আবদার করেছিল! আশা লজ্জায় ফিরিয়ে দিয়েছিল মানুষটাকে! সবে ওদের মধ্যে সব ঠিক হয়েছে! আরও কটা দিন যাক! দুজন দুজনকে বুঝুক, তারপর ফ্যামিলি প্ল্যানিং করবে ওরা! অনিরূপও এতে সায় দিয়েছে! ধৈর্য্যবান পুরুষ আরো একবার ধৈর্য্যের পরীক্ষা দিচ্ছে!
আশাকে হাসতে দেখে দাদি আশার কোমরে গুঁতো দিয়ে বললেন-‘ওরে ছেঁড়ি, লজ্জায় বাচঁস না দেহি। আহারে নাতিনটা আমার, স্বামী সোহাগে হুকায় যাইতাসে।’

আশা লজ্জায় এবার মরেই যাচ্ছে যেন! ও দ্রুত হাত ধুয়ে উঠে একপ্রকার দৌড়ে পালিয়ে গেলো রুম থেকে! যাওয়ার পথে ধাক্কা খেলো অনিরূপের সঙ্গে! থালা সহ পরে যেতে নি লে, অনিরূপ খপ করে আশার কোমরে ধরে ব্যালেন্স করলো! আশা পরে যাওয়ার ভয়ে, চোখ মুখ খিঁচে অনিরুপের দিকে তাকিয়ে আছে! অনিরূপ অবিশ্বাস নিয়ে বললো-‘তোমার মধ্যে ইদানিং একটা উড়ুউড়ু স্বভাব দেখতে পাচ্ছি আমি। হয়েছেটা কী তোমার, আশা?’
আশা বোকা বনে গেলো। সে উড়ছে? কখন উড়লো? আশা উঠে দাঁড়াল! কাঁচুমাচু হয়ে জিজ্ঞেস করলো- ‘উড়লাম কখন আমি?’

দীঘির জলে কার ছায়া পর্ব ২৫

অনিরূপ হাসল হালকা! ঘন চুলগুলো হাত দিয়ে ব্রাশ করতে করতে আশেপাশের লোকজন দেখে নিলো একবার! জায়গাটা খালি দেখে শিস্ বাজাতে বাজাতে, আশার কানের কাছে মুখটা এগিয়ে আনল! আশা লজ্জায় আশেপাশে তাকাল। অনিরূপ ফিসফিস করে কানের কাছে শোনাল-‘ই্যয়ু আর ম্যাডলি ইন লাভ, হানি! এন্ড ই্যয়ুর দিজ বিহেইভার মেকিং অ্যা ম্যান ক্রেইজি, মোর মোর ক্রেইজি।’

দীঘির জলে কার ছায়া পর্ব ২৭