দীঘির জলে কার ছায়া পর্ব ৫

দীঘির জলে কার ছায়া পর্ব ৫
অবন্তিকা তৃপ্তি

-‘আমি তোমাকে সাহায্য করব, আশা।’
দুহাতে মুখ চেপে বসে ছিলো আশা। ফিনফিনে শরীর কাঁপছে থেমে থেমে। অনিরূপের কথা শুনে মাথা তুলে টলটলে চোখে অনিরূপের দিকে চাইলো ও। অনিরুপের ঠোঁটে তীর্যক হাসি, চোখে শকুনি নজর। আশা কিছুটা থমকে যায়, থেমে থেমে অবাক হয়ে জিজ্ঞেস করলো-‘কিভাবে সাহায্য করবেন?’

অনিরূপ ক্রূর হেসে আশাকে দেখে, আশার চোখে-মুখে স্বল্প হলেও উচ্ছ্বাস লেগে গেছে। অনিরূপ আশার দিকে ঝুঁকে আসে, আশা স্থির চোখে অনিরূপের ঠিক চোখের দিকে চেয়ে আছে। অনিরূপের চোখ-নীলাভ ওই চোখের মণি ভীষণ অন্যরকম। ওই চোখে চেয়ে জানতে চায়, অনিরূপ কী বলতে চাইছে। অনিরূপ আশার ঠোঁটের দিকে চেয়ে হাস্কি আওয়াজে শোধালো-‘সত্তর হাজার টাকা দরকার তোমার? আমি সবটুকুই দিব। তার বদলে-‘
‘বদলে?’—আশার ভ্রু বাঁকিয়ে পাল্টা প্রশ্ন।

আরও গল্প পড়তে এখানে ক্লিক করুন 

অনিরূপ আশার ঠোঁটে নেশালো চোখ রেখে মিষ্টি গলায় বললো-‘বিয়ে করতে চাই তোমায়, দ্য গ্রেট অনিরূপ শেখ জয়ের বউ হবে তার বদলে, সিম্পল।’
আশা কিছুক্ষণ অনিরূপের দিকে চেয়ে থাকে। পরপর পুরো ব্যাপারটা মাথায় ঢুকে বিদ্যুতের গতিতে। আশা চূড়ান্ত রেগে অনিরূপের বুকে ধাক্কা দিয়ে তাকে নিজের থেকে সরিয়ে ফেলে। আশার হঠাৎ ধাক্কায় অনিরূপের এপ্রোনের বোতাম খুলে নিচে পরে যায় একটা। অনিরূপ মাটিতে পরে থাকা বোতামের দিকে চেয়ে হালকা হেসে আশার দিকে চায়। তার চোখে-মুখে আত্মবিশ্বাস। আশা রাজি হবেই-সেটা যেন সে আগে থেকেই জানে। আশা এখন রাগ করছে, সেসব নস্যি লাগছে অনিরূপের কাছে।

আশা অনিরূপের ওমন হাসিহাসি মুখ সহ্য করতে পারছে না। রাগে কাঁপতে কাঁপতে বললো-‘আমাকে সত্তর হাজার টাকায় কিনতে চাইছেন আপনি? আর কত নিচে নামবেন আপনি, বলুন?’
অনিরূপ আরাম করে চেয়ারে হেলান দিয়ে বসলো। ভীষণ ধৈর্য্য নিয়ে আশার দিকে তাকাল। যেন সে জানে আশা রাজি না হয়ে যাবেটাই বা কোথায়? অনিরূপ হালকা হেসে বললো- ‘কিনতে চাইছি? বলো-বিয়ে করতে চাইছি।
আশা রাগে রীতিমত অন্ধ,হাতের স্যালাইনের নথ খোলার চেষ্টা করে বলতে থাকলো-‘অনেক করেছেন আমার জন্যে। এখন বিয়ে করে আমার লাইফ আর জাহান্নাম বানানোর কোনো দরকার নেই, থ্যাঙ্ক ইউ।’

আশা অদক্ষ হাতে স্যালাইন খোলার চেষ্টা করছে। যার ফলে হাত থেকে রক্ত পড়তে শুরু করলো। আশার হাতে রক্ত দেখে অনিরুপ চমকে উঠে দৌঁড়ে এগিয়ে এসে আশার হাত চেপে ধরল। তারপর ধীর হাতে যত্ন নিয়ে স্যালাইন খুলে দিল, আশা এইসময়টায় রেগে অন্যপাশে চেয়ে ছিল। একবারও অনিরুপের দিকে ফিরেও চায়নি। ঘে ন্না হচ্ছে এই অমানুষকে দেখতে।

অনিরুপ স্যালাইন খুলে অপেক্ষা করলো, আশা বেড থেকে দুর্বল ভাবে উঠে দাঁড়ালো। গায়ে এখন অনেকটাই বল পাচ্ছে। আশা অনিরূপের দিকে চেয়ে তেজি কণ্ঠে বললো-‘এইযে ছেড়ে যাচ্ছি, এ জীবনে যেনো আপনার মুখটাও আর না দেখি। এটুকু দয়া আমার উপর দেখালেই আমি খুশি হবো।’
আশা কথাটা বলে বেরিয়ে যেতে চায় হাসপাতাল থেকে। হঠাৎ পেছন থেকে অনিরূপ ভ্রু কুঁচকে বলে বসে-‘হাসপাতালের বিল মিটিয়ে তারপর যেও।’

আশা চমকে পেছনে অনিরূপের দিকে চায়। অনিরুপের ঠোঁটে সাধারণ হাসি। যেন সে হাসছে, আশার অসহায়ত্বের উপর, আশার দুর্ভাগ্যের উপর। আশা থামে, ফাঁকা ঢোক গিলে জিজ্ঞেস করলো-‘বিল কত এসেছে?’
অনিরূপ গা ছাড়া ভাবে বললো-‘রিসেপশন থেকে জেনে নিও, আমার প্যাশেন্ট আছে, তোমার পেছনে আর সময় নষ্ট করার মতো সময় আমার হাতে নেই, আসি আমি।’

অনিরুপ আশাকে পাশ কাটিয়ে দরজা দিয়ে বেরিয়ে গেল। কথায় আছে না- হাতি কাঁদায় পরলে চামচিকাও লাথি মারে। হয়তো আশা জানেই না, সে নিজে থেকে নয় বরং দ্য গ্রেট অনিরূপের ষড়যন্ত্রে কাঁদায় পিছলে পরেছে। আশা চুপ থাকলো কিছুসময়; কিছু বললো না। তারপর দীর্ঘশ্বাস ফেলে রিসিপশনের দিকে হাঁটা ধরলো।
রিসিপশনে গিয়ে শুনে,চার ঘণ্টার বিল এসেছে- সাত হাজার টাকা।

এ কথা শুনেই আশা রীতিমত হম্বিতম্বি শুরু করলো। এটুকু সময়ে এতটা বিল? অরাজকতা হচ্ছে? আশা রিসিপশনের মেয়েটাকে জিজ্ঞেস করলো-‘এতো বিল কেন আসবে? আপনার হাসপাতাল চালান নাকি ডাকাতি করেন?’
রিসিপশনিস্ট বললো- ‘এটা ভিআইপি হসপিটাল, ম্যাম। এটুকু আসবেই।’

আশা আর কথা বাড়াল না। এত টাকা দেওয়ার সাধ্য তার এখন একটও নেই। হাতে এক পয়সাও নেই, দিবে কিভাবে সাত হাজার টাকা। আশা থামলো, জোরেজোরে নিঃশ্বাস ফেলে বললো-‘আমি একটা কল করতে চাইছি।’
রিসিপশনিস্ট আশার দিকে তাকাল। স্যারের জন্যে এই মিষ্টি মেয়েটাকে এতট দুর্দশা পোহাতে হচ্ছে; ওর মায়া হচ্ছে এখন আশার উপর। রিসিপশনিষ্ট নিজের ফোনটা এগিয়ে দিয়ে বললো- ‘কথা বলুন।আমার ফোন বেশি ব্যালেন্স নাই।অল্প সময় কথা বলতে পারবেন।’

আশা কৃতজ্ঞতার দৃষ্টিতে তাকাল মেয়েটার দিকে। হাসার চেষ্টা করে মেয়ে থেকে ফোন নিয়ে সোফায় বসলো। প্রথম কলটাই নিধিকে করলো। অপাধে নিধি কল ধরলে আশা বললো-‘আপা, আমি আশা বলছি।’
নিধি অবাক- -‘আশা, আশা তোকে আমি কতবার কল করেছি? তোর ফোন কোথায়? বারবার বন্ধ দেখাচ্ছে কেন? তুই ঠিক আছিস তো আশা?’

আশা থামে, ক্লান্ত গলায় জবাব দিলো-‘আব্বাকে বোধহয় বাঁচাতে পারবো না আপা।’
নিধি হতবম্ব হলো। ভয়ে, আতঙ্কে বলে বসলো-‘মানে? ওরা আব্বাকে আঘাত করেছে?তুই- টাকা জোগাড় হয়েছে আশা?’
আশা জবাব দিলো- ‘না, আমি পারিনি আপা।’

হাঁপাতে হাঁপাতে বললো আশা। নিধির মনে হলো- দিলটা কেউ কামড়ে ধরলো। আতঙ্ক নিয়ে বললো-‘মানে? তুই তো বললি তোর কাছে সব টাকা আছে, এখন টাকা কোথায়?’
‘ছিনতাই হয়ে গেছে।’ -লম্বা লম্বা নিশ্বাস ফেলে জবাব দিলো আশা।
‘কী?ছিন-‘ নিধি চুপ হয়ে যায়।

আশা থামে, গলাটা জ্বলছে আশার। কথা বলতে পারছে না। পানি পিপাসা পাচ্ছে বড্ড। আশা থেমে থেমে বলল-‘আপা, বাড়িটা বিক্রি করা যায়না কোনোভাবে? তুমি একবার কথা বলবে চাচার সাথে?’
নিধি শোনে, তারপর দীর্ঘশ্বাস ফেলে বললো—‘চাচাকে কল করেছিলাম আমি। পুরো কথা না শুনে গা লাগা ল দিয়ে ফোন কেটে দিয়েছে।’

আশা কী বলবে? শরীরের সঙ্গে মনটাও এবার একদম দুর্বল হয়ে আছে। আশার কথার মধ্যে নিধি বললো-‘আমাদের হাতে আর কিছুই নেই আশা। আব্বার জামিন করার জন্য অনেক টাকা প্রয়োজন। কমপক্ষে পঞ্চাশ হাজার, ওগুলোও তো তুই হারিয়ে ফেললি।’
আশা কিছু বললো না। ধীমে আওয়াজে বললো-‘আমি দেখছি কী করা যায়। তুমি চিন্তা করো না। আমার জন্যে একটু দোয়া করিও আপা। আল্লাহ যেন আমাকে সঠিক পথ দেখায়।’

আশা কল কাটে। রিসিপশনিস্ট মেয়েকে তার ফোন দিয়ে সোফায় বসে থাকে চুপচাপ। কিছু একটা ভাবছে, গভীর কোনো সিদ্ধান্ত নিচ্ছে। মুখটা দুহাতে চেপে মাথা নিচু করে আছে। আশেপাশের লোকেরা যে আসছে, আশার দিকে একবার হলেও চোখ পড়ছে। মেয়েটা কে? কীসের এত দুঃখ তার?
আশা এলোমেলো আজ, পুরোপুরিভাবে অবিন্যস্ত করে ছেড়েছে অনিরূপ ওকে। অনিরূপ কম্পিউটারের সামনে বসে আশাকে দেখে চলেছে। মেয়েটা হারবে না, জানে অনিরূপ। কিন্তু অনিরুপ চায়- আশা হেরে যাক। আশা হারলেই অনিরূপের জিত। এই হার-জিতের খেলায় অনিরূপ বুঝলো না, কতটা-ঠিক কতটা বিশ্রীভাবে সে আশাকে ভেঙেচুড়ে দিয়েছে।

অনিরুপ বা পাশের বুকে হাত চেপে চেয়ারে হেলান দিয়ে বিড়বিড় করে-‘পোউর আশা, নাহ আশাবরি। জেদ করে নিজেই নিজের সর্বনাশ ডাকলে,আমি অনিরূপকে ডাকলে। কিন্তু জেনে রাখো, তুমি একটা দুর্দান্ত-চতুর মেধার স্বামী পেতে যাচ্ছো।’

অনিরূপ কেবিনে বসে আজকের কিছু রিপোর্ট দেখছে। সামনে বসা তাদের হাসপাতালের মার্কেটিং ম্যানেজার। অনিরূপ রিপোর্টে একবার চোখ ঘুরিয়ে নিয়ে বললো-‘রিপোর্ট করার সংখ্যা বাড়াও, আর প্রতিটা টেস্টে এখন থেকে ৬০০ টাকা এক্সট্রা চার্জ করবে।’
ম্যানেজার থমথমে চেহারায় মতামত দিলো–‘স্যার একজন রোগী এত টাকা কিভাবে দিবে?এমনিতেই আমাদের হাসপাতালে সবকিছুর জন্যে টাকা অনেক বেশি চার্জ করা হচ্ছে। রোগী হারাবো আমরা এমন করলে।’
অনিরূপ রিপোর্ট থেকে চোখ তুলে আড়চোখে ম্যানেজারের দিকে তাকালো। ওই চোখে যেন লেখা- ‘আর একটা বাড়তি কথা বললে চাকরি ফুরুত’
ম্যানেজার ওমন বাঘের চাওনি দেখে সঙ্গেসঙ্গে মুখটা ফ্যাকাশে করে বললো-‘সরি স্যার, আমি ইন্সট্রাকশন দিয়ে দিবো।’

অনিরূপ আর কিছু বলা লাগলো না। চুপচাপ বাকি রিপোর্ট দেখতে থাকলো। তাদের কথার মধ্যে দরজায় টোকা পড়লো। অনিরূপ রিপোর্টার দিকে চেয়েই ভেতর থেকে মৃদু হেসে বললো- ‘আসো, আ আ শা।’
আশা দরজা খুলে ভেতরে ঢুকল, নতমুখে। অনিরূপ আশাকে দেখে তীর্যক হাসলো। ম্যানেজারের দিকে চোখ দিতেই ম্যানেজার আশার দিকে একবার চেয়েই উঠে দাঁড়ালো। অনিরূপকে -‘আসি স্যার।’ কথাটা বলে সুড়সুড় করে বেরিয়ে গেলো অনিরুপের ব্যক্তিগত কেবিন থেকে।

আশা এখনো দাঁড়িয়ে আছে। অনিরূপ রিপোর্টটা রাখলো টেবিলে। চেয়ারে হেলান দিলে তার ইজি-চেয়ার পেছন দিকে ঝুঁকে গেলো। অনিরুপ তার সামনের চেয়ার দেখিয়ে বললো-‘বসো।’
আশা চুপচাপ বসলো চেয়ারে। অনিরূপ পানির গ্লাস এগিয়ে দিল। আশা গ্লাসটা হাতে নিলো, তারপর কিছুসময় পর পানি না খেয়েই গ্লাস আবার জায়গায় রেখে দিলো। অনিরুপ আশাকে দেখতে থাকে, ঠোঁটে এখনো তার উপহাসের হাসি লেপ্টে আছে। আশা কিছুক্ষণ পর থেমে থেমে বলল-‘আমি রাজি।’

অনিরূপ শোনে, ভ্রু বাঁকায়। তারপর ভুলে যাওয়ার অভিনয় করে বলে-‘কী? সাহায্য? ওটার মেয়াদ শেষ।তখন বলেছিলাম, তখন মেয়াদ ছিল। দু ঘণ্টা পর আমার মুড পাল্টে গেছে।’
আশা অনিরূপের এভাবে গিরগিটির মতো রূপ পাল্টে যেতে দেখে ভ্রু কুঁচকায়। চূড়ান্ত বিরক্ত হয়ে বলে-‘ঠিকাছে, আসছি আমি।’

কথাটা বলে সঙ্গেসঙ্গে চেয়ার থেকে উঠার চেষ্টা করলে, অনিরূপ দ্রুত উঠে টেবিলের ওপাশ থেকে আশার হাত চেপে ধরলো। হাতে বাধা পড়ায়, আশা চমকে উঠে। অনিরূপের থেকে দ্রুত নিজের হাত ছাড়িয়ে নিয়ে ভ্রু কুঁচকে তাকায় অনিরূপের দিকে। অনিরূপ আশার তাকানো দেখে শুধরে নিজের হাত সরিয়ে নিয়ে সোজা হয়ে বসে বললো-‘আমি মজা করছিলাম, বসো। বসে কথা বলি।’

আশা ত্যাড়া চোখে অনিরূপকে পর্যবেক্ষণ করে। বে য়াদব লোক, আশার এমন একটা অবস্থায় এটা মজা করার সময়? কাণ্ডজ্ঞান নেই। আশা তবুও চুপচাপ বসলো। অনিরূপ বললো-‘বিয়ে করবে আমায়?’
কী সুন্দর একটা বাক্য, পবিত্র একটা প্রস্তাব। অথচ আশার কাছে এটা মোটেও পবিত্র মনে হলো না। বরং মনে হলো চূড়ান্ত বিষাক্ত একটা কথা। আশা বুকে পাথর চেপে মাথা দুলিয়ে জবাব দিল-‘হু।’
অনিরূপ হাসলো। জয়ী সে শেষ অব্দি। আশা বললো-‘আমি চাই, আমার বিয়ের কাবিনের টাকা সাতাত্তর হাজার হোক।’

‘আমাদের বিয়ে।’ অনিরূপ ক্ষীণ কণ্ঠে শুধরে দিল।
আশা শোনে, বিরক্ত হয়। তবুও সহ্য করে যায়। অনিরূপ এক মুহূর্তে দেরি করলো না। সঙ্গেসঙ্গে একটা চেকবুক ড্রয়ার থেকে বের করে সেখানে সাতাত্তর হাজার টাকা লিখে সই করে দিল। আশার হাতে চেক দেওয়ার আগে বললো-‘বিয়ের আগে কাবিনের টাকা দেওয়া যায়না। শুনেছি- ওটা বাসর রাতে স্ত্রীকে দেয়। আর আমাদের তো বিয়েই হয়নি। সো-‘
আশা ভ্রু বাঁকায়-‘সো?’
‘কাজী অফিসে চলো।’

অনিরূপ সুন্দর হেসে আশার দিকে চেয়ে আছে। এইসব একের পর এক ঘটনায় অনিরূপ ভীষণই মযা পেয়ে যাচ্ছে-সেটা তার হাসি দেখে বোঝা যাচ্ছে। আশা বড়বড় শ্বাস ফেলতে থাকে। এ কোন্ পরিস্থিতির মধ্যে যাচ্ছে আশা। আশা এই মুহূর্তে বিয়েটা আটকানোর চেষ্টা করে বলে-‘আব্বা, আপা কেউই নেই। এভাবে-‘
অনিরূপ জবাব দিল- ‘এখন কাজী অফিসে সাধারণ বিয়ে হবে, আমার বন্ধুরা সাক্ষী দিবে। বিয়ে শুধুমাত্র নামের হবে। আঙ্কেল জেল থেকে ছুটে তোমাদের ঘরে গিয়ে আবার ধুমধাম করে আয়োজন করবেন আমাদের বিয়ের। সাত দিন পর আমাদের আবার বিয়ে হবে, ওই বিয়ের পর তুমি আমার ঘরে উঠবে, অনিরূপের বউ হয়ে।’
আশা শোনে। নিজের ভাগ্যের উপর তাচ্ছিল্যের হাসি হেসে উঠে বললো-‘চলুন।’

দীঘির জলে কার ছায়া পর্ব ৪

‘এই অবস্থায় বিয়ে করবে?’ -অনিরুপ আশাকে আপাদমস্তক দেখে ভ্রু বাঁকিয়ে বললো।
আশা নিজের দিকে তাকায়। সত্যি বলতে ওকে এখন অত্যন্ত বিধ্বস্ত দেখাচ্ছে। এভাবে বিয়ে করলে কাজী পর্যন্ত ভড়কে যাওয়ার কথা। কিন্তু যার মনেই রঙ নেই, তার গায়ে আবার কীসের রঙ ফুটবে? আশা উত্তর দিলো না কিছু।
অনিরুপ চেয়ার থেকে উঠে এপ্রোন খুলে বা হাতে ঝুলিয়ে বললো-‘চলো, তোমাকে শাড়ি কিনে দেই। লাল টকটকে জামদানি শাড়ি পরে তুমি আমাকে বিয়ে করবে, কামঅ’ন।’

দীঘির জলে কার ছায়া পর্ব ৬