ধূসর রংধনু পর্ব ৩২

ধূসর রংধনু পর্ব ৩২
মাহিরা ইসলাম

ঘড়ির সবচেয়ে ছোট্ট ঘন্টার কাঁটাটি নিজের গাম্ভীর্যতা বজায় রেখে পৌঁছিয়েছে সমান বারোটার ঘরে।
কিসের এত অহংকার তার? বার বার তো সেই একই জায়গায় থেকেই তার চারিপাশ প্রদক্ষিণ করে।
উত্তরে বাতাসের দল তখন ফিসফিস করে সকলের কানে কানে বলে,” তবুও তো কোনেভাবেই তোমরা তাকে আটকে রাখতে পারো না।সৃষ্টির সেরা জীব, কত কিছুই তো আবিষ্কার করলে।কিন্তু সৃষ্টিকর্তার তৈরি নিয়ম ভঙ্গ করা কি এতই সোজা।

সৃষ্টিকর্তা সব দেখেন। তোমার করা গোপন কর্মকান্ড ও তিনি দেখেন।তাই ভেবো না খারাপ কাজ তুমি গোপনে করিলে আর বাঁছা তোমায় কেউ দেখিতে পেল না।উহু।উহা ভেবে মোটেও আনন্দিত হওয়ার কোনো কারণ নেহি।ওইযে তোমার ওপরেও একজন বসে আছেন সে তো সব দেখছে।তার থেকে তুমি লোকাবে কেমন করে। পাপ করলে তার ফল তো ভোগ করতেই হবে।হয় ইহকালে নয়তো একেবারে পরকালে।ফল তো ভোগ করতেই হবে।
নশ্বর মানষ্যজাতি কারো ক্ষতি করার চিন্তা না করিয়া নিজের ক্রোধ,হিংসা,অহংকার কে নিয়ন্ত্রণ করতে চেষ্টা করো। ক্রোধ,হিংসা, অহংকারের বশবর্তী হয়ে
কাউকে বিপদে ফেলা মোটেও সোয়াবের কাজ হতে পারে না। ইহা একদমি নিকৃষ্ট, হীনমন্যতার, নির্বুদ্ধিতার পরিচয় দেওয়া।

আরও গল্প পড়তে এখানে ক্লিক করুন 

যারা বুদ্ধিমান তারা কখনো এমন কাজ করেন না। কারণ তারা জানেন ওপরে একজন তাকে দেখছে।
অতএব গোপন করবে সে কার থেকে।
তাই তা থেকে বিরত থাকাই কি উত্তম নয়।
মান্সার বাবা আরিফুল হক নিজের চেয়ার থেকে উঠে মেয়ের ডান গালে ঠাস করে চর বসিয়ে দিলেন।
সকলের কাছে তার মানসম্মান একদম ধূলোয় মিশিয়ে দিলো।সঙ্গে তার কলেজেরও।তিলে তিলে সে আর তার বাকি শেয়ারার বন্ধুরা হসপিটালের সঙ্গে এই প্যাশন মেডিকেল কলেজটি প্রতিষ্ঠা করেছিলেন আরো বহু বছর আগে।ভদ্রলোকের বয়স আশির কোঠায়।আরো পঞ্চাশ বছর আগে এই কলেজ ও হসপিটাল তারা প্রতিষ্ঠা করেছে।
স্ত্রীর সন্তান না হওয়ায় শেষ বয়সে এসে তার পয়তাল্লিশ বছরের স্ত্রী নিরুপমা ইচ্ছে প্রশন করলেন এবারে অন্তত একটা শিশু তাদের দত্তক নিতেই হবে। বিশ বছর আগে একটা একমাসের বাচ্চা শিশুকে দত্তক নিলেন তারা। নিজের সন্তান হিসেবে লালন পালন করে এলেন যেই মেয়েটাকে।এমনকি সে আজও তার আসল বাবা মা সম্পর্কে অবগত নয়।

এই দিন দেখার জন্য এই মেয়েকে লালন পালন করলেন এত যাবত কাল তারা।
এইদিন দেখার জন্য মেয়েকে নিজের মেডিকেল কলেজে ভর্তি করেছিলেন।
মানুষজন ছিঃ ছিঃ করছে।
শেষে কিনা কলেজের ফাউন্ডারের মেয়ে এমন একটা কাজ করতে পারলো।
সারা কলেজের ছাত্রীদের মনে একটা আতঙ্ক সৃষ্টি করে দিয়েছে।অপদার্থ।
রাগে ক্ষিপ্ত হয়ে পুনরায় নিজের মেয়ের বাম গালে চর বসালেন।মুখ দিয়ে অস্ফুট স্বরে বলল,” রাস্কেল।”
ভদ্রলোকের বয়স হলে কি হবে সে এখনো ভীষন সামর্থবান।গায়ের চামড়া একটুও কুচকায় নি।
মান্সা ছলছল চোখে বাবার দিকে তাকিয়ে রইলো।
আজ প্রথম বার বাবা তার গায়ে হাত তুললো।
তাও এই ভরা মজলিশে।

তাসফির উপর রাগ তার আরো চড়াও হলো।
সব হয়েছে মেয়েটার জন্য।
মান্সার ভেতরকার ভালোমানুষি সত্তা তাকে তিরস্কার করে বলে,” কতবড় অপদার্থ তুমি এখনো নিজের ভুল স্বীকার করছো না। নিজে অন্যায় করলে তবুও পুনরায় নির্দোষ মেয়েটাকে দোষী সাব্যস্ত করতে তৎপর তুমি।অসহ্য মেয়েলোক।”
মান্সা ভেতরের সয়তানি সত্তা গর্জে উঠে বলল,
-” তাকে কান পড়া দিয়ে কোনো লাভ নেই।ওই মেয়েই সব নষ্টের মূল।সে কলেজে না এলে কিছু হতোই না।”
ভালো সত্তা তাকে ব্যঙ্গ করে হেঁসে থেমে গেল।
সে যতই বোঝাক এরা ঠিক হবে না।একবার অপশক্তি এদের মাঝে ভর করলে তা ছোটানো বড় মুশকিল।

এইতো ঘন্টা খানিক আগের ঘটনা,,,,
তাসফির কেবিন থেকে বেরিয়ে আশা আরাধ্য আর সর্নিধিকে ইতস্তত বলল,
-” তোরা এগিয়ে যা আমার একটু কাজ আছে।”
ওদের কাজের কথা বলে আশা চুপিচুপি সুজনের কেবিনে ঢুকে পরলো।
সুজন হঠাৎ কেবিনে আশা কে নক করা ছাড়া ঢুকতে দেখে রাগী স্বরে বলল,
-” ম্যানার্স শেখ নি।অভদ্রের মতো আচরণ আমি মোটেও বর্দাস্থ করবো না। এখনি বের হয়ে যাও।”
আশা মুখ কাচুমাচু করে বলল,
-” স্যার আপনাকে একটা ইম্পর্টেন্ট কথা বলতে এসেছি। খুবই গুরুত্বপূর্ণ। তাসফিকে আটকে রাখার ব্যাপারে।
সুজন ভ্রু কুচকে কৌতুহলি চিত্তে বলল,

-” বলো।”
আশা বলল,
-” নিস্তব্ধ স্যারকে বলতে সাহস পাচ্ছি না তাই আপনাকেই বলছি।”
সুজন নিজ যায়গা থেকে আশার দিকে এক পা এগিয়ে একটু ঝুঁকে চোখ ছোট ছোট করে বলল,
-” কেন তুমি আমাকে ভয় পাও না ”
আশা জোড়ে জোড়ে মাথা নাড়ালো।
সুজন চোখ গরম করে তাকালো,
বলে কি এই মেয়ে তাকে ভয় পায় না।কেন পায় না?
সুজন অবাক কন্ঠে সুধালো,

-” কেন ভয় পাওনা?”
আশা কাঁদো কাঁদো মুখ করে বলল,
-“আপনাকে দেখে না আমার ঠিক ভয়টা আসে না।আমি কি করতে পারি বলুন।”
সুজন হতভম্ব হয়ে গেল আশার কথায়। তার মানে কি সবাই নিস্তব্ধ কে ভয় পায় আর তাকে দেখে কেউ ভয় পায়ই না।
তাইতো নিস্তব্ধ’র ক্লাসের সময় রুম তার মতই নিস্তব্ধ থাকে।আর সুজনের ক্লাসে সবাই সুজন মাঝির মতো কীর্তন শুরু করে দেয়।আশ্চর্য! আশ্চর্য।
ভারী হতাশাজনক ব্যাপার স্যাপার।
সুজন আশা কে ঝারি মেরে বলল,
-” কি বলবে বলো দ্রুত। বলে বিদায় হও তো মেয়ে।
আশা জড়ো সরো হয়ে বলল,

-” আমার মনে হয় স্যার আমাদের ক্লাসের ছাত্রী মান্সা। আমাদের কলেজে ফাউন্ডারস এর মেয়ে। ওই যে ক্লাসে হাঙ্গামা করে।আপনি তাকে তবুও কিছু বলেন না।ওর এতে হাত থাকতে পারে।
ওও তাসফিকে পছন্দ করতো না। এর মাঝে ওর সঙ্গে ঝামেলা ও করেছিল।আর আমি তাসফির বাবা মারা যাওয়ার পরে একদিন ওদের তাসফির ক্ষতি করার জন্য কিসব কথা বলতে শুনেছিলাম।”
আপনি তবুও কিছু বলেন না। সুজন বেশ বুঝতে পারলো মেয়েটা বড্ড ধূর্ত তাকে ইচ্ছে করে তিতকারি করে বলেছে কথাটা।
সুজন তবুও শান্ত রইলো।
কারণ আশার বলা কথাটা এই মুহুর্তে খুবই গুরুত্বপূর্ণ।
বলল,

-” তুমি সবার সামনে বলতে পারবে এই কথা।”
-” কি যে বলেন না।অবশ্যই বলতে পারবো।আমার একমাত্র প্রাণের বান্ধবীকে কতটা কষ্ট দিলো ওরা আর আমি চুপ করে থাকবো কখনো না।”
সুজন চোখ ছোট ছোট করে বলল,
-” বেশি কথা বলো তুমি।”
আশা বিরবির করে বলল,” তা আপনার থেকেই নেহাৎই কম।”
বিরবির করলেও দূরত্ব কম থাকায় সুুজন তা স্পষ্ট শুনতে পেল।
মৃদু ধমক দিলো।
-” স্যাটআপ ষ্টুপিড। ”
আশা সয়তানি হেঁসে বলল,

-” আমাকে ধমক দিয়ে লাভ নেই। সত্যটা আপনিও জানেন। ওই যে কথায় আছে না, যে করে তার গায়েই ফোস্কা পড়ে।যাইহোক বাদ দিন।আপনাকে একটা ফ্রিতে আইডিয়া দেই শুনুন।
মান্সার সঙ্গে ওর যে চ্যালা-ব্যালা আছে না। ওদের পাকড়াও করে কিছু কঠিন কথা বলুন।দেখবেন ঠিক গরগর করে সব উগড়ে দিয়েছে।”
সুজন মাথা ঝুলিয়ে বলল,
-” থ্যাংকিউ ফর ইউর’স আইডিয়া। গেট আউট। ”
আশা মুখ বাঁকিয়ে বেরিয়ে এলো।এই জন্যই বলে লোকের সেধে গিয়ে ভালো করতে নেই।
বের হওয়ার আগে বলল,
-” আশা করি আমার বন্ধুর সঙ্গে অন্যায় করা লোকদের যথাযথ শাস্তি হবে। নিস্তব্ধ স্যারকে কথাটা বলে দেবেন।”
বাসন্তী নিস্তব্ধ চেম্বার এসে বসে ছিল। যাতে তার ভাই তাসফিকে যেতে না দেখে।
একফাঁকে সে শক্ত কন্ঠে বলল,

-” এমন কাজ কে করতে পারে কিছু জানতে পারলি ভাই।তাকে মোটেও ছেড়ে দিবি না।কঠোর শাস্তি হওয়া চাই।”
নিস্তব্ধ বাঁকা হাঁসলো।
মুহূর্তেই তার চোখমুখ লাল হয়ে উঠলো তাসফির কষ্টে হাঁসফাঁস করার দৃশ্য মনে পড়তেই।শক্ত কন্ঠে বলল,
-” তুই কি ভাবলি আমি তাকে এমনি এমনি ছেড়ে দেব। এই নিস্তব্ধ ইয়াসারের জানে হাত দিয়েছে সে এমনি এমনি কি করে ছেড়ে দিই। ”
সুজন এলো তখন দ্রুততার সহিত।
বাসন্তী বেরিয়ে গেল।এতক্ষণে তাসফি নিশ্চয়ই চলে গিয়েছে।
সুজন আশার বলা কথা গুলো বলতেই নিস্তব্ধ উঠে দাঁড়ালো। তার মনে হচ্ছে আশার সন্দেহই ঠিক।এর আগেও মান্সা মেয়েটাকে সে তাসফির সঙ্গে ঝামেলা করতে দেখেছে।
নিস্তব্ধ কয়েক মিনিটের মাঝে মান্সার চ্যালা- ব্যালাকে
পাকড়াও করে ধরে আনলো নিজের চেম্বারে।
কিছু থার্ড ডিগ্রি মুলক কতা বার্তা ওদের উপর অ্যাপলায় করতেই সব গরগর করে বলে দিলো ওরা।
নিস্তব্ধ রাগী চোখে ওদের দিকে তাকিয়ে বলল,

-” তোমরা যদি কাজটা করে থাকো ভালোয় ভালোয় বলে দাও।নয়তো কঠোর শাস্তি পেতে হবে তোমাদের।
তোমাদের মা- বাবা কে ইনফর্ম করা হবে।
কলেজ থেকে বিতারিত ওও করা হতে পারে। তোমরা নিশ্চয়ই এমন কিছু চাইবে না।”
ওরা সত্যি সত্যিই ভয় পেয়ে গড়গড় করে সবটা বলে দিল।
মান্সার কথাই ওরা দুদিন আগে সিসিটিভি বন্ধ করে তা নষ্ট করেছে।যাতে তাদের কেউ সন্দেহ না করে।
আর তারাই তাসফিকে হাত পা বেঁধে রেখেছিলো মর্গে।আর ফোনটা মান্সা নিজে ফেলে এসেছিল শপিংমলের পাশে।যাতে কেউ সন্দেহ না করে।
নিস্তব্ধ বলল,

-” কথা গুলো মিটিংয়ে স্বীকার করতে পারবে তো?”
ওরা সবাই ভয়ে ভয়ে মাথা দোলালো।
অতঃপর ওরা মিটিংয়ে সবটা স্বীকার করলো।
বর্তমানে,,,
নিস্তব্ধ গম্ভীর স্বরে ব্যঙ্গ করে সুধালো,
-” তো কি শাস্তি ঠিক করলেন নিজের মেয়ের জন্য ফাউন্ডার সাহেব।”
তিনি নিস্তব্ধ’র কৌতুক বুঝেও চুপ করে রইলেন।
নিস্তব্ধ’র কৌতুক করাই স্বাভাবিক।
এই তো কয়েকদিন আগের কথা।
মেয়ে তার আবদার করলো ডাক্তার নিস্তব্ধ ইয়াসার কে তার ভারী পছন্দ। বিয়ে করলে সে তাকেই করবে।
মেয়ে জেদ ধরে বসলো।
ভদ্রলোক মেয়েকে ভীষণ ভালোবাসেন। অতঃপর মেয়ের জেদের কাছে হার মেনে সে গেল নিস্তব্ধ’র চেম্বারে তার নিকট বিয়ের প্রস্তাব নিয়ে।
কিন্তু নিস্তব্ধ সঙ্গে সঙ্গে প্রত্যাখান করে দিল।সঙ্গে বলে দিলো তার মেয়ে সম্পর্কে অযাচিত কিছু কথা।

-” আপনার মেয়ে একনম্বরের উদ্ধত,বেয়াদপ।মানুষকে সম্মান করতে জানে না।অহংকারী।ছোটদের সঙ্গে কারণে অকারণে মিসবিহ্যাব করে।পুরো ক্লাসে হাঙ্গামা বাঁধিয়ে রাখে।আপনার ক্ষমতা ব্যবহার করে সকলকে নিজের কর্তৃত্ত ফলাতে চায় সো এমন একটা মেয়েকে তো বিয়ে করার প্রশ্নই আসে না।”
আরিফুল হক প্রতিবাদ করে বলল,
-” তার মেয়ে এমনটা হতেই পারেনা। কোথাও আপনি বিয়ে না করার স্বার্থে বানিয়ে বলছেন না তো ডক্টর। ”
নিস্তব্ধ শান্ত অথচ তেজ নিয়ে বলল,
-” মোস্ট ইম্পর্টেন্টলি আ’ম অলরেডি ম্যারিড।সো দ্বিতীয় বিয়ে করার কোনে ইচ্ছা আমার নেই।
আর দ্বিতীয়ত আমার স্বভাব চরিত্র সম্পর্কে আপনার খুব ভালোই ধারণা আছে।নাহলে আমায় নিজের কলেজে কর্মে নিয়োজিত করতেন না।”

নিস্তব্ধ বিয়ের কথা শুনে তিনিও এবারে কিছুটা বিচলিত হলেন।আর সেও জানে নিস্তব্ধ মিথ্যা কথা বলা,অসৎ পথ অবলোম্বন করতে মোটেও পছন্দ করে না।
অন্যমনষ্ক হয়ে চেম্বার ছেড়ে বের হতে গেলে নিস্তব্ধ পিছু ডেকে বলল,
-” আর একটি কথা, বিয়ের খবরটা কাউকে এখনি জানাবেন না।কারণ বশত আপনাকে অবগত করতে হলো দ্যাটস ইট।আর নিজে মেয়ের দিকে খেয়াল রাখবেন। তাহলেই নিজের ভুলটা বুঝতে পারবেন।সন্তানকে কখনো অতিরিক্ত লায় দিতে নেই।তাহলে মানবজীবনে সত্যিই তারা বিগড়ে যায়।বিপথে চলে যায়।তাদের সব আবদার সব সময় শুনতে নেই।ভালো কি খারাপ কখনো কখনো নিজেদের বিচার করে দেখতে হয় নাহলে পরবর্তীতে সেটা ভয়ংকর হয়ে দাঁড়ায়। এই যে আজ যেমন মেয়ের আবদার কে প্রশয় দিয়ে আমার কাছে না এসে দুটো ধমক দিতেন তাকে তবে আর পরবর্তীতে এমন আবদার করতে ভয় পেত।
বেস্ট অফ লাক।আপনি আসতে পারেন।”

নিস্তব্ধ কথা গুলো সেদিন তার মনে ভীষন করে দাগ কেটেছিলো।সত্যিই কি তিনি ভুল করে ফেললেন।কাজের চাপে তিনি মেয়ের প্রতি নজর কিংবা সময় কোনোটাই দিতে পারেন না।
আজ মনে হচ্ছে নিস্তব্ধ’র বলা প্রত্যেকটা কথা একদম পাই টু পাই সত্য।সত্যিই সে বাবা হিসাবে ব্যর্থ।
তিনি ঘোষণা দিলেন,-” মান্সা কে আজ থেকে পরবর্তী এক সপ্তাহ যাবত কলেজের ক্লাসসহ সমস্ত সিডিউল থেকে বহিষ্কার করা হলো।ইচ্ছা পোষন করা সত্ত্বেও সে কোনো কিছুতেই অংশ নিতে পারবেনা।পরবর্তীতে সে যদি পুনরায় এমন কাজ করে তবে তাকে আরো কঠিন শাস্তির দেওয়া হবে।”
আরিফুল হক নিস্তব্ধ’র হাতে মাইক ধরিয়ে দিলো
নিস্তব্ধ উঠে হাতে মাইক নিয়ে বাঁকা হাঁসলো।এইটুকু ঠুনকো শাস্তিতে তো নিস্তব্ধ’র ইয়াসারের মোটেও রাতে ঘুম হবে না। তার বউকে কষ্ট দিলো আর সে এত সহজে তাদের ছেড়ে দিবে কখনো না। রাতে ভালো ঘুৃম হওয়ার জন্য দরকার ওদের আরো কঠোর শাস্তি। যেটা সে এখন নিজে ঘোষনা করবে।
নিস্তব্ধ চোয়াল শক্ত করে বলল,

-” শাস্তিটা ভীষণ কম হয়ে গেলনা স্যার?এতে তো ওরা ভিক্টিমের কষ্টটা উপলব্ধি করতে পারবেনা স্যার।
এতটা নিকৃষ্ট একটা কাজ করলো আর নিজেরা সেটা বুঝবেনা যে আদ্যত্ত্বেও তারা কতটা খারাপ করলো সেটা কি করে হয় বলুন।আমি বলছি। যারা যারা কাজটার সঙ্গে জরিত ছিল তাদের প্রত্যেককে আজ থেকে প্রতিদিন এক এক দিন করে ওই মর্গে সন্ধ্যা থেকে রাত একটা পর্যন্ত হাত পা বেঁধে রাখা হবে।ওদেরও উচিত কষ্টটা একটু উপভোগ করা।
জীবনে সব কিছুরই অভিজ্ঞতা থাকা ভালো।কি বলেন স্যার?
আরিফুর হক বললেন “বেশ তবে তাই হোক। ওদের গার্জিয়ানদের তাদের ছেলে-মেয়েদের করা কৃতকর্মের কথা জানিয়ে দেবেন। ”

সকলের সঙ্গে মান্সা এমন শাস্তির কথা শুনে আঁতকে উঠলো। তার প্রাণ যায় যায় অবস্থা। আর যখন শুনলো আজ রাতে মান্সাকে রাখা হবে।সে জ্ঞান হারালো।
ওই যে কথা আছে না অন্যের জন্য কুয়া খুরলে সেই কুয়ায় তোমাকেও পড়তে হবে।তাই সাবধান!
সকলের উদ্দেশ্যে নিস্তব্ধ আবারো উঠলো বলল,
-” এমনকি শুধু মান্সা নয়।পরবর্তীতে যদি কেউ এমন নিকৃষ্ট কাজের পুনরাবৃত্তি ঘটায় তাকে কঠোর থেকে কঠোরতম শাস্তি দেওয়া হবে।
এভরিওয়ান ইউস ইউর’র অনেষ্ট মাইন্ডসেটাপ।গট ইট! আজকের মতো সকলে বাড়িতে যান।”
এত্তক্ষণে কলেজের উত্তপ্ত প্রাঙ্গন কিছুটা শান্ত হলো।
কারো কারো মনে তাসফি আর নিস্তব্ধ পজেসিভ নিয়ে প্রশ্ন থেকেই গেল।
কিছুক্ষণ পর,

তাসফি চলে যাওয়ার পর বাসন্তী শুয়ে আছে তাসফির কেবিনের বেডে।তাসফির সঙ্গেই কথা বলছিলো সে ফোনে।তাকে যে মান্সা আটকে রেখেছিলো।
নিস্তব্ধ ও স্যারের বলা শাস্তির কথাগুলোই ফোনে বলছিলো কেবলি সে।
নিস্তব্ধ কেবনিতের দরজা ঠেলে অন্যমনষ্ক হয়ে ঢুকতে ঢুকতে সুধালো।
-” এখন কেমন বোধ করছেন মিসেস নিস্তব্ধ ইয়াসার। ”
হঠাৎ নিস্তব্ধ’র আগমনের সঙ্গে উক্ত কথার পেক্ষিতে বাসন্তী উঠে চোখ বড় বড় করে চাইলো ওর দিকে।
সামনে তাকিয়ে নিস্তব্ধ তাসফি বদলে নিজের আপাকে দেখে কিছুটা থতমত খেয়ে গেল।
তবুও নিজের লজ্জিত বদন ঢাকতে চেষ্টা করে ভ্রু কুচকে বলল,

-” তুই একা কেন আপা।আমার বউ কোথায়?”
-চলে গেছে তোর বউ।
নিস্তব্ধ ভাবলো হয়তো সকালের মতো এবারেও তার সঙ্গে রশিকতা করা হচ্ছে।
কিন্তু বাসন্তী বলল,
-” সত্যিই চলে গেছে।
বাসন্তী ফোন কাটে নি।
ফোনের ওপাশ থেকে তাসফি সব শুনতে পাচ্ছে। নিজের মনে নিস্তব্ধ’র হতভম্ব মুখখানা কল্পনা করে কুটকুটিয়ে হেঁসে উঠলো।

ধূসর রংধনু পর্ব ৩১

ইশশ অহংকারী পুরুষটার রাগী মুখটা সে যদি এখন দেখতে পেত!
নিশ্চয়ই চোয়াল শক্ত করে দাঁড়িয়ে আছে।
আপা কে কি সে লুকিয়ে একটু দেখাতে বলবে ভিডিও কলে।

ধূসর রংধনু পর্ব ৩৩