ধূসর রংধনু পর্ব ৩৩

ধূসর রংধনু পর্ব ৩৩
মাহিরা ইসলাম

চারপাশে অন্ধকারে নিমজ্জিত। বাসন্তী বসে আছে নিজের রুমের বেলকনিতে আকাশের দিকে মুখ করে।
তার মস্তিষ্ক ভাবনায় বিভোর।সেখানে সবটুকু যায়গা দখল করে আছে মাহীন।
এই তো আজ দুপুর পর হসপিটাল থেকে ফেরার পথে বাসায় ঢোকার আগে ঘটনা।
বাসন্তী ওসমান ভিলার গেট দিয়ে ভেতরে ঢোকার আগ মুহুর্তে। একজন মহিলা এসে তাকে থামিয়ে দিলে,
-” এই শুনো তুমি নিলয় ভাইয়ের মেয়ে বাসন্তী না?”
বাসন্তী মাথা নাড়লো।মহিলা কে চেনে।তাসফিকে দেখতে এসেছিল যারা বিয়ের পরদিন।এ তাদের মাঝেই একজন।
মহিলা টি আফসোস করে বলল,

-” আহারে ফুটফুটে মেয়েটাকে ডিবোর্স দিয়ে দিলো।ইশশ। এহন তোমাগো সংসার করার বয়স।”
বাসন্তী ভাবলো মহিলাটা হয়তো তাকে সান্ত্বনা দিতে চাইছে।তাই তারও খারাপ লাগলো।
কিছু বলতে নিবে কিন্তু মহিলার পরবর্তী কথা শুনে বাসন্তী শক্ত চোখে তাকালো।
মহিলাটি গোপন কথা বলার ভঙ্গিতে বলল,
-” তা তুমি আরেক খানে প্রেম টেম করতা নাকি? ছেড়ে দিলো তোমায়? নাকি শ্বাশুড়ির সঙ্গে ঝগড়া করতা? ননদ ছিলো নাকি তোমার।খারাপ কাজ করে ধরা খাইছিলা? যত যাই বলো এমনি এমনি তো আর তোমায় ডিবোর্স দেবে না।নিশ্চয়ই কোনো অকাম কুকাম করছিলা।”

আরও গল্প পড়তে এখানে ক্লিক করুন 

এই আশে পাশের মানুষের এক সমস্যা। শহর হোক বা গ্রাম।কিছু এমন নিচু মানসিকতার মানুষজন অহরহ খুজে পাওয়া যাবে।আর এর মাঝে নাক গলায় মধ্যবয়সী মহিলা মানুষ বেশি।মানুষকে সান্ত্বনা দেওয়ার নামে খোঁচা মেরে কটু কথা বলতে এরা ওস্তাদ। যেন এতেই তাদের সুখ।আর কাজ কারবার নেই তাদের।
বাসন্তী কিছু বলার আগেই হঠাৎ তার পিছন থেকে গম্ভীর পুরুষালী কন্ঠস্বর ভেসে এলো,
-“কাকিমা আপনি ভুল বুঝেছেন।ডিবোর্সটা তারা বাসন্তীকে দেয় নি বরং বাসন্তী তাদের ছেলের উপর থুথু ছিটিয়ে ডিবোর্স টা দিয়ে এসেছে বুঝলেন।

আর প্রেম করতো কিনা? প্রেম করুক যা খুশি তাই করুক তাদে আপনাদের কি।একজন যদি তার লাইফ নিয়ে হ্যাপি থাকে তাহলে আপনাদের সমস্যা কোথায় কাকিমা? আর অকাম কুকাম ওও করেনি ওর প্রাক্তন হ্যাসবেন্ড করেছিল।আর আপনাকেই বা এত কৈফিয়ত দেওয়ার প্রয়োজন মনে করছি কেন? কে আপনি বলুন তো।মানুষকে এভাবে রাস্তা উপর দাঁড় করিয়ে হ্যারাসমেন্ট করায় কিন্তু আপনার নামে মামলা দিতে পারি জানেন। ”
মহিলাটি মাহীনের পরপর এতকথায় একদম চুপসে গেল।
পুনরায় কিছু বলবে,

-” তুমি কে আমায় এত কথা বলার আমি তো তোমায় কিছু বলিনি।”
মাহীন বলল,
-” আমি কে সেটা আপনার না জানলেও চলবে। জানতো নিজের কাজে যান।আজব সব পাবলিক।”
মহিলাটি মুখ গোমড়া করে প্রস্থান করলো।
বাসন্তী মন প্রফুল্লতায় ভরে উঠলো।তার চোখ ছলছল করলো।মাহীন এভাবে সাপোর্ট করবে সে কখনো ভাবেনি।যদিও তার পরিবারের লোক তাকে যথেষ্ট সাপোর্ট করে। কিন্তু এই মুহুর্তে তো তারা কেউ ছিল না।তাছাড়া সে তাসফির মতো সবার মুখের সামনে নীতি কথা ওও ছুঁড়ে দিতে পারেনা। একটুতেই সে নরম হয়ে যায়।
-” এখান দিয়েই যাচ্ছিলাম।আপনাকে দেখে বাইক থামালাম।যান ভেতরে যান।আর একটা কথা মনে রাখবেন এইসব মানুষদের বেশি পাত্তা দেবেন না।এরা নরম দেখলেই গরম হয়ে বসে।নিজেকে আরো স্ট্রং করুণ বাসন্তী সুন্দরী। ”

মাহীনের কথায় বাসন্তীর ভাবনাচূত হলো।
কেন জানি এই মুহুর্তে তার মাহীনের সামনে দাঁড়িয়ে থাকলেও লজ্জা পাচ্ছে।
মাহীন ভ্রু কুঁচকে বলল,
-” কি ব্যাপার আপনার গাল টা এমন হঠাৎ করে লাল হচ্ছে কেন বলুন তো।”
বাসন্তী থতমত খেয়ে গালে হাত দিয়ে বলল,
-” কো.. কোথায়? ”
মাহীন হাসতে হাসতে বাইকে উঠে বলল,
-” নেই।হাপিস হয়ে গেছে।”
মাহীন বাইক স্টার্ট দিলে বাসন্তী ব্যস্ত হয়ে বলল,
-” ভেতরে আসতে। এক কাপ চা খেয়ে যাও।”
মাহীন বাসন্তী চেখের দিকে তাকিয়ে বলল,
-” অন্য কোনো দিন।যেদিন আপনার হৃদয় আমাকে ডাকবে। ”
বলেই মাহীন চলে গেল তাকে অবাক করে রেখে।
বাসন্তী আকাশ পানে চেয়ে বিরবির করলো।
তবে কি আমার ভাবনাই ঠিক?

মাহীনের প্রতি তার হৃদয় কোঠায় কিছু সুপ্ত অনুভূতি বাঁসা বেঁধেছে। সে তার চেয়ে বড়।এই অনুভূতি কি আদ্যত্ত্বেও ঠিক? পুনরায় মন ভাঙার ব্যাথায় কাটরাতে হবে না তো তাকে? তাছাড়া মাহীন ওও তো তাকে ক্লিয়ার করে কিছু বলেনি। সেই বেশি ভাবছে না তো আবার?
রাত তখন বারেটার কাছাকাছি। মর্গে মান্সার আত্মা কেঁপে উঠছে।মৃত জিনিস সে সব থেকে বেশি ভয় পায়।
সন্ধ্যার পরে তাকে মর্গে রেখে যাওয়ার পরে সে একবার জ্ঞান হারিয়েছে।পুনরায় একাই ফিরেছ ঘন্টা খানিক পরে। মান্সা স্পষ্ট দেখতে পাচ্ছে মরা মানুষের মাথা গুলো। তার গাঁ গুলিয়ে আসছে। কই তাসফিকে রেখে যাওয়ার সময় তো লাশগুলোর মুখ ঢাকা ছিলো।তবে আজ কেন খোলা।

মান্সা সঙ্গে সঙ্গে বমি করে দিলো।
এই নিয়ে তিনবার বমি করলো সে।
তার নিজের বমির গন্ধে তার দম আটকে আসছে। নারি ভুরি সব বেরিয়ে আসতপ চাচ্ছে।
সে এখান থেকে নড়তেও পারছে না। তার শরীর ছেড়ে দিয়েছে দুর্বলতায়।মনে হচ্ছে লাশ গুলো তাকে হত্যা করতে এগিয়ে আসছে। কি বিভীষিকাময় রাত।

সূর্যের উত্তপ্ত হাওয়ায় আচ্ছন্ন বাতাবরণ।
আকাশে মেঘ নেই বৃষ্টি হওয়ার সম্ভাবনাও আজ ক্ষীণ।
ঘড়ির কাঁটায় সকাল নয়টার কাছাকাছি। তাসফি রেডি হচ্ছে কলেজে যাওয়ার উদ্দেশ্যে।
প্রতিদিনের মতো ছিমছাম বেশ ভূসা আজ তার নয়।
আয়নার সামনে দাঁড়িয়ে তাসফি খুব ভালো করে হিজাব বাঁধলো।অতঃপর যে কোনো দিন শ্বাস নিতে কষ্ট হওয়ার ভয়ে মাস্ক পরিধান করে নি সে আজ টাইট করে মুখে কালো রঙের মাস্কখানা পরিধান করে নিলো।
তার উজ্জ্বল ফোলাফোলা বুদ্ধিদ্বীপ্ত মুখশ্রী ঢাকা পরলো মুখশের আড়ালে।
নিজেকে ঘুরিয়ে ঘারিয়ে আয়নায় ভালো করে দেখলো। তাকে কি চেনা যাচ্ছে? উহু একদম যাচ্ছে না।
নিশ্চয়ই নিস্তব্ধ ওও তাকে চিনতে পারবেনা।
তাসফি এই বেশ ভুসা পরিবর্তনের কারণই তো হচ্ছে ওই অহংকারী পুরুষটা।
এতদিন তাকে দুঃছাঁই তাড়িয়ে দিয়েছে।অথচ সে ডিবোর্সের কথা বলতেই বেঁকে বসলো।
ওই লোকের সমস্যাটা কোথায়।
তারউপর তার দৃঢ় বিশ্বাস পরশু অজ্ঞান হওয়ার আগে নিশ্চয়ই কিছু বলেছে সে লোকটাকে।যার জন্য লোকটা আরো লায় পেয়েছে।

ইচ্ছে করছে নিজের গালে নিজে ঠাস করে মারতে।
কেন মনে পড়ছেনা তার।
সে নাকি আবার ওই অহংকারী পুরুষটাকে আষ্টেপৃষ্টে জরিয়ে ধরেছিল। ছিঃ ছিঃ।যাকে ডিবোর্স দিতে চাস তার সঙ্গেই এরকম করতে তোর লজ্জা লাগলো না।
তার উপর আবার তাসফির মনে নতুন করে প্রশ্নের দানা বেঁধে দিয়ে গেল কাল।
তাসফি নাকি তাকে সবসময় সব দেখিয়ে বেরায়।কবে? কখন? আশ্চর্য।
কাল কথার অবাধ্য হওয়ায় সে নিশ্চিত তাকে হাতের কাছে পেলে কাঁচা চিবিয়ে খেয়ে ফেলবে নিস্তব্ধ।
সে কারো কাঁচা আহার হতে মোটেও রাজি নয়।
তাসফি কে এমন গাঁট সাট হয়ে বের হতে দেখে কমলা বেগম মুখ লটকিয়ে বলতে লাগল,
-“দেখ নবাবের গিন্নি নবাবের সঙ্গে লুকোচুরি খেলতপ ধেই ধেই যাচ্ছে। তোমার নবাব তোমায় কতদিন লায় দেয় দেখবু আমি। যাও না যাও।”

তাসফি তার কথা পাত্তা না দিয়ে কলেজে এসে হাজির হলো।
তাসফির এমন অদ্ভুত বেশভুসা আশা সর্নিধি আর আরাধ্য গোল গোল চোখে দেখতে লাগলো।
তাসফিকে কেউ কালকের ঘটনা নিয়ে জিজ্ঞেস করছেনা কারণ কেউ জানেই না মেয়েটা তাসফি ছিল।
তাসফিকে যাতে বিভিন্ন প্রশ্নের সম্মুখীন না হতে হয় তাই এই ব্যবস্থা।
আরাধ্য তাসফিকে অবলোকন করে বলল,
-” কি ব্যাপার বলতো।এমন করে মুখে টেপ মেরে এসেছিস কেন। হ্যাসবেন্ড এর স্পেশাল আদর পেয়ে মুখে দাগ করেছিস নাকি। তাই এই নতুন সুরক্ষা সিস্টেম নাকি।
তাসফির হঠাৎই মনে পড়লো সেদিন বৃষ্টির রাতে নিস্তব্ধ’র কাছে আসা।স্পর্শ গভীর নয়।তবুও আজও ভাবলে তার গাঁ শিরশির করে উঠে।
অহংকারী লোকটার সামান্য ছোঁয়া ও তার কাছে তীব্র।
তাসফি চোখ গরম করে আরাধ্য’র দিকে তাকালো।
আরাধ্য মুখে আঙুল দিয়ে চুপ করার ভান ধরলো।
সর্নিধি বলল,

-” সে তোরা যাই বলিস মান্সা মেয়েটা একটি বেশিই বার বেড়েছিলো।কালকে খুব ভালো করে জব্দ হয়েছে।কাল অর্ধেক রাত কেমন করে মর্গে কাটিয়েছে।আমার জানতে খুব ইচ্ছে করছে।ইশশ নিজের চোখে যদি বেয়াদবটার তখনকার করুণ,আতঙ্কগ্রস্থ মুখটা দেখতে পেতাম বেশ হতো।”
আরাধ্য বলল,
-” আমি হলে তো ওর খাটো চুল গুলো কুটকুট করে কেটে ন্যাড়া করে দিতাম। নিজের চেহারা নিয়ে ভারী অহংকার তার। দেখতাম তখন সৌন্দর্যের বড়াই কোথায় যেত।”
আরাধ্য এমন কথায় ওরা ওর দিকে চোখ ছোট ছোট করে চাইলো।
আরাধ্য থতমত খেয়ে বলল,

-” কি ব্যাপার তোরা আমার দিকে এভাবে তাকিয়ে আছিস কেন?
-” এমনিই ভাবছিলাম ডাল মে কুচ কালা হোতা হে ক্যায়া।”
আরো কিছু টুকটাক কথা বার্তা চালালো তারা
ক্লাসের সময় হয়ে যাওয়ায় আরাধ্য আর সর্নিধি ক্লাসে ঢুকে গেল।
তাসফি ঢুকতে নিলে আশা তার হাত টেনে ধরলো।
তাসফি ভ্রু কুঁচকে চাইলো।
আশা ভ্রু নাচিয়ে বলল,
-” কি ব্যাপার বলতো তোর।”
-” কি ব্যাপার?”
-” নিস্তব্ধ স্যার কি তোর কোন আত্মীয় হয়?”
তাসফি শুষ্ক ঢোক গিলে বলল
-” কেন।হঠাৎ এমন প্রশ্ন? ”
-” ভাবছি।আত্মীয় না হলে তোকে সে পাগলের মতো কেন খুঁজবে হারিয়ে যাওয়ার পরে। আবার মানুষকে তোকে না পেলে বলবে।বলুন চাচা এই মেয়েটাকে দেখেছেন কি না আমার জীবনমরণের প্রশ্ন। কাহিনি কি সত্যি করে বলোতো মামা হুম হুম?”

আশা কথা শুনে তাসফি কিছুটা চমকে উঠলো।
অদ্ভুত চোখে তাকিয়ে বলল,
-” তুই এই কথা কোথা থেকে শুনেছিস পাখির বাসা।”
-” কই থেকে শুনবো আবার দারওয়ান চাচাই তো বলেছে।সবাই জানে এ কথা।শুধু তোকেই চেনে না।
এবার বল কানিহি কি।”
তাসফি তাড়া দেখিয়ে বলল,
-” দূর কি কাহিনি থাকবে।তুই ও না। ফালতু কথা বন্ধ করে ক্লাসে আয়। আর সে কাকে কি বললো তাতে তো আমার কিছু আসে যায় না তাই না।সো এসব প্রশ্ন আমায় আর মোটেও করবি না পাখির বাসা।”
আশা বুদ্ধিদ্বীপ্ত চোখে তাসফিকে পরখ করলো।
কিছু একটার গন্ধ তো সে পাচ্ছেই।
আশা ক্লাসে এসে আরাধ্য আর সর্নিধিকে চোখের ইশারা দিলো।
সর্নিধি তাসফিকে হাত দিয়ে খোঁচা মেরে বলল,

-” কিরে তোর না তোর বরকে দিয়ে ট্রিট দেওয়ার কথা ছিল।আজ নাহয় কাল কিন্তু চাই।”
তাসফি আমতাআমতা করে বলল,
-” সে দেখা যাবে।ট্রিট নাহয় আমি দিয়ে দেব।তার সময় হবে না বুঝলি।”
-” কি এমন কাজ করে তোর বর যে সমান্য সালীদের ট্রিট দিতে আসতে পারবেনা। ছবি তুলতে পারবে না।হুহ।”
তাসফির উত্তর দেওয়া আগেই নিস্তব্ধ ক্লাসে ঢুকলো।
ক্লাসে ঢুকে সবার প্রথমে সে তার বউকে খুঁজতে এদিক ওদিক চোখ বুলালো।
কিন্তু তার হদিশ পেল না। কিন্তু তার জানা মতে তো আজ তাসফি এসেছে তবে কোথায়।
নিস্তব্ধ যেন তাকে দেখতে না পায় তাসফি আরো জড়সড় হয়ে আশার দিকে চেপে বসলো।
আশা তাতে বড্ড বিরক্ত হলো।মেয়েটার কান্ডকারখানা তার বুঝে আসছেনা।
পর পর দু ক্লাস শেষে নিস্তব্ধ আশা কে করিডরে দেখতে পয়ে বলল,

-” তোমার বান্ধবী আজ আসে নি।”
-” কার কথা বলছেন স্যার? তাসফি? ”
-” হ্যাঁ ওই।”
আশা দূরে দাঁড়িয়ে তাকা তাসফিকে দেখিয়ে বলল,
-” এসেছে তো স্যার ওই যে দেখুন। ”
নিস্তব্ধ অদ্ভুত চোখে তাকে দেখে বলল,
-” কালো হিজাব পড়া?”
আশা মাথা দুলালো।
নিস্তব্ধ অবাক চোখে চেয়ে রইলো।
তাসফির কোনো কার্যকলাপ সে বুঝতে পারছেনা। দিন দিন মেয়েটা বড্ড অবাধ্য হচ্ছে।
কিন্তু বউ এমন অবাধ্য হলে তো ভারী জামেলার।

সময়গুলো বড় স্বার্থপর।সঙ্গে তীব্র স্বার্থপর নিস্তব্ধ’র অর্ধাঙ্গিনী।এরপর দীর্ঘ দুইটি দিন তাসফির দেখা পায়নি সে।
দেখেছে তবে সেই দেখা কে দেখা বলে মোটেও আক্ষায়িত করা যায় না।
সর্বক্ষণ মুখে মাস্ক মাথায় হিজাব।
নিস্তব্ধ ক্লাসে ঢুকলে সে নিজের মাথা গোজে বেঞ্চের ভাঁজে।সে সিঁড়ি দিয়ে উঠলো তাসফি উল্টো দিকে হাঁটা দেয়।
নিস্তব্ধ’র মেজাজ বেজায় ক্ষিপ্ত হয়ে আছে।নিস্তব্ধ যদি বোকা মেয়েটাকে এই মুহুর্তে সামনে পেত তবে নিশ্চিত তাকে আগ্নেয়গিরির উত্তপ্ত লাভার মাঝে ছুড়ে ফেলতো।তার সঙ্গে লুকোচুরি খেলা সে হারে হারে বোঝাবে।
নিস্তব্ধ’র কেবিনে নক হতেই তার ভাবনাচূত হলো।
দরজা ঠেলে আশা ভেতরে ঢুকলো।
আশা ভয়ে ভয়ে বলল,

-” আমায় ডেকেছিলেন স্যার?”
-” হ্যাঁ বসো।”
আশা দুরুদুরু বুকে সামনের চেয়ারে বসলো।সে আবার কোনো অন্যায় করেনি তো অজানতে।
নিস্তব্ধ গম্ভীর স্বরে বলল,
-” তোমায় একটু সাহায্য করে দিতে হবে।কি পারবেনা?”
-” আমি কিভাবে আপনাকে সাহায্য করতে পারি স্যার?”
নিস্তব্ধ আশাকে সবটা বুঝিয়ে বলল। আশা সবটা মনোযোগ দিয়ে শুনলো।
নিস্তব্ধ বলল,

-” কি পারবেনা?”
আশা সয়তানি হেঁসে বলল,
-” পারবো বাট এতে আমরা কি পাবো স্যার।”
নিস্তব্ধ রহস্যময় ভাবে বাঁকা হেঁসে বলল,
-“তোমরা কি পাবে? উমম! স্পেশাল সারপ্রাইজ। সঙ্গে দ্রুত খালামনি ডাকটাও শুনতে পারো।”
আশা হতভম্ব চোখে চেয়ে রইলো।
নিস্তব্ধ ঘুরিয়ে পেঁচিয়ে কথার কিছুই বোধগম্য হলো না তার।
তাসফির সঙ্গে খালামনি ডাক শোনার কানেকশনটা কোথায়।আশ্চর্য!

আশা বাড়ি ফিরে নিস্তব্ধ’র কথা মতো কাজ করলো।
তাসফিকে কল দিলো।ফোন রিসিভ হতেই সে,
উৎফুল্লতার ভান করে বলল,
-” এই তাসফি তোকে যেই নিস্তব্ধ স্যারের নোট টা দিয়ে ছিলাম নিয়ে আসিস তো।আগামী দুদিন স্যার কোথায় যাবে। কলেজে থাকবেনা। পড়া গুলো করে নিতে পারবো।এত প্যারা ভালো লাগে না আর। তুই কাল আসবি তো।প্রথম দুটো ক্লাস কিন্তু নেই।”
নিস্তব্ধ আসবে না শুনে তাসফির মনে ময়ূর ডানা মেলে নাঁচছে।ইশশ কাল সে মাস্ক ছাড়াই কলেজে যেতে পারবে৷ ভেবেই কি আনন্দ যে হচ্ছে না।
তাসফি প্রফুল্লচিত্তে বলল,
-” অবশ্যই অবশ্যই যাবো।”

পরদিন,
সুজন, মাহীন, সৃজন, আয়ানা আর আরশী বসে আছে একটা ক্যাফেতে।
একজন আরেকজন কে খোঁচাচ্ছে।
মাহীন বলল,
-” এখনো আসেনি।এই আরশী তুই একটু আগে ভাগে সব কথা প্রাক্টিস করে নে না।
আরশী অবাক হয়ে বলল,
-” আমি প্রাক্টিস করবো মানে কথাগুলো কি আমি বলবো নাকি। বলবে তো আয়ানা।”
আয়ানা আশ্চর্য কন্ঠে বলল,
-” আমি কখন বললাম বলবো।”
সুজন সব কটা কে ঝাড়ি মেরে বলল,
-” কি যুদ্ধ লাগিয়ে দিয়েছিস তোরা। একটা পিচ্চি মেয়েকে সামান্য কটা কথা বলবি তাই তোরা এত
ঘরি মসি করছিস। ”
আয়ানা দাঁত কেলিয়ে বলল,

-” তবে তুই বলিস সব কেমন।”
সুজন মুখ কাচুমাচু করে ফেলল।
আরশী কিছু বলতে যাবে তার আগেই সৃজন তাকে থামিয়ে বলল,
-” ওকে ওকে থাম গাইস।কাউকে কিছু বলতে হবে না যা বলার আমি বলবো।”
সুজন ঠাস করে সৃজনের গালে কিস করে দিয়ে বলল,
-” এইজন্যই তো তোকে এতবুদ্ধিমান বলি। কেমন আমাদের সব প্রবলেম সলভ করে দিস।”
সৃজন নাক ছিটকে বলল,

ধূসর রংধনু পর্ব ৩২

-” ছিঃ।মেয়েদের মতো এমন গায়ে পড়া স্বভাবের হয়েছিস কেন তুই। আমার বউয়ের চুমু খাওয়ার যায়গায় তুই কেন চুমু কেলি।বেআক্কল। ”
সুজন দাঁত কেলিয়ে হাসলো।
ওদের কথার মাঝের উক্ত রমণী ক্যাফের দরজা ঠেলে ভেতরে ঢুকলো।
রমণীকে ভেতরে আসতে দেখে ওরা সবাই আঁটসাট হয়ে বসলো।

ধূসর রংধনু পর্ব ৩৪