ধূসর রংধনু পর্ব ৪১

ধূসর রংধনু পর্ব ৪১
মাহিরা ইসলাম

তাসফি মাত্রই কলেজ থেকে নিজ বাসায় ফিরলো।
ফ্রেস হয়ে এসে ফোনটা হাতে নিয়ে ড্রয়িংরুমে বসলো।
ওমনি কমলা বেগম লাঠিতে ভর দিয়ে হেঁটে এসে তাসফির সামনে দাড়ালো।
লাঠি দিয়ে তাসফির পায়ে খোঁচা দিলো।
তাসফি ভ্রু নাচিয়ে বোঝালো কি সমস্যা।
কমলা বেগম সোজাসাপ্টা বললেন,

-” এই যে নবাবের বধূ, সোয়ামীর লগে শ্বশুর বাড়ি যাইবা কবে কও দিহি?”
তাসফি ফোন স্ক্রল করতে করতে নির্লিপ্ত কণ্ঠে সুধালো,
-” সেয়ামীর লগে শ্বশুর বাড়ি যাবো না বুড়ি। তোমার সোয়ামীর লগে যাবো।”
কমলা বেগম ক্ষেপে গেল,
-“তবে রে। তুই মোর সোয়ামীর লগে যাবি।ম্যাইয়া কয় কী।”
ততক্ষণাৎ নিস্তব্ধ’র কল এলো তাসফির ফোনে।
তাসফি দুষ্টু হেঁসে ফোন রিসিভ করে কানে ধরলো। ওপাশ থেকে নিস্তব্ধ’র কন্ঠ ভেসে এলো,
-” কি করছেন মিসেস।”
কমলা বেগম বলে উঠলেন,
-” এহুনি তোর ওই যন্ত্রর খানা দিয়া ফোন লাগা তোর সোয়ামীরে।ইস্তব্ধ ব্যাটারে বল তোরে আইসা নিয়া যাওনের লাইগ্যা।সারাক্ষণ তোর তিড়িংবিড়িং আর দেখতে পারমু না মোরা। নিজের আমানত তোমার নবাব নিজেই বুইঝা নেক।”

আরও গল্প পড়তে এখানে ক্লিক করুন 

ওপাশ থেকে নিস্তব্ধ এসব অদ্ভুতুরে কথা শুনে হতভম্ব হয়ে বসে পরলো।
বেচারা কেবলি চায়ের কাপে চুমুক দিচ্ছিলো নিজের চেম্বারে জানালার কাছে দাঁড়িয়ে।
সঙ্গে নিজের নামের এমন বিকৃতি শুনে তার কাশি উঠে গেল।বিতৃষ্ণায় মিষ্টি চাও তেঁতো হয়ে গেল ক্ষণকালের জন্য।
কমলা বেগম আবারো বলে উঠলো,
-” কি হইলো ফোন লাগা।টিহা আমি দিমু।আগে তোরে বিদায় কইরা নিবো।”
নিস্তব্ধ করুণ স্বরে বলল,
-” মিসেস ইয়াসার আপনি কি একটু দূরে গিয়ে কথা বলতে পারবেন ?”
তাসফি মাথা নেড়ে বলল,

-” উহু।পারছি না। আমার পায়ে ভীষণ ব্যাথা বুঝলেন তো।
শয়তানি হেঁসে দাদির উদ্দেশ্যে বলল,
-” নাও বুড়ি নাও। কথা বলো তোমার ইস্তব্ধের সাথে।নাও বলো বলো।”
ওপাশ থেকে নিস্তব্ধ আঁতকে উঠে উত্তেজিত কন্ঠে তাসফিকে শাসিয়ে বলল,
-” খবরদার যদি দাদির কাছে ফোন দিয়েছো তুমি।
একটা হাড় ওও আস্ত রাখবোনা তোমার।কথাটা মাথায় রেখ।”
-” আমার কি দোষ বলুন দেখুন দাদি নিজে থেকেই কত আকুতি করছে।এই নাও দাদি।
নিস্তব্ধ সঙ্গে সঙ্গে খট করে কলটা কেঁটে দিলো।
হঠাৎ করে তার ধানিলঙ্কা বউ, কি করে যে ঝাল থেকে টক হয়ে গেল তাই বুঝে আসছেনা তার।
ঝালই তো ভালো ছিলো। উফফ!

সুজনকে এই অবস্থায় দেখে আশা ড্যাবড্যাব করে চোখ মেলে তাকিয়ে আছে।
সুজন আশার দিকে এগিয়ে হাত উঠাতে গেলে আশা চেঁচিয়ে বলল,
-” স্যার, স্যার আপনার তোয়ালে,আপনার তোয়ালে।”
সুজন তোয়ালে শক্ত করে ধরে লাফিয়ে উঠে বলল,
-” কোথায় কোথায়?”
আশা খিলখিল করে হাঁসতে লাগলো।
সুজন আশা দিকে তেড়ে এলো। রাগে দাঁত কিড়মিড় করে বলল
-” ইডিয়েট। অভদ্র, অসভ্য মেয়ে মানুষ। তুমি আমার রুমে কি করছো।
বের হও। বের হও।এখনি বের হও।নির্লজ্জ,বেশরম, বেহায়া মেয়ে।”
সুজন আশার ডান হাতের কব্জি ধরে টেনে বের করে দিলো রুম থেকে।
সুজনের পুরুষালী হঠাৎ স্পর্শে আশা থমকে গেল।কেঁপে উঠলো সে খানিকটা।
সুজন ঠাস করে তার মুখের সামনে দরজা লাগিয়ে দিলো।
আশা হতভম্ব হয়ে দাঁড়িয়ে রইলো।

সে কি ভেবে এসেছিলো আর কি হচ্ছে। হায় খোদা।
সুজন বিরবির করে গালি ছুরলো আশার উদ্দেশ্যে। অসভ্য মেয়ে তার পেস্টিস পান্চার করতে তার বাড়ি পর্যন্ত চলে এসেছে।আশ্চর্য।
এই জন্যই বাসার এড্রেস চাওয়া হচ্ছিলো।
আশা এখনো থ মেরে দাঁড়িয়ে আছে দরজার সামনে।
দু মিনিটের মাঝে সুজন দরজা খুললো পোশাক পরিধান করে।
আশা কে এখনো দেখে ভ্রু কু্ঁচকে রাগী স্বরে জিজ্ঞেস করলো,
-” তুমি এখনো এখানে খাম্বার মতো দাঁড়িয়ে কি করছো।যাও নি।”
রাহেলা বেগম তখন আবার ফিরে এলেন।
আশার উদ্দেশ্যে বলতে নিলো,

-” কি ব্যাপার তোমার নোট পেলে মা?”
সুজন কে দেখে সুধালেন,
-” ওমা সুজন তুই কখন এলি।”
সুজন আড় চোখে আশা দেকে নিয়ে বলল
-” এসেছি খানিকক্ষণ আগে
এসেই বোধহয় বড্ড ভুল করেছি।”
আশা আন্টির সামনে ভদ্রবাচ্চার মতো কাচুমাচু ভঙ্গিতে দাঁড়িয়ে রইলো।
রাহেলা বেগম বললেন,
-” সে যাইহোক।ওর নাকি কি নোট এনেছিলিস।দিয়ে দেনা মেয়েটাকে।কত কষ্ট করে মেয়েটা এতটা পথ এসেছে।”
সুজন অবাক কন্ঠে সুধালো” কিসের নোট মা?”
আশা মনে মনে দোয়া পরছে এই রে।
আশা সঙ্গে সঙ্গে বলল,

-” আন্টিইইই।নোট পেয়ে গেছি।”
রাহেলা বেগম সরল মনে খুশি হয়ে বলল,
-” ওহ তাহলে তো হলোই।আসো আসো নিচে আসো।কিছু তো খেলেই না।”
আশা গুটি গুটি পায়ে রাহেলা বেগমের পিছু যেতে নিলে হুট করেই সুজন তার হাত টেনে ধরলো।
-” দাঁড়াও।”
আশা চোখ বন্ধ করে ঠাই দাঁড়িয়ে রইলো।
সুজন চোখ ছোট্ট ছোট্ট করে প্রশ্ন করলো,
-” তুমি কেন হঠাৎ আমার আমার বাড়িতে এসেছো।
দেখ মিথ্যা একদম বলবেনা। তারওপর আমার রুমে কি করতে এসেছিলে?”
আশা কাঁদোকাঁদো মুখ করে সুজনের দিকে চাইলো।
সুজনের ধরে রাখা হাতের বাঁধন খানিকটা হালকা হতেই আশা নিজের হাত ঝাড়া দিয়ে ছুট দিলো।
সুজন চেঁচিয়ে উঠলো,

-” এই মেয়ে কোথায় যাচ্ছো দাঁড়াও।”
আশা ততক্ষণে গেট পার হয়ে গেছে।
সুজন নিচে আসতেই রাহেলা বেগম সুধালেন,
-” কিরে তোর ছাত্রী মেয়েটা কই? কি যেন নাম হ্যাঁ আশা।ভারী মিষ্টি মেয়ে জানিস।”
সুজন নির্লিপ্ত কন্ঠে বলল,
-” চলে গেছে।”
-” ওমা সেকি।চলে গেল?নিশ্চয়ই তুই বকাবকি করেছিস। ”
সুজন মায়ের দিকে বিরক্তি নিয়ে চাইলো,
-” মা।ওও কি বসে থাকার জন্য এসেছে।আজব।”
রাহেলা বেগম প্রফুল্ল চিত্তে সুজনের হাত টেনে ধরে
সোফায় নিয়ে বসালেন।
ছেলের মাথায় আদুরে হাত বুলিয়ে বললেন,

-” রাগ করিস না বাপ। এই মেয়েটার বয়স কত রে? ভারী মিষ্টি দেখতে মেয়েটা৷ কি সুন্দর করে কথা বলে।
আমার কত প্রশংসা করলো জানিস।
এই মেয়েটা তোকে পছন্দ করে নাকি রে।
মেয়েটাকে কিন্তু আমার ভারী পছন্দ হয়েছে জানিস। এরকম মিষ্টি একটা মেয়েকে আমার পুত্রবধু করে আনলেও তো পারিস।”
সুজন হতভম্ব হয়ে মায়ের দিকে চাইলো।

-” মা.. তোমার মাথা ঠিক আছে তো? ওও আমার ছাত্রী। কি বলছো এসব।”
-” কি বলছি মানে।খারাপ কি বলেছি। তোর বন্ধু নিস্তব্ধ বউ তো তারই ছাত্রী। তো সমস্যা কোথায়।”
সুজন উত্তেজিত হয়ে বোঝানোর তাগিদে বলল,
-” উফফ মা! ওর আর আমার ব্যাপারটা আলাদা।আর তুমি জানো ওও মিষ্টি মেয়ে? একনম্বরের বজ্জাত মেয়ে। সারাক্ষণ আমার পিছে লেগে থাকে ভুল ধরতে।”
-” তো তুই ভুল করলে তোর ভুল ধরবে না?
আরে মানুষ ভুল করলে তো ভুল ধরিয়া দেওয়া খারাপ কাজ নয়।”
সুজন মায়ের দিকে করুণ চোখে চাইলো।তার দ্বারা আর মাকে বোঝানো সম্ভব নয়।
সে বাবার দিকে চাইলো একটু বুক ভরা আসা নিয়ে।
তিতাস সাহেব ছেলের চাউনি দেখে গলা খাঁকারী দিয়ে কিছু বলতে নেবে তার আগেই রাহেলা বেগম রাগী চোখে তাকিয়ে বললেন,

-” তুমি চুপ থাকো। আমাদের মা ছেলের মাঝে একদম আসবেনা।”
ভদ্রলোক ভদ্র পুরুষের মতো মুখের সামনে পেপার ধরলেন।
তার বরং পেপার পড়াই ভালো।যেচে পরে যুদ্ধে নামার কি দরকার বলেন।
পেপার পড়াতেই তার শান্তি।
যুদ্ধ করে জেতার বদলে হারটাই তার বেশি হয়। তার চেয়ে এটাই ভালো।
-” ধ্যাত।”
সুজন উঠে চলে গেল।
-” আরে কোথায় যাচ্ছিস শোন না।”
রাহেলা বেগম স্বামীর দিকে তাকিয়ে বলল,
-” কি হলো তুমি কিছু বলতে পারলেনা। পুরো কথা শেষ না হওয়ার আগেই ছেলেটা চলে গেল তোমার চোখের সামনে দিয়ে।”
ভদ্রলোক অবাক কন্ঠে সুধালেন,

-” আমি কি বলবো।তুমিই তো চুপ থাকতে বললে।”
-” এই তোমরা বাপ ছেলে না এককে বারে এক রকম।আগে নিজে আমায় জ্বালিয়েছো, পুড়িয়ে কয়লা করেছো। ছেলে এখন আমায় পুনরায় জ্বালিয়ে ছাঁই করতে নেমেছে।”
ভদ্রলোক বিস্ফোরিত দৃষ্টিতে দিয়ে স্ত্রীর দিকে চেয়ে রইলেন।
তার কথা বললেও দোষ।না বললেও দোষ।সে যাবে টা কোথায়।

সন্ধ্যার অনেকটা পরমুহূর্ত।। পুরো আকাশ জুড়ে তখন অন্ধকারের চাদর মুড়ি দিয়েছে।সেই অন্ধকার ছাপিয়ে আজ চাঁদমামা নিজেকে প্রকাশে আনতে বার্থ।
তাসফি বসে আছে বেলকনি তে। বেলকনির লাইট অফ।রুমের মাঝের সাদা আলো এসে উঁকি দিয়েছে সেথায়।তার হাতে একখানা চিরকুট।
দু লাইনের চিরকুট তবুও তাসফির হৃদগহিনে বারংবার অসংখ্য প্রজাপ্রতি ডানা মেলে নাচছে। দুলাইন যেন হাজার কথার অসংখ্য বুলি।
যা বলে শেষ করার নয়।

চিরকুট খানা সে পেয়েছে বেলকনিতেই।কে, কিভাবে, কখন রাখল তা তার জানার আগ্রহ নেই।কারণ সে তো চিনে এই পরিচিত হাতের লেখা, আবছা প্রণয়ের বর্ণমালার ধরণপ্রনালী।
হৃদয়মাঝে অনুভূতি লুকিয়ে আবছা চিরকুট তো তাকে একজনই দিতে পারে। কে সে?
তাসফি মিষ্টি হাসলো।
তার হাঁসিতে ঝরে পড়লো যেন স্বচ্ছ মুক্তকণা।
তাতে রয়েছে আনন্দ অশ্রু।
তাসফি সেই আবছা আলোয় দুরুদুরু বুকে চিরকুট খানা পুনরায় মেলে ধরলো।
” মেয়ে তোমায় ভেবেছিলাম তুমি মোর জীবনের ধূসর রংধনু। তবে কেমন করে হঠাৎ ধরা দিলে রঙিন রংধনুর ন্যায়। এর উত্তর কি বলিতে পারিবে হে দুষ্টু রমণী?”
তাসফি হাসলো।ফিসফিস করে বললো,

-” উহু পারবো না তো।কি করে পারবো বলুন।আমি নিজেই তো সে বিষয়ে অবগত ছিলাম না।কোন ক্ষণে, কোন লগ্নে এই হৃদয় সঁপেছি আপনার তরে,তা তো এই তাসফি নিজেও বলিতে পারিবো না।”
অদূরে দাঁড়িয়ে সেই যুবক তার প্রিয়তমার হাঁসির সঙ্গে ঠোঁট নাড়ানোর আবছা ভাব অবলোকন করছে।
প্রিয়তমার হাসিতে তার মুখেও ছড়িয়ে পরছে উজ্জ্বলতার লেশ।
অন্ধকারে যুবকের অবয়ব একদম অস্পষ্ট
যুবকে ফিসফিসানো অনুরোধেই বোধহয় চাঁদ মামা আজ লুকিয়েছে নিজ গৃহে।
ভালোবাসা কাছে গিয়ে প্রকাশের চেয়ে লুকিয়ে চুরিয়ে দূর হতে দেখেই যেন এক অদ্ভুত আনন্দানুভুতি।
প্রেয়সীর কাছে গেলে সব গুলিয়ে যায়। অনুভূতি প্রকাশের ধরণ মুর্ছা যায়। হৃদয়ে সাজানো হাজারো কথা এক লহমায় কি করে ভুলে যায় সে?

নারীস্পর্শে সে শুধু তখন চায় স্বর্গ সুখ।আর যে কোনো দিকে খেয়ালই যেন থাকেই না।
তখন কি করে করবে ভারী বর্ণমালা সাজিয়ে গুছিয়ে ভালোবাসার প্রকাশ। সে নিজেই তো হয়ে হয়ে যায় অগোছালো। তবে তবে পরপর শব্দের ঝুলি সাজাবে কেমন করে।
এই যে সে দূর হতে সে তারে দেখছে। আর হৃদয়ে অনুভব করছে।ভালোলাগার এক অসীম সীমানা তার বুকে তৈরী হচ্ছে। এও বা কম কিসে।
কাছে গিয়ে সবসময় শরীর স্পর্শ করে সব করতে হবে এমন তো কোনো কথা নেই।
সে একটু বাসুক না ভিন্ন রকম ভালো।

লুকিয়ে ভালোবাসবে, কাছে গিয়ে বাসবে।আদর করে বাসবে। সব ভালো তো সেই বাসবে।
ভালোবাসা একরকম হলে তাতে একঘেয়েমি চলে আসে যে।কখনো কখনো ভিন্নতার প্রয়োজন।
অপরজনকে ভরকে দেওয়া প্রয়োজন।হঠাৎ হঠাৎ অদ্ভুত কাজ করে তার কৌতূহল বাড়ানো প্রয়োজন।
তবেই তো তোমার প্রতি তার জানার কৌতুহল বাড়বে।আগ্রহ দীর্ঘ হবে।
তাসফি দৌড়ে রুমে গেল।
সুন্দর একখানা কাগজে তার ফিসফিসানোর কথা ঝুলি তাতে আবদ্ধ করে রাখলো।পাছে যদি সে তা ভুলে যায়।
অন্ধকারে যুবক সেথায় দাঁড়িয়ে রইলো দীর্ঘক্ষণ যতক্ষন পর্যন্ত না তার প্রেয়সী নিদ্রাগত হচ্ছে।

-” আপনি কি একটিবার বেলকনি তে আসতে পারবেন বাসন্তী? প্লিজ।”
সময় তখন এগারোটার ঘর পার করেছে। বাসন্তী খানিকক্ষণ আগেই ঘুমিয়ে পরেছিল।হঠাৎ মাহীনের ফোনকলে পেয়ে জেগে গিয়েছে।
মাহীনের এমন আবদারে সে ভীষণ অবাক হলো।মনে উদ্বেগ হলো প্রশ্নের দানা।
উত্তেজনায় সে ততক্ষনাৎ দৌঁড়ে গেল বেলকনিতে।
বাউন্ডারি পেরিয়ে অপরপাশের রাস্তায় ল্যাম্পোস্টের আলোয় সে স্পষ্ট দেখতে পেল মাহীনের পুরুষালী অবয়ব।
মাহীন অপলোক তাকিয়ে রইলো তার প্রিয়তমার পানে।
মাত্রই ঘুম থেকে ওঠায় তার চোখমুখের ফোলাভাব দৃশ্যমান। কোমর ছুঁই ছুঁই চুলগুলো এলোমেলো।
দৌঁড়ে আসার দরুণ তার গায়ে ওড়না নেই।
মাহীন মুঁচকি হাঁসলো।
মাথা নিচু করে ফোনে ফিসফিস করে বলল,

-” গায়ে ওড়না জরিয়ে আসুন বাসন্তী। নয়তো আমি পাগল হবো নিশ্চিত। ”
বাসন্তী তখনও ফোন কানে ধরে ছিল।
মাহীনের কথার মর্মার্থ বুঝতে পেরে লজ্জায় বাসন্তী ততক্ষণাৎ পিছু ঘুরে রেলিংয়ের সঙ্গে পিঠ ঠেকালো।
তার বুকের ধুকপুকানি বেড়েই চলেছে ক্রমে।
সে দৌঁড়ে রুমে গিয়ে ঠাস করে বেলকনির দরজা লাগিয়ে দিলো।
বাসন্তী কাঁপা কাঁপা কন্ঠে বলল,
-” তুমি বাড়ি চলে যাও মাহীন। প্লিজ। ”
মাহীন ওপাশ থেকে আর্তনাদ করে বলল,

-” আমি কিন্তু এমনটা একদমি আশা করিনি বাসন্তী। আপনাকে দেখতে ইচ্ছা করছিলো ভীষণ।
তাই তো ছুটে এলাম।তবে কি করে পাষান্ডের মতো বলছেন এই তৃষ্ণা না মিটিয়ে ফিরে যেতে।
এতটা সার্থপর হবেন জানলে তো তবে পাগল হলেই ভালো হতো।”
বাসন্তী কল কেটে দিয়ে ফোনটা বুকে চেপে ধরলো।
নাহ এ অনুভূতির সঙ্গে সে লড়াই করতে আর পারছে না। অসহ্য অনুভুতি সামাল দিতে সে ব্যর্থ।
কেন সে মাহীনকে প্রশয় দিচ্ছে। সে তো সব বুঝতে পারছে। সে তো এতটাও বোকা বা অবুঝ নয় যে একজন প্রেমিকের চোখের ভাষা,চাউনির মানে,
গভীর কথার সারমর্ম সে বুঝবেনা।
তবে তার হৃদয় কি চায়?

বাসন্তী গুটিগুটি পায়ে এগিয়ে গেল জানালার দিকে।অন্ধকার রুমের থাইগ্লাস দিয়ে সে স্পষ্ট দেখতে পেল সেই কাঙ্ক্ষিত পুরুষালী অবয়বের।
মাহীন নিষ্পলক তাকিয়ে আছে সে দিকেই।
বাসন্তী চোখ বন্ধ করে নিলো।

ধূসর রংধনু পর্ব ৪০

রাত তখন গভীরতার চাদরে মোড়া।তাসফি আলোকিত রুম হঠাৎ অন্ধকারের গাঢ় চাদরে মুর্ছা গেল।আবার হঠাৎ করে জ্বলে উঠলো কমলা রঙা ডিম লাইট।
ঘুমের মাঝে তাসফি অনুভব করলো তাকে জরিয়ে রাখা গভীর পুরুষালী বেষ্টনীর।
উষ্ণতা পেয়ে তাসফি সে অবয়ব কে আরো আষ্টেপৃষ্টে জরিয়ে ধরলো।

ধূসর রংধনু পর্ব ৪২