ধূসর রংধনু পর্ব ৪২
মাহিরা ইসলাম
তাসফি আলোকিত রুম হঠাৎ অন্ধকারের গাঢ় চাদরে মুর্ছা গেল।আবার হঠাৎ করে জ্বলে উঠলো কমলা রঙা ডিম লাইট।
ঘুমের মাঝে তাসফি অনুভব করলো তাকে জরিয়ে রাখা গভীর পুরুষালী বেষ্টনীর।
উষ্ণতা পেয়ে তাসফি সে অবয়ব কে আরো আষ্টেপৃষ্টে জরিয়ে ধরলো।
শক্তপোক্ত পুরুষালী স্পর্শে তাসফির ঘুম কিছুটা হালকা হলো।তার ভ্রুদ্বয় কিছুটা কুঞ্চিত হলো।
মস্তিষ্কে নিউরনে অযাচিত কিছু বার্তা পৌঁছাতেই সে ঝট করে চোখ মেলে চাইলো।
চোখের সামনে চেনা পুরুষকে এত কাছে দেখে চোখ বড় বড় করে ফেললো।
মুহুর্তেই ছুট পাওয়ার তাড়নায় মোচড়া মুচড়ি শুরু করলো।
নিস্তব্ধ তাকে নিজের সঙ্গে আরো খানিকটা মিশিয়ে নিলো।
দুহাত শক্ত করে ধরে ফিসফিস করে বলল,
-” উহহ! এত নড়াচড়া করবেন না ম্যাডাম।ঘুমাতে দিন। প্রমিস করছি আপনাকে একটুও ডিস্টার্ব করবো না।শুধু হালকা একটু জরিয়ে রাখবো।”
তাসফি রাগী চোখে চাইলো।
কতবরলড় মিথ্যুক পুরুষ মানুষ জরিয়ে রেখেছে শক্ত করে অথচ বয়ান দিচ্ছে হালকার।
তাসফি ক্ষেপে গিয়ে বলল,
-” ছাড়ুন। এই আপনি আমার রুমে এলেন কি করে বলুন তো।অসভ্য ডাক্তার ছাড়ুন। ”
-” বাহ নিজে করলে কিছু না। আমি করলেই দোষ।”
তাসফি অবাক কন্ঠে বলল,
আরও গল্প পড়তে এখানে ক্লিক করুন
-” আমি কি করলাম?”
-” কি করলে মানে।নিজে তো ভারী ফায়দা লুটছিলে।এখন সব আমার দোষ।”
-” কখনো না। আপনি কিভাবে এলেন। দরজা তো বন্ধ। ”
নিস্তব্ধ দুষ্টু হেঁসে বলল,
-” এভাবে প্রতিদিন বেলকনির দরজা খোলা রেখে ঘুমালে চোর এসে চুরি করে নিয়ে গেলেও তো বুঝবেনা।ভাগ্যিস আমি ছিলাম।নাহলে তো অকালেই বউকে ডাকাতের মুখে ছেড়ে দিতে হলো।”
তাসফি চমকে উঠে বলল
-” বেলকনির দরজা খোলা রেখেছিলাম নাকি?”
-” আজ্ঞে। ”
তাসফি ঝট করে নিস্তব্ধ’র থেকে নিজেকে ছাড়িয়ে নিয়ে উঠে বসলো।
নিস্তব্ধ’র হাত ধরে টেনে বলল,
-” বের হন।এখুনি বের হন আপনি।”
শত টেনেও তাসফি ওই শক্ত সামর্থ দেহ কে একফোঁটা নাড়াতে পারলো না। হাঁপিয়ে উঠলো।উল্টো হাফ ছেড়ে বসে পড়লো।
নিস্তব্ধ হাঁসলো।
রসাত্নক কন্ঠে বলল,
-” কি ব্যাপার ম্যাডামের হাওয়া ফুস।”
-” চুপপ।”
নিস্তব্ধ জোড়ে হাঁসতে নিলো তাসফি সঙ্গে সঙ্গে উঠে তার মুখ চেপে ধরলো।
নিস্তব্ধ তখনো হাসছে।
তাসফি দাঁতে দাঁত চেপে বলল ,
-” বেআক্কল এর মতো দাঁত কেলাচ্ছেন কেন।এত হাঁসি আপনার আসে কো থেকে। উফফ চুপ করুন না।চাঁচি জেগে যাবে তো।আপনাকে এখন দেখতে পেলে আমাকে কতটা লজ্জায় পড়তে হবে ভাবতে পারছেন। প্লিজ যান না।
নিস্তব্ধ মাথা নাড়লো।
-” কি?”
-” যেতে পারি একটা শর্তে।”
তাসফি ভ্রু কুঁচকে জিজ্ঞেস করলো,
-” কি শর্ত?”
-” দিতে হবে।”
তাসফি অবাক কন্ঠে বলল,
-” কি?
-‘ তখনকার মতো স্পেশাল মধু।”
তাসফি চোখ ছোট ছোট করে চাইলো। অসভ্য লোক সবসময় ধান্ধা নিয়ে চলে।সে মুখ ঘুরিয়ে বলল,
-” অসম্ভব। ”
নিস্তব্ধ জেদ ধরে বসলো।
-” তবে আমিও যাচ্ছি না।”
বলেি সে আবারো বিছানায় গাঁ এলিয়ে দিলো আরামদায়ক বিছানায়।
তাসফি কোমরে হাত রেখে নিস্তব্ধ’র দিকে রাগী চোখে তাকিয়ে রইলো।
হালছেড়ে মুখ কাচুমাচু করে বলল।
-” ঠিকআছে। তবে আমারও শর্ত আছে।”
-” হোয়াট?”
-” বেলকনি তে।”
নিস্তব্ধ চতুর হাসলো।বাহ বউ তার ভীষণ চালাক।
নিস্তব্ধ হাত উচিয়ে তা মেনে নিলো।
চলল বেলকনিতে, তার পিছু পিছু তাসফিও এগুলো।
রুমে লাইট বন্ধ বিধায় পুরো বেলকনিও অন্ধকারে আচ্ছাদিত। দূর কোথাও থেকে ভেসে আসছে শেয়ালের ডাক।
নিস্তব্ধ রেলিংয়ের সঙ্গে হেলান দিয়ে দাঁড়ালো।
তাসফি গুটিগুটি পায়ে এগুলো।
লজ্জায় চোখ বন্ধ করে নিলো সে।তখন তো ঝোকের বসে করে বসেছিল।এখন কিভাবে সম্ভব।
নিস্তব্ধ তাকিয়ে আছে প্রেয়সীর বন্ধ চোখের পানে।চোখ বন্ধ করে সেকেন্ডের মাঝে সে দুইজোড়া ওষ্ঠ একত্রিত কর ফিরে এলো।
নিস্তব্ধ তার সুযোগ দারুণ ভাবে লুটে নিলো।
পুনরায় কাছে টেনে প্রেয়সীর কাজের পুনরাবৃত্তি ঘটালো।
হসপিটালে তো সে বিষম খেয়েছিলো।তবে এখন তো সে সজ্ঞানে তবে ফায়দা না লুটে ছাড়বে কেমন করে।
তাসফি হতভম্ব হয়ে গেল।ফিসফিস করে বলল,
-” এটা কিন্তু কথা ছিল না।”
নিস্তব্ধ তার চেয়ে মাদকীয় কন্ঠে বলল,
-” কথা তো কোনোটাই ছিলনা বউ।তবে যে নিজেকে সামলানো দায়।সকালে দ্রুত পৌঁছাবে।আর নিজেকে সামলানো সম্ভব হচ্ছে না বউ।”
তাসফি চোখ পিটপিট করে চাইলো।
নিস্তব্ধ প্রেয়সীর ঠোঁট ছেড়ে পরপর কপালে চুমু খেল। পরমুহূর্তেই লাফ দিয়ে রেলিং টপকাবো।
তাসফি মৃদু স্বরে বলল,
-” আমি পারবো না একা যেতে।”
-” নো অপশন মাই মিসেস। এটাই আপনার শাস্তি। ”
তাসফি করুণ চোখে চেয়ে রইলো নিস্তব্ধ’র যাওয়ার পানে। কি করে যাবে সে একা একা ওসমান ভিলায়। কি বলবে গিয়ে হুট করে।
ওও মাই গড। বিরবির করে তাসফি হাজারটা গালি ছুড়ে দিল তার অসভ্য ডাক্তারের উদ্দেশ্যে।
দিনটি শুক্রবার।সময় তখন সকাল দশটা প্রায়।সূর্য্যের উত্তপ্ততা ছড়িয়ে পড়েছে চারিদিকে।
ওসমান ভিলার ড্রয়িংরুমের সোফায় কাচুমাচু মুখ করে বসে আছে তাসফি।
তাকে ঘিরে পরিবারের সকল সদস্য ড্যাবড্যাব করে চেয়ে আছে তার পানে।
ওসমান শেখ,অনিমা বেগম, নিলয় সাহেব, বাসন্তী, আয়েশা, ইনায়া,ফিরোজা বেগম,এমনকি ছোট্ট পান্নাও বাদ যায়নি সকলের মতে তাসফির পানে তীক্ষ্ণ দৃষ্টি দিয়ে পরখ করতে।ছোট পান্নার মনে কাকিয়ার জন্য ভীষণ অভিমান।এতগুলো দিন তাকে ছাড়া ছিল কিনা।
সকলেট এমন দৃষ্টির ক্ষোভে পড়ে তাসফি আরো চুপসে যাচ্ছে।
সকালে ঘুম থেকে উঠেই তাসফি লাগেজ গোছাতে শুরু করতেই প্রথমে রুমে আগমন ঘটলো তার দু বোনের আনিকা আর রাহেলা।
তারা তাকে লাগেজ গোছাতে দেখে চোখ বড় করে বলল,
-” কিরে ব্যাগ কেন গোছাচ্ছিস।কোথাও যাবি নাকি।”
তাসফি শুধু হ্যাঁবোধক মাথা নাড়লো।
ওরা একে অপরের দিকে চাইলো।
ফ্রেকফাস্ট টেবিলে চাঁচির কথা শুনে বুঝাই যাচ্ছে দুটোতে মিলে সব উগড়ে দিয়েছে।
চাঁচি উৎকন্ঠা নিয়ে বলল,
– কি শুনছি তাসফি। তুমি কি কোথাও যাচ্ছো?”
তাসফি মাথা নাড়লো।এখন বেশি কিছু বলে সে ঝামেলা বাড়াতে চাচ্ছে বা। একদম যাওয়ার সময়ই বলে যাবে বরং।
মেজ চাঁচি আবারো বলল,
-” কিন্তু যাবে কোথায়? আমাদের আগে তো বলোনি।”
ছোট চাঁচি তাসফির দিকে আড় চোখে চেয়ে বলল,
-” তা আমাদের কেন বলবে। ওর বাবা তার মেয়েকে আমাদের কাছে আমানত রেখে গিয়েছে। কতদিন আগে কতবড় বিপদের হাত থেকে রক্ষা পেল।
এখন আবার কিছু হলে? পরপারে গিয়ে তো আমাদেরই জবাব দিহিতা করতে হবে।”
তাসফি কোনো উত্তর দিলো না। তার খাওয়া শেষ।
উঠে সে লাগেজ হাতে বেরিয়ে এলো।
ততক্ষণে হইচই শুনে কমলা বেগম ওও লাঠিতে ভর করে বেরিয়ে এলেন।
তাসফি সকলের উদ্দেশ্যে থমথমে কন্ঠে বলল,
-” আমি এখানে থাকছিলাম বলে তোমাদের অনেকেরই সমস্যা হচ্ছিলো।আমি চলে যাচ্ছি। তোমাদের আর কোনো সমস্যা হবে না।”
মেজ চাঁচি রেগে বলল,
-” একটা চটকানি দেব মেয়ে। আমাদের সমস্যা হচ্ছিল মানে কি। নিজের মেয়ের থেকে তোমায় কোনো অংশে কম ভালোবাসিনা।”
কমলা বেগম আঁতকে উঠে বলল,
-” চলে যাবি মানে? এই কই যাবি।”
-” শ্বশুর বাড়ি।”
সবাই অবাক হয়ে একে অপরের দিকে চাইলো।
আনিকা বলল,
-” কিন্তু তুই না বললি দুলাভাইকে ডিভোর্স দিবি।”
-” বলেছিলাম। এখন দেব না তোদের কোনো সমস্যা?
আমি এখন ওবাড়িতে যাবো।”
কমলা বেগম এগিয়ে থমতমে কন্ঠে বললেন,
-” তুমি সত্যিই ওবাড়িতে যেতে চাইছো? কিন্তু একা কেন।”
তাসফি খানিকটা নাক টেনে বলল,
-” তুমি বুঝবেনা বুড়ি। আমার একাই যেতে হবে।”
মেজ চাঁচি কিছুক্ষণ তাসফির দিকে খানিকক্ষণ তাকিয়ে থেকে তাকে অবলোকন করে কাছে এগিয়ে এলো।
তাসফির মাথায় হাত বুলালো ।
তাসফি তার বুকে মাথা রেখে কেঁদে ফেললো।
চাঁচি বললেন,
-” বোকা মেয়ে কাঁদছো কেন।তোমাদের মাঝে সব ঠিক হলেই আমরা খুশি। আমরা তো কখনো৷ চাইনি তোমার সংসার ভাঙ্গুক।তবুও তোমার সংসার তুমি সিদ্ধান্ত নিয়েছিলে।আমরা বাঁধা দেইনি। আজ তুমি ফিরতে চাইছো তাতেও বাঁধা দেব না। শুধু বলবো সাবধানে যাবে। আর জামাই বাবাজীকে নিয়ে আবার আসবে কেমন।”
চাঁচি আঁচলে চোখ মুছলেন।মেয়েটা দেকলেই ইদানিং কেন যেন তার শুধু কান্না পায়। অভাগী মেয়েটা এবার একটু সুখ পেলেই হয়। এক বাবা মা গিয়েছে তো কি হয়েছে। ওবাড়িতে তার নতুন বাবা মা তো রয়েছেই।
তাসফি মাথা নেড়ে তার কথার শায় জানালো।
ছোট চাঁচি অন্য দিকে চোখ ঘুড়িয়ে রাখলো।
সকলের থেকে বিদায় নিয়ে তাসফি তস্থ কদমে বেরিয়ে এলো বাড়ি ছেড়ে।
এই তো দশ মিনিট আগেই সে ওসমান ভিলায় পা রাখলো।
প্রথমে ওবাড়ির মানুষের কাছে জবাব দিহিতা করতে হলো আর এখন এখানেও।
দীর্ঘশ্বাস ছাড়লো তাসফি।বদমাশ ডাক্তার তাকে একা একা মাঝ নদীতে ফেলো দিলো তো । তাই না। হুহ সেও দেখে নেবে।
নিস্তব্ধ তখন বাসায় ছিল না। ভেবেছিলো অর্ধাঙ্গীনির নাস্তানাবুদ মুখখানা নিজে চোখে সে অবলোকন করবে। কিন্তু তার মনের ইচ্ছা পুরণ হলো না। তার আশায় জল ঢেলে আজই রুগীকে আসতে হলো।
আজ এই প্রথমবার ডাক্তারী পেশাকে প্রতি তার বড্ড বিরক্ত ভীর করলো।
ফিরোজা বেগম ডিভোর্সের বিষয়ে জানেন না।তাকে জানানো হয় নি। এমনিতেই সে অসুস্থ।
ফিরোজা বেগম বলে উঠলেন,
-” কি গো।মাইয়াডারে তোরা বসাই রাখছোস কেন ওইভাবে কতদিন পর আইলো।যা যা রুমে গিয়ে ফ্রেস ট্রেস হইতে দে। সর সব এমন করে ঘীরে ধরে আছোস কেন।”
নিলয় সাহেব তাসফির পাশে গিয়ে বসলো। মাথায় হাত বুলিয়ে বলল,
-” মামনী তুমি কি শিওর তুমি তোমার সিদ্ধান্ত বদলেছো?”
তাসফি লজ্জায় মাথা নাড়লো।
ওসমান শেখ বলেলেন। তাহলে তো হলোই এই তোরা কেউ ওকে দাদু ভাইয়ের রুমে দিয়ে আয়।
তাসফি বাঁধ সেধে বলে উঠলো,
-” আমি বাসন্তী আপার সঙ্গেই থাকবো দাদু।”
ফিরোজা বেগম অবাক হয়ে বলল,
-” ওমা সে কেমন কথা।”
অনিমা তাকে থামিয়ে বলল,
-” মা তুমি থামো। নাতিবউ যে ফিরে এসেছে এতেই খুশি থাকো।ওদের স্বামী স্ত্রীর ব্যাপার ওরা নিজেরা বুঝে নিবে।”
বাসন্তী ওকে নিয়ে যা।
ফিরোজা বেগম বিরবির করতে লাগলেন,” তোরা যে কি চাস।পোলা মাইয়্যা দুইডারে খালি আলাদা করনের ধান্ধায় থাকোস। পুরুষ মানুষ আর কত সহ্য করবে।
আয়েশা ফিসফিস করে নানির কানে কানে বলল,
-” তোমার নাতি ওতো ধৈর্যশীল নয় গো নানি। গোপনে গোপনে সে ঠিক আমাদের না জানিয়ে নিজের কাজ সেড়ে নিয়েছে।বুঝেছো।”
নানি বিস্ফোরিত দৃষ্টিতে চাইলো। এতবড় একখানা সুখবর তোরা আমার থেকে লোকাতে পারলি।
তাসফি বাসন্তীর রুমে এসে ফ্রেস হয়ে বসতেই বাসন্তী আর আয়েশা তাকে ঘীরে ধরলো।
তাসফি কিছুটা থতমত খেল।
বাসন্তী বলল,
-” এই তাসফি ভাই আর তোর মাঝে সব ঠিকঠাক তো।দেখ একদম মিথ্যা বলবি না। ভাই যে তোকে ফার্মহাউসে নিয়ে গিয়েছিল সে খবর কিন্তু আমরা জানি।”
লজ্জায় তাসফির কান গরম হতে লাগলো। ছিঃ সবাই জেনে গিয়েছে সেই কথা।
কিন্তু লোকটা যে বলল কেউ জানেনা।
তাসফি মনে মনে রাগে ফুঁসতে লাগলো।
আয়েশা তার বাহুতে ধাক্কা দিয়ে বলল,
-” কি হলো বোন বলো না।”
তাসফি চোখ পিটপিট করে চাইলো। রাগড় করে বলল,
-” ছিঃ অসভ্য কথা বলো না তো তোমরা।”
-” এই একদম নাটক করবি না তাসফি। সত্যি কথা বল। আমার ভাইটাকে আর কত অপেক্ষা করাবি।
তোদের মাঝে সব ঠিকঠাক তো।”
তাসফি মনে মনে বলল,
-” সব ঠিকঠাক হয়েও ঠিকঠাক নেই আপা। তোমার ভাই একটা বহুরুপী। এত সহজে সব ঠিকঠাক কি করে হতে দেই। আর তোমার ভাইযে ওতটাও ধৈর্যশীল নয়। শুরু থেকেই তোমার ভাই অধৈর্য্য বানল পুরুষমানুষ। শুধু সুযোগ খুঁজে এই তাসফির কোমর ছোঁয়ার।”
মুখে বলল,
-” না।”
আয়েশা অবাক হয়ে বলল,
-” তবে দেওয়রজী তোমায় জোর করে নিয়ে কি করলো।”
তাসফি লজ্জায় মুখ নামিয়ে আমতাআমতা করে বলল,
-” আমি অসুস্থ ছিলাম।”
ওও তাই বলো ।এমনি সব ঠিকঠাক তো?
তাসফি মাথা নাড়লো।
” হ্যাঁ তাইতো।ঠিকঠাক না হলে তুমি তো আর আসতে না। এমনি সব ঠিক তাকলেও আমরা খুশি।”
বাসন্তী চোখ ছোট ছোট করে বলল,
-” সব ঠিক হলে তবে আপনি এখানে কেন শুনি?”
তাসফি বলল,
-” ওও তুমি বুঝবেনা আপা। ”
-” হ্যাঁ আমরা আর বুঝতেও চাই না। তোমাদের ভেতরের গোঁজামিল তোমরাই সামলে নাও। আমরা আর কিছু করতেও চাই না। বুঝতেও চাই না। সব ঠিক হলেই আমরা খুশি।”
পান্না তখন দৌড়ে এসে তাসফির কোলে উঠে গেল।
হাসিখুশি বদনে সুধালো,
-” কাকিয়া, কাকিয়া, তুমি আর আমায় ছেড়ে যাবে না তো। তাহলে তোমার সঙ্গে আড়ি।”
-” যাবো মা । আর কোথাও যাবো না।”
পান্না তাসফির গালে চুমু খেল।
তাসফি হেঁসে দিলো।
সেও আদর করে দিলো ওকে।
রাত তখন প্রায় নয়টা। নিস্তব্ধ বাড়ি ফিরলো মাত্রই।
নিজের রুমে ঢোকার আগে বাসন্তীর রুম থেকে তাসফি আর পান্নার দুষ্টুমি লক্ষ করলো।
তার বউ এসেছে তবে। নিস্তব্ধ মুঁচকি হাসলো।
তবে তার এই হাসি কতক্ষণ ধরে রাখতে সক্ষম হবে তা কে জানে।
খাবার টেবিলেও নিস্তব্ধ তাসফির দেখা পেলনা। সবাই তার সাথে বেশি একটা কথা বললো না। সেও আগ বাড়িয়ে আর কথা বললো না।
বউ তার কাছে আসলেই হলো।
রাত এগারোটা পেরিয়ে যাওয়ার পরেও তাসফি যখন রুমে আসলো না নিস্তব্ধ কিছুটা চিন্তিত হলো।
ভালো করে লক্ষ করে দেখলো। তাসফির লাগেজ বা কাপড় কোনোটাই তার রুমে নেই। নিস্তব্ধ বড় আশ্চর্য হলো। মানেটা কি।
নিস্তব্ধ রুম ছেড়ে হন্তদন্ত হয়ে বের হলো।
বাসন্তীর রুমে এসে টোকা দিলো।
বাসন্তী দরজা খুলে গম্ভীর মুখে বলল,
-” কি ব্যাপার ভাই এতরাতে ডিস্টার্ব করছিস কেন। ”
নিস্তব্ধ আমতাআমতা করলো। আড় চোখে ভেতরে তাকিয়ে দেখলো বউ তার দিব্বি ফোন স্ক্রল করে যাচ্ছে।তাসফি এদিকে ফিরেও তাকালো না।
নিস্তব্ধ রাগে হাত মুষ্টিবদ্ধ করলো। কিছুনা বলে ফিরে আসলো।
রুমে এসে তাসফিকে মেসেজ করলো,
-” রুমে আসছো না কেন? আপার রুমে কি।”
তাসফি লিখলো,
-” রুমে কেন যাবো।আমি তো আপার রুমেই থাকবো।”
নিস্তব্ধ চোখ বড় বড় করে ফেললো রাগে ফেটে পড়লো সে। লিখলো,
-“আপার রুমে থাকবে মানে। আপার রুমে থাকলে শ্বশুড় বাড়ি আসলে কেন।আশ্চর্য! ”
তাসপি নির্লিপ্ত ভাবে লিখলো,
-” আপার রুমে থাকবো মানে আপার রুমে থাকবো।আর শ্বশুর বাড়ি আসতে বলেছেন আপনি এসেছি।আপনি তো একবারো বলেন নি আপার রুমে থাকতে পারবো না। আমাকে ডিস্টার্ব না করে ঘুমান তো।”
নিস্তব্ধ দাঁতে চেপে বসে রইলো নিজের বোকামির জন্য।
ইচ্ছে হচ্ছে মেয়েটাকে এখন সে তুলে নিয়ে আসে আপার রুম থেকে।কিন্তু এতটাও বেহায়া হওয়া যাবে না।তবে তো তা সারা বাড়ি ময় রটে যাবে।
ধূসর রংধনু পর্ব ৪১
সবার প্রথমে নিলয় সাহেব এবং, ওসমান শেখ তাকে হাওমাও করে চেপে ধরতে ছাড়বেন না।
নিস্তব্ধ সারা রুমময় পায়চারি করছে।
সে বুঝতে পারছেনা বউকে বাড়ি এনে সত্যিই বোকামো করলো নাতো। বউ তো এখন তার কাছেই ভীরছে না।
ওবাড়িতে থাকাকালীন সে তো কাছে যেতে পারতো, ছুঁতে পারতো।অথচ এখন সেটার কোনোটাই পারছে না।দূর সালার জিনদেগীই প্যারাময়।
রাগের চোটে হাতের কাছে থাকা সব ছুঁড়ে ফেললো।
সটান হয়ে গাঁ এলিয়ে দিলো বিছানায়।