ধূসর রংধনু পর্ব ৫

ধূসর রংধনু পর্ব ৫
মাহিরা ইসলাম

গোধূলী বিকেল।আকাশে সূঁর্য্যিমামা পশ্চিমে অস্ত যাবে যাবে ভাব। সন্ধ্যার পূর্বে বাগানের সৌন্দর্য আরো বৃদ্ধি করছে।সঙ্গে বিভিন্ন ফুলের মন মাতানো সুভাসে হৃদয়কে পুলকিত করছে।
চার বন্ধু হাসি ঠাট্টায় মত্ত।যার যার নিজ কর্মব্যস্ততা থাকায় এখন আর আগের মতো তেমন আড্ডা দেওয়া হয়না।মেডিকেল ক্যামপাসের হাসি ঠাট্টা সঙ্গে সপ্তাহে সপ্তাহে প্রুফ দেওয়ার আনন্দ গুলো এখন আর নেই।
লিখতে লিখতে হাত ব্যাথা হয়ে যাওয়ায় কেউ আর কাউকে এখন আর অযথা রাগ দেখায় না। মারামারি খুনশুটি ও কমে এসেছে।

সৃজনের এক ছেলে বয়স প্রায় বছর খানেক হবে।বন্ধুদের মাঝে সেই প্রথম বিয়ের হালখাতা পূর্ণ করেছে।
মাহীন চাকরি সূত্রে যশোরের একটা হসপিটালে কর্মরত।আয়ানার বিয়ে হয়েছে কিছু মাস।আরশীর সামনে হবে।
সুজন ছন্নছাড়া।তার কোনো পেশাই ভলো লাগে না। তবুও আঙ্কেলের অনুরোধে নিস্তব্ধ জোড় করে তাকে হাসপিটালে বসতে রাজি করিয়েছে। বিয়ের জন্য সুজনের মা সারাক্ষণ বিলাপ করতে থাকে অথচ সুজনের এক কথা,
-“কি যে বলো না মা। বিয়ে আবার জীবনের কোনো অধ্যায়ের মাঝে পড়ে নাকি। বিয়ে হলো একটা ফালতু বিষয়। বিয়ে করে সারাক্ষণ বাবার মতো তোমার হাতে হাজার টা মাইর খেতে আমি রাজি নই মা।শেষে বাবার মতো বোকা মহিলা যদি আমার কপালে জোটে? তবে তো ভারী বিপদ।

আরও গল্প পড়তে এখানে ক্লিক করুন 

তার চেয়ে বরং তুমি আশু তাকে বিয়ে করিয়ে দাও মা। ওর বয়স তো আঠারো হয়েছে। একদম ফাস্ট ক্লাস বুঝলে।”
সুজনের মা রাহেলা বেগম চোখ গরম করে ছেলে দিক তাকাবেন।ছেলে বলে কিনা সে বোকা।হায় খোদা!
এই ছেলে্কে সে কি করে মানুষ করবেন।
কতো করে বলে তোর কোথাও পছন্দ আছে কিনা বল বাবা, তবুও বিয়েটা কর।আমরা সেই মেয়েকেই ঘরে তুলে আনবো।

সুজন তবুও এক পায়ে নারাজ।বলবে,” কি যে বলো না আমার মিষ্টি বোকা মা, আমার পছন্দ থাকলে তো তুমি সবার আগে জানতে। কি বলো জানতে না।এই সুজনের পছন্দ হবে এমন কোনো মেয়ে পৃথিবীর আছে নাকি। থাকবে কি করে এই ভাগ্যবান সুজনের জন্য কি আর যে সে মেয়ের জন্ম হবে।
যেদিন আমার মতো হ্যান্ডসাম ছেলের জন্য রূপোসী মেয়ে আসবে যাও মা সেদিনই আমি বিয়ে করবো।
রাহেলা বেগম ছেলের দিকে করুণ চোখে তাকিয়ে থাকেন।এই দামড়া ছেলেকে আর সে কিই বা বলতে পারবে।মারতে তো আর পারবে না।
হাসি ঠাট্টার মাঝে নিস্তব্ধ সুজনের কাধে হাত রেখে বলল,,

” তৃপ্তিকে এবার নিজের মনের কথাটা বলে দিলেই তো পারিস।”
নিস্তব্ধ’র কথায় সবাই সায় দিলো।
সুজন আশ্চর্য হওয়ার ভঙ্গিতে বলল,
” কি বলছিস কি ভাই তোরা। আমি ওই অতৃপ্ত আত্মাকে আবার কি বলতে জাব। ওও নির্ঘাত আমার গলা টিপেই মেরে ফেলবে।আমি কিছু বলা বলির ভিতর নাই ভাই।”
বন্ধুগন হতাশ হয়।আর কত বোঝাবে তারা। ওরা স্পষ্ট দেখতে পায় তৃপ্তির জন্য সুজনের চোখে ঠিক কতটা ভালোবাসা সেই কলেজ লাইফ থেকে।অথচ ছেলেটা শিকার করতেই নারাজ।
সুজন মনে মনে কৌতুক হেঁসে বলে,
” বলে দিলেই আর কি হবে নিস্তব্ধ। তৃপ্তি আমায় এক কথায় প্রত্যাখান করবে। কারণ ওর মনে যে শুধুমাত্র তোর বসবাস। ওর মনের দখলদারী যে শুধুমাত্র তুই।প্রত্যাখানের তীব্র যন্ত্রণার চেয়ে না বলে যন্ত্রণা পাওয়া যে অমৃতের সমান। এই আছি তো বেশ আছি রে। ”

চার বন্ধু বাইরে থেকে এসে দেখলো যুবতীগন বসে বসে পিরিতির আলাপ করছে।
মাহীন তিটকারি করে বলল,,
— “মেয়ে মানুষ হচ্ছে বয়লার মুরগি।যেখানেই মানুষ দেখবে বয়লার মুরগির মতো মুহুর্তে গলে,সিদ্ধ হয়ে আলাপ করতে বসে পড়বে, বুঝলি সৃজন।”
আরশী ফুসে উটলো,,
— “কেন রে? আর তোরা কী উঠপাখি? যেখানেই যাস গলা উঁচু করে সিগারেট টানতে শুরু করিস।এই যে বাইরে থেকে আসলি, তোরা গল্প করিস নি? সিগারেট খাস নি।”

— “আসতাগফিরুল্লাহ,, আমরা কোনো সিগারেট ফিগারেট খাইনি।মাঝে মাঝে এই সৃজন একটু আকটু খায় আরকি।”
সুজন মাহীনের মাথায় টোকা মারতেই তার সম্ভীত ফিরলো।সঙ্গে সঙ্গে সে জ্বীব কাটলো।
ইশশ হিসাবে গন্ড হয়ে গেছে রে। সুজনের পিছে গিয়ে ফিস ফিস করে বলল,,
— “আন্টি এখানে আছে তুই আমায় বলবি না আহাম্মক। তোরে এহন জুতাপেটা করতে মনে চাইছে।এতদিনের তিলে তিলে গড়ে তোলা পেস্টিস তোরা এক নিমিষে ধূলোয় মিশিয়ে দিলি রে।”
অনিমা বেগম সরু চোখে ছেলে আর তার বন্ধু দের দিকে তাকিয়ে আছে। কিছুক্ষণ আগেই সে আর বাসন্তী নিচে নেমে এসেছে।

অনিমা বেগম ছেলের দিকে তাকিয়ে বললেন -” তা তুমি ও সিগারেট খাও নাকি বাবা?”
নিস্তব্ধ তুতলিয়ে বিথা হাসার চেষ্টা করল। মাহীনের দিকে তাকিয়ে দাঁতে দাঁত চেপে বলল,,
“না.. না মা। কি সব বলো না আমি ওসব ছাইপাস খাই নাকি।আমি খাই না। ওরাই মাঝে মাঝে খায় আরকি। আমি নিষেধ করি।দেয়াদব গুলো শুনে না। তুমিও তো বাবার মতো গোয়েন্দাগিরি শুরু করেছো মা। এটা কিন্তু একদম ঠিক নয়।”

অসভ্যের দল তার পেস্টিজ পান্চার করার ধান্ধা নিয়ে এসেছে।
তাসফি আড়চোখে তাকালো নিস্তব্ধ’র দিকে।তার ভারী মজা লাগছে লোকটাকে এমন হেনস্থা হতে দেখে।
সকলের হাসি ঠাট্টা মাঝে মাহীন আর চোখে বাসন্তীর দিকে তাকালো। আজ পরিস্থিতি ভিন্ন না হলে ওই মিষ্টি মেয়েটা তার জিম্মায় থাকতো।হোকনা বয়সে সে ছোট। ভালোবাসায় আবার বাচবিচার কিসের।
ওই যে মেয়েটা বুকে হাজার কষ্ট চেঁপে রেখে কিভাবে সকলের সঙ্গে হাসি মজা করছে।কেউ কি তার ভিতরের লোকানো ব্যাথা কি বুঝতে পারে?
কিন্তু মাহীন তো পারছে।
পরিস্থিতি আজ তার অনুকূলে, তাই তো সে চেয়েও আজও মেয়েটার কাছাকাছি যেতে পারে না।

~~~”সিগারেট সিগারেট সিগারেট আমায় ধোঁকা দিয়েছে,
সিগারেট খাওয়ায় নাকি অপরাধ হইয়াছে।
আরে সিগারেট খাওয়ায় নাকি অপরাধ হইয়াছে।
সিগারেট খাইয়া আজ আমি গাজার নৌকায় ঘুরি। তবুও মা আমায় আবার দেয় ঝারি।” ~~~
কি হচ্ছে এখানে,,
নিস্তব্ধ ধমকে উঠলো তাসফিকে।এই মেয়ের বানানো গান শুনে তার ফুরফুরে মেজাজ মুহুর্তে খিচিয়ে গিয়েছে। সে বেশ বুঝতে পারছে তাকে জ্বালাতেই এই গান গাওয়া হচ্ছে।
তাসফি দাঁড়িয়ে ছিল বেলকনি তে নিস্তব্ধ’র প্রশ্নে সে ভাবলেশহীন কন্ঠে জবাব দিলো,,
— বা রে দেখতে পাচ্ছেন না কি করছি। আকাশ দেখছি,সঙ্গে স্পেশাল গান ও তো গাইছি শুনতে পাচ্ছেন না ডাক্তার সাহেব।

তাসফির খাপছাড়া জবাবে নিস্তব্ধ এর রাগ তরতর করে বেড়ে গেল।
পুরুষটি রমণীর মাঝে থাকা দুরত্ব টুকু ঘুচিয়ে নিলো।
তার দুহাত শক্ত করে চেপে ধরলো বেলকনির রেলিংয়ের সাথে।
আরো একটু নিচু হলো পুরুষটি।অহংকারী পুরুষের নিঃশ্বাস আছড়ে পড়ছে রমণীর চোখে মুখে। তাসফি চোখ বুঝে নিলো নিমিষেই। রমণীর মুখের কাছে নিজের মুখ নিয়ে পুরুষটি ফিসফিস করে ভয়ঙ্কর হুমকি মুলক বাক্য আওড়ালো,

” এত জ্বালাতন কেন করছো আমায় বোকা মেয়ে। আমার জ্বলন্ত অনলের পাশ হতে নিজেও পুড়ে ছাই হয়ে যাবে মনে রেখো নাবালিকা মেয়ে। তাই সাবধান।”
নিস্তব্ধ তাকে ছেড়ে দিয়ে ভেতরে চলে গেল।
তাসফি ফিসফিস করে বলল,
” তাহলে কেন পোড়াচ্ছেন না। আমি তো চাই আপনার অনলে পুড়িয়ে আমায় ছাই করে দিন।নিঃশেষ করে দিন এই তাসফি অস্তিত্ত।হৃদয়ে একে দিন চঁন্দ্রের মতো মিষ্টি কলংঙ্ক। আপনার অনলের আগুনেই পুড়তেই তো প্রহর গুনছি অহংকারী পুরুষ”

পরদিন তাসফির বাবা মোস্তফা সাহেব এসেছেন মেয়েকে দেখতে।ভদ্র লোক আবেগে আপ্লূত হয়ে পড়লো মেয়েকে দেখে। কদিন পর হয়তো সে আর এই আদুরে মুখখানা দেখতে সুযোগ পাবেন না। কে বলতে পারে।বাবা কে দেখতেই তাসফি ওদৌঁড়ে গিয়ে তাকে জরিয়ে ধরলো।
— “আস্তে মামনি পড়ে যাবে তো। এখনো তোমার ছটফটানি সভাব গেলনা মামনি।”
–” চুপ থাকো তো বাবা। মনে হচ্ছে কত জনম তোমায় দেখি না। দাদি কে কেন আনো নি। বুড়িকে বলবে সে যেন তার আনহু কে আর কল না দেয়।”
— মেয়ের অভিমানে মোস্তফা সাহেব মুঁচকি হাসেন। নিস্তব্ধ বাসায় থাকায় সে ও শ্বশুরের সঙ্গে কুশল বিনিময় করলেন। যতই হোক একমাত্র শ্বশুর তার। তাছাড়া সে একজন ডক্টর কর্তব্য জ্ঞানহীন তার পক্ষে মোটেই সাজে না। ওই সব ছেলে মানুষি অন্য কারো দ্বারা সম্ভব।
মোস্তফা সাহেব এসেছিলেন।তাসফির ভর্তির কাগজ পত্র দিয়ে যেতে। নিলয় সাহেবই নাকি তাকে বলেছে।
আবার সন্ধ্যার মাঝেই সে প্রস্থান করেছে।

তাসফির মন খারাপ হলো আবার কবে তার বাবা আসবে।তার বাবা না আসুক সে ঠিক সপ্তাহ খানেক পরে ওবাড়ি অবশ্যই যাবে। আর তার একমাত্র বাবাকে একদম চমকে দেবে।
ডিনার শেষে দাদু সকলকে বললেন
“অনেকদিন তো ছেলের গদিতে থাকা হলো।এবারে আমি আমার পৈতৃকনিবাসে ফিরতে চাই।আবার কোনো নাতি- নাতনির বিয়ে হলে তখন আবার আসবো।”
সকলে বার বার করে থাকতে বললে ও ওসমান শেখ এর এক কথা তিনি থাকবেন না।
পরদিন ভোরের দিকেই দাদু রওনা হলো,অনেকটা পথ পারি দিতে হবে।
তাসফির মনটা আরো খারাপ হলো দুদিন দাদুর সাথে গল্প করে বুরোটার প্রতি ভারী মায়া জন্মে গেছে।
যাওয়ার আগে দাদু তার মাথায় হাত বুলিয়ে বলে গেল,,
“ভালো থেকো দিদিভাই। আর অসভ্যটা তোমায় বিরক্ত করলে সোজা এই দাদুর টেলিফোন নম্বরে একটা কল করবে ব্যাস। ওর সয়তানি একদম ঘুচিয়ে দেবো।”
“কি ব্যাপার বলতো তাসফি মুখটাকে এমন করে শুকনো কচুপাতার মতো বানিয়ে রেখেছিস কেন। আরে বাবা দাদু গেল আবার এলো বলে।চলতো আজ আমি আর বাবা তোর ভর্তির ফর্মালিটিস পূরণ করে বাহিরে ঘুরবো। চল, চল ভেতরে চল।”

সন্ধ্যার পর নিস্তব্ধ প্রচন্ড ক্লান্ত হয়ে বাসায় ফিরলো।আজ রুগির সংখ্যা ছিলো বেশি। যেহেতু দুদিন ছুটি কাটিয়েছে, সকলে একসঙ্গে ভীর জমিয়েছে।
তাছাড়া আরো একটা কারণে তার মনটা বিষিয়ে গিয়েছে। দাদু এমনটা কেন করলো। মাত্র সতেরো বছর বয়সী একটা মেয়েকে তার সঙ্গে বিয়ে দিলো। এখন কি তার পুতুল খেলার বয়স। এখন এই নাবালিকা মেয়েকে তার আলাদা করে পালতে হবে।তার ইচ্ছে ছিলো সেইম এজ এর একজন কে বিয়ে করবে। যে তার সকল দুঃখগুলো বুঝতে পারবে।তার সমস্যা হলে তার মতো ভেবে একটা সল্যুশন দিতে পারবে।

কিন্তু তাসফির পক্ষে কি তা সম্ভব? যতই সে নিজেক বড় দেখাক না কেন। আসলে তার মাঝে তো সে রকম ম্যাচুরিটি এখনো আসেনি। যতই হোক সে তো পুরুষ মানুষ। পুরুষালী কামনা তার সর্বাধিক। তাসফির মত বাচ্চা মেয়ে তা কি পূরণ করতে পারবে? উহু কখনো না। ওইটুকু পুচকে মেয়ে কি করে তার ইচ্ছা পূরণ করবে।তার দানবীয় ভারীক্কী শরীর বহন করার ক্ষমতা ওই মেয়ে কখনোই রাখেনা।
তাছাড়া এই যে এখন তার একগ্লাস ঠান্ডা সরবত দরকার তা কি ওই মেয়ে বুঝতে পারছে। পারবে কি করে। স্বামী প্রতি কি দ্বায়িত্ব সেটাইতো সে জানেনা।
ক্লান্ত শরীর নিয়ে রুমে ঢুকে তাসফিকে বিছানায় এলোমেলো শুয়ে থাকতে দেখে তার মেজাজ টা ধপ করে যেন আরো বেড়ে গেল।মনে হলো আগুনের মাঝে কেরোসিন ঢেলে দিয়েছে।
তাসফির মসৃন উন্মুক্ত পেট দৃশ্যমান নিস্তব্ধ এর চোখে।তার মাথা চারা দিয়ে উঠলো এলোমেলো নিষিদ্ধ অনুভুতির দল। সে দ্রুত চোখ ফিরিয়ে নিলো। নাহ আর পারছে না। এর দ্রুত সল্যুশন দরকার।এভাবে আর তার পক্ষে থাকা সম্ভব না।
গলা ফাটিয়ে ডাকলো,,

— আপা, আপা। এই মেয়ে এখনো আমার রুমে কি করছে? দাদু তো চলে গিয়েছে। তুই বলেছিলি দাদু চলে গেলে এই মেয়ে আমার রুমে আর থাকবে না। এখনো সে এখানে কি করছে।সব জিনিসপত্র নিয়ে এখুনি বের হতে বল।
বাসন্তী আঁতকে উঠল। ইশশ সে তো ভুলেই বসেছিলো ব্যাপারটা।এখন কি হবে।
চিৎকারের আওয়াজে তাসফি ধরফর করে উঠে বসলো।
সদ্য ঘুম থেকে উঠায় তার মস্তিষ্ক এলোমেলো। নিস্তব্ধ’র দিকে তাকিয়ে ভ্রু কুঁচকে বলল,
— কি ব্যাপার এভাবে চিল্লাচ্ছেন কেন।
নিস্তব্ধ তার কথার কোনো জবাব দিলো না।
বাসন্তী এসে বলল,,

–” ভাই এই কদিন তো ঠিকই থাকলি আর কটা দিন থাক না একসঙ্গে। সব ঠিক হয়ে যাবে দেখবি।”
–” বাধ্য হয়ে থেকেছিলাম আপা। আর একমুহূর্ত ওও থাকতে চাইনা। ওকে এখুনি বেরিয়ে যেতে বল আমার রুম ছেড়ে।আর এক মুহুর্ত ওও থাকা সমস্ত না আমার পক্ষে”
তাসফি নিস্তেজ হয়ে বসে রইলো।
অহংকারী পুরুষটি বাধ্য হয়ে তার সঙ্গে রুম শেয়ার করেছে। সে কি এই পুরুষের রুমে থাকার জন্য মরে যাচ্ছে। কখনো না। এত অপমাবের পরে তো সে কিছুতেই থাকবেনা।
ছেলের চেঁচামেচি শুনে অনিমা বেগম এগিয়ে এলেন।ভেবেছিলেন ছেলে তার বিয়েটা মেনে নিয়েছে।কিন্তু না এদের বাপ ছেলের রক্ত তো একই। কি করে শুধরাবে এরা।
বাসন্তী আবার কিছু বোঝাতে গেলে অনিমা বেগম থামিয়ে দিলো তাকে।
তাসফি লাগেজ গুছিয়ে বেরিয়ে এসো। বাসন্তী তোমায় রুম দেখিয়ে দেবে।
তাসফি কাঠের পুতুলের মতো শ্বশুড়ির কথা মেনে নিলো।
অনিমা বেগম আবার বললেন তাছাড়া তাসফির এখনো সংসার করার বয়স হয়নি। তার এখন পড়াশোনা করে সেটেল হওয়ার বয়স।
নিস্তব্ধ চিবিয়ে চিবিয়ে বলল,,

–” হ্যাঁ সেটাই। তবে এখন তাকে পড়াশোনাই করাতো। বিয়ে কেন দিলো। বিয়ে করার তো কোনো প্রয়োজন ছিলনা তাইনা মা।”
অনিমা বেগম ছেলের কথার কোনো জবাব দিলেন,
” সব কিছুর একটা কারণ থাকে নিস্তব্ধ।সব কিছু নিয়ে বাড়াবাড়ি করতে নেই। আমাদের নিয়তিতে যা আছে তা তো ফলবেই। তুমিও তা আটকাতে পারবে না।”

বলেই তিনি রুম ত্যাগ করলেন।
নিস্তব্ধ আর এক সেকেন্ড ওও দাঁড়ালো না তার সারা শরীরে রক্ত টগবগ করছে।এতো মেন্টাল স্পেস সে নিতে পারছে না। ওয়াশরুম ঢুকে ঠাস করে দরজা লাগিয়ে দিলো।
তাসফি নিজ লাগেজ গুছিয়ে শূণ্য চোখে আরেকটা বার রুমটাতে চোখ বুলিয়ে নিলো।অতঃপর নিষ্প্রাণ চোখে বেরিয়ে গেল রুম ছেড়ে।

ধূসর রংধনু পর্ব ৪

এই দুদিনে পুরুষটি তার মায়ায় পরেনি। অবশ্য দুদিনের তাসের ঘরে কি আর এ সম্ভব। বাকিটা উপরওয়ালাই জানেন।
রমণী ঘর ছেড়ে বেরিয়ে যাওয়ায় পিছনে পড়ে রইলো নিস্তব্ধ ইয়াসারের শূন্য ঘর খানা।

ধূসর রংধনু পর্ব ৬