ধূসর রংধনু ৩ পর্ব ১৪
মাহিরা ইসলাম মাহী
দীর্ঘ দিন পরে সৃজনের সুদর্শন মুখশ্রী দেখে চোখ চকচক করে উঠলো সকলের।
সৃজন দৌড়ে এসে জরিয়ে ধরলো বন্ধুদের।
ছেলেটার চেহারায় এখনও যেন ঠিক আগের মতন প্রতিচ্ছবি।তারওপর বিদেশ ঘুরে তার চেহারার জৌলুস যেন অধিক বেড়েছে।
উভয়ের চোখ ভিঁজে এলো দীর্ঘ আলিঙ্গনে।
বন্ধুকে ছেড়ে নিস্তব্ধ এবারে এগিয়ে গেল একটু দুরে সটান দাঁড়িয়ে থাকা সৃজনের কার্বন কপির দিকে।
“ জাওয়াদ রাইট?”
জাওয়াদ মুচকি হেসে মাথা নাড়িয়ে হ্যান্ডশেক করলো নিস্তব্ধ’র সঙ্গে।কুশল বিনিময় শেষে সুধালো,
“ সেই ছোট সময়ে দেখেছি আপনাদের। বাবা তো সব সময় আপনাদের কথাই বলতে থাকে। এন্ড মোস্টলি.. ইউ আর গ্রেইট আঙ্কেল। আন্টি কেমন আছেন?“
নিস্তব্ধ হেসে বলল,
“ গুড।তোমার আন্টিকে দেখতে চাইলে কিন্তু আমাদের বাসায় যেতে হবে মাই সান। কি যাবে তো?”
জাওয়াদ মুচকি হাসলো।
সৃজন তেড়ে এসে বলল,
“ তুই থাম ভাই। তাসফিকে বলে আমরা তোর বাসায় এবারে গেটটুগেদার আয়োজন করাবো।তোর কিচ্ছু করতে হবে না। তুই নিস্তব্ধ, নিস্তব্ধ হয়েই সব দেখবি।”
সৃজন পকেট থেকে সিগারেট বের করে ধরাতে ধরাতে ফিসফিস করে নিস্তব্ধ’র কানে কানে বলল,
আরও গল্প পড়তে এখানে ক্লিক করুন
“ সিগারেট খাস ভাই? নে ধর খা। আরে ভাই তাসফি নেই তো এখানে।”
নিস্তব্ধ চোখ ছোট ছোট করে চাইলো।
সৃজন দাঁত কেলিয়ে হাসলো।
নিস্তব্ধ সৃজনের পিঠে কিল বসিয়ে দাঁতে দাঁত চেপে সুধালো,
“ ধামড়া ছেলে সামনে আক্কেল হবে কবে তোদের?”
“ হবে না ইহজনমে বন্ধু । আর ছেলে তো নাদান নয়। “
সুজন আর মাহীন সৃজনের থেকে সিগারেট নিয়ে তাতে লাইটার দিয়ে আগুন দিলো।
দীর্ঘদিন পর সিগারেটের ঘ্রাণ মস্তিষ্কে লাগতেই উষ্ণ ধোঁয়ায় কন্ঠ রোধ হয়ে আসলো।
সুজন হেসে জাওয়াদের দিকে চেয়ে সুধালো,
“ কি ভাইপো খাবে নাকি?”
জাওয়াদ মাথা নাড়লো অর্থাৎ না।
বাবা আর তার বন্ধুদের পাগলামি দেখে মুখ টিপে হাসলো আড়ালে।
টেবিলে বসে ছয় বন্ধু আড্ডায় মশগুল হলো।
আর জাওয়াদ হলো নিরব দর্শক।
ওদিকে রেস্টুরেন্টের বাহিরে দুই পান্ডার ভেতরের কার্যকলাপে আক্কেলগুড়ুম অবস্থা।
দুই পান্ডা কৌতূহলের বশবর্তী হয়ে জাওয়াদের পিছু নিতে নিতে এই পর্যন্ত এসে হাজির হয়েছে।
সাদাফ আর নীবিড় একে অপরের দিকে একবার তাকাচ্ছে তো পুনরায় রেস্টুরেন্টের ভেতরে তাকাচ্ছে।
দুই পান্ডা জাওয়াদের পিছু করতে করতে যে নিজের বাপের বন্ধুর রেস্টুরেন্টে এসে এমন কিছুর সাক্ষী হবে দুজনের কল্পনায় ও ছিল না।
সাদাফের প্রথম থেকেই জাওয়াদকে চেনা চেনা লাগছিলো।কিন্তু বহু বছর আগের চেহারা কি আর মনে থাকে নাকি এত।
সে আজ একটা প্রশ্ন পড়লে কাল ভুলে যায় আর তো মানুষের চেহারা।
বন্ধুদের আড্ডার মাঝে হঠাৎ নিস্তব্ধ’র চোখ জোড়া বিধলো রেস্টুরেন্টের দরজার কাচ গলিয়ে বাহিরে।
দুই পান্ডাকে একত্রে দাঁড়িয়ে থাকতে দেখে ভ্রু কুঁচকালো।
“ তোরা দুজন ওখানে দাঁড়িয়ে কি করছিস? “
নিস্তব্ধ’র হঠাৎ গলা ফাটিয়ে চিৎকারে চমকে সুজন, মাহীন সহ সকলে দরজার দিকে দৃষ্টিতে নিবদ্ধ করলো।
সাদাফ আর নীবিড় নিস্তব্ধ’র হঠাৎ ডাকে থতমত খেল।তারা আশা করেনি এভাবে ধরা খাবে।
কোন খেয়ালে তারা ভুলে বসেছে কাচ পেরিয়ে ভেতর থেকে বাহিরের সব দেখা যায়।
শীট এতবড় একটা মিস্টেক তারা করলো কেমন করে।
নিস্তব্ধ সুজন মাহীন কে তীর্যক কন্ঠে বলল,
“ তোদের পান্ডাদের আমন্ত্রণ জানা। সঙ্গে নিয়ে আসবি না? কেমন বাপ তোরা।”
মাহীন দাঁতে দাঁত চেপে নীবিড়ের উদ্দেশ্যে চিৎকার করে বলল,
“ বাহিরে দাঁড়িয়ে আছিস কেন হতভাগা ভেতরে এসে এখানে আসার কারণ বলে আমাদের উদ্ধার করেন।
এই নিস্তব্ধ ওদের সময়ে আমরা কি এরকম করেছি বল?”
“ সেটা তুই ভালো জানিস। আমায় কেন জিজ্ঞেস করছিস।তোদের মত আলতু ফালতু সময় তো আমার ছিল না।”
মাহীন স্পষ্ট বুঝলো ব্যাটা তার বোনকে ড্যাবড্যাব করে তাকিয়ে দেখার খোঁটা দিচ্ছে।
সুজন দাঁত কেলিয়ে হেসে বলল,
“ আসলে আমার ছেলে একদম বাপের মত হয়েছে।শ্বশুরকে চোখে হারায় বুঝলি।দেখ কেমন এখানেও চলে এসেছে? “
“ কে তোর ছেলের শ্বশুর। আমাকে দেখে কি তোর বুড়ো মনে হয়? শ্বশুর হওয়ার বয়স হয়েছে আমার? “
সুজন দাঁতে দাঁত চেপে বলল,
“ না তোমার তো শ্বশুর হওয়ার বয়স হয়নি তোমার বউয়ের শুধু শ্বাশুড়ি হওয়ার বয়স হয়েছে তাইনা?”
নিস্তব্ধ চোখ ছোট ছোট করে চাইলো।
সাদাফ আর নীবিড় দুই পান্ডা কাচুমাচু মুখ করে
সকলের সামনে এসে দাঁড়ালো।
জাওয়াদ অবাক হয়ে মাহীন আর সুজনের উদ্দ্যেশে সুধালো,
“এরা দুজন তোমাদের ছেলে আঙ্কেল? হোয়াট এ্যা সারপ্রাইজ। “
দুই পান্ডা নিজেদের মাথা আরো নিচু করে নিল।
গেল আজ তাদের সব ইজ্জত গেল। একদম বৃষ্টির পানিতে মাটি ধূয়ে নদীতে মিশে যাওয়া ন্যায়।
রাত তখন বারোটা প্রায়।
পড়ার টেবিলে বসা মাহরিসার ঘুমে চোখ ভেঙে আসছে অথচ তার আজকের দেওয়া টাস্ক কমপ্লিট হয়নি।
ঝিমুতে ঝিমুতে টেবিলে মাথা রাখতে নিতে ততক্ষণাৎ চট করে মাথা উঠিয়ে ফেলল আবার উফস। রাগে দুঃখে কয়েকবার মাথায় বাড়ি বসালো সে।মাথা ঝাঁকালো। তবুও কাজ হলো না। শেষমেশ উপায় না পেয়ে ওয়াশরুমে গিয়ে চোখে পানির ছিটে দিলো।
উহু তবুও কাজ হলো না।টেবিলে এসে একি দৃশ্য বারবার রিপিট হচ্ছে।
বাধ্য হয়ে ফোন হাতে নিলো।
ফোনের নেশায় এবারে যদি তার ঘুম বাবাজী গায়েব হয়।
এরপরও যদি ঘুম বাবাজী না পালায় তবে মাহরিসা সত্যি তাকে এবারে আগুনে পোড়াবে।
ঘুমের মাথায় হিসু করবে সে।
এরপর তার হিসুর বিশ্রি গন্ধে ঘুম বাবাজী চোখ বুঝতেও ভয় পাবে।আহা!
গন্ধ তীব্র করার প্রয়োজন পরলে সে দুই নম্বর কাজটা করতেও মোটে কৃপণতা করবে না।
ডিরেক্ট একশন নিতে হবে।
ফেসবুকে ঢুকে আদ্রিতকে লাইনে দেখে তার মাথায় দুষ্টু বুদ্ধি চাপলো।
আচ্ছা তার আদু ভাইকে যদি এই মুহুর্তে প্রশ্ন করা যায় ,
“ আদু ভাইয়া আপনি কি কখনো ঘুম বাবাজীর গায়ের উপর হিসু করেছেন কখনো? ওইযে ছোট বেলায় ঘুমের ঘোরে স্বপ্ন দেখতেননা না কলাগাছের মাথায়…..”
মাহরিসার ভাবনা সম্পূর্ণ হওয়ার সুযোগ দিতে একদমি নারাজ অধৈর্য আদ্রিত।
“এতরাতে অনলাইনে কি তোর? নাগর লাগবে? নাকি অলরেডি জুটিয়েছিস?ফুপিকে খবর দেব?জামাই লাগবে তোর?”
আদ্রিতের হঠাৎ এমন বিস্ময়কর তিরস্কার পূর্ণ মেসেজে বাকরুদ্ধ হয়ে ফোনের স্কিনের দিকে চেয়ে রইলো মাহরিসা।
“ আসতাগফিরুল্লাহ। কিসব ভাষা আপনার আদু ভাইয়া । নাগর জুটবো কেন আমি। নাগর কেন লাগবে আমার বলুন তো?”
“ তোর নাগর কেন লাগবে তা তো তুই ভালো জানিস।”
“ বাজে কথা বলবেন না আপনি একদম।আমার জামাই লাগবে আপনাকে আমি বলেছি?”
“ বলিস নি?”
“ কখন বললাম?”
আদ্রিত নিজের চোয়ালে হাত বুলাতে বুলাতে খসখসে কন্ঠে বলল,
“ এখন বল? “
“ আমার কোনো জামাই লাগবে না আদ্রিত ভাই। আপনি ফালতু কথা বলবেন না একদম।”
আদ্রিত বাঁকা হাসলো,
“ ভিডিও কল দে।”
মাহরিসা চোখ বড় বড় করে বলল,
“ কেন?”
“ তার কৈফিয়ত দিতে হবে তোকে?”
“ আফকোর্স দিতে হবে। আমায় কল দেবেন অথচ আমায় কৈফিয়ত দেবেন না”
“ তোকে কেন কৈফিয়ত দেব।কে তুই”
মাহরিসা তো দমে যাওয়ার পাত্র নয় আজ।
সে পরপর তীক্ষ্ণ জবাবে প্রত্যুত্তর করলো,
“ আপনি আমাকে কেন ভিডিও কল দেবেন আদ্রিত ভাই? আপনি কে?”
আদ্রিতের মেজাজ খারাপ হলো,
“ মুখে খই ফুটেছে তোর? জবান কি করে বন্ধ করতে হয় এই আদ্রিত খুব ভালো করেই জানে। “
“ তাতো একটু ফুটতেই হবে। আমি তো বোবা নই।”
আদ্রিতের কন্ঠে স্পষ্ট হুমকি।
ধূসর রংধনু ৩ পর্ব ১৩
“ ফারদার যদি তুই মুখে মুখে তর্ক করেছিস মারু। তোর জিভ টেনে ছিরবো আমি হাত বিহীন আই প্রমিস।”
ওপাশের লাইন কেটে গেল।
মাহরিসা হতভম্ব হয়ে বসে রইলো।
হাত ব্যতীত মানুষের জিভ কি করে ছেড়া যায়? লোকটা কি বদ্ধ পাগল?