ধূসর রংধনু ৩ পর্ব ১৭
মাহিরা ইসলাম মাহী
উত্তপ্ত দুপুরে গগনে লালাভ ছায়া।
ভার্সিটির হল রুমে আজ মানুষ জনের মেলা।
শুধু শিক্ষার্থী নয় তাদের বাবা মায়েরও।
অতীত যেন পুনরায় উঠে এসেছে এক পাল্লায়।
সকলেই কিভাবে কিভাবে যেন এক সুতোয় বাঁধা।
হাসি, ঠাট্টা, মাঝে বিচ্ছেদ, পুনরায় একত্রিত হয়েছে অতীতের কিছু হারিয়ে যাওয়া স্মৃতি’র সমাহার।
হলরুমে উপস্থিত এই মুহুর্তে তাসফি, নিস্তব্ধ, সুজন, আশা, মাহীন, সহ হাবিব স্যার।
বাসন্তী আসতে পারেনি।
হাবিব আড় চোখে নিস্তব্ধ’র পানে চাইছে ক্ষণে ক্ষণে, তো আবার তাসফির দিকে।
হিংসা হয় তার ভীষণ হিংসা।দুজন কে দেখেই তার হিংসা হয়।
তাসফি মেয়েটা ঠিক আগের মতোই রূপবতী রয়ে গেল।বছর বাড়লেও তার চেহারার জৌলুশে ভাটা পরে নি মোটেও।চামড়া কুচকায় নি। চুলে পাক ধরে নি।
মেয়েটাকে আজ আকাশী রঙা শাড়িতে, আসমানের পরি লাগছে।
আফসোস এই নারীকে আজও একটু খানি ছুঁয়ে দেওয়ার অধিকার তার নেই। হয়তো হবেও না কোনোদিন।
নিস্তব্ধ তীক্ষ্ণ চোখে চেয়ে আছে হাবিব স্যারের দিকে।
মনে হচ্ছে চোখ দিয়েই তাকে গিলে খাবে।
নিস্তব্ধ’র ইচ্ছে করছে এই মুহুর্তে গিয়ে সে হাবিবের গালে ঠাস করে থাপ্পড় বসিয়ে দেয়।
“ কেন রে রাস্কেল । এতবছর পরেও তোর কেন আমার বউয়ের দিকে নজর দিতে হবে।তুই বাড়ি গিয়ে নিজের বউয়ের দিকে নজর দে।
আরও গল্প পড়তে এখানে ক্লিক করুন
তোর নজরে আমার বউয়ের পেট খারাপ হলে, চামড়ায় ধ্স ধরলে তুই কি ঔষুধ কিনে দিবি? দিবি না যখন নজর কেন দিবি? তোর চোখ গেলে দেব।ছেলে মেয়েদের সামনে আজ তুই বেঁচে গেলি হারামজাদা। নিশ্চিত মহিলা রুগী তের কাছে এলে তাদের লেজ ধরে থাকিস৷ আহের ছুঁকছুঁকানি অভ্যাস গেল না তোর।”
নিস্তব্ধ’র মনের সকল ভাবনা যদি এই মুহুর্তে বাইরে বেরিয়ে আসতো তবে নির্ঘাত দুজনের মাঝে পূর্বের ন্যায় গন্ডগোল বেঁধে যেত।
সাদাফ আর নিস্তব্ধতা দুজন দুদিকে মুখ করে বসে আছে।
দুজনের চোখে চোখ পরলেই নিস্তব্ধতার চোখে আগুন ঝরে আর সাদাফের চোখে অসহায়ত্ব।
নিস্তব্ধতাকে আজ তাসফি নিয়ে এসেছে ভার্সিটিতে।
জাওয়াদ অদিতিকে কে গম্ভীর কন্ঠে জিজ্ঞেস করলো,
“ তোমার গার্জিয়ান কোথায় অদিতি ?”
জাওয়াদের হঠাৎ প্রশ্নে অদিতি চমকে উঠে।
এই অদ্ভুত গোছের প্রফেসর লোকটা তার নামটা মনে রেখেছে? অদিতির মনে সঙ্কা।সে নিজেও চিন্তিত তার মা কে নিয়ে ।তার মা এখনো কেন আসছেনা।এমনিতেই কদিন যাবত তার মায়ের শরীর টা ভালো যাচ্ছে না।
দরজার দিকে কয়েকবার করে তাকালো সে।ওই তো তার মা চলে এসেছে।
বেগুনি রঙা শাড়িতে হলরুমের দরজার সামনে থমকে দাঁড়িয়ে থাকতে দেখা যায় এক সুন্দরী নারী কে।ব্রিটিশদের ন্যায় ফর্সা মুখশ্রী হতে আগের সেই উজ্জ্বলতা ঠিকরে বের হচ্ছে।
সুজন নিষ্পলক চোখে চেয়ে রয় সে রমণীর পানে।
পুরোনো অনুভুতির দাবানল কেমন যেন হৃদমাঝারে হু হু করে উঠে। মনকে শাষায় সে। নিষিদ্ধ জিনিসে অনুভূতি প্রকাশ পাওয়া বেমানান।
তবুও মন কি পুরনো স্মৃতি এত সহজে ভুলতে পারে? পারে না তো।
এতবছর বাদে তৃপ্তি সকলের দেখা পেয়ে খানিকটা অপ্রস্তুত হয়। এতবছর একটুখানি ভালো থাকার আশায় সকলের থেকে তার পালিয়ে বেড়ানো।খোদা কেন পুনরায় তাকে অতীতের মানুষগুলোর সামনে এনে ফেলল।এখানে এভাবে সকলের মুখোমুখি হবে তার কল্পনায় ও ছিল না।সকলের মাঝে তৃপ্তির অতি প্রিয় মানুষটার মুখ চিনতে একদমই ভুল হয় না।
কি ভাবছেন সুজন? উহু । আশা।
হ্যাঁ আশা। যে তাকে জীবনের সঠিক লক্ষে পৌঁছাতে ভীষণ সাহায্য করেছে।
আসলে জীবনে কখনো কখনো অতিপ্রিয় জিনিসটি হারালে তার শূন্যতা অনুভব করতে পারলেই হৃদয়ে ব্যাথা অনুভূত হয়।বোধগম্যতা অধিক প্রসারিত হয়।
নদীর স্রোত সর্বক্ষণ একদিকে প্রবাহিত হলে তো নদীতে থাকা সকল আবর্জনা একক স্থানে জমা হবে।তেমনও জীবনটাও এমন।একভাবে জীবনের গতি চলতে থাকলে তাতে ছন্দ থাকে না। মাঝে মাঝে পরিবর্তন প্রয়োজন। খুব করে প্রয়োজন।
প্রথমে তাসফি নিস্তব্ধ কে তার কাছ থেকে কেঁড়ে নিলো এরপর আশা সুজনকে ভালোবেসে তাকে পথ দেখিয়েছে ।জীবনে ভালো থাকার রাস্তা দেখিয়েছে।
তৃপ্তি টিপটিপ পায়ে এগিয়ে গিয়ে বসে পরলো একটা চেয়ারে।
গোলাপী বেনারসী পরা পুতুল আশার গলার দিকে তাকিয়ে চমকে উঠলো তৃপ্তি।
হতভম্ব বদনে চেয়ে রইলো সে।
আশার গলায় তার দেওয়া লকেট টা এখনো ঝুলছে। এও কি সম্ভব?
এতবছর পর জীবন তাকে এত সুন্দর উপহার দেবে সে কখনো ভাবেনি।কারণ অতীতের সেই দুঃখের পর সুখ তার জীবনে আর দীর্ঘস্থায়ী হয়নি। তার হাসবেন্ড নিখিল আর নেই।
খুব নির্মম ভাবে কেঁড়ে নিয়েছে তার থেকে।
আসলে খোদা তাকে পাপের শাস্তি দিয়েছে।
সেও লেগে পরেছে পাপের প্রাশ্চিত্ত করতে।
তৃপ্তি মেনে নিয়েছে তার ভাগ্যকে।
মিনিট কতক কাটতেই সেথায় আগমন ঘটে আরাধ্য’র। আরাধ্য কে দেখে তাসফি, আশা দুজনেই অবাক হয়।
এতবছর পর আরাধ্যকে দেখে সকলেই অবাক।
আরাধ্য নিজেও চমকিত।
তাসফি কথা বলতে ইচ্ছে হয় ছেলেটার সঙ্গে। কিন্তু কোনো এক জড়তা আঁকড়ে ধরে তাকে।
এত বছরের জড়তা কি করে কাটবে?
নীলাদ্র গম্ভীর ভঙ্গিতে বসে আছে।৷ বাবা আসলো কি গেল তার কিছু যায় আসে না।
নাওমী উদাস ভঙ্গিতে বসে আছে
কাশফি ফিসফিস করে বলল,
“ তোর মা এ….এলো না যে নাওমী?”
কাশফির জিজ্ঞাসার আগেই হলরুমে আগমন ঘটলো এক নারীর।কে না চেনে তাকে।অতীতের বিশ্বাস ঘাতকতার আর প্রতিশোধের লড়াই আজও কি চলছে নীরবে? কে জানে।
নাওমী নিজের মা কে পরিচয় দিতে ইচ্ছুক নয়।
মান্সা মেয়ের পাশে গিয়ে বসে।নাওমী টু শব্দ শব্দটি করে না।
মান্সা তীক্ষ্ণ চোখে চায় তাসফির পানে।
মান্সার চোখের তাসফির জন্য আজও জেগে উঠে সেই পুরনো ক্ষোভ।আর নিস্তব্ধ’র প্রতি পূর্বের আগের।
তাসফি চায় মান্সার রোগাপাতলা চেহারার দিকে।
তার চোখে আগুন। যেন যে কোনো মুহুর্তে, কোনো পরিস্থিতিতে তার সেই আগুনে শত্রুকে পরাজিত করে ভষ্ম করে দিতে যথেষ্ট।
এবারে ষোলোকলা পূর্ণ হলো বুঝি।
জাওয়াদ আদেশ করে উপস্থিত শিক্ষার্থীদের বাহিরে যেতে।
জাওয়াদ নিজেও এক্সকিউজ মি বলে বেরিয়ে আসে।
বাইরে আসতেই জাওয়াদের ফোনে কল আসে।তার বাবা সৃজনের কল।
রিসিভ করতেই ওপাশ থেকে ভেসে আসে সৃজনে উত্তেজিত স্বর,
“ সবাই এসেছে তো মাই সান?”
“ ইয়েস ড্যাড।মিশন সাকসেসফুল। “
ওপাশে সৃজন ও মুচকি হাসে।
জাওয়াদ যখন ছাত্র ছাত্রীদের আইডেন্টিটির পাশে গার্জিয়ানের নামগুলো স্পষ্ট ভাবে লক্ষ করে।বাবার মুখে শোনা অতীতের ভাঁজ পরা পাতা গুলো মেলতে শুরু করে অনায়াসে। তখনই ঠিক করে রেখেছিলো সকলকে মুখেমুখি করবে সে।
মিটিয়ে দেব সকল বিবাদ।
সৃজন এই কার্যে তাকে সাহায্য করেছে অনেকটা।
জাওয়াদ আরো খানিকটা সামনে এগিয়ে যেতেই
নীলাদ্র’র অসভ্যতামি চোখে বাঁধে তার।
“ ক্লাসের বাহিটে দাঁড়িয়ে স্মোক করছো কেন তুমি?অসভ্যতার লিমিট থাকা দরকার।”
“ আহাঃ ডিস্টার্ব করবেন না প্রফেসর।আমি কি আপনার কোনো কার্যে ডিস্টার্ব করেছি বলুন?
ভার্সিটির কোথাও কি নোটিশ টানানো আছে এখানে স্মোক করা যাবে না?
দেখান দেখি? দেখাতে পারলে আপনাকে একটা সিক্রেট বলবো প্রমিস।”
জাওয়াদ চমকে উঠলো নীলাদ্র’র কথায়।
ছেলেটা মোটেও সুবিধার নয়।
“ কোন কাজের কথা বলছো তুমি?”
নীলাদ্র রহস্যময় হাসলো।
“সব জেনে বুঝে ভাণ ধরা মানুষদের সুদর্শন মুখ খানি দেখে আমি সহজেই বুঝে যাই তাদের মতিগতি। বলতে পারেন এটা আমার স্পেশাল পাওয়ার প্রফেসর। সিগারেট খাবেন প্রফেসর?”
“ বেয়াদব ছেলে। স্টুপিড। সরো সামনে থেকে।”
জাওয়াদ রাগ দেখিয়ে সামনে হাঁটে।
নীলাদ্র পেছন থেকে হাঁক ছেড়ে ডাকে।হেসে বলে “সিক্রেট শুনবেন না প্রফেসর।”
জাওয়াদ দাঁড়ায় না।
নীলাদ্র ঠোঁট বাঁকিয়ে হাসে।সিক্রেট টা না শুনে কিন্তু বড্ড মিস করলেন প্রফেসর।
মাহরিসা তার মাত্র হওয়া ছেলে বন্ধু পিয়াসের সঙ্গে আড্ডায় মশগুল।
হ্যাঁ মাত্র হওয়া এই তো মাত্রই সে আর রোশনী পিয়াসকে বন্ধু বানালো।
খানিকক্ষণ আগে রোশনী যখন বলল,
“ দোস্ত জীবনটা কেমন বোরিং হয়ে যাচ্ছে। কলেজ পড়া, কলেজ পড়া। উফফ।
একটা ছেলে ফ্রেন্ড থাকলে অন্তত আড্ডা দেওয়া যেত। অন্তত ফ্রিতে ওদের পকেট খালি করে ফুসকা তো খাওয়া যেত।”
মাহরিসা ভাবনায় মশগুল।হঠাৎ কিছু মনে হলো তার।চট করে উঠে দাঁড়িয়ে সুধায়,
“ চল যাই।”
“ কোথায়?”
রোশনীর কন্ঠে অবাকের লেশ।
কিন্তু মাহরিসার কন্ঠে চঞ্চলতা।
“কোথায় আবার ছেলে বন্ধু বানাতে।চল চল।”
মাহরিসা রোশনীকে টানতে টানতে নিয়ে যায়। সেই মোতাবেক তারা পিয়াসকে খুঁজে পেয়েছে। ব্যাপার না।একজন কেন তারা চাইলে ছেলে বন্ধু’র লাইন লেগে যাবে।
গল্পে গল্পে মাহরিসার মুখে হাসি উপচে পরছে।
পিয়াস ছেলেটা বড্ড হাসির কথা বলতে পারে।
অন্তত কোনো আদু ভাইয়ের মত তাকে ধমকায় না, গুমড়ামুখো ও নয়। মাহরিসার ফোন বাজছে সমান তালে।
আদ্রিতের নাম্বার দেখে সে চট করে ফোনটা বন্ধ করে দিলো।
নিজের চেম্বারে দাঁড়িয়ে আদ্রিত তা স্পষ্ট অবলোকন করলো। রমণীর এই মুখের হাসি কতক্ষণ থাকে সেও দেখে নেবে।
ছলনাময়ী বেয়াদব নারী।
হাতে থাকা স্মার্ট ফোনটা তীব্র রাগে দূরে ছুঁড়ে ফেলল সে।
দামী ফোনে সে আছাড়ে কিচ্ছুটি হলো না।হয়তো সামান্য কাচ ফেটেছে।
রাগে চোয়াল শক্ত করে দাঁড়িয়ে রইলো আদ্রিত।
মাথা ফেটে যাচ্ছে তার।
এই মুহুর্তে অসভ্য মেয়েটার গালে ঠাস ঠাস করে দুটো থাপ্পড় বসাতে পারলে বুঝি তার শান্তি হতো।
স্মৃতি ম্যাম চেম্বারে ঢুকলো ততক্ষণাৎ।
আদ্রিতের দিকে চেয়ে অবাক স্বরে বলল “এসব কি আদ্রিত কি করছো তুমি?”
“ তোমায় কি আমার কৈফিয়ত দিতে হবে? যাস্ট লিভ।”
স্মৃতি রেগে গেল,
“ লিভ নেব মানে।তোমার সঙ্গে আমার গুরুত্বপূর্ণ কথা আছে।”
আদ্রিত স্মৃতি ম্যামের পরবর্তী কথা শোনার অপেক্ষা করলো না।হনহন করে হেঁটে বেরিয়ে গেল চেম্বার ছেড়ে।
হাত মুষ্টিবদ্ধ করে দাঁড়িয়ে রইলো স্মৃতি।
আঁধা ঘন্টা বাদে জাওয়াদ সহ সকলে হলরুমে ফেরত এলো পুনরায়।
জাওয়াদ অবাক হলো সকলের পূর্বের ভাবমূর্তি দেখে।
আশ্চর্য সকলকে স্পেস দেওয়ার পরেও কি কেউ কারো সঙ্গে কথা বলেনি?
আঁধঘন্টা আগে ঠিক সে যেমন করে সকলের গম্ভীর, হতভম্ব মুখশ্রী দেখে গিয়েছিল এখনো ঠিক সে আগের ন্যায়।
নিস্তব্ধ থমথমে কন্ঠে বলল,
“ এবারে পয়েন্টে আসা যাক জাওয়াদ।বলো কি বলবে।”
জাওয়াদ তীক্ষ্ণ দৃষ্টিতে নিস্তব্ধ’র পানে চায়।
“ গার্জিয়ান হিসাবে আপনাদের সতর্ক করতে ডেকেছি। ছেলে মেয়ে কে সঠিক শিক্ষা দেবেন।
দেননি সেটা তো দেখেই বোঝা যাচ্ছে।
এটলিস্ট বাড়ি গিয়ে তাদের ভদ্রতা শেখাবেন। এতদিন শেখান নি এখন থেকে শিখাবেন।অন্তত প্রফেসরদের কি করে সম্মান করতে হয় সেটা।
ভার্সিটিতে হাঙ্গামা করতে নিষেধ করবেন। এটা কারো বাপের সম্পত্তি নয়। অন্তত কোনো ভদ্রঘরের সন্তান ভার্সিটিতে এসে মাস্তানি করে না নিশ্চিত।”
আরাধ্য জাওয়াদ কে থামিয়ে বলল,
“ যদি ছেলে বাবার কথা না মানে।বাবার চোখের বাহিরে হারিয়ে যায়।”
জাওয়াদ শক্ত গলায় বলল,
“তবে সেটা আপনাদের ব্যর্থতা।বাবা-মা হয়েছেন ছেলে মেয়ে কে ছোট থেকে আদর্শ মানুষ হিসাবে বাঁচতে শেখান নি কেন? আপনাদের মত গুরুজন দের থেকেই এখনকার পোলাপান সব বেয়াদব, মাস্তান হয়।বুঝেছেন। আপনাদের ব্যবহার থেকেই কিন্তু পোলাপান গুলো তাদের জীবনের অস্তিত্ব খোঁজে মিস্টার আরাধ্য। আপনারা কেয়াফুল না হলে আপনাদের ছেলেমেয়ে কেন কেয়ারফুল হনে কোন কারণে বলুন তো।”
আরাধ্য থমকে থাকে।
আসলেই তাদের ব্যর্থতা। তারা বাবা-মা হয়েও ছেলে মেয়েকে সুস্থ পরিবেশ দিতে পারে নি এর সে বড় কষ্টের আর কিই বা আছে।
এই রহস্যময় জীবনে তারা রহস্যের জালে জরিয়ে গেছে। আজও পারেনি সে জাল ছিঁড়তে।
নিস্তব্ধ জাওয়াদের চোখে চোখ রেখে বলল,
“ বেশ তবে আমাদের ছেলেকে তুমি মানুষ করো।দেখি কতটা কি করতে পারো।”
জাওয়াদ মুচকি হাসে।
“ তা তো নিশ্চয়ই। আপনাদের অসভ্য ছেলেদের মানুষ করতেই তো এখানে আমাদের আসা।”
নিস্তব্ধতা তার মাঝে ফোড়ন কাটলো, তিয়াশার পানে তীক্ষ্ণ চোখে চেয়ে সুধালো,
“ ভুল বললেন প্রফেসর।এখানে কিছু সংখ্যকবাদে কেউ কিন্তু অসভ্য নয়। তাই আপনার উচিত ছিল নাম উল্লেখ করা।
আমাদের দেখেছেন কারো সঙ্গে অসভ্যতামি করতে? “
“ দেখতে হয় না নিস্তব্ধতা। মাঝে মাঝে সিক্সসেন্স জিনিসটা বড্ড কাজে লাগে।”
মাহীন সকলে থামিয়ে বলল,
“ ওকে প্রফেসর। আপনার কথাই মেনে নিলাম।
আমাদের ছেলে মেয়েরা ভদ্রতা জানে না। তবে অসভ্য নয়।
যতটুকু দরকার তুমি শিখিয়ে পরিয়ে নিও।
আমরা তবে এবারে উঠি।”
যাবার পথে নীবিড় ফিসফিস করে নাওমী কে অবাক হয়ে সুধায়,
“ নাউডিবা চশমিশ এই যে তোমার মা?”
“ না।”
নাওমী শক্ত চোয়ালে শুধায়।
ধূসর রংধনু ৩ পর্ব ১৬
নীবিড় ভ্রু ড্যাবড্যাব করে চায়।
বলে কি মেয়েটা। তখন বলল মা। এখন বলছে না। আশ্চর্য।
ডিভোর্স তো হয়েছে ওর বাবার সঙ্গে। মেয়ের সঙ্গে মাের তো আর ডিভোর্স হয় না।
“ কখনো কখনো মানুষের মনের সঙ্গে ও ডিভোর্স হয়। মহিষের বাচ্চা। ওসব আপনি বুঝবেন না। আপনার মন আছে নাকি?”
নাওমী হন হন করে হেঁটে চলে যায় আরো দূরে।
নীবিড় হতভম্ব দৃষ্টিতে চেয়ে রয় নাওমীর পানে। সে মহিষের বাচ্চা? মেয়েটা জানলো কেমন করে।