ধূসর রংধনু ৩ পর্ব ২৪

ধূসর রংধনু ৩ পর্ব ২৪
মাহিরা ইসলাম মাহী

মানব নিঃশব্দে প্যান্টের দুপকেটে হাত রেখে কাশফির পেছনে এসে দাঁড়ায়।
“ কাঁশি কি এখানে সার্কাস দেখাচ্ছে তিয়াশা?”
হঠাৎ নীলাদ্র’র কন্ঠ শ্রবণ হতেই কাশফি চমকে চায়।নিজের নামের বিকৃতিতে বিরক্ততে ভ্রুদ্বয় কুঁচকে যায় তার আপনা-আপনি। চট করে ভেঙচি কাটে,দেখ দেখ বিড়ি খাওয়া নীল সমুদ্রের কথার স্টাইল দেখ।
মহাশয় কে সে সারা
ভার্সিটি খুঁজে এলো আর মহাশয় ঠিক এখানে এসে উপস্থিত হয়েছে কাশফি কে অপদস্ত করতে।
তিয়াশা দাঁতে দাঁত চেপে বলল,

“ একদম ঠিকই ধরেছিস নীলাদ্র।দিনের পর দিন মেয়েটা সার্কাসই করছে। এই মেয়েকে দেখে মনে হয় যেন ভাজা মাছটা উল্টে খেতে পারে না।অথচ এই অসভ্য মেয়েটার গিঁটে গিঁটে শয়তানি।”
কাশফি চোখ বড় বড় করে চায়।
“ অসভ্য ডাইনী বলে কিনা তাকে অসভ্য কত্তবড় সাহস।”
কাশফি বোকা হেসে বলল,
“ ডোন্ট মাইন্ড আপু।আমার মনে হয় আপু আপনার বোধহয় বোঝার কোথাও ভুল হচ্ছে। আমি ভাজা মাছ খুব সুন্দর করে উল্টাতে পারি।একটুও তেল ছিটে না কড়াইয়ে।বরং খুন্তিতে উঠিয়ে ঠান্ডা করে খুব সুন্দর করে কাঁটা বেঁছে খেতেও পারি।
প্লিজ আপু আমার সম্পর্কের ভুল তথ্য গুলো নিজের মন থেকে ধূয়ে মুছে ছাফ করে ফেলুন প্লিইইইজ।”
নীলাদ্র আনমনেই কাশফির কথার জবাবে মুখ টিপে হাসে।
তিয়াশা তীক্ষ্ণ দৃষ্টিতে চেয়ে কাশফিকে অবলকন করে বলল,

আরও গল্প পড়তে এখানে ক্লিক করুন 

“ এতটা পরিবর্তন? হাউ ইজ দিস পসিবল ? তুতলারানীর মুখে তো দেখছি কথার ফুলঝুরি ঝরছে।বেশ ইন্টারেস্টিং তো।”
কাশফি লাজুক হেসে বলল,
“ কি যে বলেন না আপু।সাহস তো জুগিয়ে নিতে হয় ধীরে ধীরে। প্রথমেই তো কেউ কিছুতে দক্ষ হয় না বলুন। হয় কি?”
কাশফি নিজের কার্যকলাপে নিজেই অবাক হচ্ছে। আসলেই তো। হঠাৎ তার এত উন্নতির কারণ কি।এত সাহস কই থেকে যোগালো সে।উমম ভাববার বিষয় তো।
“ তুমি…”
“ স্টপ, যাস্ট স্টপ ইট।”
নীলাদ্র দু’জনকে থামিয়ে ভ্রু কুঁচকে বলল,

“ তিয়াশা কি বাচ্চা একটা মেয়ের সঙ্গে বাচ্চাদের মতন ঝগড়া করছিস।এই মেয়ের নাক টিপলে দুধ বের হবে।তার সঙ্গে তোর ঝগড়া করা মানায় বল?
আর কাঁশি তোমার ক্লাস নেই? অহেতুক তর্ক করছো সিনিয়র আপুর সঙ্গে। অভদ্র মেয়ে।
যাও তো ক্লাসে যাও।”
কাশফি ভেঙচি কাটে চট করে সরে পরে ওই স্থান হতে।
যাক বাবা এযাত্রায় বেঁচে গেছে।
অসভ্য নীল সমুদ্র। আর বেয়াদব ইয়া বড় নক ওয়ালা ডাইনী।
নীলাদ্র’র শোনানো গল্পের পরবর্তী টুকু জানার কথা সে বেমালুম ভুলে বসে।হয়তো আবার কখনো মনে পরবে চট করে।ওমনি ছুটবে সে পুনরায়।
কোনো এক অজানা কারণে তিয়াশা অগ্নি চোখে চেয়ে রয় কাশফির গমন পথের পানে।
প্রতিহিংসায় জ্বলজ্বল করে অদৃশ্য দ্বীপ শিখা জ্বলে উঠে তার হৃদগহীনে।

সাদাফ, নীবিড়, নিস্তব্ধতা সহ বাকি সকল ফ্রেন্ড বসে আছে ভার্সিটির মাঠে বিশাল বটগাছটার নিচে।
সাদাফ নীবিড়ের কাধ জরিয়ে।
নিস্তব্ধতা ফোন স্ক্রল করছে।তার পায়ের ব্যাথা এই মুহুর্তে নাই বললেই চলে।
“ বুঝলি নীবিড় আজকাল মানুষ রাত দুইটা,তিনটার সময় ও ডেটে বের হয়।”
সাদাফের হঠাৎ এমন আশ্চর্যজনক কথায় নীবিড় চোখ বড় বড় করে বলল,
“ বলো কি? স্বাধের ঘুম বাদ দিয়ে ডেট? অসম্ভব। মধুচন্ডিমা দিনে করার বহুত সুযোগ আছে ভাই।”
“ সম্ভব সম্ভব। নিউ জেনারেশন বুঝিস না। এদের সবই নিউ কার্যক্রম।শুধু আমরাই একটু খানি আধুনিক হতে পারলাম না রে মহিষের বাচ্চা। “

নিস্তব্ধতা তীক্ষ্ণ দৃষ্টিতে সাদাফের পানে চেয়ে।
সে বোঝার চেষ্টা করছে সাদাফ কাকে মিন করে কথা গুলো বলছে।
যদি তাকে বলে থাকে তবে নিস্তব্ধতা যে রাত তিনটার সময় প্রফেসর জাওয়াদের সঙ্গে বাসায় ফিরেছে সে কথা তো সাদাফের জানার কথা নয়।আর সে তো ডেটে যায় নি মোটেও। তবে?
এর মাঝে সেখানে জাওয়াদ এসে উপস্থিত হয়।জাওয়াদের আগমনে সাদাফের জলন্ত বক্ষে ঘি ঢালার কাজ করে।
“ কেমন আছো নিস্তব্ধতা? তোমার পায়ের কি অবস্থা এখন?”
নিস্তব্ধতা মেকি হেসে বলে,
“ জ্বী আলহামদুলিল্লাহ প্রফেসর। সব ঠিক তো?”
“ একদম।”
সাদাফ চোখ মুখ শক্ত করে দাঁড়িয়ে রয়।

“ ক্লাস নেই তোমাদের? ক্লাসে যাও।আড্ডা দেওয়ার সময় পাবে অসংখ্য । যাও নিস্তব্ধতা। “
জাওয়াদ ক্লাসের দিকে পা বাড়ায়।
সাদাফ অদৃশ্য ঘুসি মারে জাওরাটার চোখে মুখে।
তার স্বপ্নটা যদি কোনো ভাবে পূরণ হতো।
ক্লাস আমরা করবো কি না করবো তা তুই বলার কে বে।জাওরা একটা।
জাওয়াদ যে একজন প্রফেসর আর তার যে তার ছাত্রীদের আদেশ করার সম্পূর্ণ সাহস রাখে সাদাফ তা মানতে নারাজ।
ভার্সিটিতে প্রবেশ পথে নাওমী নীবিড় দের পাশ কাটিয়ে যাওয়ার পথে সাদাফের উদ্দেশ্যে আদুরে চোখে চেয়ে মিষ্টি স্বরে সুধায়,

“ ভালো আছেন সাদাফ ভাইয়া?”
সাদাফও তার প্রশ্নে মিষ্টি কন্ঠে হেসে জবাব দিলো।
সাদাফ নীবিড়ের কানে কানে ফিসফিস করে বলল,
“ ইশশ দেখ কি মিষ্টি করে ভাইয়া ডাকলো আমায় তাইনা?
নীবিড় বিরবির করে বলল,
“তোমার ভাইয়ার খ্যাতায় আগুন। ইয়া খোদা ওই মিষ্টিতে তুমি নিমের রস ঢেলে দাও।
লাল পিঁপড়ার বহর সাজিয়ে দাও।এই অবুজ শিশুর দোয়া তুমি কবুল করে নাও ইয়া মাবুদ।”
সাদাফ পুনরায় বলল,

“মেয়েটার গলার স্বরটাও বড্ড মিষ্টি তাইনা?”
নীবিড় হিংসুটে দৃষ্টিতে চায়।
পুনরায় বিরবির করে,
“ মিষ্টি না ছাঁই আস্ত তেঁতো করলা। ছলনাময়ী নাউডুবা চশমিশ।
সাদাফের পাশে দাঁড়ানোয় নিস্তব্ধতা সাদাফের ফিসফিস করে বলা সকল বাক্য স্পষ্ট শ্রবণ করেছে।
নাওমী নামের মেয়েটার দিকে তীক্ষ্ণ দৃষ্টিতে চায় সে।আদৌও কি চায় মেয়েটা?
জাওয়াদ চলে যায়।
নিস্তব্ধতা ভাবলেশহীন ভঙ্গিতে নিজের পায়ে পরিহিত হিল খানা সাদাফের পায়ের উপর ঠেসে ধরে।

“ উউউউ। “
এক লাফ দিয়ে সাদাফ দুইহাত সরে দাঁড়ায়।
তাজ্জব বোনে গোলগোল চোখে নিস্তব্ধতার পানে চায়।
নীবিড় অবাক কন্ঠে বলল,
“ কি হলো ভাই?”
সাদাফ মাথা নাড়ায়।কিছুনা বোঝায়।অথচ নীবিড় স্পষ্ট দেখলো সাদাফের পা লাল হয়ে আছে।
নাওমী নীবিড়ের দিকে চেপে এলো।
ফিসফিস করে বলল,
“ ভালো আছেন মহিষের বাচ্চা? “
নীবিড় দাঁতে দাঁত পিষে অগ্নি চোখে চায়।
নাওমী দাঁত কেলিয়ে হেসে ফিসফিস করে সুধায়,
“ মহিষের বাচ্চা আপনি কি জানেন আপনি আস্ত একটা মাকাল ফল?”
“ মিস নাউডুবা চশমিশ তুমি কি জানো তুমি একটা অকালপক্ক মেয়ে মানুষ।
বয়সের আগে বড্ড পেঁকে গিয়েছো তুমি।”

“ উহুউউ একদমি না।বরং আপনি আসলেই একটা মাকাল ফল। মাকাল ফলের উপরেরটা দেখতে যেমন লোভনীয় আপনিও তেমনটাই কিন্তু আপনার ভেতরটা একদম ওই ফলের ন্যায় নর্দমার আবর্জনার মতন পঁচা।যাকে বলে একদম কুৎসিত, বুঝলেন মহিষের বাচ্চা ।”
“ তোমায় আমি খুন করবো নাউডুবা চশমিশ। “
“ উহু তা আপনি চাইলেও পারবেন না।”
“ দেখতে চাও? চ্যালেঞ্জ করছো তুমি আমায়।ওকে আই এক্সেপ্টেড। “
“ মহিষের বাচ্চা আমি কিন্তু আপনার নামে মার্ডারের মামলা দেব।”
নীবিড় প্যান্টের পকেটে হাত দিয়ে ভাব নিয়ে বলল,
“ আগে মারি। তারপর নাহয় দিও।”
নাওমী চোখ বড় বড় করে চায়।
মহিষের বাচ্চার কত্তবড় সাহস।
পরক্ষণেই শুষ্ক ঢোক গিলে।এই ছেলেকে দিয়ে কিছুতেই বিশ্বাস নেই।

উত্তপ্ত বাতাসে চারপাশে উষ্ণতা ছড়িয়ে ছিটিয়ে।
বোঝাই যাচ্ছে সূর্যিমামা মানুষ্যজাতির উপর বড্ড ক্ষীপ্ত।অদৃশ্য ভঙ্গিতে কম্পমান ভুমি।নেহাৎ-ই তা কেবলমাত্র মাহরিসার নিকট।
রিক্সা ওয়ালা মামার ভাড়া মিটিয়ে দুরুদুরু বুকে কলেজের গেটে পা রাখে সে।
পায়ের সঙ্গে কম্পমান তার পুরো শরীর।সমস্যা টা এখানেই। নির্বোধ মানবী নিজের শরীরের বদলে দোষ দিতে চাইছে অবুঝ ভুমিকে।আজ এক সম্পূর্ণ নতুন পরিচয়ে কলেজে পা রেখেছে সে।
মাহরিসার কলেজের যত ভিতরে প্রবেশ করে করে তার বুকের মাঝের ধুকধুক করে।উত্তেজনায় আড়ষ্ঠ হয় কন্ঠনালী।
গলা শুঁকিয়ে কাঠ কাঠ। ভয়ে দম ফাটার উপক্রম তার।
কিছু ছেলে মেয়ে যখন আঁড় চোখে তার দিকে তাকাচ্ছিলো।মাহরিসা মনে হচ্ছে সকলে সব কিছু জেনে গিয়েছে।সকলে জেনে গিয়েছে,

ডাঃআদ্রিত শেখ নিভৃত তার সদ্য বিবাহিত অর্ধাঙ্গ।
কিন্তু সেসব যে নেহাৎ-ই তার মনে ভুল সে কথা মন কে সরণ করিয়ে শিখিয়ে পড়িয়ে মুখস্থ করায় কে।
ক্লাসে ঢোকার পথে আদ্রিতের সঙ্গে চোখাচোখি হয় তার।লোকটা কোথাও যাচ্ছে বোধহয়।
মানবের চাউনি রহস্যময়।
সে চাউনিতে মাহরিসার বুক কাঁপে পুনরায়।
অথচ তার আদু ভাই তাকে একদম অচেনা অজানার ন্যায় পাশ কাটিয়ে চলে যায়।
মাহরিসা সে স্থানে থমকে দাঁড়ায়।
রোশনীর হঠাৎ আক্রমনে ভয় পেয়ে ছিটকে সরে যায় সে।
রোশনী হঠাৎ অদ্ভুত আচরণে রোশনী তাজ্জব বনে চায়।
“ হোয়াটস ইউর প্রবলেম মারু? যেভাবে সিটকে সরলি মনে হলো কারেন্টের শক খেলি।”
মাহরিসা আমতা আমতা করে বলল,

“ না… ওই আসলে একটু.. হঠাৎ চমকে গিয়েছিলাম।”
“ সেটাই তো বলছি আমাকে কি তোর বাঘ ভাল্লুক মনে হয় যে চমকাবি আশ্চর্য। “
মাহরিসা জবাব দেয় না।আদৌও তার নিকট কোনো জবাব নেই।
আজ আদ্রিতের ক্লাস নেই।
স্মৃতি ম্যাম ক্লাসে ঢুকেই সর্বপ্রথম তার নজর কাঁড়ে মাহরিসা।
বিয়ের পরে কি মেয়েটার গায়ের রঙের উজ্জ্বলতা খানিকটা বেড়েছে? নাকি স্মৃতির চোখের ভুল। মেয়েটাকে মাঝে মাঝে খুন করতে তার বড্ড ইচ্ছে জাগে।
চোখ বুজে রাগ নিয়ন্ত্রণের চেষ্টায় সে।
যতবার এই মেয়েটা তার চোখের সামনে আসে তার সাজানো গোছানো গোটা পৃথিবী এলো মেলো হয়ে যায়।
আচ্ছা তার আদ্রিত কি গতরাতে মেয়েটাকে গভীর ভাবে ছুৃয়ে দিয়েছে?
মাতাল আদরে জর্জরিত করেছে কি?
না, অসম্ভব। হাতে থাকা কলমটা মুট পাকিয়ে ধরে স্মৃতি।

পরদিন ক্লাসে মাহরিসার নাকে ডায়মন্ডের নাকফুল স্মৃতি’র চক্ষু গোচর হতেই প্রতিহিংসায় জ্বলে পুড়ে খাক হয়ে যায় তার হৃদয়।
সে স্পষ্ট বুঝতে পারে ওই নাকফুল আদ্রিতের দেয়া কারণ গতকাল বাসায় ফেরার পথে সে নিজে দেখেছে আদ্রিতকে জুয়েলারি সপে প্রবেশ করতে।
এই মেয়েটা যদি আজ তার আর আদ্রিতের মাঝে না আসছো এই সব সুখ তার হতো।
অথচ বোকা স্মৃতি কি জানে ডাঃআদ্রিত শেখ এর হৃদয়ে তার মেরিগোল্ড গোল্ড হয়ে ধরা দিয়েছে তার সঙ্গে পরিচয়েরও বহু বহু আগে।
সৃজনী আর রোশনী ফিসফিস করে মাহরিসার কানে কানে ফিসফিস করে জিজ্ঞেস করে। “ এই মারু এত্ত সুন্দর নোজপিন টা পেলি কোথায় বলতো কোন জুয়েলারির দোকান থেকে নিয়েছিস। “
নাকফুলের কথা শরণ হতেই মাহরিসা তনু লজ্জায় লাল বর্ণ ধারণ করে।
রোশনী ড্যাবড্যাব করে চেয়ে মাহরিসার বাহুতে ধাক্কা দেয়।

“ এই মেয়ে কি আশ্চর্য, মারু তুই লজ্জা পাচ্ছিস কেন?”
সৃজনী ভালো করে মাহরিসার নাকফুলটার দিকে চেয়ে সুধায়,
“ এটা ডায়মন্ডের রোশনী।”
সৃজনীর কথায় মাহরিসা নিজেও চমকায়।আসলে সে নিজেও বুঝতে পারেনি এই সামান্য নাকফুল টা ডায়মন্ডের হবে।
সে ভেবেছিলো হয়তো কোনো দামী স্টোন বসানো হতে পারে।
রোশনী তিক্ষ্ণ চোখে মাহরিসার চমকানো হাবভাব লক্ষ্য করে বলে,
“ মারু সত্যি করে বলতো? কারো সঙ্গে প্রেম টেম করছিস না তো আবার আমাদের লুকিয়ে। “
“ আসতাগফিরুল্লাহ, কি সব নাউজুবিল্লাহ মার্কা কথা বার্তা বলছিস।”
“ উহু সেসব তো আমরা জানিনা।যদি কখনো জানতে পারি আমাদের লুকিয়ে তুমি তলে তলে টেম্পু চালাচ্ছো তাহলে তো বোঝোই।তোমার একটা হাড় গোড় ও আমরা আস্ত রাখবো না। তোমার জামাই ভাঙার আগে আমরাই ভেঙে দিবো জানু।”

মাহরিসা বান্ধবীর হুমকিতে শুষ্ক ঢোক গিলে
তার প্রাণ প্রিয় দুই বান্ধবী যদি জানতে পারে প্রেম নয় দুটোকে না জানিয়ে সে সোজা কাজী অফিসে গিয়ে বিয়ের পর্ব সেরে ফেলেছে। তাহলে কি করবে দুটো তাকে।
নির্ঘাত তার মাথা আস্ত লবন মরিচ ছাড়া চিবিয়েই খেয়ে ফেলবে।”
“ এই সত্যি করে বলতো আন্টি কিনে দিয়েছে?”
সৃজনী টেকনিক খাঁটিয়ে সুধালো,
“ দ্রুত বল মারু কালই আমি মা কে নিয়ে ওই সেম ডিজাইনের না হলেও একটু পার্থক্য করে খুঁজতে যাবো।পছন্দ হলে নিয়েও আসবো।”
সর্বনাশ।এখন সে দোকানের নাম বলবে কেমন করে।সে তো এর কিছুই জানে না। কোন মুছিবতে পরলো সে।
মাহরিসার কাল রাতের ভাবনায় বিভোর হয়।কাল একটুর জন্য ধরা খেতে খেতে বেঁচেছে।।
এই তো গতকাল,

রাত তখন বারোটা প্রায়।
মাহরিসা টেবিলে বই নিয়ে খিমুচ্ছিলো।
পড়বে কি করে সে, মন তো তার ছিলো অন্য কোথাও।
অসভ্য ডাক্তার তাকে কলকব্জা করে বিয়ে করে নিলো অথচ সকাল থেকে আর একটা বার ফোন দেওয়ার নাম গন্ধ নেই।আর মাহরিসাও বা কেন অসভ্য ডাক্তারের ফোনের অপেক্ষায় থাকবে।মোটেও থাকবে না।
তার ভাবনার মাঝেই তীব্র শব্দ তুলে পাশে থাকা ফোনটা বেঁজে উঠে।
ভাবনার ব্যাঘাত ঘটায় ফোনের ওপাশে থাকা ব্যক্তিকে না দেখেই হাজারটা বাংলা গালি দেয় সে।
এই গালিগুলো শিখেছে সে রোশনীর থেকে।
দরুন গালি।
ফোন হাতে নিয়ে আদ্রিতের নম্বর দেখে সঙ্গে সঙ্গে জিভে কামড় দেয়।
রিসিভ করতেই ওপাশ থেকে আদ্রিতের গম্ভীর আদেশ সূচক বাক্য ভেসে আসে।

“ নিচে আয়, কাহিনি করবি না। ফুপি ঘুমিয়েছে। তোর বাপ ঘুমের ঔষুধ খেয়েছে। শুধু নাক ডাকা বাকি।
দুই মিনিটের মাঝে নিচে আসবি।”
“ আর নীবিড় ভাইয়া…?”
পুরো কথা সম্পূর্ণ করার আগেই আদ্রিত ফোন কেটে দিয়েছে।।বিরক্তিতে ভ্রু কুঁচকায় সে। মাহরিসা বুঝে পায় অসভ্য ডাক্তার মহাশয় এতটা অধৈর্যশীল কেন।একটু ধৈর্য্য ধরলে কি এমন ক্ষতি হবে।তাহলে তো মাহরিসারও এভাবে লুকোচুরি খেলতে হয় না।
মাহরিসা টিপটিপ পায়ে বাহিরে বের হয়।
নীবিড়ের দরজা চাপানো দেখে নিঃচিন্তে দরজা খুলে বের হয়।

ধূসর রংধনু ৩ পর্ব ২৩

মাহরিসা লক্ষ করে আদ্রিত নিজের গাড়িটা পেছনের দিকে অন্ধকারের মাঝে পার্ক করেছে।
অন্ধকারে লোকটার মশা তাড়াতে বোধহয় বড্ড ভালো লাগে।
গাড়ির সামনে গিয়ে মাহরিসা দাঁড়াতে দেরী ঝড়ের বেগে কেউ তার হাত টেনে ভেতর নেয়।
চমকে উঠে মাহরিসা নিজেকে আদ্রিতের বক্ষমাঝে আবিষ্কার করে।হতভম্ব বদনে চোখ বড় বড় করে চায় মানবী।
বুকের মাঝে হৃদপিণ্ড বিট করছে তার প্রচন্ড গতিতে।
তার আদু ভাইয়ের উত্তপ্ত নিঃশ্বাস আঁচড়ে পরছে তার ঘাড়ে।
উক্ত ঘটনা বুঝে উঠতে সময় নেয় এক মিনিট।

ধূসর রংধনু ৩ পর্ব ২৫