ধূসর রংধনু ৩ পর্ব ২৯

ধূসর রংধনু ৩ পর্ব ২৯
মাহিরা ইসলাম মাহী

গভীর রাত। ঘড়ির কাঁটা টিকটিক শব্দ করে জানান দিচ্ছে বোধহয় রাত তখন একটা কিংবা দুটো।
মাহরিসা গভীর ঘুমে আচ্ছন্ন। চারপাশে গম্ভীর নিরবতা। অন্ধকারে মোড়া সম্পূর্ণ রুম।
একটি শোক্তপোক্ত পুরুষালী শীতল হাত মাহরিসার কামিজ গলিয়ে কোমরে হাত রাখে।
ঘুমের ঘোরেই মৃদু কেঁপে উঠে সে।
একটা উষ্ণ নিঃশ্বাস মাহরিসার ঘাড়ে আঁচরে পরে পরপর। একই সঙ্গে কপালে উষ্ণ ছোঁয়া অনুভব করে।
হঠাৎ-ই ঘুম ছুটে যায় মাহরিসার।
বুঝতে পারে কোনো পুরুষালী অস্তিত্ব তাকে আষ্টেপৃষ্টে জরিয়ে আছে।
প্রচন্ড ভয়ে চিৎকার করতে নেয় সে।
মুহুর্তে আদ্রিতের শীতল হাত তার মুখ চেপে ধরে।

“ বউউউ নড়িস না প্লিজ।ঘুমাতে দে।বিশ্বাস কর গত দুটো রাত আমি এক ফোটাও চোখের পাতা এক করতে পারিনি মেরিগোল্ড। আজ থেকে তোকে ছাড়া আমার ঘুম অসম্ভব। “
চেনা-পরিচিত পারফিউমের ঘ্রাণের সঙ্গে মাদকীয় কন্ঠের আকুতি মেশানো পরিচিত স্বরে মাহরিসা শান্ত হলেও, তার কপালে চিন্তার ভাঁজ ফুটে ওঠে স্পষ্ট। লোকটা ভেতরে এলো কি করে।
কোমরে চাপ অনুভব করে মাহরিসা আর্তনাদ করে,
“ কি করছেন আদ্রিত ভাই, ছাড়ুন। “
আদ্রিত ছাড়ে না বরং চিনা জোঁকের ন্যায় আরো জাপ্টে জরিয়ে ধরে। ফিসফিস করে সুধায়,
“ বড় আদর তো করছি না প্রমিস।ছোট আদর করি? একটু খানি।প্লিইইজ বউ। বিশ্বাস কর নয়তো তোর তৃষ্ণায় মরেই যাবো।”
মাহরিসা চোখ বড় বড় করে মাথা নাড়ায়।

আরও গল্প পড়তে এখানে ক্লিক করুন 

“ নাআ আ..”
মাহরিসা জানে ছাড়া পাওয়ার কোনো উপায় নেই।তবুও বৃথা চেষ্টা চালায়।
“ এতটা পাষান্ড হোস না বউ।একটু দয়া কর। এই দেখ হৃৎস্পন্দনের গতি কমে এসেছে। হাত দে দেখ।
আদ্রিত মাহরিসার দুহাত শক্ত করে চেপে ধরে বুকে ঠেকায়।
মাহরিসা থরথর করে কেঁপে উঠে।
“তোর অক্সিজেন চাই বউ। একটু খানি।পুরোটা নয়।প্লিইইজ। না করিস না।মরে যাবো।”
আদ্রিতের এত এত শিশু বাচ্চার ন্যায় আকুতি মেশানো স্বরের কথন মাহরিসা ফেলে দিতে পারে না।
শান্ত হয়ে যায় সে।

বউয়ের সম্মতিতে আদ্রিত হাসে।বিশ্বজয়ের হাসি।
মুহুর্তেই কোনো আগামবার্তা বিহীন দু জোড়া ওষ্ঠ একত্রিত হয়।আন্দোলন তোলে মাহরিসার মাঝে।
মাহরিসা ফ্রিজড হয়ে যায়।আবেশে চোখ বুঁজে। দম ফেলার ফুসরত টুকু পায় না সে।
এ অনুভুতি তার নিকট নতুন।একদমি নতুন।
তার আদু ভাইয়ের এতটা কাছাকাছি আগে কখনো যাওয়া হয়নি যে।
মানুষটার এতটা আকুতি মেশানো পাগলামিও তার দেখা হয় নি তো।আজ সে শুধুমাত্র ডাঃআদ্রিতের শেখের অর্ধাঙ্গিনী বলেই কি তার এতকিছু দেখা সৌভাগ্য হলো? কি জানি।
মাহরিসা আদ্রিতের বুকে মাথা রাখে।হৃদস্পন্দন শোনার বৃথা চেষ্টায়, পারেনা।পারবে কেমন করে, দুষ্টু লোকটার অবাধ্য হাতের বিচরণ যে তার সারা অঙ্গ জুঁড়ে।স্থির থাকবে সে কেমন করে।অসম্ভব
তার অসভ্য ডাক্তার মহাশয় ফিসফিস করে মাদকীয় কন্ঠে সুধায়,

“ পরের বার ছাড় পাবিনা বউ প্রমিস।বড় আদর চাই।”
মাহরিসার গাঁ শিরশির করে উঠে।তার হালকা কাতুকুতু লাগে।
মাহরিসা ছোটাছুটির চেষ্টা চালায়।
“ অসভ্য লোক ছাড়ুন।আপনি ভেতরে এলেন কি করে?”
“ তোর বাপ বেলকনি বানিয়েছে কি করতে? তার জামাইয়ের মেয়ের ঘরে যাওয়া আসা করার জন্যই তো।সুযোগ হাত ছাড়া করতে নেই একদমি।”
“ ছাঁড়ুন। “
“উউহু…।নো ওয়ে।”
আদ্রিত পুনরায় মত্ত হয় তার মেরিগোল্ডে।

রাতে নাওমী ঘুম আসছে না বলে ছাঁদে পায়চারি করছিলো।
নীবিড় তখন ফারুৎফুরুৎ শব্দ তুলো সিঁড়ি বেয়ে ছাঁদে উঠে শিঁস বাজাতে বাজাতে।
নাওমী বিরক্ত চোখে চায়।ছেলেটা কখনো সুধরাবে না।
“ আশ্চর্য আপনার পায়ে কি সমস্যা। “
“ কেন বলোতো মিস নাউডুবা চশমিশ? “
“ এই নামটা নেওয়া প্লিজ থামান আপনি।”
“ আমার মুখ আমার ইচ্ছে তোমার তাতে কি? বাই দ্যা ওয়ে রাত বারোটার সময় না ঘুমিয়ে ছাঁদে দাঁড়িয়ে কি তুমি প্রেম করছো? আশে পাশের তো কোনো এক্সট্রা বিল্ডিং ও নেই কার সাথে করছিলে প্রেমটা।”
“ ওমা এই যে দেখতে পাচ্ছেন না আমার সামনেই তো দাঁড়িয়ে আছে।”
“ মানে?”

“ এই যে আস্ত মেহগনি গাছটা দেখতে পাচ্ছেন না? চোখে বাধছেনা। ওমা কানা হলেন না তো আবার।তার সঙ্গেই তো প্রেম করছিলাম। মহিষের বাচ্চা আপনার তো বোঝা উচিত ছিলো।
সাবধান আমার রোগ নিজের মাঝে আবার ধারণ করতে যাবেন না। তবে কিন্তু বড্ড বিপদ।খুব সাবধান।”
“ খবরদার মিস নাউডুবা চশমিশ আমায় একদম মহিষের বাচ্চা বলবে না।আমার বাবা শুনলে মাইন্ড করবে।”
“ ওমা আপনার বাবা কি মহিষ নাকি যে মাইন্ড করবে।আঙ্কেল তো ভীষণ ভালো মানুষ। আপনার মতন নন।কি আদর করে রাতে আমার পাতে মাছের মাথাটা উঠিয়ে দিলো দেখলেন।”
“ কত্ত বড় সাহস তোমার তুমি আমার জন্ম নিয়ে প্রশ্ন তুলো মেয়ে? ভালো হয়ে যাও ভালো হতে না পয়সা লাগে না বুঝলে।”
“আপনিও ভালো হয়ে যান, ভালো হতে এক টাকাও লাগে না।”
নাওমী বিরক্ত হয়ে রুমে গিয়ে ঠাস করে নীবিড়ের মুখের উপর দরজাটা লাগিয়ে দিলো।
এই অভদ্র মহিষের বাচ্চার জন্য তার কোথাও গিয়ে একটু দাঁড়িয়েও শান্তি নেই।
নীবিড় ভেঙচি কাঁটে।

রাত পেরিয়ে সকাল নামে।
আদ্রিত কিংবা মাহরিসা ঘুম ভাঙে না কারো।
সকাল তখন ছয়টা প্রায়।
এদিকে বাসন্তী জানে মেয়ে তার ভোরে উঠে পড়তে বসে।
সেই মোতাবেক মেয়ের দরজায় টোকা দেয় উঠার তাগিদে।অতঃপর ব্যস্ত হয় পুনরায় নিজ কার্যে।
এদিকে দরজার কড়াঘাতে মাহরিসা ধরফর করে উঠে বসে।
ঘড়ির দিকে তাকিয়ে তার চক্ষু চড়কগাছ।
সর্বনাশ।
মাহরিসা আদ্রিত কে ধাক্কায়।

“ ঘুমাতে দে নড়িস না। আয় বউ তুই ওও ঘুমা।”
“ আরে উঠুন আপনি।সকাল হয়ে গেছে ইয়া খোদা।এই অসহ্য লোকটা কে নিয়ে আমি এখন যাবো কোথায়।”
আদ্রিত এক লাফে উঠে বসে।ঘুম ছুটে পালায় তার বুড়িগঙ্গায়।
“সকাল হয়ে গেছে মানে?”
“ বাহিরে তাকান। আশ্চর্য লোক।সবাই উঠে গিয়েছে আপনি যাবেন কেমন করে।আল্লাহ।”
আদ্রিত আয়েশ করে বসে।
“ ওও এই ব্যাপার তার জন্য ডাকতে হয়?”
মাহরিসা হতভম্ব হয়ে আদ্রিতের পানে চায়।এই লোককে খোদা তুমি কি ধাতু দিয়ে গড়েছ।
“ ডাকবো না কি তো বসে বসে আঙুল চুসবো? মা যদি ঘরে ঢুকে আপনাকে দেখে কি কেলেংকারীটা হবে ভাবতে পারছেন?”

“ কি হবে। বুঝবে মেয়ের জামাই এসেছে। “
আদ্রিতের খাপছাড়া কথায় মাহরিসার মেজাজ খারাপ হয়। সে ঠেলতে শুরু করে আদ্রিত কে।বুঝে যায় এই ঘাড় ত্যাড়া লোক সহজে কথা শোনার পাত্রী নয়।
“ আচ্ছা আপনি আগে বের হন।”
“ মাথা খারাপ?পাগলা কুত্তায় কামড়েছে আমায়? আমি বের হই আর তোর বাপ দেখেনিক আর আমার ইজ্জত নিয়ে টানাটানি হোক।তুই তো তাই চাস তাই না।”
“ একদম বাজে কথা বলবেন না।”
“ তো কে বলবে? তোর ক্লাসের ওই গন্ডারের বাচ্চাটা।”
“ ওও গন্ডারের বাচ্চা নয় আমার ফেন্ড।”
“ তো তোর ফেন্ড তোকে পছন্দ করে আর তুই বুঝিস না?”
“ আমায় পছন্দ করলে আপনার কি?”
“ কি আশ্চর্য আমার হালাল বউ কে ওই হালার পুত পছন্দ করবে কেন? বল?”
“ আমি কি জানি তা তাকে গিয়ে জিজ্ঞেস করুণ।”
“ তুই কর গিয়ে।”

মাহরিসার বিরক্তিতে ইচ্ছে হচ্ছে লোকটাকে দোতালা থেকে তুলে সোজা নিচে ফেলতে।
কোন টপিক থেকে লোকটা কোন টপিকে গিয়ে থেমেছে।
এত বাজে কথা বলতে পারে একটা মানুষ।
কই আগে তো এত পটর পটর করতো না।
এক রাতেই ব্যাটার ডিএনএ পরিবর্তন হয়ে গেল না তো ইয়া খোদা।
“ আপনি যাবেন?”
“ না। তোর রমে থাকবো।”

কাজ হলো না। বউয়ের জোড়াজোড়িতে অগত্যা তাকে শেষমেশ উঠতে হলো।সে আবার তার বাপের মতন ভদ্র মানুষ কিনা। বউয়ের আবদার ফেলো দিতে পারে না।
সুদর্শন গড়নে পাশে পরে থাকা টি-শার্টটা কোনো রকমে গায়ে জরিয়ে নিলো সে ।
অথচ ফিটফাট থাকা ডাঃআদ্রিত শেখ খেয়াল করলো না তাড়াহুড়োয় সে টি-শার্টটাই উল্টো করে গায়ে জরিয়েছে।
বেলকনি দিয়ে পাশে থাকা মেহগনি গাছ চরিয়ে আদ্রিত দোতালা থেকে নিচে নামে।
একটুখানি বউয়ের স্পর্শ পেতে তার আর কি কি করতে হবে।কে জানে।
নিচে নেমে এবারে দেওয়াল টপকানোর পালা কিন্তু তার আগেই ঘটে গেল কেলেংকারী।
“ আরে ব্রো এত সকাল সকাল তুমি? হোয়াট অ্যা সারপ্রাইজ। “
ওদিকে ছাঁদে থাকা নাওমী একজন পুরুষ মানুষকে মাহরিসা আপুর রুম থেকে গাছ বেয়ে নামতে দেখে তার চক্ষু চড়কগাছ।

চিৎকার করতে নেবে তার আগেই নীবিড়ের কন্ঠে থেমে যায় সে।
মানে কি লোকটাকে সকলে চেনে।তবে মাহরিসা আপুর রুমে কি করছিলো লোকটা।
আদ্রিত চোখ বন্ধ করে দাঁড়িয়ে পরে।রাগে মাথা ফেটে যাচ্ছে তার।এত বড় বোকামিটা করলো কেমন করে সে।এতটা বউ পাগল তুই হলি কবে আদ্রিত।কুল, কুল।
আদ্রিত মেকি হেসে পিছু ঘুরে।
“ ভেতরে এসো ব্রো।”
নীবিড় চিৎকার করে বলে।
নীবিড়ের চিৎকার শুনে লুঙ্গি পরিহিত মাহীন ও বাহিরে বের হয়ে আসে।
“ আরে আদ্রিত যে কখন এলে।
শেষ।আদ্রিত বিরবির করে বলে,
“ বাসর না করেই ফেঁসে গেলি রে আদ্রিত।বাসরটা সেড়ে ফেললেই ভালো হতো না নারে আদ্রিত।ওটা সারলেই পারতি।”
আদ্রিত মেকি হেসে বলল,

“ এই তো জগিংয়ে বের হয়েছিলাম ফুফা।”
মাহীন আদ্রিতের গায়ে পরিহিত উল্টো টি-শার্ট, এলোমেলো চুল, ঘুম ঘুম মুখশ্রী দেখে অদ্ভুত চোখে চেয়ে রয়।
মাহীনের দৃষ্টি লক্ষ আদ্রিত নিজের দিকে তাকাতেই থতমত খায়।
শেষমেশএটাও বুঝি হওয়ার ছিলো তার সঙ্গে।
“ আসলে ঘুমঘুম চোখে দ্রুত কাজ করতে গিয়ে খেয়াল করা হয়নি তো..।”
“ বুঝেছি।তাসফি ইদানীং তোর খেয়াল রাখে না। আমাদের আদ্রিতের বউ দরকার।নিস্তব্ধ কে জানাতে হবে দেখছি।”
মাহীনের সামনে মেকি হাসলেও মনে মনে সে মাহীনের গুষ্টি উদ্ধার করে।
“ আরে ব্যাটা তোর মেয়েকেই তো বিয়ে টা করে বসে আছি।তোর কারণে এখন পর্যন্ত বাসরটা পর্যন্ত সারতে পারলাম না আর তুই আমায় আবার নতুন করে বিয়ে দিতে চাস।শ্বশুরের ষষ্ঠী রে।”
মাহীম আদ্রিতকে ভেতরে নিয়ে আসে।
বউয়ের ঘুমন্ত মুখ আদ্রিত পুনরায় দেখার লোভ কিছুতেই ছাড়তে পারলো না।একটু বেহায়া,নির্লজ্জ বউয়ের জন্য হওয়াই যায়।তাতে কি ক্ষতি।

বাসন্তী আদ্রিতকে দেখে খুশিতে আত্মা হারা।
মাহরিসা বেরিয়ে এসেছে।
মাহরিসার প্রাণ যায় যায় অবস্থা। আর একটুর জন্য ভাই তার আদ্রিত ভাইকে দেখে ফেলেনি।
কি কেলেংকারী অবস্থা।
মাহরিসা দাঁত কামড়াতে কামড়াতে ড্রয়িংরুমে এসে দাঁড়ায়।
আদ্রিত কে পুনরায় ড্রয়িংরুমে দেখে তার কলিজা শুঁকিয়ে।
এই নির্লজ্জ লোকটা আবার ভেতরে এসেছে কি জন্য।
গোপনে বিয়ের যে এত জ্বালা জানলে সে বিয়েই করতো না।
গোল্লায় যাক ভালোবাসা।
নিশান মাহরিসার গাঁ ঘেসে দাঁড়িয়ে। বোনের গায়ের গন্ধ শুঁকে ফিসফিস করে ভ্রু কুঁচকে বলল,

“ আপু তোর গায়ে কেমন না একটা মিষ্টি মিষ্টি গন্ধ। আদ্রিত ভাই যে পারফিউম টা ইউস করে তার মতন।তুমি কোথায় পেলে বলোতো?
আদ্রিত ভাই নাম বলেছে তোমায়? আমায় ও বলিও তো আমিও নেব।আমাদের ক্লাসের মারিয়া কে ইম্প্রেস করতে হবে।মেয়েটা বড্ড বেয়াদব।”
মাহরিসা ভাইয়ের কথায় চোখ বড় বড় করে চায় সর্বনাশ।এই লোকের কাছাকাছি যাওয়া ওতো বিপদ।
নিশান কে ধমক দিয়ে দ্রুত কদমে সরে দাঁড়ায় সে।
নিশানের কথা খানা পাশ থেকে নীবিড় শুনে ফেলে।
সে চট করে গিয়ে আদ্রিতের পাশে বসে।

“ ব্রো সামথিং ইজ রং বুঝলে।”
আদ্রিত গম্ভীর কন্ঠে বলল,
“ বুঝলাম না।”
নীবিড়ের কিছু বলার আগেই বাসন্তী তার হাতে বাজারের ব্যাগ ধরিয়ে দেয়।কতদিন পর তার ভাতিজা এসেছে একটু ভালো মন্দ না খাওয়ালে হয় নাকি।উহু একদমি নয়।
বাসন্তী বলল,
“দেখ কি কান্ড আমার আদ্রিত বাজান জগিং করতে করতে আমাদের বাসা পর্যন্ত চলে এসেছে আর তোদের ভাই বোনেদের ঘুম থেকে উঠার নাম থাকেনা।এক একটা হয়েছে অপদার্থ। “
মাহরিসা বিরবির করে বলে,
“জগিং করতে নয় মা তোমার ভাতিজা তোমার মেয়ের ঘরে মেয়েকে আষ্টেপৃষ্ঠে জরিয়ে ছিলো।
জগিং তো বাহানা।

আদ্রিত শেখ তুমি কত মিথ্যা কথা বলতে পারো আমিও দেখি।”
বাসন্তী সরল মনে নিশান আর মাহরিসা কে গল্প করার জন্য আদ্রিতের পাশে বসিয়ে দেয়।
মাহীন গিয়েছে ওয়াশরুমে।
আদ্রিত নিজের ফোন দিয়ে ছলা বলা কলা কৌশলে নিশান কে পাবজি খেলতে বসিয়ে দেয়।।মাহরিসা বোঝে সবটাই অসভ্য লোকটা ধান্ধা সব।
সব পুরুষের এক চাহিদা।হুহ।মাহরিসা ভেঙচি কাটে।
আদ্রিত সুযোগ বুঝে মাহরিসার দিকে চেপে বসে ফিসফিস করে বলে,
“ বউউ রুমে চল বাকি বাসরটা সেড়ে ফেলি।”
“ চুপ থাকুন অসভ্য লোক।বাজে কথা।”
“ আমি বললেই বাজে কথা তাই না। থাপ্পড়ে..?”
“ থাপড়া-থাপড়ি করলে আমার কাছে আসবেন না একদম বলে দিলাম।”

আদ্রিত বউয়ের পানে ভ্রু কুঁচকে চায়।এই মেয়েজাতি গুলো এতটা চালাক হয় কি করে।সুযোগ বুঝে এরা ফায়দা লুটতে ছাড়ে না।
নাওমী নিচে নেমে আসে তখন।
মাহরিসা তাকে দেখতেই চট করে সরে বসে।কিন্তু ততক্ষণে নাওমী যা দেখার দেখে নিয়েছে।
নাওমী আড় চোখে আদ্রিতের পানে চায়।
আদ্রিত একপলক নাওমীর পানে চেয়ে গম্ভীর মুখে সঙ্গে সঙ্গে পুনরায় চোখ ঘুরিয়ে নেয়।
যেন বউ ব্যতীত পর মহিলাকে চোখ বুলিয়ে দেখাতে তার বড্ড বিতৃষ্ণা।

বাসন্তী এসে নাওমী কে আদ্রিতের সঙ্গে পরিচয় করিয়ে দেয়।
“নাওমী মা এই হচ্ছে আমার ভাতিজা ডাঃআদ্রিত শেখ নিভৃত।
আর ও নাওমী আদ্রিত।আমি নিয়ে এসেছি ওকে আমাদের এখানে থাকতে।বেচারীর হস্টেলে মানিয়ে নিতে কষ্ট হচ্ছিলো।
নীবিড়ের পরিচিত।তাই আর আপত্তি করলাম না।”
নাওমী মেকি মেকি হেসে বলে,
“ ভালো আছেন ভাইয়া?”
“ ফাইন।”
আদ্রিতের ছোট উত্তর।

বাসন্তী কথা না বাড়িয়ে নাওমীকে মাহরিসার রুম থেকে কফির মগটা আনতে পাঠায়।
নাওমী রুমে পৌঁছাতেই খাটের পাশে টেবিলে উপর ছেলেদের পরিহিত দামী হাত ঘড়িটা তার নজর কাড়ে।
সে হলফ করে বলতে পারে ঘড়িটা ডাক্তার আদ্রিতের।
ঘড়িটা হাতে তুলে নেয় সে।
রুম থেকে বের হয়ে নাওমী ডাক্তার মহাশয় কে তীক্ষ্ণ দৃষ্টিতে পরখ করতে ব্যস্ত।
ডাক্তার মহাশয়, হ্যান্ডসাম, স্টাইলিশ, শিক্ষিত।নাহ মাহরিসা আপুর সঙ্গে যদি কোনো চক্কর চলেও থাকে তবে খারাপ না।

ফিটফাট, পরিপাটি মানুষদের মাঝে মাঝে নাওমীর চমকে দিতে বড্ড ভালো লাগে।ফিটফাট লোকজন সহজে চমকায় না।কিন্তু হুটহাট তাদের চমকিত রুপ দেখতে নাওমীর খারাপ লাগে না।
নাওমী আদ্রিতের পানে এগিয়ে যায়।
দাঁত কেলিয়ে হেসে
আদ্রিতের দিকে ঘড়িটা এগিয়ে দেয় সে।

ধূসর রংধনু ৩ পর্ব ২৮

“ ভাইয়া এটা বোধহয় আপনার।নিতে ভুলে গেছেন বোধহয়.. আই গেস।”
হাত ঘড়ির পানে আদ্রিত আর মাহরিসা বিস্ফোরিত দৃষ্টিতে চেয়ে।
যেন ওটা কোনো হাত ঘড়ি নয়, সম্ভবত অজগর সাপ নাওমী হাতে ধরে রেখেছে।
নাওমীর দুজনের রিয়্যাক্টশন দেখে তাই মনে হলো।

ধূসর রংধনু ৩ পর্ব ৩০