ধূসর রংধনু ৩ পর্ব ৪৬
মাহিরা ইসলাম মাহী
নতুনত্বে মোড়া দুটি যুগল।
সাদাফ-নিস্তব্ধতা, জাওয়াদ-অদিতি।
সন্ধ্যার আকাশ আঁধো উজ্জ্বল কালো।
হালকা লালিমা বর্ন ধারণ করেছে কেমন চারিপাশ।
উত্তপ্ত গোধূলি শেষে শীতল হাওয়া বেয়ে যাচ্ছে অদিতির কার্নিশ বেয়ে।
ওই তো সামনে থাকা নারিকেল গাছটায় একজোড়া শালিক বসে আছে।
শালিক দুটো বুঝি জাওয়াদ আর তার লিটল বার্ড।
অদিতি লজ্জায় রাঙা হয়।
অতীতে মোড়া তার আর তার মায়ের জীবনের ধূসর রংধনু এবার রঙিন হলো বুঝি।আহহ।
নিজ রুমের বেলকনিতে দাঁড়িয়ে অদিতি তার প্রনয় পুরুষের চিন্তায় মগ্ন।
লোকটা আজ থাকেনি।কি হতো একটুখানি আজ রাতটি থাকলে?
বাসর রাতে বর নেই কাছে কি আশ্চর্য কথা।
শুনতে একটুকুও ভালো লাগছেনা অদিতির।
কোথায় তার শখ ছিলো এই বেলকনিতে বসে সে রাতের আকাশ দেখবে আর গল্প জুড়বে শত, কোথায় সেসব?
কিচ্ছুটি হলো না।
এই তো খানিকক্ষণ আগে জাওয়াদ আর তার সদ্য হওয়া শ্বশুর মশাই সৃজন বিদায় নিয়েছে তার থেকে।
অদিতির চিৎকার করে বলতে ইচ্ছে হচ্ছিলো,
আরও গল্প পড়তে এখানে ক্লিক করুন
“ আপনি থাকুন না আজ জাওয়াদ।কি দরকার আজ বাড়ি ফেরার? থাকতে পারবেন আমায় রেখে?এত নিষ্ঠুর আপনি। আপনার সঙ্গে হাজার আড়ি হুহ।”
অদিতির মনের কথা জাওয়াদ শুনতে পায়নি, পেলে বোধহয় বিদায় নিতে পারতো না কখনো।
প্রস্থান পূর্বে জাওয়াদ অর্ধাঙ্গিনীর কর্ণে ঠোঁট ছুঁইয়ে ফিসফিস করে বলেছিল,
“ যাচ্ছি মাই লাভ। তবে কথা দিচ্ছি পুনরায় দেখা হবে খুব শিঘ্রই, অপেক্ষা করবেন তো মাই লিটল বার্ড?”
অদিতির চিৎকার করে বলতে ইচ্ছে করছিলো,
“ ইয়েস।আপনার জন্য এই অদিতি আজন্মকাল অপেক্ষা করে যেতেও প্রস্তুত জাওয়াদ।শুধু কথা দেবেন একটু ভালো বাসবেন বলুন?”
সে অদৃশ্য চিৎকার অদিতির কণ্ঠনালী ভেদ করে বের হয়না।
জাওয়াদের হালকা ঠোঁটের ছোঁয়ায় অতিথি লজ্জাবতী গাছের ন্যায় নুইয়ে পড়ে।
আড়ষ্ঠতায় শ্বাস আঁটকে আসে।
জাওয়াদ প্রিয়তমার লজ্জা রাঙা মুখশ্রী অবলোকন করে পুনরায় দুষ্টু কথার ঝড় তুলে অদিতির কর্ণে।
“ আপনার মুখের এই লজ্জা টুকু এই অবলা অর্ধাঙ্গের সামনে আজীবন দেখতে চাই।কথাদিন দেখাবেন? না দেখালেও সমস্যা নেই আমি ব্যবস্থা করবো। নিজেই ব্যবস্থা করবো এই লজ্জাটুকু স্বআনন্দে লুফে নিতে।গভীর স্পর্শ যে এখনো বাকি মাই লাভ।”
অদিতি পারে না তখন মাথার উপরে ফাঁকা গগনে উড়াল দিয়ে ছুঁটে পালায়।
ইশশ! তার গম্ভীর প্রফেসর যে নিজ মুখশ্রী হতে এত দুষ্টু কথার তুবড়ি ছোটাতে জানে কে জানতো?
নাকি প্রতিটা পুরুষই তার নিজ নারীর নিকট দুষ্টু হয়ে যায় অবলীলায়?
অদিতি উপলব্ধি করলো মানুষের বাহ্যিক ব্যবহারে মানুষ চেনা দায়। বড্ড দায়।
কিন্তু অদিতি নিজ পুরুষের এই রুপে খুশি।না চিনেও সে খুশি।
এতটুকু ভালোবাসা সকল অর্ধাঙ্গিনীই তার অর্ধাঙ্গের থেকে কামনা করে।
কামনা করা অন্যায় নয় বরং তা প্রত্যেক নারীর হালাল অধিকার।
নিজ কাঁধে নাওমীর ধাক্কায় ভাবনার ছেদ ঘটে অদিতির।
নাওমীর পাশেই হাসি মুখে দাঁড়িয়ে কাশফি।
নাওমী ফিসফিস করে বলল,
“ বরের শোকে শোকযাত্রা পালন করছে বুঝি আমাদের দুলাভাইয়ের অতিথি পাখি হুম? বাসর সাজিয়ে ফোন করি জাওরা ব্যাডাকে কি বলিস?
বাসরটা তোরা বরং আজকে সেরেই ফেল কেমন?”
অদিতির দু গাল লজ্জায় রাঙা হয়।
সে মিনমিন কন্ঠে সুধায়,
“ এই নামে না ডাকলে হয় না।কোনো শিক্ষক কে অসম্মান করা ঠিক নয় নাওমী।”
কাশফি নিজেও মাথা নাড়ায়,
তুতলিয়ে বলল,
“ কারো অগচরে হোক কিংবা সামনা-সামনি বয়সের চাইতে বড় কাউকে অসম্মান করা ঠিক নয় না..নাওমী।”
কাশফির ভেতরকার সত্তা মিনমিন করে বলে,
“ তবে তুমি নিজে যে নীল সমুদ্র কে ভেঙচি কাটো তার বেলা।”
কাশফি ফিসফিস করে মনকে বোঝায়,’ ওটা তার অদৃশ্য নীতিগত অধিকার মন।তুমি বেশি বুঝো।’
মনপাখি তার অদ্ভুত যুক্তিতে গা দুলিয়ে হাসে।
নাওমী মুচকি হেসে বুঝ মানের ন্যায় মাথা নেড়ে বলল,
“ আচ্ছা করলাম না তোমার জামাইকে অসম্মান। তবে সালি হিসাবে দুলাভাই তো ডাকতেই পারি।”
কাশফি উত্তেজিত কন্ঠে বলল,
“ আচ্ছা আমরা যদি এখন ভার্সিটিতে গিয়ে সকলকে জানিয়ে দেই,
এই দেখ তোমাদের সকলের ক্রাশজনিত স্যারের একমাত্র ওয়াইফ আমাদের অতিথি পাখি। কেমন হবে বলতো নাওমী?”
নাওমী দুহাত দিয়ে দু’জনকে দুপাশ দিয়ে জরিয়ে ধরে বলল,
“ দারুণ হবে।মাঝে মাঝে কিছু মানুষকে দারুণ ভাবে চমকে দিতে হয় বুঝলি।
এতে যদি তাদের স্বভাবের খানিকটা পরিবর্তন আসে।”
অদিতি মিছে রাগ দেখায়।
বান্ধবীদের থেকে এত লজ্জা পাওয়া বুঝি তার ভাগ্য বিধানে ছিলো।
ইশশ!
দুজনকে অবাক করে দিয়ে নাওমী চট করে দুই বান্ধবীর গালে টপাটপ করে দুটো চুমু খেয়ে নিলো।
ভেজা চোখ দুটো লোকানোর মৃদু চেষ্টা রমণীর।
নাওমীর ইচ্ছে করে দু’জনকে জাপ্টে ধরে বুক পাঁজরে ঢুকিয়ে নিতে।
বান্ধবী রুপী দুটো বোন পেয়েছে সে।কলিজার বোন।আহাঃ কি ভাগ্য তার।সময় মানুষকে ধীরে ধীরে তার না পাওয়া সকল আক্ষেপ ঠিকই ঘুচিয়ে দেয়। আমরাই বরং বুঝতে চেষ্টা করি ধীরে।কাশফি নীবিড় কে ভালোবাসে বলে বান্ধবীর প্রতি নাওমীর যে অভিমান সৃষ্টি হয়েছিল তার একছিটে ফোঁটাও নেই এখন।সব ধূলোয় মিলিয়ে দিয়েছে সে।অতীত ভেবে কষ্ট পেয়ে লাভটা কি।আমাদের উচিত বর্তমান কে আঁকড়ে ধরা।কে বলতে পারে আজকের দিনটি পুনরায় আসবে কিনা।মানুষ তো আমরা।আজ আছি তো কাল নাও থাকতে পারি।
নাওমীর হঠাৎ অদ্ভুত কর্মে কাশফি এবং অদিতি বিস্মিত দৃষ্টি ওর মুখপানে চেয়ে।
“ কি করলি?”
অদিতির প্রশ্নে নাওমী খিলখিল করে হেসে উত্তর দেয়।
“ আরে রিল্যাক্স, মেয়ে মানুষ তো আমি। তোর সোয়ামী নই যে এত লজ্জা পেতে হবে।
তোকে একটু প্রাকটিস করালাম বুঝলি তোর বর মহাশয় এভাবে একটু খানি চুমু খেলেও খেতে পারে।”
“ তাই বুঝি?”
“ অবশ্যই। “
কাশফি টিটকারি করে বলল,
“ তা আমায় কেন চুমু খেলি আমার তো বর নেই।
আমায় কি প্রাকটিস করালি শুনি?”
নাওমী দাঁত কেলিয়ে দুষ্টু হেসে বলল,
“ তোকে প্রাকটিস করালাম তোর বয়ফ্রেন্ড তোকে এভাবে চুমু খেতেও পারে।আগে থেকে অনুভুতি দিলাম বুঝলি।”
অদিতি চোখ ছোট করে বলল,
“ ওর বয়ফ্রেন্ড ওকে চুমু খাবে কি না জানিনা তবে আমার মনে হচ্ছে তোর উপর অ্যাপ্লায় করা নিজ বয়ফ্রেন্ডের কার্য আমাদের উপর ফলাও করছিস।”
অদিতি হাসলো।মধুর হাসি।নাওমীকে ভরকে দিতে পেরে তার ভালো লাগছে।
নাওমী শুষ্ক ঢোক গিললো।
“ আসতাগফিরুল্লাহ”
“ এখন বুঝি নিজের বেলায় আসতাগফিরুল্লাহ?
“মোটেই না এমন কিছুই নয় অদিতি। তোমরা ভুল বুঝতে ওস্তাদ। সহজ কথাগুলোই তোমরা বুঝতে পারো না।ধূর।”
কাশফি মিনমিন করে বলল,
“ সেই যাই হোক না কেন আমাদের অদিতি যে বর পেয়ে নিজে চঞ্চল রুপে ফিরে এসেছে এতেই আমরা খুশি।”
অদিতি বান্ধবীর কথায় লজ্জা পেল।
আজ বুঝি তার অবাকতা আর লজ্জা পাওয়ার দিন।
নাওমী বাঁধ সেধে বলল,
“ এখন যত গুনগান তোমাদের সব জামাই দুলাভাইয়ের তাইনা? আর আমি বেডি যে তোমাদের জন্য এত খাটলাম,এতখাটলাম ত..তার কি হবে শুনি?”
কাশফি আর অদিতি হাসলো বান্ধবীর কথায়।
মাহরিসা যা বুঝলো সকলের বিদায় নিতে নিতে আরো আঁধঘন্টা পেরোবে বোধহয়।
তার ফোনে মেসেজের টোন বাজে।তার একমাত্র বর মহাশয় তার আদু ভাইয়ের মেসেজ।
“ নিচে আসবি এখুনি।একা আসবি।কি করে আসবি আমি জানিনা মেরিগোল্ড। বাট ইট’স আর্জেন্ট।”
অগত্যা উপায় না পেয়ে তৃপ্তির থেকে বিদায় নিয়ে মাথা ব্যথার অজুহাতে গাড়িতে বসে থাকবে এই কথা মা কে বলে নিচে নামে সে।
মাহরিসা নিচে নেমে এদিক ওদিক টালুমালু দৃষ্টি নিক্ষেপ করে।
যতদূর চোখ যায় কাউকে দৃষ্টিগোচর হয় না তার।এদিকে ধরণীর বুকে সন্ধ্যা নেমে এসেছে।
অন্ধকার হয়ে আসছে চারিদিক। একা একা পার্কিং এরিয়ায় ভয়ও লাগছে তার।এই বিশাল বিল্ডিংয়ে বিভিন্ন শ্রেণীর মানুষের বসবাস, কখন কার খপ্পরে পরে বলা মুশকিল।
ভয়ে গলা বুক শুঁকিয়ে কাঠ কাঠ হয় তার।
হঠাৎ কারো হ্যাঁচকা টানে পুরুষালী শক্তপোক্ত বক্ষে আঁচড়ে পড়ে মাহরিসা।
পুরুষটি তার নরম-সরম কোমর কানা আঁটোসাটো করে বেঁধে ধরে।ছাড় পাওয়ার বিন্দুুমাত্র উপায় নেই।
মাহরিসা ছটফট করে, ভয়ে আঁতকে উঠে মৃদু চিৎকার দিতে ন্যায়।
অতিপরিচিত পুরুষালী হাত রমণীর মুখশ্রী চেপে ধরে। ফোনের ফ্লাশ লাইট জ্বলে দু সেকেন্ডের জন্য।
সে আলোয় মাহরিসা স্পষ্ট অবলোকন করে নিজ অর্ধাঙ্গের সুদর্শন মুখশ্রী খানা।
আদ্রিত হিসহিসিয়ে সুধায়,
“ হুঁশশ! ডোন্ট সাউন্ড। আমি থাকতেও এত ভয় কিসের তোর মেরিগোল্ড।
কারে সাধ্যি আছে বুঝি এই আদ্রিত শেখের থেকে তোকে ছিনিয়ে নেওয়ার
এতই সোজা বুঝি?উঁহু। জান্ত কবর দিয়ে ফেলবো তাকে।”
মাহরিসা শুষ্ক ঢোক গিলে।মানবের রুক্ষ-সুক্ষ্ম হাতখানা এখনো মাহরিসার কোমড় আঁকড়ে ধরে।অজানা অনুভূতি’র শিহরণে মাহরিসা কেঁপে কেঁপে উঠছে।
“ ক..কেন ডেকেছেন আদ্রিত ভাই।”
“ উহুহহ যাস্ট কল মি আদু মেরিগোল্ড।”
মাহরিসা বিস্ময়ে চোখ গোল গোল করে চায়।
যে মানব কিনা যে সম্মোধে ক্ষেপে যেত সে নিজেই একই সম্মেধন পুনরায় চাইছে? আশ্চর্য!
মাহরিসা বুঝলো পুরুষ মন কখন কি চায় বলা দায়।
মাহরিসা মৃদু স্বরে বলল,
“ কেন ডেকেছো আদু ভাইয়া।”
“ রোমান্স করতে।”
আদ্রিতের মাদকতা মেশানো চটপটে প্রত্যুত্তর।
মাহরিসা লজ্জায় চোখ বন্ধ করে নেয়।
আদ্রিত সে মুখশ্রী মানে একদৃষ্টিতে চেয়ে।তার দৃষ্টির একটুকু নড়চর নেই।
মাহরিসা ফিসফিস করে বলল,
“ সবাই এখনি নিচে চলে আসবে।”
“ আসুক তো?”
“ দেখে ফেলবে।”
“ দেখুক তো?”
“ বদনাম হবে। “
“ হোক তো?”
“ দেখুন আমি এবারে রেগে যাচ্ছি কিন্তু। “
“ রাগ তো?”
আদ্রিতের এমন খামখেয়ালী কথায় মাহরিসা এবারে সত্যিই রেগে যায়।
“ আপনার মাথা, মাথা, মাথা।”
“ মাথা তো?”
“ উফফস।”
মাহরিসা পাগল হয়ে যাবে। এত বেহায়া, বাজে,অভদ্র লোকটা।
লার্কিংয়ের আবছা আলোয় প্রেয়সীর বিরক্তি ঝরা মুখশ্রী দেখে আদ্রিত ঠোঁট কাঁমড়ে হাসে।
মাহরিসার বিরক্তির মাত্রা দ্বিগুণ হয়।
“ আপনি একটা অসহ্য আদু ভাইয়া।”
“ অসহ্য তো।”
মাহরিসা হঠাৎ অদ্ভুত কাজ করে বসে।
রাগে দুঃখে সব ভাবনা জ্ঞান হারিয়ে দু’পা উঁচিয়ে একঝটকায় আদ্রিতের ঠোঁটে কামড় বসিয়ে পুনরায় সঙ্গে সঙ্গে ফিরে আসে।
আদ্রিত বাকরুদ্ধ। কি হলো এটা? এমনটা তো সে মোটেও ভাবেনি।বিস্ময়ে তার মাহরিসার কোমরে রাখা হাতের বাঁধন আগলা হয়।
একটু শান্ত হয়ে হুঁশ ফিরতেই মাহরিসা বুঝতে পারে কত্ত বড় ভুল কাজটি করে ফেলেছে সে।ধিক্কার জানায় নিজেকে এমনটা করা তার মোটেও উচিত হয়নি মোটেও না।
এখন উপায়।লোকটা তো ছেড়ে দেবে না তাকে।
আদ্রিতের হাতের বাঁধন পুরোপুরি আলগা হতেই সুযোগ পেয়ে মাহরিসা একছুট লাগায়।
গিয়ে বসে গাড়িতে।
আদ্রিত চেয়েও ধরতে পারেনা।
না পারুক আজ আর তাতে কোনো আফসোস নেই তার।
নিজ ঠোঁটে আঙুল বুলিয়ে ঠোঁট বাঁকিয়ে হাসে সে।
ইশশ!
অদিতির রুম থেকে বের হয়ে নাওমী সোফায় গিয়ে বসলো।
রহিমা খালাকে দেখা গেল নাওমীর দিকে চেপে বসতে।
নাওমী জিজ্ঞাসু দৃষ্টিতে তাকায়।
রহিমা খালা নীবিড় কে হাতের ইশারায় দেখানোর ন্যায় ফিসফিসানে স্বরে বলল,
“ আপামনি গো ওই যে দেখতাছেন কালো রঙার মাঝে কাউয়ার পটির ন্যায় কিসব আঁকিবুঁকি গেঞ্জি পইরা আপনার সামনের সোফায় বইসা রইছে ছাওয়াল খান। মেলাক্ষণ ধইরা লক্ষ করতাছি হে আপনের দিকে কেমন বাজঁপাখির লাহান ট্যারায় ট্যারায় চায়।হের মতলব কিন্তু মোটেই সুবিধার লাগতাছে না আপামনি। ফুফুজান কইলো আপনি হেগের বাড়িতে থাকেন, তাই সাবধানে থাইকেন। এই উঁকিঝুকি পারা পোলার থেইক্যা অবশ্য অবশ্য দশ হাত না না দশ না বিশ হাত দুরুত্ব বজায় রাইখা চলবেন।কোনো অঘটন ঘটনের আগে আপনারে সাবধান কইরা দিলাম আপামনি।”
নাওমী মনে মনে বলল,
“ এই বিশেষ তথ্যটি সংগ্রহ করে আমায় দেওয়ার জন্য আপনাকে অসংখ্য ধন্যবাদ খালা।”
নাওমী রহিমা খালাকে আলতো হাতে জরিয়ে ধরলো।
খালা আগের থেকে আরো ফিসফিস করে বলল,
“ একি আপামনি এমনে পুরুষ মানুষের লাহান জাপ্টে ধরেন ক্যান? সত্যি কইরা আমারে কন তে আপনার আবার কুনু সমস্যা নাই তো?”
“সমস্যা টমস্যা মানে?”
নাওমী হতভম্ব কন্ঠে সুধায়।
“ওই যে কি জানি কয় ইংলিশ ম্যানরা জিন্ডার না ফেনডার।”
নাওমী শব্দ করে হেসে বলল,
“ নাহ ফিনডারের কোনো কুনু সমস্যা নেহি আমার বুঝলেন খালা।”
রহিমা খালা মাথা নাড়লো,
“ তয়লে ঠিক আছে।”
নাওমী ফিসফিস করে বলল,
“থ্যাংকিউ সো মাচ খালা। আমায় বিশেষ তথ্য টি দেওয়ার জন্য। “
“ আপনারেও থ্যাংকু গো আপামনি।থ্যাংকু মানে কি মোই জানি।থ্যাংকু মানে অন্যকে ধনেবাদ জানানো।”
নাওমী শব্দ করে হেসে দিলো।
তার পাশে বসা কাশফিও হাসলো খালার কথায়
“ ধনেবাদ হ্যাঁ সিরিয়াসলি। “
নীবিড় নাওমীর হাসির পানে ভ্রু কুঁচকে চায়।এই নাউডুবা চশমিশের সমস্যাটা কোথায়।
রহিমা খালা আবারো ফিসফিস করে বলল,
“ আপামনি গো দেহেন দেহেন আপনারে স্বচক্ষে দেহাই।আমি মুরুক্ষ সুরুক্ষ মানুষ আমার কথা বিশ্বাস না ওও করতে পারেন।ওই দেহেন ছ্যামড়া ডা বেহায়ার মতো আবারো তাহায় রইছে কেমনে চোখ গুল্লা দিয়া।”
নাওমী একপলক সামনে চেয়ে নীবিড়ের চোখে চোখ রেখে ভেঙচি কাটলো।
হঠাৎ চোখে চোখ পড়ায় নীবিড় থতমত খেল।
নীবিড় কে লক্ষ করে কাশফি নিজ হাসি বন্ধ করে চুপসে গেল।
অনেক হুইহুল্লোড়ের পর বাড়ি ফেরার উদ্দেশ্যে সকলে গাড়িতে বসে পরে।
মাহরিসা নিজেও আদ্রিতকে ছাড়িয়ে খানিকক্ষণ আগেই গাড়িতে এসে বসেছে।তার আদু ভাই যে এত টা ডেঞ্জারাস কে জানতো।
উফফ!
সাদাফ গাড়িতে নিস্তব্ধতার পাশ চেপে বসলে নিস্তব্ধতা গরম চোখে চায়।
সাদাফ মুখ কাচুমাচু করে।
নীবিড় নিজ বাইকে হেলান দিয়ে হাতে চাবির রিং ঘোরাচ্ছে।তার চোখের দৃষ্টি কারোতে নিবদ্ধ আড়ালে, নিভৃতে।
বাসন্তী নেমে নাওমীকে আদুরে কন্ঠে বলল,
“ মা নাওমী গাড়িতে বসলে তোমার কষ্ট হবে।একজনের মতন সীট ফুল ফাঁকা নেই বুঝলে।তুমি বরং আমার বাঁদর টার সঙ্গে বাইকে চলে যাও। তার একটু খানি বকবকানি’র সঙ্গী হও কেমন।”
“ আমি কোনো চশমিশ কে নিতে পারবো না মা।শেষে বাতাসে চশমা ভেঙে নিচে পড়ার সঙ্গে সঙ্গে সেও নিচে পরে হাত পা ভাঙলে শেষে সব দোষ দেবে তুমি আমার ঘাড়ে।”
ধূসর রংধনু ৩ পর্ব ৪৫
“ তুই চুপ থাক বাঁদর বেশি কথা বলিস।যা বলেছি তাই কর।বাইক স্টার্ট দে।মা নাওমী যাও ওর পিছনে বসে পরো।”
“মা তুমি তো জানো আমি মেয়ে মানুষ নিজ বাইকে উঠাই না।”
“ একটা থাপ্পড় দিয়ে সব দাঁত ফেলে দেব ছেলে। তারপর বাপের কাছে গিয়ে নতুন করে দাঁত লাগাস।যাহ।বেয়াদব। “