ধূসর রংধনু ৩ পর্ব ৫৪

ধূসর রংধনু ৩ পর্ব ৫৪
মাহিরা ইসলাম মাহী

“ আমার লক্ষী বউ মা কোথায়?”
আশার হাক ডাকে নিস্তব্ধতা নিচে নেমে আসে।
আশার হঠাৎ বউমা ডাকায় তার লজ্জা লাগছে ভীষণ।
নীরু মা থেকে কনভার্ট হয়ে বউমা ইশশ!
আশা নিস্তব্ধতা কে নিয়ে চলল শপিংমলে।
মাঝ রাস্তা থেকে মাহরিসা আর বাসন্তীকেও তুলে নিলো।কাশফিও সঙ্গে আছে।
মূলত কাল মাহরিসাকে পাত্রপক্ষ দেখতে আসার উদ্দেশ্যেই এতকিছু।
আজ শপিং করবে সকলে মিলে।বাসন্তীর মেয়েকে পাত্র পক্ষের সামনে খারাপ দেখালে চলবে না মোটেও। উহু একদমি চলবে না।

বিশাল বড় শপিংমলে এসে বাসন্তী মেয়েকে একের পর এক শাড়ি দেখিয়ে চলেছে।
মাহরিসা অসহায় ভঙ্গিতে বসে।
পাত্র দেখতে নয়। মনে হচ্ছে আগামীকাল তার বিয়ে আর বিয়ের শপিং করতে এসেছে তারা।
শপিংয়ের মাঝে কাশফির ফোনটা বেজে উঠে হঠাৎ।
নীলাদ্রের ফোন ভ্রু কুঁচকে একটু দূরে সরে ফোনটা রিসিভ করে কানে ধরে ফিসফিস করে বলে কাশফি।

আরও গল্প পড়তে এখানে ক্লিক করুন 

“ বলুন নীল সমুদ্র। “
“ তুমি কোথায় বলোতো কাঁশি? চারপাশে এত আওয়াজ কেন। এত ফিসফিস করে কথা বলছো কেন? তোমার বিড়ালের গলার চাইতে তো আশেপাশের মানুষের গলার স্বরও সুন্দর শোনাচ্ছে। ”
“ শপিংমলে। আমি বিড়াল তাতে আপনার কি নীলসমুদ্র। হুহ।”
“ শপিংমলে মানে? আজ ভার্সিটি আসবে না।”
“ না। “
“ কেন? কারণ কি। হুপিংকাশি তুমি কিন্তু বেশ ভালো পড়া চুরি করতে পারো।
ফাঁকিবাজ স্টুডেন্ট বলে কথা।”

“ বাজে কথা বলবেন না।কাল মাহরিসা আপুর বিয়ে মানে পাত্রপক্ষ দেখতে আসবে তাই শপিং করতে এসেছি। তাছাড়া ভাইয়ার বিয়েটা ওও হুট করে হওয়ায় তো নিস্তব্ধতা আপুকে কিছু দেওয়া হয়নি।
তাই মা আজ ভাবীকে শাড়ি জুয়েলারি সব কিনে দেবে।”
“ আমি বুঝলাম না তোমাদের বাড়িতে কি বিয়ের ফর্দ সাজিয়েছে নাকি?
একেরপর এক বিয়ে হয়েই যাচ্ছে শুধু হয়েই যাচ্ছে। তোমার ভাইয়ের বিয়ে হচ্ছে। তোমার বোনের বিয়ে হচ্ছে, তোমার বান্ধবীর বিয়ে হচ্ছে। মানে বাদ রাখছোটা কাকে?”
কাশফি ফিসফিস করে বলল,

“ কেন আপনাকে? এরপর আপনাকে বিয়ে দেব তো নীল সমুদ্র। “
ওপাশে নীলাদ্র থতমত খেল।
“ অসভ্য মেয়ে।তোমায় আমি বলেছি বিয়ে করবো? স্টুপিড।”
“ বলেন নি।তবুও আপনি সিনিয়র হিসাবে আমার একটা দ্বায়িত্ব আছে না।সেই দ্বায়িত্ব থেকেই নাহয় দিলাম বিয়ে, সমস্যা কি। “
“ চুপ। একদম চুপ থাকো মেয়ে। ফোন রাখো।বাজে কথা।”
ধমকে-ধামকে নীলাদ্র ফোন কেটে দিলো।
হুপিংকাশি তার মুডটাই নষ্ট করে দিলো।ধূর
কাশফি ভেঙচি কাটলো হুহ।
সাদাফ আজ আসতে চেয়েছিল আশার সঙ্গে। আশা এক ঝারি মেরে ছেলেকে বাড়িতে বসিয়ে রেখে এসেছে।
আশা নিস্তব্ধতার গায়ে একটা নীল রঙা শাড়ি ধরে বলল,

“ এই নীরু বুড়ি এটা কেমন দেখতো? জানিস তো নীল রঙে তোকে যা দারুণ লাগে না।আমার পান্ডা তো বিয়ের দিন তোর থেকে চোখই সরাতে পারেনি।”
নিস্তব্ধতা আশার কাঁধ জরিয়ে ধরে ফিসফিস করে বলল,
“ ভীষণ সুন্দর মামনী। তোমার ছেলেকে এই শাড়ি পরিধান করে আমি দেখা দিচ্ছি না বুঝলে।ওকে আর একটুখানি জ্বালিয়ে নেই বুঝলে।”
“ এই যে মামনী বলে ডাকলি।এই বারে একদম পারফেক্ট শ্বাশুড়ি বউমা লাগছে দু’জনকে। আন্টি বলায় না ঠিক জমে না বুঝলি।”
কাশফি ছুটে এসে বলল,

“ সব আদর আর শাড়ি কি শুধু বউমাকেই দিবে নাকি। মেয়েকেও একটু দাও। এত কিপ্টামি করলে হয়।”
আশা মেয়ের নাক টেনে দিলো।
“ আঁউচচ। মাআআ।”
“ এই মা ছাগলের বাচ্চার মত মা মা করিসনা তো।দেখছিস একটা কাজে এসেছি।উফফস।”
নিস্তব্ধতা কাশফিকে জরিয়ে ধরে হাসলো।কাশফি নিজেও হাসলো মা আর ভাবীকে জরিয়ে নিয়ে।

রাত তখন এগারোটা প্রায়।
আদ্রিত হসপিটাল থেকে ফিরেছে আরো ঘন্টা খানেক আগে।ফ্রেস হয়ে ডিনার শেষে ফোন নিয়ে বসেছে সে ড্রয়িংরুমের সোফায়।
একমনে ফোন স্ক্রল করে যাচ্ছে সে।গায়ে জড়িয়ে তার কালো টি-শার্ট। সারাদিন সাদা গায়ে জড়িয়ে রাতে আবার কালো।
ছেহ কি সাদা-কালো জীবন।
নিলয় সাহেব আদ্রিতের পাশে বসে মিটিমিটি হাসছে। আজ সে ভীষণ খুশি।
কাল তার নাতি কি খেল দেখায় সেটাই দেখার অপেক্ষায় সে।
নিস্তব্ধ এসে নিঃশব্দে ছেলের সামনে বসে।
আদ্রিত চোখ তুলে চেয়ে দেখেনা।
নিস্তব্ধ বিরবির করে,

“ অভদ্র, বেয়াদব ছেলে।বাপের প্রতি কোনো সম্মান নেই ছেলের।কোথায় বাপ এসেছে মিষ্টি করে হেসে সংবর্ধনা জানাবে অথচ দেখ কেমন করে ফোন ঘাটছে।”
নিলয় সাহেব নাতির পাশ থেকে উঠে এসে ছেলের পাশে বসে ফিসফিস বলল,
“ তুমি কিন্তু কম ঘাড়ত্যাড়া ছিলে না বাজান।কার ডিএনএ দেখতে হবে তো।তাইনা বলো?”
নিস্তব্ধ চোখ ছোট ছোট করে বাবার পানে চাইতেই ভদ্রলোক খুকখুক করে কেশে উঠলেন।
“ দাদু তোমার কাঁশির ওষুধ কি শেষ? “
নিলয় সাহেব আরো জোরে জোরে কাশতে শুরু করলেন।
নিস্তব্ধ তার দিকে পানির গ্লাস এগিয়ে দিয়ে বলল,

“ পানি খাও তো বাব পানি খাও।ইদানীং তুমি নিজের ওষুধ গুলোও ঠিকঠাক খাচ্ছো না দেখছি।”
নিলয় সাহেব গরম চোখে ছেলের দিকে চেয়ে বলল,
“ এই বয়সে এসেও তুই আমায় শাসন করতে পারিস না। “
“ এই বয়সে তোমায় আরো বেশি করে শাসন করতে হবে।নয়তো আর কটাদিন বেশি তোমায় পাবো কেমন করে বলোতো বাবা?”
নিলয় সাহেব চোখ সরিয়ে নিলেন ছেলের উপর থেকে।
তার চক্ষুদ্বয় জলে টইটম্বুর।
আর একটু তাকিয়ে থাকলেই তা হয়তো গরিয়ে পড়বে গাল বেয়ে।কিন্তু তিনি গড়াতে দেবেন না। পুরুষ মানুষের যে প্রিয় মানুষ গুলোর সামনে কাঁদতে নেই। হৃদয় একদম দূর্বল করা চলবে না।কাঁদতে হয় আড়ালে। সেও তো কাঁদে আড়ালে।
একবার তো আদ্রিতের কাঁছে ধরা খেয়ে গেল।
আদ্রিত ফিসফিস করে বলেছিল,

“ পরবর্তী তে যদি তোমায় কাঁদতে দেখি বিশ্বাস করো ডায়নিংয়ে থাকা ওই যে দেখতে পাচ্ছো ফল কাটা ধাঁড়ালো ছুরিটা এনে ঠাস করে তোমার পেটে ডুকিয়ে দেব।ব্যস।”
ইশশ ঠান্ডা স্বরে কি সাংঘাতিক হুমকি নাতির।
এখন সে স্বয়ং আদ্রিত তার সামনে বসে।কান্নার তো প্রশ্নই উঠে না।
আর কটাদিন বাঁচতে চায় সে নাতি-নাতকুর ছেলে-মেয়ের সঙ্গে। সব নাতি-নাতনীদের বিয়ে দেখে তাদের ছেলে পেলে দেখেই তবেই এই গৃহ ত্যাগ করবে।তা না করলে হয়?
তার কান্নার যে অনেক কারণ।বয়সতো কম হলো না।রোগ-বালাইয়ে শরীলডা ভরা।
আর কতদিনই বা বাঁচবেন।হয়তো তার হায়াত এর শেষ ঘন্টা কাছিয়ে এসেছে। কে জানে।কে বলতে পারে মরণের কথা।
তাই এই কান্নাটুকুই আর পরিবারের খুনসুটি-ই তার শেষ সম্বল।
নিস্তব্ধ এবারে ছেলের দিকে চেয়ে মিষ্টি করে হেসে বলল,

“ মাই সান তুমি কি তবে বিয়ে করবেনা বলে ঠিক করেই নিয়েছো? “
“ আপনার কি মনে হয়?”
আদ্রিত জবাব দেয়।নিলয় সাহেব ফিসফিস করে নিস্তব্ধ’র কানে কানে বলল,
“ একদম বাপ কা বেটা তাই না বাজান?”
নিস্তব্ধ বাবার কথায় পাত্তা না দিয়ে ঠান্ডা স্বরে বলল,
“ আমার মনে হওয়ায় কিছু যায় আসে না মাই সান।
তো শুনো তোমায় যা বলতে এসেছিলাম,

আমাদের মাহরিসা মামনীকে আগামীকাল পাত্রপক্ষ দেখতে আসবে।
ছেলে হ্যাঁ বললে বিয়ে কনফার্ম। মারুকে আমরা তুলে দেব পাত্রের হাতে।
দারুণ হ্যান্ডসাম ছেলে।আমাদের সকলের পছন্দের। বিশেষ করে তোমার মায়ের। ভীষণ মিষ্টি।
তোমার দাওয়াত রইলো । অবশ্যই অবশ্যই আসবে কিন্তু। “
আদ্রিতের ভাবভঙ্গি দেখে তার ভেতরের ধ্বংসাত্মক অনুভূতির ফোয়ারা বোঝা দায়।
বরকে বউয়ের বিয়ের দাওয়াত দেওয়া হচ্ছে।দাওয়াতটা দিচ্ছে কে? বউয়ের শ্বশুর বাবাজীবন।কি অদ্ভুত তাইনা? হাস্যকর-ই বটে।
আদ্রিত চট করে উঠে দাঁড়ালো।
উঠে দাঁড়ালো নিস্তব্ধ ওও।নিজের ফোন বের করে আদ্রিতের দিকে এগিয়ে দেওয়ার তাগিদে বল,
“ তুমি কি একবার পাত্রের ছবিটা দেখবে আদ্রিত? দারুণ হ্যান্ডসাম ছেলে।তুমি দেখলে আমার বিশ্বাস তোমার ওও ভীষণ পছন্দ হবে।”

আদ্রিত ঠান্ডা চোখে বাবার পানে চেয়ে খপ করে নিস্তব্ধ’র হাতের ফোনটা নিয়ে দূরে ছুরে ফেলল।
হনহন করে সিঁড়ি বেয়ে উপরে উঠে শব্দ করে রুমের দরজা লাগালো।
নিস্তব্ধ শব্দ করে হেসে দিলো
নিলয় সাহেব ছেলের পানে চোখ ছোট ছোট করে চাইলো,
“ দেখ ছেলের কান্ড।ছেলের রাগে বাপ কেমন মন প্রাণ খুলে হাসছে দেখ।”
“ বুঝলে বাবা, একদম ঠিক ধরেছ তুমি।বাপ-ছেলে ডিএনএ-র মাঝে এক চুল পরিমাণ পার্থক্য নেই।নিজের জিনিস অন্য কে ছুঁতে দেব কেন।প্রশ্নই উঠে না। যাকে বলে। অসম্ভব।”
বলেই নিস্তব্ধ নিজেও নিজ রুমের দিকে পা বাড়ালো।
এদিকে সোফায় বসে থাকা ভদ্রলোক ছেলের কথার সারাংশ উদ্ধার করতে না করে উঠে দাঁড়ালেন।
দেখ ছেলে তার ফোনটাও নিয়ে যায়নি।
এত কাণ্ডজ্ঞানহীন।
নিলয় সাহেব ফোনটা হাতে তুলে তার দিকে তাইতেই তার চোখ কপালে উঠলো ফোনের স্ক্রিনে ভেসে থাকা পাত্রের ছবি দেখে। আশ্চর্য! বড় আশ্চর্য কান্ড!

তখন মধ্যরাত।
চারিদিকে সুনশান নিরবতা। বাড়ির পাশে দূর হতে মাঝে মধ্যে কুকুরের হাকডাক ভেসে আসছে ক্ষীণ।
হয়তো কোনো বিপদের সংকেত পেয়ে মানুষকে জানানো তাদের অসামান্য প্রয়াশ।
মাহরিসা হৃদয়ে বৈছে উথাল-পাতাল ঝড়।
চোখে জমে তার নোনা জল।সব দোষ তার।হ্যাঁ তারই তো।সেদিন তার আদু ভাইকে সবাইকে জানাতে নিষেধ না করলে এভাবে তো তাকে গুমরে গুমরে কেঁদে কুল ভাসাতে হতো না।এই নির্জন রাতকে তার কান্নার সাক্ষী করতে হতো না।

এই আধ ভেঁজা বালিশে চোখের নোনা পানি জমাতে হতো না।
কিন্তু সেও বা কি করতো।
ওই যে মনের ভয়।
মনের ভয়-ই যে সবচাইতে বড় ভয়।
এই যেমন পৃথিবীতে ভূত বলতে কিছু নেই জেনেও আমরা গভীর রাতে নির্জন প্রহরে একাকী ভূতে বিশ্বাস করে মনের ভয়ে শিউরে উঠি।
সবই তো মনের ভয়।
মাহরিসার ফোনটা হঠাৎ কর্কশ শব্দে গর্জন তুলে বেঁজে উঠে।মাহরিসার মনে হচ্ছে বিষাক্ত কোনো ধ্বনি তার কর্ণকূহরে প্রবেশ করছে ক্রমাগত।
এতরাতে নিজ ফোনে আদ্রিতের হঠাৎ কল দেখে আঁতকে উঠে মাহরিসা।
ভয়ে কাঁপতে কাঁপতে আদ্রিতের ফোন রিসিভ করে সে।
আদ্রিতের ঠান্ডা স্বর তবুও মাহরিসার মনে হচ্ছে ওপাশ থেকে যেন বর্জ্রপাতের ন্যায় শব্দ ভেসে আসছে ক্রমাগত একের পর এক।
মাহরিসা একেকটা বাক্যের বিপরীতে কাঁপতে কাঁপতে জবাব দেয়।

“ নিচে আয়।”
“ ব…ব..বাবা জাগ্রত আদু ভাইয়া।”
“ আদু মাই ফুট।নিচে আয়।”
“ কি করে যাবো বাবা যে..। “
“ পাঁচ মিনিটে নিচে আসবি।বিলিভ মি মারু আমার যদি উপরে আসতে হয় বিশ্বাস কর তোকে কামড়ে খেয়ে ফেলবো আমি।”
মাহরিসা শুষ্ক ঢোক গিলে।কিন্তু আশ্চর্য ঢোক চেপার জন্য থুথু টুকুও নেই তার গালে।
“ আমি যেতে পারবো না আদু ভাইয়া তুমি আমার কথাটা শুনো…”
“ তার মানে তুই আসবিনা তাই তো? ওয়েট…. “
মাহরিসা আঁতকে উঠে বেলকনিতে যায়।

হায় খোদা।বাবা যে কেন তার বেলকনিতে রেলিং দিলো না।উফফস।
আদ্রিত ইতোমধ্যে গাছে উঠতে শুরু করেছে।
দূরের ল্যাম্পপোস্টের নিয়ন আলোয় তার আদ্রিত ভাইয়ের রাগান্বিত মুখশ্রী স্পষ্ট অনুধাবন করা যাচ্ছে।
তবুও কালো টি-শার্টে লোকটাকে মারাত্মক হ্যান্ডসাম লাগছে।তার হ্যান্ডসাম, ড্যাশিং ডাক্তার মহাশয়।
মাহরিসা চোখ বন্ধ করে নিলো।
মাহরিসা বিরবির করে দোয়া পড়তে চেষ্টা করে।কিন্তু আশ্চর্যের বিষয় এই মুহুর্তে তার একটা লাইন ওও মনে পড়ছে না।
কোথায় পালাবে সে এখন।সত্যিই ডাক্তার মহাশয় তাকে আজ কামড়ে খেয়ে ফেলবে একটুও ছাড় দেবে না ।একটুও না।
আদ্রিত উঠে এসেছে।

মাহরিসা এক দৌঁড়ে রুমের শেষ প্রান্তে গিয়ে দাঁড়ায়।কিন্তু তাকে ধরতে কতক্ষণ।
গাছে উঠতে গিয়ে আদ্রিত হাতে ব্যথা পেয়েছে।
হাত ঝাড়া দিয়ে একপা একপা করে সে এগিয়ে যায় অর্ধাঙ্গিনীর পানে।
“ তোর বাপ তোর বিয়ে ঠিক করেছে তুই জানিস না?”
“আদু ভা..
“ সেই ছেলে কাল তোকে দেখতে ওও আসবে রাইট?”
“ আদু ভাইয়া আমার কথা শুনো।”
“ চুপপপ। একদম চুপ।”
“ ভীষণ হ্যান্ডসাম ছেলে। সকলের পছন্দের।তার মানে তোর ওও পছন্দের।”
“ আ…”
আদ্রিত মাহরিসার চোয়াল চেপে ধরলো,
“ একদম চুপপ।তুই তো কথাই বলবি না। নো এক্সকিউজ জান।
ডাঃআদ্রিত শেখ এর বউকে অন্য এক বেটাছেলে দেখতে আসবে ভাবা যায়। কত্তবড় কলিজায় সাহস তার।”
“ তোর সাহস কি করে হলো আমার থেকে কথাটা লুকানোর? বল কি করে হলো? খুব শখ না তোর? খুব শখ অন্যত্র বিয়ে বসার।

কেন একবার বিয়ে করে শখ মিটে নাই তোর?”
মাহরিসা ব্যথায় শব্দ করে কেঁদে উঠলো।পাগল লোকটা তাকে কথা বলার সুযোগ পর্যন্ত দিচ্ছে না।
হাত দিয়ে আদ্রিত মাহরিসার মুখ চেপে ধরলো শক্ত করে।
“ চুপ কাঁদবি না।একদম কাঁদবি না। “
“ ফাজলামো না? আমার সাথে ফাজলামো। আমি ভালোবাসলে তোর ভাল্লাগে না এখন অন্য বেডার ভালোবাসা চাই তোর? আমি আদর সোহাগ করলে ছুটে পালাস এখন অন্য বেটাছেলের সামনে বসে থাকতে খুব ভালো লাগবে তোর তাইনা? বসাচ্ছি তোকে।”
“ নাআআ আপনি ভুল বু….”
এক ঝটকায় মাহরিসাকে বিছানার সঙ্গে চেপে ধরলো আদ্রিত।
“ আমার আদর সোহাগে মন ভরে না তোর? ভরবে কেমন করে কাছেই তো আসতে দিস না তুই আমায়। একটু ভালোবাসবো কেমন করে বল?”
মাহরিসা চোখ বন্ধ করে নিয়েছে।
তার ডাক্তার মহাশয়ের ওই গভীর চোখে চোখ রাখার ক্ষমতা তার নেই।একদমি নেই।

“ মেরিগোল্ড? “
“ হু?”
“ তাকা আমার দিকে। “
আদ্রিত একদৃষ্টিতে মাহরিসার মিষ্টি মুখশ্রীর পানে চেয়ে।
মেয়েটার মুখশ্রীর পানে চেয়ে সে রাগ করতেই পারেনা।এক লহমায় তার সমস্ত রাগ ধূলিসাৎ হয়ে কোথায় উবে যায় কে জানে।
মাহরিসা চোখ পিটপিট করে চায়।
আদ্রিত মত্ত হয় তার মেরিগোল্ডের মাঝে।
কপোত-কপোতীর দু জোড়া ওষ্ঠের আলিঙ্গন ঘটে।
সেই দিনের পর বহু প্রতিক্ষার পর৷ আরো একবার।
শত কষ্ট বুকে চেপে ধরার পর একটুখানি সুখ ওও যেন অমৃত।
নিজ অঙ্গে আদ্রিতের উত্তাল হাতের বিচরণ সামলাতে মাহরিসা হিমসিম খায়।
লোকটার পেশিবহুল শক্তপোক্ত ছোঁয়া বেপরোয়া। কঠিন ধারালো।
মাহরিসা ফিসফিস করে বলল,
“আ..আমি অসুস্থ আদ্রিত ভাই।”
আদ্রিত অর্ধাঙ্গিনীর গলা থেকে মুখ তুলে চোখ মুখ কুঁচকে তীব্র বিরক্তি প্রকাশ করে সুধালো,

“ সো হোয়াট? “
“ মা..মানে আমি…”
“ বাসর করতে আসিনি তোর সঙ্গে আমার প্রশ্নের জবাব চাইতে এসেছি। “
মাহরিসায় লজ্জায় চুপসে যায়।মুখ গাল তার আরক্তিম হয়।
জবাব চাইতে এসে কেউ এভাবে অসভ্য কাজগুলো করে বুঝি? কই তার তো আগে জানা ছিলো না।জানবে কেমন করে আগে তো সে আরেকটা বিয়ে করেনি।হুহ।
রাত্রী গড়িয়ে সকাল নেমেছে অথচ আদ্রিত যাচ্ছে না।
সে যাবে না।

ডাক্তার মহাশয় উদোম গায়ে মাহরিসার নরম তুলতুলে বিছানায় নিশ্চিন্তে শুয়ে। চিন্তার ‘র’ মাত্র কোনো ভাঁজ তার কপালে নেই।আদৌও থাকবার কথা ছিল কি? লোকটা যে কোনো কিছুই পরোয়া করে না।কিন্তু মাহরিসা তো করে।
গায়ের কালো রঙা টি-শার্ট খানা ছুড়ে ফেলেছে সে সে-ই রাতেই।
পুরুষটা যে বড্ড বেপরোয়া। বড্ড।তাকে সামাল দেওয়া দায়।
তার আবদার গুলো পালন করা কঠিন।
খুব কঠিন।

ধূসর রংধনু ৩ পর্ব ৫৩

কি হবে এবার।আতঙ্কে মাহরিসার ছোট্ট প্রাণপাখি শুঁকিয়ে কাঠ হয়ে যাচ্ছে।
এখন যদি কেউ এসে তাদের এই অবস্থায় দেখে কি কেলেংকারীটাই না হবে ভেবেই মাহরিসা কেঁপে কেঁপে উঠছে ।
মাহরিসার চুপসানো মুখশ্রীর দিকে চেয়ে আদ্রিত বাঁকা হাসে।
বাইরে থেকে শোনা যাচ্ছে কতগুলো মানুষের ভারী পদচারণ। অতএব সকলে ইতোমধ্যে উঠে পরেছে। কাজকর্ম ও শুরু করেছে ইতোমধ্যে।
মাহরিাার আতঙ্ক দ্বিগুণ বাড়াতে আদ্রিত উঠে দাঁড়ায়।
অর্ধ উলঙ্গ গায়ে এগিয়ে দরজার সিটকিনি খুলে দেয় সে।

ধূসর রংধনু ৩ পর্ব ৫৫

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here