ধূসর রংধনু ৩ পর্ব ৫৬

ধূসর রংধনু ৩ পর্ব ৫৬
মাহিরা ইসলাম মাহী

“ ছাড়ুন লাগছে।”
“ একটা শর্তে।”
মাহরিসা কাঁপা কাঁপা কন্ঠে বলল,
“ কি শর্ত আদ্রিত ভাই?”
“ তোকে আমি নিজ হাতে সাজাবো।”
মাহরিসা হতভম্ব দৃষ্টিতে চেয়ে রইলো।
যেই লোক দুমিনিট আগে পর্যন্ত তাকে পাত্রের সামনে যেতে দেবে না বলে তেড়ামি করছিলো আর সে স্বয়ং এখন তাকে সাজাতে চাইছে।
মাহরিসার সাজ যখন কম্পিলিট হলো তখন সে ধরতে পারলো ধূর্ত লোকটার অতি চালাকি।
রমণীর চোখের কাজ লেপ্টে দেওয়া, চিকন ভ্রুগুলো মোটা করে আর্ট করে দেওয়া, ঠোঁটের লিপস্টিক জাপ্টে দেওয়া,টোলের উপর বিশ্রীভাবে গোলাপী আইস্যাডো,চুলগুলোর অবস্থা কাকের বাসা,কানে বাশপাতার দুটো কুৎসিত দুল।
মাহরিসা তুতলিয়ে বলল,

“ এভাবে আমি বাইরে যাবো?”
আদ্রিত মিষ্টি করে হেসে বলল,
“ অবশ্যই। কেন যেতে চাস না?”
মাহরিসা জবাব দেওয়ার ভাষা খুঁজে পেল না।
আয়নায় চোখ রেখে দেখলো তাকে তেঁতুল গাছের শাঁকচুন্নির মত দেখতে লাগছে।ডিজগাস্টিং।
“ আপনি ওয়াশরুমে যান আদ্রিত ভাই আমি চেঞ্জ করবো।”
“ তো করনা তোকে নিষেধ করেছে কে?”
“ আপনার সামনে? “
“ কোনো সন্দেহ? ছোট বেলায় আমার সামনে কত নেংটো হয়ে হিসু করেছিস। এই এইটুকু ছিলি।বেশ দেখতে ছিলি কিন্তু।”

আরও গল্প পড়তে এখানে ক্লিক করুন 

মাহরিসা শুঁকনো মুখে মিন মিন করে বলল,
“ এখন আমি বড় হয়েছি আদ্রিত ভাই।”
“কই বড় হয়ছিস নাকি? কাছে আয় তো মাপি।”
“ উহু।যাওয়া যাবে না। আমি বড় হয়েছি সত্যিই আদ্রিত ভাই।”
মাহরিসা লজ্জামিশ্রিত স্বর।
“ উহু একদমি না,আমার তো এখনো তোকে সেই ছোটটি মনে হয়।এক প্যাকেট চিপস আর আদর্শলিপির বইটা হাতে ছুটে আসতিস।”
“ আ…আপনি প্লিজ যান।”
আদ্রিত এগিয়ে এলো। একহাত দিয়ে ছুঁয়ে দিলো অর্ধাঙ্গিনীর কোমল গলার কাছটা।
ফিসফিস করে সুধালো,

“ আজ শাড়ী তোকে আমি পরাবো মেরিগোল্ড।”
মাহরিসা বিস্ফোরিত দৃষ্টিতে চাইলো।
“ অসম্ভব। “
আদ্রিত বাঁকা হাসলো,
“আসছি,দু মিনিটে ব্লাউজ, পেটিকোট পড়ে রেডি থাক।”
আদ্রিত বিরবির করতে করতে ওয়াশরুমে ঢুকলো,
“ বুঝলাম না সালার মেয়ে মানুষ ওয়াশরুমে চেঞ্জ না করে রুমের ভেতর করে পায় টা কি?
আরে বউ তুই ওয়াশরুম গিয়ে চেঞ্জ কর আমি একটু ঘুম দেই বিছানায় হাত পা ছড়িয়ে তা না।”
মাহরিসা দুরুদুরু বুকে ব্লাউজ পেটিকোট গায়ে জড়ালো। আয়নায় নিজেকে দেখে তার ভেতরটা হু হু করে উঠলো।
এই অবস্থা তার আদ্রিত ভাইয়ের সামনে দাঁড়িয়ে থাকা অসম্ভব।
আদ্রিতের শাড়ী পড়ানোর অপেক্ষায় রইলো না সে বরং ডেকে আনলো নিস্তব্ধতা কে।
নিস্তব্ধতা রুমে ঢুকে মাহরিসার এই হাল দেখে স্তব্ধ হয়ে দাঁড়িয়ে রইলো।
আর্তনাদ করে বলল,

“ কি করেছিস মুখের মারু? এখনি যা সব ধুয়ে ফেল।মান ইজ্জ্ত সব শেষ করবি নাকি তুই।”
মাহরিসা ফিসফিস করে বলল,
“ আমি কিছু করিনি নীরু আপু।সব তোমার গুনধর ভাই করেছে বুঝলে।”
নিস্তব্ধতা মাহরিসার মুখে হাত দিতে নিতেই আদ্রিত বেরিয়ে হুংকার ছাড়লো,
“ খবরদার যদি কিছু নষ্ট করার চেষ্টা করেছিস।”
আদ্রিত গরম চোখো মাহরিসার দিকে চাইলো।
যেন তার ওই দু’চোখের চাউনি-ই বলে দিচ্ছে,
“ নিস্তব্ধতা কে ডেকে এনে একদম ঠিক করিস নি তুই মেরিগোল্ড। একদম ঠিক করিসনি।আমি নিজে শাড়ি পড়াতে চেয়েছিলাম তোকে।আবার আমার কথার অবাধ্য হলি।”
মাহরিসা লোকটার চাউনির দিকে পাত্তা দিলো না।
শাড়ি দিয়ে উন্মুক্ত কোমরটা ঢাকার বৃথা চেষ্টা চালিয়ে যেতে লাগলো।
নিস্তব্ধতা কাঠকাঠ কন্ঠে বলল

“ভাই তুই দয়া করে এবারে এখান থেকে সর।ওদিকে গিয়ে দাঁড়া নয়তো ওয়াশরুমে ছিলি আবার ওখানেই যা।খবরদার এদিকে তাকাতে চেষ্টা করবি না।”
আদ্রিত ফুঁসতে ফুঁসতে ওপাশ ঘুরে বসলো বিছানায়।
নিস্তব্ধতা যত্নকরে লালপাড়ের খয়েরী শাড়িখানা পরিয়ে দিলো মাহরিসার গায়ে।
থুতমায় হাত রেখে ফিসফিস করে বলল,
“ ভাই কিন্তু চমৎকার ভাবে সাজাতে পারে মারু, তোকে তো পুরো হাঁসের বাচ্চা মতো সুন্দরী লাগছে।”
মাহরিসা অসহায় মুখ করে চাইলো।
মাহরিসাকে যখন ড্রয়িংরুমে নিয়ে বসানো হলো
তার এমন হযবরল সাজ দেখে সকলে যেন আকাশ থেকে পড়লো।
তাদের মেয়েকে তো চেনাই যাচ্ছে না।
নীবিড় তো বলেই বসলো,

“ কি ব্যাপার বলতো মারু আমাদের গুষ্টি শুদ্ধ সকলকে বোবা বানানোর পায়তারা করছিস নাকি তুই? তোর সাজের মহিমায় আমরা তো বাকরুদ্ধ হয়ে গেছি।”
মাহীন মেয়ের পাশে বসে তার মাথায় হাত বুলিয়ে বলল,
“ মামনী তোমার মাথা ঠিক আছে তো? কাল রাতে বেশি পড়ে ফেলো নি তো আবার?”
মাহরিসা মনে মনে বলল,
“ একদমই বেশি পড়ি নি বাবা।কিন্তু তোমার বন্ধুর ছেলের চিন্তায় চিন্তায় আমার ঘুমই হয়নি।”
মাহরিসা পাত্রের জায়গায় আদ্রিতের বন্ধু বিদ্যুৎ কে দেখে অবাক হয়ে চেয়ে রইলো।
শুধু তাই নয়।তাদের বিয়ের কাজী ওও হাজির।
পাত্রের সঙ্গে কাজী এক্সট্রা। ওওও গড।
এসব কি হচ্ছে। ছেলেটা তো তাদের বিয়ের সাক্ষী ছিলো।
কিভাবে কি সম্ভব।
এবার কি করবে মাহরিসা।
তাসফি হেসে বলল,

“ মারু মা দেখতো পাত্র পছন্দ হয় কিনা।
পাত্রের কিন্তু তোকে বেশ পছন্দ। তুই হ্যাঁ বললেই কাজী সাহেব বিয়ে পড়াতে শুরু করবেন।”
বিদ্যুৎ ফিসফিস করে বলল,
“ আমায় ভুল বুঝিস না রো আদ্রিত।আন্টি এমন ভাবে অনুরোধ করলো যে তার অনুরোধ আমি পেলতেই পারলাম না।
তোর বিয়ের কথা তো বলার সুযোগই পেলাম না দোস্ত।”
মাহরিসা কিছু বলে উঠার আগেই আদ্রিতের হিংস্র থাবা পরলো বিদ্যুতের উপরে।

“ প্রতারক।তুই আমার সঙ্গে থেকে আমার সঙ্গে ছলনা করে আমার বউকে বিয়ে করতে এসেছিস।কত্তবড় কলিজায় সাহস তোর।তোর কলিজা ছিড়ে আমি লুডু খেলবো হারামজাদা। “
আদ্রিতকে মাহরিসার ঘর থেকে বের হতে দেখে সকলে বিস্ফোরিত দৃষ্টিতে চাইলো।
মাহরিসার মনে হলো তার প্রাণপাখিটাই এবারে উড়ে যাবে খাঁচা ছেড়ে।
নিজেদের বিস্ময়ভাব কাটিয়ে জাওয়াদ, নীবিড়, সাদাফ কোনো রকমে থামালো আদ্রিত কে।
“ ছাড়ো আমায় ব্রো।আজ ওকে শেষ করে ফেলবো।”
জাওয়াদ বলল,

“ রিলাক্স হও। এত উত্তেজিত হতে নেই।”
“ মানে তুমি এই কথা কি করে বলছো ব্রো? তুমি নিজেও ছিলে আমাদের বিয়েতে।”
তাসফি চিৎকার করে বলল,
“ কি হচ্ছে টা কি এখানে আমি তো কিছুই বুঝতে পারছি না।”
আদ্রিত অসহায় নেত্রে মায়ের পানে চেয়ে বলল,
“ তুমি তো ছোট বেলা থেকে আমার থেকে সব কেড়ে নিতেই শিখেছ শুধু মা। কি হচ্ছে না হচ্ছে তুমি বুঝবে কেমন করে।”
তাসফি আহত চোখে ছেলের পানে চেয়ে,

“ আমি কোনোদিন তোর থেকে কিছু কেড়ে নেইনি আদ্রিত।তোকো সব পাইয়ে দিতেই তো হাজির হয়েছিলাম।”
“ মানে?”
নিস্তব্ধ বলল,
“ মানেটা আমি বলছি,তোমার মা এখানে তোমার থেকে মাহরিসা কে কেড়ে নিতে নয় বরং আজ তোমার জন্যই মাহীনের কাছে সমন্ধ এনেছিল।তোমায় সারপ্রাইজ দিতে চেয়েছিলো তোমার মা মাহরিসাকে তোমার হাতে তুলে দিয়ে।তোমায় একটু ভরকে দিতে চেয়েছিলো।মাত্রই তোমায় কল করতে নিতাম।কিন্তু তুমি যে তোমার বউয়ের ঘরে ঘাপটি মেরে বসে থাকবে তা কে জানবে বলো। সামান্য সহ্যক্ষমতা নেই তোমার বাজান?”
আদ্রিত চমকে চাইলো।
তার মানে এতক্ষণ সব সে ভুল ভেবে এসেছে?
তাসফি উত্তেজিত কন্ঠে বলল,

“ এক মিনিট, একমিনিট,ডাক্তার সাহেব আদ্রিত তখন মারু কে বউ বলল কেন? আমিও মাত্র বললেন।আমি ঠিক শুনেছি। কিন্তু বুঝলাম না । প্লিজ আমায় কেউ খুলে বলো।”
স্ত্রীর কথায় নিস্তব্ধ’র চোখ মুখ মুহুর্তে-ই ফ্যাকাশে বর্ণ ধারণ করলো।
আদ্রিত কাঠকাঠ কন্ঠে বলল,
“ আমার বউকে আমি বউ বলেছি এখানে না বোঝার আমি তো কিছু দেখছি না।”
“মানে?”
জাওয়াদ বলে উঠলো,

“এরপরের মানেটা আমি তোমায় খুলে বলছি আন্টি।”
সকলে জাওয়াদের দিকে উৎসুক দৃষ্টিতে চাইলো।
এরপরে জাওয়াদ যা বলল তা শুনে আদ্রিত নিজেও চমকে উঠলো।
মাহরিসার মনে হলো সে এই পৃথিবীতে বর্তমানে অবস্থান করছে না। এতদিন যে ভয়,কষ্ট সে অনুভব করে এসেছে তার সবই যে নিছক তা জেনেই তার শরীর হিম হয়ে আসলো।
জাওয়াদ বলল,
“ আদ্রিত আর মাহরিসা দুজনে ম্যারিড কাপল।কেন নিস্তব্ধ আঙ্কেল তো সব জানেন।”
তাসফও বিস্ফোরিত দৃষ্টিতে চেয়ে বলল,

“ নিস্তব্ধ জানে মানে?”
“ শুধু নিস্তব্ধ আঙ্কেল নয় তো।মাহীন আঙ্কেল ওও জানে বিয়ের খবরটা।”
এই পর্যায়ে আদ্রিত মাহরিসা, বাসন্তী সহ সকলে চমকে গেল।
বাসন্তী অবাক চোখে স্বামীর পানে চাইলো।
এই তবে মেয়ের বিয়ে উঠালেই এড়িয়ে যাওয়ার প্রচেষ্টার মুখ্য কারণ।
এই পর্যায়ে মাহীনের মুখ ফ্যাকাশে হলো।
তাসফি তীব্র আক্রোশে বলল,
“বাহ আমি তো ছেলেকে চমক দিতে এসেছিলাম।কিন্তু এখানে এসে তো নিজেই চমকের উপরে চমকে, চমকাতে শুরু করেছি।হোয়াট এ সারপ্রাইজ। “
জাওয়াদ বলতে লাগলো,

“ আসলে আন্টি আমি আপনাদের সবটা খুলে বলছি।আপনাদের কাছে সবটা অনেক কম্পিলিকেটেড লাগতে পারে।
আসলে ঘটনা ঘটে আরো অনেক আগে থেকে।
সেদিন আমি সহ বাবার সঙ্গে যখন নিস্তব্ধ আঙ্কেল আর তাদের বাকি বন্ধুরা রেস্টুরেন্টে দেখা করলো।
নিস্তব্ধ আঙ্কেলের সঙ্গে আমার ভালোই পরিচয় হলো।
এরপর আমায় একদিন দেখা করতে বললেন, দেখা করলাম।
আঙ্কেল বলল আমায় তাকে একটা সাহায্য করতে।
আমিও আর না করতে পারলাম না। রাজি হয়ে গেলাম। “
সাদাফ প্রশ্ন করলো

“ কি সাহায্য ব্রো?”
জাওয়াদ হেসে বলল,
“ সেটাই বলছি ওয়েট ব্রাদার ওয়েট।
তো যা বলছিলাম।
আঙ্কেল আমায় বললেন,
‘ দেখ জাওয়াদ তোমার কাছে আমার একটা সাহায্য চাই।সাহায্য ওও নয় ঠিক আবদার বলতে পারো।
আমাদের দুটো ছেলেমেয়ে আছে,একটা সান্ডা আর একটা পান্ডা বুঝলে। বুঝলে না তো?
আমি মাথা নাড়লাম।
আরে নিস্তব্ধতা আর সাদাফের কথা বলছিলাম।
তুমি তো চেনো ওদের।তো এখন শুনো,

দুটোতে হয়েছে বড্ড বদমাশ। হতচ্ছাড়া দুটো একে অপরকে এত ভালোবাসে অতচ মুখে স্বীকারোক্তি করতে চায় না। মেজাজ টা কেমন লাগে বলোতো।
এখন একমাত্র তুমিই সাহায্য করতে পারো।
– আমি কিভাবে?
– আরে তুমিই পারবে একমাত্র। দুটোর মাঝে এমন জেলাসি ফিল করাবে যেন দুটোতে একদম বিয়ের পিরিতে গিয়ে থামে।
– আচ্ছা।
– শুধু আচ্ছা বললে হবে না কাজের কাজ করতে হবে।আরো একটা কাজ আছে।
– কি আঙ্কেল?

– আদ্রিতকে তো চেনো? সে ছোটো বেলা থেকে তোমার মাহীন আঙ্কেলের মেয়ে মাহরিসাকে ভালোবাসে।তোমার আন্টি এরমাঝে দুজনের ভালোর জন্য একটু টেকনিক খাটিয়েছিলো।
এখন যে করেই হোক দুটোর একটা হিল্লে করো।
আমি আঙ্কেল কে কথা দিলাম যে তার আবদার আমি যথা সম্ভব রাখতে চেষ্টা করবো।
ঠিক তার পরের দিনের কথা।রাতে আদ্রিত হঠাৎ আমায় ফোন দিয়ে বলল, ‘ ব্রো বিয়ে করবো কাজী অফিসে আসো সাক্ষী লাগবে।’
আদ্রিতের ফোন কেটে আমি সবার প্রথমে নিস্তব্ধ আঙ্কেল কে ফোন করলাম।
আঙ্কেল হাসতে হাসতে বলেছিল,
“ আরে আর অপেক্ষা করছো কিসের।মিয়া বিবি রাজি তো তো কিয়া কারেগা মাম্মি-ড্যাডি।দিয়ে দাও বিয়ে।আমি এখুনি মাহীনকে বলছি সবটা ।”

ব্যস কাজী ডেকে বিয়ে হলো দু’জনের।
আর সেই থেকেই আমার শুরু হলো নিস্তব্ধতা আর সাদাফকে কাছাকাছি করার মিশন।
বিয়ের শেষে সেদিন রাতে নিস্তব্ধতা কে যখন গাড়ি দিয়ে পৌঁছে দিচ্ছিলাম আমি দেখেছিলাম সাদাফকে অদূরে দাঁড়িয়ে থাকতে।ব্যস তখন থেকেই শুরু হলো দুটোর মাঝের জেলাসি সৃষ্টির কার্যক্রম।
এরপর ইচ্ছে করেই নিস্তব্ধতার সঙ্গে হেসে কথা বলা,ভার্সিটিতে বিয়ের খবর রটানো।সবটাই ছিল প্লান অনুযায়ী।
আর প্লান সাকসেস ওও হলো দারুণ ভাবে।
আমার কাজও ফুরালো। “

সকলে বাকরুদ্ধ বনে বসে রইলো।
তলে তলে বাপ, ছেলে, চাচা,ভাইপো মিলে যে এসব কান্ড ঘটিয়েছে কারো জানাই ছিল না। কি আশ্চর্য। কি আশ্চর্য!
অথচ উপর দিয়ে তারা চিন্তায় গুমরে গুমরে মরছে।
আদ্রিত কখনো কল্পনাও করেনি যে বাবা নামক মানুষটি তাকে সবসময় ঠেস দিয়ে কথা বলে এসেছে।আবার সেই মানুষ টাই আদ্রিতকে সকল ক্ষেত্রে সাহায্য করেছে।
আদ্রিত আজ ভীষণ করে অনুভব করলো জীবনে বিশাল একটা ভুল অধ্যায়ের মাঝে সে আটকা পরে গিয়েছিল।
আসলে বাবা-মা নামক মানুষদুটো কখনো তার খারাপ চায়-ই নি। কিচ্ছু কেড়ে নেওয়ার চেষ্টা করেনি তার থেকে। বরং যা করেছে সব তার ভালোর জন্য করেছে।
সেদিন আদ্রিত কে বিদেশ না পাঠালে আজ এতবড় একজন ডাক্তার হওয়া তার পক্ষে সম্ভব হতো না।কখনোই হতো না।

সে হয়তো মাহরিসাতে মজে কৈশোরটা ধ্বংস করে দিতো।
নিজে কতটা ভুল ছিলো সে হারে হারে টের পাচ্ছে। অপরাধ বোধে গলা পেঁচিয়ে আসলো তার।
পুরুষ সহজে কাঁদে না কিন্তু তার কান্নায় গলা জরিয়ে আসছে।
এতদিনকার তার সব রাগ অভিমান সব বৃথা,সব।
কোনো মূল্য নেই তার।বরং দুটো মানুষকে ক্রমাগত কষ্ট দিয়ে এসেছে সে।
এতগুলো দিন মা কে মা বলে ডাকে নি সে।
আর কত কত অপরাধ করেছে সে? আর ভাবতে পারলো না আদ্রিত।
আর পারলো না আদ্রিত “মা” বলে তাসফিকে জরিয়ে ধরে হাওমাও করে কেঁদে উঠলো।
আদ্রিত আজ বুঝতে পারছে।জীবনে কাউকে মিছে ভুল বুঝে করা ঠুনকো কিছু অভিমান রাগ জীবন থেকে কত আনন্দ, খুনসুটি কে বিলীন করে দেয়।

তাইতো কাউকে নিজ মনে মনে ভুল ব্লেইম দেওয়ার আগে দু’পক্ষই মুখোমুখি হয়ে সব ক্লিয়ার করে নেওয়া উচিত। কিন্তু ক’জন করে তা।যেমনটা করেনি আদ্রিত।
বরং এতগুলো বছর ভুল ধারণা মনে পুষে রাগ,অভিমান,ক্ষোভে লিপ্ত হয়েছে বাবা-নামক নিরীহ মানুষ দুটোর প্রতি।
তাসফির চোখ হতে গড়িয়ে পরতে লাগলো অঝোর ধারায় অশ্রুকণা।
দুঃখের নয় সুখের।
আজ এতগুলো বছর পর ছেলে তাকে বুকে টেনে নিয়েছে।
আহাঃ থেকে সুখের মুহুর্ত আর হয় বুঝি?
হতেই পারেনা।
তাসফি ফিসফিস করে বলল,

“ আমি সবসময় চাই আমার আদু সুখে থাক।ভালো থাক।কিন্তু ভুল পথে ভালো থাকলে পরবর্তীতে নিজে আফসোস করবে।
একজন মা হয়ে তোমার সেই আফসোস দেখার ক্ষমতা আমার নেই বাবা।একদম নেই।
সব কিছুর জন্য একটা সঠিক সময় আছে মাই সান।
মা কোনো দিন তোমার খারাপ চায়নি।আর চাবেও না।হয়তো তোমায় পথ দেখানোর জন্য আমার বের করা উপায় টা খুব কঠিন ছিল।তাই তো আজ আমি দোষী।
বেস্ট অফ লাক মাই সান।”

ধূসর রংধনু ৩ পর্ব ৫৫

আদ্রিত ফিসফিস করে বলল,
“আমি তোমায় ভীষণ ভালোবাসি মা।”
তাসফির মনে হলো তা প্রাণটা জুড়িয়ে গেল।হৃদয়ে বওয়া উথাল-পাতাল সমুদ্রের ঢেউগুলো হুট করেই শান্ত হয়ে গেল।
নিস্তব্ধ আলগোছে চোখ মোছার বৃথা চেষ্টা চালালো।

ধূসর রংধনু ৩ পর্ব ৫৭

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here