ধূসর রংধনু ৩ পর্ব ৫৮
মাহিরা ইসলাম মাহী
আজ রাতে ঠিক হয়েছে কাশফি, অদিতি,তৃপ্তি আর রহিমা খালা নাওমীর রুমে তার সঙ্গে বিছানা পেতেই ঘুমাবে।
সকলে এভাবে একসঙ্গে ঘুমানোর মজাই আলাদা।
নীবিড়, জাওয়াদ থাকবে একসঙ্গে।
সৃজন বাড়ি ফিরেছে।তার অসুস্থ স্ত্রী বাড়ি রেখে থাকা সম্ভব নয়।
কোনো এক কারণে নিস্তব্ধতা রাজী না হলেও তাকে সাদাফের সঙ্গে থাকতে দেওয়া হলো।
রহিমা খালা বিছানায় বসেই বললেন,
“ যাক, শ্যাষ ভালো যা সব ভালো তার।আপামনি গো আমি তো চিন্তা-ই পইরা গেছিলাম।পাত্রপক্ষ আইলে কি ওই করা থালা বাসনে হয়।
ভাগ্যিস পাত্র ঘরের ভিতরেই ছিলো,তাইতো মান ইজ্জত খানা বাঁইচা গেল।”
রহিমা খালার কথায় তৃপ্তি আন্টি, নাওমী,কাশফি, অদিতি হাসবে না কাঁদবে বুঝতে পারলো না।
কাশফির ফোনটা ভাইব্রেট করছে।চমকে চাইলো সে।
দুরুদুরু বুকে সকলের আড়ালে বেরিয়ে সে ছাঁদে এসে দাঁড়ালো।
এই নীল সমুদ্র তো দেখছি তাকে শান্তিতে একটুখানি বসতেও দিচ্ছে না।
আরও গল্প পড়তে এখানে ক্লিক করুন
“ কি করছো তুমি বলোতো কাঁশি? একটা ফোন রিসিভ করতে তো মাস কাটিয়ে দিচ্ছো দেখছি।”
“ এত রাতে ঘুম রেখে নিশ্চিয়ই কেউ মশা মারবে না নীল সমুদ্র ।”
“ কে বলেছে মারবেনা।এই মাঝ রাতেই তো বিড়াল সহ মশা মারার মক্ষম সুযোগ। একবার ভাইরাস ছড়ালেই মুশকিল। তার আগেই মুশকিল আসান করতে হবে।“
“ এখানে বিড়ালের প্রসঙ্গ আসছে কেন?”
“ ওসব তুমি বুঝনে না হুপিংকাশি। শুনো কাশি হাঁচি-কাশি সাবধানে দিও খবরদার।তোমার ভাইরাস তো দেখছি তুমি সবখানে ছড়ানোর ধান্ধা নিয়ে বেরিয়েছ।তুমি কোথায় বলোতো? “
“ কোথায় আবার নীবিড় ভাইয়া দের বাড়িতে।”
নীলাদ্র শক্ত কন্ঠে বলল,
“ এই রাত বিরাতে এখনো ওখানে কি করছো তোমরা? বিয়ে খেতে আর কত ঘন্টা লাগবে হুম?
এই সত্যি করে বলোতেো তুমি এই মুহুর্তে নীবিড়ের সঙ্গে নেই তো?”
“ আশ্চর্য আমি কেন নীবিড় ভাইয়ার সঙ্গে থাকতে যাবো। ফালতু কথা রেখে বলুন ফোন করেছেন কেন?”
“ সত্যি বলছো তো? নাকি আমায় মিথ্যা বলছো?”
“ আমি আপনাকে কেন মিথ্যা কথা বলতে যাবো?”
“ কোথায় তুমি এখন।”
“ বললাম তো।”
“ এক্সাক্ট বলো কোথায়?”
“ ছাঁদে।”
“ একটু বা পাশে রেলিংয়ের দিকে চেপে এসো তো।”
“ কেন?”
“ আসতে বলেছি আসো,এত প্রশ্ন করো না তো মেয়ে।”
কাশফি ছেলেটার ভাবমূর্তি কিচ্ছু বলতে সক্ষম হলো না।
হঠাৎ নিচে চোখ পড়তেই ল্যাম্পপোস্টের পাশে বাইকের সঙ্গে হেলান দিয়ে দাঁড়িয়ে থাকা সুদর্শন ছেলেটাকে দেখে কাশফির চোখ ছানাবড়া। আঁতকে উঠলো সে।
সর্বনাশ নীল সমুদ্র এখানে কি করে।
“ আ..আপনি কোথায় নীল সমুদ্র? “
“ কেন তিনতলার ওপর থেকে দাঁড়িয়ে তো আমায়-ই দেখছো। আবার জিজ্ঞেস করছো কারণ কি? কানা কি একবারেই হয়ে গেলে নাকি? তোমার চশমা চোখে আছে তো কাশি?”
কাশফি শুষ্ক ঢোক গিললো।
তার সারা শরীর কেমন হিম হয়ে আসছে।
কি করতে এসেছে ছেলেটা?
“ ক..কেন এসেছেন?”
“ তোমার কি মনে হচ্ছে তোমায় দেখতে এসেছি? যদি ভেবে থাকো এখুনি ভুলে যাও।তোমায় দেখার মত কিছু আছে নাকি হাহ।
শুনে এদিক দিয়ে যাচ্ছিলাম বুঝলে মাঝপথে একটা বন্ধুর সঙ্গে দেখা হয়ে গেল।সে পেট পুরে খাওয়ালো।ওইতো পাশেই বাড়ি।
এখানে এসেছি হাওয়া খেয়ে পেট পাতলা করতে।
বুঝলে তো পেট ঠান্ডা তো সব ঠান্ডা। “
নীলাদ্র পাশে দাঁড়িয়ে থাকা সাফওয়ান ফিসফিস করে বলল,
“ ভাই..রে এভাবে মিথ্যা কথা বলিস না।সেই সন্ধ্যা থেকে তুই না খাওয়া।পাপ হবে তোর পাপ,মহাপাপ।”
নীলাদ্র গরম চোখে চেয়ে সাফওয়ানের পাঁছা বরাবর লাথি মারলো।
“ সাপুরের বাচ্চা। “
ওও মা গো বলে সাফওয়ান চিৎকার করে উঠে কাঁদো কাঁদো মুখ করে কাশফির পানে চাইলো।
তার চোখে মুখে আকুতি।
“ বোন আমার বাঁচা আমায়। এমন বন্ধু শত্রুরও না হোক।”
কাশফি আঁতকে উঠে বলল,
“ এই কি করছেন আপনারা মারামারি করছেন কেন রাস্তাঘাটে আশ্চর্য। “
“ তাতে তোমার কি?”
কাশফি কথা ঘুরানোর চেষ্টায়। কেউ দেখলে কেলেংকারী হয়ে যাবে।
“ এই শুনুন নীল সমুদ্র আপনি বরং একটা কাজ করুণ বাইকে উঠে বাসায় চলে যান বুঝলেন বাহিরে অনেক মশা তো।আপনার সব রক্ত চুসে নেবে।”
“ কাল ভার্সিটি আসছো তো।”
“ হ্যাঁ হ্যাঁ যাবো।”
“ প্রমিস?”
“ প্রমিস।”
নীলাদ্র বাঁকা হেসে বাইক ছুটালো।
সাফওয়ান পেছন থেকে তাকে শক্ত করে জরিয়ে ধরে।
“ আস্তে দোস্ত আস্তে চালা।পড়ে যাবো তো।”
“ মেয়েদের মত ঝাপকা-ঝাপকি করিস না তো।
আমার বউয়ের জায়গায় তোকে বসতে দিয়েছি এই তোর সাত রাজার ভাগ্য।”
সাফওয়ান কাঁদো কাঁদো মুখ করে বলল,
“ তোর বউটা কোথায়?”
“ কেন আসমানে।”
সাফওয়ান হতভম্ব মুখে ছাড়ার বদলে আরো ঝাপটে ধরে বসে রইলো প্রাণ প্রিয় বন্ধুকে।
ফিসফিস করে বলল,
“ ইহজমনে বেঁচে থাকতে তোকে ছাড়ছি না দোস্ত। মরণ কালে তোকে সঙ্গে নিয়ে মরবো।
আর তোর বউকে বসাবো তোর মাথায়।”
ফোন কেটে কাশফি হাফ ছাড়লো।
কিন্তু শেষ রক্ষা বুঝি হলো না।
কাশফি পেছনে ফিরতেই ভূত দেখার মতো চমকে উঠলো।
তার সামনে নাওমী এবং অদিতি দাঁত কেলিয়ে হেসে দাঁড়িয়ে আছে।
“ ত…তোরা?”
“ আমাদেরও তো একই প্রশ্ন তাই নারে অদিতি? আমাদের কাশি ওরফে কাশফুল কি করছিলো এখানে? কার সঙ্গে কথা বলছিলো লুকিয়ে বলতো?”
অদিতি হাসলো।
কাশফি শুকনো মুখে বলল,
“ তোরা যা ভাবছিস তা না।”
নাওমী ভ্রু নাচিয়ে বলল,
“ এই অতিথি পাখি আমাদের কাশফুল কে বল আমরা তো কিছু ভাবছিনা।একদমই ভাবছিনা।”
বলেই দুজনে হাসতে লাগলো।
কাশফি কোনো রকমে ওদের পাশ কাটিয়ে রুমে গেল।
অদিতির চোখে ঘুম নামার আগে জাওয়াদের মেসেজ আসে,
“ কি করছেন মাই লিটল বার্ড?”
মেসেজ পেয়ে অদিতি মুচকি হাসে।
লিখলো,
“ ঘুমাচ্ছি,আপনিও ঘুমান সাহেব।”
“ কি যে বলেন না। বউ ছাড়া কি আর ঘুম আসে বলেন?”
“ ইশশ! ঢং।”
“ এই অবলা ছেলেটার দুঃখ বুঝলেন না ম্যাডাম। “
অদিতি লজ্জায় বালিশে মুখ গুজে।ইশশ লোকটা এত দুষ্টু।
জাওয়াদ আবার লিখলো,
“ একটু বের হবেন? মাই লাভ? যাস্ট দু মিনিট। একটু জরিয়ে ধরবো শুধু।বিশ্বাস করুন আপনাকে এই মুহুর্তে জরিয়ে না ধরলে আমার ঘুম হবে না।”
অদিতি উত্তর করতে পারলো না।লজ্জায় রাঙা হচ্ছে সে ক্রমে।মায়ের সামনে দিয়ে সে কি করে বাহিরে যাবে অসম্ভব।
ইশশ এভাবে কেউ আকুতি করে।
লোকটা কি জানেনা তার অতিথি পাখি তার সামান্য ছোঁয়ায় উড়াল দিতে চায় আকাশে।
মেসেজের মাঝে নীবিড় পাশ থেকে বলল,
“ প্রফেসর? “
“ বলো?”
নীবিড় আমতা আমতা করে বলল
“ বলছিলাম যে একটু বাহিরে যাবো?”
“ যাও।”
“ সিগারেট খাবো তাই আরকি,বলছিলাম আপনি খাবেন? ”
জাওয়াদ চোখ বড় বড় করে চাইলো।
“ তোর তো বেটা কলিজায় সাহস আছে বড্ড। প্রফেসর বলছিস আবার সিগারেট অফার করছিস।”
নীবিড় মুখ কাচুমাচু করে চাইলো।
“ দেখছিস বেটা বউয়ের সঙ্গে কথা বলছি তাও ডিস্টার্ব করছিস।”
নীবিড় মাথা চুলকালো।
জাওয়াদ আবারো বলল,
“ আমাকে ভয় পাস?”
নীবিড় দাঁত কেলিয়ে হাসলো।
মনে মনে বলল ভয় তো পাই।তবে তোমার আড়ালে তোমায় জাওরা বলতে ছাড়িনা ব্রো।দুঃখিত মাফ করে দিও।
জাওয়াদ গম্ভীর স্বরে বলল,
“ প্রেম করিস?
নীবিড় সঙ্গে সঙ্গে মাথা নাড়লো।
কিন্তু তার মুখে লাজুক হাসি।
জাওয়াদ ভ্রু কুঁচকে বলল,
“ কিরে বেটা কাউকে পছন্দ করিস?নাওমী?”
“ অসম্ভব। নাউডুবা চশমিশ কে আবার পছন্দ করা যায় নাকি।সারাক্ষণ মেয়েটা পায়ে পা লাগিয়ে ঝগড়া করে।”
“ওসব গীত আমায় গেয়ে শুনিয়ে লাভ নেই। আরে বেট পছন্দ করলে ঠাস করে বলে দিবি এত অপেক্ষার কি আছে।”
নীবিড় ফিসফিস বলল,
“ এই যে তুমি অপেক্ষা করছো ব্রো।বউ থাকতেও বউয়ের অভাবে ছটফট করছো তার বেলা?”
ধূসর রংধনু ৩ পর্ব ৫৭
সাদাফ রুমে এসে দেখলো নিস্তব্ধতা রুমে নেই।
তাকে খুঁজতে বেলকনি প্রবেশ করতেই খট করে দরজা লাগানোর শব্দ হলো।
সাদাফ পিছন ফিরে চোখ বড় বড় করে নিলো।
কি আশ্চর্য তার নীরু তাকে বেলকনিতে রেখেই দরজাটা আটকে দিয়েছে।